তা‘যিমী সিজদার বর্ণনা-


❏ প্রশ্ন-১১৫ঃ সিজদায়ে তা‘যিমী বা কবর সিজদা করার প্রকার কতটি এবং তা বিস্তারিত আলোচনা কর। 


✍ উত্তরঃ কবরকে সামনে রেখে সিজদা তিন প্রকারঃ-

এক. কবরকে সামনে রেখে সিজদা করা- যদি কবর এবং সিজদাকারীর মাঝখানে কোন আড়াল বা পর্দা না থাকে তাহলে মাকরূহে তাহরিমী। এতে সিজদাকারী গুনাহগার হবে। 

দুই. কবরকে সিজদায়ে তা‘যিমী করা হারাম। এতে সিজদাকারীর তাওবা করা আবশ্যক। 

তিন. ইবাদতের উদ্দেশ্যে সিজদা করা শির্ক। এতে সিজদাকারীকে নতুনভাবে ঈমান আনতে হবে। কেউ কেউ সিজদায়ে তা‘যিমীকেও শির্ক বলেছেন। 

অতএব, যে কোন কবরকে সিজদা করা থেকে বিরত থাকা উচিত এবং যারা সিজদা করে তাদেরকে বাধা দিতে হবে। এর জন্য তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করার উপদেশ দেয়া উচিত। ফতোয়া হিন্দীয়াতে আছে, 


من سجد للسلطان علٰى وجه التحية او قبل الارض بين يديه لايكفر ولكن يأثم لارتكا به الكبيرة وهو المختار . وقال ابو جعفر رحمة الله وان سجد للسلطان بنية العبادة او لم يحقر النية فقد كفر، كذا فى جوهر الاخلاطى .

وفى الخلاصة ومن سجد لهم اراد به التعظيم كتعظيم الله سبحانه وتعالٰى كفر. وان اراد به التحية اختار العلماء انه لايكفر . اقول هذا هو الاظهر . 


‘কেহ বাদশাহ এর সম্মানার্থে মাথানত বা সিজদা করলে কিংবা তাঁর সামনে জমিন চুম্বন করলে কাফির হবে না, তবে কবিরা গোনাহ হবে। এটাই উত্তম অভিমত। ইমাম আবু জাফর তাহাবী বলেন, ইবাদতের নিয়তে বাদশাহকে সিজদা করলে অথবা নিয়তে পোক্ত থাকলে কাফির হয়ে যাবে।"

157. ফাত্ওয়া হিন্দিয়া, খন্ড-৫, বাদশাহর সঙ্গে মোলাকাত অধ্যায়। অনুরূপ জাওহারুল আখলাতীতে রয়েছে।


খোলাছা গ্রন্থে আছে, যারা আল্লাহর মত সম্মান প্রদর্শন করে সিজদা করে তারা কাফির হবে। আর স্বাভাবিক সম্মান প্রদর্শন করলে কাফির হবে না, এটাই উত্তম মত।’ 

158. শরহে ফিকহে আকবর, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কুফরী পরিচ্ছেদ; রদ্দুল মুহতার, কিতাবুল কারাহিয়া, খন্ড-৬, পৃষ্ঠা-৩৮৩


❏ প্রশ্ন-১১৬ঃ কোন ওলি, সুফি বা আলিমের সামনে সিজদা করার হুকুম কী?


✍ উত্তরঃ ইসলামী সকল কিতাবসমূহে লিখা আছে যে, আল্লাহ্ ব্যতীত যে কোন ওলি, পীর-মুর্শিদ ও সুফির সামনে সিজদা করা হারাম। ফুকাহা-ই কিরাম একথাও বলেছেন যে, মহান আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো সামনে ইবাদতের নিয়্যতে সিজদা করলে, সিজদাকারী কাফির হয়ে যাবে। যদি তা‘যিম বা সম্মানের উদ্দেশ্যে সিজদা করে থাকে, তাতেও ফাসিক হবে।

মানুষ মানুষকে সিজদা করার সর্বপ্রথম কুপ্রথা চালু করেন ফেরআউনের উজির হামান। তিনিই সর্বপ্রথম মিশরের শ্রেষ্ঠ সম্রাট ফেরাউনকে সিজদা করেছিলেন এবং ফেরাউনের জন্য সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন।

আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে যে, হযরত সা‘দ (رضى الله تعالي عنه)-এর ছেলে কুফার নিকটবর্তী একটি শহর ‘হিরা’য় গিয়েছিলেন, সেখানে দেখতে পেলেন, লোকেরা তাদের সরদার বা দলপতিকে সিজদা করছে। সা‘দ বলেন, তখন আমি মনস্থ করলাম যে, রাসূল (ﷺ)ই সিজদার অধিক হকদার। সুতরাং আমি রাসূল (ﷺ)-এর নিকট এসে আরয করলাম যে, আমি হিরা শহরে গিয়ে দেখতে পেলাম যে, লোকেরা তাদের সরদারকে সিজদা করছে। অথচ আপনিই সিজদার অধিকতর হকদার। তাই আমরা আপনাকে সিজদা করতে চাই। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, ভাল! তোমরা আমার কবরের পার্শ্বদিয়ে যাওয়ার সময় কী উহাকে সিজদা করবে? আমি আরয করলাম, না। তখন আল্লাহ'র প্রিয় হাবীব (ﷺ) বলেন, এমন করো না। আমি যদি কাউকে সিজদা করার হুকুম দিতাম, তাহলে স্ত্রীদেরকে স্ব-স্ব স্বামীকে সিজদা করার হুকুম দিতাম। কেননা আল্লাহ তা‘আলা স্বামীর হক স্ত্রীর ওপর রেখেছেন।

কোরআন মজীদের ৪১তম সূরার নামও সিজদা। যা এভাবেই আরম্ভ হয়েছে حـٰـمٓ । এ হুকুম রাহমানুর রহীম মহান আল্লাহ'র পক্ষ হতে ঘোষণা করা হয়েছে। 

একথা প্রতীয়মান হয় যে, ফিরিশতারা হযরত আদম (عليه السلام)কে যে সিজদা করেছিলেন, তা হযরত আদম (عليه السلام)-এর জন্য ছিল না বরং তা ছিল মূলতঃ আল্লাহর হুকুম পালনার্থে। যা আল্লাহ্ তা‘আলা স্বীয় কুদরতের একটি নতুন পদ্ধতি ও নিদর্শনের বহিঃপ্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ হযরত আদম (عليه السلام)কে পৃথিবীতে খলিফা হিসেবে সৃষ্টি করার প্রেক্ষাপটে তাদেরকে হুকুম দিয়েছিলেন।

অনুরূপভাবে হযরত ইউসুফ (عليه السلام)কে তাঁর ভাইয়েরা যে সিজদা করেছিলেন, তা মূলতঃ হযরত ইউসুফ (عليه السلام) যে তাদের ভুল ও অপরাধকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, তার শুকরিয়া হিসেবে মহান আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে সিজদা করেছিলেন। সারকথা হচ্ছে, যে কোন ব্যক্তির কোন প্রকারের সিজদা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে করা জায়েয নেই।

হ্যাঁ! কোন আলিম বুযূর্গ ও আল্লাহর ওলির হাত-পা চুম্বন করা এবং মা-বাবা কিংবা তাদের কবরকে চুম্বন করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয। যা হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।


Top