হযরত আল্লামা সাদ-উদ্দীন তাফতাযানী رحمه الله যার কিতাব আলিম কোর্সের নিসাবে অন্তর্ভুক্ত। তিনি رحمه الله কাজী আবদুর রহমান সিরাজী رحمه الله এর দরসের আসরে সবচেয়ে কম মেধা সম্পন্ন শিক্ষার্থী ছিলেন, বরং কম মেধা সম্পন্নের উদাহরণ তাকে দিয়েই দেয়া হতো।
কিন্তু তারপরও তিনি رحمه الله সাহস হারান নি বরং কারো কোন কথাই গ্রাহ্য না করে নিজের পাঠ পড়া এবং মুখস্ত করার জন্য চেষ্টা ও পরিশ্রম অব্যাহত রাখতেন। একদিন তিনি পাঠ মুখস্ত করতে ব্যস্ত ছিলেন, এমন সময় একজন অচেনা ব্যক্তি এসে বললো: সাদ-উদ্দীন! উঠো, চলো আমরা ঘুরতে যাই। তিনি বললেন: আমাকে ঘুরাফেরা করতে সৃষ্টি করা হয়নি। (আমার অবস্থা এমন যে, অধ্যয়ন করার পরও আমি কিছুই বুঝতে পারিনা, তো আমি কিভাবে ঘুরতে যেতে পারি?) একথা শুনে সেই ব্যক্তি চলে গেলো কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবারো ফিরে এলো এবং ঘুরতে যেতে বললো। তিনি একই উত্তর দিলেন।
সে আবারো চলে গেলো কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবারো ফিরে এলো এবং এবার বলতে লাগলো: আপনাকে রাসূলে আকরাম ﷺ ডেকেছেন! একথা শুনে তাঁর শরীরে কম্পন শুরু হয়ে গেলো এবং খালি পায়েই রাসূলে পাক ﷺ এর দীদারের জন্য দৌঁড়ে গেলেন এমনকি শহরের বাইরে একটি স্থানে পৌঁছে গেলেন, যেখানে নবীয়ে করীম ﷺ একটি ঘন গাছের ছায়ায় উপবিষ্ট রয়েছেন। হুযুর ﷺ হযরত সাদ-উদ্দীন তাফতাযানী رحمه الله কে দেখে মুচকি হেসে ইরশাদ করলেন: আমি বারবার ডাকার পরও আপনি এলেন না? তিনি খুবই বিনয়ী স্বরে আরয করলেন: ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ আমি জানতাম না যে, আপনি আমাকে ডাকছেন এবং আপনি তো আমার কম মেধা ও মুখস্তশক্তি সম্পর্কে ভালভাবেই অবগত আছেন, আমি আপনার দরবারে আমার এই রোগ থেকে আরোগ্য প্রত্যাশী।’ হযরত সাআদুদ্দীন তাফতাযানী رحمه الله এর ফরিয়াদ শুনে দয়ার সাগরে জোয়ার এসে গেলো, নবীয়ে রহমত ﷺ ইরশাদ করলেন: তোমার মুখ খোল। তিনি মুখ খুললে প্রিয় নবী ﷺ আপন থুথু মুবারক তাঁর মুখে ঢেলে দিলেন। তাঁর জন্য দোয়া করলেন এবং সফলতার সুসংবাদ প্রদান করে বাড়ি ফিরে যেতে আদেশ করলেন। পরদিন যখন তিনি رحمه الله কাজী আবদুর রহমান সিরাজীর দরসে উপস্থিত হলেন তখন পাঠদান কালে তিনি ওস্তাদ সাহেবের দরসে কিছু জ্ঞানগর্ভ প্রশ্ন করলেন।
দরসে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা প্রশ্নের মর্ম বুঝতে পারলো না এবং অহেতুক ও অর্থহীন মনে করে তাঁর কথাকে অগ্রাহ্য করতে লাগলো, কিন্তু তাঁর ওস্তাদ কাজী সাহেব যিনি জ্ঞানের ময়দানে অশ্বারোহী ছিলেন, তাঁর জ্ঞানগর্ব কথা শুনে কান্না শুরু করলেন এবং তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন: ‘হে সাদ-উদ্দীন! আজ তুমি তা নও, যা তুমি কাল ছিলে।’ অতঃপর হযরত সাদ-উদ্দীন তাফতাযানী رحمه الله পুরো ঘটনা ওস্তাদ সাহেবের নিকট বর্ণনা করলেন। (শযরাতুয যাহাব, ৭/৬৮)
প্রিয় পাঠক, বর্ণিত ঘটনায় যেমনিভাবে প্রিয় নবী, রাসূলে আরবী ﷺ এর হযরত আল্লামা সাদ-উদ্দীন رحمه الله এর প্রতি অনুগ্রহ, দয়া এবং চাহিদা পূরণ করা সম্পর্কে জানা গেলো, তেমনিভাবে এর থেকে আরো অনেকগুলো সুক্ষ্ম বিষয়ের দিকনির্দেশনা অর্জিত হলো।
যেমন; ইলমে দ্বীন অর্জন করার জন্য অধ্যবসায়ের চেষ্টা সর্বদা সফল হয়। যেমনটি হযরত আল্লামা সাদ-উদ্দীন رحمه الله এর চেষ্টা এবং অধ্যবসায় তাঁকে সফল করে দিলো। পরবর্তীতে তিনি তাঁর যুগের অনেক বড় আলিমে দ্বীন হয়ে ছিলেন এবং অনেক কিতাবও লিখে গিয়েছেন।
মনে রাখবেন! ইলমে দ্বীন অর্জন করার জন্য চেষ্টা করা এমন একটি নেকী, যা মানুষকে সফলতার সিঁড়ি অতিক্রম করতে সাহায্য করে থাকে। জ্ঞানের ময়দানে সফলতার পাশাপাশি দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার উপলক্ষ্য হয়। কেননা, জ্ঞানই মানুষকে হালাল ও হারামের পরিচয় করিয়ে থাকে, ফরয জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়, জ্ঞান আল্লাহ পাকের নির্দেশ সমূহ জানার মাধ্যম, জ্ঞান আম্বিয়ায়ে কিরাম عَلَيْهِمُ السَّلام এর রেখে যাওয়া সম্পদ, জ্ঞানের কারণে মানুষের ফযীলত সৃষ্টির মাঝে প্রকাশ করা হয়েছে, জ্ঞান হলো নূর, জ্ঞান অজ্ঞতাকে দূর করে, জ্ঞান মানুষের অধিকার সম্পর্কে জানা এবং ঝগড়া বন্ধ করার মাধ্যম, জ্ঞান আল্লাহভীতি অর্জনের মাধ্যম, জ্ঞান ইশকে মোস্তফা ﷺ বৃদ্ধি করার মাধ্যম।
_Swadhin Attari