চোখ আল্লাহ তাআলার বিশাল নিয়ামত। এই নিয়ামতের অপব্যবহার হলে উভয়জগতে আছে বহু ক্ষতি। কুদৃষ্টি মানবহৃদয়ে প্রবৃত্তির বীজ বপন করে। চোখের যত্রতত্র ব্যবহার গুনাহের দ্বার উন্মোচিত করে দেয়।

চোখকে বলা হয় অন্তরের আয়না। চোখ অবনত থাকলে অন্তর অবনত থাকবে। নিম্নে দৃষ্টি অবনত রাখার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো


এক. মহান আল্লাহ তাআলার আদেশ পালন। এর মধ্যে আছে মুমিনের সফলতা ও ব্যর্থতা।

আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবীর মাধ্যমে নারী-পুরুষ সবাইকে আদেশ করেছেন, ‘মুমিনদের বলুনতারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। ঈমানদার নারীদের বলুনতারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে।’ (সুরা নূরআয়াত : ৩০-৩১)


দুই. অন্তরকে পবিত্র করেচোখের হেফাজতের মাধ্যমে আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও হারাম জিনিস থেকে নিজের দৃষ্টিকে অবনত রাখবেআল্লাহ তার অন্তর পরিশুদ্ধ করে দেবেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘...এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ ভালোভাবেই অবগত।’ (সুরা নূরআয়াত : ৩০)


তিন. ক্ষমা পাওয়ার মাধ্যম। দৃষ্টি অবনত রাখার দ্বারা আল্লাহ তাআলা বান্দাকে গুনাহমুক্ত করে দেন। ফুজাইল ইবনে আব্বাস (রা.) বলেনআমি আরাফার দিন রাসুলের পেছনে ছিলাম।

সেখানে এক যুবক নারীদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছিল। রাসুল (সা.) তখন তাঁর চেহারা ঘুরিয়ে দিলেন এবং বলেনহে ছেলেএটি এমন এক দিনএই দিনে যারা দৃষ্টি অবনত রাখবেমুখ এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করবেআল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। (মুসনাদে আহমদহাদিস : ৩০৪২)


চার. দৃষ্টি অবনত রাখার দ্বারা জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ হয়ে যায়। উবাদাহ ইবনুস সামিত (রা.) থেকে বর্ণিতনবী (সা.) বলেছেনতোমরা তোমাদের পক্ষ থেকে আমাকে ছয়টি জামানত দাওআমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জামিন হবো১. যখন তোমরা কথা বলবেসত্য বলবে২. যখন প্রতিশ্রুতি দেবেপ্রতিশ্রুতি পালন করবে৩. যখন তোমাদের কাছে গচ্ছিত রাখা হবেতা পরিশোধ করবে৪. নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করবে৫. নিজ দৃষ্টি অবনমিত রাখবে৬. নিজের দুই হাত আয়ত্তে রাখবে। (আল-মুজামুল কাবিরহাদিস : ৮০১৮)


পাঁচ. দৃষ্টি অবনতকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা এর চেয়ে (যে জিনিস দেখতে সে খুব আগ্রহী ছিল) উত্তম জিনিস দান করবেন। হাদিসে এসেছে, ‘যখন তুমি আল্লাহর জন্য কোনো জিনিস কিছু বিসর্জন দেবে আল্লাহ তাআলা এর চাইতে উত্তম বিনিময় দান করবেন। (মুসনাদে আহমদহাদিস : ২৩৭৭৬)


ছয়. দৃষ্টি অবনতকারী ব্যক্তি কিয়ামতের দিন ভয়াবহ অবস্থায় ক্রন্দন থেকে নিষ্কৃতি লাভ করবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিতরাসুল (সা.) বলেছেনকিয়ামতের দিন প্রতিটি চোখ ক্রন্দন করবেএকমাত্র ওই চোখ যে নাকি হারাম থেকে নিজের দৃষ্টিকে হেফাজত রেখেছে। যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দিয়েছে এবং যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে। (দারিমি : ২/২৬৭)


সাত. দৃষ্টি সংযতকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন জান্নাতের হুর দান করবেন। আবু দারদা (রা.) বলেনযে ব্যক্তি হারাম জিনিস থেকে নিজের দৃষ্টিকে হেফাজত করলআল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন সে যে হুর চাইবে তাকে তার বন্ধনে আবদ্ধ করে দেবেন। আর যে অন্যের ঘরে উঁকি দিল কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থায় হাশর করানো হবে। (রিসালাতুল মুসতারসিদিন : ১১৯)


আট. দৃষ্টি অবনতকারী ব্যক্তির অন্তর দুঃখ-কষ্ট ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকে এবং অন্তরে অন্য রকম এক প্রশান্তি লাভ করে। কারণ সে চিরশত্রু প্রবৃত্তির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে তার দৃষ্টিকে হেফাজত রাখে। আল্লাহ তাআলা এর কারণে তাঁর অন্তরকে আনন্দিত করে দেন। এ কারণে অনেকেই বলেছেনগুনাহে লিপ্ত হওয়ার আনন্দ থেকে গুনাহমুক্তির আনন্দ অনেক বেশি সুখকর। (রওজাতুল মুহিব্বিন : ১/৯৭)

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিতরাসুল (সা.) বলেছেনযার দৃষ্টি কোনো স্ত্রীলোকের সৌন্দর্যের প্রতি প্রথমে পতিত হয়অতঃপর দৃষ্টি সরিয়ে নেয়আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তাঁকে এমন ইবাদত দান করবেনযার মজা বা স্বাদ তার অন্তরেই উপভোগ করবে। (মুসনাদে আহমদহাদিস : ২২২৭৮)


নয়. দৃষ্টি সংযমকারী ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তাআলা এলেমের পথকে উন্মোচিত করে দেন। এর উপায়-উপকরণ সহজ করে দেন। এবং তাকে হিকমাহ দান করেন। আবুল হুসাইন ওয়াররাক (রহ.) বলেনযে ব্যক্তি হারাম থেকে দৃষ্টিকে অবনত রাখবে আল্লাহ তাআলা তাঁকে এমন হিকমাহ দান করবেনযার দ্বারা সে সঠিক পথ খুঁজে পাবে। (জাম্মুল হাওয়া১৪১)


দশ. দৃষ্টি অবনতকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা দূরদর্শিতা ও অন্তর্দৃষ্টি দান করবেন। এর দ্বারা সে সত্য-মিথ্যা ও ভালো-মন্দের মাঝে পার্থক্য করতে পারবে। লুত (আ.)-এর উম্মতের ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা দূরদর্শী লোকদের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘এতে অবশ্যই আল্লাহ তাআলার নিদর্শন রয়েছে সূক্ষ্মদর্শী চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য।’ (সুরা হিজরআয়াত : ৭৫)

যে ব্যক্তি তাঁর দৃষ্টিকে অবনত রাখবে আল্লাহ তাঁকে বুদ্ধিমত্তা ও দূরদৃষ্টি দান করবেন। (ইবনে কাসির : ৬/৪৩)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

Top