উম্মতে মুহাম্মদীর মর্যাদা বনী ঈসরাইলের নবীর সমতুল্য
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: عُلَمَاءُ أُمَّتِي كَأَنْبِيَاءِ بَنِي إِسْرَائِيلَ
-“রাসূলে করিম ( ﷺ‎‎) বলেছেন: আমার উম্মতের আলিমগণ বনী ঈসরাইলের নবীদের মত (সম্মানীয়)।”(ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৬০৮৭ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; শরহে বুখারী লিস সাফারী, ২য় খন্ড, ২৭৫ পৃ:; ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী: তাফছিরে কবীর, ২৭তম খন্ড, ১১১ পৃ:; তাফছিরে নিছাপুরী, ১ম খন্ড, ৩৩০ পৃ:; তাফছিরে সিরাজুম মুনীর, ৩য় খন্ড, ২৫৩ পৃ:; আল্লামা ঈমাম ইসমাঈল হাক্কী: তাফছিরে রুহুল বয়ান, ১ম খন্ড, ১৮৪ পৃ:; ৪র্থ খন্ড, ৭৬ পৃ:; আল লুভাব ফি উলুমিল কিতাব, ১৮তম খন্ড, ৩৮২ পৃ:; বাহরুল মাদিদ ফি তাফছিরে কুরআনিল মাজিদ, ২য় খন্ড, ৩৫ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ২য় খন্ড, ৬০ পৃ:; ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানাহ, ২৮৬ পৃ:;)  

প্রখ্যাত মুফাচ্ছির, ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) {ওফাত ৬০৬ হিজরী} তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন,
أَجْمَعْتِ الْأُمَّةُ عَلَى أَنَّ بَعْضَ الْأَنْبِيَاءِ أَفْضَلُ مِنْ بَعْضٍ، وَعَلَى أَنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْضَلُ مِنَ الْكُلِّ،
-“উম্মতের ইজমা হয়েছে যে, কতক নবীগণ কতেক নবীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, আর নিশ্চয় মুহাম্মদ ( ﷺ‎‎) তাঁদের সকলের চেয়েও সর্বশ্রেষ্ঠ।”(তাফছিরে কবীর, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৫২১ পৃ:;)  

এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) {ওফাত ১২৫২ হি.} বলেন,
أَجْمَعَتْ الْأُمَّةُ عَلَى أَنَّ الْأَنْبِيَاءَ أَفْضَلُ الْخَلِيقَةِ وَأَنَّ نَبِيَّنَا عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ أَفْضَلُهُمْ وَأَنَّ أَفْضَلَ الْخَلَائِقِ بَعْدَ الْأَنْبِيَاءِ الْمَلَائِكَةُ الْأَرْبَعَةُ وَحَمَلَةُ الْعَرْشِ وَالرُّوحَانِيُّونَ وَرَضْوَانُ وَمَالِكٌ؛ وَأَنَّ الصَّحَابَةَ وَالتَّابِعِينَ وَالشُّهَدَاءَ وَالصَّالِحِينَ أَفْضَلُ مِنْ سَائِرِ الْمَلَائِكَةِ.
-“উম্মতের ইজমা হয়েছে যে, সৃষ্টি জগতে শ্রেষ্ঠ হল নবীগণ, আর আমাদের নবী ( ﷺ‎‎) হলে তাঁদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। নবীগণের পরে শ্রেষ্ঠ হল আরশ বহনকারী ৪ ফেরেস্থা ও রুহানিউন, রেদ্বওয়ান ও মালেক ফেরেস্থা। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈগণ, শোহাদায়ে কেরাম ও ছালেহীনগণ সাধারণ ফেরেস্থাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।”(ফাতওয়ায়ে শামী, ১ম খন্ড, ৫২৭ পৃ:;)  

তাই সমগ্র সৃষ্টি জগতে যা কিছু রয়েছে রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎) এই সব কিছুর চেয়েও সর্বশ্রেষ্ঠ, এমনকি কোন নবী-রাসূল ও আরশ বহনকারী ফেরেস্থারাও রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎) এর সমতুল্য নয়। সৃষ্টি জগতে তিনি বেমেছাল বা তুলনাহীন এবং তিনার পরেও কোন নবী  রাসূল নেই। এই আকিদাকে সামনে রেখেই নিম্ন উল্লেখিত হাদিসখানার আলোচনা করা হল। প্রথমেই লক্ষ্য করুন কোন কোন ইমামগণ ও মুহাদ্দিছগণ ইহাকে হাদিস বলে আখ্যায়িত করেছেন।

যেমন হিজরী ১১শ শতাব্দির অন্যতম মুজাদ্দিদ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ১০১৪ হিজরী তদীয় কিতাবে এভাবে উল্লেখ করেছেন,
وَأَمَّا حَدِيثُ: عُلَمَاءُ أُمَّتِي كَأَنْبِيَاءِ بَنِي إِسْرَائِيلَ -“আর হাদিস শরীফে আছে, আমার উম্মতের আলিমগণ বনী ঈসরাইলের নবীদের মত।”(ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৬০৮৭ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;)  

ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৬০৬ হিজরী তদীয় কিতাবে এভাবে উল্লেখ করেছেন, 
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: عُلَمَاءُ أُمَّتِي كَأَنْبِيَاءِ بَنِي إِسْرَائِيلَ  
-“আল্লাহর নবী ( ﷺ‎‎) বলেছেন: আমার উম্মতের আলিমগণ বনী ঈসরাইলের নবীদের মত।”(তাফছিরে কবীর, ১৭তম খন্ড, ২৬৭ পৃ:;) 
 
আল্লামা আবুল হাফছ সিরাজুদ্দিন উমর হাম্বলী দামেস্কী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৭৭৫ হিজরী বলেন, 
الإشارة إليه بقوله عَلَيْهِ الصَّلَاة وَالسَّلَام ُ: عُلَمَاءُ أمَّتِي كأنْبِيَاءِ بَنِي إسْرائِيْلَ
-“আর এদিকেই রাসূল ( ﷺ‎‎) এর বানী ঈশারা করেছেন যে, আমার উম্মতের আলিমগণ বনী ঈসরাইলের নবীদের মত।” (আল লুভাব ফি উলুমিল কিতাব, ১৮তম খন্ড, ৩৮২ পৃ:;) 

আল্লামা নাজিমুদ্দিন হুছাইন ইবনে মুহাম্মদ নিছাপুরী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৮৫০ হিজরী বলেন, 
قال صلى الله عليه وسلم علماء أمتي كأنبياء بني إسرائيل 
-“আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) বলেছেন: আমার উম্মতের আলিমগণ বনী ঈসরাইলের নবীদের মত।” (তাফছিরে নিছাপুরী, ১ম খন্ড, ৩৩০ পৃ:;)
 
আল্লামা ইব্রাহিম ইবনে উমর ইবনে হুছাইন বাক্বাঈ ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৮৮৫ হিজরী তদীয় কিতাবে বলেন, 
كما روي في بعض الآثار علماء أمتي كأنبياء بني إسرائيل 
-“যেমনটি কোন কোন আছারে বর্ণিত আছে, আমার উম্মতের আলিমগণ বনী ঈসরাইলের নবীদের মত।”(নাজমুদ দুরার, ১৫তম খন্ড, ৩৬৬ পৃ:;)  

আল্লামা শামছুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে আহমদ শাফেয়ী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৯৭৭ হিজরী বলেন, 
كما روي في بعض الآثار: علماء أمتي كأنبياء بني إسرائيل 
-“যেমনটি কোন কোন আছারে বর্ণিত আছে, আমার উম্মতের আলিমগণ বনী ঈসরাইলের নবীদের মত।”  (তাফছিরে সিরাজুম মুনীর, ৩য় খন্ড, ২৫৩ পৃ:;)

আল্লামা ইসমাঈল হাক্বী বরুছয়ী হানাফী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ১১২৭ হিজরী তদীয় কিতাবে এভাবে বলেন, 
كما قال عليه السلام علماء أمتي كانبياء بنى إسرائيل -“যেমনটি আল্লাহর রাসূল ( ﷺ‎‎) বলেছেন: আমার উম্মতের আলিমগণ বনী ঈসরাইলের নবীদের মত।”(তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৩য় খন্ড, ২৫৫ পৃ:;)  

আল্লামা আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মাহদী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ১২২৪ হিজরী তদীয় কিতাবে এভাবে উল্লেখ করেছেন,
قال عليه السّلام: علماء أمتي كأنبياء بني إسرائيل -“আল্লাহর রাসূল (ﷺ‎‎) বলেছেন: আমার উম্মতের আলিমগণ বনী ঈসরাইলের নবীদের মত।”(বাহরুল মুদিদ ফি তাফছিরে কুরআনিল মাজিদ, ৫ম খন্ড, ৩৫ পৃ:;)  

আল্লামা তক্বীউদ্দিন মুকরিজী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ৮৪৫ হিজরী এভাবে উল্লেখ করেছেন,
وقد جاء في الحديث: علماء أمتي كأنبياء بني إسرائيل. -“হাদিস শরীফে এসেছে, আমার উম্মতের আলিমগণ বনী ঈসরাইলের নবীদের মত।”(ইমতাউল আসমা, ৪র্থ খন্ড, ২০৮ পৃ:;)  

এই হাদিসটি সম্পর্কে ইমাম আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেছেন, ইহার কোন (সনদগত) ভিত্তি নেই। কিন্তু এই হাদিসটি ‘রেওয়ায়েত বিল মাআনা’ হিসেবে ব্যাখ্যা সাপেক্ষ গ্রহণযোগ্য হাদিস। যেমন আল্লামা ইসমাঈল ইবনে মুহাম্মদ আজলুনী (رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ওফাত ১১৬২ হিজরী তদীয় কিতাবে বলেন,
الأخذ بمعناه التفتازاني، وفتح الدين الشهيد، وأبو بكر الموصلي، والسيوطي في الخصائص، وله شواهد
-“আল্লামা তাফতাজানী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎), ইমাম ফাতহুদ্দিন শহীদ ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎), ইমাম আবু বকর মুছেলী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও ইমাম ছিয়তী (رضي الله عنه) তাঁর ‘খাছায়েছে’ এই হাদিসের মাআনা গ্রহণ করেছেন এবং হাদিসের ‘মাআনার’ শাওয়াহিদ উল্লেখ করেছেন।”(ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, ২য় খন্ড, ৬০ পৃ:;) 
 
লা-মাজহাবী মুহাম্মদ ইবনে ছালেহ ইবনে মুহাম্মদ উছাইমিন মৃত্যু ১৪২১ হিজরী তদীয় গ্রন্থে এভাবে উল্লেখ করেছেন,
ولهذا جاء في حديث لكنه ضعيف: عُلَمَاءُ أُمَّتِيْ كَأَنْبِيَاءِ بَنِيْ إِسْرَائِيْل معناه صحيح
-“এ কারণেই হাদিসে এসেছে কিন্তু ইহা দুর্বল: আমার উম্মতের আলিমগণ বনী ঈসরাইলের নবীদের মত (সম্মানীয়), এর মাআনা বা অর্থ বিশুদ্ধ।”(শরহে আরবাইনা নববিয়া, ১ম খন্ড, ৪৫ পৃ:;)  

তাই এই হাদিস ‘রেওয়ায়েত বিল মাআনা’ হিসবে হাদিস। কারণ আইম্মায়ে কেরাম ইহার মাআনাকে হাদিস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এর অন্যতম কারণ হল, হাশরের দিন আখেরী নবীর উম্মতের মর্যাদার আসন দেখে অন্য নবীগণ ও শহিদগণ ঈর্ষা করবে, যার এবারত এরূপ,
حَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَعُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، قَالَا: حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ عُمَارَةَ بْنِ الْقَعْقَاعِ، عَنْ أَبِي زُرْعَةَ بْنِ عَمْرِو بْنِ جَرِيرٍ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ لَأُنَاسًا مَا هُمْ بِأَنْبِيَاءَ، وَلَا شُهَدَاءَ يَغْبِطُهُمُ الْأَنْبِيَاءُ وَالشُّهَدَاءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، بِمَكَانِهِمْ مِنَ اللَّهِ تَعَالَى....  
-“হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎) বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাগণের মধ্যে এমন লোক রয়েছে যারা নবী কিংবা শহীদ নয়, কিন্তু মাকাম দেখে নবীগণ ও শহীদগণ ঈর্ষা করবেন।”
(সুনানে আবী দাউদ শরিফ, ইবনে উমর (রাঃ) হতে, হাদিস নং ৩৫২৭; তাফছিরে মাজহারী, ৪র্থ খন্ড, ৩৪৭ পৃ: সূরা ঈউনূসের ৬২ নং আয়াতের তাফছির; ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৯৯০ পৃ:; ইমাম আবু নুয়াইম: হিলিয়াতুল আউলিয়া, ১ম খন্ড, ৫ পৃ:; তাফছিরে দূর্রে মানছুর;)  

এই হাদিস সকল ইমামের দৃষ্টিতে ছহীহ্। বলুন এই হাদিস দ্বারা কি আখেরী নবী ( ﷺ‎‎) এর উম্মতের মর্যাদা ঐরূপ প্রমাণিত হয়না? 
আপনারা সকলেই জানেন, অন্য নবীগণ আমাদের নবীর উম্মত হওয়ার জন্য আকাঙ্খা করতেন। এর মাঝে হযরত ঈসা (عليه السلام)-ই শেষ যুগে আমাদের নবীর উম্মত হবেন। তাহলে বলুন! আমাদের নবীর উম্মত বনী ঈসরাইলের মত হবে কিনা? যদিও তাঁরা নবী নয়। এই নবীর উম্মতের মর্যাদা মহান আল্লাহ নবীদের সমান দিবেন তার আরো প্রমাণিত হয় এই হাদিস দ্বারা, যেমন:-
حَدَّثَنَا سَلَمَةُ بْنُ شَبِيبٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا الْمُقْرِئُ، عَنْ حَيْوَةَ بْنِ شُرَيْحٍ، عَنْ بَكْرِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ مِشْرَحِ بْنِ هَاعَانَ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْ كَانَ نَبِيٌّ بَعْدِي لَكَانَ عُمَرَ بْنَ الخَطَّابِ. 
-“হযরত উকবা ইবনে আমের (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ‎‎) বলেছেন: আমার পরে যদি কেউ নবী হতেন তাহলে খাত্তাবের পুত্র উমর (رضي الله عنه)’ই হইতেন।”
(ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল: ফাদ্বাইলুস সাহাবা, হাদিস নং ৫১৯; মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১৭৪০৫; তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ৩৬৮৬; ইমাম তাবারানী: মু’জামুল কবীর, হাদিস নং ৪৭৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ৪৪৯৫; ইমাম বায়হাক্বী: মাদখাল, হাদিস নং ৬৫; মেসকাত শরীফ, ৫৫৮ পৃ: হাদিস নং ৬০৪৭; ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১১তম খন্ড;)  

ইমাম হাকেম নিছাপুরী ও ইমাম যাহাবী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) হাদিসটিকে ছহীহ্ বলেছেন এবং ইমাম তিরমিজি ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) ও আলবানী হাদিসটিকে হাছান বলেছেন। হযরত উমর (رضي الله عنه) যদিও নবী নয় এবং আর কোন নবী হবেও না, কিন্তু তরিকতের ভাষায় ‘কামালতে নবুয়ত’ তাঁর মাঝে রয়েছে। সুতরাং এই নবীর অনেক উম্মতের মর্যাদা বনী ঈসরাইলের নবীদের মত। তাফছিরে রুহুল বয়ানে উল্লেখ আছে: নবী করিম ( ﷺ‎‎)
 عُلَمَاءُ أُمَّتِي كَأَنْبِيَاءِ بَنِي إسْرَائِيلَ-এই হাদিসের সত্যতা প্রমাণের জন্য মেরাজের রাতে ইমাম গাজ্জালী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) কে হযরত মুসা (عليه السلام) এর সামনে হাজির করালেন। মুসা (عليه السلام) বললেন: আপনার নাম কি?  উত্তরে ইমাম গাজ্জালী নিজের নাম, পিতার নাম, দাদার নাম, পৈর দাদার নাম এমনিভাবে ছয় পুরুষের নাম বললেন। আমি শুধু আপনার নাম জিজ্ঞাসা করেছি আপনি এত নামের তালিকা পেশ করলেন কেন? ইমাম গাজ্জালী আদবের সাথে জবাব দিলেন, আড়াই হাজার বছর পূর্বে আপনিও তো আল্লাহ তা’আলার ছোট্ট একটি প্রশ্নের জবাবে দীর্ঘ উত্তর দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, আল্লাহ আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিল আপনার হাঁতে কি? উত্তরে আপনি বলেছিলেন, আমার হাঁতে লাঠি, ইহা দ্বারা গরু রাখি, গাছের পাতা পারি, এই সেই ইত্যাদি। হুজুর এত কথা বলার দরকার ছিল কি? 
হযরত মুসা (عليه السلام) এই নবীর উম্মতের এলেম ও প্রজ্ঞা দেখে আশ্চয্য হয়ে এই নবীর উম্মতের মর্যাদা মেনে নিলেন।
(তাফছিরে রুহুল বয়ান, ১ম খন্ড, ২৮৪ পৃ: সূরা বাকারার ১৪৩ নং আয়াতের তাফছিরে; প্রিন্সিপ্যাল আব্দুল জলীল সাহেব র: এর ‘নূর নবী দ:’, ৯৬ পৃ:;)  

এই ঘটনার মূল সূত্র সম্পর্কে আল্লামা ইসমাঈল হাক্বী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) বলেন:-
وذكر الراغب الاصفهانى في المحاضرات انه قال الامام الشاذلى صاحب حزب البحر اضطجعت فى المسجد الأقصى فرأيت في المنام
-“আল্লামা রাগিব ইস্পাহানী তার ‘মুহাদারাব’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, হিজবুল বাহারের অধিকারী ইমাম শাজালী ( رَحْمَةُ الله عليه‎‎) মসজিদে আকছায় ঘুমিয়ে সপ্নে দেখেছেন।”(তাফছিরে রুহুল বয়ান, ১ম খন্ড, ২৮৪ পৃ: সূরা বাকারার ১৪৩ নং আয়াতের তাফছিরে;)  
---------------------------------
Top