২য় পরিচ্ছেদ
প্রাসঙ্গিক প্রয়োজনীয় উপকারী বিষয় সমূহের বর্ণনাঃ-
ইলমে গায়ব সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয় ভালভাবে স্মরণ রাখতে পারলে খুবই উপকারে আসবে এবং অধিকাংশ আপত্তি সমূহ আপনা আপনিই মীমাংসা হয়ে যাবে।
(১) যে কোন বিষয়ের নিছক জ্ঞান দূষণীয় নয়। তবে, হ্যাঁ, দূষণীয় কোন কিছু করা বা করার উদ্দেশ্যে শিখা দূষণীয়। অবশ্য জ্ঞানের কোন কোন বিষয় অন্যান্য বিষয়াদির জ্ঞানের তুলনায় উৎকৃষ্ট যেমন আকাইদ, শরীয়তও সুফীবাদ সম্পর্কিত জ্ঞান অন্যান্য শাস্ত্রের জ্ঞান থেকে উৎকৃষ্ট। কিন্তু কোন জ্ঞানই স্বভাবতঃ দূষণীয় নয়। উদাহরণ কুরআনের কোন আয়াত পাঠে অপরাপর আয়াত অপেক্ষা তুলনামূলকভাবে বেশী ছওয়াব পাওয়া যায়। قُلْ هُوَ اللهُ পাঠে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পাঠের ছাওয়াব আছে, কিন্তুتَبَّتْ يَدَى এর মধ্যে এ পরিমাণ ছওয়াব নেই।
❏তাফসীরে রূহুল বয়ানে
كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُوا فِيهِ اخْتِلَافًا كَثِيرًا
{সূরাঃ নিসা, আয়াতঃ ৮২, পারাঃ ৫}
(আয়াত সম্পর্কিত বিবরণ দ্রষ্টব্য) কিন্তু কোন আয়াতই খারাপ নয়। কেননা যদি কোন জ্ঞান দূষণীয় হতো, তাহলো তা আল্লাহ তা’আলার অপরিসীম জ্ঞানের আওতায় আসত না, কেননা তিনি যাবতীয় দোষত্রুটি থেকে পবিত্র; অনুরূপ আল্লাহর স্বত্ত্বা ও গুণাবলী সম্পর্কিত জ্ঞান ফিরিশতাদেরও ছিল। হযরত আদম (عليه السلام) কে জগতের ভালমন্দ সবকিছুর জ্ঞান দান করা হয়েছিল এবং এ জ্ঞানের বদৌলতেই তিনি ফিরিশতাদের উস্তাদ সাব্যস্ত হয়েছিলেন। যদি খারাপ বস্তু সমূহের জ্ঞান দূষণীয় হতো, তাহলে আদম (عليه السلام) কে সে জ্ঞান দান করে কখনও উস্তাদ নিযুক্ত করা হতো না। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো কুফর ও শিরক। কিন্তু ফিকহশাস্ত্রবিদগণ বলেন হিংসা-দ্বেষ পরশ্রীকাতরতা ও শত্রুতা সম্পর্কিত জ্ঞান এবং কুফর ও শিরক সম্বলিত শব্দ সমূহ জানা ফরজ বা অত্যাবশ্যকীয়, যাতে সেসব নীতি বহির্ভূত কার্য থেকে বিরত থাকা যায়। অনুরূপ, যাদু দমন করার জন্য যাদু বিদ্যা শিখাও অত্যাবশ্যক।
❏ফতোয়ায়ে শামীর মুকাদ্দামায় আছে,
وَعِلْمُ الرِّيَاءِ وَعِلْمُ الْحَسَدِ وَالْعُجَبِ وَعِلْمُ الْاَلْفَاظِ الْمُحَرَّمَةِ وَالْمُكَفِّرَةِ وَلَعُمْرِىْ هَذَا مِنْ اَهَمِّ اَلْمُهَمَّاتِ
অর্থাৎ রিয়া, হিংসা-বিদ্বেষ, আত্মগরিমা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা এবং হারাম ও কুফর সম্বলিত শব্দসমূহ শিখা ফরজ (অবশ্য কর্তব্য)।
{ইমাম ইবনে আবেদীন শামীঃ রুদ্দুল মুখতারঃ ১/৩২ পৃ.}
খোদার শপথ, ইহা একান্ত প্রয়োজনীয় ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
❏শামীর উক্ত মুকাদ্দামায় علم نجوم ورمل (জ্যোতিষ শাস্ত্রের জ্ঞান) এর বর্ণনায় বলা হয়েছে জাহিরাতুন নাজেরা’ নামক কিতাবে উল্লেখিত আছে যে, অমুসলিম অধ্যূষিত অঞ্চলের (যে অঞ্চল শরীয়তের পরিভাষায় দারুল হরব নামে আখ্যায়িত) বিধর্মীদের যাদু প্রতিরোধে করার উদ্দেশ্যে যাদু বিদ্যা শিখা ফরজ (অবশ্য কর্তব্য)। ইহয়ায়ে উলুমের প্রথম খন্ডের ১ম অধ্যায়ের ৩য় পরিচ্ছেদের ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় জ্ঞান সমূহের বর্ণনায় উল্লেখিত আছে যে, কোন বিদ্যার দোষ ত্রুটি নিছক বিদ্যার কারণে নয় বরং আল্লাহর বান্দাদের ব্যাপারে উক্ত জ্ঞানের প্রয়োগ অনুসারে তিনটি কারণেই দূষণীয় হয়ে থাকে।
উল্লেখিত বর্ণনা থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল যে, কোন কিছুর নিছক জ্ঞান দুষনীয় নয়। এতে বিরুদ্ধবাদীদের উত্থাপিত প্রশ্নেরও মীমাংসা হয়ে যায়। প্রশ্নটি হচ্ছে এ ধারণা পোষণ করা দরকার যে, হুজুর (ﷺ)এর খারাপ বিষয়াদির, যেমন চুরি, ব্যভিচার, যাদু, কবিতা ইত্যাদির জ্ঞান ছিল না। কেননা এগুলো সম্পর্কে জানাটা দূষণীয়। এজন্যেই তারা শয়তান ও হযরত আযরাইল (عليه السلام) এর জ্ঞানের পরিধি হুজুুর (ﷺ)এর জ্ঞানের তুলনায় বেশী প্রসারিত বলে দাবী করেন। প্রত্যুত্তরে বলতে হয় আচ্ছা, বলুন, এসব বিষয়ের জ্ঞান খোদার আছে কিনা? তাদের এ বক্তব্যটি অনেকটা অগ্নি উপাসকদের কথার মত। ‘মজুসী’ সম্প্রদায়ের লোকেরা বলে যে, আল্লাহ তাআলা নিকৃষ্ট বস্তুসমূহের সৃষ্টিকর্তা নন, কেননা খারাপ জিনিস সমূহ সৃষ্টি করাটাও দূষণীয় (নাউযুবিল্লাহ)। যদি যাদু বিদ্যা দূষণীয় হতো, তাহলে এর শিক্ষা দেয়ার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে হারুত ও মারুত নামে দু’ফিরিশতা পৃথিবীতে অবতরণ করলেন কেন? হযরত মুসা (عليه السلام) এর সময়ের যাদুকরেরা যাদু বিদ্যার বদৌলতে হযরত মুসা (عليه السلام) এর সত্যতা যাছাই করে তাঁর উপর ঈমান এনে ছিল। দেখুন, যাদু বিদ্যা (এখানে) ঈমানের ওসীলা হয়ে গেল।
(২) সমস্ত নবী ও সৃষ্টিকূরের জ্ঞান হুজুর (ﷺ)কে দান করা হয়েছে। মৌলভী কাসেম নানুতবী সাহেবও তাঁর ‘তাহজিরুন নাস’ কিতাবে এটা স্বীকার করেছেন। এর সম্পূর্ণ উদ্ধৃতি পরে পেশ করা হবে। কোন সৃষ্ট জীবের যে বস্তুর জ্ঞান থাকবে, সে জ্ঞানের অধিকারী হুজুর (ﷺ) এর ভাগ বণ্টন থেকেই পেয়েছে। শিক্ষক থেকে ছাত্র যে জ্ঞান লাভ করে, সে বিষয়ে শিক্ষকেরও নিশ্চয়ই জ্ঞান থাকতে হবে। নবীগণের মধ্যে হযরত আদম (عليه السلام) ও আছেন। এ জন্যে হযরত আদম (عليه السلام) ও হযরত খলীলুল্লাহ (عليه السلام) এর জ্ঞান সম্পর্কেও পরে আলোচনা করা হবে।
(৩) সমস্ত ঘটনাবলী যা পূর্বে সংঘটিত হয়েছে ও ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে, কুরআন ও লওহ মাহফুজে রক্ষিত আছে। এই লওহ মাহফুজ পর্যন্ত ফিরিশতা ও কোন কোন ওলী ও নবীগণের দৃষ্টি প্রসারিত। এবং সেটা সবসময় হুযুর (ﷺ) এর সামনে রয়েছে। এজন্য আমি লওহ মাহফুজ ও কুরআনী জ্ঞান সম্পর্কে আলোকপাত করবো। অনুরূপ তাকদীরের লেখক ফিরিশতার জ্ঞান সম্পর্কেও আলোচনা করবো। হুজুর (ﷺ) এর জ্ঞানের বিস্তার প্রমাণ করার জন্যেই এসব বিষয়ের অবতারণা করা হবে।
━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।