❏ প্রশ্ন-১১২ঃ মানুষ মারা গেলে কি মাটি ও পাথর হয়ে যায়? যেমন আল্লাহ বলেন,
لَايَسْمَعُ وَلَا يُبْصِرُ وَلَا يُغْنِي عَنْكَ شَيْئًا .
‘তারা কিছুই দেখে না, শুনে না এবং কারো কোন কিছুর মুখাপেক্ষী হয় না- যেমন জীবিত অবস্থায় ছিল।’ অতএব বুঝা গেল, মানুষ মারা গেলে মাটি ও পাথর হয়ে যায়। সাধারণ মুসলমানের কবর তো আছেই বরং আউলিয়া-ই কিরামের মাযারসমূহেরও কোন মর্যাদা নেই। তাই যথাসম্ভব এগুলো অবজ্ঞা ও অপমান করা কী উচিত? এমন আক্বীদা পোষণ করা কী শুদ্ধ?
✍ উত্তরঃ وبالله التوفيق পবিত্র শরীয়তে আউলিয়া-ই কিরামের মাযার তো দূরের কথা, সাধারণ মুসলমানের কবরকেও সম্মান করা ওয়াজিব; অবজ্ঞা ও অপমান করা যাবে না। কেননা ওলামায়ে কিরাম এমনও বলেছেন, কবরের ওপর পা রাখা গুনাহ এবং কবরের উপরিভাগও মাইয়্যেতের হক্ব। ফতোয়া কেনিয়া’য় ইমাম ‘আলাই (رحمه الله تعالي ) এর ভাষ্য বর্ণিত আছে যে,
يأثم بوطى القبور لان سقف القبر حق الميت
ইবনে মাজাহ শরীফে হযরত উকবা ইবনে আমের (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,
احبُّ الّى من أن امشى على قبر مسلم
‘আগুন কিংবা তরবারীর ওপর দিয়ে চলা অথবা আগুনের জুতা পরিধান করা, আমার নিকট মুসলমানের কবরের ওপর দিয়ে চলার চেয়ে অধিক পছন্দনীয়।’
150. ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কবরের উপর হাটা নিষেধ, পৃষ্ঠা-৪৭২।
উল্লেখ্য যে, বর্তমান যুগে কবর এবং বাজারের মাঝখান দিয়ে পায়খানা-প্রশ্রাবের হাজত পূরণ করতে যাওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য আছে বলে আমার মনে হয় না।
ওলামায়ে কিরামের ঐকমত্য ফতোয়া আছে যে, মুসলমানের সম্মান ও মর্যাদা মৃত ও জীবিত উভয় অবস্থায় সমান। ফতহুল কাদির ও আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলে কারীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, মৃতের হাড় ভাঙ্গা এবং একে কষ্ট দেয়া মানে জীবিতের হাড় ভাঙ্গার মতো।
151. সুনানে আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضى الله تعالي عنه) বলেন, মুসলমান মৃত দেহকে কষ্ট দেয়া মানে জীবিতকে কষ্ট দেয়া।
152. মুসান্নাফে আবু বকর ইবনে আবি শাইবা।
ওলামায়ে কিরামগণ বলেছেন, যে সব কথা ও কারণে জীবিতদের কষ্ট পৌঁছে, মৃতরাও সে সব কারণে কষ্ট অনুভব করেন। এমনকি আমাদের ওলামায়ে কিরামগণ এ ব্যাপারে বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন যে, কবরস্থানের ওপর দিয়ে যে নতুন রাস্তা তৈরী করা হয়েছে, উক্ত রাস্তা দিয়ে মানুষের চলাচল করা হারাম।
153. রদ্দুল মুহতার, ফতওয়ায়ে শামী ইত্যাদি।
কবরস্থানের তাজা সবুজ ঘাস কেটে ফেলা মাকরূহ। কারণ এগুলো যতদিন তরুতাজা থাকবে, আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করতে থাকবে। এ বিষয়ে আরো অনেক মাসআলা রয়েছে, যদি কারো জানতে বেশী আগ্রহ থাকে, তাহলে মুফতি খলিল খান বিরচিত ‘তাওযীহাত বর হাফত মাসআলা’ গ্রন্থখানা দেখার অনুরোধ রইল।
154. তাওযীহাত বর হাফত মাসআলা, পৃষ্ঠা-২২৪।