✧ মুসলমানদের উপর বিশেষ করে হেরমাইন শরীফাইনে বসবাসকারীদের উপর অত্যাচার


এখনও দেখা যায় যে দেওবন্দীরা সাধারণভাবে হিন্দুদের সাথে বেশী সংশ্রব রাখে, মুসলমানদেরকে ঘৃণার চোখে দেখে। তারা সবসময় মুসলমানদের উপর বিশেষ করে হেরমাইন শরীফাইনের অধিবাসীদের ইযযত, আবরুর উপর প্রচন্ড আঘাত হেনেছেন।

উপরোক্ত মহান ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী দ্বাদশ হিজরীতে নজদে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাবের জন্ম হয়। তিনি আহলে হেরমাইন ও অন্যান্য মুসলমানদের উপর কি ধরনের অত্যাচার করেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ জানতে হলে “সায়ফুল জব্বার” ও “বোয়ারেকে মুহাম্মদীয়া আলা ইরগামাতিন নজদিয়াহ” ইত্যাদি ইতিহাস গ্রন্থাবলী দেখুন। তাদের অত্যাচার নিপীড়নের কিঞ্চিত বর্ণনা—


❏ আল্লামা শামী (رحمة الله) তাঁর সুপ্রসিদ্ধ কিতাব রদ্দুল মুখতার এর ৩য় খন্ডে বাবুল বুগাতের শুরুতে লিপিবদ্ধ করেছেনঃ-


كَمَا وَقَعَ فِي زَمَانِنَا فِي أَتْبَاعِ عَبْدِ الْوَهَّابِ الَّذِينَ خَرَجُوا مِنْ نَجْدٍ وَتَغَلَّبُوا عَلَى الْحَرَمَيْنِ وَكَانُوا يَنْتَحِلُونَ مَذْهَبَ الْحَنَابِلَةِ، لَكِنَّهُمْ اعْتَقَدُوا أَنَّهُمْ هُمْ الْمُسْلِمُونَ وَأَنَّ مَنْ خَالَفَ اعْتِقَادَهُمْ مُشْرِكُونَ، وَاسْتَبَاحُوا بِذَلِكَ قَتْلَ أَهْلِ السُّنَّةِ وَقَتْلَ عُلَمَائِهِمْ حَتَّى كَسَرَ اللَّهُ تَعَالَى شَوْكَتَهُمْ وَخَرَّبَ بِلَادَهُمْ وَظَفِرَ بِهِمْ عَسَاكِرُ الْمُسْلِمِينَ عَامَ ثَلَاثٍ وَثَلَاثِينَ وَمِائَتَيْنِ وَأَلْفٍ


-‘‘যেমন আমাদের সময়ে সংঘটিত আবুদল ওহাবের অনুসারীদের লোমহর্ষক ঘটনা প্রবাহ প্রণিধানযোগ্য। তারা নজদ থেকে বের হয়ে মক্কা-মদীনার উপর আধিপত্য বিস্তার করেছিল। তারা নিজেদেরকে হাম্বলী মায্হাবের অনুসারী বলে দাবী করতো। আসলে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তারাই শুধু মুসলমান আর বাকী সব মুশরিক। এজন্য তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীদের হত্যা করা জায়েয মনে করেছে এবং এদের অনেক আলেমকে হত্যা করেছে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআ’লা তাদের অহংকার চুর্ণ করে তাদের শহরগুলোকে বিরান করে দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ইসলামী সেনাবাহিনীকে জয়যুক্ত করেছেন। এ লোমহর্ষক ঘটনাটি ১২৩৩ হিজরীতে সংঘটিত হয়েছিল।’’

{ইবনে আবেদীনঃ রুদ্দুল মুখতারঃ বাবুল বোগাতঃ ৩/৩২৯}


‘সায়ফুল জব্বার’ ও অন্যান্য কিতাবে তাদের অত্যাচারের অগণিত ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, তারা পবিত্র মক্কা-মদীনার নিরীহ লোকদেরকে নির্বিচারে হত্যা করেছে; হেরমাইন শরীফাইনে বসাবাসকারী স্ত্রী-কন্যাদের ধর্ষণ করেছে; পুরুষদেরকে দাস আর নারীদেরকে দাসীতে পরিণত করেছে। সৈয়দ বংশের অনেককে হত্যা করেছে; এমনকি মসজিদে-নববীর সমস্ত ঝাড়-লণ্ঠন ও গালীচা উঠিয়ে নজদে নিয়ে যায়, সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম ও আহলে বাইতের কবরসমূহ ভেঙ্গে ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছে; এমন কি যে পবিত্র রওযা শরীফকে কেন্দ্র করে প্রতি দিন সকাল-সন্ধ্যায় ফিরিশতাগণ সালাত ও সালাম পাঠ করেন, সেটাও ধরাশায়ী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কিন্তু যেই লোকটি সেই অসৎ  উদ্দেশ্যে রওযা পাকের কাছে গিয়েছিল, আল্লাহর তরফ থেকে নিয়োজিত একটি সাপের কামড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আল্লাহ তা’আলাই তাঁর হাবীবের শেষ বিশ্রামস্থলকে ওদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছেন।


মোট কথা, ওদের অত্যাচার-নিপীড়ন ছিল সীমাহীন পীড়াদায়ক। যার বর্ণনা করতে গেলে হৃদয় ব্যথিত হয়ে যায়। কুখ্যাত ইয়াযীদ নবী করিম (ﷺ) এর পরিবারবর্গের সঙ্গে শত্রুতা করেছে তাঁদের জীবদ্দশায়, কিন্তু তাঁদের ইন্তেকালের ১৩০০ বছর পরেও ওহাবীদের হাতে সাহাবায়ে কেরাম ও মহামান্য আহলে বাইত (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) লাঞ্চিত হয়েছেন কবরের মধ্যে। ইবনে সাউদ হেরমাইন শরীফাইনে যে ন্যাক্কারজনক বীভৎস কান্ড করেছেন, তা এখনও প্রত্যেক হাজীর চোখে ধরা পড়ে। পবিত্র মক্কা নগরীতে আমি নিজেই স্বপক্ষে দেখেছি যে, কোথাও কোন সাহাবীর পবিত্র কবরের চিহ্নও দৃষ্টিগোচর হয় না। উদ্দেশ্য, কেহ যেন ফাতিহা পাঠ করার সুযোগ না পায়। যে স্থানে হুযুর (ﷺ) ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন, সে পবিত্র জায়গায় একটি তাবু খাটানো দেখেছি, যেখানে কুকুর ও গাধার অবাধ আনাগোনা চলছে। আগে এখানে একটি গুম্বদ বিশিষ্ট ঘর নির্মিত ছিল, যেখানে গিয়ে মানুষ নামায পড়তো, যিয়ারত করতো। এটিই ছিল আমেনা বিবির ঘর। এ ঘরেই ইসলাম রবি আলোক উদ্ভাসিত হয়েছিল। কিন্তু আজ সে পবিত্র জায়গার এহেন বে’ইযযতী ও অবমাননা হচ্ছে। আল্লাহর কাছেই এর অভিযোগ রইল।


এতো গেল আরবের ঘটনাবলী। হিন্দুস্থান সম্পর্কেও কিছু আলোচনা করা দরকার। দিল্লী শহরে মওলবী ইসমাইল নামে একজন লোক জন্মগ্রহণ করে।


❏ তিনি মুহাম্মদ ইবন আবদুল ওহাব নজদী প্রণীত “কিতাবুত তাওহীদ” এর উদ্দুর্ ভাষায় খোলাসা করে অনুবাদ করে ও “তাকবিয়াতুল ঈমান” নামে প্রকাশ করে হিন্দুস্থানে এর ব্যাপক প্রচারের আয়োজন করে। এ তাকবিয়াতুল ঈমান প্রকাশ করার কারণে তিনি সীমান্তের পাঠানদের হাতে নিহত হয়। তাই ওহাবীগণ তাকে শহীদ বলে গণ্য করে শিখদের হাতে নিহত হন বলে প্রচারণা চালায়। (“আনোয়ারে আফতাবে ছাদাকাত” গ্রন্থ দ্রষ্টব্য)


❏ আলা হযরত (رحمة الله) ঠিকই বলেছেন,


وه وهابيه نے جسے ديا هے لقب شهيد وذبيح كا

وه شهيد ليلے نجد تها وه ذبيح تيغ خيارهے


-‘‘ওহাবীরা যাকে ‘শহীদ বা জবীহ’ বলে আখ্যায়িত করেছে, আসলে তিনি নজদের ‘লায়লী’র প্রেমে বিভোর হয়ে ধার্মিকদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে।’’  

{ইমাম আহমদ রেযা খাঁনঃ আল কাওকাবাতুশ: শিহাবিয়াঃ পৃ. ১৪২}


যদি (তাদের কথামতো) শিখেরাই নিহত করতো তাহলে অমৃতসর বা পূর্ব পাঞ্জাবের কোন শহরে তিনি মারা যেত। কেননা, পূর্ব পাঞ্জাবই হলো শিখদের কেন্দ্র। সীমান্ত তো পাঠানদের এলাকা, সেখানেই তিনি মারা যায়। অতএব বোঝা গেল, তিনি মুসলমানদের হাতে নিহত হয়েছিল। তার মৃত দেহও উধাও করে ফেলা হয়েছিল। এ জন্য কোথাও তার কোন কবর নেই।


━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah 
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।
Top