❏ প্রশ্ন-১৩২ঃ উম্মতে মুহাম্মদীর   ওপর  পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের হাকীকত কী?


✍ উত্তরঃ এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে,  পাঁচ ওয়াক্ত নামায হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলার ওই মহান নেয়ামত যা তিনি আপন করুণা-অনুগ্রহে বিশেষভাবে আমাদেরকে দান করেছেন। আমাদের পূর্ববর্তী কোন উম্মত তা পায়নি। 

যেমন-আসমানী গ্রন্থসমূহের মধ্যে আমাদেরকে দান করেছেন উম্মুল কিতাব (মূলগ্রন্থ) আল-কোরআন এবং রাসূলদের মধ্যে দান করেছেন তাঁকে যিনি নবী-রাসূলগণের সরদার। আর মাখলুকের মধ্যে দান করেছেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি নবীগণের শ্রেষ্ঠ নবীকে। বাণী সমূহের মধ্যে দান করেছেন সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী। আর আমাদেরকে দান করেছেন সর্বপ্রথম ঘরটি। সূরা সমূহের মধ্যে দান করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ সূরা সূরায়ে ফাতিহা। কালেমা সমূহের মধ্যে দান করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম কালিমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’।

এভাবে যাবতীয় উত্তম ও শ্রেষ্ঠ নেয়ামতসমূহ আমাদেরকে দান করেছেন। অনুরূপ যে সব ইবাদত আল্লাহ'র দরবারে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ সে সব আমরা পেয়েছি। অসংখ্য কৃতজ্ঞতা আল্লাহর জন্য যিনি শাশ্বত ও চিরন্তন الحمدُ للهِ حمدًا كثيرًا كثيرًا। নচেৎ বনি ইসরাঈলের ওপর দুই ওয়াক্ত নামায ফরয ছিল, তাও কেবল চার রাকাত; দু’রাকাত সকালে এবং দু’রাকাত বিকেলে। কিন্তু তাও তারা আদায় করেনি।


নাসায়ী শরীফে হযরত আনাস (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত রয়েছে যে,রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) হাদিসে মি’রাজে বলেন,


فانّه فرض على بنى اسرائيل صلاتين فما قاموا بهما .


‘বনি ইসরাঈলের ওপর দুই ওয়াক্ত নামায ফরয ছিল। কিন্তু তাও তারা আদায় করেনি।’ 


যখন পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাযের আদেশ করা হল, তখন হযরত মুসা (عليه السلام) হুযূরকে (ﷺ) বললেন, আপনি আবার যান এবং স্বীয় রবের নিকট এতে হ্রাসের প্রার্থনা করুন। কারণ তিনি বনি ইসরাঈলের ওপর দুই ওয়াক্ত নামায ফরয করেছিলেন। কিন্তু তারা তাও আদায় করেনি।

মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন, বনি ইসরাঈলের ওপর চার রাকাত নামায ফরয করা হয়েছিল; দুই রাকাত সকালে এবং দুই রাকাত বিকেলে। আর কথিত আছে, দুই রাকাত অপরাহ্নে। ‘খাসায়েসে উম্মতে মরহুমা’ গ্রন্থে রয়েছে যে,  


ومنها مجموع الصلوات الخمس ولم تجمع لاحد غيرهم .


‘অনুগ্রহপ্রাপ্ত উম্মতের অন্যতম মাহাত্ম্য হচ্ছে  পাঁচ ওয়াক্ত নামায। এই উম্মত ছাড়া অন্য কারো জন্য  পাঁচ ওয়াক্ত নামায একত্রিত করা হয়নি।’

ইমাম যারকানী (رحمه الله تعالي ) নাসায়ীর হাদিসটির সূত্রে বলেন, 


هذا هو الصواب وما وقع فى البيضاوى انه فرض عليهم خمسون صلاة فى اليوم والليلة، قال السيوطى هذا غلط ولم يفرض على بنى اسرائيل خمسون صلاة قط بل ولاخمس صلاة ولم تجمع الخمس الا لهذا الامة وانما فرض على بنى اسرائيل صلاتان فقط كما فى الحديث .


‘এটাই সঠিক। আর যে কথাটি বায়যাভীতে রয়েছে যে, বনি ইসরাঈলের ওপর দিবা-রাত্রি পঞ্চাশ ওয়াক্ত ফরয করা হয়েছিল- সে ব্যাপারে ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী বলেন, একথাটি অশুদ্ধ। বনি ইসরাঈলের ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায কখনো ফরয করা হয়নি। বরং  পাঁচ ওয়াক্ত নামাযও ফরয করা হয়নি।  পাঁচ ওয়াক্ত নামায কেবল এই অনুগ্রহপ্রাপ্ত উম্মতের জন্য একত্রিত করা হয়েছে। হ্যাঁ! বনি ইসরাঈলের ওপর কেবল দুই ওয়াক্ত নামায ফরয ছিল যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে।’

শায়খ মুহাক্কিকসহ অন্যান্য বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ বলেন, 


مجموع هذه الخمس من خصوصياتنا .


‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের একত্রীকরণ হচ্ছে, আমাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।’ ‘আশআতুল লুম‘আত’ নামক গ্রন্থে রয়েছে যে,


 مجموع خمس اوقات مخصوص ايں امت است . 


‘ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের একত্রীকরণ হচ্ছে এই উম্মতের বৈশিষ্ট্য।’

আবু দাউদ শরীফ, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ইত্যাদি হাদিসের কিতাবে হাসান সনদ সহকারে হযরত মুয়ায বিন জাবাল (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত রয়েছে যে, হুযূর (ﷺ) ইশার নামাযের ব্যাপারে বলেনঃ


 اعتموا بهذه الصلاة فانكم فضلتم بها على سائر الامم ولم تصلها امة قبلكم. 


‘তোমরা ইশার নামায দেরী করে পড়ো। কারণ এর বদৌলতে তোমাদেরকে অন্যান্য সকল উম্মতের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। তোমাদের পূর্ববর্তী কোন উম্মত এই নামায পড়েনি।’

Top