♦দরুদ শরীফ না পড়ার শাস্তি বা না পড়লে কি ক্ষতি হবে-সকল পর্ব
★১. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ না পড়া পর্যন্ত যে কোন দোয়া আটকে থাকে”
[আল-মুজাম আল-আওসাত (১/২২০), নাসীর উদ্দীন আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৪৩৯৯) হাদিসটিকে সহিহ বলে আখ্যায়িত করেছেন]
✌হযরত উমর ফারুক (রা:) বলেন: “নিশ্চয় দোয়া জমীন ও আসমানের মধ্যখানে ঝুলন্ত থাকে এবং তা থেকে কোন বস্তু উপরের দিকে যায় না, যতক্ষণ তোমরা নিজেদের নবীয়ে আকরাম (ﷺ) এঁর উপর দরূদ পাক পড়ে না নাও।”
[তিরমিযী,২য় খন্ড,২৮ পৃষ্ঠা,হাদীস- ৪৮৬]
👏এভাবেও বর্ণনায় এসেছে
وعَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ – رضي الله عنه – قَالَ: «إِنَّ الدُّعَاءَ مَوْقُوفٌ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَا يَصْعَدُ مِنْهُ شَيْءٌ حَتَّى تُصَلِّيَ عَلَى نَبِيِّكَ – صلى الله عليه وآله وسلم -» (صحيح رواه الترمذي)
সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব (রহ:) ওমর ইবন খাত্তাব (রা:) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,দো‘আ আসমান ও জমিনের মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, তোমাদের নবীর উপর দো‘আ পড়া ছাড়া কোনো দো‘আই আসমান পর্যন্ত আরোহন করে না।
[(বর্ণনায় তিরমিযি,হাদিস নং ৪৮৬, হাদিসটি সহীহ)]
👏হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে
عَنْ اَنسِ رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ: رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم : كُلُّ دُعَاءٍ مَحْجُوْبٌ حَتَّى يُصَلّى عَلَى النَّبِىِّ صلي الله عليه وسلم. (حسن ، رواه الطبرانى ، سلسلة الأحاديث الصحيحة للألبانى الجزء الخامس(
“আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,যতক্ষণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরূদ পড়া হবে না ততক্ষণ দো‘আ কবুল করা হয় না।
[ত্বাবরানী: ২০৩৫। (হাসান)]
🌹দো‘আ করার পূর্বে দুরূদ পড়া হলে, তাতে তার দো‘আ কবুল হয়। উমামাহ (রা:) হতে বর্ণিত,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া না হলে, কোনো দো‘আই কবুল করা হয় না।
হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মুনাবী (রহ:) বলেন, (كلُّ دعاءٌ محجوبٌ) কথাটির অর্থ, দো‘আ কবুল করা হয় না। অর্থাৎ, যে দো‘আর সাথে দুরূদ পড়া হয় না,সে দো‘আ আল্লাহর নিকট পৌছানো হয় না। কারণ,দুরূদ পাঠ করা দো‘আ কবুল হওয়ার মাধ্যম।
وعن علي – رضي الله عنه – قال: «كل دعاء محجوب حتى يصلى على محمد – صلى الله عليه وآله وسلم -». (صحيح رواه الطبراني موقوفًا).
“আলী (রা:) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,সব দো‘আই বিরত রাখা হয়ে থাকে,যতক্ষণ পর্যন্ত না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া না হয়।
[তাবরানী মওকুফ সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেন। হাদিসটি বিশুদ্ধ]
★২. হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে
وَعَنْ عَلِيّ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «البَخِيلُ مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ، فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রকৃত কৃপণ সেই ব্যক্তি, যার কাছে আঁমি উল্লিখিত হলাম (আঁমার নাম উচ্চারিত হল), অথচ সে আঁমার প্রতি দরূদ পাঠ করল না।”(তিরমিযী, হাসান সহীহ)
[তিরমিযী ৩৫৪৬, আহমাদ ১৭৩৮]
👏অপর হাদিস শরীফেও এসেছে
عَنْ أَبِي ذر رَضِي اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم قَالَ : إِنَّ أَبْخَلَ النَّاسِ مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ . رواه أسماعيل القاضي في فضل الصلاة على النبي صلي الله عليه وسلم ، فضل الصلاة على النبى للألبانى)
“আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,সেই ব্যক্তি বড় কৃপণ,যার কাছে আঁমার নাম নেওয়া হল,কিন্তু সে আঁমার উপর দরূদ পড়ল না।
[ঈসমাঈল আল-কাযী: ৩৭। (সহীহ)]
♦দরুদ শরীফ না পড়ার শাস্তি বা না পড়লে কি ক্ষতি হবে-২য় পর্ব
★৩. রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন “যার কাছে আঁমার আলোচনা হল,আর সে আঁমার উপর দরূদ শরীফ পড়ল না, তবে সে জান্নাতের রাস্তা ভুলে গেল।”
[মুজাম কবীর,৩য় খন্ড,১২৮ পৃ: হাদিস- ২৮৮৭]
★৪. শেরে খোদা,হযরত আলী (রা:) বলেন: “হুযুর হযরত মুহাম্মদصَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এবং আওলাদে মুহাম্মদ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এঁর উপর দরূদ পাক পাঠ করার আগ পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া পর্দার (আড়ালে) থাকে।”
[মুজাম আওসাত,১ম খন্ড,২১১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৭১]
★৫. হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই অভিশাপ দিলেন যে, “সেই ব্যক্তির নাক ধূলা-ধূসরিত হোক, যার কাছে আঁমার নাম উল্লেখ করা হল, অথচ সে (আঁমার নাম শুনেও) আঁমার প্রতি দরূদ পড়ল না।” (অর্থাৎ ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলল না।) (তিরমিযী হাসান)
[তিরমিযী ৩৫৪৫, আহমাদ ৭৪০২]
★৬. রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন “যে লোক নিজেদের মজলিশ থেকে আল্লাহ্তা আলার যিকির এবং হুযুর (ﷺ) এঁর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা ব্যতীত উঠে যায়,তবে সে দুর্গন্ধময় লাশ থেকে উঠল।”
[শুয়াবুল ঈমান, ২য় খন্ড, ২১৫ পৃষ্ঠা, হাদিস- ১৫৭০]
★৭. রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন “যে (ব্যক্তির) নিকট আঁমার আলোচনা হল, আর সে আঁমার উপর দরূদ শরীফ পড়ল না,তবে সে জুলুম করল।”
[মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক,২য় খন্ড, ১৪২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩১২৬]
♦দরুদ শরীফ না পড়ার শাস্তি বা না পড়লে কি ক্ষতি হবে-৩য় পর্ব
★৮. রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন “যে (ব্যক্তির) নিকট আঁমার আলোচনা হল, আর সে আঁমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করল না, সে নিশ্চিত দূর্ভাগা হয়ে গেল।”
[আমলুল ইয়াউম ওয়াল লাইলাতি ইবনিস সুন্নতী, ৩৩৬ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৮১]
★৯. ইমাম ইবনে মাজাহ (রহঃ) হযরত আব্দুল্লা ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেন,হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি আঁমার উপর দুরূদ শরীফ পড়া ভুলে গেছে মূলত সে জান্নাতের পথই ভুলে গেছে।
[ইবনে মাজাহ,পৃ: নং-৬৫]
★১০. মালেক বিন হুয়াইরিস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,‘একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিম্বরে উঠেন,প্রথম সিঁড়িতে উঠে আমীন বলেন। অতঃপর দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠে বললেন,আমীন। অতঃপর তৃতীয় সিঁড়িতে উঠে বললেন, আমীন। অতঃপর বললেন, আঁমার নিকট জিবরীল (আঃ) এসে বললেন,
হে মুহাম্মাদ (ﷺ) ! যে ব্যক্তি রমযান মাসে উপনীত হওয়ার পরও তার জীবনের গোনাহকে ক্ষমা করাতে পারল না, আল্লাহ তাকে রহমত থেকে দূর করুন। আঁমি তা শুনে বললাম, আমীন। তারপর বলেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অথবা তাদের একজনকে পেল, অথচ (তাদের সাথে সদ্ব্যহার না করে) জাহান্নামে প্রবেশ করল, আল্লাহ তা‘আলা তাকেও তাঁর রহমত থেকে দূর করুন। আঁমি বললাম, আমীন।
অতঃপর বললেন, যে ব্যক্তির সামনে আঁপনার নাম উচ্চারিত হওয়ার পর আঁপনার উপর দরূদ পাঠ করল না, সেও আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে দূর হোক। আঁমিও তাতে বললাম,আমীন’।
*****দলিল******
*(ক.) সহীহ ইবনু হিববান,২য় খন্ড,পৃ: ৩০৮, হা/৪১০,৩য় খন্ড,পৃ: ৩০৪, হা/৯০৯
*(খ.) সহীহ আত-তারগীব,হা/৯৯৬
👏অপর হাদিস শরীফেও ইরশাদ হয়েছে
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ: رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم: رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ ذَكََرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ وَرَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ دَخَلَ عَلَيْهِ رَمَضَانُ ثُمَّ انْسَلَخَ قَبْلَ أَنْ يُغْفَرَ لَهُ ، وَرَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ أَدْرَكَ عِنْدَهُ أَبْوَاهُ الْكِبَرَ فَلَمْ يُدْخِلاَهُ الْجَنَّةَ . (صحيح ، رواه الترمذي ، صحيح سنن الترمذى للألبانى الجزء الثالث. (
“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,সেই ব্যক্তি লাঞ্ছিত হোক যার কাছে আঁমার নাম নেওয়া হল কিন্তু সে আঁমার উপর দরূদ পড়ল না।সে ব্যক্তি লাঞ্ছিত হোক যার কাছে রমযান মাস আসল কিন্তু সে নিজের পাপ ক্ষমা করাতে পারল না। আর সে ব্যক্তিও লাঞ্চিত হোক যে পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল,কিন্তু তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না।
[তিরমিযী: হাদিস: ২৮১০ (সহীহ)]
👏রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম মোবারক শুনে যে ব্যক্তি দরূদ পড়ে না তার জন্য জিবরীল আলাইহিস সালাম “বদ-দো‘আ” করেছেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “আমীন” বলেছেন।
عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ رَضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ: رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم: أُحْضُرُوْا الْمِنْبَرَ، فَحَضَرْنَا فَلَمَّا ارْتَقَى الدَّرَجَةَ قَالَ: آمِيْنَ ، ثُمَّ ارْتَقَي الدَّرجَةَ الثَّانِيَةَ فَقَالَ: آمِيْنَ ، ثُمَّ ارْتَقَي الدَّرَجَةَ الثَّالِثَةَ فَقَالَ :آمِيْنَ ، فَلَمَّا فَرَغَ نَزَلَ عَنْ الْمِنْبَرِ قَالَ: فَقُلْنَا لَهُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ صلي الله عليه وسلم لَقَدْ سَمِعْنَا مِنْكَ الْيَوْمَ شَيْئُا مَا كُنَّا نَسْمَعُهُ. قَالَ: إِنَّ جِبْرِيْلَ عَرَضَ لِي فَقَالَ: بَعُدَ مَنْ أَدْرَكَ رَمَضَانَ فَلَمْ يُغْفَرْ لَهُ ، فَقُلْتُ: آمِيْنَ ، فَلَمَّا رَقِيْتُ الثَّالِثَةَ قَالَ: بَعُدَ مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ الْكِبَرَأَوْ أَحَدَهُمَا فَلَمْ يُدَخِلاَهَ الْجَنَّةَ. فَقُلْتُ: آمِيْنَ. (صحيح ، رواه الحاكم ، فضل الصلاة على النبى للألبانى)
“কা‘ব ইবনু উজরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,তোমরা মিম্বরের কাছে একত্রিত হও। আমরা উপস্থিত হলাম। যখন তিঁনি মিম্বরের প্রথম স্তরে চড়লেন তখন বললেন, হে আল্লাহ কবুল করুন। তারপর যখন দ্বিতীয় স্তরে চড়লেন তখনও বললেন,হে আল্লাহ কবুল করুন। তারপর তৃতীয় স্তরে চড়ে আবারও বললেন,হে আল্লাহ কবুল করুন।খুতবা শেষে যখন মিম্বর থেকে অবতরণ করলেন,তখন আমরা বললাম,হে আল্লাহর রাসূল! আজ আমরা আঁপনার থেকে এমন কিছু শুনলাম যা এর পূর্বে আর কখনও শুনিনি।তখন তিঁনি বললেন, আমার কাছে জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে বলল, যে ব্যক্তি রমযান পেয়েও তাকে ক্ষমা করা হল না সে বঞ্চিত হোক। তখন আঁমি বললাম,হে আল্লাহ কবুল করুন।যখন দ্বিতীয় স্তরে চড়লাম তখন তিঁনি বললেন, যার কাছে আঁপনার নাম উল্লেখ করা হল কিন্তু সে আঁপনার উপর দরূদ পড়ল না,সেও বঞ্চিত হোক।তখন আঁমি বললাম,হে আল্লাহ কবুল করুন। যখন তৃতীয় স্তরে চড়লাম,তখন তিঁনি বললেন, যে পিতা-মাতাকে অথবা তাদের কোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েও তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না সেও বঞ্চিত হোক।তখন আঁমি বললাম,হে আল্লাহ কবুল করুন।
[হাকিম: হাদিস-১৯। (সহীহ)]
♦দরুদ শরীফ না পড়ার শাস্তি বা না পড়লে কি ক্ষতি হবে-৪র্থ পর্ব
★১১. হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোন সম্প্রদায় এমন কোন মজলিস বসলো,যাতে না আল্লাহর যিকর করলো,না আঁপন নবীর উপর দরুদ শরীফ পড়লো,ওই মজলিস তাদের জন্য অনুশোচনা হবেই।মহান রব চাইলে তাদেরকে তজ্জন্য শাস্তি দেবেন,চাইলে ক্ষমা করে দেবেন।
*****দলিল****
*(ক.) তিরমিযী শরীফ,৫ম খন্ড,২৪৭ পৃ: হাদিস- ৩৩৯১
*(খ.) মিশকাত শরীফ,বাবে যিকিরিল্লাহ অধ্যায়, হাদিস নং-২১৬৫
👏আবার এভাবেও হাদিস শরীফে এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরূদ পাঠ না করা কিয়ামতের দিন অনুতাপের কারণ হবে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم : مَا قَعَدَ قَوْمٌ مَقْعَدًا لَمْ يَذْكُرُوْا فِيْهِ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ وَيُصلُّوا عَلَى النَّبيِّ إِلاَّ كَانَ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَإِنْ دَخَلُوْا الْجَنَّةَ للثَّوَابِ . ( صحيح ، رواه أحمد وابن حبان والحاكم والخطيب، سلسلة الأحاديث الصحيحة للألبانى الجزء الأول(
“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,যে মজলিসে লোকেরা আল্লাহর যিকির করে না এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরূদ পড়ে না,সেই মজলিস কিয়ামতের দিন তাদের জন্য অনুতাপের কারণ হবে।যদিও নেক আমলের কারণে জান্নাতে চলে যায়।
[আহমদ,ইবনু হিব্বান,হাকিম,খতীব ৭৬। (হাদিসটি সহীহ)]
👌মোটকথা হল: যখন কোথাও মজলিস বা অনুষ্ঠান হবে, তখন তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরূদ পড়া ও আল্লাহর যিকির করা খুবই জরুরী। অন্যথায় তা আমাদের জন্য অনুতাপ ও পরিতাপের কারণ হবে।
👏রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন “যে সব লোক কোন মজলিশে বসল, আল্লাহ্ তাআলার যিকির এবং হুযুর (ﷺ) এঁর উপর দরূদ শরীফ পড়ানো হয় না, ঐ সব লোক কিয়ামতের দিন যখন তাদের পরিণাম দেখবে তবে তাদের উপর চরম অনুশোচনা সৃষ্টি হবে। যদিও তারা জান্নাতে প্রবেশ করে।”
[মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল,৩য় খন্ড, ৪৮৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯৯৭২]
★১২. হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে
وَعَنْ فَضَالَةَ بنِ عُبَيْدٍ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلاً يَدْعُو فِي صَلاَتِهِ لَمْ يُمَجِّدِ الله تَعَالَى، وَلَمْ يُصَلِّ عَلَى النَّبيِّ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «عَجِلَ هَذَا» ثُمَّ دَعَاهُ فَقَالَ لَهُ – أَوْ لِغَيْرِهِ -: «إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأْ بِتَحْمِيدِ رَبِّهِ سُبْحَانَهُ، وَالثَّنَاءِ عَلَيْهِ، ثُمَّ يُصَلِّي عَلَى النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، ثُمَّ يَدْعُو بَعْدُ بِمَا شَاءَ» . رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
ফাযালা ইবনে উবাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি লোককে নামাযে প্রার্থনা করতে শুনলেন। সে কিন্তু তাতে আল্লাহর প্রশংসা করেনি এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদও পড়েনি। এ দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “লোকটি তাড়াহুড়ো করল।” অতঃপর তিনি তাকে ডাকলেন ও তাকে অথবা অন্য কাউকে বললেন, “যখন কেউ দো‘আ করবে, তখন সে যেন তার পবিত্র প্রতিপালকের প্রশংসা বর্ণনা যোগে ও আমার প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করে দো‘আ আরম্ভ করে, তারপর যা ইচ্ছা (যথারীতি) প্রার্থনা করে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী)
******দলিল******
*(ক.) আবূ দাউদ ১৪৮১
*(খ.) তিরমিযী ৩৪৭৬, ৩৪৭৭
*(গ.) নাসায়ী ১২৮৪
*(ঘ.) আহমাদ ২৩৪১৯
👌অপর রেওয়ায়েতে এসেছে।
“যখন তোমাদের কেউ নামায শেষ করবে তখন আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি শুরু করবে। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়বে।অতঃপর যা ইচ্ছা দোয়া করবে”।বর্ণনাকারী বলেন: এরপর অপর এক লোক নামায আদায় করল। সে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়ল।তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “ওহে নামাযী! দোয়া কর, আল্লাহ তোমার দোয়া কবুল করবেন”
[সুনানে তিরমিযি ৩৪৭৭]
🌹এছাড়া ও নাসীর উদ্দীন আলবানী ও সহিহুত তিরমিযি গ্রন্থে (২৭৬৫), (২৭৬৭) হাদিসটিকে সহিহ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
👏দো‘আ করা আগে ও পরে দরূদ পাঠ করা দ্বারা দো‘আ কবুল হয়। আর যদি দরূদ পাঠ করা না হয়, তাহলে দো‘আ কবুল হয় না।
عَنْ عَبْدِاللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ: كُنْتُ أُصَلّي وَالنَّبِيُّ صلي الله عليه وسلم وَأَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ رَضِي اللهُ عَنْهُمَا مَعَهُ ، فَلَمَّا جَلَسْتُ بَدَأْتُ بِالثَّنَاءِ عَلَي اللهِ ثُمَّ الصَّلاَةِ عَلَى النَّبِىِّ صلي الله عليه وسلم ثُمَّ دَعَوْتُ لِنَفْسِي فَقَالَ النَّبِىُّ صلي الله عليه وسلم : سَلْ تُعْطَهْ ، سَلْ تُعْطَهْ . (حسن ، رواه الترمذي ، صحيح سنن الترمذى للألبانى الجزء الأول (
“আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,আমি সালাত আদায় করছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর সাথে ছিলেন। যখন আমি বসলাম তখন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করলাম। অতঃপর নিজের জন্য দো‘আ করলাম।তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর,তোমাকে অবশ্যই দেওয়া হবে। তুমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর তোমাকে অবশ্যই দেওয়া হবে।
[তিরমিযী, হাদিস: ৪৮৬ (হাসান)]