বিদ্আতের প্রকারভেদ


ইতিপূর্বে জানা গেছে যে, বিদ্আত দু’রকম- বিদ্আতে হাসানা ও বিদ্আতে সাইয়্যা।

➥〈 প্রথমত বিদ‘আত দুই প্রকার; আর এই দুই প্রকার আবার ৫ প্রকার। ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) বলেন-

والبدعة لُغَة: كل شَيْء عمل عَليّ غير مِثَال سَابق، وَشرعا إِحْدَاث مَا لم يكن لَهُ أصل فِي عهد رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم، وَهِي عل قسمَيْنِ: بِدعَة ضَلَالَة، وَهِي الَّتِي ذكرنَا، وبدعة حَسَنَة: وَهِي مَا رَآهُ الْمُؤْمِنُونَ حسنا وَلَا يكون مُخَالفا للْكتاب أَو السّنة أَو الْأَثر أَو الْإِجْمَاع، وَالْمرَاد هُنَا الْبِدْعَة: الضَّلَالَة.

-‘‘বিদ‘আত হলো এমন সব আমল যার দৃষ্টান্ত পূর্বে পাওয়া যায় না। ইসলামী শরীয়তে বিদ‘আত হল যে কাজের ভিত্তি রাসূল (ﷺ)-এর যামানায় ছিল না। আর এটি (বিদ‘আত) দুই প্রকার। একটি হল বিদ‘আতে দালালাহ, যার ব্যাপারে আমি ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। আর দ্বিতীয় প্রকার হলো বিদ‘আতে হাসানা যেটাকে মুসলমানগণ ভাল মনে করে থাকেন। আর এটি কিতাবুল্লাহ অথবা সুন্নাহ অথবা আছার (সাহাবী ও তাবেয়ীদের কর্ম বাণী) অথবা ইজমায়ে উম্মতের বিরোধী হবে না।’’(আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ৫/২৩০পৃ:) 〉


এখন স্বরণ রাখতে হবে যে, বিদ্আতে হাসানা তিন প্রকার- জায়েয, মুস্তাহাব ও ওয়াজিব এবং বিদ্আতে সাইয়া দু’রকম- মাকরূহ ও হারাম। এ প্রকারভেদের প্রমাণ দেখুন।


❏ মিরকাত গ্রন্থ কিতাবুল ইা‘তিসাম অধ্যায়ে আছে-


قَالَ الشَّيْخُ عِزُّ الدِّينِ بْنُ عَبْدِ السَّلَامِ فِي آخِرِ كِتَابِ الْقَوَاعِدِ: الْبِدْعَةُ إِمَّا وَاجِبَةٌ كَتَعَلُّمِ النَّحْوِ لِفَهْمِ كَلَامِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَكَتَدْوِينِ أُصُولِ الْفِقْهِ وَالْكَلَامِ فِي الْجَرْحِ وَالتَّعْدِيلِ، وَإِمَّا مُحَرَّمَةٌ كَمَذْهَبِ الْجَبْرِيَّةِ وَالْقَدَرِيَّةِ وَالْمُرْجِئَةِ وَالْمُجَسِّمَةِ، وَالرَّدُّ عَلَى هَؤُلَاءِ مِنَ الْبِدَعِ الْوَاجِبَةِ لِأَنَّ حِفْظَ الشَّرِيعَةِ مِنْ هَذِهِ الْبِدَعِ فَرْضُ كِفَايَةٍ، وَإِمَّا مَنْدُوبَةٌ كَإِحْدَاثِ الرُّبُطِ وَالْمَدَارِسِ، وَكُلُّ إِحْسَانٍ لَمْ يُعْهَدْ فِي الصَّدْرِ الْأَوَّلِ، وَكَالتَّرَاوِيحِ أَيْ بِالْجَمَاعَةِ الْعَامَّةِ وَالْكَلَامُ فِي دَقَائِقِ الصُّوفِيَّةِ، وَإِمَّا مَكْرُوهَةٌ كَزَخْرَفَةِ الْمَسَاجِدِ وَتَزْوِيقِ الْمَصَاحِفِ يَعْنِي عِنْدَ الشَّافِعِيَّةِ وَأَمَّا عِنْدَ الْحَنَفِيَّةِ فَمُبَاحٌ، إِمَّا مُبَاحَةٌ كَالْمُصَافَحَةِ عَقِيبِ الصُّبْحِ وَالْعَصْرِ أَيْ عِنْدَ الشَّافِعِيَّةِ أَيْضًا، وَإِلَّا فَعِنْدَ الْحَنَفِيَّةِ مَكْرُوهٌ، وَالتَّوَسُّعُ فِي لَذَائِذِ الْمَآكِلِ وَالْمَشَارِبِ.


-‘‘ইমাম ইযুদ্দীন বিন আব্দুস সালাম (رحمة الله) তাঁর কাওয়াদে গ্রন্থে লিখেন, বিদ্আত হয়তো ওয়াজিব, যেমন-আরবি ব্যাকারণ শিখা এবং ফিকহ শাস্ত্রের মূলনীতিসমুহকে একত্রিত করা, অথবা হারাম, যেমন- জবরীয়া সম্প্রদায় বা মুস্তাহাব, যেমন মুসাফিরখানা ও মাদ্রাসাসমূহ তৈরী করা এবং প্রত্যেক ভাল কাজ, যা আগের যুগে ছিল না, যেমন- জামাআত সহকারে তারাবীর নামায পড়া অথবা মাকরূহ, যেমন মসজিদসমূহে গৌরব বোধক কারুকার্য করা, অথবা জায়েজ, যেমন-ফজরের নামাযের পর মুসাফাহ করা ও ভাল ভাল খানাপিনার ব্যাপারে উদারতা দেখানো।’’

➥〈 মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ১/২২৩-২২৪পৃ: হা/১৪১ এর আলোচনা। 〉


❏ ফাত্ওয়ায়ে শামীর প্রথম খন্ডের কিতাবুস সালাতের বাবুল ইমামত অধ্যায়ে উলি­খিত আছে


الْبِدْعَةُ خَمْسَةُ أَقْسَامٍ (قَوْلُهُ أَيْ صَاحِبُ بِدْعَةٍ) أَيْ مُحَرَّمَةٍ، وَإِلَّا فَقَدْ تَكُونُ وَاجِبَةً، كَنَصْبِ الْأَدِلَّةِ لِلرَّدِّ عَلَى أَهْلِ الْفِرَقِ الضَّالَّةِ، وَتَعَلُّمِ النَّحْوِ الْمُفْهِمِ لِلْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ وَمَنْدُوبَةً كَإِحْدَاثِ نَحْوِ رِبَاطٍ وَمَدْرَسَةٍ وَكُلِّ إحْسَانٍ لَمْ يَكُنْ فِي الصَّدْرِ الْأَوَّلِ، وَمَكْرُوهَةٍ كَزَخْرَفَةِ الْمَسَاجِدِ. وَمُبَاحَةٍ كَالتَّوَسُّعِ بِلَذِيذِ الْمَآكِلِ وَالْمَشَارِبِ وَالثِّيَابِ كَمَا فِي شَرْحِ الْجَامِعِ الصَّغِيرِ لِلْمُنَاوِيِّ


-‘‘বিদ‘আত পাঁচ প্রকার। হারাম বিদ্আতীর পিছনে নামায পড়া মাকরূহ। অন্যথায় কোন কোন বিদ্আত ওয়াজিব পরিণত হয়, যেমন-প্রমাণাদি উপস্থাপন, ইলমে নাহু (আরবী ব্যাকারণ) শিখা, কোন কোন সময় মুস্তাহাব, যথা-মুসাফিরখানা মাদ্রাসা এবং সে সব ভাল কাজ যা আগের যুগে ছিল না, প্রচলন করা, আবার কোন কোন সময় মাকরূহ, যেমন-মসজিদসমূহে গৌরব বোধক কারুকার্য করা এবং কোন কোন সময় মুবাহ, যেমন-ভাল ভাল খানাপিনা ও পোশাক পরিচ্ছেদের ব্যাপারে উদারতা প্রদর্শন করা। ইমাম মানাভী (رحمة الله) ‘জামেসগীর’ গ্রন্থের ব্যাখ্যায়ও অনুরূপ উলে­খ করেছেন।’’

➥〈 ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুহতার, ১/৫৬০পৃ: কিতাবুল ইমামমত। 〉


উপরোক্ত ভাষ্য থেকে সুষ্পষ্ঠভাবে পাচঁ প্রকার বিদ্আতের পরিচয় পাওয়া গেল।

➥〈 প্রথমত বিদ‘আত দুই প্রকার; আর এই দুই প্রকার আবার ৫ প্রকার। 〉


সুতরাং, বোঝা গেল যে প্রত্যেক বিদ্আত হারাম নয়।

➥〈 ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-

قَالَ الشَّافِعِيُّ رَحِمَهُ اللَّهُ: مَا أُحْدِثَ مِمَّا يُخَالِفُ الْكِتَابَ أَوِ السُّنَّةَ أَوِ الْأَثَرَ أَوِ الْإِجْمَاعَ فَهُوَ ضَلَالَةٌ.

-‘‘ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন, যেই বিদ‘আতটি আল্লাহর কিতাব, নবীজীর সুন্নাহ, আছার (সাহাবী, তাবেয়ীদের কথা ও কর্মের) এবং ইজমার বিরোধী হবে সেটিই হল বিদ‘আতে দালালাহ বা মন্দ বিদ‘আত।’’ (মিরকাত, ১/২২৪পৃ: হা/১৪১) 〉


বরং কতক বিদ্আত অত্যাবশকও হয়ে থাকে, যেমন-ফিক্হ, উসূলে ফিক্হ, কুরআন করীমকে একত্রিত করা বা কুরআনে এরার (যের, যবর, পেশ ইত্যাদি) দেয়া, আধুনিক পদ্ধতিতে কুরআন ছাপানো এবং মাদ্রাসায় শিক্ষা দেয়ার জন্য পাঠ্যসূচি প্রনয়ন ইত্যাদি।

➥〈 ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন-

قَالَ الْعُلَمَاءُ الْبِدْعَةُ خَمْسَةُ أَقْسَامٍ وَاجِبَةٌ وَمَنْدُوبَةٌ وَمُحَرَّمَةٌ وَمَكْرُوهَةٌ وَمُبَاحَةٌ.

-‘‘আলেমগণ বলেন, বিদ‘আত পাঁচ প্রকার,

১. ওয়াজিব, ২. মুস্তাহাব, ৩.হারাম, ৪. মাকরুহ, ৫. মুবাহ।’’ (ইমাম নববী, শরহে মুসলিম, ৬/১৫৪পৃ:) 〉




━━
বিদ্আতের প্রকারসমূহের পরিচয় ও লক্ষণসমূহ


বিদ্আতে হাসানা ও সাইয়্যার বর্ণনা ইতোর্পূবে দেয়া হয়েছে (যে বিদ্আত ইসলামের বিপরীত বা কোন সুন্নাত বিলুপ্তকারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়, তা বিদ্আতে সাইয়া আর যে বিদ্আত এ রকম হবে না, তা বিদ্আতে হাসানা) এখন ওই পাঁচ প্রকারের বিদ্আতের লক্ষণসমূহ জেনে নিন।

বৈধ বিদ্আত (بدعت جائز) ওইসব নতুন কাজ, যা শরীয়তে নিষিদ্ধ নয় এবং কোন সদুদ্দেশ্য বিহীন করা হবে। যেমন- নানা রকম খানাপিনা করা এবং এ জাতীয় অন্যান্য কোন কিছু করা। এ প্রমাণ মিরকাত ও শামীর উদ্ধৃতি দিয়ে ইতোর্পূবে দেখানো হয়েছে। এসব কাজের জন্য পাপ-পুন্য কিছু নেই।

মুস্তাহাব বিদ্আত (بدعت مستحبه) ওইসব নতুন কাজ, যা শরীয়তে নিষিদ্ধ নয় এবং সাধারণ মুসলানগণ সেগুলোকে পুণ্যের কাজ মনে করে থাকেন বা কেউ তা সদুদ্দেশ্যে করেন। যেমন-মাহফিলে মীলাদ শরীফ এবং বুযুর্গানে কিরামের ফাতিহা, যাকে সাধারণ মুসলানগণ পুণ্যের কাজ মনে করেন। এসব কাজ যারা করবেন, তাঁরা ছওয়াব পাবেন আর যাঁরা করবেন না, তাঁরা পাপী হবেন না। এর দলীল সমূহ দেখুন-


❏ ‘মিরকাত’ গ্রন্থে কিতাবুল ই‘তিসাম অধ্যায়ে উলে­খিত আছে -


عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: مَا رَآهُ الْمُؤْمِنُونَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ حَسَنٌ


-‘‘হযরত ইবনে মাস্উদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, যে কাজকে মুসলমানগণ ভাল মনে করে, তা আল্লাহ তা’আলার নিকটেও ভাল হিসেবে গণ্য।’’

➥〈 ইমাম আবু দাউদ তায়লসী : আল-মুসনাদ : ১/১৩০ হাদিস : ২৪৬, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ : ১/৩৭৯ : হাদিস : ৩৬০০ এবং ১৭০২, ইমাম আবু নুঈম ইস্পাহানী : হুলিয়াতুল আউলিয়া : ১/৩৭৫পৃ:ইমাম তাবরানী, মুজামুল আওসাত, ৪/৫৮পৃ: হাদিস, ৩৬০২ দারুল হারামাঈন, কাহেরা, মিশর, আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ১/১৭৭-১৭৮ পৃ: দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত,লেবানন, আল্লামা ইবনে কাসীর : বেদায়া ওয়ান নিহায়া : ১০/৩২৭ : হাদিস:৪০২, আল্লামা আযলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৪৫ পৃ: : হাদিস : ২২১৪, ইমাম বায্যার : আল মুসনাদ : ৫/২১২ পৃ: : হাদিস : ১৮১৬, ইমাম বায়হাকী : আল-ই‘তিক্বাদ : ১/৩২২ পৃ:,আল্লামা খতিব বাগদাদী : তারীখে বাগদাদ : /৪৪৬ পৃ:,ইমাম বগভী : শরহে সুন্নাহ : ১/১০৫ পৃ:,ইমাম আহমদ : মুসনাদ : ১/৩৬৭ পৃ: : হাদিস : ৫৪১, আল্লামা হাকেম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক : ৩/৮৩পৃ:হাদিস: ৪৪৬৫,তিনি বলেন হাদিসের সনদটি সহিহ,আর তাঁর সাথে যাহাবী একমত পোষন করেছেন,ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল কবীর :৭/১১২-১১৫ হাদিস নং ৮৫৮২ ও ৮৫৯৩,ইমাম ইবনে রযব : জামিউল উলূম : ১/২৫৪পৃ: ইমাম সাখাভী : আল মাকাসিদুল হাসানা : ৪২২ পৃ: : হাদিস : ৯৫৭, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী ,মওদ্বুআতুল কবীর : ৩২ পৃ: নূর মুহাম্মদ কারখানা, করাচি, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাত : ৩/২৫৪ পৃ:,ইমাম আহমদ,ফাদ্বায়েলুল সাহাবা,১/৩৬৭পৃ:হাদিস,৫৪১,আবূ সাঈদ ইবনে আরাবী (ওফাত.৩৪০হিঃ) মু‘জামে ইবনে আরাবী,২/৪৪৩পৃ:হাদিস,৮৬১,তিনি হাদিসটি উক্ত সাহাবির দুইজন ছাত্রের দ্বারা দু‘টি সূত্রে বর্ণনা করেছেন, যায়লাঈ, নাসবুর রায়্যাহ, ৪/১৩৩পৃ:তিনি হাকিম নিশাপুরীর রায়কে গ্রহন করেছেন,তিনি তার কিতাবের অন্যত্র বাবুল ইসতিহাসানেও বর্ণনা করেছেন, ইবনে কাসীর,তুহফাতুল তা¡লেব বি মা‘রিফাতু আহাদিস, ১/৩৯১পৃ: হাদিস/৩৩৪, তিনি বলেন,হাদিসটির সনদ শক্তিশালী। হায়সামী,গায়াতুল মাকসুদ ফি যাওয়াইদুল মুসনাদ, ১/১১১পৃ: হাদিস,২৪৬, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ,বয়রুত,লেবানন, ইবনে= হাজার আসকালানী, ইত্তেহাফুল মুহরাত,১০/১৯৬পৃ:হাদিস,১২৫৬৮, ইবনে হাজার, দিরায়া ফি তাখরীজে হেদায়া, অধ্যায়, কিতাবুল ইজারা, ২/১৮৭পৃ:হাদিস,৮৬৩, তিনি বলেন সনদটি ‘হাসান’, সুয়ূতি,আদ্দরুল মুনতাসিরা ফি আহাদিসুল মুসতাহিরাহ, ১/১৮৮পৃ: হাদিস,৪০১, জামিয়াতুল মুলকে সুউদ, রিয়াদ. সৌদি আরব, দরবেশ হুত, আস্-সুনানিল মুত্তালিব, ১/২৪৭পৃ: হাদিস, ১২৫৭, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ,বয়রুত, তিনি এ হাদিসটির ইবনে আব্বাস থেকে আরেকটি সূত্র আছে বলে উলে­খ করেছেন। ছুহাইব আব্দুল জাব্বার, জামেউল সহিহ লিল সুনান ওয়াল মাসানিদ, ৩/১১২পৃ:ও ৩/৪৩৮পৃ:, দারেকুতনী, আল-ইল­ল, ৫/৬৬পৃ: হাদিস,৭১১, তিনি তাঁর এ গ্রন্থে উক্ত সাহাবির অনেক ছাত্রের সূত্রের দ¦ারা হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তাহের পাটনী, তাযকিরাতুল মওদ্বুআত,১/৯১পৃ: তিনি বলেন সনদটি ‘হাসান’,মোল্লা আলী ক্বারী, আসরারুল মারফূআহ, ১/১০৬পৃ: হাদিস,৫৫, তিনি এ সাহাবি থেকে মারফূ ও মওকুফ উভয় সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হাসকাফী, র্দুরুল মুখতার ওয়া হাশিয়ায়ে ইবনে আবেদীন, ২/২৩৭পৃ: মায়্যেতের দাফন অধ্যায়,ও ৪/৩৬৪পৃ: কিতাবুল ওয়াকফ অধ্যায়। 〉



❏ এবং মারফূ হাদিসে এসেছে-


وَفِي حَدِيثٍ مَرْفُوعٍ: لَا تَجْتَمِعُ أُمَّتِي عَلَى الضَّلَالَةِ


-‘‘আছে যে উম্মতে মুহাম্মাদী গুমরাহীতে কখনও ঐক্যমত হবে না।’’

➥〈 ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ১/২২৪পৃ: হা/১৪১এর আলোচনায় উল্লেখ করেছেন। ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) হাদিসটি এভাবে সংকলন করেন-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَجْمَعُ اللَّهُ أُمَّتِي عَلَى الضَّلَالَةِ أَبَدًا.

-‘‘সাহাবী ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমার উম্মতকে সর্বদাই গোমরাহের উপর ঐকমত্য হবে না।’’ (ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/২০০পৃ: হা/৩৯৩, ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৪/৪৬৬পৃ: হা/২১৬৭) 〉


❏ মিশকাত শরীফের শুরুতে আছে-


عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّمَا الْأَعْمَال بِالنِّيَّاتِ


-‘‘হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমলসমূহ নিয়তের উপর নির্ভর করে এবং মানুষের বেলায় তাই হবে, যা নিয়ত করে।’’

➥〈 ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/৬পৃ: হা/১, সহীহ মুসলিম, হা/১৯০৭, সুনানে তিরমিযি, হা/১৬৪৭, সুনানে আবি দাউদ, হা/৩৮৭-৩৮৮, সহীহ ইবনে খজায়মা, হা/১১৪২, সুনানে ইবনে মাযাহ, হা/৪২২৭ 〉


❏ দুররূল মুখতার ১ম খন্ডের ওযুর মুস্তাহাব র্শীষক আলোচনায় উলে­খিত আছে-


(وَمُسْتَحَبُّهُ) وَهُوَ مَا فَعَلَهُ النَّبِيُّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - مَرَّةً وَتَرَكَهُ أُخْرَى، وَمَا أَحَبَّهُ السَّلَفُ


-‘‘মুস্তাহাব হচ্ছে ওইসব কাজ, যা হুযুর আলাইহিস সালাম কোন সময় করেছেন আবার কোন সময় করেননি এবং যা অতীতের মুসলমানগণ ভাল মনে করতেন।’’

➥〈 ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুহতার, ১/১২৩পৃ: 〉


❏ ফ্ওায়ায়ে শামীর পঞ্চম খন্ডে কুরবাণী শীর্ষক আলোচনায় বর্ণিত আছে -

فَاِنَّ النِّيَّاتِ تَجْعَلُ العَادَاتِ عِبَادَاتٍ -‘‘সদুদ্দেশ্য অভ্যাসকে ইবাদতে পরিণত করে।’’ অনুরূপ ‘মিরকাত’ গ্রন্থের নিয়ত শীর্ষক আলোচনাতেও উলে­খিত আছে।


উপরোক্ত হাদীছসমূহ ও ফকীহগণের উদ্ধৃতিসমূহ থেকে বোঝা গেল, যেসব বৈধ কাজ সওয়াবের উদ্দেশ্যে করা হবে বা মুসলমানগণ একে সওয়াবের কাজ মনে করে, তা আল্লাহর নিকটও ছওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য। মুসলমানগণ হচ্ছেন আল্লাহর সাক্ষী; যা ভাল বলে সাক্ষী দিবেন, তা ভাল আর যা মন্দ বলবেন, তা মন্দ হিসেবে গণ্য হবে। সাক্ষ্যের বিস্তুত বিশ্লেষণ আমার কিতাব ‘শানে হাবীবুর রহমান’ দেখুন এবং এ কিতাবেও ‘বুর্যুগানে কিরামের উরস’ শীর্ষক বর্ণনায় এর কিছু আলোচনা করা হবে ইন্শাআল্লাহ।


আবশ্যিক বিদ্আত (بدعت واجبه) এমন ধরনের নতুন কাজ, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে নিষেধ নয় এবং একে বাদ দিলে ধর্মে ক্ষতি হয়। যেমন- কুরআনে হরকত দেয়া, ধর্মীয় মাদ্রাসা প্রতিষ্টা করা এবং ইলমে নাহু ইত্যাদি শিক্ষা করা। এর বিস্তারিত বিবরণ আগে দেয়া হয়েছে।


মাকরূহ বিদ্আত (بدعت مكروه) এমন ধরনের নতুন কাজ, যার দরুণ কোন সুন্নাত রহিত হয়ে যায়। যদি সুন্নাতের গাইর মুয়াক্কাদা রহিত হয়, তাহলে তা বিদ্আতে মাকরূহ তান্যীহ এবং যদি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা রহিত হয়, তাহলে তা বিদ্আতে মাকরূহ তাহরীমী হিসেবে গণ্য হবে। এর উদাহরণ ও প্রমাণসমূহও ইতোপূর্বে উলে­খ করা হয়েছে।

হারাম বিদ্আত (بدعت حرام) এমন নতুন কাজ, যদ্বারা ওয়াজিব রহিত হয়ে যায় অর্থাৎ ওয়াজিব বিলুপ্তকারী হিসেবে প্রতিভাব হয়।


দুররূল মুখতারের আযান অধ্যায়ে আছে যে, আযানের পরে সালাম দেয়া ৭৮১ হিজরীতে চালু হয়েছে। কিন্তু তা বিদ্আতে হাসনা হিসেবে গণ্য।


❏ এর প্রেক্ষাপটে ফাত্ওয়ায়ে শামীতে ‘আযানে জাউক’ (দ্বৈত কন্ঠে আযান দেয়অ) প্রসংগে বলা হয়েছে-


فَفِيهِ دَلِيلٌ عَلَى أَنَّهُ غَيْرُ مَكْرُوهٍ؛ لِأَنَّ الْمُتَوَارَثَ لَا يَكُونُ مَكْرُوهًا، وَكَذَلِكَ نَقُولُ فِي الْأَذَانِ بَيْنَ يَدَيْ الْخَطِيبِ فَيَكُونُ بِدْعَةً حَسَنَةً إذْ مَا رَآهُ الْمُؤْمِنُونَ حَسَنًا فَهُوَ حَسَنٌ


-‘‘সুতরাং, প্রমাণিত হলো যে, এ কাজ মাকরূহ নয়। কেননা, পুনঃ পুনঃ হওয়ার ফলে অথবা যুগ পরষ্পরায় মুসলমানদের আমলের ফলে কোন কাজ মাকরূহ হয় না। অনুরূপ খুৎবা প্রদানকারীর সামনে আযান দেয়া বিদ্আতে হাসনা বলে গণ্য করা হয়। যখন মুমিনগণ ভাল মনে করে কোন কাজ করে, তা আল্লাহর কাছেও ভাল হিসেবে বিবেচ্য।’’

➥〈 ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুহতার, ১/১২৩পৃ: 〉


এর থেকে প্রতীয়মান হলো যে, কোন বৈধ কাজ মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত হলে, এতে ছওয়াব নিহিত রয়েছে। এখন আমি আপনাদেরকে দেখাচ্ছি যে ইসলামের কোন ইবাদতই বিদ্আতে হাসনা থেকে মুক্ত নয়। নিম্নে প্রদত্ত তালিকা দেখুন।


ঈমান-মুসলমানদের ঈমানে মুজ্মাল ও ঈমানে মুফাস্সাল শিখানো হয়। ঈমানের এ দু’প্রকরণ এবং এ দু’টি নাম বিদ্আত, কেননা কুরূনে ছালাাছায় (সাহাবী, তাবেয়ী ও তবে তাবেয়ীনের যুগ) এ সবের হাদিছ ছিল না।


কালেমা-প্রত্যেক মুসলমান ছয়টি কালেমা শিখেন। এ ছয় কালেমা এবং এর ধারাবাহিকতা অর্থাৎ এটা প্রথম কালেমা, ওটা দ্বিতীয় কালেমা, এবং তাদের নাম সব বিদ্আত। কুরূনে ছালাাছায় এ ধরনের কোন নাম নিশানাও ছিল না।


কুরআন-কুরআন শরীফকে ত্রিশ পারায় বিভক্তকরণ, এর মধ্যে রূকু নির্ধারণ, হরকত দেয়া, জিলদ হিসেবে তৈরি করা, এর ব্লক তৈরি করে ছাপানো সবই বিদ্আত। এ সম্পর্কে কুরূনে ছালাছায় কোন উলে­খ নেই।


হাদীছ-হাদীছকে কিতাবের আকারে একত্রিকরণ, এর সনদ বর্ণনা, সনদের বাছাইকরণ, হাদীচকে বিভিন্নভাবে বিভক্তকরণ অর্থাৎ এ হাদীছটি সহীহ, ওটা হাসান, সেটা জঈফ, এটা মুফাস্সিল, ওটা মুদালি­স এবং এ প্রকরণের মধ্যে একটা ধারাবাহিকতা ঠিক করা অর্থাৎ প্রথম নং সহীহ, দ্বিতীয় নং হাসান, তৃতীয় নং জঈফ। আবার এদের হুক্মাদি ঠিক করা, যেমন-হালার-হারামের বিষয়সমূহ হাদীছে সহীহ দ্বারা প্রমাণিত হয় এবং ফজায়েলের ক্ষেত্রে জঈফ হাদীছও গ্রহণযোগ্য। মোট কথা সর্ম্পূণ হাদীছের বিষয়টা বিদ্আত, যার কোন বর্ণনা কুরূনে ছালাাছায় নেই।


উছুলে হাদীছ-এ বিষয়টা সর্ম্পূণ বিদ্আত বরং নামটাও বিদ্আত। এর সমস্ত কায়দা কানুন বিদ্আত।


ফিকহ-বর্তমান যুগে ধমটা ফিক্হের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এ বিষয়টা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিদ্আত। কুরূনে ছালাছায় যার কোন নাম গন্ধ নেই।

উসূলে ফিক্হ ও ইলমে কালাম- জ্ঞানের এ শাখাও বিলকুল বিদ্আত। এর কায়দা কানুন ও নিয়মগুলো সবই বিদ্আত।


নামায- নামায পড়ার সময় মুখে নিয়ত করাটা বিদ্আত। কেননা এর কোন প্রমাণ কুরূনে ছালাাছায় ইে। রমযান মাসে বিশ রাকাআত তারাবীহ নামাযের উপর অটল থাকাটা বিদ্আত। স্বয়ং আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর (رضي الله عنه) ফরমান- نعمة البدعة هذه -(এটা খুবই উত্তম বিদ্আত।)


❏ ইফতারের সময় -৩১


اللهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ.


মুখে বলাটা বিদ্আত।

➥〈 ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৫/৪০৬পৃ: , ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, হা/২৩৫৮, ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ২/৩৪৪পৃ: হা/৯৭৪৪নং টিকা দেখুন। 〉


যাকাত-সমসাময়িক মুদ্রা দ্বারা যাকাত আদায় করাটা বিদ্আত। কুরূনে ছালাাছায় এ ধরনের ছবি সংবলিত মুদ্রা ছিল না এবং এর দ্বারা যাকাত আদায় করা হতো না। বর্তমান মুদ্রা ও শস্য দ্বারা যে ফিত্রা আদায় করা হয়, তাও বিদ্আত।


হজ্জ-রেল, লরি, মোটর ও উড়োজাহাজ যোগে হজ্জে গমন করা, মোটর গাড়িযোগে আরাফাত যাওয়া বিদ্আত। কেননা তখনকার পবিত্র যুগে না এসব যানবাহন ছিল, না এগুলোর সাহায্যে হজ্জ করা হতো।


তরীকত- তরিকতের প্রায় সমস্ত কাজ এবং তাসাউফের প্রায় সমস্ত মাসা‘য়িল বিদ্আত। মুরাকেবা, চিলে­, আত্ম সংশোধন, শাইখের স্বরণ, নানা রকম যিকর সবই বিদ্আত। এসব ব্যাপারে কুরূনে ছালাছায় কোন হাদিছ পাওয়া যায় না।

চার সিলসিলা-শরীয়ত ও তরীকত উভয়ের চার চারটি সিলসিলা। যথা-হানাফী, শাফেঈ, মালেকী, হাম্বলী, অনুরূপ কাদেরী, চিশ্তী, নকশবন্দী ও সরওয়ার্দী। এসব সিলসিলা সম্পূর্ণ বিদ্আত। কোন সাহাবী বা তাবেয়ী হানাফী বা কাদেরী ছিলেন না।

এখন দেওবন্দীরা বলুন, বিদ্আত থেকে মুক্ত হয়ে ধর্মীয় জীবন যাপন করাটা সম্ভবপর হবে কি? যখন ঈমান ও কালেমার মধ্যে বিদ্আত ঢুকে গেছে, তখন বিদ্আত থেকে রেহাই কিভাবে সম্ভব হবে?


পার্থিব বস্তুসমূহ-বর্তমান পৃথিবীতে এমন সব বস্তুসমূহ আবিষ্কার হয়েছে, যার কোন নাম-নিশানা কুরূনে ছালাছায় ছিল না এবং এগুলোকে বাদ দিয়ে পার্থিব জীবন যাপন করা অসম্ভব। প্রত্যেকেই এগুলোর ব্যবহার করতে বাধ্য। রেল, মোটর, উড়োজাহাজ, স্টিমার, টাংগা, গোড়াগাড়ি, চিঠি, খাম, তারবার্তা, টেলিফোন, রেডিও, মাইক ইত্যাদি এবং এদের ব্যবহার বিদ্আত। অথচ প্রত্যেক মতবাদের লোক এগুলোকে বিনা সংকোচে ব্যবহার করেন।


দেওবন্দী ওহাবীরা! বলুন, বিদ্আতে হাসনাকে বাদ দিয়ে দুনিয়াবী জিন্দেগী যাপন করা কি সম্ভব? কখনই নয়।


একটি রহস্যাবৃত বৃত্তান্ত-

জনৈক মৌলবী সাহেব কোন এক ব্যক্তির বিবাহ পড়াতে গিয়েছিল। বরের গলায় মালা ছিল। মৌলবী সাহেব যাওয়া মাত্র বললেন-“এ মালা বিদ্আত, শিরক, হারাম। হুযুর (ﷺ) সাহাবায়ে কিরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন-কেউ এ মালা ব্যবহার করেননি। বলুন, মালা পরা সম্বন্ধে কোন্ কিতাবে লিখা আছে? তখন লোকেরা মালা খুলে ফেললেন। নিকাহ পড়ার পর বরের পিতা। মৌলবী সাহেবকে দশটাকার নোট দিলেন। মৌলবী সাহেব নোটটা পকেটে রাখতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় উক্ত বর মৌলবী সাহেব এর হাত ধরে ফেললেন এবং বললেন “মৌলবী সাহেব” নিকাহ পড়িয়ে টাকা নেয়াটা বিদ্আত, হারাম, শিরক। হুযুর (ﷺ) সাহাবায়ে কিরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈনদের মধ্যে কেউ টাকা নেননি। বলুন, নিকাহ পড়িয়ে ফিস নেয়া কোন্ কিতাবে লিখা আছে? মৌলবী সাহেব বললেনঃ “এতো খুশী হয়ে দিলেন।” উত্তরে বর বললেনঃ “মালাটা খুশীর ছিল, দুঃখের ছিল না”। মৌলবী সাহেব লজ্জায় মাথা নত হয়ে গেল। এটিই হচ্ছে ওইসব মহারথীদের দৃষ্টিতে বিদ্আত।



━━━━━━
Top