❏ প্রশ্ন-১৭ঃ عيد (ঈদ) অর্থ কী? ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ছাড়া অন্য কোন ঈদ হতে পারে? বর্ণনা কর।
✍ উত্তরঃ عيد (ঈদ) অর্থঃ লোকজন একত্রিত হওয়ার দিন। মুসলমানদের উৎসবের দিন। বহুবচনে اعياد ।
عيد الشعانين অর্থাৎ- عيد الفضح، عيد القيامةঃ খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের ধারণা মতে হযরত ঈসা (عليه السلام)কে ক্রুশবিদ্ধ বা সুলিতে চড়ানোর দিন।
عيد الفطيرঃ ইহুদীদের একটি ধর্মীয় ঈদ।
عيد الميلادঃ খ্রীস্টানদের উৎসবের দিন (ঈযৎরংসধং উধু)। হযরত ঈসা (عليه السلام)এর জন্মদিন।
12. মিফতাহুল লুগাত, মাওলানা আবুল ফাতাহ সংকলিত। কোরআন মহল, মৌলভী মুসাফিরখানার বিপরীতে, করাচি।
عيدঃ খুশী, আনন্দ। খুশী, উৎসব ও ছুটির দিন। বহুবচেন اعياد ।
عيد الفىঃ হাজার বছর বর্ষপূর্তি।
عيد الفضحঃ খ্রীস্টানদের ধর্মীয় উৎসবের দিন।
عيد مِئوِىْঃ শত বর্ষপূর্তি।
عيد الميلادঃ জন্মোৎসব, জন্মবার্ষিকী, ইরৎঃয উধু ।
عيد وطنىঃ জাতীয় উৎসব দিবস।
13. অহিদুজ্জামান কিরানবী, শিক্ষক, দারুল উলুম দেওবন্দ। কুতুবখানা হোসাইনিয়া দেওবন্দ।
عيدঃ যা বারংবার আসে, মানুষের জমায়েত ও একত্রিত হওয়ার দিন, মুসলমানদের উৎসবের দিন। বহুবচনে اعياد ।
عيد ঃ اصله من عود المسرة ورجوعها . وياؤه منقلبة عن وج-
عه اعياد . وانما جمع بالياء واصله الواؤ للزومها فى الواحد، وقيل للفرق بينه وبين اعواد الخشب . والعيد اسم للموسم المعهود يحتفل به الناس سنويًا . قال الله تعالٰىঃ تَكُونُ لَنَا عِيْدًا لِأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِنْكَ . (سورة مائدة)
عيد المائدة الّتى انزلها الله تعالٰى على عيسىٰ عليه السلام اكلها قومه منه ونحن المسلمون ولنا عيدان هماঃ عيد الفطر وعيد الاضحٰى.
عيد(ঈদ)ঃ আনন্দের দিন। খুশীর দিন। বহুবচনে اعياد । এটা عيد হতে উৎকলিত। যার অর্থ- ফিরে আসা। কথিত আছে যে, ঈদকে এজন্য ঈদ বলা হয়- যেহেতু ওটা প্রত্যেক বছর ফিরে আসে। ‘ইযহার’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, আরবে প্রত্যেক আনন্দের জন্য আয়োজিত সমাবেশকে ঈদ বলে থাকতো। কারণ উহা ফিরে আসাতে আনন্দও ফিরে আসে। এটাও বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা ঈদের দিন যেহেতু তাঁর প্রিয় বান্দাদের ওপর অসংখ্য রহমত ও বরকত নাযিল করেন, তাই এটাকে ঈদ নামকরণ করা হয়েছে।
অতএব হযরত আলী (رضى الله تعالي عنه) বলেন-
ليس العيد لمن لبس الجديد، انما العيد لمن أمن الوعيد .
‘ঈদ ওই ব্যক্তির জন্যে নয় যে নতুন কাপড় পরিধান করে, প্রকৃত ঈদ সে ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি, আযাব ও গজব থেকে পরিত্রাণ লাভ করেছে।’ প্রত্যেক জাতির মধ্যে ঈদ প্রথা বিদ্যমান আছে এবং তা নিজ নিজ সংস্কৃতি অনুযায়ী পালন করে থাকে। রাসূলুল্লাহ যখন মদীনা মুনাওয়ারায় তাশরীফ আনেন, তখন মদিনাবাসীরা ইরানীদের অনুসরণে নাইরোজ ও মেহেরজান নামে দু’টি ঈদ উদযাপন করতেন। রহমতে ‘আলম নূরে মুজাস্সাম মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ তা‘আলা উক্ত দু’দিনের পরিবর্তে, এর চেয়ে আরো উত্তম দুটি দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন।"
14. সুনানে আবু দাউদ শরীফ, হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত।
ইসলাম দুই ঈদের দিনকে পানাহার ও আনন্দের দিন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে একদিকে শারীরিক আনন্দ উপভোগের মাধ্যম বানিয়েছেন, অন্যদিকে উভয় দিনে নামায, সদকা, দান-খয়রাতকে ওয়াজিব করে আত্মিক উৎকর্ষ সাধনের উসিলাও বানিয়ে দিয়েছেন। ইসলাম ধর্মে দু’ঈদের সূচনা দ্বিতীয় হিজরীতে হয়। পবিত্র কোরআনে কারীমে ‘ঈদ’ শব্দটি হযরত ঈসা (عليه السلام)-এর দু‘আতে এসেছে। যা তিনি তাঁর বিশ্বস্ত সহচর ও সাহায্যকারীদের জন্যে তাদের দাবীর প্রেক্ষিতে আসমান থেকে খাদ্য ভর্তি দস্তরখান অবতরণ করার জন্য দু‘আ করেছিলেন। অতএব তিনি বলেন,
اَللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنْزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا
অর্থাৎ- ‘হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য খাদ্য ভর্তি দস্তরখান আসমান থেকে নাযিল করুন। যা আমাদের ও পরবর্তী প্রজন্মদের জন্য ঈদের (উৎসবের) দিন হিসেবে নির্ধারণ করতে পারি।’
অতএব তার দু‘আ মোতাবেক রবিবার আসমান থেকে খাদ্য নাযিল হতে শুরু করলো, খ্রীস্টানগণ সে দিনটিকে ঈদের দিন হিসাবে নির্ধারিত করেন। কতিপয় রেওয়ায়েত থেকে জানা যায় যে, চলিশ দিন যাবত সর্ব সাধারণের জন্য অনুমতি ছিল, ফলে তারা সকলেই উপকৃত হয়। চলিশ দিন পর আমীর-ওমরা ও ধনীদের জন্য নিষিদ্ধ করা হলে তারা তা অমান্য করার দরুন তাদের ওপর আসমানী খাদ্য অবতরণ বন্ধ হয়ে যায় এবং তাদের ওপর আল্লাহর পক্ষ হতে শাস্তি অবতীর্ণ হয়।
অন্য বর্ণনা মতে, আল্লাহ্ তা‘আলা মায়িদা বা আসমানী খাদ্য এ শর্তে নাযিল করেন যে, এরপরও যদি কেউ কাফির হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের ওপর এমন শাস্তি নাযিল করবেন, যা অন্য কারো ওপর নাযিল করা হয়নি। এতে হাওয়ারীগণ ভীত হয়ে তাদের দাবী প্রত্যাহার করেন। ফলে মায়িদা অবতরণ বন্ধ হয়ে যায়।
15. কামুসুল কোরআন, কাজী জয়নুল আবেদীন রচিত।
ঈদ ওই নিয়ামত ও আনন্দকে বলা হয় যা প্রত্যেক বছর বারংবার ঘুরে ফিরে আসে। এমন বিষয়ের ওপর খুশি ও আনন্দ যা আল্লাহ তা‘আলার রহমত, করুণা ও অনুগ্রহ দ্বারা অর্জিত হয়। প্রত্যেক বছর রহমত, ফযিলত ও অনুগ্রহের দ্বারা যে আনন্দ হাসিল হয় তাকে ঈদ বলে এবং এটাকে প্রকৃত খুশী বলা হয়। এ কারণে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা খুশী উদযাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ্ বলেন-
قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا الخ .
এ সকল বিষয় প্রাপ্তির ওপর আনন্দ উৎসব পালন করাকে ‘কোরআনী ঈদ’ বলা হয়। যেমন সৈয়্যদুনা হযরত ঈসা (عليه السلام)-এর দু‘আতে এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন- عِيْدًا لِأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا. ইত্যাদি কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়। আর এগুলো এক একটি নিয়ামত ও বরকতের বিনিময়ে হয়েছে বিধায় একে ঈদ বলা হয় এবং এটা প্রকৃত কোরআনী ঈদ বলা হয়েছে অথবা প্রচলিত পারিভাষিক বলা হয়।
দ্বিতীয়তঃ শরয়ী ঈদ। যা বাৎসরিক দু’ঈদ হিসেবে প্রসিদ্ধ। এটা হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। আর প্রকৃত প্রচলিত ঈদ যা পূর্বে উল্লেখিত আল্লাহর নিয়ামত ও ফযল অর্জনের দরুন পালন করা হয়। এটা পবিত্র কোরআন দ্বারা প্রমাণিত। যেমন হযরত ঈসা (عليه السلام) আসমানী খাবার ‘মান্না ও সালওয়া’ অর্জন করার ওপর যে আনন্দ উৎসব হাসিল করেছিলেন, এটাকেই কোরআনী পরিভাষায় ঈদ বলা হয়েছে।
অন্ধকার যুগ থেকে হিদায়তের যুগের সূচনালগ্ন হুযূর (ﷺ)-এর দুনিয়াতে আগমন মুসলমানদের জন্য অনেক বড় ঈদ। এর চেয়ে উত্তম দুনিয়াতে আর কোন ঈদ হতে পারে না। এটি এমন এক অতুলনীয় ও অপরিসীম নিয়ামত যার কোন তুলনা ও নজীর নেই। এর চেয়ে বড় দয়া, মেহেরবানী ও পুরস্কার সৃষ্টি জগতের প্রতি অন্য কোন বস্তু নেই। এটা আল্লাহর একত্ববাদের পর অমূল্য ও অতুলনীয় নিয়ামত। অতএব এ নিয়ামত অর্জনের ওপর খুশী উদযাপন করা সুন্নাতে ইলাহি ও ইসলামী কানুন মোতাবেক পূণ্যের কাজ। শরয়ী উভয় ঈদের সঙ্গে এই ঈদের সম্পর্ক হচ্ছে نوعى তথা এক প্রকারের সম্পর্ক, كلى বা পূর্ণাঙ্গ নয়। একে বিদ‘আত বলা এক নতুন অজ্ঞতা বৈ কিছু নয়। শরয়ী ঈদ হচ্ছে সাময়িক আনন্দ, যা ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর হিসেবে কোরবানী ও রোযা দ্বারা পরিচিত স্পষ্টতঃ যা বছরে একবার অনুষ্ঠিত হয়।
চিরস্থায়ী নিয়ামত, শাশ্বত দয়া অনুগ্রহকে ও কোরআনি পরিভাষায় ঈদ বলা হয়। সুতরাং একে বিদ‘আত বলা একটি নতুন আবিষ্কার, যা কোন জ্ঞানী ও বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তির জন্য সমীচীন নয়। আল্লাহ্ পাক সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন।
বিদ‘আত হচ্ছে পূর্বের কোন প্রকারের নমুনা ও নিদর্শন ব্যতীত শরয়ী বিধান মনে করা। অতএব এটা শরয়ী বিদ‘আত কখনো হতে পারে না এবং এখানে تشبه বা তুলনামূলক কোন মাসআলা সংযুক্ত করা কোন ভাবেই উচিত নয়। কেননা এমন কোন বিষয় পাওয়া যাবে না যা কাজে-কর্মে কিংবা আকৃতি-প্রকৃতির দিক দিয়ে অন্যের সঙ্গে তুলনাবিহীন হবে। বিশেষতঃ এটাকেই বিদআতে শরয়ী আখ্যায়িত করা মানে আল্লাহর প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ(ﷺ)এর ইহ জগতে তাশরীফ আনয়নে তাদের অসন্তুষ্টি ও বিরুদ্ধাচারিতার বহিঃপ্রকাশ। আর বিদআতের সাথে সম্বোধিত বস্তু, তা খুবই খারাপ ও মন্দ যা আল্লাহ্ তা‘আলার দয়া, ফযল ও অনুগ্রহের বিপরীত বিষয় বলে গণ্য। যে সকল বিষয় হুযূর মোস্তফা (ﷺ)-এর প্রতি সম্বোধিত, সেগুলো শরয়ী বিদআত হতে পারে না। যেমন- মিলাদুন্ নবী ও উরশুন্ নবী । তবে পদ্ধতিগত ও বাস্তবতায় কোন অসংযত ও অশোভনীয় কিছু পরিলক্ষিত হলে তা অবশ্যই সংশোধন করা যেতে পারে। মূল বিষয়কে পরিবর্তন ও সংশোধন করার কোন মু’মিন মুত্তাকির অধিকার নেই। তাই এগুলোকে অযথা বিদআতে শরয়ী বলা মানে মুসলমানদের মাঝে দ্বিধাবিভক্তি ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা। এটা কোন ইসলামী খিদমত নয়, বরং ইসলামকে ধ্বংস করা বৈ আর কিছু নয়। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُؤْتِيَهُ اللهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُوا عِبَادًا لِي مِنْ دُونِ اللهِ وَلَكِنْ كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُونَ .
‘কোন ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার কিতাব, হিকমত ও নবুওয়ত প্রাপ্তির পর একথা বলতে পারে না যে, ‘তোমরা আল্লাহকে পরিহার করে আমার বান্দা হয়ে যাও’ এটা সম্ভব নয়। বরং তারা বলবে যে, ‘তোমরা আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও, যাতে তোমরা কিতাব শিখাতে পার এবং তোমরা নিজেরাও পড়তে পার।’
16. সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৭৯।
এই আয়াতের একান্ত জরুরী শব্দাবলীর অর্থ ও মর্ম নিম্নে প্রদত্ত হলো,
بشر (বশর) শব্দের অর্থঃআল্লামা মজদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকুব ফিরোজাবাদী (মৃত্যু- ৮১৭ হিজরী) বলেন, বশর মানুষকে বলা হয়। এটি একবচন হোক কিংবা বহুবচন হোক, বহুবচনে ابشار আসে। بشر অর্থ মানুষের বাহ্যিক চামড়া। আর চামড়ার সাথে চামড়া মিলানোকে মুবাশারাত বলে। বাশারত ও বাশরী শব্দের অর্থ- সুসংবাদ দেয়া।
17. ক্বামূসুল মুহীত, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-২৯৮।
বশর, ইনসান ও আদমী- এই শব্দগুলোর মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান আছে। প্রকাশ্য ও বাহ্যিক চামড়া এবং মুখমন্ডলের দিক বিবেচনাকে বশর বলা হয়, হাকীকত বা প্রকৃত মূলতত্ত্বকে ইন্সান বলে এবং জাতি ও বংশ পরিক্রমাকে আদমী বলা হয়।
আল্লামা হুসাইন বিন মুহাম্মদ রাগেব ইস্পাহানী (মৃত্যু-৫০২ হিজরী) লিখেছেন, চামড়ার বাইরের অংশকে بَشْرَةٌ (বশরাহ) এবং চামড়ার ভেতরের অংশকে أدَمَةٌ (আদামাহ্) বলা হয়। মানবজাতিকে তাদের বাহ্যিক চামড়ার দিক বিবেচনায় বশর বলে। কেননা জীব-জন্তুর চামড়া বড় পশম যুক্ত ও বিভিন্ন রং বিশিষ্ট হয়ে থাকে। কোরআন মজিদে যখন মানবজাতির দেহ ও বাহ্যিক অবস্থার বিবেচনা করা হয় তখন বশর শব্দ ব্যবহার করা হয়।
মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন- وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاءِ بَشَرًا ‘তিনিই সে সত্তা যিনি পানি থেকে মানব আকৃতি সৃষ্টি করেছেন।’
18. সূরা ফোরকান, আয়াত-৫৪।
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন, إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ طِينٍ ‘নিশ্চয়ই আমি মাটি দ্বারা মানব সৃষ্টি করব।’
19. সূরা ছোয়াদ, আয়াতঃ ৭১।
কাফিররা যখন নবী-রাসূলগণের প্রতি হেয়পতিপন্ন করা উদ্দেশ্য হতো তখন তাঁদেরকে ‘বশর’ শব্দ বলে আখ্যায়িত করতো। যেমন,
إِنْ هَذَا إِلَّا سِحْرٌ يُؤْثَرُ . إِنْ هَذَا إِلَّا قَوْلُ الْبَشَرِ .
‘কাফির বললো, এ কোরআন তো আগের লোকদের থেকে প্রাপ্ত যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়। এ তো মানুষের কথা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
20. সূরা মুদ্দাস্সির, আয়াতঃ ২৪-২৫।
সূরা হুদে আছে,
مَا نَرَاكَ إِلَّا بَشَرًا مِثْلَنَا
‘আমরা তো আপনাকে আমাদের মতো একজন মানুষ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।’
21. সূরা হুদ, আয়াত-২৭
সূরা বনি ইসরাঈলে উল্লেখ আছে-
قَالُوا أَبَعَثَ اللهُ بَشَرًا رَسُولًا
‘কাফিররা বলতো, আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের মতো একজন মানুষকেই কি নবী করে পাঠালেন।’
22. সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত-৯৪
সূরা মারইয়ামে আছে, فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا
‘হযরত সৈয়্যদুনা জিবরাইল (عليه السلام) যখন হযরত মরিয়ম (عليه السلام)-এর নিকট মানবীয় আকৃতি ধারণ করে তাঁর সামনে আসলেন তখন বলেন।’
23. সূরা মরিয়ম, আয়াত-১৭
হযরত জিবরাইল (عليه السلام) বশরী আকৃতিতে আসলেন এখানে এটাই উদ্দেশ্য। আর মিসরের মহিলারা হঠাৎ যখন হযরত ইউসুফ (عليه السلام)কে আবরণ বিহীন দেখতে পেল, তৎক্ষাণাৎ বলে উঠল-
حَاشَ لِلهِ مَا هَذَا بَشَرًا
‘আল্লাহ'র শপথ! কখনোই নয়- এ ব্যক্তি মানব নয়’।
24. সূরা ইউসুফ, আয়াত-৩১
এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে, মিসরের মহিলারা হযরত ইউসুফ (عليه السلام)কে অনেক উঁচু পর্যায়ের মনে করে তাঁর সত্তাগত বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃত অবস্থাকে মানবোর্ধ্ব ধারণা পোষণ করেছিলেন। বাশারত, মুবাশারাতও উক্ত শব্দ থেকে নির্গত।
মানুষ যখন কোন সুসংবাদ শুনতে পায় তখন তার চেহারায় খুশীর আলামত ও চিহ্ন প্রস্ফুটিত হয়, সে জন্য তাকে বাশারত বলা হয়। মুবাশারাত মানে নারী-পুরুষ নিজেদের দেহের চামড়াকে পরস্পর মিলানো এবং একে অপরের মধ্যে সংযুক্ত ও মিলিত হওয়া। কোরআন মজিদ ও হাদীস শরীফে এ দু’টি শব্দের ব্যবহার এসেছে।
25. আল-মুফরাদাত, পৃষ্ঠা-৪৭-৪৮, মাকতাবা-ই ইরান।
ইমাম মুসলিম (رحمه الله تعالي ) সৈয়্যদুনা হযরত আবু হুরায়রা (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন, আমাকে সকল নবী-রাসূলগণের ওপর ছয়টি বিষয়ে ফযিলত দেয়া হয়েছেঃ-
১.جوامع الكلم অর্থাৎ- স্বল্প কথায় ব্যাপক অর্থবোধক শব্দাবলী দান করা হয়েছে।
২.رعب অর্থাৎ-আমাকে ভীতি-আতঙ্ক ও প্রভাব-প্রতিপত্তি দ্বারা সম্মানিত করা হয়েছে।
৩. যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আমার জন্য হালাল করা হয়েছে।
৪.সমগ্র জমিনকে আমার জন্যে পবিত্রকারী, তায়াম্মুমের উপকরণ এবং মসজিদে পরিণত করে দিয়েছেন।
৫.আমাকে সমগ্র সৃষ্টির প্রতি রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন এবং
৬. আমার ওপর সমগ্র নবীগণের আগমন সমাপ্ত করেছেন।
হযরত জাবের (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক নবীকে বিশেষতঃ তাঁর নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরণ করেছেন। কিন্তু আমাকে প্রত্যেক শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ তথা সমগ্র বিশ্বের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে।
26. মুসলিম শরীফ, খন্ড-১, হাদীস নং-৫২১, ৫২৩; জামে তিরমিযী, খন্ড-৩, হাদীস নং-১৫৫৯
কুরআনের আয়াত এবং হাদীস শরীফ একথার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا
‘আমি আপনাকে কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল লোকদের জন্য ভীতি প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদ দানকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি।
27. সূরাঃ সাবা, আয়াত-২৮
উপরিউক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীস শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, হুযূর মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) কে কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন। এর মর্মার্থ হচ্ছে, তাঁর শরীয়ত কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। তাই আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন,
إِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْإِسْلَامُ
অর্থাৎ-‘ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।’
28. সূরাঃ আলে-ইমরান, আয়াত-১৯
নিশ্চয়ই একথা স্পষ্ট বুঝা গেল যে, পূর্ববর্তী সকল ধর্ম নিজ নিজ যুগে পরিপূর্ণ কার্যকর ছিল। কিন্তু যখন ইসলাম ধর্ম কিয়ামত পর্যন্ত পরিপূর্ণ ধর্ম হিসেবে আল্লাহ্ তা‘আলা অনন্য বৈশিষ্ট্যের ঘোষণা দিলেন,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ الخ
‘আমি আজ তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি।’(যা আমার একমাত্র মনোনীত ধর্ম- ইসলাম)।
29. সূরা মায়েদা, আয়াত-৩
ইমাম আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর তাবারী (ইন্তিকাল ৩১০ হিজরী) (رحمه الله تعالي ) বলেছেন, উক্ত আয়াত হুযূর-এর বিদায় হজ্বের বছর আরাফাত দিবসে জুমাবার অবতীর্ণ হয়। এরপর হালাল-হারাম সম্পর্কিত আহকামের আর কোন আয়াত নাযিল হয়নি। বরং উক্ত আয়াত নাযিলের পর মাত্র ৯১দিন পর্যন্ত তিনি ইহজগতে তাশরীফ ফরমা ছিলেন।
ইবনে জারীর (رحمه الله تعالي ) থেকেও অনুরূপ বর্ণনা করা হয়েছে। 30. জামেউল বয়ান, খন্ড-৬, পৃষ্ঠা-১০৬, বৈরুত।
ইমাম তিরমিযী (رحمه الله تعالي ) (ইন্তিকাল-২৭৯) হযরত আম্মার ইবনে আবি আম্মার (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণনা করেন যে, প্রখ্যাত সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস (رضى الله تعالي عنه) এক ইহুদীর সামনে,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ الخ
আয়াতটি তিলাওয়াত করলে ইহুদী লোকটি বলল, উক্ত আয়াত যদি আমাদের ওপর নাযিল হতো, আমরা ওই দিন ঈদ উদযাপন করতাম। ইবনে আব্বাস (رضى الله تعالي عنه) বলেন, এই আয়াত আমাদের দুই ঈদের দিন নাযিল হয়েছে, জুমার দিন ও আরাফাতের দিন।
31. জামে তিরমিযী, খন্ড-১, হাদীস নং-৩০৫৫।
উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে, জুমার দিন মুসলমানদের জন্য ঈদ এবং আরাফাতের দিনও মুসলমানদের জন্য ঈদ। মিলাদুন্-নবী কে ঈদ মানতে যারা নারাজ তারা বলে, মুসলমানদের শুধু দু’টি ঈদ রয়েছে। তারা উক্ত বিশুদ্ধ হাদীসের প্রতি গভীর দৃষ্টিপাত করেনি। হ্যাঁ! অবশ্য একথা বলা যেতে পারে যে, ঈদ বলতে প্রসিদ্ধ দু’টি, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাকে বুঝায়। যার সম্পর্কে শরীয়তের নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। যেমন- ঈদুল ফিতরের দিন সকালে মিষ্টিমুখ করা হয়, এরপর ঈদগাহে দুই রাকাত নামায আদায় করা এবং পরে খুৎবা পাঠ করা ইত্যাদি। অনুরূপ ঈদুল আযহায় প্রথমে নামায পড়া এবং এরপর খুৎবা পাঠ করা হয়। অতঃপর সাহেবে নেসাব কুরবানী করা ইত্যাদি।
জুমার দিন হচ্ছে মুসলমানদের জমায়েত ও একত্রিত হওয়ার দিন। এ সময় জোহরের পরিবর্তে দু’রাকাত জুমার নামায ফরয এবং খুতবা পাঠ করা আবশ্যক। আরাফাতের দিন হাজীগণ ছাড়া অন্য লোকদের রোযা পালন করাতে অসংখ্য ফযিলত রয়েছে এবং দু’বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়ার ঘোষণাও রয়েছে।
ইমাম রাগেব ইস্পাহানী (رحمه الله تعالي ) (ইন্তিকাল-৫০২) বলেছেন, যা বারবার ফিরে আসে ওই দিনকে ঈদের দিন বলা হয়। শরীয়তে ফিতরের দিন ও কোবরনাীর দিন ঈদের জন্য নির্ধারিত। শরীয়তে এই দিনে খুশী উদযাপনের কথা বলা হয়েছে। যেমন- শরীয়ত প্রবক্তা সরকারে দো’আলম সতর্ক করে বলেছেন, ঈদের দিন হচ্ছে, পানাহার এবং মিলন ও আনন্দের দিন। অতএব ঈদ শব্দটি ওই সকল দিনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যেদিন কোন খুশী অর্জিত হয়। এর স্বপক্ষে কোরআনে কারীমের এই আয়াতটি দলিল
قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللهم رَبَّنَا أَنْزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا الخ .
‘হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (عليه السلام) আরয করলেন, হে আল্লাহ্! হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের প্রতি আসমান হতে খাঞ্চাভর্তি খাদ্য অবতরণ করুন। তা আমাদের পূর্বাপর সবার জন্যে আনন্দোৎসব হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে হবে একটি নিদর্শন।’
32. সূরা মায়েদা, আয়াতঃ ১১৪
এমনও বলা যায় যে, শরয়ী ও পারিভাষিক ঈদ হচ্ছে কেবল দু’টি- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। আর জুমা এবং আরাফার দিন হচ্ছে প্রথাগত ঈদ। কেননা যেদিন কোন প্রকারের নিয়ামত এবং খুশি-আনন্দের সুসংবাদ আসে সেদিনকে প্রথাগত ঈদ বলে।
সকল নিয়ামতের মূল হচ্ছে- সৈয়্যদুনা মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) এর পবিত্র সত্তা। অতএব যেদিন এ মহান নিয়ামত অর্জিত হয়েছে (অর্থাৎ- যেদিন তিনি ইহজগতে তাশরীফ এনেছেন) সেদিন সকল ঈদের সেরা ঈদ এবং এটাও প্রথাগত ঈদ, শরয়ী ঈদ নয়। বরং উদ্দেশ্য ও অন্তর—নিহিত মর্মের দিক দিয়ে প্রকৃত ঈদ হচ্ছে হুযূর মোস্তফা (ﷺ) এর সত্তা। সুতরাং মু’মিনদের জন্য শরয়ী ঈদের সাথে, প্রথাগত ঈদেও অত্যন্ত খুশী ও আনন্দ এবং অসংখ্য নিয়ামত নিহিত রয়েছে। এ কারণে মুসলমানেরা সর্বদা আক্বা ও মাওলা পরম দয়ালু নবী রাসূলে করীম (ﷺ)-এর ১২ই রবিউল আউয়াল বেলাদতের দিন ঈদে মিলাদুন্ নবী দিবস অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে উদযাপন করে আসছে।
প্রশ্ন হলো ১২ই রবিউল আউয়াল রহমেত ‘আলম (ﷺ)-এর বেলাদত শরীফ পালন করা হয়, অথচ অন্য বর্ণনা মতে একই তারিখে তাঁর ওফাত শরীফও। অতএব তোমরা ওই দিন রাসূল (ﷺ)-এর জন্মোৎসব পালন করে থাক অথচ প্রথাগত নিয়ামনুযায়ী উক্ত তারিখে তোমরা শোক দিবস পালন কর না কেন?
উক্ত প্রশ্নের শরয়ী উত্তর হলো শরীয়ত আমাদেরকে নিয়ামত প্রাপ্তির ওপর আনন্দ প্রকাশের এবং তা বয়ান করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর কোন নিয়ামত চলে যাওয়াতে শোক প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। প্রথাগত ও যুক্তিসংগত উত্তর হলো আমরা দুঃখ-বেদনা ও শোক কেন প্রকাশ করব?
হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করেন, حياتى خيرلكم ومماتى خيرلكم অর্থাৎ- ‘আমার জীবদ্দশায় তোমাদের যেমন মঙ্গল নিহিত আছে আমার ইন্তিকালেও অনুরূপ তোমাদের মঙ্গল নিহিত রয়েছে।’ তিনি ইহকালে যেভাবে জীবিত ছিলেন তেমনি বর্তমানেও জীবিত আছেন। প্রথমে কষ্ট জগত পৃথিবীতে জীবিত ছিলেন, এখন প্রতিদান জগত পরকালে ও জান্নাতে জীবিত আছেন। পৃথিবীর জীবনে হুযূর মোস্তফা (ﷺ) পথভ্রষ্ট লোকদের হিদায়ত ও সঠিক পথের নির্দেশ এবং শিক্ষা-দীক্ষা ও ধর্ম-কর্ম প্রচারণার দায়িত্ব পালন করেন; বর্তমানে গুনাহগার পাপী ও অবাধ্য লোকদের মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করছেন। তাঁর নিকট উম্মতের আমল পেশ করা হয়। তখন নেক ও পূণ্য আমলের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার প্রশংসা করেন এবং পাপ ও মন্দ আমলের কারণে তিনি উম্মতের জন্য মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি যিয়ারতকারীদের সালামের জবাব প্রদান করেন, যেমনি পার্থিব জীবনে সালাম প্রদানকারীদের সালামের জবাব দিতেন। শাফাআত তথা সুপারিশ প্রার্থনাকারীদের জন্য সুপারিশ করেন। আল্লাহ্ তা‘আলার তাজালিয়াত বা জ্যোর্তিময় আলোকরশ্মির দর্শন ও পর্যবেক্ষণে সদা নিমগ্ন থাকেন। لايفارق حضرة الله تعالٰى ابدًا তাঁর উচ্চ মর্যাদা ও সুমহান সম্মান-প্রতিপত্তি প্রতি মুহূর্তে উন্নত হচ্ছে। এতে চিন্তিত ও শোক প্রকাশ করার কী কারণ থাকতে পারে?
হুযূর স্বয়ং একথা যখন বলেছেন, "আমার ইহকাল এবং পরকাল উভয়ই তোমাদের জন্য কল্যাণকর।"
33. আল-ওয়াফা বে-আহ্ওয়ালিল মুস্তফা , খন্ড-১০, পৃষ্ঠা-৮১০।
___________________________
[টিকা সংযোজনঃ মাসুম বিল্লাহ সানি, উক্ত হাদিস ভিন্ন সনদে বর্ণিত সূত্রসমূহঃ
১) আনাস বিন মালিক (রাঃ)
২) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রাঃ)
৩) আউস ইবনে আউস (রাঃ)
৪) বকর ইবনে আব্দুল্লাহ আল-মাজিনী (রহঃ)
তথ্যসূত্রঃ
► ইমাম ইবনে সা'দঃ তাবাকাত-আল-কুবরাতে (2ঃ 194)
► ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাব আল-মাজরুহিন, ২/160।
► ইমাম কাজী আয়াজঃ আশ-শিফা (1ঃ19)
► ইমাম বাজ্জারঃ আল-মুসনাদঃ1/397 ঃ ইবনে মাসউদের হাদীস থেকে সহীহ সনদে।
► ইমাম শাশীঃ আল মুসনাদঃ খন্ড 2, পৃষ্ঠাঃ 253, হাদীসঃ 826
► ইমাম জুহদামীঃ ফজল আস সালাহ আন নাবী (ﷺ)
ঃ 1, পৃষ্ঠাঃ 38-39, হাদীসঃ 25-26
► ইমাম সুবকীঃ আস শিফাউস-সিকাম ফী জিয়রতে খায়রুল আনম। [সর্বোত্তম সৃষ্টির জিয়ারতে রোগীদের রোগ নিরাময়], যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, এটিঃ
১) বকর ইবনে আব্দুল্লাহ আল-মাজিনী এবং
২) ইবনে আল-জাওযী তা বকরের মাধ্যমে এবং
৩) আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) সূত্রেও বর্ণিত।
► ইমাম দায়লামিঃ মুসনাদ আল ফিরদাউসঃ 1, পৃষ্ঠাঃ 183, হাদীসঃ 686
► ইমাম ইবনে আল-জাওজীঃ আল-ওয়াফায়ঃ আউস ইবনে আউস (রাঃ) সূত্রে।
► ইমাম ইবনে কাসীরঃ তফসীরে ইবনে কাসীরঃ 3 ঃ পৃ 516
► ইমাম ইবনে হাজর আসকালানীঃ ফতহুল বারী শরহে বুখারীঃ 10ঃ 415,
► ইমাম মুনযিরীঃ আত তরগিব ওয়া আল-তরহিব 3ঃ 343,
► মুসনাদ আল-হারিস,
► ইমাম আবু হাতিমঃ আল-জারহ ওয়াত তা'আদিল, 26/64,
► ইমাম হাফিজ আল-হায়তামিঃ মাজমা আল-জাওয়ায়েদঃ2/884 (# 953)
► ইমাম ইবনুল ইরাকীঃ তারহুত-তাথরীব ফী শারহে-তাকরীব (3ঃ 297)
► ইমাম ইবনে হাজর আসকালানীঃ তাকরীব ওয়াহেদ তাহাদিব, 1/478
► ইমাম ইবনে হাজর আল-আসকালানী মাতালিব আল-আলিয়াঃ 4/22,
► ইমাম যাহাবীঃ আল মুগনি, 1/571 (# 3793) (নুরুদ্দীন এর ৩য় সংস্করণে)
► ইমাম যাহাবীঃ সিয়ার আল আলম আন নুবালাঃ 17, পৃষ্ঠাঃ 106
► ইমাম সুয়ূতীঃ খাসায়েসুল-কুবরা, 2/281
► ইমাম সুয়ূতীঃ মানাহিল আল-সাফা ফী তাখরিয় আহাদীদ আল-শিফাঃ পৃ .3 (# 8)
► ইমাম মিয্যিঃ তাহযীব আল কামালঃ 14, পৃষ্ঠাঃ 558
► ইমাম জুরকানিঃ শরহ্ আল মাওয়াহিবঃ 7
পৃষ্ঠাঃ 373
► ইমাম আল-মানাভি, ফয়জুল কাদির, 3/401
► ইমাম হিন্দিঃ কাঞ্জুল উম্মালঃ 31903-31904
► শাইখ শুয়ায়ব আল-আরনাউতঃ তাহরির আল-তাহরীবঃ 2/379 (# 4160) এ আবু দাউদ, আহমাদ ইবনে হাম্বল, ইবনে মাঈন, আন-নাসায়ী ও ইবনে সা'দের থেকে।
কিতাব আল-হজ (# 179)
► আল বুরকানীঃ তরিক আল-দাওরী, ২/370; পৃ .317;
► শায়খ আব্দুল্লাহ আল-তালিদীঃ তাহযিব আল খাসায়েসুল কুবরাঃ পৃঃ 458-459 (# 694)]
___________________________
মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ শফি দেওবন্দি (ইন্তিকাল-১৩৯৬ হিজরী) লিখেছেন, ‘খ্রীস্টানরা হযরত ঈসা (عليه السلام)-এর জন্ম দিবসকে ঈদে মিলাদ পালন করে। তাদের দেখে কিছু মুসলমান রাসূলে করীম-এর জন্মদিনকে ঈদে মিলাদুন্নবী নামে আরেকটি ঈদ উদযাপন করছে। ওই দিন বাজারে মাঠে-ময়দানে জুলুস বের করে এবং এতে বিভিন্ন প্রকারের অযথা ও অপ্রত্যাশিত কর্মকান্ডকে ও রাতে আলোকসজ্জা করাকে ইবাদত মনে করছে। যার কোন মূলভিত্তি ও প্রমাণ সাহাবা-ই কিরাম, তাবেঈন এবং পরবর্তী বুযূর্গানে দ্বীনের আমলে ও কর্মকান্ডে পাওয়া যায়নি।’
34. মুআরেফুল কোরআন, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৫, করাচি থেকে প্রকাশিত।
সাইয়েদ আবুল আ‘লা মওদূদী (মৃত্যু ১৩৯৩ হিজরী) এক সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নোত্তরে বলেন, সবার আগে আপনাকে একথা জানতে চাওয়া উচিত ছিল যে, ইসলামে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)-এর অস্তিত্ব বিদ্যমান আছে কিনা? ওই জশন যাকে ইসলামের হিদায়তকারী ’র প্রতি সম্বোধন করা হয়, বাস্তবিকপক্ষে ওটা ইসলামী উৎসবই নয়, এর কোন প্রমাণ ইসলামে পাওয়া যায়নি। এমনকি সাহাবা-ই কিরামগণও এটি পালন করেন নি।
আফসোস! পরিতাপের বিষয় উক্ত জশন ও উৎসবকে দেওয়ালী বা দীপমালা ও টোপর এর আকৃতি দেয়া হয়েছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় করা হয়। (দেওয়ালী-লাইটিং বা আলোকসজ্জা আর টোপর মুক্তাগাঁথা টুপি যা বর-কনের মাথায় পরানো হয়)।
35. হাপত্ রোযাহ্ কিন্দিল, ৩রা জুলাই-১৯৬৬ইং।
সাধারণত মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাবের অনুসারী এবং দেওবন্দী ওলামারা একথা বলে প্রভাবিত করে যে, ১২ই রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের তরিকা এবং তাদের নব আবিষ্কৃত ও উদ্ভাবিত প্রথা। যা তাদের বর্ণনা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় এবং হচ্ছে। কিন্তু একথা আদৌ সত্য নয়। বরং বাস্তবতা হচ্ছে মুসলমানগণ সব সময় রবিউল আউয়াল মাসে রাসূল (ﷺ)-এর জন্মোৎসব উপলক্ষে খুশী ও ঈদ উদযাপন করে আসছে।
আল্লামা আহমদ কুস্তলানী (رحمه الله تعالي ) (ইন্তিকাল ৯১১ হিজরী) লিখেছেন, সর্বদা মুসলমানগণ রাসূল পাক (ﷺ)-এর মিলাদের মাসে মাহফিলসমূহ উদযাপন করে আসছেন এবং দাওয়াত দেন। তারা এ মাসের রাতগুলোতে বিভিন্ন প্রকারের দান-সদকা এবং আনন্দ উৎসব পালন করতেন। পূণ্যের কাজ অধিকহারে করতেন। রাসূল পাক (ﷺ)-এর মিলাদ সম্পর্কীয় আলোচনা করতেন, যার বরকতে তাদের ওপর আল্লাহ'র ফযল ও অনুগ্রহ অধিকহারে বর্ষিত হতো।
মিলাদ শরীফ উদযাপন করার ফলে এই অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে যে, এতে মানুষের সৎ উদ্দেশ্য পূরণ হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা ওই ব্যক্তির ওপর স্বীয় রহমত নাযিল করেন, যিনি পবিত্র বরকতময় বেলাদত শরীফের রাতে ঈদ পালন করেন।
36. আল মাওয়াহিবুল লুদুনিয়া, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৭৮, দারুল কুতুব লাইব্রেরী, বৈরুত।
হযরত আল্লামা কুসতলানী (رحمه الله تعالي ) আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ আল-জয্রী (ইন্তিকাল ৮৩৩ হিজরী) (رحمه الله تعالي )-এর উদ্ধৃতি উল্লেখ পূর্বক বর্ণনা করেন যে, আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল বাকী যুরকানী মালিকী (ইন্তিকাল ১১৬৬ হিজরী) এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন, এই কাজে কতিপয় দুনিয়া পিপাসু লোকজন অসৎকর্ম অন্তভুর্ক্ত করে দিয়েছে। আল্লামা ইবনুল্হাজ্ব মালিকী ‘মদখল’ গ্রন্থে এর খন্ডন করেছেন এবং স্পষ্ট ভাষায় ব্যাখ্যা করে বলেন, এই মাসে পূণ্যের কাজ, সদকা-খায়রাত, ইসালে সওয়াব, খানা-মেজবানী ও যিয়াফত ইত্যাদি অধিকহারে করা উচিত। এটাই মিলাদ শরীফ পালনের উত্তম পন্থা।
আল্লামা ইবনে কাছীর (رحمه الله تعالي ) স্বীয় তারিখ গ্রন্থে লিখেছেন যে, ইরবিলের বাদশাহ কিং মুজাফ্ফর আবু সাঈদ (ইন্তিকাল ৬৩০ হিজরী) সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করেন। তিনি অত্যন্ত সাহসী, সৎ, গভীর জ্ঞানী ও পূণ্যবান বাদশাহ ছিলেন। তিনি তিনশত দিরহাম ব্যয় করে অত্যন্ত জাঁকজমক ও শানদার ভাবে মিলাদুন্নবী মাহফিল ও মেহমান নাওয়াযীর ব্যবস্থা করতেন।
37. শরহে আল-মাওয়াহিবুল লুদনিয়্যাহ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১৩৯, দারুল মা‘আরিফ লাইব্রেরী, বৈরুত।
আল্লামা সুয়ূতী (رحمه الله تعالي ) মিলাদুন্নবী কে বিদ‘আতে মুস্তাহিব্বাহ্ ও হাসনা বলেছেন। আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمه الله تعالي ) এবং হযরত আল্লামা গোলাম রাসূল সাঈদী হানাফী (رحمه الله تعالي ) মুসলিম শরীফ ৩য় খন্ড বিস্তারিতভাবে মিলাদুন্নবী পালনের বর্ণনা করেছেন। তিব্য়ানুল কোরআন ৩য় খন্ড ৬৮ পৃষ্ঠায় لايحب الله পারায় দলিল ও তথ্যসহ বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অন্যান্য হানাফী মাযহাবের ওলামায়ে কিরাম কোরআন ও সুন্নাহ থেকে মিলাদুন্নবী এর স্বপক্ষে যে দলীল উপস্থাপন করেছেন এবং বিরোধী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর দলিল প্রমাণাদিসহ বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। কোনো কোনো শহরে মিলাদুন্নবীর জুলুসে গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র এবং শরীয়ত বিরোধী কর্মকান্ড করে থাকে। আমাদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ওলামায়ে কিরাম সব সময় এগুলো থেকে নিষেধ করে আসছেন। অধিকাংশ শহরে সম্পূর্ণ পূত-পবিত্রতার সঙ্গে শরীয়তসম্মত জুলুস পালন করা হয়।
আল্লামা মুহাদ্দিস গোলাম রাসূল সাঈদী (رحمه الله تعالي ) বলেছেন, আমি দু’বার লন্ডন গিয়েছিলাম এবং আমি সেখানে উক্ত মাসে বিভিন্ন মাহফিলে অংশগ্রহণ করি। এতে শুধু হামদ-না’ত শরীফ পাঠ ও যিকির-আযকার ব্যতীত অন্য কোন প্রকারের শরীয়ত বিরোধী কোন কাজ করতে দেখিনি। জুলুসের আয়োজনকারী সকল সদস্য জামাআতের সাথে নামায আদায় করেন এবং অতঃপর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে নবী কারীম (ﷺ) রাউফুর রাহীম এর বিভিন্ন ফযিলত ও গুণগান এবং মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
প্রথমে দেওবন্দ ও জামায়াতে ইসলামীর আলিমরা ঈদে মিলাদুন্নবী এবং জুলুস উদযাপনের ঘোর বিরোধী ছিলেন কিন্তু আজ হতে ১৫,২০ বছর ধরে দেওবন্দ ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় ওলামারাও ঈদে মিলাদুন্নবী-এর জুলুস বের করেছেন এবং এতে শরীক হচ্ছেন।
সিপাহ-ই সাহাবা সংগঠনের শীর্ষ ওলামায়ে কিরাম হযরত আবু বকর (رضى الله تعالي عنه), হযরত ওমর (رضى الله تعالي عنه) এবং হযরত ওসমান (رضى الله تعالي عنه)- এই খলিফাত্রয়ের জন্মদিবস পালন করে আসছে। উক্ত দিবসগুলোতে তারা জুলুস বের করে এবং সরকারের কাছে ওই দিবসগুলোতে সরকারী ছুটিরও দাবী করছেন।
মুফতি মুহাম্মদ শফি দেওবন্দি ঈদে মিলাদুন্নবী খন্ডন করতে গিয়ে লিখেছেন, কোথাও জাতির শীর্ষ ব্যক্তির জন্ম-মৃত্যু কিংবা সিংহাসন আরোহন দিবস পালন করা হয়। কোথাও কোন রাষ্ট্র বা শহরের স্বাধীনতা দিবস কিংবা ঐতিহাসিক ঘটনা দিবস পালন করা হয়। যার সারগর্ভ কথা হচ্ছে, এতে ব্যক্তি বিশেষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বৈ আর কিছু নয়। ইসলাম ব্যক্তি পূজার পক্ষে নয়। ইসলাম অন্ধকার যুগের কুপ্রথাসমূহ এবং ব্যক্তি বিশেষের স্মরণ বাদ দিয়ে মৌলিক ও লক্ষ্যণীয় বিষয়াবলী স্মরণের মৌলিক নিয়ম-নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
38. মুআরেফুল কোরআন, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৪, করাচি থেকে মুদ্রিত।
কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, দেওবন্দি ওলামারা শুধু সাহাবা দিবস পালন করছেন না বরং তারা তাদের আকাবির শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কিরাম যেমন- শায়খ আশরাফ আলী থানভী, শায়খ শাব্বির আহমদ ওসমানী প্রমূখ আলিমদেরও জন্ম-মৃত্যু দিবস পালন করছেন এবং দেওবন্দ মাদ্রাসার শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন করা হয়েছে। এখানকার নামকরা হাটহাজারী খারেজী মাদ্রাসার শতবর্ষ পূর্তি পালন করা হয়েছে। যা এক নব আবিষ্কার তথা বিদ‘আত। আমরা প্রথমে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)-এর জুলুসের ব্যাপারে দেওবন্দি শীর্ষ ওলামাদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে উদ্ধৃতিসহ আলোচনা করব। অতঃপর ‘সাহাবা দিবস’ এবং ‘শীর্ষ ওলামায়ে দেওবন্দ দিবস’ তাদের ওলামায়ে কিরামদের পালন করা সম্পর্কে আলোচনা করব।
জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র ‘রোজনামা-ই জেসারত’ পত্রিকায় লিখা হয়েছে যে, পাকিস্তান কওমী ইত্তেহাদের মহাব্যবস্থাপক মাওলানা মুফতি মাহমুদ বলেছেন, দেশে ইসলামী আইনের পাশাপাশি কওমী ইত্তেহাদ যে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করেছে, তার জন্য তারা অবিরাম ও ধারাবাহিক সংগ্রাম করেছে। তারা আজ নীলা গম্বুজ মসজিদে জোহরের নামাযের পর কওমী ইত্তেহাদের নেতৃত্বে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)-এর আজিমুশ্শান জুলুসে উপস্থিত অংশগ্রহণকারী সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন। সে সময় কওমী ইত্তেহাদের সহ-সভাপতি নবাবজাদা নসরুল্লাহ খাঁন, পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর মিয়া মুহাম্মদ তোফায়েল ওফাতী, অর্থমন্ত্রী ওসায়েল চৌধুরী, রহমত ইলাহী এবং মুসলিম লীগ ৬ গ্রুপের সেক্রেটারী মালিক মুহাম্মদ কাসিমও বক্তৃতা করেন। বক্তৃতা শেষে মুফতি মাহমুদ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নীলা গম্বুজ মসজিদে নামায আদায় করেন। এরপর ওই সকল নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে এক বিশাল জুলুস বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে মসজিদে শোহাদায় গিয়ে শেষ হয়। সেখানে জুলুসে অংশগ্রহণকারী সবাই মুফতি মাহমুদের ইমামতিতে মাগরিবের নামায আদায় করেন।
39. রোজনামা জাসারত, ১১ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯ ইং
জামায়াতে ইসলামী ও দেওবন্দি সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ‘কওমী ইত্তেহাদ’-এর শাসনামলে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনকালে ‘রোজনামা জঙ্গ’ পত্রিকার একটি সংবাদ পর্যালোচনা করে দেখুন,
‘আজ জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) অত্যন্ত জাঁকঝমকপূর্ণভাবে পালিত হবে। অনুষ্ঠানের শুরুতে ২১ বার তোপ ধ্বনির মাধ্যমে গার্ড অব অনার বা রাজকীয় সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। গভর্নরের সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। গোটা শহর জুড়ে জুলুস বের করা হবে। তশতর পার্ক, আরামবাগ এবং আরো অন্যান্য এলাকায় সমাবেশ হবে।
40. রোজনামা জঙ্গ, ৯ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৭৯ইং, করাচি।
‘রোজনামা হুর্রিয়্যাহ’ পত্রিকার আরো একটি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখুন, ইসলামী কানুনসমূহের ভাল-মন্দ নিরীক্ষা করার পর কওমী ইত্তিহাদের আন্দোলন প্রতিষ্ঠার মহান উদ্দেশ্য সফল হবে। মুফতি মাহমুদ বলেন, সমাজে পুরোপুরিভাবে ইসলামী কালচার ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হবে। মুফতি মাহমুদের নেতৃত্বে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন উপলক্ষে এক আজিমুশ্শান জুলুস বের হবে।
41. রোজনামা হুর্বিয়্যত, ১লা ফেব্রুয়ারী, ১৯৭৯ইং
রোজনামা মশরিক-এর একটি সংবাদ পর্যালোচনা করে দেখুন (লাহোর ৯ই ফেব্রুয়ারী পি পি আই) ‘কওমী ইত্তেহাদের সভাপতি মওলানা মুফতি মাহমুদ এবং সহ-সভাপতি নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান আগামীকাল ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)-এর জুলুসে নেতৃত্ব দিবেন। উক্ত জুলুস নীলা গম্বুজ থেকে বের হয়ে শুহাদা মসজিদে গিয়ে শেষ হবে।’
42. রোজনামায়ে হুর্রিয়্যাত, ১লা ফেব্রুয়ারী, ১৯৭৯ইং
জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মওলানা মুহাম্মদ আজমল খান ‘খোলাফা-ই রাশেদীন দিবস’কে সরকারীভাবে উদযাপন করার দাবী জানান।
43. রোজনামা জঙ্গ, ২০ জুন, ১৯৯২ইং, লাহোর।
সিপাহ-ই সাহাবা-এর মহাপরিচালক জিয়াউর রহমান ফারূকী ঘোষণা করেন যে, মুহররম মাসের প্রথম তারিখ ফারূকে আযম হযরত ওমর (رضى الله تعالي عنه)-এর শাহাদত দিবস পালন করা হবে এবং জুলুস বের করা হবে।
44. নাওয়ায়ে ওয়াক্ত, ১৭ জুন, ১৯৯৪ ইং, লাহোর।
সিপাহ-ই সাহাবা পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ হাকিম আলী ১লা মুহররমুল হারামকে হযরত ফারূকে আযম ওমর (رضى الله تعالي عنه)-এর শাহাদত দিবস উপলক্ষে সরকারী ছুটি ঘোষণার দাবী জানিয়ে বলেন, আজ ঈদের দিন।
45. নওয়ায়ে ওয়াক্ত, ২৩ ফেব্রুয়ারী-১৯৯৫ ইং, লাহোর
সিপাহ-ই সাহাবা’র তত্ত্বাবধানে গত ২২শে ফেব্রুয়ারী গোপুর রাজ্যে মওলানা হক্ব নাওয়ায জিঙ্গয়ী শহীদ-এর শাহাদত দিবস অত্যন্ত ভাবগাম্ভির্য ও মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয়। সিপাহ-ই সাহাবা জঙ্গ-এর তত্ত্বাবধানে হক্ব নাওয়ায শহীদ মহল্লার ইহ্তিরার পার্কে এক ঐতিহাসিক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
কনফারেন্সে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিপাহ-ই সাহাবার অন্যতম শীর্ষ তত্ত্বাবধায়ক মওলানা মুহাম্মদ আযম তারেক এম এন আই বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারী হযরত জঙ্গুয়ী শহীদের শাহাদত দিবস এবং ২১ রমযানুল মুবারক শের-ই খোদা হযরত আলী (رضى الله تعالي عنه)-এর শাহাদত দিবস।
46. নওয়ায়ে ওয়াক্ত ২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৯২ইং, লাহোর
সিপাহ-ই সাহাবা’র প্রতিষ্ঠাতা মওলানা হক্ব নওয়ায জঙ্গুয়ীর দ্বিতীয় বার্ষিকীতে ২৩ ফেব্রুয়ারীকে পাকিস্তানসহ অন্যান্য রাষ্ট্রে মওলানা জঙ্গুয়ী স্মরণে সিপাহ-ই সাহাবা সভা, সেমিনারসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান পালন করবে এবং তাদের সকল কেন্দ্র ও অফিসগুলোতে সকাল ৯টায় ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোরআন খতম হবে। জঙ্গ-এ মওলানা জঙ্গুয়ীর মসজিদে খতমে কোরআনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান আরম্ভ হবে এবং পরে আজিমুশ্শান মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।
47.[নওয়ায়ে ওয়াক্ত ২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৯২ইং, লাহোর]
হযরত ফারূকে আযম (رضى الله تعالي عنه)-এর শাহাদত দিবসে সরকারী বন্ধ ঘোষণা না করার বিরুদ্ধে সিপাহ-ই সাহাবা’র বিক্ষোভ প্রদর্শন।
করাচিতে মুহাম্মদ আহমদ মাদানী বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, ‘খোলাফা-ই রাশেদীন-এর শাহাদত দিবস সরকারী ব্যবস্থাপনায় পালন না করার বিষয় বোধগম্য নয়’। সিপাহ-ই সাহাবা’র তত্ত্বাবধানে হযরত ফারূকে আযম (رضى الله تعالي عنه)-এর শাহাদত দিবস অত্যন্ত জাঁকজমক ও মর্যাদাপূর্ণভাবে পালিত হয়। এ ধারাবাহিকতায় জামিয়া সিদ্দীকে আকবর নাগন সুরঙ্গীতে সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিভাগীয় প্রধান আল্লামা মুহাম্মদ ওয়াইসী হযরত ওমর ফারূক (رضى الله تعالي عنه) এর সার্বিক অবদান ও কর্মকান্ড সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং ফারূকে আযম (رضى الله تعالي عنه)-এর শাহাদত দিবস উপলক্ষে সরকারী ছুটি ঘোষণা না করার বিরুদ্ধে সিপাহ-ই সাহাবার নেতৃত্বে যুক্তি ও প্রমাণ সাপেক্ষে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভকারী নেতৃবৃন্দ একথার ওপর অঙ্গীকার করেছিলেন যে, খোলাফা-ই রাশেদীন দিবস সরকারী তত্ত্বাবধানে পালন করা, ওই দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা এবং সাহাবাই- রাসূল-এর শানের বিরুদ্ধে অপমান সূচক বক্তব্যের প্রতিরোধ করা, নেতৃবৃন্দের নৈতিক চরিত্র এবং শ্রমিকদের দাবী-দাওয়া সম্বলিত বিশদ আলোচনা এর অন্তভুর্ক্ত ছিল। আঞ্চলিক পরিষদের সেক্রেটারী জেনারেল মওলানা মুহাম্মদ আহমদ মাদানী বিক্ষোভকারীদের সম্বোধন করে বলেন, দেশে জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনীতিবিদ ও নেতৃবৃন্দের দিবস পালন করা হয়। কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রে খোলাফা-ই রাশেদীন দিবস পালন না করা এবং উক্ত দিন ছুটি ঘোষণা না করার কারণ বোধগম্য নয়।
এ সুবাদে একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে মওলানা আলী শের-ই হায়দারী, মওলানা আজম তারেক, হাফিয আহমদ বক্স, এডভোকেট মওলানা আবদুল গফুর নদীম এবং আরো অন্যান্যদের মুক্তির দাবী করা হয়। এমতাবস্থায় সিপাহ-ই সাহাবা স্টুডেন্ট করাচি বিভাগের জেনারেল সেক্রেটারী হাফিয সুফিয়ান আইয়্যাসি, সফিকুর রহমান, আবু আম্মার, জি.আই কাদের এবং এম.আই কাশ্মিরী প্রমুখ বিক্ষোভকারী ছাত্রদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও বিক্ষোভ করার জন্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন।
48.রোজনামা জঙ্গ, ১৫ মে- ১৯৯৭ইং, করাচি।
হাকীমুল উম্মতের আশরাফি দিবসঃ
হাকীমুল উম্মত মওলানা আশরাফ আলী থানভীর স্মরণীয় দশ কর্মদিবস তাঁর কর্ম দক্ষতার স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হবে। ‘সুন্নী মজলিসে আমল পাকিস্তান’-এর নেতা মওলানা মুফতি মুহাম্মদ নঈম বলেছেন, মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর শিক্ষা বিষয়ক কিতাব রচনায় এবং সংস্কারমূলক কর্মকান্ড আমাদের জন্য পথনির্দেশক। যা কোন আশেকে রাসূল, পাকিস্তান প্রেমিক তথা আমাদের দেশ (বাংলাদেশ) প্রেমিক কখনো ভুলতে পারবে না। তিনি সমবেত জন সাধারণকে লক্ষ্য করে আরো বলেন, বুযূর্গানে দ্বীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক দ্বিপ্রহরের সূর্যের চেয়েও উজ্জ্বল। উক্ত সমাবেশে ‘সুন্নী মজলিসে আমল পাকিস্তান’-এর তত্ত্বাবধানে ‘হাকিমুল উম্মতের দশ কর্মদিবস’ পালনের ঘোষণা করতে গিয়ে মুফতি মুহাম্মদ নাঈম বলেন, করাচির প্রতিটি জেলায় মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর স্মরণে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
49. রোজনামা জঙ্গ করাচি, ৩০ জুন-১৯৯৭ইং।
‘সুন্নী মজলিসে আমল পাকিস্তান’ করাচির নেতা মুফতি মওলানা মুহাম্মদ নাঈম জামে মসজিদ সিদ্দীক আওরঙ্গী টাউনে হাকিমুল উম্মতের দশ কর্মদিবস উপলক্ষে আয়োজিত মাহফিলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, আমাদের উচিৎ হাকিমুল উম্মত মওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত কিতাবসমূহ পাঠ করে নিজেদের জীবনের পরিবর্তন সাধিত করা। তিনি আরো বলেন, আমাদের মাযহাবে কারো ব্যাপারে যাচাই-বাছাই ও প্রকৃত প্রমাণ ছাড়া কোন কথা বলার অনুমতি দেয়নি। তাই মিথ্যা, বানোয়াট ধোঁকা ও গীবত থেকে বেঁচে থাকা একান্ত প্রয়োজন। সমাবেশে মওলানা গোলাম রাসূল, মওলানা আনছুর মাহমুদ ও মাওলানা মুহাম্মদ সিদ্দীকও বক্তব্য রাখেন।
50. রোজনামা জঙ্গ, ৪ জুলাই-১৯৯৭ ইং, করাচি।
তিবয়ানুল কোরআনের গ্রন্থকার মুহাদ্দিসে যমান মুহাক্কিকে দওরান আল্লামা গোলাম রাসূল সাঈদী (رحمه الله تعالي ) বলেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন যে- ‘যদি কেউ অধিক ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হয়ে কোন হারাম বস্তু ভক্ষণ করে। পক্ষান্তরে সে উক্ত খাবারের প্রতি আগ্রহী নয়। নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।’
51. সূরা মায়েদা, তিব্য়ানুল কোরআন, আল্লামা গোলাম রাসূল সাঈদী (رحمة الله), খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৭২।
উপরোক্ত আয়াতের অর্থ ও শানে নুযূলঃ উক্ত আয়াতের মর্মার্থ হচ্ছে, হে আল্লাহর মহান রাসূল! সাহাবা-ই কিরামরা আপনাকে প্রশ্ন করছে যে, তাদের জন্য কোন শ্রেণির প্রাণী হালাল ? তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে হাবীব! আপনি বলে দিন, সে সকল প্রাণী আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, তা তোমরা জবাই করে খেতে পারবে এবং তোমাদের শিকারী জন্তুগুলো শিকার করে, যে সকল জন্তু আহত অবস্থায় তোমাদের জন্য নিয়ে আসে, তাও তোমরা খেতে পারবে।
উক্ত আয়াতে এটাও ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের জন্য সকল প্রকারের পবিত্র খাদ্য হালাল করা হয়েছে। তাইয়্যেবাত বা পবিত্র বলতে বুঝায় যে, যাকে সুষ্ঠু স্বভাবসম্পন্ন ব্যক্তি ঘৃণা করে না এবং ঘৃণিত ও হিংস্র না হবে। এটা ইমাম বলখী (رحمه الله تعالي ) এর উক্তিও।
অন্য একটি বর্ণনা মতে, ওই সকল বস্তু যার সম্পর্কে হারামের কোন দলীল অবতীর্ণ হয়নি এবং ইজমা ও কিয়াসের মাধ্যমেও যা হারাম প্রমাণিত হয়নি। প্রথমোক্ত উক্তি বর্ণনার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সুস্বাদু বস্তু এবং দ্বিতীয় উক্তির মর্মার্থ হচ্ছে, হালাল বস্তুসমূহ। এমনও বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা হালাল এবং সুস্বাদু বস্তু উদ্দেশ্য।
মওলুদ শরীফ তথা হুযূর (ﷺ) এর জন্মোৎসব কী বিদআত? কোরআন-হাদীসে এর কোন প্রমাণ আছে কী? মানবজাতির গৌরব বিশ্ব জগতের সরদার সরওয়ারে ‘আলম হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর বেলাদত শরীফের যিকির ইহকাল ও পরকালের মঙ্গল ও কল্যাণের অন্যতম উসিলা।
52. রেসালা হাফত্ মাসআলা, হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (رحمة الله)।
কেননা হুযূর আক্বদাস (ﷺ) হচ্ছেন, আল্লাহর নিয়ামত। কোরআনে কারীম(ﷺ) তাঁর নাম নিয়ামতুল্লাহ (نعمة الله) আখ্যায়িত করেছে। মহান আল্লাহর বাণী, اِنَّ الَّذِينَ بَدَّلُوا نِعْمَتَ اللهِ كُفْرًا আয়াতের তাফসীরে হযরত সৈয়্যদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضى الله تعالي عنه) বলেন, নিয়ামাতুল্লাহ (نعمة الله) হলেন- মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) । সুতরাং তাঁর শুভাগমনের আলোচনা করা পক্ষান্তরে আল্লাহ তা‘আলার আদেশ পালন এবং তাঁর হুকুম মান্য করা। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ
‘আপনার পালনকর্তার নিয়ামতের খুব বেশি চর্চা করো।
53. সূরা আদ-দোহা, আয়াত-১১।
হুযূর সৈয়্যদে ‘আলম (ﷺ) হচ্ছেন সকল নিয়ামতের মধ্যে সর্বোত্তম নিয়ামত। তাঁর শুভাগমনের বদৌলতে দুনিয়া, আখিরাত, কবর, হাশর, বরযখ, এমনকি প্রতিটি সময়, কাল ও মুহূর্ত প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নিয়ামত এবং আমাদের শরীরের সূক্ষ্ম পশম ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উপকৃত হচ্ছে এবং হবে।
আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে তাঁর নিয়ামতরাজির চর্চা ও আলোচনা মিলাদুন্নবী (ﷺ)-এর অনুষ্ঠানেই হয়ে থাকে। মিলাদ-মাহফিল মূলতঃ এমন একটি বিষয়, যেটি পালনের হুকুম স্বয়ং রাব্বুল আলামীন দিয়েছেন- وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ এবং হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। অতএব প্রখ্যাত ইমাম, অত্যন্ত খ্যাতিসম্পন্ন ধর্মনিষ্ঠ ফকীহ মুহাদ্দিস আবুল লাইস নসর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম সমরকন্দি হানাফী (رحمه الله تعالي ) ‘তান্ভীহুল গাফিলীন’ গ্রন্থের ২৬৩ পৃষ্ঠায় বলেছেন, যখন সূরা নসর হুযূর আক্বদাস-এর বিছাল শরীফ তথা ইন্তিকালের রোগে আক্রান্তের সময় অবতীর্ণ হয়। হুযূর তাড়াতাড়ি বের হয়ে এসে মিম্বর শরীফে তাশরীফ রাখলেন। বার ছিল বৃহস্পতিবার। তিনি হযরত বেলাল (رضى الله تعالي عنه)কে হুকুম দিলেন যে, মদিনা মুনাওয়ারায় ঘোষণা করে দাও যে, লোকেরা! রাসূল (ﷺ)-এর শেষ অসিয়ত শুনার জন্য চলে এসো। উক্ত আওয়াজ ধ্বনি শুনা মাত্র ছোট-বড় আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলই ঘরের দরজা এমনিতেই খোলা রেখে ছুটে আসলো। এমনকি কুমারী মহিলারাও বেরিয়ে আসলো। মসজিদে নববী শরীফ অধিক লোকের সমাগমে তিল পরার জায়গাও ছিল না। তাই হুযূর (ﷺ) একথা বলতে লাগলেন, তোমরা পেছনে আগতদের জন্য জায়গা উন্মুক্ত করে দাও, পেছনে আগতদের জন্য জায়গা উন্মুক্ত করে দাও। অতঃপর হুযূর (ﷺ) পবিত্র মিম্বর শরীফে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্ তা‘আলার হামদ ও ছানা আদায় করেন এবং হযরাত আম্বিয়া-ই কিরামের ওপর দরূদ শরীফ পাঠ করেন। অতঃপর ইরশাদ করেন, আমি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম আরবী এবং মর্যাদাবান হেরম ও মক্কা শরীফের অভিভাবক হই। আমার পর আর কোন নবী আসবেন না।
এমন একদিন ছিল যে, মদিনা তাইয়্যেবায় হুযূর মোস্তফা (ﷺ) -এর শুভাগমনের আনন্দ-উৎসবের ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে আসমান জমিন মুখরিত হয়ে উঠেছিল মদিনার ছোট ছোট শিশুরা পর্যন্ত আল্লাহ'র প্রিয় মাহবুবের সাক্ষাৎ ও দর্শন লাভের অধীর আগ্রহ নিয়ে গান করতে করতে বেরিয়ে এসেছিল যেমন কবির ভাষায়,
طلع البدر علينَا * من ثنيات الوداع
وجب الشكر علينَا * ما دعىٰ للهِ داع
‘সানইয়াতুল বিদা’ হতে আমাদের ওপর পূর্ণিমার চাঁদ উদিত হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রার্থনাকারী প্রার্থনা করতে থাকবে আমাদের ওপর ওয়াজিব তাঁর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করা।’
নাজ্জার গোত্রের কঁচি মেয়ে শিশুরা মদিনার অলি-গলি দিয়ে সুরেলা মধুর কন্ঠে গান পরিবেশন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল।
نحن جوار من بنى النجار * يا حبذا محمد من جار
‘আমরা বনু নাজ্জার গোত্রের প্রতিবেশীরা কতই না ভাগ্যবান, মুহাম্মদ হলেন আমাদের প্রতিবেশী।’
আজকের দিন মাহবুবে খোদা (ﷺ)এর বিদায়ের দিন এবং শেষ অসিয়তের মজলিস। আজকের জমায়েতেও ওই সব নারী-পুরুষ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা এবং পর্দার আড়ালের মহিলারা সকলই একত্রিত হয়ে ভীড় জমায়েছেন।
মুসলমানগণ! খোদা জানে মজলিসে মিলাদ কী? মূলতঃ এটা হচ্ছে সাধারণ দাওয়াত, পরিপূর্ণ জমায়েত এবং মিম্বর ও ক্বিয়াম। আর ওটাই সৈয়্যদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর মিলাদ মাহফিলের ফযিলত ও মর্যাদার বর্ণনা বৈ আর কিছু নয়। কিন্তু নজদি ওহাবীদের কাজ হচ্ছে মাহবুবে খোদার যিকির মিটিয়ে দেয়া।
54. ইফাদাতে ওলামা।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পবিত্র মিলাদ মাহফিলের হাক্বিক্বত হচ্ছে, সমস্ত মুসলমানদেরকে হুযূর আক্বদাস (ﷺ)-এর শুভাগমনের মর্যাদাপূর্ণ ফযিলত এবং সর্বোত্তম চরিত্রের আলোচনা করার নামই মিলাদ মাহফিল। মিলাদ শরীফ হচ্ছে, যিকিরে রিসালত । যা সলফে সালেহীনের যুগ থেকে এক সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এখনো পর্যন্ত প্রচলিত এবং এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের নিদর্শন। সারকথা হচ্ছে, আল্লাহর যিকির এবং হুযূর আকরাম মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)কে স্মরণ করাই মিলাদ মাহফিল।
শিফা শরীফে হযরত ইবনে ‘আতা (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত আছে যে,
جعلتك ذكرًا من ذكرى فمن ذكرك ذكرنى .
‘সকল আন্বিয়া (عليه السلام) এবং আউলিয়া-ই কিরামের যিকির প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই যিকির।’ মুসলমানেরা! তোমাদের আর কিসের প্রয়োজন। فاستبقوا الخيرات ‘কল্যাণের প্রতি অগ্রসর হও এবং নিজের খালি থলে ভর্তি করে নাও।’ যেহেতু হুযূর পাক সাহেবে লাওলাক (ﷺ)-এর পবিত্র বেলাদত বা জন্ম হচ্ছে, সমস্ত নিয়ামতের উৎস। তাই এর বিশদ বর্ণনা এবং প্রকাশ করার অকাট্য দলীল কোরআন মজীদের মাধ্যমে আমাদেরকে হুকুম দেয়া হয়েছে। অতএব মিলাদ মাহফিল কোরআনে কারীম দ্বারা প্রমাণিত।
55. মুফতি আল্লামা মুহাম্মদ খললি (رحمة الله)-এর ‘ইফাদাত’ গ্রন্থ থেকে চয়িত।
প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বস্তুকে বিদআতে সায়্যিয়াহ বা মন্দ বিদআত-এর অন্তভুর্ক্ত মনে করে ওটাকে গোমরা ও পথভ্রষ্টদের মধ্যে শামিল করা, এটা সাধারণ মুসলমানদের ওপর বিরাট যুলুম। কোন বস্তুকে বিদআতে সায়্যিয়াহ বলার জন্য, তাকে দু’টি বিষয়ের একটি দ্বারা প্রমাণ করা অপরিহার্য।
১. উক্ত বস্তু সত্তাগতভাবে খারাপ,
২. অথবা শরীয়ত একে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
শরীয়ত যাকে নিষিদ্ধ করেনি এবং উক্ত বস্তু স্বয়ং মন্দও নয় বরং কোরআন মজিদের হুকুম এবং রাসূলে কারীম (ﷺ) -এর নির্দেশ মোতাবিক জায়েয ও বৈধ। ইমাম দারে কুতনী হযরত আবু ছা‘লাবা হাসানী (رضى الله تعالي عنه) হতে রেওয়ায়েত করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
انّ الله فرض فرائض فلا تضيعوها وحرم حرمات فلا تنهكوها وحدّ حدودًا فلاتعيدوها وسكت عن اشياء من غير نسيان فلا تبحثوا عنها
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা কতিপয় বিষয় ফরয করেছেন, এগুলো তোমরা কখনো ছাড়বে না। আর কতিপয় বিষয়কে হারাম করেছেন, তোমরা সেগুলোতে দুঃসাহস দেখাইও না। আর কিছু সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তোমরা উক্ত সীমা লংঘন করো না। আর কতিপয় বিষয় সম্পর্কে স্বেচ্ছায় কোন হুকুম উল্লেখ করেন নি, তোমরা সেগুলোর সন্ধান করো না। অর্থাৎ- এগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। হতে পারে তোমাদের অনুসন্ধানের কারণে এগুলো হারাম করে দিতে পারে।
জামে তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ শরীফে হযরত সালমান ফার্সী (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা যে সব বিষয় সম্পর্কে স্বীয় কিতাবে হালাল ঘোষণা করেছেন, তা হালাল এবং যেগুলো সম্পর্কে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন, সেগুলো হারাম। আর যেগুলো সম্পর্কে কিছুই বলেননি, তা মাফকৃত।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন,
مَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
‘রাসূলে পাক (ﷺ) তোমাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন তা গ্রহণ করো এবং যা কিছু সম্পর্কে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো।’
এখানে انتهوا আমর বা নির্দেশ সূচক শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা (আমর) ওয়াজিবের জন্য আসে। অতএব প্রথম প্রকার হচ্ছে শরয়ী ওয়াজিবাত-যা অবশ্যই করণীয়। আর দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে নাহী শরয়ী নিষিদ্ধতা- যা দ্বারা বিরত থাকা আবশ্যক প্রমাণিত হয়।
অতএব বুঝা গেল, যে সকল বিষয় সম্পর্কে শরীয়তের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি এবং নিষেধও করা হয়নি, তা ওয়াজিবও নয় এবং গোনাহও নয়। অর্থাৎ এগুলো করা ওয়াজিব নয় এবং না করাতে গুনাহও হবে না। বর্তমানে কোরআনে কারীম(ﷺ)র প্রতিক্রিয়ায় দ্বীন পূর্ণতা লাভ করেছে, এখন নতুন কোন হুকুম আসার অবকাশ নেই। অতএব যে সকল বিষয়ে শরীয়ত কোন হুকুম করেনি এবং নিষেধও করেনি তা মাফ ও নাজাতপ্রাপ্ত হিসেবে প্রমাণিত হল। যাতে এখন পরিবর্তনের কোন অবকাশ নেই।
নজদি ওহাবীরা আল্লাহ্ তা‘আলার ক্ষমাকৃত বিষয়ে অভিযোগ করছে, যা গ্রহণযোগ্য নয় বিধায় তা অগ্রাহ্য ও প্রত্যাখ্যাত। এ পর্যন্ত জায়েয না-জায়েয সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বাকী রইলো মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে আলোচনা।
মিলাদুন্নবী (ﷺ) এমন কাজ যা সত্তাগতভাবে ভাল এবং মু’মিন মুসলমানগণ যাকে পূণ্য ও প্রশংসনীয় মনে করে সম্পাদন করে আসছেন, তা রাসূলে পাক (ﷺ)-এর ইরশাদ মোতাবিক সুন্নাতের মধ্যে পরিগণিত হয়। যদিও উক্ত কাজ ইতিপূর্বে এভাবে কেউ না করে। সুবহানাল্লাহ্!
প্রত্যেক বিদআত, বিদআতে সাইয়্যিয়া নয়। প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বস্তু খারাপ ও মন্দ নয়। অবশ্য যদি দ্বীনের পরিপন্থী নতুন কোন কাজ আবিষ্কার করা হয়, তা বিদআতে সাইয়্যিয়া হিসেবে গণ্য হবে। যেমন- নামাযের জামাতে ইকামত বলার সময় দাঁড়িয়ে থাকা এবং জামাতের পর ঠিক ওই জায়গায় যেখানে ফরয আদায় করেছে, স্থান পরিবর্তন না করে সেখানে সুন্নাত ইত্যাদি নামায আদায় করা। এসব নব আবিষ্কৃত যা সুন্নাত ও শরীয়তে অনুপ্রবেশ করেছে, তাই এটা বিদআতে সাইয়্যিয়াহ। যা পালন করা নিষিদ্ধ ও না-জায়েয।
হাদীসসমূহ পাঠ করলে একথা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, বিদআতে সাইয়্যিয়া হচ্ছে যা সুন্নাতের পরিপন্থী এবং যে প্রথা চালু করার দরুণ সুন্নাত বিলুপ্ত হয়ে যায়।
সাইয়্যেদুনা আরিফ বিল্লাহ ইমাম আবদুল গণি নাবিলুসী হানাফী (رحمه الله تعالي ) ‘হাদিকাতুন নাদিয়্যাহ শরহে তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া’ গ্রন্থে বলেছেন, যদিও বিদআত নতুন আবিষ্কৃত হয়, এর সম্পাদনকারীকে সুন্নীই বলা হবে, কখনো বিদ‘আতী বলা যাবে না। কেননা রাসূলে পাক ভাল কাজের আবিষ্কারককে ‘সুন্নাত উদ্ভাবনকারী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেহেতু তারা প্রত্যেক পূণ্যের কাজ যদিও নতুন আবিষ্কৃত হয় এবং প্রত্যেক ভাল ও উত্তম বিদ‘আতকে সুন্নাতের অন্তভুর্ক্ত করেছেন। এই পবিত্র বাণীতে কিয়ামত পর্যন্ত নতুন নতুন পূণ্যময় কাজ আবিষ্ককারের অনুমোদন প্রমাণিত হলো। অতএব, সে সকল লোক এ জাতীয় নতুন কাজ আবিষ্কার করবেন তারা সওয়াব পাবেন। আর কিয়ামত পর্যন্ত যত লোক এর ওপর আমল করবে, সকলের সওয়াবের একটি অংশ সে পাবে। প্রত্যেক ভাল বিদআত সুন্নাতই।
ইমাম নববী (رحمه الله تعالي ) বলেছেন যে, যত লোক উক্ত আমল করবে, সবার সওয়াব সে পাবে। সে ব্যক্তি উক্ত কাজ আবিষ্কার করুক কিংবা তার দিকে সন্বোধন করা হোক। তা সওয়াবের কাজ হোক কিংবা অন্য কোন ভাল কাজ কিংবা অন্য কোন কিছু।
56. আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ খলিল কাদেরী’র ‘ইফাদাত’ গ্রন্থ থেকে।