বিষয় নং-৮: ছিক্বাহ রাবীর মুরছাল হাদিস গ্রহণযোগ্য:
বর্তমান আহলে হাদিসগণের দৃষ্টিতে মুরছাল হাদিস দ্বায়িফ হিসেবে গণ্য তাই তা গ্রহণযোগ্য নয়, অথচ এটি হচ্ছে তাদের মনগড়া নীতিমালা। বিশেষ করে আলবানী ও তার কতিপয় অনুসারী এ নিয়ে খুবই বেশী বাড়াবাড়ি করতে দেখা যায়। পৃথিবীর জমহুর উলামাগণের মাযহাব হলো তাবেয়ী যদি ছিক্বাহ বা নির্ভরযোগ্য হয় তাহলে তার মুরছাল গ্রহণযোগ্য।
অভিমত নং-০১: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رَحْمَةُ الله عليه) একটি হাদিসের সনদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন-
وَقَالَ أَبُو دَاوُدُ: هَذَا مُرْسَلٌ: أَيْ: نَوْعٌ مُرْسَلٌ وَهُوَ الْمُنْقَطِعُ لَكِنَّ الْمُرْسَلَ حُجَّةٌ عِنْدَنَا وَعِنْدَ الْجُمْهُورِ
-“ইমাম আবু দাউদ বলেন সনদটি মুরছাল, আর মুরছাল হলো মুনকাতে‘ঈ এর প্রকার। তবে জমহুর মুহাদ্দিছীনে কেরামের নিকট মুরছাল হুজ্জাত বা দলিলের উপযুক্ত।” ১২৩২৩ মিরকাতুল মাফাতিহ, ১/৩৬৮ পৃ. হা/৩২৩, কিতাবুত ত্বহারাত;
অভিমত নং-২: আল্লামা আনোওয়ার শাহ কাশ্মীরী লিখেন-
وقال النسائي: إنه مرسل، أقول: إن المرسل حجة عند الجمهور
-“ইমাম নাসাঈ (رَحْمَةُ الله عليه) বলেন, এ হাদিসটি মুরছাল, আমি বলি, তবে জমহুর মুহাদ্দিছীনে কেরামের নিকট মুরছাল হুজ্জাত বা দলিলের উপযুক্ত।” ১২৪২৪ আরফুয মাযী, ১/৪৩৭ পৃ.;
অভিমত নং-৩: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رَحْمَةُ الله عليه) এক স্থানে তিনি লিখেন- قُلْتُ: الْمُرْسَلُ حُجَّةٌ عِنْدَ الْجُمْهُورِ
-“আমি (মোল্লা আলী ক্বারী) বলেন, মুরছাল হাদিস জমহুর উলামায়ে কিরামের নিকট হুজ্জাত।” ১২৫২৫ মেরকাত, ২/৭৯৫ পৃ. হা/১০০৬;
অভিমত নং-৪: তিনি তার আরেক সুপ্রসিদ্ধ পুস্তকে লিখেন-
قلت المرسل حجة عند الجمهور -“মুরছাল হাদিস জমহুর উলামায়ে কিরামের নিকট হুজ্জাত।” ১২৬২৬ শরহে শিফা, ১/৪৫০ পৃ.;
অভিমত নং-৫: তিনি তার আরেক পুস্তকে লিখেন-
قُلْتُ الْمُرْسَلُ حُجَّةٌ عِنْدَ الْجُمْهُورِ -“মুরছাল হাদিস জমহুর উলামায়ে কিরামের নিকট হুজ্জাত।” ১২৭২৭ আসরারুল মারফূআ, ৩৪০ পৃ. হা/৪৮১-এর আলোচনা;
অভিমত নং-৬: তিনি আরও লিখেন-
قَالَ جُمْهُور الْعلمَاء: إِن الْمُرْسل حجَّة مُطلقًا -“অধিকাংশ আলেমগণ বলেন, সাধারণভাবে মুরছাল হাদিস নিকট হুজ্জাত।” ১২৮২৮ শরহে নুখবাতুল ফিকর, ৪০৩ পৃ.;
অভিমত নং-৭: ইমাম যুরকানী (رَحْمَةُ الله عليه) লিখেন-
لِأَنَّ الْمُرْسَلَ حُجَّةٌ عِنْدَنَا -“নিশ্চয় মুরছাল হাদিস আমাদের (মুহাদ্দিছদের) নিকট হুজ্জাত হবার উপযোগী।” ১২৯২৯ যুরকানী, শারহে মুয়াত্তা, ১/৬৩ পৃ.;
অভিমত নং-৮: আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رَحْمَةُ الله عليه) লিখেন-
لِأَن الْمُرْسل حجَّة عندنَا. -“আমাদের (হানাফীদের) নিকট মুরছাল হাদিস হুজ্জাত।” ১৩০৩০ আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ২/১৬২ পৃ. এবং ৬/২৩২ পৃ.;
অভিমত নং-৯: আহলে হাদিস মোবারকপুরী লিখেন-
وَالْحَدِيثُ الْمُرْسَلُ حُجَّةٌ عِنْدَ الْإِمَامِ أَبِي حَنِيفَةَ وَمَالِكٍ وَأَحْمَدَ مُطْلَقًا
-“ইমাম আযম আবূ হানিফা, ইমাম মালেক এবং ইমাম আহমদ (رَحْمَةُ الله عليه)-এর নিকট দ্ব্যর্থহীনভাবে মুরছাল হাদিস হুজ্জাত।” ১৩১৩১ তুহফাতুল আহওয়াজি, ২/৮১ পৃ.;
অভিমত নং-১০: আল্লামা কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী (رَحْمَةُ الله عليه) বলেন-
قلنا المرسل حجة -“আমরা (হাদিসবিজ্ঞানী) বলি, মুরছাল হাদিস হুজ্জাত।” ১৩২৩২ তাফসিরে মাযহারী, ১/৩১৮ পৃ.;
অভিমত নং-১১: ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رَحْمَةُ الله عليه) তাঁর সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থে লিখেন-
وَأُعِلَّ بِالْإِرْسَالِ وَهُوَ لَا يَضُرُّ ; لِأَنَّ الْمُرْسَلَ حُجَّةٌ عِنْدَ الْجُمْهُورِ
-“মুরছাল হাদিসের সমালোচনা ক্রটির কারণ নয়। কেননা মুরছাল অধিকাংশ মুহাদ্দিসের মতে হুজ্জাত।” ১৩৩৩৩ জামেউল ওসায়েল ফি শারহিল শামায়েল, ১/৮৮ পৃ.;
অভিমত নং-১২: তিনি এ গ্রন্থের আরেক স্থানে লিখেন-
قُلْتُ: الْمُرْسَلُ حُجَّةٌ عِنْدَ الْجُمْهُورِ -“আমি (ইবনে হাজার) বলি, মুরছাল হুজ্জাত হবার বিষয়ে জমহুর উলামায়ে কিরামগণ একমত।” ১৩৪৩৪ জামেউল ওসায়েল ফি শারহিল শামায়েল, ১/১৪৯ পৃ.;
অভিমত নং-১৩: তিনি অন্যত্র একটি মুরছাল হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-
وَهُوَ لَا يَضُرُّ، فَإِنَّ مَذْهَبَنَا وَمَذْهَبَ الْجُمْهُورِ أَنَّ الْمُرْسَلَ حُجَّةٌ
-“মুরছাল হওয়াটা ক্ষতিকর নয়। যেহেতু আমাদের এবং অধিকাংশ হাদিস বিজ্ঞানীর মতে মুরছাল হাদিস হুজ্জাত।” ১৩৫৩৫ জামেউল ওসায়েল ফি শারহিল শামায়েল, ১/২৪৯ পৃ.;
তিনি অন্যত্র লিখেন- وَالْحَدِيثُ الْمُرْسَلُ حُجَّةٌ عِنْدَ الْجُمْهُورِ
-“মুরছাল হাদিস জমহুর উলামায়ে মুহাদ্দিছীনের নিকট হুজ্জাত হবার উপযোগী।” ১৩৬৩৬ জামেউল ওসায়েল ফি শারহিল শামায়েল, ১/২২৭ পৃ.;
অভিমত নং-১৪: আল্লামা যারকাশী ( رَحْمَةُ الله عليه) লিখেন-
فَإِن الْمُرْسل حجَّة عِنْد مَالك كَمَا نَقله ابْن عبد الْبر وَالْقَاضِي أَبُو بكر وَغَيرهمَا وَكَذَلِكَ عِنْد أَحْمد كَمَا نَقله ابْن عبد الْبر وَالْقَاضِي [أَبُو بكر]
-“ইমাম মালেকের নিকট মুরছাল হাদিস হুজ্জাত, যা ইমাম ইবনে আবদুল র্বারররর (رَحْمَةُ الله عليه) এবং কাযি আবু বকর (رَحْمَةُ الله عليه)সহ অন্যান্যরা তার থেকে বর্ণনা করেছেন, এমনিভাবে এ দুই মুহাদ্দিছ ইমাম আহমদ (رَحْمَةُ الله عليه)-এর মতও অনুরূপ উল্লেখ করেছেন।” ১৩৭৩৭ আন-নুক্কাত, ৪৯২ পৃ.;
উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে মুরছাল হাদিস জমহুর মুহাদ্দিছ, ফুকাহা, মুফাসসিরগণের নিকট হুজ্জাত, তাই আমাদের অধিকাংশদের মতের দিকেই ধাবিত হতে হবে।