মাজারে ফুল ইত্যাদির উত্থাপিত আপত্তিসমূহ ও এর জবাব

<div>দ্বিতীয় অধ্যায়</div><div><br></div><div>আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে উত্থাপিত আপত্তিসমূহ ও এর জবাব</div><div><br></div><div><br></div><div>প্রথম অধ্যায়ে উল্লেখিত তিনটি বিষয়ে বিরোধিতাকারীগণ নিম্নবর্ণিত আপত্তিসমূহ নানাভাবে উত্থাপিত করে থাকে।</div><div><br></div><div><br></div><div>১নং আপত্তি:- হুযুর ﷺ ইরশাদ ফরমান-</div><div><br></div><div><br></div><div>إِنَّ اللهَ لَمْ يَأْمُرْنَا أَنْ نَكْسُوَ الْحِجَارَةَ وَالطِّينَ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নির্দেশ দেননি যে,পাথরসমূহ ও মাটিকে কাপড় পরাতে।’’ ২০৪</div><div><br></div><div>{ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৩/১৬৬৬ পৃঃ হা/২১০৭, পরিচ্ছেদ: بَابُ لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلَا صُورَةٌ}</div><div><br></div><div><br></div><div>এর থেকে বোঝা যায় কবরসমূহের উপর গিলাফ বা চাদর চড়ান হারাম, কারণ ওখানেও পাথর ও মাটি আছে।</div><div><br></div><div><br></div><div>উত্তর : এ হাদীছ দ্বারা ঘরের দরজাসমূহে বিনা প্রয়োজনে অহংকারমূলক পরদা টাঙানোকে বোঝানো হয়েছে এবং তাও তকওয়া স্বরূপ বলা হয়েছে অর্থাৎ ঘরবাড়ী সজ্জিতকরণ তকওয়ার বরখেলাপ। ওই হাদীছের মধ্যেই সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে যে, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) ঘরের দেয়ালে পর্দা দিয়েছিলেন। হুযুর ﷺ ওটা ছিঁড়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন। তাই আওলিয়া কিরামের কবরসমূহে অর্পিত চাদরের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। কাবা শরীফে মূল্যবান কালো গিলাফ ও রসূলে পাকের রওযায় সবুজ গিলাফ রয়েছে। কাবা শরীফের গিলাফ হুযুরের যুগেই ছিল। তাই ওটা জায়েয হলে, কবরসমূহের চাদরও নিশ্চয় জায়েয হবে।</div><div><br></div><div><br></div><div>২নং আপত্তি:- কবরসমূহে ফুল অর্পন, চাদর চড়ান ও বাতি জ্বালানো ইসরাফ (অনর্থক) ও অপব্যয় মাত্র। তাই এগুলো নিষেধ। আওলিয়া কিরামের কবর সমূহে অনেক ফুল অর্পন ও বাতি জ্বালানো হয়ে থাকে। অথচ প্রয়োজনে মিটাতে একটি ফুল একটি বাতিই যথেষ্ট।</div><div><br></div><div><br></div><div>উত্তর : ইসরাফ অর্থ বেফায়দা পয়সা খরচ করা কিন্তু ওই সব ফুল, বাতি ও চাদরসমূহে কি ফয়দা রয়েছে, তা আমি প্রথম অধ্যায়ে আলোকপাত করেছি। সুতরাং এগুলোকে বেফায়দা বলা যাবে না, অপব্যয়ের অভিযোগও ভিত্তিহীন। আমরা কোর্তার উপর ওয়াজকোট পরি। আবার এর উপর আছকানও পরিধান করি, তাও মূল্যবান কাপড়ের হয়ে থাকে। অথচ একটি মামুলী কোর্তা দিয়ে কাজ চলে। তাহলে এটা অপব্যয় হলো কিনা? অনুরূপ ইমারত, সুস্বাদু খাদ্য, যানবাহন এবং অন্যান্য দুনিয়াবী আরামের জন্য যথেষ্ট ব্যয় করা হয়। অথচ এর থেকে ঢের কম খরচেও কাজ চলে।</div><div><br></div><div><br></div><div>কিন্তু এ গুলোকে অপব্যয় বলা যায় না। যেটাকে শরীয়ত হালাল বলেছে, ওটা সর্বক্ষেত্রে হালাল।</div><div><br></div><div><br></div><div>قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللَّهِ الَّتِي أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘বলুন আল্লাহর সৌন্দর্যকে হারাম করেছে, যা মানুষের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।’’ ২০৫</div><div><br></div><div>{সূূরা আ’রাফ, আয়াত নং-৩২।}</div><div><br></div><div><br></div><div>৩নং আপত্তি:- মিশকাল শরীফের المسجد অধ্যায়ে আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَائِرَاتِ الْقُبُورِ، وَالْمُتَّخِذِينَ عَلَيْهَا الْمَسَاجِدَ وَالسُّرُجَ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘হুযুর ﷺ কবর যিয়ারতকারীদের কবরের উপর মসজিদ নির্মাণকারীদের ও বাতি প্রজ্জলনকারীদের উপর লানত দিয়েছেন।’’ ২০৬</div><div><br></div><div>{টিকাঃ</div><div><br></div><div>ইমাম নাসাঈ, আস-সুনান, ৪/৯৪ পৃঃ হা/২০৪৩, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৩/২১৮ পৃঃ হা/৩২৩৬, এ দুটি গ্রন্থের তাহকীকে আলবানী এটিকে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর ছাত্র ‘আবু ছালেহ (বাযাম) এর কারনে যঈফ বলেছেন। আসলেই মূলত হাদিসটি যঈফ, যার বিস্তারিত আলোচনা পাবেন ‘মাযার জিয়ারত সুন্নাত না পূজা?’ গ্রন্থে। খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/২৩০ পৃঃ হা/৭৪০}</div><div><br></div><div><br></div><div>এর থেকে বোঝা গেল কবরে বাতি জ্বালান মানে লানতের ভাগী হওয়া।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ ফতয়োয়ে আলমগীরীতে, বর্ণিত আছে:-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَإِخْرَاجُ الشُّمُوعِ إلَى رَأْسِ الْقُبُورِ فِي اللَّيَالِيِ الْأُوَلِ بِدْعَةٌ كَذَا فِي السِّرَاجِيَّةِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘(দাফনের) প্রথম রাতে (সন্ধায়) কবরের মাথার সামনে বাতি নেয়া বিদ‘আত; যেমনটি সিরাজিয়া গ্রন্থে রয়েছে।’’ ২০৭</div><div><br></div><div>{নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে হিন্দীয়া, ৫/৩৫১ পৃঃ}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ ফতওয়ায়ে শামীর দ্বিতীয় খন্ড কিতাবুস সাওম এ বর্ণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>أَمَّا لَوْ نَذَرَ زَيْتًا لِإِيقَادِ قِنْدِيلٍ فَوْقَ ضَرِيحِ الشَّيْخِ أَوْ فِي الْمَنَارَةِ كَمَا يَفْعَلُ النِّسَاءُ مِنْ نَذْرِ الزَّيْتِ لِسَيِّدِي عَبْدِ الْقَادِرِ وَيُوقَدُ فِي الْمَنَارَةِ جِهَةَ الْمَشْرِقِ فَهُوَ بَاطِلٌ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘যদি কেউ কোন পীরবুযুর্গের কবরের উপর বা মিনারায় প্রদীপ জ্বালানোর উদ্দেশ্যে তৈল লানত করে, যেমন মহিলারা হুযুর গউছে পাকের নামে তৈল মানত করে এবং পশ্চিম মিনারায় জ্বালায় এগুলো সব বাতিল।’’ ২০৮</div><div><br></div><div>{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৩৯-৪৪০}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ কাজী ছানাউল্লাহ ছাহেব পানিপথী “ইরশাদুত্তালেবীন” গ্রন্থে লিখেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>كه چراغاں كردن بدعت است پيغمبر خدا برشمع افروزا نزد قبر وسجده كنند گاں لعنت گفته.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘বাতি জ্বালান বিদআত। হুযুর ﷺ কবরের পার্শ্বে বাতি প্রজ্জলনকারী ও সিজদাকারীদের উপর লানত দিয়েছেন।’’ ২০৯</div><div><br></div><div>{কাজী ছানাউল্লাহ ছাহেব পানিপথী “ইরশাদুত্তালেবীন” গ্রন্থ}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ শাহ আবদুল আযীয ছাহেব তাঁর ফতওয়ার কিতাবের ১৪ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>واما ارتكاب محرمات از روشن كردن چراغها وملبوس ساختن قبور بدعت شنيعه اند.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘কিন্তু উরসসমূহে হারাম কাজ করা যেমন বাতি জ্বালান. ওসব কবরে গিলাফ চড়ান ইত্যাদি সবই বিদআতে সাইয়া।’’ ২১০</div><div><br></div><div>{শাহ আবদুল আযীয ছাহেব তাঁর ফতওয়ার কিতাবের ১৪ পৃষ্ঠা}</div><div><br></div><div><br></div><div>উপরোক্ত ইবরাতসমূহ দ্বারা পরিষ্কার বোঝা গেল মাযারসমূহে বাতি মাত্রই হারাম। হেরমাইন শরীফাইনে (মক্কা-মদীনা) বাতি জ্বালানোটা কোন দলীল হতে পারে না। কেননা, এটা খায়রুল কুরুনের (সাহাবী তাবেয়ীন ও তবে তাবেয়ীনের যুগ) পর চালু হয়েছে যার কোন গুরুত্ব নেই। তুর্কী সরকারই এটা চালু করেছে।</div><div><br></div><div><br></div><div>উত্তরঃ এ আপত্তিটা মূলতঃ ছয়টি আপত্তির সমষ্টি। এগুলোর বলে বলীয়ান হয়ে ভিন্নমত পোষণকারী অনেক গলাবাজী করে থাকে। তাই মনোযোগ সহকারে এবার জবাবটা শুনুল। আমি প্রথম অধ্যায়ে উলে­খ করেছি যে কোন কবরে বেফায়দা বাতি জ্বালানো নিষেধ, কারণ এটা অপব্যয় কিন্তু কোন ফায়দার উদ্দেশ্যে হলে, তখন জায়েয। চারটি ফায়দার কথা বর্ণনা করা হয়েছে- তিনটি সাধারণ মুসলমানদের কবরের বেলায় আর চতুর্থটি আওলিয়া, মাশায়িখ ও উলামায়ে কিরামের কবরসমূহের সম্মানের জন্য। ওই হাদীছে কবরে বাতি জ্বালানোর ব্যাপারে যেই নিষেধবাণী রয়েছে, তা বেফায়দা জ্বালানোর বেলায় প্রযোজ্য। যেমন</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ মিশকাত শরীফের হাশিয়ায় (হাশীয়া প্রণেতা মেরকাত থেকে সংকলন করেছেন) ওই হাদীছের প্রেক্ষাপটে বর্ণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَالنَّهْيُ عَنِ اتِّخَاذِ السُّرُجِ لِمَا فِيهِ مِنْ تَضْيِيعِ الْمَالِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘কবরসমূহে বাতি জ্বালান এজন্য নিষেধ, কারণ এতে অপব্যয় হয়।’’ মিরকাত শরহে মিশকাত ও অন্যান্য কিতাবে অনুরূপ ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ হাদীকায়ে নদীয়া শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদীয়ার দ্বিতীয় খণ্ডের ৪২৯ পৃষ্ঠায় ওই হাদীছের উলে­খপূর্বক বর্ণনা করা হয়েছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>اَىْ الَّذِيْنَ يَوْقِدُوْنَ السَّرُجَ عَلَى الْقُبُوْرِ عَبْثًا مِّنْ غَيْرِ فَائِدَة.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘সেসব লোকদের উপর লানত দিয়েছেন, যারা করবসমূহে অনর্থক বাতি জ্বালায়।’’ </div><div><br></div><div>{আব্দুল গনী নাবলুসী, হাকিকাতুন নাদিয়াহ শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদীয়াহ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪২৯।}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ মিশকাত শরীফের الدفن অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ قَبْرًا لَيْلًا فَأُسْرِجَ لَهُ بِسِرَاجٍ.</div><div><br></div><div>-‘‘নবী করীম (ﷺ) এক রাত্রে লাশ দাফন করার উদ্দেশ্যে কবরস্থানে তশরীফ নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন তাঁর জন্য বাতি জ্বালানো হয়েছিল।’’ ২১৩</div><div><br></div><div>{ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৫/২৯৮ পৃঃ হা/১৫১৪, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৫৩৪ পৃঃ হা/১৭০৬, সনদটি সামন্য দুর্বল হলেও ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।}</div><div><br></div><div><br></div><div>দ্বিতীয়তঃ হাদীছ শরীফে আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَالْمُتَّخِذِينَ عَلَيْهَا الْمَسَاجِدَ وَالسُّرُجَ.</div><div><br></div><div>হুযুর ﷺ ওদের উপর লানত দিয়েছেন, যারা কবরের উপর মসজিদ তৈরী করেছে এবং বাতি জ্বালিয়েছে ২১৪</div><div><br></div><div>{টিকাঃ</div><div><br></div><div>ইমাম নাসাঈ, আস-সুনান, ৪/৯৪ পৃঃ হা/২০৪৩, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৩/২১৮ পৃঃ হা/৩২৩৬, এ দুটি গ্রন্থের তাহকীকে আলবানী এটিকে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর ছাত্র ‘আবু ছালেহ (বাযাম) এর কারনে যঈফ বলেছেন। আসলেই মূলত হাদিসটি যঈফ, যার বিস্তারিত আলোচনা পাবেন ‘মাযার জিয়ারত সুন্নাত না পূজা?’ গ্রন্থে। খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/২৩০ পৃঃ হা/৭৪০}</div><div><br></div><div><br></div><div>মোল্লা আলী কারী, শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী ও অন্যান্য ব্যাখ্যাকারীগণ ওই হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেছেন স্বয়ং কবরের উপর এভাবে মসজিদ তৈরী করা যে কবরের দিকে সিজদা দিতে হয় বা কবর মসজিদের দেয়ালের ভিতর পড়ে যায়, এ ধরনের মসজিদ তৈরী করা নিষেধ। কিন্তু যদি কবরের দেয়ালের ভিতর পড়ে যায়, এ ধরনের মসজিদ তৈরী করা নিষেধ। কিন্তু যদি কবরের পার্শ্বে বরকতের জন্য মসজিদ তৈরী করা যায়, তাহলে জায়েয। অর্থাৎ এ হাদীছে ব্যবহৃত علٰى শব্দটাকে তাঁরা হাকিকী (সঠিক) অর্থে প্রয়োগ করেছেন। যার ফলে স্বয়ং কবরের উপর বাতি জ্বালানোও নিষেধ বলতে বাধ্য। কিন্তু ঠিক কবরের উপর না হয়ে যদি আশে-পাশে হয়, তাহলে জায়েয, যেমন আমি গম্বুজ শীর্ষক আলোচনায় ব্যক্ত করেছি।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ অধিকন্তু প্রখ্যাত ‘হাদীকায়ে নদিয়া’ গ্রন্থে আল্লামা নাবলুসী (رحمة الله) এ হাদীছের ব্যাখ্যায় লিখেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَالْمُتَّخِذِينَ عَلَيْهَا اى على القبور يعنى فوقها.</div><div><br></div><div><br></div><div>অর্থাৎ ঠিক কবরের উপর বাতি রাখা। এর কারণ হচ্ছে বাতি হলো আগুন এবং কবরের উপর আগুন রাখা পাপ। ২১৫</div><div><br></div><div>{আব্দুল গনী নাবলুসী, হাকিকাতুন নাদিয়াহ শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদীয়াহ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪২৯।}</div><div><br></div><div><br></div><div>এ জন্যই ফকীহগণ কবরে শুকনা কাঠের তক্তা দিতে নিষেধ করেছেন। কেননা এর মধ্যে আগুনের প্রভাব রয়েছে। কিন্তু কবরের পার্শ্বে থাকলে, তা নিষেধ নয়। তদ্রুপ বাতি আগুন হওয়ার কারণেই নিষেধ করা হয়েছে কিন্তু কবরের তাযীমের জন্য নিষেধ করা হয়নি। এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয় যে এ হাদীছে ব্যবহৃত علٰى শব্দটি মসজিদ ও বাতি উভয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু আপনারা উক্ত শব্দটি মসজিদের জন্য এক অর্থে আর বাতির জন্য অন্য অর্থে ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ মসজিদের ক্ষেত্রে হাকীকী অর্থে (অর্থাৎ ঠিক কবরের উপর) আর বাতির ক্ষেত্রে মেজাযী অর্থে (অর্থাৎ কবরের কাছে) ব্যবহার করেছেন। এতে হাকীকী ও মেজাযীর সংমিশ্রণ প্রকাশ পায়, যা অবৈধ। সুতরাং উভয় ক্ষেত্রে علٰى শব্দটি হাকীকী অর্থে প্রযোজ্য।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতে এ হাদীছের প্রেক্ষাপটে মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) বলেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَقَيْدُ " عَلَيْهَا " يُفِيدُ أَنَّ اتِّخَاذَ الْمَسَاجِدِ بِجَنْبِهَا لَا بَأْسَ بِهِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘এ হাদীছ ‘উপরের’ শর্তারোপ করা হয়েছে। যদ্বারা বোঝা গেল যে কবরের পার্শ্বে মসজিদ তৈরী করতে কোন বাধা নেই।’’ ২১৬</div><div><br></div><div>{মোল্লাল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ২/৬১৯পৃঃ হা/৭৪০}</div><div><br></div><div><br></div><div> علٰى শব্দ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, কবরের বরাবর পার্শ্বে মসজিদ তৈরী করা জায়েয। অনুরূপ একই শব্দ থেকে এটাই বোঝা গেল যে কবরের পার্শ্বে বাতি জ্বালানো জায়েয।</div><div><br></div><div><br></div><div>তৃতীয়তঃ আমি ‘গম্বুজ’ শীর্ষক আলোচনায় ফতওয়ায়ে শামী ও অন্যান্য কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছি যে, অনেক বিষয় সাহাবায়ে কিরামের যুগে নিষিদ্ধ ছিল কিন্তু বর্তমানে তা মুস্তাহাবে পরিণত হয়েছে। যেমন</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ তফসীরে রূহুল বয়ানে ১০ম পারায় সুরা তওবার- ২১৭</div><div><br></div><div>{সূূরা তাওবাহ, আয়াত নং-১৮।}</div><div><br></div><div>إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ</div><div><br></div><div>আয়াতের তফসীরে লিখেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَفِى الاِحْيَاءِ اَكْثَرُ مَعْرُوْفَاتِ هَذِهِ الْاعصار مُنْكَرَاتٌ فِى عَصْرِ الصَّحَابَةٍ.</div><div><br></div><div>-‘‘ইহইয়ায়ে উলুম গ্রন্থে ইমাম গাযযালী বলেছেন যে, এ যুগের অনেক মুস্তাহাব কাজ সাহাবায়ে কিরামের যুগে নাজায়েয ছিল।’’ ২১৮</div><div><br></div><div>{ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৯৯।}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ মিশকাত শরীফের কিতাবুল ইমারত ما على الولاة অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, হযরত উমর (رضي الله عنه) নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেন কোন মুসলমান বিচারক খচ্চরের উপর আরোহণ না করেন, চাপাতি-রুটি না খান, পাতলা কাপড় পরিধান না করেন এবং নিজের দরজা প্রয়োজনীয় সাক্ষাৎপ্রার্থীদের জন্য বন্ধ না করেন। এরপর বলেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>فَإِنْ فَعَلْتُمْ شَيْئًا مِنْ ذَلِكَ فَقَدْ حَلَّتْ بِكُمُ الْعُقُوبَةُ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘যদি তোমরা এর কোন কিছু কর, তাহলে তোমাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে।’’ ২১৯</div><div><br></div><div>{খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ২/১১০১, হা/৩৭৩০, ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৯/৪৯৩ পৃঃ হা/৭০০৯}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ একই মিশকাতের المسجدঅধ্যায়ে আছে -</div><div><br></div><div><br></div><div>عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا أُمِرْتُ بِتَشْيِيدِ الْمَسَاجِدِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘আমাকে উঁচু করে মসজিদ তৈরী করার নির্দেশ দেয়া হয়নি।’’  ২২০</div><div><br></div><div>{ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ১/১২২ পৃঃ  হা/৪৪৮, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/২২৪ পৃঃ  হা/৭১৮}</div><div><br></div><div><br></div><div>এর হাশিয়ায় আছে অর্থাৎ উঁচু করে মসজিদ তৈরী ও সাজসজ্জা করার নির্দেশ নেই।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ একই মিশকাতে আরও আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللَّهِ مَسَاجِدَ اللَّهِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে বাঁধা দিও না।’’  ২২১</div><div><br></div><div>{সুনানে আবি দাউদ, আস-সুনান, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৫৫, হাদিস-৫৬৬, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}</div><div><br></div><div><br></div><div>কুরআন শরীফের যাকাতের হকদার আট শ্রেণী বলা হয়েছে। অর্থাৎ মুয়াল্লাফাতুল কূলুব (যুদ্ধকালীন সময়ে হুযুর ﷺকে সাহায্যকারী কাফির)কেও যাকাতের হকদার বলা হয়েছে। কিন্তু হযরত উমরর ফারুকের যুগে কেবল সাত শ্রেণীকে বহাল রাখা হয়েছিল, এবং মুয়াল্লাফাতুল কুলুবকে বাদ দেয়া হয়েছিল। (হিদায়া ও অন্যান্য কিতাব দেখুন) বলুন, এখনও কি আট শ্রেণী অটল আছে? এখন যদি বিচারকগণ সাদাসিদে অবস্থায় থাকেন, জনগণের কাছে কোন পাত্তা পাবে কি? কাফিরদের ঘর-বাড়ী, মন্দির যদি সুউচ্চ অট্টালিকা হয়ে থাকে আর আল্লাহর ঘর মসজিদ যদি নিচু, কাঁচা এবং মামুলী ধরনের হয়ে থাকে, তাহলে এতে ইসলামের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ পায়। আর বর্তমান যুগে মহিলারা মসজিদে গেলে, অনেক অঘটন ঘটবে। কোন কাফিরকে যাকাত দেওয়া বর্তমানে জায়েয নেই। এখন প্রশ্ন হলো এ সমস্ত বিধানবলীর কেন পরিবর্তন করা হলো? এ জন্যই যে ওগুলোর ইল­ত পরিবর্তন হয়ে গেছে। ওই সময়ে বাহ্যিক চাকচিক্য ছাড়াই মুসলমানদের অন্তরে আওলিয়া কিরাম ও কবরস্থানের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ছিল। তাই তাদের জীবিত ও মৃত অবস্থা সাদাসিদে ছিল। কিন্তু বর্তমান দুনিয়াবী অবস্থা পরিবর্তন ও টিপ টপ হয়ে যাবার ফলে, ওইগুলোকে জায়েয ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন আগে নির্দেশ ছিল মাযারসমূহে আলোক সাজ্জা করো না। এখন জায়েয সাব্যস্ত হয়েছে।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ তফসীরে রুহুল বয়ানে -</div><div><br></div><div>إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ</div><div><br></div><div>আয়াতের প্রেক্ষাপটে বর্ণিত আছে যে, হযরত সুলায়মান (عليه السلام) বায়তুল মুকাদ্দাসের মিনারের উপর এমন আলোকসজ্জা করেছিলেন যে, বার মাইল দূরে বসে মহিলারা এ আলোতে সুতা কাটতো এবং অনেক সোনা-চাঁদি দ্বারা ওটাকে সজ্জিত করেছিলেন। বিরোধিতাকারীরা ফতওয়ায়ে আলমগীরীর যে ইবারত উদ্ধৃতি করেছে, তা ভুল। আসল ইবারত হচ্ছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَإِخْرَاجُ الشُّمُوعِ إلَى رَأْسِ الْقُبُورِ فِي اللَّيَالِيِ الْأُوَلِ بِدْعَةٌ كَذَا فِي السِّرَاجِيَّةِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘(দাফনের) প্রথম রাতে (সন্ধায়) কবরের মাথার সামনে বাতি নেয়া বিদ‘আত; যেমনটি সিরাজিয়া গ্রন্থে রয়েছে।’’ ২২২</div><div><br></div><div>{নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে হিন্দীয়া, ৫/৩৫১ পৃঃ}</div><div><br></div><div><br></div><div>উক্ত ইবারতে দু’টি শব্দ লক্ষণীয় একটি إِخْرَاجُ অপরটি فِي اللَّيَالِيِ الْأُوَلِ এ শব্দদ্বয় দ্বারা সুস্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, তৎকালীন যুগে লোকেরা নতুন কবরে সন্ধ্যায় গিয়ে বাতি জ্বালিয়ে দিয়ে আসতো। তারা মনে করতো যে এর ফলে মৃতব্যক্তি কবরে ভয় পাবে না। যেমন বর্তমান যুগে কতেক মহিলা চলি­শ দিন পযর্ন্ত কবরস্থানে মৃতব্যক্তির পার্শ্বে বাতি জ্বালায়। তারা মনে করে যে, প্রত্যেহ মৃতব্যক্তিদের রূহ কবরে আসে এবং অন্ধকার দেখলে ফিরে যায়। তাই বাতি জ্বালায়। এটা হারাম, কেননা, বিনা প্রয়োজনে তৈল খরচ বোঝায় এবং কুসংস্কারও বটে। এ ধরনের বাতি জ্বালানোকেই নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু উরসের বাতিতো আর এ নিয়তে হয় না। এবং রাতের শুরুতেও না। যদি উক্ত হাদীছের এ ভাবার্থ না হয়, তাহলে রাতের প্রারম্ভের শর্তারোপ কেন? শামীর ইবারত তো একেবারে সুস্পষ্ট। তিনিও উরস শরীফের বাতি জ্বালানকে নিষেধ করেন নি। তিনি বলেছেন যে, আওলিয়া কিরামের সান্নিধ্যলাভের প্রত্যাশা নিয়ে তাদের নামে বাতি জ্বালাবার মানত করা হারাম।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ দুররুল মুখতারে শামীর এ ইবারতের নিম্নরূপ ব্যাখ্যা দিয়েছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَاعْلَمْ أَنَّ النَّذْرَ الَّذِي يَقَعُ لِلْأَمْوَاتِ مِنْ أَكْثَرِ الْعَوَّامِ وَمَا يُؤْخَذُ مِنْ الدَّرَاهِمِ وَالشَّمْعِ وَالزَّيْتِ وَنَحْوِهَا إلَى ضَرَائِحِ الْأَوْلِيَاءِ الْكِرَامِ تَقَرُّبًا إلَيْهِمْ فَهُوَ بِالْإِجْمَاعِ بَاطِلٌ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘জানা দরকার যে, সাধারণ লোকেরা মৃতব্যক্তির নামে যে মানত করে এবং তাদের থেকে আওলিয়া কিরামের সান্নিধ্যে লাভের নামে যেই টাকা পয়সা, মোমবাতি বা তৈল ইত্যাদি করবে জ্বালানোর জন্য নেওয়া হয়, সর্বসম্মতভাবে বাতিল বলে গণ্য।’’ ২২৩</div><div><br></div><div>{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৩৯।}</div><div><br></div><div><br></div><div>স্বয়ং শামীর ইবারতেই আছে, لَوْ نَذَرَ যদি মানত করে এরপর শামীতে আরও বলা হয়েছে فَوْقَ ضَرِيحِ الشَّيْخِ শেখের কবরের উপর বাতি জ্বালান। ২২৪</div><div><br></div><div>{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৩৯।}</div><div><br></div><div><br></div><div>কবরের ঠিক জায়গাটাকে ضَرِيحِ বলা হয়। মুনতাখাবুল লুগাতে ضَرِيحِ কবরের গর্তকে বলা হয়েচে। আমি নিজেও ইতিপূর্বে উলে­খ করেছি যে স্বয়ং কবরের তাবুজের উপর বাতি জ্বালানো নিষেধ। অনুরূপ যদি কোন কবর নয়, এমনি কোন বুযুর্গের নামে কোন জায়গায় প্রদীপ রেখে জ্বালানো হয়। যেমন কতেক অজ্ঞ লোকেরা কতেক গাছে বা তাকে কারো নামে বাতি জ্বালায়, তাও হারাম। গাউছে পাকের নামে কোন পশ্চিমা মিনারে বাতি জ্বালাপনো বাতিল বলে যে বক্তব্যটি শামীতে আছে, তদ্বারা উপরোক্ত কথাটাই বোঝানো হয়েছে। গাউছে পাকের মাযার শরীফতো বাগদাদে অবস্থিত, অথচ এর জন্য বাতি জ্বালানো হচ্ছে সিরিয়ার মিনারে, এটাও বাতিল। সার কথা হলো আল্লামা শামী তিনটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন</div><div><br></div><div>(১) বাতি জ্বালানোর মানত করা, তাও আবার ওলীদের সান্নিধ্যলাভের নিয়তে,</div><div><br></div><div>(২) ঠিক কররের উপর বাতি জ্বালানো এবং</div><div><br></div><div>(৩) কবর ছাড়া কারো নামে বাতি জ্বালানো।</div><div><br></div><div>কিন্তু উরসের বাতি এ তিন বিষয়ের কোনটার পর্যায়ভূক্ত নয়।</div><div><br></div><div><br></div><div>মাসআলা:- কতেক অজ্ঞব্যক্তি কোন গাছ বা জায়গায় এ মেনে করে যিয়ারত করে ও বাতি জ্বালায় যে ওখানে অমুক বুযুর্গের আস্তানা আছে অর্থাৎ উনি ওখানে আসা যাওয়া করেন। এটা নিছক বাতুলতা মাত্র। তবে যদি কোন জায়গায় কোন বুযুর্গ কোন সময় বসেছিলেন বা ওখানে ইবাদত করেছিলেন, তাহলে ওই জায়গাটা বরকতময় মনে করে ওখানে ইবাদত করা জায়েয বরং সুন্নাত। বুখারী শরীফের ১ম খন্ড কিতাবুস সালাতে المسجد শীর্ষক আলোচনায় باب المسجد التى নামে একটি অধ্যায় দাঁড় করিয়েছেন। ওখানে উলে­খ করেছেন যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) রাস্তার ওই সমস্ত স্থানে নামায আদায় করতেন, যেখানে হুযুর ﷺ কোন সময় নামায পড়েছিলেন। এমনকি কোন কোন জায়গায় মসজিদ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু ভুলবশতঃ কিছু ব্যবধান স্থাপন করা হয়েছিল। তাই তিনি ওইসব মসজিদে নামায পড়তেন না বরং ওখানে পড়তেন, যেখানে হুযুর ﷺ নামায পড়েছিলেন।</div><div><br></div><div><br></div><div>فَلَمْ يَكُنْ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ يُصَلِّي فِي ذَلِكَ المَسْجِدِ، كَانَ يَتْرُكُهُ عَنْ يَسَارِهِ ২২৫</div><div><br></div><div><br></div><div>কেবল বরকত হাসিল করার জন্য এ রকম করেছিলেন। আজও কোন কোন হাজী সাহেবান গারে হেরায়, সেখানে হুযুর ﷺ ছয়মাস ইবাদত করেছিলেন, নামায আদায় করেন। সুতরাং খাজা আজমীরী ও অন্যান্য বুযুর্গানে কিরামের ইবাদতের স্থানসমূহে নামায আদায় করা, ওই স্থানগুলোর যিয়ারত করা এবং বরকতময় মনে করা সুন্নাতে সাহাবা দ্বারা প্রমাণিত।</div><div><br></div><div>{সহীহ বুখারী, কিতাবুস-সালাত, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৭০, হাদিস/৪৮৬}</div><div><br></div><div><br></div><div>মাসআলা:- আল্লাহর ওলীগণের নামে যে মানত করা হয়, তা শরীয়তের পরিভাষায় ব্যবহৃত নযর নয়। এটা কেবল শাব্দিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যার অর্থ উপহার যেমন আমি আমার শিক্ষককে বললাম, এই আপনার (নযর) উপহার। এ ধরনের উপহার বা নযর সম্পূর্ণ জাযেয়। ফকীহগণ ওলীগণের নামে ওই ধরনের নযর বা মানতকে হারাম বলেন, যা শরীয়তের পরিভাষায় ব্যবহৃত হয়। এজন্যই تَقَرُّبًا إلَيْهِمْ বলা হয়েছে শরীয়তের পরিভাষায় ব্যবহৃত নযর বা মানত ইবাদত তুল্য, যা আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো জন্য মানাটা নিঃসন্দেহে কুফরী। কেউ বললেন, “হে হুযুর গাউছে পাক, আমার জন্য দুআ করুন। যদি আমি রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করি, তাহলে আপনার নামে ডেক পাকাবো।” এর ভাবার্থ আপনি আমার খোদা; এ রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করার পর আপনার এ ইবাদত করবো, এ রকম কখনো হতে পারে না। বরং এর ভাবার্থ হবে আমি আল্লাহর ওয়াস্তে পোলাও সদকা করবো এবং এর থেকে যে ছওয়াব পাওয়া যাবে তা আপনাকে বখশিশ করবো। যেমন কোন ব্যক্তি কোন ডাক্তারকে বললো, যদি অসুখ থেকে ভাল হয়ে যাই, তাহলে আপনাকে পঞ্চাশ টাকা নযরানা দেব। এতে কোন পাপ হতে পারে না।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ এ বক্তব্যটা ফতওয়ায়ে শামীর কিতাবুসসওমের اموات শীর্ষক আলোচনায় এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>بِأَنْ تَكُونَ صِيغَةُ النَّذْرِ لِلَّهِ تَعَالَى لِلتَّقَرُّبِ إلَيْهِ وَيَكُونَ ذِكْرُ الشَّيْخِ مُرَادًا بِهِ فُقَرَاؤُهُ</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘নযর বা মানতটা আল্লাহর ইবাদতের অভিপ্রায়ে হয়ে তাকবে এবং বুযুর্গের কবরের কাছে অবস্থানরত ফকীরগণ এর হকদার হবে।’’ ২২৬</div><div><br></div><div>{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৩৯।}</div><div><br></div><div><br></div><div>এ ধরনের মানত মাত্রই জায়েয। এখানে সদকাটা হচ্ছে আল্লাহর নামে, ছওয়াবটা বখশিশ হচ্ছে শেখ বা ওলীর আ্মার নামে। আর ওই সদকার হকদার হচ্ছে ওলীর মাযারের খাদিমগণ ও ফকীরগণ। যেমন হযরত মরিয়ম (عليه السلام) এর জননী মানত করেছিলেন হে খোদা আমার পেটের বাচ্চাটা আপনার নামে মানত করছি। তাকে বায়তুল মুকাদ্দিসের খিদমতে নিয়োজিত করা হবে।</div><div><br></div><div><br></div><div>إِنِّي نَذَرْتُ لَكَ مَا فِي بَطْنِي مُحَرَّرًا ২২৭</div><div><br></div><div>{সূরা আলে ইমরান, আয়াত, ৩৫}</div><div><br></div><div><br></div><div>দেখুন, শরীয়তের দৃষ্টিতে আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো নামে শপথ করা নিষেধ। কিন্তু খোদ কুরআন করীম ও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়রুল্লাহর নামে শপথ করেছেন। যেমন কুরআন করীমে আছে -</div><div><br></div><div><br></div><div>وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ - وَطُورِ سِينِينَ.</div><div><br></div><div><br></div><div>ডুমুর ফুল, যায়তুন ও সিনাই পর্বতের শপথ ইত্যাদি  ২২৮</div><div><br></div><div>{সূূরা তীন, আয়াত নং-১২।}</div><div><br></div><div><br></div><div>এবং হুযুর ﷺ বলেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَفْلَحَ وَأَبِيهِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘ওর বাপের কসম, সে কৃতকার্য হয়েছে।’’  ২২৯</div><div><br></div><div>{সুনান আবি দাউদ, ৩/২২৩ পৃঃ  হা/৩২৫২, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/৪১ পৃঃ  হা/১১}</div><div><br></div><div><br></div><div>এতে বোঝা গেল যে শরয়ী শপথের বেলায় শপথের সমস্ত আহকাম, কাফ্ফারা ইত্যাতি প্রযোজ্য হবে এবং এটা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে করা যাবে না। কিন্তু শাব্দিক শপথ, যা বক্তব্যের প্রতি কেবল জোর দেয়ার জন্য করা হয় তা গায়রুল্লাহর নামে জায়েয। মানতের বেলায়ও একই বক্তব্য প্রযোজ্য। একজন মানত করেছিলেন যে সে বায়তুল মুকাদ্দিসে বাতি জ্বালানোর জন্য তৈল পাঠাবে। হুযুর ﷺ ওকে সেই মানত পূর্ণ করার জন্য বলেছেন।</div><div><br></div><div><br></div><div>মিশকাত শরীফ النذور শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে, কোন ব্যক্তি মানত করেছিল:- আমি বুয়ানা নামক স্থানে উট যবেহ করবো। তখন হুযুর ﷺ ইরশাদ ফরমান:- যদি ওখানে কোন মূর্তি ইত্যাদি না থাকে, তাহলে মানত পূর্ণ করুন। কেউ মানত করেছিল বাইতুল মুকাদ্দিসে নামায পড়বে। তখন হুযুর ﷺ বললেন, মসজিদে হারামে নামায পড়ে নিন। এসব হাদীছ থেকে বোঝা গেল যে, সদকা খায়রাত মানত করার সময় কোন নির্দিষ্ট জায়গা বা ভিক্ষুকগোষ্ঠীর শর্তারোপ করা জায়েয। আওরিয়া কিরামের নামে নযম বা মানত করাটাও তদ্রুপ।</div><div><br></div><div><br></div><div>ফতওয়ায়ে রশীদীয়ার ১ম খন্ড الخطر والاباحة অধ্যায়ের ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে:- “মৃত ওলীগণের নামে যে মানত করা হয়, এর দ্বারা যদি তাঁদের আ্মার প্রতি ছওয়ার পৌঁছানো উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে জায়েয। কিন্তু যেই মানত নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে তাঁদের হয়ে থাকে, তা হারাম।” ২৩০</div><div><br></div><div>{রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৪।}</div><div><br></div><div><br></div><div>মিশকাত শরীফের مناقب عمر শীর্ষ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, কয়েকজন গৃহবধু মানত করেছিলেন যে, যদি হুযুর ﷺ উহুদের যুদ্ধে থেকে সহীহ সালামতে ফিরে আসেন তাঁরা তাঁর (ﷺ) সামনে দফ دف (এক প্রকার ঢোল) বাজাবেন। এখানেও নযর বা মানত শব্দটি প্রচলিত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, শরয়ী অর্থে নয়। অর্থাৎ হুযুর ﷺ সমীপে আনন্দের উপহার স্বরূপ দপ বাজাবেন। ২৩১</div><div><br></div><div>{ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৬২০, হাদিস-৩৬৯০।}</div><div><br></div><div><br></div><div>মোট কথা হয় ‘নযর’ শব্দটি আভিধানিক ও শরীয়তের পারিভাষিক এ দু’অর্থে ব্যবহৃত হয়। আভিধানিক অর্থে বুযুর্গানেদ্বীনের নামে মানত বা নযর করা জায়েয। যেমন তকওয়াফের দু’টি অর্থ আছে:- শাব্দিক, যার অর্থ হচ্ছে আশে-পাশে ঘোরা এবং শরীয়ী, যার অর্থ হচ্ছে কাবাকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করা। যেমন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান -</div><div><br></div><div><br></div><div>وَلْيَطَّوَّفُوا بِالْبَيْتِ الْعَتِيقِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘যেন পুরানো ঘরের তওয়াফ করে।’’  ২৩২</div><div><br></div><div>{সূূরা হাজ্জ, আয়াত নং-২৯।}</div><div><br></div><div><br></div><div>এখানে তওয়াফ শরয়ী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অন্যত্র ইরশাদ করেছেন -</div><div><br></div><div><br></div><div>يَطُوفُونَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ حَمِيمٍ آنٍ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘ওরা জাহান্নামের অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটা-ছুটি করবে।’’ ২৩৩</div><div><br></div><div>এখানে শাব্দিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।</div><div><br></div><div>{সূরা আর-রাহমান, আয়াত নং-৪৪।}</div><div><br></div><div><br></div><div>৪। হযরত শাহ আবদুল আযীয ও কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথী (رحمة الله) নিঃসন্দেহে দু’জন বড় যুগে বুযুর্গ আলিম ছিলেন। কিন্তু তাঁরা মুজতাহিদ ছিলেন না। যার ফলে তাঁদের কথা থেকে মাকরূহ তাহরীমী ও হারাম প্রমাণিত হয় না, এর জন্য স্বতন্ত্র শরয়ী দলীলের প্রয়োজন হয়। একজন আলিমের কথা থেকে মুস্তাহাব বা জায়েয প্রমাণ করা যেতে পারে। ওটাকেও মুস্তাহাব বলা হয়, যেটাকে আলিমগণ মুস্তাহাব মনে করে। কিন্তু মাকরূহ ও হারাম প্রমাণ করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দলীলের প্রয়োজন হয়। অধিকন্তু শাহ আবদুল আযীয ও কাজী সাহেব বাতি ও চাদরকে হারাম বলেছেন। অন্যদিকে আল্লামা শামী চাদর চড়ানোকে এবং তফসীরে রূহুল বয়ান ও হাদীকায়ে নদীয়ার রচয়িতাদ্বয় বাতি জ্বালানকে জায়েয বরং মুস্তাহাব বলেছেন। তাই এঁদের বক্তব্যই অধিক গ্রহণযোগ্য। আর শাহ সাহেব (رضي الله عنه) ও কাজী সাহেব (رحمة الله) এর বক্তব্যকে যদি গ্রহণ করি, তাহলে হারমাইন বিশেষ করে হুযুর পাক (ﷺ) এর রওযা মুবারককে বিদ্আত ও হারাম কাজের কেন্দ্র বলতে হয়, কেননা সেখানে গিলাফও চড়ানো হয় আর বাতিও জ্বালানো হয় এবং আজ পযর্ন্ত কোন আলিম বা ফকীহ এর প্রতিবাদও করেন নি। তাহলে কি তাঁরা সবাই বিদ্আতী বা গুমরাহ ছিলেন? তাই তাঁদের দু’জনের ফত্ওয়া কিছুতেই গ্রহণ করা যায় না।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ শাহ রফিউদ্দিন সাহেব তাঁর রচিত রিসালায়ে নুযুর পুস্তিকায় বলেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>نزريكه ايں جا مستمل ميشود بر معنى شرعى است چه عرف آنست كه آنچه پيش بزرگاں مى برند نزرو نياز مى گويند.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘এখানে মানত বলতে শরয়ী বুঝানো হয়েছে কারণ জনসমাজে প্রসিদ্ধ এটাই যে বুযুর্গাণে কিরামের সামনে যা কিছু রাখা হয়, তা নযর নিয়ায বলে।’’</div><div><br></div><div><br></div><div>(৫) হারমাইন শরীফাইনের আলিমগণ কর্তৃক কোন বিষয়কে ভাল মনে করাটা মুস্তাহাব হওয়ারই প্রমাণ। এ পবিত্র যমীনে কখনও শিরক হতে পারে না। হাদীছ শরীফে আছে যে, শয়তান নিরাশ হয়ে গেছে আহলে আরবের উপাসনা থেকে এবং পবিত্র মদীনা পাকের যমীন ইসলামের আশ্রয়স্থল এবং কাফির ও মুশরিকদের থেকে নিরাপদ। মিশকাত শরীফের حرم المدينة শীর্ষক অধ্যায় বর্ণিত আছে যে, মদীনা শরীফ পাপী লোকদেরকে এমনভাবে বের করে দেয়, যেমন কামারের ভাটি লৌহের মরিচা বের করে। অথবা কিছুদিন পর বা মৃত্যুর পর বের করে দেয়।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ জযবুল কুলুব’ গ্রন্থে শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী বলেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>مواد نفى وابعاد شرو فساد است از ساخت عزت ايں بلده طيبه وخاصيت مذكوره دروے در جميع ازمان هويد است.</div><div><br></div><div><br></div><div>এর ভাবার্থ হচ্ছে মদীনা শরীফের পবিত্র যমীন সমস্ত পাপী তাপীকে বের করে দেয় এবং এ রীতি তথায় সবসময়ের জন্য বলবৎ আছে। সুতরাং মদীনা শরীফের আলিমদের অনুসৃত আমলকে হঠাৎ শিরক ও বিদআত বলে ফেলা মারাত্মক ভুল। এটাও তাদের ভুল ধারণা যে, তুর্কী শাসনামলে এ বাতি জ্বালানোর সূত্রপাত হয়েছে। প্রসিদ্ধ ইমাম নুর উদ্দিন সমহুদী (رحمة الله) ও জালাল উদ্দিন সয়ুতী (رحمة الله) এর ইন্তিকাল ৯১১ হিজরীতে হয় এবং ইমাম নুর উদ্দিন সমহুদী তাঁর কিতাব খুলাসাতুল ওয়াফা শরীফ ৮৯৩ হিজরীতে রচনা করেন। ওই কিতাবের চতুর্থ অধ্যায়ের ষোলতম পরিচ্ছেদে মদীনা শরীফের বাতির কথা উলে­খ করেছেন। যেমন-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَأَمَّا مَعَالِيْقُ الْحَجْرَةِ الشَّرِيْفَةِ أَلَّتِى تَعَلَّقُ حَوْلَهَا مِنْ قَنَادِيْلِ الذَّهَبِ وَالفِضَّةِ وَنَحْوِهِمَا فَلَمْ أَقِفْ عَلٰى اِبْتَدَاءِ حُدُوْثِهِمَا.</div><div><br></div><div><br></div><div>-কিন্তু রওযা পাকের চারিদিকে সোনা-চান্দির যেসব আলোকবর্তিকা রয়েছে, তা কখন থেকে শুরু হয়েছে তা আমার জানা নেই।  ২৩৪</div><div><br></div><div>{সামহুদী, আল-ওফাউল ওফা বিআখবারি দারিল মুস্তফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৫৭}</div><div><br></div><div><br></div><div>এরপর তিনি লিখেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَقَدْ أَلَفَ السُبْكِيْ تَألِيْفًا سَمَّاهُ تَنزَّل السَّكِيْنَةِ عَلٰى قَنَادِيْلِ الْمَدِيْنَةِ وَذَهَبَ فِيْهِ إِلَى جَوَازِهَا وَقْفِهَا وَعَدَمَ جَوَازَ صَرْفِ شَئٍ مِنْهَا لِعِمَارَةِ الْمَسْجِدِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>অর্থাৎ ইমাম সুবকী (رحمة الله) তানাযযুলুস সকিনা আলা কনা দিলিল মদীনা নামক একটি কিতাব লিখেছেন। উক্ত কিতাবে তিনি বলেছেন যে রওযা পাকের এসব আলোকবর্তিকা জায়েয এবং এগুলোর ওয়াকফও বৈধ। কিন্তু ওসবের কোন কিছু মসজিদের জন্য ব্যয় করা যাবে না। ২৩৫</div><div><br></div><div>{সামহুদী, আল-ওফাউল ওফা বিআখবারি দারিল মুস্তফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৫৮}</div><div><br></div><div><br></div><div>আলহামদু লিল্লাহ, বিরোধিতাকারীদের আপত্তির পরিপূর্ণ উত্তর হয়ে গেল।</div><div><br></div><div><br></div><div>পাঞ্জাব, ইউ,পি,ও, কাথিওয়ার্ড এলাকায় সাধারণভাবে প্রচলিত আছে যে, পবিত্র রমযান মাসে খতমে তারাবীহ এর সময় মসজিদসমূহে আলোক সজ্জা করা হয়। কতেক দেওবন্দী একে শিরক ও হারাম বলে। এটা হচ্ছে তাদের ধর্মহীনতার পরিচায়ক।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ মসজিদের সৌন্দর্য হলো ঈমানের আলামত। তফসীরে রূহুল বয়ানে-</div><div><br></div><div>إنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ</div><div><br></div><div>আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে হযরত সুলায়মান বাইতুল মুকাদ্দিসে সতের শত বাতি জ্বালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। মসজিদে নববীতে প্রথম প্রথম খেজুর গাছের লাকড়ী জ্বালিয়ে আলোকিত করা হতো। পরে হযরত তমীম দারমী কিছু প্রদীপ রশি ও তৈল সংগ্রহ করে আনলেন এবং ওগুলোকে মসজিদে নববীর বীমের সাথে টাঙ্গিয়ে জ্বালিয়ে দিতেন। তা দেখে হুযুর ﷺ ইরশাদ ফরমান -</div><div><br></div><div><br></div><div>فَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ نَوَّرْتَ مَسْجِدَنَا نُوْرَ اللهُ عَلَيْكَ.</div><div><br></div><div><br></div><div>তুমি আমাদের মসজিদকে আলোকিত করেছ, আল্লাহ তোমাকে আলোকিত রাখুন।  ২৩৬</div><div><br></div><div>{ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪০০।}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ হযরত উমর (رضي الله عنه) ও যখন বাতি জ্বালালেন ও প্রদীপ টাঙিয়ে দিলেন, তখন হযরত আলী (رضي الله عنه) বলতেন -</div><div><br></div><div><br></div><div>فَلَمَّا رَأَها عَلِى كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهُ تزهر قَالَ نَوَّرْتَ مَسْجِدِنَا نَوَّرَ اللهُ قَبْرَكَ يَا اِبْنَ الْخَطَّاب.</div><div><br></div><div><br></div><div>হে উমর, তুমি আমাদের মসজিদকে আলোকিত করেছ। আল্লাহ যেন তোমার কবরকে আলোকিত করেন।  ২৩৭</div><div><br></div><div>{ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪০০।}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ তাফ্সীরে কবীরে إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَعَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَسْرَجَ فِي مَسْجِدٍ سِرَاجًا لَمْ تَزَلِ الْمَلَائِكَةُ وحملة العرش يستغفرون له مادام فِي الْمَسْجِدِ ضَوْؤُهُ</div><div><br></div><div>হুযুর ﷺ থেকে বর্ণিত আছে-যে কেউ মসজিদে বাতি জ্বালালে যতক্ষণ পযর্ন্ত এর আলো থাকবে, ততক্ষণ পযর্ন্ত ফিরিশতাগণ ও আল্লাহর আরশ বহনকারীগণ তার মাগফিরাতের দুআ করেন। ২৩৮</div><div><br></div><div>{ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী, তাফসিরে কাবীর, ১৬/১১}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ ফতওয়ায়ে রশিদীয়ার দ্বিতীয় খণ্ডে الخطر والاباحة শীর্ষক অধ্যায়ের ১১২ পৃষ্ঠায় স্বীকার করা হয়েছে যে হযরত উমর ফারুকের যুগে কতেক সাহাবায়ে কিরাম বাইতুল মুকাদ্দিসের আলোকসজ্জা দেখে এসে মসজিদে নববীতে নানা রকম বাতি জ্বালিয়ে ছিলেন। অতঃপর বাদশা মামুনুর রশিদ নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, মসজিদ সমূহে যেন ব্যাপক হারে বাতি জ্বালানো হয়।</div><div><br></div><div><br></div><div>মোট কথা হলো, মসজিদকে আলোকসজ্জিতকরণ আম্বিয়া, সাহাবা ও সাধারণ মুসলমানদের সুন্নাত।</div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div>━</div>

মাজারে ফুল ইত্যাদির উত্থাপিত আপত্তিসমূহ ও এর জবাব

দ্বিতীয় অধ্যায় আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে উত্থাপিত আপত্তিসমূহ ও এর জবাব প্রথম অধ্যায়ে উল্লেখিত তিনটি বিষয়ে বিরোধিতাকারীগণ নিম্নবর্ণিত আপত্তিসমূহ ন...

Read more »

মাযারে ফুল অর্পণ, গিলাফ চড়ান ও বাতি জ্বালানোর প্রমাণাদি

<div>মাযারে ফুল অর্পণ, গিলাফ চড়ান ও বাতি জ্বালান প্রসঙ্গে আলোচনা</div><div><br></div><div><br></div><div>এখানে তিনটি মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে-কবরে ফুল অর্পণ, চাদর চড়ান ও বাতি জ্বালান। উলামায়ে আহলে সুন্নাতের অভিমত হলো প্রত্যেক মু’মিনের কবরে সে আল্লাহর ওলী হোক বা গুনাহগার হোক ফুল অর্পণ জায়েয। এবং আওলিয়া, উলামা ও পুণ্যাত্মাদের কবরসমূহের উপর গিলাফ চড়ানও জায়েয। কিন্তু সাধারণ মুসলমানের কবরের উপর নাজায়েয, কেননা এর দ্বারা ওর কোন উপকার হবে না। আর বাতি জ্বালান সম্পর্কে অভিমত হলো যে, সাধারণ মুসলমানের কবরে বিনা প্রয়োজনে বাতি জ্বালানো না জায়েয, তবে প্রয়োজন বোধে জায়েয আছে। আর আওলিয়া কিরামের মাযারে সাহেবে মাযারের শান-মান প্রকাশার্থে বাতি জ্বালানো জায়েয। প্রয়োজনবোধে তিন ধরনের হতে পারে, যেমন রাত্রে লাশ দাফন করতে বাতির প্রয়োজন, তখন জায়েয। রাস্তার পার্শ্বে কবর রয়েছে তাই এজন্যে বাতি জ্বালিয়ে রাখা প্রয়োজন, যেন কেউ হোঁচট না খায় বা কবর জেনে ফাতিহা পাঠ করলো, তাহলে জায়েয। অথবা কোন ব্যক্তি রাত্রে কোন মুসলমানের কবরে গেল এবং সেখানে কুরআন শরীফ ইত্যাদি দেখে পড়ার ইচ্ছা পোষণ করলো, তখন বাতি জ্বালিয়ে রাখা জায়েয। এ তিন অবস্থা ব্যতীত বাতি জ্বালানো যেহেতু অপব্যয় ও ব্যয়বহুলতা মাত্র, তাই নিষেধ। আওলিয়া কিরামের মাযারের উপরোক্ত কোন প্রয়োজন না থাকলেও ওলীর সম্মানে এক বা একাধিক বাতি জ্বালানো জায়েয। বিরোধিতাকারীরা এ তিনটা বিষয়কে না জায়েয মনে করে। তাই এ আলোচনাকে দু’টি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে এসবের বৈধতার প্রমাণ করা হয়েছে। এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে এ প্রসংগে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের জবাব দেয়া হয়েছে।</div><div><div>প্রথম অধ্যায়</div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div>আমি এর আগের বহছে আরয করেছি যে আল্লাহর ওলীগণ ও তাঁদের মাযারসমূহ আল্লাহর নির্দশন এবং আল্লাহর নিদর্শন সমূহ অর্থাৎ ধর্মের নিশান সমূহের সম্মান করার জন্য কুরআনী নির্দেশ রয়েছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে, এ-তো তার হৃদয়ের তাক্ওয়া সজ্ঞাত।’’ ১৮৯</div><div><br></div><div>{সূরা হাজ্জ, আয়াত নং-৩২।}</div><div><br></div><div><br></div><div>এ সম্মানের বেলায় কোন শর্তারোপ করা হয়নি। এক এক দেশে এক এক ধরনের রীতি প্রচলিত আছে। যেই দেশে এবং যেই সময়ে যে ধরনের বৈধ তাযীম প্রচলিত আছে, সেই মতে করা জায়েয। তাঁদের কবরসমূহে ফুল অর্পণ, চাদর চড়ান ও বাতি জ্বালানো ইত্যাদির উদ্দেশ্যে সম্মান প্রদর্শন, তাই এগুলো জায়েয। তাজা ফুলে যেহেতু এক প্রকার জীবন আছে, সেহেতু ওটা তসবীহ তাহলীল করে। যার ফলে মৃতব্যক্তি ছওয়াব পেয়ে থাকেন, অথবা তাঁর শাস্তি হ্রাস পায় এবং যিয়ারতকারীগণ এর থেকে সুঘ্রাণ লাভ করে। তাই এটা প্রত্যেক মুসলমানের কবরের উপর অর্পণ করা জায়েয। এর তাসবীহের বরকতে যে মৃতব্যক্তির আযাব-হ্রাস পায়, এর প্রমাণ মিশ্কাত শরীফের ادب الخلاء অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদের সেই হাদীছে রয়েছে, যেখানে বর্ণিত আছে একবার হুযুর ﷺ দু’কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময় ইরশাদ ফরমান মৃতদ্বয়ের আযাব হচ্ছে। এদের মধ্যে একজন প্রস্রাবের ছিটা থেকে সতর্ক থাকতো না এবং অপরজন পরনিন্দা করতো।</div><div><br></div><div><br></div><div>ثُمَّ أَخَذَ جَرِيدَةً رَطْبَةً، فَشَقَّهَا بِنِصْفَيْنِ، ثُمَّ غَرَزَ فِي كُلِّ قَبْرٍ وَاحِدَةً، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، لِمَ صَنَعْتَ هَذَا؟ فَقَالَ: لَعَلَّهُ أَنْ يُخَفَّفَ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘অতঃপর তিনি (ﷺ) একটি কাঁচা ডাল নিয়ে তা দু’ভাগ করে দু’কবরে গেঁড়ে দিলেন। সাহাবাগণ আরয করলেন-ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি এরকম কেন করলেন? তখন তিনি বললেন-যতক্ষণ পযর্ন্ত এ ডাল না শুকাবে, ততক্ষণ পযর্ন্ত ওদের আযাব কম হবে।’’  ১৯০</div><div><br></div><div>{(১)ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ২/৯৫ পৃষ্ঠা, হাদিস/১৩৬১</div><div><br></div><div>(২)ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৬, হাদিস-২০-২১।</div><div><br></div><div>(৩)ইমাম নাসাঈ, আস-সুনান, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১০৬, হাদিস-২০৬৯।</div><div><br></div><div>(৪)ইমাম বায়হাকী, আস-সুুনানুল কোবরা, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১০৪, হাদিস-৫১০।</div><div><br></div><div>(৫)ইমাম খুজায়মা, আস-সহীহ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩২-৩৩, হাদিস-৫৫।</div><div><br></div><div>(৬)ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১১৫, হাদিস-১৩০৮।</div><div><br></div><div>(৭)ইমাম আবুুু ই’য়ালা, আল-মুসনাদ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪৩, হাদিস-২০৫০।}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ এ হাদীছের ব্যাখ্যা প্রসংগে ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَاسْتَحَبَّ الْعُلَمَاءُ قِرَاءَةَ الْقُرْآنِ عِنْدَ الْقَبْرِ لِهَذَا الْحَدِيثِ لِأَنَّهُ إِذَا كَانَ يُرْجَى التَّخْفِيفُ بِتَسْبِيحِ الْجَرِيدِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘এ হাদীছের উপর ভিত্তি করে উলামায়ে কিরাম কবরের পার্শ্বে কুরআন পাঠ করাকে মুস্তাহাব বলেছেন। কেননা আযাব কমানোর বেলায় ডালের তাসবীহ থেকে কুরআন তিল্ওয়াতের গুরুত্ব অনেক বেশী।’’ ১৯১</div><div><br></div><div>{ইমাম নববী, শরহে সহীহ মুসলিম, ৩/২০২}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ ‘আশআতুল লুমআত’ গ্রন্থে এ হাদীছের প্রেক্ষাপটে উল্লেখিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>تمسك كنند جماعت به ايں حديث در اندا ختن سبزه وگل ريحان برقبور.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘একটি জামাত এ হাদীছকে কবরসমূহে কাঁচা ফুল ও সুগন্ধি দেয়ার বৈধতার দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন।’’  ১৯২</div><div><br></div><div>{শায়খ আব্দুুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, আশিয়াতুল লুম’আত, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২১৫, মাকতাবায়ে রশিদীয়্যাহ, পাকিস্তান।}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ এ হাদীছের ব্যাখ্যায় মিরআতে বর্ণিত আছে -১৯৩</div><div><br></div><div>{মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৭৬, হাদিস/৩৩৮}</div><div><br></div><div><br></div><div>وَمِنْ ثَمَّ أَفْتَى بَعْضُ الْأَئِمَّةِ مِنْ مُتَأَخِّرِي أَصْحَابِنَا بِأَنَّ مَا اعْتِيدَ مِنْ وَضْعِ الرَّيْحَانِ وَالْجَرِيدِ سُنَّةٌ لِهَذَا الْحَدِيثِ..... لِهَذَا الْحَدِيثِ إِذْ تِلَاوَةُ الْقُرْآنِ أَوْلَى بِالتَّخْفِيفِ مِنْ تَسْبِيحِ الْجَرِيدِ، وَقَدْ ذَكَرَ الْبُخَارِيُّ أَنَّ بُرَيْدَةَ بْنَ الْحُصَيْبِ الصَّحَابِيَّ أَوْصَى أَنْ يُجْعَلَ فِي قَبْرِهِ جَرِيدَتَانِ ১৯৪</div><div><br></div><div>{ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ২/৯৫ পৃঃ , পরিচ্ছেদ: بَابُ الجَرِيدِ عَلَى القَبْرِ}</div><div><br></div><div><br></div><div>বোঝা গেল যে, মাযারে ফুল দেয়া সুন্নাত।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ প্রসিদ্ধ তাহ্তাবী আলা মরাকিল ফলাহ কিতাবের ৩৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَقَدْ أَفْتَى بَعْضُ الْأَئِمَّةِ مِنْ مُتَأَخِّرِي أَصْحَابِنَا بِأَنَّ مَا اعْتِيدَ مِنْ وَضْعِ الرَّيْحَانِ وَالْجَرِيدِ سُنَّةٌ لِهَذَا الْحَدِيثِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘আমাদের উলামায়ে কিরাম এ হাদীছ থেকে ফত্ওয়া দিয়েছেন যে, কবরে সুগন্ধি ও ফুল অর্পণের যে রীতি আছে, তা’ সুন্নাত। ১৯৫</div><div><br></div><div>{ইমাম তাহতাভী, হাশীয়ায়ে তাহতাভী আলা মারাকিল ফালাহ, পৃষ্ঠা-৬২৪।}</div><div><br></div><div><br></div><div>উলে­খ্য যে উপরোক্ত ইবারতসমূহে “কতেক আলিম ফত্ওয়া দিয়েছেন” এর ভাবার্থ জায়েয বলা নয়, বরং এর ভাবার্থ হচ্ছে কতেক আলিম একে সুন্নাত মনে করেছেন। কেননা জায়েয তো সবাই বলেন, কেবল সুন্নাত বলার ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছে।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ ফত্ওয়ায়ে আলমগীরী কিতাবুল কারাহাত পঞ্চম খণ্ড زِيَارَةُ الْقُبُورِ শীর্ষক অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div>وَضْعُ الْوُرُودِ وَالرَّيَاحِينِ عَلَى الْقُبُورِ حَسَنٌ ....كَذَا فِي الْغَرَائِبِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘কবরসমূহের উপর ফুল ও সুগন্ধি রাখা উত্তম। এমনটি গারায়েবে বর্ণিত আছে।’’  ১৯৬</div><div><br></div><div>{নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৩৫১।}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ ফত্ওয়ায়ে শামীর زِيَارَةُ الْقُبُورِ শীর্ষক আলোচনায় উল্লেখিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَيُؤْخَذُ مِنْ ذَلِكَ وَمِنْ الْحَدِيثِ نَدْبُ وَضْعِ ذَلِكَ لِلِاتِّبَاعِ وَيُقَاسُ عَلَيْهِ مَا اُعْتِيدَ فِي زَمَانِنَا مِنْ وَضْعِ أَغْصَانِ الْآسِ وَنَحْوِهِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘এ হাদীস ও অন্যান্য হাদীস থেকে ওই সমস্ত জিনিস কবরের উপরে রাখাটা মুস্তাহাব বোঝা যায় এবং এ সুবাদে কবরের উপর খেজুর গাছের ডাল ইত্যাদি দেওয়াটা, যা আমাদের যুগে প্রচলিত আছে, তা মুস্তাহাব বলা যাবে।’’  ১৯৭</div><div><br></div><div>{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৪৫।}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ একই জায়গায় শামীতে আরও উল্লেখিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَتَعْلِيلُهُ بِالتَّخْفِيفِ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا: أَيْ يُخَفَّفُ عَنْهُمَا بِبَرَكَةِ تَسْبِيحِهِمَا؛ إذْ هُوَ أَكْمَلُ مِنْ تَسْبِيحِ الْيَابِسِ لِمَا فِي الْأَخْضَرِ مِنْ نَوْعِ حَيَاةٍ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘শুকনা না হওয়াটাই হচ্ছে আযাব কম হওয়ার কারণ অর্থাৎ ওইসবের তসবীহের বরকতে কবর আযাব কম হবে, কেননা কাঁচা ডালের তসবীহ শুকনা ডালের তসবীহ থেকে বেশী কার্যকর। কারণ ওটাতে এক প্রকার জীবন রয়েছে।’’ ১৯৮</div><div><br></div><div>{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৪৫।}</div><div><br></div><div><br></div><div>উপরোক্ত হাদীস, মুহাদ্দেসীন ও ফকীহগণের ইবারতসমূহ থেকে দু’টি বিষয় জানা গেল-একটি হচ্ছে প্রত্যেক মুসলমানের কবরে সজীব বস্তু রাখা জায়েয। হুযুর ﷺ ওই দু’কবরের উপর ডাল পুঁতে দিয়েছিলেন, যাদের আযাব হচ্ছিল। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে আযাব কম হওয়াটা কেবল হুযুর ﷺ'র দুআর কারণে নয় বরং এটা সজবি বস্তুর তসবীহের বরকতের ফল। যদি কেবল দুআয় আযাব কম হতো, তাহলে হাদীছে শুকনা হওয়ার শর্তারোপ কেন করা হলো? তাই, আজকাল আমরাও যদি ফুল ইত্যাদি অপর্ণ করি, তাতেও ইনশাআল্লাহ মৃতব্যক্তির উপকার হবে। সাধারণ মুসলমানদের কবর কাঁচা রাখার এটাও একটা অভিপ্রায় যে বর্ষাকালে এর উপর সবুজ ঘাস জন্মাবে এবং এর তসবীহের বরকতে মৃতব্যক্তির আযাব কম হবে। অতএব, প্রমাণিত হলো, প্রত্যেক মুসলমানের কবরে ফুল ইত্যাদি অর্পণ জায়েয। মৌলবী আশরাফ আলী সাহেব ‘ইসলাহুর রুসুম’ গ্রন্থে লিখেছেন যে, ফুলমূল ইত্যাদি পাপীতাপীদের কবরসমূহে অর্পণ করা উচিৎ, আওলিয়া কিরামের কবরে নয়। কেননা তাঁদের মাযার সমূহে আযাব হয় না। কথা ঠিক, তবে জেনে রাখা দরকার যে, যেই আমলসমূহ পাপীদের পাপ হ্রাস করে, তা নেকবান্দাদের পদ মর্যাদা বৃদ্ধির সহায়তা করে। যেমন মসজিদের দিকে যাত্রা করলে আমাদের গুনাহ মাফ হয় আর নেকবান্দাদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ওনার যুক্তি থেকে এটাই প্রকাশ পায় যে, নেকবান্দাগণ যেন মসজিদে না আসেন এবং মাগফিরাতও কামনা না করেন, কেননা তাঁরা গুনাহ থেকে পবিত্র। জনাব, ওইসব ফুলের তসবীহের বররতে তাঁদের কবরে খোদার রহম আরও বৃদ্ধি পায়, যেমনি কুরআন তিলাওয়াতের ফলে হয়ে থাকে।</div><div><br></div><div><br></div><div>(২) আওলিয়া কিরামের কবরের উপর চাদর বা গিলাফ চড়ান জায়েয, কেননা এ ফলে যিয়ারতকারীদের কাছে ছাহেব কবরের মর্যাদা প্রকাশ পায়।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ ফতওয়ায়ে শামীর পঞ্চম খণ্ড কিতাবুল কারাহিয়া اللبس শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>قَالَ فِي فَتَاوَى الْحُجَّةِ وَتُكْرَهُ السُّتُورُ عَلَى الْقُبُورِ اهـ. وَلَكِنْ نَحْنُ نَقُولُ الْآنَ إذَا قَصَدَ بِهِ التَّعْظِيمَ فِي عُيُونِ الْعَامَّةِ حَتَّى لَا يَحْتَقِرُوا صَاحِبَ الْقَبْرِ، وَلِجَلْبِ الْخُشُوعِ وَالْأَدَبِ لِلْغَافِلِينَ الزَّائِرِينَ، فَهُوَ جَائِزٌ لِأَنَّ الْأَعْمَالَ بِالنِّيَّاتِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘ফত্ওয়ায়ে হুজ্জাতে আছে যে, কবরে গিলাফ চড়ান মাকরুহ। কিন্তু আমি বলতে চাই যে, বর্তমান কালে যদি সাধারণ লোকের দৃষ্টিতে সম্মানবোধ প্রত্যাশা করা হয়, যাতে কবরবাসীর প্রতি অবজ্ঞা করা না হয় বরং উদাসীন ব্যক্তিদের মনে আদব ও ভয়ের সৃষ্টি হয়, তাহলে গিলাফ চড়ান জায়েয। কেননা আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।’’ ১৯৯</div><div><br></div><div>{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৩৬৩।}</div><div><br></div><div><br></div><div>ফত্ওয়াযে শামরি এ ইবারত থেকে বোঝা গেল যে, আল্লাহর ওলীগণের শান-মান প্রকাশ করার জন্য যে কোন বৈধ কাজ জায়েয। গিলাফ চড়ানোর গোড়ায় কথা হলো যে, হুযুর ﷺ'র পবিত্র যুগেও পবিত্র কাবা ঘরে গিলাফ ছিল। তিনি (ﷺ) এটা নিষেধ করেননি। শত শত বছর থেকে হুযুর ﷺ'র রওযা পাকের উপর সবুজ রং এর রেশমী চাদর চড়ানো আছে, যা খুবই মূল্যবান। আজ পযর্ন্ত কেউ একে নাজায়েয বলেননি। মকামে ইব্রাহীম অর্থাৎ যেই পাথরের উপর দাঁড়িয়ে হযরত খলীল (عليه السلام) কাবা শরীফ তৈরী করেছিলেন, সেই পাথরের উপরও গিলাফ চড়ানো আছে এবং ইমারত তৈরী করা হয়েছে। খোদার কি শান! নজদী ওহাবীরাও ওগুলোকে পূর্ববৎ রেখে দিয়েছে। এখন আমার প্রশ্ন হলো, এগুলোর উপর কেন গিলাফ চড়ানো হলো? নিশ্চয় এসবের মর্যাদার জন্য তা করা হয়েছে। অনুরূপ আওলিয়া কিরামের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য তাঁদের কবর সমূহের উপরও গিলাফ ইত্যাদি মুস্তাহাব।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ তফসীরে রুহুল বয়ানের দশ পারায় সূরা তওবার আয়াত   ২০০</div><div><br></div><div>{সূরা তাওবাহ, আয়াত নং-১৮}</div><div><br></div><div>إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ</div><div><br></div><div>এর ব্যাখ্যা প্রসংগে বর্ণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>فَبِنَاءَ الْقَباب عَلَى قُبُوْرِ الْعُلَمَاءِ وَالْأَوْلِيَاءِ وَالصَّلحَاءِ وَوَضْعُ السَّتُوْرِ وَالْعَمَائِمْ وَالْثِّيَابِ عَلَى قَبُوْرِهِمْ اَمْرٌ جَائِزٌ إِذَا كَانَ الْقَصْد بِذَلِكَ التَّعْظِيم فِى أَعْيُنِ العَامَّةِ حَتَّى لَا يَحْتَقِرُوْا صَاحِبَ هَذَا الْقَبْرِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘উলামা, আওলিয়া ও পুণ্যা্মাদের কবরসমূহের উপর ইমারত তৈরী করা এবং গিলাফ, পাগড়ী, চাদর চড়ানো জায়েয, যদি এর দ্বারা, সাধারণ লোকের দৃষ্টিতে তাঁদের সম্মান প্রকাশ এবং লোকেরা যেন তাঁদেরকে নগণ্য মনে না করে, এ উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।’’ ২০১</div><div><br></div><div>{ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪০০।}</div><div><br></div><div><br></div><div>(৩) সাধারণ মুসলমানদের কবরে প্রয়োজনবোধে এবং আল্লাহর ওলীদের মাযারসমূহে তাদের শান-মান প্রকাশার্থে বাতি জ্বালানো জায়েয। যেমন</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ প্রসিদ্ধ কিতাব হাদিকায়ে নদিয়া শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদীয়া (মিসরী) দ্বিতীয় খণ্ডের ৪২৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>اخرج الشموع الى القبور بدعة واتلاف مال كذا فى البزازية وهذا كله اذا حلا عن فائدة واما اذا كان موضع القبور مسجد او على طريق او كان هناك احد جالسا او كان قبر ولى من الاولياء او عالم من المحققين تعظيما لروحه اعلاما للناس انه ولى ليتركوا به ويدعواالله تعالى عنده فيستجاب لهم فهو امر جائز .</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘কবরসমূহে বাতি নিয়া যাওয়া বিদ্আত এবং অপব্যয়। অনুরূপ ফত্ওয়ায়ে বযাযিয়াতেও উল্লেখিত আছে যে, এসব নির্দেশ তখনই প্রযোজ্য, যখন অনর্থক করা হবে। কিন্তু যদি কবরস্থানে মসজিদ হয় বা কবরটা রাস্তার পার্শ্বে হয় বা ওখানে কেউ বসে আছেন এমন হয়, অথবা যদি কোন ওলী বা কোন বিশিষ্ট আলিমের কবর হয়, তাহলে তাঁদের আ্মার প্রতি সম্মানের জন্য এবং জনগণের অবগতির জন্য, যাতে এটা ওলীর কবর বুঝতে পেরে ফয়েয হাসিল করতে পারে এবং ওখানে বসে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পারে, বাতি জ্বালানো জায়েয।’’ ২০২</div><div><br></div><div>{আব্দুল গনী নাবলুসী, হাকিকাতুন নাদীয়া শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদীয়্যাহ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৪৯।}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ তাফসীরে রূহুল বয়ানে দশ পারার সূরা তওবার আয়াত-</div><div><br></div><div>إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ</div><div><br></div><div>এর ব্যাখ্যা প্রসংগে উল্লেখিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَكَذَا إِيْقَادُ القَنَادِيْلِ وْالْشَّمْع عِنْدَ قَبُوْرِ الْأَوْلِيَاءِ وَالصَّلْحَاءِ من باب التعظيم وَالْإِجْلاَلِ اَيْضًا لِلْاَوْلِيَاءِ فَالْمَقْصَد فِيْهَا مَقْصَدَ حَسَنَ. وَنَذَرَ الزَّيْتِ وَالشَّمْعِ لِلْاَوْلِيَاءِ يُوْقَدُ عِنْدَ قُبُوْرِهِمْ تَعْظِيْمًا لَهُمْ وَمُحَبَّةَ فِيْهِمْ جَائِزٌ اَيْضًا لَا يَنْبَغِى النَّهِى عَنْهُ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘অনুরূপ আওলিয়া কিরাম ও পুণ্যা্মাদের কবরের কাছে তাঁদের শান-মানের জন্য প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালানো যেহেতু সঠিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, সেহেতু জায়েয এবং আওলিয়া কিরামের (মাযারের) জন্য তৈল ও মোমবাতি বা তাঁদের কবরের পার্শ্বে তাদেরই সম্মানার্থে জ্বালানো হয়। এ উদ্দেশ্যে মানত করা জায়েয। এ ব্যাপারে নিষেধ না করা উচিত।’’ ২০৩</div><div><br></div><div>{ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪০০।}</div><div><br></div><div><br></div><div>আল্লামা নাবলুসী (رحمة الله) স্বরচিত ‘কাশপুন নূর আন আসহাবিল কুবুর’ পুস্তিকায় একই বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেছেন। বিবেকও তাই বলে। অর্থাৎ এসব কাজ জায়েয, যেমন আমি গম্বুজের আলোচনায় বলেছি যে ওসব আওলিয়া কিরামের মাযারের শান-শওকতের দ্বারা প্রকৃত পক্ষে ইসলামেরই শান-শওকত প্রকাশ পায়। ওয়ারেজী আলিমের উন্নতমানের পোশাক পরিচ্ছেদ করা উচিত। ঈদের দিন প্রত্যেক মুসলমানের ভাল কাপড় পরিধান করা ও সুগন্ধি ইত্যাদি লাগানো সুন্নাত কেন জানেন? যাতে, তার সাথে আলিংগন করতে লোক আগ্রহান্বিত হয়। এতে বোঝা গেল, যার সাথে সাধারণ মুসলমানদের সম্পর্ক, তার উচিৎ পরিপাটি অবস্থায় থাকা। আওলিয়া কিরামের মাযারসমূহ আল্লাহর বান্দাদের যিয়ারতের স্থান। তাই ওগুলোকেও পরিপাটি অবস্থায় রাখা বাঞ্ছনীয়।</div><div><br></div><div><br></div><div>আমি নজদী ওহাবীদের আমলে হজ্ব করতে গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে দেখি কাবা শরীফের চারিদিকে বৃত্তাকারে অনেক বিজলী বাতি জ্বলছে এবং হাতিম শরীফের দেয়ালেও আলো ছিল। ঠিক কাবা শরীফের দরজার সামনে চার চারটি আলোকবর্তিকা জ্বালানো হতো। যখন মদীনা শরীফে এলাম সেখানে রওযা পাককে কাবা শরীফ থেকেও আলোকোজ্জ্বল দেখলাম। ওখানকার বাল্বগুলো খুবই প্রখর ও উজ্জ্বল ছিল। মানুষের অন্তরে শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি ও মহত্ব প্রকাশ করার জন্যই এর আয়োজন। আওলিয়া কিরামের মাযারসমূহেও অনুরূপ আলোর ব্যবস্থা করলে ক্ষতি কি? আজকাল বিয়ে শাদী উপলক্ষে বাড়ীঘর আলোকসজ্জিত করা হয়ে থাকে। অনেক সময় সময় তৈলের প্রদীপও জ্বালানো হয়, যার জন্য অনেক আগের কথা, দেওবন্দীরা মুরাদাবাদে জমিয়তে উলামার এক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল, যেখানে চোখ ঝলসানো বিজলী বাতি লাগানো হয়েছিল। আমার মনে হয় কমপক্ষে দেড়শ টাকা (তৎকালিন) বিজলীর জন্য খরচ হয়েছিল। এটা কেবল সমবেত জনতাকে খুশী করার জন্যই করা হয়েছিল। ধর্মীয় সভা-সমিতিতে রংবেরংগের পতাকা দ্বারা সজ্জ্বিত করা হয় এবং ওয়ায়েজীনের গলায় ফুলের মালা দেয়া হয়। কই, এগুলোকেত না অপব্যয় বলা হয়, না হারাম আখ্যা দেয়া হয়। তাই উরসের সমাবেশ যেহেতু ধর্মীয় সমাবেশ, সেহেতু তথায়ও এসব কাজ জায়েয।</div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div><br></div></div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div>━━━━</div>

মাযারে ফুল অর্পণ, গিলাফ চড়ান ও বাতি জ্বালানোর প্রমাণাদি

মাযারে ফুল অর্পণ, গিলাফ চড়ান ও বাতি জ্বালান প্রসঙ্গে আলোচনা এখানে তিনটি মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে-কবরে ফুল অর্পণ, চাদর চড়ান ও বাতি জ্বাল...

Read more »

কবরের উপর ইমারত তৈরী প্রসংগে উত্থাপিত আপত্তি সমূহের জবাব

<div>দ্বিতীয় অধ্যায়</div><div><br></div><div>কবরের উপর ইমারত তৈরী প্রসংগে উত্থাপিত আপত্তি সমূহের জবাব</div><div><br></div><div><br></div><div>এ বিষয়েল উপর কেবল দু’টি আপত্তি রয়েছেঃ</div><div><br></div><div><br></div><div>১ নং আপত্তিঃ মিশকাত শরীফের بَاب دفن الْمَيِّت অধ্যায়ে মুসলিম শরীফের বরাত দিয়ে বর্ণিত আছে -</div><div><br></div><div><br></div><div>وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ.</div><div><br></div><div><br></div><div>হুযুর ﷺ কবরের উপর চুনকাম করা, ইমারত তৈরী করা এবং এর উপর বসাটা নিষেধ করেছেন।’’  ১৭৩</div><div><br></div><div>{খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/পৃষ্ঠা-৫৩৩, হাদিস/১৬৯৭}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ অধিকন্তু অধিকাংশ ফকীহগণ-</div><div><br></div><div><br></div><div>يَكْرَهُ الْبِنَاءَ عَلَى الْقُبُوْرِ.</div><div><br></div><div>-‘‘কবরের উপর ইমারত তৈরী করাকে না পছন্দ করেছেন।’’</div><div><br></div><div><br></div><div>উপরোক্ত হাদীছ দ্বারা তিনটি কাজ হারাম বোঝা গেল-কবর পাকা করা, কবরের উপর ইমারত তৈরী করা এবং কবরের পাশে খাদিম বনে অবস্থান করা।</div><div><br></div><div><br></div><div>উত্তরঃ তিন ধরনের কবর পাকা করা নিষেধ।</div><div><br></div><div>এক: কবরের অভ্যান্তরিন অংশ যা লাশের সাথে সংযুক্ত। এ জন্য হাদীছ শরীফে أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ বলা হয়েছে, কিন্তু عَلَى الْقُبُوْرِ বলা হয়নি।</div><div><br></div><div>দুই: সাধারণ মুসলমাদের কবর পাকা করা। কেননা এতে কোন ফায়দা নেই। তাই নির্বিশেষে প্রত্যেক কবরকে পাকা করতে নিষেধ করেছেন।</div><div><br></div><div>তিন: কারুকার্য করার উদ্দেশ্যে, লৌকিকতার কারণে বা গবর্বোধ করার জন্য কবর পাকা করা।</div><div><br></div><div>এ তিন ধরনের কবর পাকা করা নিষেধ। কিন্তু স্মৃতি রক্ষার করার জন্য যদি কোন আল্লাহর ওলীর কবর পাকা করা হয়, তাহলে জায়েয। কেননা হুযুর ﷺ হযরত উসমান ইবনে মযউনের কবর পাথর দ্বারা তৈরী করেছিলেন, যেমন প্রথম অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ প্রখ্যাত ‘আশআতুল লুমআত’ গ্রন্থে أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ এর ব্যাখ্যা প্রসংগে বলা হয়েছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>لَمَّا فِيْهِ مِنَ الزِّيْنَةِ وِالْتَّكَلْفِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘কেননা এতে কেবল সজ্জিতকরণ ও লৌকিকতা প্রকাশ পায়।’’ তাই বোঝা গেল যদি এজন্য না হয়, তাহলে জায়েয আছে।  وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ (কবরের উপর ইমারত তৈরী করা) এরও কয়েকটি অর্থ আছে, এক: কবরের উপর এভাবে ইমারত তৈরী করা যে, কবরটা ওয়ারের অন্তভূর্ক হয়ে যায়। যেমন</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ ফত্ওয়ায়ে শামীর ‘দাফন’ শীর্ষক অধ্যায়ে আছে -</div><div><br></div><div><br></div><div>(قَوْلُهُ: وَتُكْرَهُ الزِّيَادَةُ عَلَيْهِ) لِمَا فِي صَحِيحِ مُسْلِمٍ عَنْ جَابِرٍ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ، وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ .</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘কবরকে এক হাত থেকে বেশী উঁচু করা নিষেধ। কেননা মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, হুযুর ﷺ কবরকে পাকা করা এবং এর উপর কিছু তৈরী করা নিষেধ বলেছেন।’’  ১৭৪</div><div><br></div><div>{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৩৬।}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ একই অধ্যায়ে দুররুল মুখতারে বর্ণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>(وَتُكْرَهُ الزِّيَادَةُ عَلَيْهِ) مِنْ التُّرَابِ لِأَنَّهُ بِمَنْزِلَةِ الْبِنَاءِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘কবরের উপর মাটির স্তুপ করা নিষেধ। কেননা এটা ইমারত তৈরী করার পর্যায়ভুক্ত হয়ে যায়।’’  ১৭৫</div><div><br></div><div>{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৩৬।}</div><div><br></div><div><br></div><div>এর থেকে বোঝা গেল যে, কবরের উপর তৈরী করা মানে কবর দেওয়ালের অভ্যন্তরে পতিত হওয়া। কিন্তু গম্বুজ যা কবরের চারিদিকে পরিবেষ্টিত করে তৈরী করা হয়, নিষেধ নয়। দুই, এ নিষেধাজ্ঞা সাধারণ মুসলমানদের কবরের বেলায় প্রযোজ্য। তিন, এ ইমারত তৈরীর বিশ্লেষণ স্বয়ং অন্য হাদীছে রয়েছে, যেমন</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ মিশকাত শরীফের المسجد শীর্ষক অধ্যায়ে আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>اللَّهُمَّ لَا تجْعَل قَبْرِي وثنا يعبد اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائهمْ مَسَاجِد.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘হে আল্লাহ, আমার কবরকে মূর্তিতে পরিণত কর না, যার পূজা করা হবে। ওই কওমের জন্য খোদার কঠিন গযব আছে, যারা স্বীয় নবীদের কবরসমূহকে মসজিদে পরিণত করেছে।’’ ১৭৬</div><div><br></div><div>{খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/২৩৪ পৃঃ  হা/৭৫০, ইমাম মালেক, আল-মুয়াত্তা, হা/৪১৬}</div><div><br></div><div><br></div><div>এর থেকে বোঝা গেল, কোন কবরকে মসজিদে পরিণত করা বা এর উপর ইমারত তৈরী করা বা সেদিক হয়ে নামায পড়া হারাম। এটাই হচ্ছে ঐ হাদীছের ভাবার্থ-কবরকে মসজিদে পরিণত করোনা। কবরকে মসজিদ বানানোর অর্থ হচ্ছে এর ইবাদত করা অথবা, একে কিবলা সাব্যস্ত করে সেদিকে সিজ্দা করা।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله) বুখারী শরীফের ফতহুল বারীতে বর্ণনা করেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَقَالَ الْبَيْضَاوِيُّ لَمَّا كَانَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى يَسْجُدُونَ لِقُبُورِ الْأَنْبِيَاءِ تَعْظِيمًا لِشَأْنِهِمْ وَيَجْعَلُونَهَا قِبْلَةً يَتَوَجَّهُونَ فِي الصَّلَاةِ نَحْوَهَا وَاتَّخَذُوهَا أَوْثَانًا لَعَنَهُمْ وَمَنَعَ الْمُسْلِمِينَ عَنْ مِثْلِ ذَلِكَ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘আল্লামা বয়যাবী (رحمة الله) উলে­খ করেছেন যে যখন ইহুদী ও নাসারা সম্প্রদায় পয়গাম্বরদের এবং ওনাদের কবরসমূহকে তারা মূর্তি বানিয়ে রেখেছিল, তখন হুযুর ﷺ এর জন্য লানত দিয়েছেন এবং মুসলমানদেরকে এর থেকে বারণ করেছেন।’’ ১৭৭</div><div><br></div><div>{ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১/৫২৫পৃঃ  }</div><div><br></div><div><br></div><div>এ হাদীছ দ্বারা আপত্তিকারীদের উপস্থাপিত হাদীছের ব্যাখ্যা হয়ে গেল এবং সুষ্পষ্ট বোঝা গেল যে, গম্বুজ তৈরী করা থেকে নিষেধ করেননি বরং কবরকে সিজদাগাহে পরিণত করা থেকে নিষেধ করেছেন। তাঁর এ নিষেধাজ্ঞা শরঈ হুকম নয়; বরং এটা সংযম ও তকওয়ার শিক্ষামাত্র। যেমন আমি প্রথম অধ্যায়ে উলে­খ করেছি যে, বাসস্থান সমূহকেও পাকা করা থেকে বারণ করা হয়েছিল বরং পাকা ঘর ভেংগে দেয়া হয়েছিল। যদি ইমারত নির্মাণকারীর এ ধারণা থাকে যে ইমারাতের দ্বারা মৃতব্যক্তির আরাম ও উপকার হয়, তাহলে নাজায়েয, কেননা এটা ভুল ধারণা। কিন্তু যিয়ারতকারীদের আরামের জন্য যদি ইমারত তৈরী করা হয়, তাহলে জায়েয।</div><div><br></div><div><br></div><div>আমি এসব বিশ্লেষণ এজন্য করছি যে, অনেক সাহাবায়ে কিরাম বিশেষ বিশেষ কবরের উপর ইমারত তৈরী করেছেন। এটাকে সুন্নাতে সাহাবা বলা যায়। যেমন হযরত ফারুক (رضي الله عنه) হুযুর ﷺ'র পবিত্র কবরের চারপাশে ইমারত তৈরী করিয়েছেন। সৈয়্যদেনা হযরত ইবনে যুবায়ের (رضي الله عنه) একে আরও সুন্দর করেছেন। হযরত ইমাম যায়নুল আবেদীন (رضي الله عنه) এর স্ত্রী তাঁর স্বামীর কবরের উপর তাঁবু স্থাপন করেছিলেন যা আমি মিশকাত শরীফের البكاء অধ্যায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছি।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ হযরত যায়নুল আবেদীনের স্ত্রীর এ কার্যের প্রেক্ষাপটে মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) তাঁর রচিত মিরকাত শরহে মিশকাতের البكاء অধ্যায়ে উলে­খ করেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>الظَّاهِرُ أَنَّهُ لِاجْتِمَاعِ الْأَحْبَابِ لِلذِّكْرِ، وَالْقِرَاءَةِ، وَحُضُورِ الْأَصْحَابِ لِلدُّعَاءِ وَالْمَغْفِرَةِ وَالرَّحْمَةِ، وَأَمَّا جَعْلُ فِعْلِهَا عَلَى الْعَبَثِ الْمَكْرُوهِ كَمَا فَعَلَهُ ابْنُ حَجَرٍ فَغَيْرُ لَائِقٍ بِصَنِيعِ أَهْلِ الْبَيْتِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘এটা সুস্পষ্ট যে, বন্ধুবান্ধব ও সাহাবা কিরামকে জমায়েত করার অভিপ্রায়ে এ ঘরটা তৈরী করা হয়েছিল, যাতে যিকর আযকার, কুরআন তিলাওয়াত ও মাগফিরাতের জন্য প্রার্থনা করা যায়। কিন্তু উক্ত বিবি সাহেবানীর এ কাজকে অনর্থক মাকরূহ সাব্যস্ত করা আহলে বাইতের শানেন পরিপন্থী। ’’ ১৭৮</div><div><br></div><div>{মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৩/১২৪৯ পৃঃ  হা/১৭৪৯}</div><div><br></div><div><br></div><div>পরিষ্কার বোঝা গেল, অনর্থক ইমারাত তৈরী করা নিষেধ, কিন্তু যিয়ারতকারীদের আরামের জন্য জায়েয। অধিকন্তু হযরত উমর (رضي الله عنه) হযরত যয়নব বিনতে জাহশ (رضي الله عنه) এর কবরের গম্বুজবিশিষ্ট ঘর তৈরী করিয়েছিলেন। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) নিজের ভাই হযরত আবদুর রহমান ও হযরত মুহাম্মদ ইবনে হানীফা (رضي الله عنه) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করেছিলেন।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ ‘মুনতকা শরহে মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক’ গ্রন্থে হযরত আবু ওয়ালীদ সুলায়মান আন্দুলসী (ওফাত. ৪৭৪ হি.) বর্ণনা করেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَقَدْ ضَرَبَهُ عُمَرُ عَلَى قَبْرِ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ وَكَرِهَ ضَرْبَهُ عَلَى قَبْرِ الرَّجُلِ ابْنُ عُمَرَ وَأَبُو هُرَيْرَةَ وَأَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ وَابْنُ الْمُسَيِّبِ وَضَرَبَتْهُ عَائِشَةُ عَلَى قَبْرِ أَخِيهَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ وَضَرَبَهُ مُحَمَّدُ بْنُ الْحَنَفِيَّةِ عَلَى قَبْرِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ ابْنُ حَبِيبٍ وَأَرَاهُ وَاسِعًا الْيَوْمَ وَالْيَوْمَيْنِ وَالثَّلَاثَةَ وَيُبَاتُ فِيهِ إنْ خِيفَ مِنْ نَبْشٍ أَوْ غَيْرِهِ، وَإِنَّمَا كَرِهَهُ مَنْ كَرِهَهُ لِمَنْ ضَرَبَهُ عَلَى وَجْهِ السُّمْعَةِ وَالْمُبَاهَاةِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘হযরত উমর (رضي الله عنه) যয়নব বিনতে জাহশের কবরের উপর, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) স্বীয় ভাই আবদুর রহমানের কবরের উপর এবং মুহাম্মদ ইবনে হানীফা (ইবনে হযরত আলী) ইবনে আব্বাসের কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করেছিলেন। যিনি গম্বুজ তৈরী করাকে মাকরুহ বলেছেন, তিনি এ শর্তে বলেছেন যে, যদি গর্ববোধ ও ভন্ডামী করার অভিপ্রায়ে এটা তৈরী করা হয়।’’ ১৭৯</div><div><br></div><div>{আন্দুলসী, মুনতাকা শরহে মুয়াত্তায়ে মালেক, ২/২৩ পৃঃ  }</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ প্রসিদ্ধ ‘বদায়েউস সানায়ে’ গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ৩২০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَرُوِيَ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا - لَمَّا مَاتَ بِالطَّائِفِ صَلَّى عَلَيْهِ مُحَمَّدُ بْنُ الْحَنَفِيَّةِ، وَكَبَّرَ عَلَيْهِ أَرْبَعًا، وَجَعَلَ لَهُ لَحْدًا وَأَدْخَلَهُ الْقَبْرَ مِنْ قِبَلِ الْقِبْلَةِ، وَجَعَلَ قَبْرَهُ مُسَنَّمًا وَضَرَبَ عَلَيْهِ فُسْطَاطًا.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘যখন তায়িফে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ইন্তিকাল ফরমান, তখন হযরত মুহাম্মদ ইবনে হানীফা তাঁর জানাযার নামায পড়েছেন, কবর প্রস্তুত করেছেন, জানাযার ৪ তাকবীরে আদায় করলেন, লহদ কবরে কিবলামুখি করে প্রবেশ করলেন এবং কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করিয়েছিলেন।’’ ১৮০</div><div><br></div><div>{‘বদায়েউস সানায়ে’ গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ৩২০ পৃষ্ঠা}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ বুখারী শরীফের শরাহ আইনীতে আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وضربه مُحَمَّد بن الْحَنَفِيَّة على قبر ابْن عَبَّاس.</div><div><br></div><div><br></div><div>হযরত মুহাম্মদ ইবনে হানীফা (رضي الله عنه) হযরত ইবনে আব্বাসের কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করিয়েছিলেন।’’  ১৮১</div><div><br></div><div>{আল্লামা আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ৮/১৩৪ পৃঃ }</div><div><br></div><div><br></div><div>সাহাবায়ে কিরাম এ কাজটি (অর্থাৎ গম্বুজ তৈরী) করলেন এবং সমস্ত উম্মত রসুলে খোদার রওযা মুবারকে যেতে আছে। কোন মুহাদ্দিছ, কোন ফকীহ কোন আলিম এ রওযা পাক পাক নিযে কোন আপত্তি উত্থাপন করেননি। তাই উপরোক্ত হাদীছের সেই বিশ্লেষণই করতে হবে, যা আমি করেছি। আর কবরের উপর বসার অর্থ হচ্ছে, স্বয়ং কবরের রক্ষণাবেক্ষণ করেন, মাযারের খাদিম হওয়া নিষেধ নয়। খাদিম হচ্ছে, যিনি কবরের রক্ষণাবেক্ষণের করেন, মাযারের দরজার চাবি নিজের কাছে রাখেন ইত্যাদি। এ কাজটা সাহাবায়ে কিরাম থেকে প্রমাণিত আছে। মুসলমানদের মাতা হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) হুযুর ﷺ'র রওযা পাকের পরিচর্যাকারিনী ও চাবি রক্ষয়িত্রী ছিলেন। যখন সাহাবায়ে কিরাম যিয়ারত করার ইচ্ছা পোষণ করতেন, তখন তাঁর দ্বারা তালা খুলে যিয়ারত করতেন। (মিশকাত শরীফের الدفن অধ্যায়ে দেখুন) এখনও হুযুর (ﷺ) এর রওযা পাকের খাদিম নিয়োজিত আছেন কেউ ওটাকে নাজায়েয বলেননি।</div><div><br></div><div><br></div><div>২নং আপত্তি: মিশকাত শরীফের الدفن অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَعَنْ أَبِي الْهَيَّاجِ الْأَسَدِيِّ قَالَ: قَالَ لِي عَلِيٌّ: أَلَا أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِن لَا تَدَعَ تِمْثَالًا إِلَّا طَمَسْتَهُ وَلَا قَبْرًا مشرفا إِلَّا سويته. رَوَاهُ مُسلم.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘আবু হায়াজ আসদী থেকে বর্ণিত আছে- হযরত আলী (رضي الله عنه) আমাকে বলেছেন, “আমি কি তোমাকে ওই কাজের জন্য পাঠাবো না, যে কাজের জন্য আমাকে হুযুর ﷺ পাঠাতেন? কাজটি হচ্ছে কোন ফটো বিনষ্ট করা ছাড়া রাখিও না এবং কোন উঁচু কবর রাখিও না, একে সমান করে দাও।’’ ১৮২</div><div><br></div><div>{খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৫৩২ পৃঃ  হা/১৯৯৬, সহীহ মুসলিম, ২/৬৬৬ পৃঃ  হা/৯৬৯}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ বুখারী শরীফের প্রথম অধ্যায়ে কিতাবুল জনায়েযের بَابُ الجَرِيدِ عَلَى القَبْرِ শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَرَأَى ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، فُسْطَاطًا عَلَى قَبْرِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، فَقَالَ: انْزِعْهُ يَا غُلاَمُ، فَإِنَّمَا يُظِلُّهُ عَمَلُهُ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হযরত আবদুর রহমানের কবরের উপর তাঁবু দেখে বলেছিলেন, “হে বৎস, একে সরিয়ে ফেল, কেননা ওর আমলই ওর উপর ছায়া দিচ্ছে।’’ ১৮৩</div><div><br></div><div>{ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, কিতাবুুুল জানাইয, ২/৯৫ পৃঃ  আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ৮/১৮৩ পৃঃ  }</div><div><br></div><div><br></div><div>এ হাদীছ দু’টি থেকে বোঝা গেল যে, যদি কোন কবরের উপর ইমারত তৈরী করা হয় বা কবরকে উঁচু করা হয়, তাহলে ভেংগে দেয়া দরকার।</div><div><br></div><div>বিঃ দ্রঃ- এ হাদীছের আশ্রয় নিয়ে নজদী ওহাবীরা সাহাবায়ে কিরাম ও আহলে বাইতের মাযারসমূহ ভেংগে ধুলিসাৎ করে দেয়।</div><div><br></div><div><br></div><div>উত্তর: যেসব কবরকে ভেংগে ফেলার জন্য হযরত আলী (رضي الله عنه) নির্দেশ দিয়েছিলেন, ওগুলো কাফিরদেরই কবর ছিল, মুসলমানদের নয়। এর কয়েকটি প্রমাণ রয়েছে-প্রথমতঃ হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেছেন- আমি তোমাকে ঐ কাজের জন্য পাঠাচ্ছি, যেটার জন্য আমাকে হুযুর ﷺ পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু হুযুর ﷺ'র যুগে হযরত আলী (رضي الله عنه) যেসব কবর ধ্বংস করেছিলেন, ওগুলো কিছুতেই মুসলমানদের কবর হতে পারে না। কেননা, সাহাবার দাফন কার্যে হুযুর ﷺ অংশ গ্রহণ করতেন। অধিকন্তু সাহাবায়ে কিরামও হুযুর ﷺ'র সাথে পরামর্শ ছাড়া কোন কাজ করতেন না। সুতরাং ঐ সময় মুসলমানদের যা কবর ছিল, ওগুলো আবার কোন উঁচু করা হতো। যেমন</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ বুখারী শরীফে মসজিদে নববীর নির্মাণের বর্ণনা প্রসংগে উল্লেখিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقُبُورِ الْمُشْرِكِينَ فَنُبِشَتْ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘হুযুর ﷺ মুশরিকদের কবর সমূহের বেলায় হুকুম দিয়েছিলেন। তখন ওগুলোকে উপড়ে ফেলা হয়েছিল।’’ ১৮৪</div><div><br></div><div>{ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, কিতাবুুুল জানাইয, ১/৯৩ পৃঃ , ইমাম নাসাঈ, আস-সুনান, ২/৩৯পৃঃ  হা/৭০২, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, হা/৪৫৩, আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ৪/১৭৫ পৃঃ }</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ হযরত হাফেজ ইবনে হাজর (رحمة الله) ফতহুল বারী শরহে বুখারীর প্রথম খন্ডের ৫২৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>أَيْ دُونَ غَيْرِهَا مِنْ قُبُورِ الْأَنْبِيَاءِ وَأَتْبَاعِهِمْ لِمَا فِي ذَلِكَ مِنَ الْإِهَانَةِ لَهُمْ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘নবীগণ ও এদের অনুসারীদের কবরসমূহ বাদ দিয়ে, কেননা ওনাদের কবর উপড়ে ফেলাটা ওনাদের প্রতি অবমাননাকর হবে।’’</div><div><br></div><div><br></div><div>অন্যত্র আরও উলে­খ করেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَفِي الْحَدِيثِ جَوَازُ التَّصَرُّفِ فِي الْمَقْبَرَةِ الْمَمْلُوكَةِ بِالْهِبَةِ وَالْبَيْعِ وَجَوَازُ نَبْشِ الْقُبُورِ الدَّارِسَةِ إِذَا لَمْ تَكُنْ مُحْتَرَمَةً.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয়, যে কবরস্থান ইসলামী হুকুমতের অধীনে এসে গেছে, এতে হস্তক্ষেপ করা জায়েয এবং পুরাতন কবরসমূহের উপড়ে ফেলা যাবে। তবে শর্ত হলো, যেগুলো উপড়ে ফেলা হারাম, সেগুলো বাদ দিতে হবে।’’ ১৮৫</div><div><br></div><div>{ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৫২৬।}</div><div><br></div><div><br></div><div>উপরের উল্লেখিত হাদীছ এবং এর ব্যাখ্যা দ্বারা বিরোধিতাকারীদের উত্থাপিত হযরত আলী (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদীছের ব্যাখ্যা হয়ে গেল অর্থাৎ সে হাদীছে মুশরিকদের কবর ভেংগে ফেলার কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ উক্ত হাদীছে কবরের সাথে ফটোর কথাও উল্লেখিত আছে। কিন্তু মুসলমানদের কবরেতো ফটো থাকে না। তাই কাফিরদের কবরই বোঝা যায়, কেননা, ওদের কবরসমূহে মৃতব্যক্তির ফটোও থাকে না। তাই কাফিরদের কবরই বোঝা যায়, কেননা ওদের কবরসমূহে মৃতব্যক্তির ফটোও দেয়া হয়। তৃতীয়তাঃ উল্লেখিত হাদীছে বলা হয়েছে, ‘কবরকে যমীনের বরাবর করে দাও, কিন্তু মুসলমানদের কবরের বেলায় যমীন থেকে এত হাত উঁচু রাখা সুন্নাত। এতে যমীনের সাথে মিলিয়ে দেয়া’ সুন্নাতের বরখেলাপ। তাই মানতেই হবে যে, ওই কবরসমূহ কাফিরদেরই ছিল। অন্যথায় আশ্চর্যকর মনে হবে যে, হযরত আলী (رضي الله عنه) উঁচু কবরসমূহ উপড়ে ফেলেছেন আর তাঁরই সন্তান মুহাম্মদ ইবনে হানীফা হযরত ইবনে আব্বাসের কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করলেন। যদি কোন মুসলমানের কবর অতিরিক্ত উঁচুও হয়ে যায়, তবুও একে উপড়ে ফেলা উচিত নয়, কেননা, এতে মুসলমানের অবমাননা হয়। প্রথমেই উঁচু করানো। তবে যদি হয়ে যায়, তাহলে ভেংগে ফেল না। দেখুন, ছোট সাইজের কুরআন ছাপানো নিষেধ (শামী, কিতাবুল, কারাহিয়া দ্রষ্টব্য) কিন্তু যদি ছাপানো হয়ে গেল, তাহলে ফেলে দিও না বা জ্বালিয়ে ফেল না। কেননা উপরে বসা, ওখানে মলমূত্র ত্যাগ করা, জুতা পরে বা এমনি চলাফেরা করা নিষেধ। কিন্তু আফসোস! নজদী সরকার সাহাবায়ে কিরামের মাযার সমূহ ধূলিসাৎ করে দিয়েছেন। অথচ জিদ্দা শহরে খৃষ্টানদের উঁচু উঁচু কবর নিয়মিত হতেই আছে।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ হুযুর ﷺ ঠিকই বলেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>يَقْتُلُونَ أَهْلَ الْإِسْلَامِ، وَيَتْرُكُونَ أَهْلَ الْأَوْثَانِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘তারা মুসলমানদেরকেই হত্যা করবে এবং মূর্তি পুজারীদেরকে ছেড়ে দেবে।’’  ১৮৬</div><div><br></div><div>{ইমাম ইবনে আবি আসেম, আস-সুন্নাহ, ২/৪৪০ পৃঃ  হা/৯১০, পরিচ্ছেদ: بَابُ الْمَارِقَةِ، وَالْحَرُورِيَّةِ، وَالْخَوَارِجِ، السَّابِقِ لَهَا خِذْلَانُ خَالِقِهَا, হাদিসটি হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।}</div><div><br></div><div><br></div><div>প্রত্যেকের স্বজাতির প্রতি টান থাকে। হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) এর হাদীছ প্রমাণ হিসেবে পেশ করা নিছক বোকামী বৈ কিছু নয়। তিনি তো স্বয়ং বলেছেন-মৃত ব্যক্তির ছায়ার জন্য তার আমলসমূহই যথেষ্ট। যার ফলে, বোঝা গেল, যে মৃত ব্যক্তির ছায়ার জন্য যদি গম্বুজ বানানো হয়, তাহলে নাজায়েয। তবে যিয়ারতকারীদের আরামের জন্যে বানানো হলে জায়েয।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ “আইনী"তে হযরত ইবনে উমরের এ হাদীছের প্রেক্ষাপটে উল্লেখিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَهِي الْإِشَارَة إِلَى أَن ضرب الْفسْطَاط إِن كَانَ لغَرَض صَحِيح كالتستر من الشَّمْس مثلا للإحياء لَا لإظلال الْمَيِّت فَقَط، جَازَ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘এ হাদীছ দ্বারা ওইদিকে ইংগিত করা হয়েছে যে বৈধ উদ্দেশ্যে তাঁবু টাঙানো অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির ছায়ার জন্য নয়, জীবিতদেরকে সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা করার জন্য জায়েয আছে।’’ ১৮৭</div><div><br></div><div>{আল্লামা আইনী, উমদাতুল ক্বারী শরহে সহীহুল বুখারী, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-১৮৩।}</div><div><br></div><div><br></div><div>এ ব্যাপারে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। একবার দ্বিপ্রহরের সময় হযরত মোল্লা আবদুল হাকীম ফাজিলে শিয়ালকুটি (রঃ) এর মাযার যিয়ারত করার একান্ত বাসনা দিয়ে শিয়ালকোর্ট গিয়েছিলাম। কিন্তু কবরের উপর কোন ছাউনি না থাকায়, তদুপরি মাটির গরম ও প্রখর রৌদ্রের কারণে তাড়াহুড়ো করে কোন মতে দু’এক আয়াত পাঠ করে চলে আসতে বাধ্য হলাম। মনের আবেগ মনেই রয়ে গেল। ওই দিন আমি বুঝতে পেরেছিলাম মাযারের উপর ইমারত তৈরী করার অনেক ফায়দা রয়েছে।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ তাফসীরে রূহুল বয়ানে ২৬ পারা সূরা ফ'তাহের ১৮ আয়াত</div><div><br></div><div><br></div><div>إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>এর ব্যাখ্যা প্রসংগে বলা হয়েছে যে কতেক অহংকারী লোক বলে যে যেহেতু আজকাল লোকেরা আওলিয়া কিরামের কবরসমূহের তাযীম করে, তাই আমরা ওসব কবরসমূহ ভেংগে ফেলবো, যাতে এসব লোকেরা বুঝতে পারে যে আওলিয়া কিরামের কোন ক্ষমতা নেই। তা না হলে ওনারা নিজেদের কবরসমূহকে উচ্ছেদ করা থেকে রক্ষা করতেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>فَاَعْلَمُ اَنَّ هَذَا الصَّنِيْع كَفْر صَرَاحَ مَأَخُوْذٌ مِنْ قَوْلِ فِرْعُوْنَ عَلَى مَا حِكَاه الله تَعَالٰى لَنَا فِي كِتَابِهِ القَدِيْم وَقَال فِرْعُوْنَ ذَوُونِى اَقْتُلَ مُوْسٰى وَلَيَدْعُ رَبَّهُ اِنِّى أَخَافُ اِنَّ يُبَدِّلَ دِيْنَكُمْ اَوْ ان يَظْهر فِي الْأَرْض الْفَسَاد.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘কিন্তু জেনে রাখ যে, এ ধরনের কাজ নিঃসন্দেহে কুফরী। এটা ফিরাউনের সে উক্তিরই প্রতিধ্বনি। (যেমন সে বলেছিল) “আমাকে ছেড়ে দাও। আমি মূসাকে কতল করব। সে ইচ্ছা করলে তার খোদাকে ডাকুক। আমার ভয় হচ্ছে যে, সে তোমাদের ধর্মকে পালটে দেবে এবং পৃথিবীতে অরাজকতা সৃষ্টি করবে।” ১৮৮</div><div><br></div><div>{ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-৩৪।}</div><div><br></div><div><br></div><div>কেউ একবার আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, যদি আওলিয়া কিরাম ও সাহাবায়ে কিরামের কোন ক্ষমতা থাকতো, তাহলে নজদী-ওহাবীদের থেকে নিজেদের কবর সমূহকে কেন রক্ষা করতে পারবো না? বোঝা গেল যে এগুলো নি®প্রাণ। তাই ওদের সম্মান-অসম্মান আবার কিসের? আমি এর উত্তরে বলেছিলাম হুযুর ﷺ'র আগমনের আগে পবিত্র কা’বা শরীফে ৩৬০টি মূর্তি ছিল এবং হাদীছ শরীফে আছে যে কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে এক ব্যক্তি কা’বা শরীফকে ভেংগে ফেলবে। বর্তমানে লাহোরের শহীদগঞ্জ মসজিদে শিখদের গুরদুয়ারায় পরিণত হয়ে গেছে এবং হিন্দুস্থানে অনেক মসজিদ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তাহলে হিন্দুরা যদি বলে খোদার যদি শক্তি থাকতো, তাহলে আমাদের হাত থেকে তার ঘরকে কেন রক্ষা করলো না? এর উত্তরে কি বলবেন? আল্লাহর ওলীগণ বা তাঁদের মাযারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন তাঁদের খোদা প্রাপ্তির কারণেই করা হয়, কেবল ক্ষমতাবান বলে নয়, যেমন মসজিদসমূহ ও মক্কাশরীফের সম্মান করা হয়। ইবনে সাউদ অনেক মসজিদ ভেংগে ফেলেছে, যেমন সাফা পাহাড়ের উপর স্থাপিত হযরত বিলালের মসজিদ ইত্যাদি ইত্যাদি।</div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div>━━━━</div>

কবরের উপর ইমারত তৈরী প্রসংগে উত্থাপিত আপত্তি সমূহের জবাব

দ্বিতীয় অধ্যায় কবরের উপর ইমারত তৈরী প্রসংগে উত্থাপিত আপত্তি সমূহের জবাব এ বিষয়েল উপর কেবল দু’টি আপত্তি রয়েছেঃ ১ নং আপত্তিঃ মিশকাত শরীফের بَا...

Read more »

আওলিয়া কিরামের মাযারের উপর গম্বুজ তৈরী করা

<div>আওলিয়া কিরামের মাযারের উপর গম্বুজ তৈরী করা প্রসঙ্গে আলোচনা</div><div><br></div><div><br></div><div>মুসলমানকে দু’শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। সাধারণ মুসলমানগণ এক শ্রেণীভুক্ত এবং উলামা, মাশায়িখ ও আওলিয়া কিরাম, যাদের তাযীম আসলে ইসলামেরই তাযীম, অন্য শ্রেণীভুক্ত।</div><div><br></div><div>(১) সাধারণ মুসলমাদের কবরকে পাকা করা বা এর উপর গম্বুজ তৈরী করা যেহেতু অনর্থক, সেহেতু নিষেধ। তবে কবরের নিশানা ঠিক রাখার অভিপ্রায়ে মাটি ইত্যাদি দেয়া ও ফাতিহা ইত্যাদি পাঠ করা জায়েয।</div><div><br></div><div>(২) উলামা, মাশায়িখ ও আওলিয়া কিরামের মধ্যে যাদের মাযার সমূহে জনগণের ভীর থাকে এবং লোকেরা ওখানে বসে কুলখানি, ফাতিহা ইত্যাদি পাঠ করে, আগতদের আরামের জন্য এবং ছাহেবে কবরের শান-মান প্রকাশ করার জন্য এবং আশে-পাশে ছায়ার জন্য গম্বুজ ঘর ইত্যাদি তৈরী করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয বরং সুন্নাতে সাহাবা দ্বারা প্রমাণিত।</div><div><br></div><div>(৩) যেসব সাধারণ মুসলমাদের কবর সমূহ পাকা করা বা এর উপর গম্বুজ বিশিষ্ট ঘর তৈরী করা নিষেধ, তাদের কবর সমূহ যদি পাকা করে ফেলা হয়, তাহলে এগুলোকে ভেঙ্গে ফেলা হারাম। প্রথম মাসআলা সম্পর্কে সবাই একমত কিন্তু শেষের দু’মাসায়েলা প্রসংগে আপত্তি রয়েছে। এজন্য আমি আলোচ্য বিষয়টাকে দু’টি অধ্যায়ে বিভক্ত করেছি। প্রথম অধ্যায়ে এর সমর্থনে প্রমাণ উপস্থাপন এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে এ প্রসংগে উত্থাপিত আপত্তি সমূহের জবাব দেয়া হয়েছে।</div><div><br></div><div>━━━━</div><div><br></div><div><div>প্রথম অধ্যায়</div><div><br></div><div>আওলিয়া কিরামের মাযারের উপর ইমারতের প্রমাণ</div><div><br></div><div><br></div><div>এখানে তিনটি বিষয় জানার আছে- এক: কবর পাকা করা; দুই: কবরকে সুন্নাত পরিমাণ থেকে অর্থাৎ এক হাত থেকে বেশী উঁচু করা; তিন: কবরের আশে-পাশে ইমারত তৈরী করা জায়েয কিনা? আবার কবর পাকা করার দুটি রূপ রয়েছে। একটি হচ্ছে রের অভ্যান্তরিন অংশ পাকা করা, যা লাশের সাথে জড়িত থাকে, অপরটি হচ্ছে কবরের উপরাংশ পাকা করা, যা কবরের উপরে দেখা যায়।</div><div><br></div><div><br></div><div>(১) কবরের অভ্যান্তরিন অংশ পোড়া উট দ্বারা পাকা করা এবং ওখানে লাকড়ী স্থাপন করা নিষেধ। তবে পাথর ও সিমেন্ট ব্যবহার করা জায়েয আছে। কেননা লাকটি ও ইটের মধ্যে আগুনের প্রভঅব রয়েছে। কবরের বহিরাংশ সাধারণ মুসলমাদের বেলায় পাকা করা নিষেধ। কিন্তু বিশেষ বিশেষ উলামা ও মাশায়িখের জন্য জায়েয।</div><div><br></div><div><br></div><div>(২) কবরের চৌহদ্দী একহাত থেকে বেশী উঁচু করা নিষেধ। তবে যদি আশে-পাশে উঁচু করে কবরকে একহাত পরিমাণ উঁচু করা জায়েয।</div><div><br></div><div><br></div><div>(৩) কবরের আশে-পাশে বা কবরের সন্নিকটে কোন ইমারত তৈরী করা সাধারণ মুসলমানদের কবরের ক্ষেত্রে নিষেধ। কিন্তু ফকীহ ও আলিমগণের কবরের বেলায় জায়েয। এর দলীল সমূহ নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ-</div><div><br></div><div><br></div><div>(১) মিশকাত শরীফের কিতাবুল জানায়েযের الدفن শীর্ষক অধ্যায়ে আবু দাউদ শরীফের বরাত দিয়ে বর্ণিত আছে- হযরত উছমান ইবনে মযউন (رضي الله عنه) কে যখন দাফন করা হয়, তখন হুযুর আলাইহিস সালাম তাঁর কবরের শিয়রে একটি পাথর রাখলেন এবং ইরশাদ ফরমান-</div><div><br></div><div><br></div><div>أُعَلِّمُ بِهَا قَبْرَ أَخِي وَأَدْفِنُ إِلَيْهِ مَنْ مَاتَ من أَهلِي . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘আমরা এর দ্বারা নিজের ভাইয়ের কবর সনাক্ত করতে পারবো এবং এখানে স্বীয় আহলে বাইতের লাশ সমূহ দাফন করবো।’’ ১৫৪</div><div><br></div><div>➥{খতিব তিবরিযি, মিশকাত, কিতাবুল জানায়িয, কাফনুল মায়্যিত, ১/৫৩৬ পৃঃ  হা/১৭১১, পরিচ্ছেদ:, আলবানী এ হাদিসের তাহকীকে একে ‘হাসান’ বলেছেন, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৩/২১২ পৃঃ  হা/৩২০৬}</div><div><br></div><div><br></div><div>(২) বুখারী শরীফে  কিতাবুল জানায়েয بَابُ الجَرِيدِ عَلَى القَبْرِ শীর্ষক অধ্যায়ে অন্য হাদীছের সনদের সাথে যুক্ত করে একটি হাদীচ হযরত খারেজা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন-আমরা হযরত উছমানের যুগে জীবিত ছিলামঃ</div><div><br></div><div><br></div><div>وَإِنَّ أَشَدَّنَا وَثْبَةً الَّذِي يَثِبُ قَبْرَ عُثْمَانَ بْنِ مَظْعُونٍ حَتَّى يُجَاوِزَهُ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘তখন আমাদের মধ্যে সেই বড় লম্ফদানকারী ছিলেন, যিনি উছমান ইবনে মযউন (رضي الله عنه) এর কবরকে অতিক্রম করতে পারতেন।’’ ১৫৫</div><div><br></div><div>➥{ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ২/৯৫ পৃঃ  }</div><div><br></div><div><br></div><div>কবরের মাথার দিকে পাথর ছিল এবং বুখারী শরীফের রেওয়ায়েত থেকে বোঝা যায় তাঁর কবরের উপরিভাগ ঐ পাথরের দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। উভয় রেওয়ায়েতটা এভাবে একত্রিতকরণ করা যায় যে মিশকাত শরীফে কবরের মাথার দিকে যেই পাথর স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে, এর অর্থ হচ্ছে কবরের উপরই মাথার দিক থেকে এটা স্থাপন করা হয়েছে। বা ভাবার্থ এটাও হতে পারে যে, কবরটা সম্পূর্ণ উক্ত পাথরের ছিল, কিন্তু এ হাদীছে শূধু শিয়রের কথা উলে­খিত হয়েছে। এ দু’হাদীচ থেকে এটা প্রমাণিত হলো যে কোন বিশেষ কবরের চিহ্ন বহাল রাখার জন্য যদি কবরকে কিছু উঁচু করে দেয়া হয় বা পাথর দ্বারা পাকা করে দেয়া হয়, তা জায়েয আছে, যেন বুঝতে পারা যায় যে, এটা কোন বুযুর্গের কবর। এর আগে আরও দু’টি মাসআলা জানা গেছে। অধিকন্তু ফকীহগণ বলেন-যদি মাটি নরম হয় এবং লোহা বা কাঠের বাক্সে লাশ দাফন করতে হয়, তাহলে ভিতরের অংশের চারিদিকে মাটির সাথে মিলিয়ে দিন। (ফত্ওয়ায়ে শামী, আলমগীরী ও অন্যান্য কিতাবের دفن الميت অধ্যায় দ্রষ্টব্য।) এর থেকে আরও বোঝা গেল যে, কবরের নিম্ন ভাগ কাঁচা হওয়া চাই। দু’টি মাসায়েলই প্রমাণিত।</div><div><br></div><div><br></div><div>(৩) উলামা মাশায়িখ ও আওলিয়া কিরামের মাযারের আশে-পাশে বা এর সন্নিকটে ইমারত তৈরী করা জায়েয। কুরআন করীম, সাহাবায়ে কিরাম ও সাধারণ মুসলমানদের আমল ও উলামায়ে কিরামের উক্তিসমূহ থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ কুরআন করীম আসহাবে কাহাফের কাহিনী বর্ণনা প্রসংগে ইরশাদ করেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>قَالَ الَّذِينَ غَلَبُوا عَلَى أَمْرِهِمْ لَنَتَّخِذَنَّ عَلَيْهِمْ مَسْجِدًا.</div><div><br></div><div><br></div><div>‘‘-তিনি বললেন, তাঁরা যে কাজে নিয়োজিত ছিলেন (ইবাদত বন্দেগীতে) তাঁদের সেই স্মৃতির উদ্দেশ্যে মসজিদ নিমার্ণ করা হবে।’’  ১৫৬</div><div><br></div><div>➥{সূরা কাহাফ, আয়াত নং-২১}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ তাফসীরে রূহুল বায়ানে এ আয়াতের بُنْيَانًا এর  ব্যাখ্যা প্রসংগে উলে­খিত আছে -</div><div><br></div><div><br></div><div>لَا يَعْلَمُ أَحَدٌ تُرْبَتَهُمْ وَتَكُوْنَ مَحْفُوْظَةً مِنْ تَطَرُّقِ النَّاسِ كَمَا حُفِظْتُ تُرْبَةُ رَسُوْلُ اللهِ بِالْحَظِيْرَةِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘তাঁরা প্রস্তাব দিলেন, আসহাবে কাহাফের জন্য এমন একটি প্রাচীর তৈরী করুণ, যা তাদের কবরকে পরিবেষ্টিত করবে এবং তাদের মাযার সমূহ জনগণের আনাগোনা থেকে হিফাজতে থাকবে, যেমন হুযুর আলাইহিস সালামের রওযা পাককে চার দেয়ালের দ্বারা পরিবেষ্টিত করা হয়েছে।’’  ১৫৭</div><div><br></div><div>➥{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৫/২৩২ পৃঃ  দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}</div><div><br></div><div><br></div><div>কিন্তু তাদের এ প্রস্তাব অগ্রাহ্য হলো, মসজিদই নির্মাণ করা হলো।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ উক্ত রূহুল বয়ানে مَسْجِدًا এর তফ্সীর এভাবে করা হয়েছে -</div><div><br></div><div><br></div><div>يُصَلِّى فِيْهِ الْمُسْلِمُوْنَ وَيَتَبَرَّكُوْنَ بِمَكَانِهِمْ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘জনগণ সেখানে নামায আদায় করবে এবং ওদের থেকে বরকত হাসিল করবে।’’  ১৫৮</div><div><br></div><div>➥{টিকাঃ</div><div><br></div><div>আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৫/২৩২ পৃঃ  দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।</div><div><br></div><div><br></div><div>☞বিখ্যাত তাফসিরকারক ইমাম নাসাফী (رحمة الله) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন-</div><div><br></div><div>➥{مَّسْجِدًا} يُصَلِّى فِيْهِ الْمُسْلِمُوْنَ وَيَتَبَرَّكُوْنَ بِمَكَانِهِمْ</div><div><br></div><div>-‘‘জনগণ সেখানে নামায আদায় করবে এবং ওদের থেকে (মাজার শরীফ থেকে) বরকত হাসিল করবে।’’</div><div><br></div><div>(ইমাম নাসাফী, মাদারিকুত তানযিল, ২/২৯৩ পৃঃ , দারুল কালামুল তৈয়্যব, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ- ১৪১৯ হিঃ)</div><div><br></div><div><br></div><div>☞আল্লামা যামাখশারী (رحمة الله) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন-</div><div><br></div><div>مَّسْجِدًا يُصَلِّى فِيْهِ الْمُسْلِمُوْنَ وَيَتَبَرَّكُوْنَ بِمَكَانِهِمْ</div><div><br></div><div>-‘‘মসজিদ এ জন্য বানাবে যে মুসলমানগণ যেন নামায পড়বেন এবং সেখান থেকে (মাজার থেকে) বরকত লাভ করবেন।’’</div><div><br></div><div>(তাফসিরে কাশ্শাফ, ২/৭১১ পৃঃ ) বিখ্যাত তাফসিরকারক আল্লামা নিযামুদ্দীন নিশাপুরী (ওফাত. ৮৫০ হিঃ)</div><div><br></div><div><br></div><div>☞তার এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-</div><div><br></div><div>لأِنَّهُمْ بنوا عَلَيْهِمْ مَّسْجِدًا يُصَلِّى فِيْهِ الْمُسْلِمُوْنَ وَيَتَبَرَّكُوْنَ بِمَكَانِهِمْ</div><div><br></div><div>-‘‘আসহাবে কাহাফের নিকটে একটি মসজিদ তৈরী করা হবে যেন নামায পড়তে পারেন এবং সেখান থেকে (মাজার থেকে) বরকত লাভ করতে পারেন।’’ (তাফসিরে নিশাপুরী, ৪/৪১১ পৃঃ , দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)</div><div><br></div><div><br></div><div>☞আল্লামা ড. ওহ্হাব বিন মুস্তফা জুহাইলী এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন-</div><div><br></div><div>لنتخذن على باب الكهف مَّسْجِدًا يُصَلِّى فِيْهِ الْمُسْلِمُوْنَ وَيَتَبَرَّكُوْنَ بِمَكَانِهِمْ</div><div><br></div><div>-‘‘আসহাবে কাহাফের দরজায় একটি মসজিদ তৈরী করা হবে যেন মুসলমানরা নামায পড়বেন এবং সেখান থেকে তারা (মুসলমানগণ মাজার থেকে) বরকত লাভ করবেন।’’</div><div><br></div><div>(জুহাইলী, তাফসিরুল মুনীর, ১৫/২২৬ পৃঃ)}</div><div><br></div><div><br></div><div>কুরআন করীম সেসব লোকদের দু’টি বক্তব্য উলে­খ করেছেন। এক: আসহাফে কাহাফের আস্তানার আশে পাশে গম্বুজ ও সমাধি তৈরী করার পরামর্শ। দুই: ওদের সন্নিকটে মসজিদ তৈরী করার সিদ্ধান্ত। কুরআন করীম কোনটাকে অস্বীকার করেনি। যার ফলে প্রতীয়মান হলো যে, উভয় কাজটা তখনও জায়েয ছিল এবং এখনও জায়েয আছে। যেমন উসূলের কিতাবসমূহ দ্বারা প্রমাণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>شَرَائِعَ قَبْلِنَا يَلْزِمْنَا.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘আগের যুগের শরীয়ত আমাদের জন্য পালনী।’’</div><div><br></div><div><br></div><div>হুযুর আলাইহিস সালামকে হযরত সিদ্দীক (رضي الله عنه) এর কুটিরে দাফন করা হয়। যদি এটা নাজায়েয হতো, তাহলে সাহাবায়ে কিরাম প্রথমে ওটা ভেংগে ফেলতেন, অতঃপর দাফন করতেন; কিন্তু তা করলেন না। হযরত উমর (رضي الله عنه) স্বীয় খিলাফতের যুগে এর চারিদিকে কাঁচা ইটের দেওয়াল তৈরী করে দিয়েছিলেন। অতঃপর ওলিদ ইবনে আবদুল মালিকের যুগে সৈয়্যদেনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর সকল সাহাবায়ে কিরামের জীবিত থাকা অবস্থায় ঐ ইমারতটাকে খুবই মজবুত করেছেন এবং এতে পাথর স্থাপন করেছেন।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ যেমন সৈয়দ সমহুদী (رحمة الله) স্বীয় وفاء الوفاء بأخبار دار المصطفى নামক কিতাবের (২/২১১ পৃষ্ঠায় এবং ২/২৫৫ পৃষ্ঠায়, যা দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন) ১০ম পরিচ্ছেদের ১৯৬ পৃষ্টায় হুযূরা সম্পর্কিত আলোচনায় লিপিবদ্ধ করেছেন -</div><div><br></div><div><br></div><div>حَدَّثنا حَمَّادْ بن زيد قال: سَمعت عمرو بن دينار وعبيد الله بن أبي يزيد قَالَا: لَمْ يَكُنْ عَلَى عَهْدِ النَّبِي صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى بَيْتِ النَّبِي صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَائط، وَكَانَ أَوَّلُ مَنْ بنى عليه جِدَارًا عُمر بن الخطاب رضي الله عنه.</div><div><br></div><div>قَال عُبَيْدُ الله بْنِ أَبِي يَزِيْد: كَانَ جِدَارَهُ قَصِيْرًا، ثُمَّ بناه عبد الله بن الزبير الخ...... وَقَالَ السُهَيْلِي: قَالَ الحَسَن البَصْرِي: كُنْتُ أَدْخُلَ بُيُوْتَ رَسُوْلَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا غُلاَمٌ مَرَاهِقُ وَأَنَالَ السَّقْفِ بِيَدِي، وَكَانَ لِكُلِّ بَيْتِ حَجَرَةٌ، وَكَانَتْ حَجَرَة مِنَ أكَسية مِنْ خُشُبٍ عَرْعَرَ.</div><div><br></div><div><br></div><div>(উপরের বক্তব্যটাই এর অনুবাদ) বুখারী শরীফের প্রথম খন্ড কিতাবুল জানায়েযের-</div><div><br></div><div><br></div><div>بَابُ مَا جَاءَ فِي قَبْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا.</div><div><br></div><div>শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত ওরওয়াহ (رحمة الله) হতে বর্ণিত আছে, ওলীদ ইবনে আবদুল মালিকের যুগে রাসূল (ﷺ) এর রওযা পাকের একটি দেওয়াল ধসে পড়ে গিয়েছিল। যখন أَخَذُوا فِي بِنَائِهِ সাহাবায়ে কিরাম একে মেরামত করার কাজে নিয়োজিত হলেন।</div><div><br></div><div><br></div><div>فَبَدَتْ لَهُمْ قَدَمٌ، فَفَزِعُوا وَظَنُّوا أَنَّهَا قَدَمُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘তখন একটি পা দৃষ্টিগোচর হলো। এতে তাঁরা ঘাবড়ে গেলেন এবং মনে করলেন এটা হুযুর আলাইহিস সালামের পবিত্র কদম মোবারক।’’</div><div><br></div><div><br></div><div>حَتَّى قَالَ لَهُمْ عُرْوَةُ: لاَ وَاللَّهِ مَا هِيَ قَدَمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مَا هِيَ إِلَّا قَدَمُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ.</div><div><br></div><div><br></div><div>শেষ পর্যন্ত হযরত ওরওয়াহ (رضي الله عنه) বললেন, খোদার কসম, এটা হুযুর আলাইহিস সালামের কদম নয়, এটা হযরত ফারুকের (رضي الله عنه) কদম।’’  ১৫৯</div><div><br></div><div>➥{ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, কিতাবুল জানাইয, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১০৩, হাদিস/১৩৯০)}</div><div><br></div><div><br></div><div>‘জযবুল কুলুব ইলা দিয়ারিল মাহবুব’ গ্রন্থে শেখ আবদুল হক (رحمة الله) লিপিবদ্ধ করেছেন যে, ৫৫০ হিজরীতে জামাল উদ্দিন ইষ্ফাহানী তথাকার উলামায়ে কিরামের উপস্থিতিতে দেয়ালের চারিদিকে চন্দন কাঠের জালী তৈরী করে দিয়েছিলেন এবং ৫৫৭ হিজরীতে কয়েকজন ঈসায়ী ধার্মিকের ছদ্মবেশে মদীনা শরীফ এসেছিল এবং সুড়ংগ খনন করে লাশ মুবারক বের করে নিতে চেয়েছিল। হুযুর আলাইহিস সালাম তৎকালীন বাদশাহকে তিনবার স্বপ্ন দেখালেন। অতঃপর বাদশাহ তাদেরকে কতল করার নির্দেশ দিলেন এবং রওযা পাকের চারিদিকে পানির স্তর পর্যন্ত ভিত্তি খনন করে সীসা ঢেলে একে ভরাট করে দিয়েছিলেন। আবার ৬৭৮ হিজরীতে সুলতান কালাউন সালেহী সবুজ গম্বুজটা, যা এখনও মওজুদ আছে, তৈরী করেছিলেন।</div><div><br></div><div><br></div><div>উপরোক্ত ভাষ্য থেকে এটা বোঝা গেল যে, পবিত্র রওযা মুবারত সাহাবায়ে কিরাম তৈরী করেছিলেন। যদি কেউ বলে, এটাতো হুযুর আলাইহিস সালামের বিশেষত্ব, এর উত্তরে বলা যাবে, এ রওযা শরীফে হযরত সিদ্দীক (رضي الله عنه) ও হযরত উমর (رضي الله عنه) কেউ দাফন করা হয়েছিল এবং হযরত ঈসা (عليه السلام) কেউ দাফন করা হবে। সুতরাং এটা হুযুর আলাইহিস সালামের বৈশিষ্ট বলা যায় না।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ বুখারী শরীফের প্রথম খন্ডে কিতাবুল জানায়েয এবং মিশকাত শরীফের الْبكاء على الْمَيِّت শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে, যখন ইমাম হাসান ইবনে আলী (رضي الله عنه) ইন্তিকাল করেছিলেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>ضَرَبَتِ امْرَأَتُهُ القُبَّةَ عَلَى قَبْرِهِ سَنَةً.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘তখন তাঁর স্ত্রী তাঁর কবরের উপর এক বছর পর্যন্ত গম্বুজ বিশিষ্ট্য ঘর তৈরী করে রেখেছিলেন।’’  ১৬০</div><div><br></div><div>➥{ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত, হা/১৭৪৯, ১/৫৪৮ পৃঃ  ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ২/৮৮ পৃঃ  পরিচ্ছেদ: بَابُ مَا يُكْرَهُ مِنَ اتِّخَاذِ المَسَاجِدِ عَلَى القُبُورِ}</div><div><br></div><div><br></div><div>এটাও সাহাবায়ে কিরামের যুগে সবার বর্তমানে হয়েছিল। কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করেননি। অধিকšতৃ তাঁর স্ত্রী ওখানে কেবছর পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন, অতঃপর ঘরে ফিরে আসেন। এ হাদীছ থেকে বুর্যুগানে কিরামের মাযার সমূহের কাছে খাদিমের অবস্থান করাটাও প্রমাণিত হলো।</div><div><br></div><div><br></div><div>এ পর্যন্ত কুরআন হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত করা হলো। এবার ফকীহ, মুহাদ্দীছ, তাফসীরকারীগণের উক্তি সমূহ প্রত্যক্ষ করুন।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ রূহুল বয়ানের তৃতীয় খন্ডে দশম পারায় সূরা তাওবা এর ১৮ নং আয়াত-</div><div><br></div><div><br></div><div>إِنَّما يَعْمُرُ مَساجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ</div><div><br></div><div><br></div><div>এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>فَبَنَاءُ القُبَابٍ عَلَى قُبُوْرِ العُلَمَاءِ وَالْأَوْلِيَاءِ وَالصَّلِحَاءِ ......اَمَرٌ جَائِزٌ إِذَا كَانَ القَصْدُ بِذَلِكَ التَّعْظِيْمُ فِى أَعْينِ العَامَّةِ حَتَّى لَا يَحْتَقِرُوْا صَاحِبَ هَذَا الْقَبْرِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘উলামা, আউলিয়া ও বুযুর্গাণে কিরামের  কবরের উপর ইমারত তৈরী করা জায়েয। যদি মানুষের মনে শ্রেষ্টতম ধারণা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে; যাতে লোকেরা ঐ কবরবাসীকে নগণ্য মনে না করে।’’  </div><div><br></div><div>➥{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪০০।}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ মিরকাত শরহে মিশকাতের কিতাবুল জ্নায়েয بَابُ دَفْنِ الْمَيِّتِ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَقَدْ أَبَاحَ السَّلَفُ الْبِنَاءَ عَلَى قَبْرِ الْمَشَايِخِ وَالْعُلَمَاءِ وَالْمَشْهُورِينَ لِيَزُورَهُمُ النَّاسُ، وَيَسْتَرِيحُوا بِالْجُلُوسِ فِيهِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘পূর্বসূরী আলিমগণ, মাশায়িখ ও উলামায়ে কিরামের কবর সমূহের উপর ইমারত তৈরী করা জায়েয বলেছেন, যাতে লোকেরা যিয়ারত করে এবং ওখানে বসে আরাম পায় ’’ ১৬২</div><div><br></div><div>➥{আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১২১৭, হাদিস/১৬৯৭ এর আলোচনা।}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী ‘শরহে সফরুস সা’আদত কিতাবে উলে­খ করেছেন -</div><div><br></div><div><br></div><div>در آخر زمان بجهت اقتصار نظر عوام برظاهر مصلحت در تعمير وترويج مشاهد ومقاهر مشائخ وعظماء ديده چيزها افزوز ندتا انجا هيبت وشوكت اهل اسلام واهل اصلاح پيدا آيد خصوصا درديار هند كه اعدائے دين از هنود وكفار بسيار اند. وترويج واعلاء شان ايں مقامات باعث رعب وانقياد ايشاں است وبسيار اعمال وافعال واوضاع كه درزمان سلف از مكروهات بوده اندر رآخر زمان از مستحسنات گشته.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘শেষ জামানায় সাধারণ মানুষ যখন বাহ্যিক বেশভূষার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গেল, তখন মাশায়িখ ও বুর্যুগানে কিরামের কবর সমূহের উপর ইমারত তৈরী করার প্রতি বিশেষ অভিপ্রায় জোর দেয়া হয়, যেন মুসলমান ও আওলিয়া কিরামের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ পায়। বিশেষ করে হিন্দুস্থানে, যেথায় হিন্দু, কাপির ও অনেক শত্রর অবস্থান, তথায় পুণ্যাত্মা মনীষীদের শান-মান প্রকাশ, সেসব কাফিরদের মনে ভীতি ও আনুগত্য সৃষ্টির সহায়ক। অনেক কাজ আগের যুগে মাকরূহ ছিল কিন্তু শেষ জামানায় মুস্তাহাবে রূপান্তরিত হয়ে যায়।’’ ১৬৩  </div><div><br></div><div>➥{শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, সাফরুস সা’আদত যিয়ারাতুল কুবুর পরিচ্ছেদ, পৃষ্ঠা-২৭২, নূরীয়া রেযভীয়া, দিদিল্লী, ভারত।}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ ফতওয়ায়ে শামীর প্রথম খন্ড دَفْنِ الْمَيِّتِ অধ্যায়ে লিখা আছে</div><div><br></div><div><br></div><div>وَفِي الْأَحْكَامِ عَنْ جَامِعِ الْفَتَاوَى: وَقِيلَ لَا يُكْرَهُ الْبِنَاءُ إذَا كَانَ الْمَيِّتُ مِنْ الْمَشَايِخِ وَالْعُلَمَاءِ وَالسَّادَاتِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘যদি মৃতব্যক্তি মাশায়িখ, উলামা বা সৈয়দ বংশ থেকে কেউ হয়ে থাকেন, তাঁর কবরের উপর ইমারত তৈরী করা মাকরূহ নয়।’’   ১৬৪</div><div><br></div><div>➥{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, কিতাবুয-জানাইয, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৩৭, দাফনুল মায়্যিত।}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ সেই একই অধ্যায়ে দুর্রুল মুখতারে উলে­খিত আছে -</div><div><br></div><div><br></div><div>لَا يَرْفَعُ عَلَيْهِ بِنَاءٌ. وَقِيلَ: لَا بَأْسَ بِهِ، وَهُوَ الْمُخْتَارُ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘কবরের উপর ইমারত তৈরী করা অনুচিত। কেউ কেউ বলেছেন, এতে কোন ক্ষতি নেই। এবং এ অভিমতটাই পছন্দনীয়।’’  ১৬৫</div><div><br></div><div>➥{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, কিতাবুয-জানাইয, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৩৭, দাফনুল মায়্যিত।}</div><div><br></div><div><br></div><div>কতেক লোক মনে বলেন যে, শামী ও দুর্রুল মুখতারের ইমারতের বৈধতার কথাটা যেহেতু শব্দ قِيلَ দ্বারা ব্যক্ত করেছেন, সেহেতু এ অভিমতটা দুর্বল। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। ফিকাহ শাস্ত্রে قِيلَ শব্দ ব্যবহারটা দুর্বলতার লক্ষণ নয়, বরং কোন কোন স্থানে একটি মাসআলার জন্য দু’টি মতামত ব্যক্ত করা হলে উভয় মতামতই قِيلَ শব্দ দ্বারা অর্থাৎ পরোক্ষভাবে প্রকাশ পায়। তবে হ্যাঁ, যক্তি বিদ্যায় قِيلَ শব্দটা দুর্বলতার নিদর্শন। কবরে আযান শীর্ষক আলোচনায় قِيلَ শব্দের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ ‘তাহতাবী মারাকিল ফালাহ’ গ্রন্থের ৬১১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَقَدْ اِعْتَادَ أَهْل مِصْرِ وَضَعَ الأَحْجَارِ حِفْظًا لِلْقَبُوْرِ عَنْ الإِنْدَارَسِ وَالنَّبْشِ وَلَا بَأَسَ بِهِ وِفِي الدُّرَر وَلَا يُجَصَّصَ وَلَا يَطَيْنَ وَلَا يَرْفَعُ عَلَيْهِ بِنَاءَ وَقِيْلَ لَا بَأَسَ بِهِ هُوَ المُخْتَارُ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘মিসরের লোকেরা কবর সমূহের উপর পাথর স্থাপন করে, যাতে বিলীন বা উচ্ছেদ হয়ে না যায় এবং কবরকে যেন পলেস্তারা করতে না পারে আর যেন কবরের উপর ইমারত তৈরী করতে না পারে। কেউ কেউ এগুলোকে জায়য বলেন এবং এটাই গ্রহণযোগ্য।’’  ১৬৬</div><div><br></div><div>➥{ইমাম তাহতাভী, তাহতাভী আ’লা মারাকিল ফালাহ, পৃষ্ঠা-৬১১, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ ‘মীযানুল কুবরা’ গ্রন্থের প্রথম খন্ডের শেষে কিতাবুল জানায়েযে ইমাম শারানী (رحمة الله) বলেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَمِنْ ذَالِكَ قَوْلُ الاَئِمَّةَ اَنَّ القَبْرَ لَايَبْنٰى وَلَا يُجَصَّصُ مَعَ قَوْلِ اَبِى حَنِيْفَةَ يَجُوْزَ ذَالِكَ قَالَ الاَوَّلُ مُشَدَّدُ وَالثَّانِى مَخَفَّف .</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘অন্যান্য ইমামগণের মতামত হচ্ছে, কবরের উপর ইমারত তৈরী করা এবং একে চুন দিয়ে আলাপন করা যাবে না। তা সত্তে¡ও ইমাম আবু হানীফার বক্তব্য হচ্ছে এসব জায়েয। সুতরাং প্রথম উক্তিতে কঠোরতা এবং দ্বিতীয় উক্তিতে নমনীয়কা প্রকাশ পায়।’’  ১৬৭</div><div><br></div><div>➥{ইমাম আব্দুল ওহহাব শা’রানী, মিযানুল কোবরা, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৫৩।}</div><div><br></div><div><br></div><div>এখনতো আর কিছু বলার নেই। স্বয়ং মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম আবু হানীফার অভিমত পাওয়া গেল যে, কবরের উপর গম্বুজবিশিষ্ট ইমারত ইত্যাদি তৈরী করা জায়েয।</div><div><br></div><div><br></div><div>আল্লাহর শুকর, কুরআন হাদীস ও ফিকাহের বিভিন্ন ইবারত এমন কি স্বয়ং ইমাম আবু হানীফার উক্তি থেকে প্রমাণিত হলো যে আওলিয়া কিরামের কবরের উপর গম্বুজ ইত্যাদি তৈরী করা জায়েয। বিবেকও বলে যে এটা জায়েয। কারণ</div><div><br></div><div>প্রথমতঃ এটা লক্ষ্য করা গেছে যে, সাধারণ কাঁচা কবরের প্রতি জনগণের মনে তেমন কোন আদব বা সম্মানবোধ থাকে না, তাতে না ফাতিহা পাঠ করা হয়, না শ্রোদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় বরং জনগণ একে পদদলিত করে। কিন্তু যদি কোন পাকা কবর সামনে পড়ে এবং এর উপর গিলাফ ইত্যাদি চড়ানো দেখে, মনে করে যে এটা কোন বুযুর্গের মাযার হবে। তখন সসম্মানে একে অতিক্রম করে এবং আপনা থেকে মুখে ফাতিহা পাঠ এসে যায়। মিশকাত শরীফের الدفن অধ্যায়ে এবং মিরকাতে উলে­খিত আছে জীবিত কালে এবং মৃত্যুর পর একই রকম সম্মান করা উচিৎ। অনুরূপ ফত্ওয়ায়ে আলমগীরীর কিতাবুল কারাহিয়াত এবং আশআতুল লুমআত গ্রন্থের الدفن অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, মা-বাপের কবরকে চুমা দেয়া জায়েয। ফকীহগণ আরও বলেন যে, কবর থেকে এতটুকু দুরত্বে বসবেন, যে পরিমাণ দুরুত্বে কবরস্থ ব্যক্তির সামনে জীবিত অবস্থায় বসতেন। এর থেকে বোঝা গেল মৃত ব্যক্তি তার জীবিত থাকাকালীন সম্মানের সমঅধিকারী। ইহজগতে আল্লাহর ওলীগণ বাদ্যতামূলক সম্মানের অধিকারী ছিলেন। সুতরাং মৃত্যুর পরও তাঁরা সম্মানের অধিকারী। কবরের উপর ইমারত তৈরী করা হচ্ছে সেই সম্মান প্রকাশের মাধ্যম বিশেষ। তাই তাকে কমপক্ষে মুস্তাহাব ধরে নেয়া যায়।</div><div><br></div><div>দ্বিতীয়তঃ সমস্ত ইমারত সমূহের মধ্যে সরকারী ভবন বা মসজিদসমূহ হচ্ছে বিশেষ খ্যাত। যাতে লোকেরা অনায়াসে সেগুলোকে খুঁজে বের করে উপকৃত হতে পারে। উলঅমায়ে কিরামের বেশভূষা ও পোষাক-পরিচ্ছেদ জ্ঞানী সুলভ হওয়া চাই। যেন লোকেরা তাদেরকে সনাক্ত করে মাসআলা জিজ্ঞাসা করতে পারেন। অনুরূপ মাশায়িখ ও উলামায়ে কিরামের কবর সমূহ অন্যান্যদের কবর থেকে উন্নততর হওয়া চাই, যেন লোকেরা সনাক্ত করে ফয়েজ হাসিল করতে পারেন।</div><div><br></div><div>তৃতীয়তঃ আল্লাহর ওলীগণের মাযার আল্লাহর নিদর্শন স্বরূপ, যেমন আমি ইতিপূর্বে তফসীরে রুহুল বয়ানের বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছি যে, আল্লাহর নিদর্শন সমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন প্রয়োজন, যা কুরআন দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং কবরসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন উচিৎ। সম্মান প্রদর্শন স্থান ও কাল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে  হয়ে থাকে। যে কোন প্রকারের সম্মান প্রদর্শন, যদি তা ইসলাম বিরোধী না হয়, জায়েয। হুযুর আলাইহিস সালামের পবিত্র যুগে হাড় ও চামড়ার উপর কুরআন লিখা হতো, মসজিদে নববী ছিল কাঁচা এবং এর ছাউনি ছিল খেজুর পাতার, যেখানে বৃষ্টির সময় পানি টপকিয়ে পড়তো। কিন্তু পরবর্তী যুগে মসজিদে নববীকে খুবই শানদার করে এবং রওযা পাককে একান্ত যত্ম সহকারে তৈরী করা হয়েছে। কুরআন শরীফকে উন্নতমানের কাগজ দ্বারা ছাপানো হয়েছে।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ দুররুল মুখতারে কিতাবুল কারাহিয়ায় البيع শীর্ষক পরিচ্ছেদে উলে­খিত আছে -১৬৮</div><div><br></div><div>➥{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৩৮৬।}</div><div><br></div><div><br></div><div>جَازَ (تَحْلِيَةُ الْمُصْحَفِ) لِمَا فِيهِ مِنْ تَعْظِيمِهِ كَمَا فِي نَقْشِ الْمَسْجِدِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>এ প্রসংগে শামীতে أَيْ بِالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অর্থাৎ কুরআন করীমকে সোনা-চান্দি দ্বারা অলংকৃত করা জায়েয। কেননা এতে এর প্রতি সম্মান প্রকাশ পায়, যেমন মসজিদে কারুকার্য করা হয়।’’  ১৬৯</div><div><br></div><div>➥{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৩৮৬।}</div><div><br></div><div><br></div><div>সাহাবায়ে কিরামের যুগে নিদের্শ ছিল কুরআনকে আয়াত, রুকু এবং ইরাব (যের, পেশ, যবর ইত্যাদি) থেকে মুক্ত রাখুন। কিন্তু পরবর্তী যুগে যখন প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, তখন এসব কাজ বৈধ বরং আবশ্যক হয়ে গেছে।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ সেই একই জায়গায় আরও বর্ণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>مَا رُوِيَ عَنْ ابْنِ مَسْعُودٍ جَوِّدُوا الْقُرْآنَ كَانَ فِي زَمَنِهِمْ وَكَمْ مِنْ شَيْءٍ يَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِ الزَّمَانِ وَالْمَكَانِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে- ‘কুরআনকে ইরাব ইত্যাদি থেকে মুক্ত রাখুন’। এ আদেশটা তৎকালীন যুগের জন্য প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু অনেক বিষয় কাল ও স্থানের পরিবর্তনের ফলে পাল্টে যায়।’’  ১৭০</div><div><br></div><div>➥170. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৩৮৬।}</div><div><br></div><div><br></div><div>একই জায়গায় শামীতে আরও উল্লেখিত আছে কুরআনকে ছোট করে ছাপাবেন না অর্থাৎ ছোট আকারের করবেন না বরং এর কলম মোটা, হরফ বড় এবং আয়াত চিহ্ন স্পষ্ট হওয়া চাই। এ সব নির্দেশ কেন? একমাত্র কুরআনের মর্যাদার জন্যই এসব নিদের্শনাবলী। অনুরূপ প্রথম যুগে কুরআন তিলওয়াত, আযান ও ইমামতির জন্য পারিশ্রমিক নেওয়া হারাম ছিল, যা হাদীছ ও ফিক্হ শাস্ত্রে বিদ্যমান আছে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রয়োজন বোধে জায়েয করা হয়েছে। হুযুর ﷺ'র যুগে জীবিতদের জন্য পাকা ঘর তৈরী নিষেধ ছিল। জনৈক সাহাবী একটি পাকা ঘর তৈরী করেছিলেন। এতে হুযুর ﷺ নাখোশ হয়েছিলেন। এমনকি তাঁর সালামের জবাবও দেননি। ওই ঘরটি ভেংগে ফেলার পরই সালামের জবাব দিয়েছেন।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ (মিশকাত শরীফের كتاب الرقاق এর দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ দেখুন) একই পরিচ্ছেদে অনত্র বর্ণিত আছে যে হুযুর ﷺ ইরশাদ ফরমান -</div><div><br></div><div><br></div><div>وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا لَمْ يُبَارَكْ لِلْعَبْدِ فِي مَالِهِ جَعَلَهُ فِي المَاء والطين.</div><div><br></div><div><br></div><div>-সম্পদে না-বরকত হয়, যদি তা ইটের কাজে ব্যয় করে।’’  ১৭১</div><div><br></div><div>{খতিব তিবরিযি, মিশকাত, কিতাবুর রিকাক, তৃতীয় পরিচ্ছেদ, পৃষ্ঠা-৪৪৪, হাদিস/৫২০৯, ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ১৩/২২৭ পৃঃ  হা/১০২৩৪}</div><div><br></div><div><br></div><div>কিন্তু এ সব নিদের্শ থাকা সত্ত্বেও মুসলমানগণ পরবর্তী যুগে পাকা ঘর তৈরী করেছেন এবং মসজিদও পাকা করেছেন। আশ্চর্যের বিষয়! যারা আল্লাহর ওলীদের কবর সমূহ পাকা করা বা ওগুলোর উপর গম্বুজ বিশিষ্ট ঘর তৈরী করাকে হারাম বলে, তারা নিজেদের ঘর সমূহকে কেন আলিশান ও পাকা করে?</div><div><br></div><div><br></div><div>أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ.</div><div><br></div><div><br></div><div>তারা  কি কতেক হাদীছকে বিশ্বাস করে আর কতেককে অস্বীকার করে? ’’  ১৭২</div><div><br></div><div>{সূরা বাক্বারা, আয়াত নং-৮৫।}</div><div><br></div><div><br></div><div>আল্লাহ তাদেরকে বোধশক্তি দান করুন। চতুর্থতঃ আল্লাহর ওলীগণের কবর সমূহ পাকা হওয়া এবং সেগুলোর উপর ইমারত স্থাপিত হওয়া ইসলাম প্রচারের সহায়ক। আজমীর শরীফ ও অন্যান্য মাযারে দেখা গেছে যে, তথায় মুসলমানদের থেকে বেশী হিন্দু ও কাফিরগণ যাতায়াত করে। আমি এমন অনেক হিন্দু ও রাফেজীকে দেখেছি, যারা খাজা সাহেবের দরবারে শান-শওকত দেখে মুসলমান হয়ে গেছে।</div><div><br></div><div><br></div><div>বর্তমান হিন্দুস্থানে কাফিরগণ মুসলমানদের ওই সমস্ত ওয়াক্ফকৃত জায়গাগুলো দখল করে নিচ্ছে, যেগুলোতে কোন নিদর্শন নেই। এভাবে অনেক মসজিদ, খানকা, কবরস্থান নিদর্শন বিহীন হওয়ার কারণে ওদের দখলে চলে গেছে। কবরস্থানের সমস্ত কবর কাঁচা হলে, এ গুলো কিছু দিন পর ভেংগে চুরে সমান হয়ে যায়, এ সুযোগে কাফিরগণ দখল করে নেয়। সুতরাং এখন প্রত্যেক কবরস্থানের কিছু কিছু কবর পাকা হওয়া একান্ত প্রয়োজন। যাতে কবরস্থানের চিহ্ন এবং এর সীমানা জানা থাকে।</div><div><br></div><div><br></div><div>আমি নিজ গ্রামে স্বয়ং দেখেছি যে, দু’টি কবরস্থান ভরাট হয়ে গিয়েছিল। একটিতে কেবল দু’তিনটি কবর ছাড়া বাকী সবই কাঁচা কবর ছিল, অপরটির কিছু অংশে পাকা কবর ছিল, গরীব মুসলমানেরা গোপনে এ কবরস্থান দুটি বিক্রি করে দিয়েছিল, যার জন্য মুকাদ্দমা হয়েছিল। প্রথম কবরস্থানটি পাকা কবরগুলো বাদ দিয়ে বাকী অংশ মুসলমানদের হাত ছাড়া হয়ে গিয়েছিল। কেননা ওটাকে হাকিম নাল জমিন হিসেবে সাব্যস্ত করেছিলেন। দ্বিতীয় কবরস্থানের অর্ধেকাংশে অর্থাৎ যে পর্যন্ত পাকা কবর ছিল, মুসলমানেরা পেয়েছিল, বাকী অংশের যেথায় কাঁচা কবর ছিল এবং সমতল হয়ে গিয়েছিল, কাফিরদের হাতে চলে গেছে। কেননা সেই কবরস্থানের সীমানা পাকা কবরের চিহ্ন দ্বারা নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং বাকী অংশের বিক্রয় সঠিক বলে রায় দেয়া হয়েছিল। এর থেকে আমি বুঝতে পারলাম যে হিন্দুস্থানে কিছু কবর পাকা করা বিশেষ দরকার। কেননা এটা ওয়াক্ফ বলবৎ রাখার মাদ্যমে বিশেষ, যেমন মসজিদের জন্য মিনার।</div><div><br></div><div><br></div><div>১৯৬০ সালের জুলাই মাসে সংবাদপত্র সমূহে এ খবরটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছিল যে, মৌলভী ইসমাইল সাহেবের পীর সৈয়দ আহমদ সাহেব বেরলভী কবর, যা বালাকোটে অবহেলিত অবস্থায় আছে, মেরামত করা হবে এবং এর উপর গম্বুজ হতে যাচ্ছে। ১৯৬০ সালের জুলাই মাসের ২৯ তারিখ পাকিস্থানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান কায়েদে আযমের কবরের উপর ইমারত তৈরীর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্টানে প্রায় এক লাখ মুসলমান অংশ গ্রহণ করেছিল এবং এ ইমারতের জন্য পচাঁত্তর লাখ টাকা বাজেট করা হয়েছিল। উক্ত অনুষ্টানে দেওবন্দীদের নেতা মৌলভী ইহতেশামুল হক থানবীও বক্তব্য রেখেছিলেন। তাঁর বক্তব্য রাওয়াল পিন্ডির দৈনিক জংগ পত্রিকায় ১৯৬০ সালের ১২ ই আগষ্ট প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর বক্তব্যে তিন আনন্দ প্রকাশ করে বলেছিলেন-“অশেষ ধন্যবাদ, আজ বিফ্লবের নায়ক পাকিস্থানের জনকের কবরের উপর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলেন। পাকিস্থানের বিগত সরকারগুলো এ পবিত্র কাজে অনেক অবহেলা করেছেন’। মুসলমানগণ, এরাই সেই দেওবন্দী, যারা এখনও মুসলমানদের কবর সমূহ ভেংগে ফেলার পক্ষপাতি এবং যারা নযদী সরকারকে সাহাবায়ে কিরামের কবর সমূহ ভেংগে ফেলার কারণে তার যোগে মুবারকবাদ জানিয়েছিল। অথচ আজ তারা কায়েদে আযমের কবরের উপর গম্বুজ ইত্যাদি তৈলী করায় অভিনন্দন জানাচ্ছে। তাদের কিতাবী মাযহাব এক ধরনের আর মৌখিক আমলী মাযহাব অন্য ধরনের। তাদের কথা হলো যেদিকে বাতাস সেদিক চলো। যা হোক দেওবন্দীরাও মাযহাবের উপর গম্বুজ তৈরী করার সমর্থন হলো।</div><div><br></div><div>━━━━━━━━━━</div></div>

আওলিয়া কিরামের মাযারের উপর গম্বুজ তৈরী করা

আওলিয়া কিরামের মাযারের উপর গম্বুজ তৈরী করা প্রসঙ্গে আলোচনা মুসলমানকে দু’শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। সাধারণ মুসলমানগণ এক শ্রেণীভুক্ত এবং উলামা, মাশ...

Read more »

জানাজার নামাজের পর দুআ প্রসঙ্গে আপত্তি ও এর জবাবসমূহ

<div>দ্বিতীয় অধ্যায়</div><div><br></div><div>এ দুআ প্রসঙ্গে আপত্তি ও এর জবাবসমূহ</div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div>জানাযার পর দুআ প্রসঙ্গে চারটি আপত্তি আছে- তিনটি আকলী (যুক্ত ভিত্তিক) ও একটি নকলী (কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক)। এগুলো ব্যতীত আর কোন আপত্তি নেই।</div><div><br></div><div><br></div><div>১ নং আপত্তি: সেই পুরানো মুখস্থ করা বুলি-এ দুআ বিদ্আত এবং প্রত্যেক বিদ্আত যেহেতু হারাম, সেহেতু এ দুআও হারাম, শিরক ও অনৈসলামিক।</div><div><br></div><div><br></div><div>উত্তর: এ দুআ বিদ্আত নয়, হুযুর আলাইহিস সালামের পবিত্র বাণী ও কর্মে এর প্রমাণ রয়েছে। সাহাবায়ে কিরামও এর উপর আমল করেছেন। ফকীহগণও এর অনুমতি দিয়েছেন। যেমন প্রথম অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে। আর দি একে বিদ্আত বলে মেনেও নেয়া হয়, তাতে কোন ক্ষতি নেই। কেননা এবং প্রত্যেক বিদ্আত হারাম নয়। পাঁচ প্রকারের বিদ্আত রয়েছে। (বিদ্আত শীর্ষক আলোচনায় দেখুন)।</div><div><br></div><div><br></div><div>২ নং আপত্তি: জানাযার নামায হচ্ছে দুআ। পুনরায় দ্বিতীয়বার দুআ প্রার্থনা করা জায়েয নেই। প্রথম দুআই যথেষ্ট।</div><div><br></div><div><br></div><div>উত্তর: এ আপত্তিটা একেবারে মামুলী। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মথ্যে দুআ আছে। ইসতাহারা, চন্দ্র গ্রহণ ও বৃষ্টির জন্য নামায সবই দুআর উদ্দেশ্যেই পড়া হয়। কিন্তু এসবের পরেও দুআ প্রার্থনা করা জায়েয বরং সুন্নাত। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ-‘‘অতঃপর তোমরা বেশী বেশী করে দোয়া কর।’’ ১৪৮</div><div><br></div><div>➥{ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৫/২৭৪পৃঃ হাদিস নং- ৯৪৬১, মুসলিম, আস্-সহিহ, ১/৩৫০পৃঃ হাদিস নং- ৪৮২, আবু দাউদ, আস্-সুনান, ১/২৩১পৃঃ হাদিস নং- ৮৭৫, নাসাঈ, আস্-সুনান, ১/২২৬পৃঃ হাদিস নং- ১১৩৭, ও আস্-সুনানিল কোবরা, ১/৩৬৪পৃঃ হাদিস নং- ৭২৭, ইবনে হিব্বান, আস্-সহিহ, ৫/২৫৪পৃঃ হাদিস নং- ১৯২৮, বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ২/১৫৮পৃঃ হাদিস নং- ২৬৮৬ }</div><div><br></div><div><br></div><div>দুআর পরে দুআ প্রার্থনা করাটাই হচ্ছে অতিরিক্ত দুআ। এটাতো কেবল দুআ মাত্র। অথচ কোন কোন অবস্থায় জানাযার নামায দ্বিতীয়বারও হয়ে থাকে। যেমন যদি মৃতব্যক্তির ওলিকে (উত্তরসূরী) বাদ দিয়ে অন্যরা নামায পড়ে ফেলেছেন, তখন তিনি দ্বিতীয়বার নামায পড়তে পারবেন। সোমবার হুযুর আলাইহিস সালামের তিরোধান হয়েছিল এবং বুধবারে দাফন করা হয়েছিল। (শামী কিতাবুস সালাত الامامت অধ্যায়ে দ্রষ্টব্য) এ দু’দিন দলে দলে মানুষ আসতে থাকে ও জানাযার নামায আদায় করতে থাকে, কেননা তখন পর্যন্ত হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক আকবর (যিনি ওলি ছিলেন) নামায পড়েননি। অতঃপর যখন হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক (رضي الله عنه) শেষ দিন নামায পড়ে নিলেন, এরপর কিয়অমত পর্যন্ত তা আর কারো জন্য বৈধ রইলো না। (ফত্ওয়ায়ে শামীর صلواة الجنازة بحث: ومن احق بالامامت শীর্ষক অধ্যায়ে দেখুন) এখন বলুন এ নামাযতো দুআই ছিল। এটা আদায়ও হয়ে গিয়েছিল। তবুও দ্বিতীয়বার নামায কিভাবে হলো? এ প্রশ্নটা যেন এ রকম-কেউ বললেন খানা খাওয়ার পর পানি পান করো না। কেননা খাবারে পানি মওজুদ রয়েছে, তা পানি দ্বারা রান্না হয়েছে।</div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div>৩নং আপত্তি: দুআ প্রার্থনা করার কারণে দাফন কার্যে দেরী হয় এবং এটা হারাম।</div><div><br></div><div><br></div><div>উত্তর: এ আপত্তিটাও ভিত্তিহীন।</div><div><br></div><div>প্রথমত. আপনারা এ দুআকে যে কোন অবস্থায় নিষেধ করে থাকেন। এবং উপরোক্ত আপত্তি থেকে বোঝা গেল যে দাফন কার্যে যদি দেরী হয়, তাহলে নিষেধ, অন্যথায় নয়। তাহলে বলুন, যদি এখনও কবর তৈরী হতে দেরী আছে অথচ নামাযে জানাযা হয়ে গেছে। তাহলে এ অবস্থায় দুআ ইত্যাদি পাঠ করবে কিনা? কেননা এখানে দাফন কার্যে বিলম্বটা দুআর জন্য নয় বরং করব তৈরীতে বিলম্ব হেতু।</div><div><br></div><div>দ্বিতীয়ত. দুআ করতে বেশী দেরী হয় না। বেশী হলে দু-তিন মিনিট লাগে। এরকম ক্ষীণ বিলম্বটা আদৌ ধর্তব্য নয়। এ রকম দেরী বরং এর থেকে আরও বেশী দেরী হয় আস্তে আস্তে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যেতে, ধীরে সুস্থে গোসলের কাজ সমাধা করতে এবং ধৈর্য সহকারে কবর খনন করতে। যদি এতটুকু দেরীও হারাম হয়, তাহলে গোসল ও কাফনদাতাকে বিদ্যুৎ গতিতে গোসল ও কাফনের কাজ সমাধা করতে হবে, কবর খননকারীদেরকে মেশিনের মত চটপট কবর খনন করতে হবে, কফিন বহন কারীদের ইঞ্জনের মত দৌড়ে যেতে হবে এবং সাথে সাথে কবরের মধ্যে নিক্ষেপ করতে হবে।</div><div><br></div><div>তৃতীয়তঃ আমি প্রথম অধ্যায়ে উদ্ধৃতি সহকারে বর্ণনা করেছি যে, দাফনের আগে মৃতব্যক্তির পরিবার পরিজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন, তাদেরকে সান্তনা ও প্রবোধ দেয়া জায়েয বরং সুন্নাত। তাহলে নামাযের আগে হোক বা পরে সমবেদনা জ্ঞাপন ও সান্তনা দিতে সময় লাগবে কিনা? নিশ্চয় লাগবে। কিন্তু ধর্মীয় কাজ হেতু এটা জায়েয।</div><div><br></div><div>চতুর্থতঃ আমি একটু আগেই উলে­খ করেছি যে, হুযুর আলাইহিস সালামের ওফাত শরীফ সোমবার এবং দাফন করা হয়েছে বুধবার।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ আল্লামা শামী (رحمة الله) ফত্ওয়ায়ে শামীর কিতাবুস সালাতেরبَابُ الْإِمَامَةِ শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণনা করার পর বলেছেন-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَهَذِهِ السُّنَّةُ بَاقِيَةٌ إلَى الْآنَ لَمْ يُدْفَنْ خَلِيفَةٌ حَتَّى يُوَلَّى غَيْرُهُ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘এ সুন্নাত এখনও বলবৎ আছে। কোন খলীফা ততক্ষণ পর্যন্ত দাফন করা হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত নতুন খলীফা মনোনীত না হয়।’’ ১৪৯</div><div><br></div><div>➥{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুহতার, ১/৫৪৮ পৃঃ পরিচ্ছেদ: بَابُ الْإِمَامَةِ}</div><div><br></div><div><br></div><div>এর থেকে বোঝা গেল, দুনিয়াবী কারণে দাফনকার্যে দেরী করা মাকরূহ কিন্তু ধর্মীয় কারণে জায়েয। এ জন্য দাফনকার্যে দেরী করার কথা বলা হয়েছে। দুআ প্রার্থনা করাও ধর্মীয় কাজ। যদি কেউ নামাযের শেষ মুহুর্তে শামিল হয়, তাহলে সে দুআ পড়ে সালাম ফিরাতে পারবে। কিন্তু যদি নামাযের পরে সংগে সংগে লাশ উঠিয়ে ফেলে, তাহলে সে লোকটি দুআ শেষ করতে পারবে না। কেননা উঠানো জানাযার নামায হয় না। সুতরাং পরে আসা নামাযীদের জন্যও জানাযার নামাযের পর দুআ করার ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে। যদি দেরীটা আঁচ করার মত হয়, তাহলে জায়েয। পঞ্চমতঃ শর্তহীনভাবে দাফনকার্যে দেরী করাটা যে হারাম, কোন্ কিতাবে আছে? ফকীহগণ বলেন, জুমাবার কেউ মারা গেলে, জুমার নামায পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই বরং সম্ভব হলে জুমার আগেই দাফন করবেন। কিন্তু এটা বলেননি যে অপেক্ষা করাটা হারাম, শিরক, কুফরী। আল্লাহ মাফ করুন।</div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div>৪ নং আপত্তি: ফকিহগণ জানাযার পর দুআ করা নিষেধ বলেন।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ যেমন ‘জামেউর রমুজ’ গ্রন্থে বর্ণিত আছে,</div><div><br></div><div><br></div><div>لَايَقَوْمُ دَاعِيًا لَهُ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘জানাযার নামাযের পর দুআর জন্য দাঁড়িয়ে থাকবেন না।’’</div><div><br></div><div> </div><div><br></div><div>❏ যখিরাতুল কুবরা ও ‘মুহিত’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে</div><div><br></div><div><br></div><div>لَايَقَوْمُ بِالدُّعَاءِ بَعْدَ صَلَوةِ الجَنَازَةِ .</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘জানাযার নামাযের পর দুআর জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে না।’’</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ ফাত্ওয়ায়ে আলমগীরীতে উলে­খিত আছে -</div><div><br></div><div><br></div><div>لَا يَدْعُوْا بَعْدَهُ فِى ظَاهِرِ الْمَذْهَبِ.</div><div><br></div><div>-‘‘মাযহাবের প্রকাশ্য অভিমত হচ্ছে, এরপর দুআ না করা।’’</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ মিরকাত শরহে মিশকাতে বর্ণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَلَا يَدْعُو لِلْمَيِّتِ بَعْدَ صَلَاةِ الْجَنَازَةِ لِأَنَّهُ يُشْبِهُ الزِّيَادَةَ فِي صَلَاةِ الْجَنَازَةِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘জানাযার নামাযের পর মৃতব্যক্তির জন্য দুআ করবেন না।’’ ১৫০</div><div><br></div><div>➥{মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৩/১২১৩পৃঃ হাদিস নং- ১৬৮৭, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ- ১৪২২হিঃ}</div><div><br></div><div><br></div><div>কেননা, এটা নামাযে জানাযার পরিবর্ধনের মত।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ কাশফুল গিতারে বর্ণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>قائم نه شود از نماز برائے دعا.</div><div><br></div><div>-‘‘জানাযার নামাযের পর দুআর জন্য দাঁড়িয়ে থাকবেন না।’’</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ জামেউর রমুযে আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَلَايَقَوْمُ بِالدُّعَاءِ بَعْدَ صَلَوةِ الجَنَازَةِ المَكْرُوْة.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘জানাযার নামাযের পর দুআ করা মাকরূহ। কেননা এটা পরিবর্তন সাদৃশ্য।’’</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ ইবনে হামিদ থেকে বর্ণিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>اِنَّ الدُّعَاءِ بَعْدَ صَلَوةِ الجَنَازَةِ المَكْرُوْة.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘জানাযার নামাযের পর দুআর করা মাকরূহ।’’</div><div><br></div><div><br></div><div>উপরোলি­খিত ভাষ্য সমূহ থেকে বোঝা গেল, জানাযার নামাযের পর দুআ ইত্যাদি নাজায়েয।</div><div><br></div><div><br></div><div>উত্তর: এ আপত্তির দুঃরকমের উত্তর দেয়া যায়-সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে। সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো, এ দুআ নিষেধ করার পিছনে তিনটি কারণ আছে।</div><div><br></div><div>প্রথমতঃ চতুর্থ তকবীরের পর সালামের আগে যদি দুআ করা হয়,</div><div><br></div><div>দ্বিতীয়তঃ দুআটা যদি দীর্ঘক্ষণ হয়, যার ফলে দাফনে দেরী হয়। এজন্যে জুমআর অপক্ষোয় দাফনকার্যে দেরী করা নিষেধ।</div><div><br></div><div>তৃতীয়তঃ যদি নামাযের মত কাতারবন্দী অবস্থায় এভাবে দুআ করা হয় যে, দর্শকরা নামায হচ্ছে বলে মনে করে। কেননা এটা পরিবর্ধন সদৃশ। সুতরাং যদি সালাম ফিরানোর পর বসে কিংবা কাতার ভেংগে মাত্র অল্পক্ষণ দুআ করা হয়, তাহলে মাকরূহহীনভাবে জায়েয। এ কারণ সমূহ এ জন্যই বের করা হয়েছে, যাতে ফকীহগণের ইবারতসমূহে পরষ্পর দ্বন্ধ সৃষ্টি না হয় এবং উপরোক্ত উক্তিসমূহ যেন প্রথম অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছসমূহের ও সাহাবায়ে কিরামের উক্তি ও আমলের বিপরীত না হয়।</div><div><br></div><div><br></div><div>বিশ্লেষণমূলক উত্তর হচ্ছে উপরোক্ত ইবারত সমূহের মধ্যে জামেউল রুমুয, যখিরা, মুহিত ও কাশফুল গিতারের ইবারত সমূহে দুআ করা সম্পর্কে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই বরং দাঁড়িয়ে দুআ করাকে নিষেধ বলেছেন। আমরাও সেটা নিষেধ করি। মিরকাত ও জামেউল রুমুযে এটাও উলে­খিত আছে لِأَنَّهُ يُشْبِهُ الزِّيَادَةَ এটা অতিরিক্ত সদৃশ অর্থাৎ যে দুআর ফলে নামাযের জানাযার মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে বলে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়। এর থেকে বোঝা গেল এভাবে দুআ করা নিষেধ, যেখানে ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ থাকে। যেমন কাতার বন্দী অবস্থায় দাঁড়িয়ে দুআ করা। যদি কাতার ভেংগে ফেলে বা বসে পড়ে, তাহলে কোন অসুবিধা নেই। ফরয জামাতের পর নির্দেশ আছে যে মুসলি­গণ যেন কাতার ভেংগে দিয়ে সুন্নাত পড়ে, যাতে জামাত হচ্ছে বলে কারও সন্দেহ না হয়। (ফাত্ওয়ায়ে শামী ও মিশকাত শরীফের السنن অধ্যায় দেখুন) এর থেকে এটা প্রকাশ পায় না যে ফরযের পরে সুন্নাত পড়া নিষেধ বরং ফরযের সাথে মিলিয়ে পড়াটাই নিষেধ। জানাযার পর দুআটাও তথৈবচ।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ আলমগীরীর যে ইবারত উদ্ধৃত করা হয়েছে তা ভুল। এর আসল ইবারত হচ্ছে</div><div><br></div><div><br></div><div>وَلَيْسَ بَعْدَ التَّكْبِيرَةِ الرَّابِعَةِ قَبْلَ السَّلَامِ دُعَاءٌ هَكَذَا فِي شَرْحِ الْجَامِعِ الصَّغِيرِ لِقَاضِي خَانْ. وَهُوَ ظَاهِرُ الْمَذْهَبِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘চতুর্থ তকবীরের পর সালামের আগে কোন দুআ নেই।’’ ১৫১</div><div><br></div><div>➥{নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৬৪, পরিচ্ছেদ: الْفَصْلُ الرَّابِعُ فِي حَمْلِ الْجِنَازَةِ, জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ শরহে কুদুরী, পৃষ্ঠা-১৩৮}</div><div><br></div><div><br></div><div>অর্থাৎ জানাযার নামাযে প্রথম তিন তকবীরের পর কিছু না কিছু পাঠ করা হয় কিন্তু তকবীরের পর কিছুই পাঠ করা যাবে না, যেমন আমি প্রথমে উলে­খ করেছি।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ বাদাইয়া, কেফাইয়া ও এনায়া গ্রন্থে উলে­খিত আছে-</div><div><br></div><div><br></div><div>وَلَيْسَ بَعْدَ التَّكْبِيرَةِ الرَّابِعَةِ قَبْلَ السَّلَامِ دُعَاءٌ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘চতুর্থ তকবীরের পর সালামের আগে কোন দুআ নেই।’’ ১৫২</div><div><br></div><div>➥{আল্লামা আইনী, বেনায়া শরহে হেদায়া, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-২৫৩}</div><div><br></div><div><br></div><div>ইবনে হামিদের নামে যে ইবারত উদ্ধৃত করা হয়েছে, এটা আসলে কুনিয়া গ্রন্থের ইবারত। কিন্তু কুনিয়া কোন গ্রহনযোগ্য কিতাব নয়। এর থেকে ফাত্ওয়া দেয়া যায় না। মুকাদ্দামায়ে শামীর رسم المفتى শীর্ষক আলোচনায় বর্ণিত আছে যে, কুনিয়া গ্রন্থের রচয়িতা দুর্বল রিওয়ায়েতও গ্রহণ করে। তাই ওই গ্রন্থ থেকে ফত্ওয়া দেয়া জায়েয হবে না।</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ শামীর ইবারতটা হচ্ছে এ রকম -</div><div><br></div><div><br></div><div>أَوْ لِنَقْلِ الْأَقْوَالِ الضَّعِيفَةِ فِيهَا كَالْقُنْيَةِ لِلزَّاهِدِيِّ، فَلَا يَجُوزُ الْإِفْتَاءُ مِنْ هَذِهِ.</div><div><br></div><div><br></div><div>-‘‘......তেমনিভাবে দুর্বল মতের কিতাব দ্বারা ফাতওয়া দেয়া যেমন জাহেদীর কুনিয়া কিতাব। আর এ ধরনের কিতাব দ্বারা ফাতওয়া দেওয়া বৈধ নয়।’’ ১৫৩</div><div><br></div><div>➥{ইবনে আবেদীন শামী, ফাতোয়ায়ে শামী, ১/৭০পৃঃ }</div><div><br></div><div><br></div><div>❏ আলা হযরত (رحمة الله) ‘বজলুল জওয়ায়ে’ গ্রন্থে উলে­খ করেছেন যে, কুনিয়া গ্রন্থের রচয়িতা হচ্ছে মুতাযলী।</div><div><br></div><div><br></div><div>এবং যদি কুনিয়ার এ ইবারত সঠিকও মেনে নেয়া হয়, তা স্বয়ং বিরোধিতাকারীদেরও বিপরীত হবে, কেননা ছাহেবে কুনিয়া বলেন যে জানাযার পর দুআ করা নিষেধ; তাহলে দাফনের পরও দুআ নাজায়েয হওয়া উচিত। কারণ এ সময়টা নামাযে জানাযার আগে নয়। মোটকথা কোন ইবারতই আপনাদের অনুকূলে নয়। জানাযার নামাযের পর দুআ জায়েয বরং সুন্নাত।</div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div><br></div><div>━━━━</div>

জানাজার নামাজের পর দুআ প্রসঙ্গে আপত্তি ও এর জবাবসমূহ

দ্বিতীয় অধ্যায় এ দুআ প্রসঙ্গে আপত্তি ও এর জবাবসমূহ জানাযার পর দুআ প্রসঙ্গে চারটি আপত্তি আছে- তিনটি আকলী (যুক্ত ভিত্তিক) ও একটি নকলী (কুরআন-স...

Read more »