❏ প্রশ্ন-৭৯ঃ পাগড়িবিহীন ইমামের পেছনে নামায পড়া জায়েয কি না? কতিপয় লোক পাগড়ির ব্যাপারে এমন কঠোরতা অবলম্বন করে যে, তারা পাগড়ি ছাড়া নামায না-জায়েয মনে করে। শরয়ী বিধান মতে তাদের উক্ত ধারণা সঠিক কি না?


✍ উত্তরঃ নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, পাগড়ি পরিধান করা হুযূর (ﷺ) এর একটি উত্তম সুন্নাত ও সম্মানী পোশাক। কিন্তু এটা হুযূর সৈয়্যদে ‘আলম (ﷺ)-এর স্বভাবগত সুন্নাত, সুন্নাতে হুদা বা নির্দেশিত সুন্নাত নয়।


كالسواك والافعال المعهودة فى الصلواة وفى خارجها وتاركها غير معاقب . 


‘যেমন মিসওয়াক এবং নামাযের ভেতরে-বাইরে অনুসরণীয় কাজ যেগুলো বর্জনকারী শাস্তির উপযোগী নয়।’


সুন্নাত দু’প্রকারঃ 

এক. হুযূর  -এর মুবারক স্বভাবগত সুন্নাত। 

দুই. শরীয়তের স্বীকৃত সুন্নাত।


مشتركٌ بين ما صدر عن النبى صلى الله عليه وسلّم عليه بلا وجوب من قول اوفعل او تقرير . 


নবী কারীম (ﷺ) থেকে ওয়াজিব ব্যতীত কথা, কর্ম ও সম্মতি যা প্রকাশ পেয়েছে, তা দু’ভাগে বিভক্ত।

১. সুন্নাতে হুদা যেমন- আযান, ইকামত ও জামাত ইত্যাদি।

২. সুন্নাতে রাতেবা যেমন- কুলি করা, নাকে পানি দেয়া বা নাক পরিষ্কার করা। 

সুন্নাতে হুদা পরিত্যাগকারীর জন্য শরীয়তের পক্ষ থেকে শাস্তির বিধান রয়েছে। 

অপরদিকে সুন্নাতে রাতেবা বর্জনকারীর কোন শাস্তি নেই। সুতরাং পাগড়ী সে উত্তম পরিধান যা মোস্তফা(ﷺ)   ব্যবহার করতে পছন্দ করতেন।


قال صدر الشهيد رحمة الله عليه فسنن الهدىٰ وان كانت على سبيل العادة فسنن الزوائد كلبس الثياب والاكل باليمين وتقديم الرجل اليمنى فى الدخول ونحوذالك كل منا فى الاوّل الى اخره . 


বেকায়া প্রণেতা বলেন, ডান দিক দিয়ে কাপড় পরিধান, ডান হাতে খাওয়া, মসজিদে প্রবেশে প্রথমে ডান পা দেয়া ইত্যাদি যদিও অভ্যাসগত সুন্নাত, কিন্তু এটা সুন্নাতে হুদাও। 

108. শরহে বেক্বায়াহ, কিতাবুত্ ত্বাহারাত, খন্ড-১, পৃষ্ঠা ৬৯।


যেমন ধুতি ও সাদা কাপড় পরিধানের ফযিলত নামাযের সাথে নির্দিষ্ট নয়, তেমনি পাগড়ি পরিধান করাও নামাযের সাথে নির্দিষ্ট নয়। কারণ রাসূলে পাক (ﷺ) এর পছন্দনীয় পোশাক পরিধান অবশ্যই সম্মানীয় পোশাক মনে করা হয়। তাই আল্লাহ্ পাকের মহান দরবারে যাওয়ার প্রাক্কালে সম্মানী পোশাক পরিধান করা অতীব উত্তম ও উৎকৃষ্ট আমল। তাই ফকীহগণ (رحمه الله تعالي ) পাগড়ি পরে নামায আদায় করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন।

কারো যদি পাগড়ি পরার সুযোগ না হয়, সে ব্যক্তি পাগড়ি ছাড়া নামায পড়াতে কোন অসুবিধা নেই। হযরত তাহের ইবনে আবদুর রশীদ বলেছেন, মূলতঃ এক কাপড় পরে নামায পড়াতে কোন ক্ষতি নেই।


وفى الاصل لابأس بان يصلّى الرجل فى ثوبٍ واحدٍ متوشحًا به ويؤم كذالك والمستحب ان يصلى الرجل فى ثلاثة اثواب، قميص وازار وعمامة. اما لو صلى فى ثوب واحد متوشحابه جميع بدنه كازار الميت يجوز صلاته من غير كراهة . 

قال ابن نجيم والمستحب ان يصلى فى ثلاثة اثوابঃ قميص وازاروعمامة . 


মূলতঃ এক কাপড়ে নামায পড়লে ক্ষতি নাই, ইমামতিও করা যায়। মুস্তাহাব হচ্ছে তিন কাপড়ে (জামা, পায়জামা, লুঙ্গি ও পাগড়ী) নামায পড়া। আর যদি এমন এক কাপড়ে নামায পড়া যায় যা পুরো শরীর আবৃত হয় যেমন- বড় লুঙ্গি, তাহলে এতে নামায মাকরূহ হবে না। 

109. খুলাছাতুল ফতাওয়া, ষষ্ঠ পরিচ্ছেদঃ সতর আবৃত করা প্রসঙ্গে, খন্ড-১, পৃ ৭৩।


আল্লামা ইবনু নজিম বলেন- মুস্তাহাব হচ্ছে তিন কাপড়ে- জামা, লুঙ্গি, পাগড়ি পরে নামায পড়া। 

110. বাহরুর রায়েক, নামাযের শর্ত অধ্যায়, পৃ ২৬৯।


কিন্তু পাগড়ির হুকুম ইমামের জন্য নির্দিষ্ট নয় বরং তা সকল নামাযীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পাগড়ি সম্পর্কিত আলোচনা দ্বারা একথা প্রতীয়মান হয় যে, পাগড়ি শুধুমাত্র ইমামের জন্য নির্দিষ্ট করা শরয়ী বিধান অতিরঞ্জিত করার নামান্তর। উহা পরিধান না করাকে নামায অনিষ্টের কারণ মনে করা মূলতঃ ফোকাহা-ই কিরামের কানুন ও মূলনীতিমালা সম্পর্কে অবগত না হওয়ার প্রমাণ।

যদি কোন ব্যক্তি পাগড়িকে সম্মানীয় পোশাক মনে করে কোন বড় মাহফিল ও সভা-সমাবেশে যাওয়ার সময় তা পরিধান করে কিন্তু নামায পড়ার সময় এর অধিক গুরুত্ব দেয় না,  সে ক্ষেত্রে (بذل الثوب) কাপড় অপচয়ের হুকুমে নামাযীর জন্য এটা মাকরূহ হবে। আর যে ব্যক্তি পাগড়ি পড়ায় অভ্যস্ত নয় এবং এতো গুরুত্ব দিয়ে সর্বদা পড়েন না; এমতাবস্থায় পাগড়িবিহীন ইমামের পেছনে ইক্তিদা করলে কোন ক্ষতি নেই।

হ্যাঁ! অবশ্য যেখানে পাগড়ি বর্জন করলে ঝগড়া-বিবাদ ও ফিৎনা-ফাসাদের আশঙ্কা থাকে, এসব স্থানে পাগড়ি ছাড়া নামায পড়ানো উচিৎ না। কেননা পাগড়ি সম্পর্কে হাদীস শরীফে বিভিন্ন রেওয়ায়েত এসেছে এবং ঝগড়া-বিবাদ থেকে বেঁচে থাকাও জরুরী।

Top