❏ প্রশ্ন-৪৪ঃ মাওলীদ বা জন্মস্থান ও জন্ম তারিখ দ্বারা উদ্দেশ্য কি বর্ণনা কর?
✍ উত্তরঃ কোন নবী-রাসূল কিংবা বুযূর্গের জন্মদিবস। সাধারণত এর দ্বারা রবিউল আউয়াল শরীফের ১২ তারিখ উদ্দেশ্য, যা হুযূর মোস্তফা (ﷺ)-এর বেলাদত শরীফের দিন। এটাকেই মাওলুদুন্ নবী (ﷺ) বলা হয়। হিন্দুস্তান ও মিশরে এর অধিক প্রচলন বিদ্যমান আছে কিন্তু মধ্য এশিয়াতে এর প্রসিদ্ধি কম। উক্ত দিবসে হিন্দুস্তানে হুযূর মোস্তফা (ﷺ)-এর বিভিন্ন অবস্থা সম্পর্কে আলোচনার বিশেষ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। হুযূর (ﷺ)-এর প্রশংসা ও মর্যাদা সম্বলিত না’তে রাসূল পাঠ করা হয় এবং দরূদ শরীফের খতম ও যিকিরের ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু ওহাবী সম্প্রদায় যারা আহলে হাদীস হিসেবে প্রসিদ্ধ তারা এ জাতীয় মাহফিলকে বিদ‘আত ও সুন্নাত পরিপন্থী বলে বিশ্বাস করে।
বেলাদত বলতে ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ উদ্দেশ্য। ১২ রবিউল আউয়াল সমগ্র মুসলিম বিশ্বে অতীব সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ দিবস হিসেবে প্রসিদ্ধ এবং ওই দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হয়। মসজিদ সমূহে এবং বিভিন্ন ঘরে মিলাদ শরীফের মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে হুযূর (ﷺ)-এর মর্যাদাপূর্ণ জীবনী আলোচনা করে লোকজনকে নবী প্রেমে উজ্জীবিত করা হয় এবং মর্মস্পর্শী ও হৃদয়গ্রাহী না‘ত শরীফ পাঠ করার মাধ্যমে এ মুহাব্বতে আবেগের সৃষ্টি হয়।
কিন্তু ওহাবী তথা আহলে হাদীসরা এ জাতীয় কর্ম সম্পাদনকে বিদ‘আত ও সুন্নাত পরিপন্থী কাজ বলে আক্বীদা পোষণ করে। হুযূর (ﷺ)-এর বেলাদত শরীফের তারিখ ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ এবং ওফাত শরীফের তারিখও মতান্তরে ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ। অতএব মুসলমানদের জন্য ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ অত্যন্ত তাৎপর্যমন্ডিত ও মর্যাদাপূর্ণ দিন, যাতে তাঁর বিলাদত ও ওফাত উভয়ের স্মরণ করা হয়।
১৩২৭ হিজরীতে সিরিয়া ও আরব দেশে এ আন্দোলন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয় যে, ওই দিনকে সকল ইসলামী মহান ও স্মরণীয় দিনগুলোর চেয়ে অধিক শানদার মর্যাদাপূর্ণ ও বরকতময় দিন হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। উক্ত আন্দোলনের প্রতিধ্বনি হিন্দুস্তানসহ বিভিন্ন ইসলামী দেশগুলোতেও পৌঁছে যায়। ফলে ১৩২৮ হিজরীতে হিন্দুস্তানের মুসলমানেরা বিভিন্ন শহরে উক্ত দিন ঈদে মিলাদুন্ নবী উদযাপন করেন। হুযূর (ﷺ)-এর ওফাত শরীফের বিশুদ্ধ তারিখ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। সাধারণত প্রসিদ্ধ যে, ১২ তারিখ তাঁর মাওলুদ শরীফ। শিক্ষিত গুণিজন এবং প্রখ্যাত ওলামা ও বুযূর্গানে দ্বীন সম্মিলিতভাবে মাহফিল করেছেন এবং হুযূর মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পবিত্রতা ও মহত্ব সম্পর্কে জোরালো বক্তব্য পেশ করেন। উক্ত সমাবেশের নাম ‘১২ই ওফাত দিবস’-এর পরিবর্তে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী ’ নামে স্বীকৃতি লাভ করে। বিভিন্ন পত্রিকা ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)-এর খুশিতে রঙ্গীণ ক্রোড়পত্র এবং বিলাদতে মোস্তফা (ﷺ)-এর ওপর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী প্রকাশ করে। প্রত্যেক বছর এবং প্রতিটা মুহূর্তে একবার স্বীয় প্রিয় মাওলা নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্মরণে মাহফিল করা এবং তাঁর নবুওয়াতের বিশুদ্ধ ঘটনাবলীকে গদ্য ও পদ্যের বিভিন্ন পদ্ধতিতে বর্ণনা করা, এমন এক মুস্তাহসন বা পূণ্যময় প্রশংসনীয় বিষয় যে, যা বর্ণনা ও যুক্তির নিরিখে অস্বীকার করা যাবে না।
من احب شيئًا اكثر ذكرهُ এটি স্বতঃসিদ্ধ ও সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালা। অর্থাৎ- যে যাকে ভালবাসে সে তার স্মরণ অধিকহারে করে থাকে। কোন ব্যক্তি মুসলমান হতে পারবে না যতক্ষণ তার মাঝে স্বীয় আক্বা মাওলা মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মুহব্বত নিজ প্রাণ ও সন্তান-সন্ততি থেকে অধিক প্রিয় না হবে। মুহব্বতের চাহিদা হচ্ছে, বন্ধুর স্মরণে সর্বদা ব্যাপৃত থাকা। বর্তমানে প্রত্যেক জাতি তাদের দলীয় নেতৃবৃন্দ ও পথপ্রদর্শকদের জন্মবার্ষিকী ও শাহাদত বার্ষিকী অত্যন্ত জাঁকজমক ও ধুম-ধামের সাথে পালন করছে। অতএব মুসলমানগণ তাদের সত্য নবী ও প্রিয় রাসূল (ﷺ)-এর বছরের এই মুবারক দিনে যে নূর ইহজগতে প্রকাশিত হয়েছেন এবং ওই দিন আল্লাহ তা‘আলার মাহবুব তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর সঙ্গে মিলিত হয়েছেন, সে পূণ্যময় দিনে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) করে উক্ত অনুপম পূণ্যময় দিনকে স্মরণীয় করে রাখবে না কেন?
59. সূরা আছ্-ছফ্, আয়াতঃ ৬