❏ প্রশ্ন-৭৪ঃ এশার নামায আদায় করার হুকুম কী?


✍ উত্তরঃ এশার নামায আদায় করা উম্মতে মুহাম্মদীর বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত্ব। এশার নামায যেমন আমাদের জন্য খাস তেমনি পুরো  পাঁচ ওয়াক্ত নামাযও আমাদের পূর্ববর্তী কোন উম্মত পায়নি। এ মহান নিয়ামত আমাদের প্রিয়নবী সৈয়্যদুল মুরসালীন (ﷺ) ব্যতীত পূর্ববর্তী কোন নবী-রাসূলের ক্ষেত্রে  পাঁচ ওয়াক্ত নামায একত্রিতভাবে ছিল না। ইমাম সুয়ূতী (رحمه الله تعالي ) ‘খসায়েস শরীফে’ একটি অধ্যায় লিখেছেন,


ختصاصه صلى الله عليه وسلّم بمجموع الصلواة الخمس ولم تجمع لاحد . 


‘হুযূর এর বিশেষত্বের মধ্যে  পাঁচ ওয়াক্ত নামায একত্রিত হওয়াকে গণ্য করা হয়েছে। এ সৌভাগ্য অন্য কেউ পাননি।’ যা জনাবে মোস্তফা (ﷺ)   এবং মোস্তফা (ﷺ)-এর উম্মতকে বিশেষভাবে দান করা হয়েছে। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আমিরুলহাজ্ব ‘হুলিয়া শরীফে’ বর্ণনা করেছেন-


هذه الصلواة تفرقت فى الانبياء وجمعت فى هذه الامة . 


‘পূর্ববর্তী নবীগণের (عليه السلام) মাঝে উক্ত নামাযসমূহ পৃথক পৃথক ছিল। আর উম্মতে মুহাম্মদী  কে সবগুলো নামায একত্রিতভাবে দেয়া হয়েছে।’

ইমাম যুরকানী (رحمه الله تعالي ) বলেছেন-  

لم يجمع لاحد غيرهم من الانبياء والامم . 


‘হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর উম্মত ছাড়া পূর্ববর্তী কোন নবী এবং উম্মতের ওপর  পাঁচ ওয়াক্ত নামায একত্রিত হয়নি।’

‘হুলিয়া শরীফে’ উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ নামাযসমূহ আম্বিয়া কিরামের (عليه السلام) মাঝে পৃথক পৃথকভাবে ছিল। শুধু মোস্তফা(ﷺ)  -এর উম্মতকে  পাঁচ ওয়াক্ত নামায একত্রিতভাবে দেয়া হয়েছে। অতঃপর বলেন-


 فذكر الفجر لادم والظهر لابراهيم والعصر لسليمان والمغرب لعيسى عليهم الصلواة والسلام، ثم قال واما العشاء فخصصت بها هذه الامة . 


‘ফজর- হযরত আদম (عليه السلام)-এর জন্য, যোহর- হযরত ইবরাহীম (عليه السلام)-এর জন্য, আসর- হযরত সোলাইমান (عليه السلام)-এর জন্য এবং মাগরিব- হযরত ঈসা (عليه السلام)-এর জন্য ফরয ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন, এশার নামায এই উম্মতের জন্য নির্দিষ্ট।’

বর্ণিত প্রশ্নের উত্তর হলো, এশার নামায উম্মতে মুহাম্মদীর অনন্য বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত্ব। হযরত মু‘আয (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে,


انكم فضلتم بها على سائر الامم- 


‘তোমরা সকল উম্মতের ওপর এশার নামাযের কারণে সম্মানিত ও মর্যাদাশীল হয়েছ।’

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)    এশার নামায বিলম্ব করেন। অতঃপর যখন মসজিদে তাশরীফ আনেন তখন মানুষ নামাযের জন্য অপেক্ষমান ছিল। তিনি বলেন, 


اما انه ليس من اهل هذه الاديان احد يذكرالله تعالى هذه الساعة غيركم-


‘জেনে রাখো, তোমরা এমন এক শুভ সময়ে অবস্থান করছো, যে সময় তোমরা ছাড়া অন্য কোন ধর্মাবলম্বী মহান আল্লাহ তা‘আলার যিকির করছে না।’

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত আছে যে, لَيْسَ اَحَدٌ مِنْ اَهْلِ الْاَرْضِ অর্থ-‘সমগ্র ভূ-মন্ডলে তোমরা ছাড়া অন্য কেউ নামাযের জন্য অপেক্ষমান নেই।’ অর্থাৎ এ সময় পৃথিবীতে তোমরা ছাড়া অন্য কেউ নামাযের জন্য অপেক্ষা করছে না।

অন্য একটি হাদীস হযরত আবু মূসা আশ‘আরী (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেন, হুযূর   এক রাত্রে এশার নামায অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্ব করেন। অতঃপর তাশরীফ আনেন এবং নামায আদায় করেন। নামায শেষে ইরশাদ করেন, যারা উপস্থিত আছ তারা অন্যদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও যে, 


لمن حضره ابشروا ان من نعمة الله عليكم انه ليس احد من الناس يصلى هذه الساعة غيركم- 


‘আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ হতে তোমাদের ওপর এ মহান নিয়ামত যে, এ সময় তোমরা ছাড়া অন্য কেউ নামায পড়ছে না।’


أو قال ما صلى هذه الساعة احد غيركم . 


‘অথবা এ রকম বলেছেন, এ সময় তোমরা ছাড়া অন্য কেউ নামায পড়ছে না।’ 

102. সীরাতে মোস্তফা, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-৮৬৫।

Top