দ্বিতীয় অধ্যায়
(হুযুর পুর নুর (ﷺ) এর মানব হওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে উত্থাপিত আপত্তি সমূহের বিবরণ)
১নং আপত্তিঃ কুরআন ইরশাদ করছেঃ
قُلْ اِنَّمَا اَنَا بَشَرَ مِّثْلُكُمْ
অর্থাৎ- হে মাহবুব! আপনি বলে, ‘আমি তোমাদের মত মানুষ।’
{সূরাঃ হা-মীম সিজদাহ, আয়াতঃ ৬, পারাঃ ১৪}
কুরআনের এ আয়াত থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, হুজুর (ﷺ) আমাদের মত মানুষ। তা’ যদি না হয়, তা’হলে আল্লাহ মাফ করুন, এ আয়াতটি মিথ্যা প্রতিপন্ন হবে।
উত্তরঃ এ আয়াতের তাৎপর্য অনুধাবনের জন্য কয়েকভাবে এর অন্তর্নিহিত বাবধারা নিয়ে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন আছে।
প্রথমতঃ এখানে বলা হয়েছে قُلْ (হে মাহবুব! আপনি বলে দিন) সুতরাং, কথাটি বলার অনুমতি দেয়া হয়েছে একমাত্র হুজুর (ﷺ) কে আপনি বিনয় ও নম্রতা প্রকাশার্থে এরূপ বলবেন। কিন্তু একথা কোথাও বলা হয়নি قُوْلُوْاِانَّمَا هُوَبَشَرً مِّثْلُنَا (হে লোক সকল, তোমরা বল যে, হুজুর (ﷺ) আমাদের মত মানুষ।) বরং قُلْ (আপনি বলুন) শব্দটি বলে এ কথার প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, ‘মানুষ’ প্রভৃতি শব্দাবলী আপনি বলুন, আমি (আল্লাহ) বলব না, আমি তো বলব
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا - وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا
-‘হে আল্লাহর নবি! হাযির-নাযির রুপে, শুভ সংবাদদাতা, ভীতি প্রদর্শনকারী, আল্লাহর অনুমতিতে আল্লাহ পথে আহ্বানকারী এবং উজ্জ্বল প্রদীপ।’’
{.সূরাঃ আহযাব, আয়াতঃ ৪৫-৪৬, পারাঃ ২২}
অআমি বলব يَااَيُّهَاالْمُزَمِّلُ يَااَيُّهَا الْمَدَثِّرُ وَغَيْرَهَ (ওহে কম্বল পরিহিত বন্ধু; ওহে চাদরাবৃত বন্ধু) ইত্যাদি ইত্যাদি ........। আমি তো আপনার মান-সম্মান বাড়বো, আপনি বিনয় ও শালীনতা প্রকাশের জন্য এ কথাটি বলতে পারেন। অধিকন্তু, এ আয়াতে কাফিরদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। যেহেতু প্রত্যেক জীবের ভিন্ন প্রকৃতির জীবের প্রতি বিতৃষ্ণাবোধ থাকে, সেহেতু বলা হয়েছে হে কাফিরগণ, তোমরা আমাকে ভয় পেয়োনা আমি তোমাদেরই মানব জাতিভুক্ত অর্থাৎ মানুষই।
শিকারকারী পশুপাখীর মত আওয়াজ বের করে শিকার করে। অনুরূপ হুযুর কর্তৃক এরূপ উক্তি করার উদ্দেশ্যে হচ্ছে, কাফিরদেরকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করা। দেওবন্দীগণও যদি সেই কাফিরদের অন্তভুর্ক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আয়াতে তাদেরকেও সম্বোধন করা হয়েছে, আর, আমাদের তথা মুসলমানদের জন্য বলা হয়েছে اَيُّكُمْ مِثْلِيْ (তোমাদের মধ্যে আমার মত কে আছে?)
{ক. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ১/৫০৭ঃ হাদিসঃ ৭৩৫
খ. বায়হাকীঃ সুনানে কোবরাঃ ৭/৬২ পৃ. হাদিসঃ ১৩১৬৬
গ. বুখারীঃ আস-সহীহঃ কিতাবুস-সিয়াম ২/৬৯৪ পৃ. হাদিসঃ ১৮৬৪}
তোতা পাখীর সামনে আয়না রেখে আমরা আয়নার পেছনে দাঁড়িয়ে কথা বলি, যাতে তোতা আয়নাতে তার প্রতিচ্ছবি দেখে এ ধারণা করে যে, আওয়াজটি সজাতীয় কোন পাখীর। আম্বিয়ায়ে কেরাম মহাপ্রভুর আয়না বিশেষ; আওয়াজ ও মুখ তাঁদেরই, কিন্তু কথাগুলি মহাপ্রভু আল্লাহরই।
❏যেমন এ পংক্তিতে বলা হয়েছেঃ
گفت من آ ينه مصقول دوست
(নবী বলেছেন, আমি হলাম আয়না, যে পরম বন্ধু স্বচ্ছ করে নির্মাণ করেছেন।)
দ্বিতীয়তঃ مِثْلُكُمْ পর্যন্ত আয়াতটি শেষ হয়নি, বরং এর পরে আছে يُوْحَى اِلَىَّ (আমার প্রতি ওহী নাযিল হয়ে থাকে।) এ বাক্যাংশ দ্বারা উক্ত আয়াতের অর্থ সংকুচিত হয়েছে। যেমন আমরা বলে থাকি, ‘যায়েদ অন্যান্য প্রাণীদের মত একটি প্রাণী, তবে সে বাকশক্তি সম্পন্ন। ‘বাক্শক্তি সম্পন্ন’ শব্দটির ফলে অন্যান্য প্রাণীদের সাথে যায়েদের স্বত্ত্বাগত পার্থক্য নির্ণীত হয়েছে। এতে যায়েদ সৃষ্ট জীবের সেরা মানবজাতির অন্তভুর্ক্ত হল, আর অন্যান্য প্রাণীগণ অন্যান্য জীব হিসেবেই রয়ে গেল। অনুরূপ, এ আয়াতেও ওহীর কথা উলেখ থাকায় নবী ও উম্মতের মধ্যে বিরাট ব্যবধান রচিত হল। প্রাণী ও ইনসানের মধ্যে শুধু একান্তর বিশিষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান, কিন্তু মানুষের মর্যাদা ও মুস্তাফা (ﷺ) এর মান-মর্যাদার মধ্যে ২৭ স্তর বিশিষ্ট প্রভেদ রয়েছে মানুষ, মুমিন, শহীদ, মুত্তাকী, ওলী, আবদাল, আওতাদ, কুতুব, গাউছ, গাউছুৃল আযম, তাবেয়ী, সাহাবী, মুহাযির, সিদ্দীক, নবী, রহমাতুল লিল আলামীন ইত্যাদি ......।
এখানে মর্যাদার তারতম্যের স্তর বিন্যাস সংক্ষিপ্তাকারে করা হলো। আরও বিস্তারিত জানতে হলে আমার রচিত গ্রন্থ ‘শানে হাবীবুর রহমান’ দেখুন। অতএব, সাধারণ মানুষ ও মুস্তাফার (ﷺ) মধ্যে কোনরূপ তুলনাই হয় না। উভয়ের মধ্যে তুলনা করার ব্যাপারটি হল এ রকম যেমন কেউ বলল ‘আল্লাহ আমাদের মত ‘অস্তিত্ববান’, আল্লাহ আমাদের মত ‘শ্রোতা’ ও ‘দ্রষ্টা’। কেননা, ‘মওজুদ’ (বিদ্যমান) ও ‘আলীম’ (জ্ঞান) শব্দদ্বয় উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। আল্লাহর বিদ্যমানতার সাথে যেমন আমাদের বিদ্যমানতার কোনরূপ তুলনা চলে না, তদ্রূপ মাহবুব ﷺ'র মানবজাতিভুক্তির সাথে আমাদের মানব জাতিভুক্তির কোনরূপ তুলনা হতে পারে না।
❏জনৈক কবি বলেছেনঃ
اے هزار اں جبر ئيل اندر بشر ، بهر حق سوئے غربياں ايك نظر
অর্থ- হে পবিত্র স্বত্বা! যার মধ্যে হাজার হাজার জিব্রাইলের গুণাবলী নিহিত, আল্লাহর ওয়াস্তে সহায়-সম্বলহীন লোকদের দিকে একটু নজর করুন। অর্থাৎ হুযুর (ﷺ) এর মানবীয় বৈশিষ্ট্য হাজার হাজার জিব্রাঈলী বৈশিষ্ট্যসমূহ থেকে উত্তম।
তৃতীয়তঃ কুরআনে করীমে আছেঃ
مَثَلُ نُورِهِ كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ
-‘‘মহান প্রতিপালকের নূরের উপমা হচ্ছে, যেমন একটি ‘তাক, যার মধ্যে একটি প্রদীপ আছে ......।’’
{সূরাঃ নূর, আয়াতঃ ৩৫, পারাঃ ১৮}
এ আয়াতেও (মাছালু) শব্দটি আছে, যার প্রতিশব্দ হচ্ছে বাংলা ভাষায় ‘উদাহরণ’, অনুরূপ, ‘মত’ ইত্যাদি। তাই বলে কি কেউ একথা বলতে পারে যে, খোদার নূর প্রদীপের আলোর মত?
❏এরূপ কুরআনে আরও আছে- যেমনঃ
وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا طَائِرٍ يَطِيرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلَّا أُمَمٌ أَمْثَالُكُمْ
-‘‘ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী প্রত্যেক প্রকারের প্রাণী ও ডানায় ভর করে উড়ে এমন সব পাখী তোমাদের মত ‘উম্মত’।’’
{সূরাঃ আনআম, আয়াতঃ ৩৮, পারাঃ ৭}
এখানেও اَمْثَالُ (আমছালুন, যা ‘মিছলুন’ এর বহুবচন) শব্দটির উলেখ আছে। এ থেকে কি একথা বলা ঠিক হবে, প্রত্যেকটি মানুষ গাধা, পেঁচার মত? না, কখনই তা হতে পারে না। আর আলোচ্য আয়াতে যে বিশেষত্ব জ্ঞাপক اِنَّمَا (ইন্নামা) শব্দটি রয়েছে, যদ্বারা আপাতদৃষ্টিতে একথাই বোঝা যায় যে, “আমি মানুষই, অন্য কিছু নই” তা দ্বারা প্রকৃত বিশেষত্ব বোঝানো হয়নি। সেখানে যে ‘বিশেষত্ব’ নির্দেশিত হয়েছে তা হচ্ছে ‘সাপেক্ষ’। সুতরাং, আয়াতের মূল বক্তব্য হয়- ‘আমি না খোদা, না খোদার পুত্র এবং তোমাদের মত একজন নিছক বান্দাই। যেমন- হারূত-মারূত এর উক্তি ছিল اِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌُ (আমরা হচ্ছি ফিত্না বা পরীক্ষাই)।
{সূরাঃ আনআম, আয়াতঃ ৩৮, পারাঃ ৭}
চতুর্থতঃ গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে বোঝা যায় যে, হুজুর (ﷺ)- এর ঈমান, ইবাদত, পারস্পরিক লেন-দেন মোটকথা কোন ক্ষেত্রেই আমাদের মত নন। প্রত্যেক ক্ষেত্রে আছে তাঁর সাথে আমাদের বিরাট পার্থক্য। তাঁর কালেমা হচ্ছেঃ اَنَا رَسُوْلُ للَّهِ (আমি আল্লাহর রাসূল।) আমরা এরূপ বললে, ‘কাফির’ হয়ে যাব। তার ঈমান হচ্ছে প্রত্যক্ষ দর্শনজনিত- মহাপ্রভু, বেহেশত দোযখ সবই স্বচক্ষে দেখেছেন। আর আমাদের ঈমান হল শ্রবণ জনিত। ইসলামের আরকান আমাদের বেলায় পাঁচটি, আর হুজুর (ﷺ) ক্ষেত্রে চারটি, অর্থাৎ তাঁর উপর যাকাত ফরয নয়। (এ প্রসঙ্গে সুবিখ্যাত ‘শামী’ গ্রন্থের যাকাতের আলোচনা দ্রষ্টব্য।) আমাদের বেলায় পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয, আর তাঁর উপর ফরয হচ্ছে ছয় ওয়াক্ত নামায, অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাযও তার পর ফরয।
❏কালামে পাকেই আছেঃ
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً
-‘‘এবং রাতের কিয়দংশে ‘তাহাজ্জুদের’ নামায আদায় করবেন, যা আপনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নামায হিসেবে নির্ধারিত।’’
{সূরাঃ বানী ইসরাঈল, আয়াতঃ ৭৯, পারাঃ ১৫}
আমাদের চারিজন স্ত্রী গ্রহণ করার অনুমতি আছে, আর তাঁর ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট সংখ্যার বিধান নেই, তিনি যতগুলো চান, বিবাহ করার অনুমতি প্রাপ্ত।
আমাদের স্ত্রীগণ আমাদের মৃত্যুর পর অন্যের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে, কিন্তু হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র স্ত্রীগণ হচ্ছেন সমস্ত মুসলমানদের মাতা।
❏কুরআনেই আছেঃ
وَاَزْوَاجُهُ اُمَّهَا تُهُمْ
-‘‘তার স্ত্রীগণ তাদের (সকল মুসলমান)-এর জননী!
{সূরাঃ আহযাব, আয়াতঃ ৬, পারাঃ ২১}
তাই তারা কারো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার পাত্রী নন।
❏কুরআনেই রয়েছেঃ
وَلَا أَنْ تَنْكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا
-‘‘তাঁর পরে তাঁর স্ত্রীগণকে তোমরা কোন কালেই বিবাহ করবে না।’’
{সূরাঃ আহযাব, আয়াতঃ ৫৩, পারাঃ ২২}
আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের পরিত্যক্ত ধন-সম্পদের ভাগ-বাটোয়ারার বিধান আছে, কিন্তু হুজুর (ﷺ) এর পরিত্যক্ত ধন-সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে বণ্টিত হওয়ার বিধান নেই। আমাদের মল-মূত্র অপবিত্র, আর তাঁর শরীর মুবারক থেকে নির্গত মলমূত্র ইত্যাদি সবকিছুই উম্মতের জন্য পাক-পত্রি।
(‘শামী’ গ্রন্থের باب الانجاس অধ্যায় দ্রষ্টব্য)
❏‘মিরকাত’ গ্রন্থের باب احكام المياه শীর্ষক অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে উলেখিত আছেঃ
ومن ثَمَّ اخْتَارَ كَثِيرُونَ مِنْ أَصْحَابِنَا طَهَارَةَ فَضَلَاتِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
-‘‘এজন্যই তো আমাদের হানাফী মতাবলম্বী অনেক মনীষীই তাঁর শরীর নিঃসৃত সব কিছুকেই পাক-পবিত্র বলেই মেনে নিয়েছেন।’’
{মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ২/৪৪৮পৃ. হাদিসঃ ৪৭৬}
❏একই মিরকাতের باب الستر শীর্ষক অধ্যায়ের শুরুতে আছে-
وَلِذَا حَجَّمَهُ أَبُو طَيْبَةَ فَشَرِبَ دَمَهُ، نَقَلَهُ ابْنُ الْمَلَكِ
-‘‘ইমাম ইবনে মালেক (رحمة الله) নকল করেছেন যে, হযরত আবু তৈয়্যবা (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)এর শরীর থেকে শিঙ্গার মাধ্যমে ক্ষরিত রক্ত পান করেছিলেন।’’
{মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ২/৬৪০পৃ. হাদিসঃ ৭৭৩}
❏‘মাদারেজুন’ নবুয়াত গ্রন্থে প্রথম খন্ডের শীর্ষক (وصل عرق شريف) বর্ণনার ২৫ পৃষ্ঠায়ও সে একই কথা বর্ণিত আছে। এতসব বৈসাদৃশ্য দেখানো হল শুধুমাত্র শরীয়তের বিধি-নিষেধের ক্ষেত্রে। না হয়, আরও লক্ষ লক্ষ বিষয়ে তাঁর সাথে আমাদের বিরাট পার্থক্য আছে। সে মহান সত্ত্বার সাথে আমাদের কো তুলনাই চলে না। এক কথায় বুঝে নিন যে, তিনি হচ্ছেন নজিরবিহীন বান্দা। যেমন-
❏জনৈক কবি বলেছেনঃ
بےمثلى حق كے مظهر هوپهر مثل تمهارا كيوں كر هو
نهيں كوئ تمهارا هم رتبه نهيں كوئ تمهارا هم پايه
(ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার সত্ত্বা হচ্ছে অদ্বিতীয় আল্লাহর গুণাবলীর বিকাশস্থল। তাই কেউ আপনার তুল্য হয় কি করে? আপনার সমমর্যাদা সম্পন্ন বা সমকক্ষ কেউ নেই)। অতএব, এত ব্যাপক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তাঁর সাথে তুলনার কি অর্থ হতে পারে?
পঞ্চমতঃ আলোচ্য আয়াতে بَشْرٌُ مِثْلُكُمْ (বশরুম মিছলুকুম) বলা হয়েছে, اِنْسَانٌُ مِثْلُكُمْ (ইনসানুম মিছলুকুম) বলা হয়নি। এ بشر (বশর) শব্দের অর্থ হচ্ছে ذُوْ بُشْرَةٍ (যুবুশরাতিন) অর্থাৎ বাহ্যিক আবরণ ও মুখাবয়ব বিশিষ্ট, আর بُشْرَةٍ ‘বুশরাতুন’ বলা হয় বহিরাবরণ চামড়াকে। তাহলে بَشَرٌُ ‘বশরুন’ শব্দের ব্যুৎপত্তির গত দিক থেকে আলোচ্য আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় আমাকে বাহ্যিক রং-রূপের দিক থেকে তোমাদের মত মনে হচ্ছে শরীরের অঙ্গসমূহ দেখতে একই রকম দেখাচ্ছে, কিন্তু আসল কথা হচ্ছে يُوْحَى اِلَىَّ অর্থাৎ আমি ‘ওহী’ প্রাপ্তির অধিকারী। উলেখ্য যে, একথাগুরো বলা হল কেবল বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে।
না হয় হুজুর (ﷺ) এর মুবারক জাহেরী অঙ্গসমূহের সাথে আমাদের জাহেরী অনঙ্গসমূহের কোনরূপ তুলনাই চলে না। মহান আল্লাহর কুদরতে দেখুন-সেই পবিত্র মুখের থুথু মুবারক লোনাজল বিশিষ্ট কূপে পড়লে বিস্বাদ পানিকে সুপেয় মিঠা পানিতে রূপান্তরিত করে, হুদাইবিয়ার শুষ্ক কূপে পড়লে পানি শূন্য কূপকে পানিতে ভরে দেয়, হযরত জাবির (رضي الله عنه) এর ডেকচীতে নিক্ষিপ্ত হলে ঝোল ও মাংসের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, আটার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হলে আটাকে বরকত মন্ডিত করে, হযরত সিদ্দীক আকবর (رضي الله عنه) এর পায়ে লাগলে সাপের বিষক্রিয়া বন্ধ করে, হযরত আবদুল্লাহ ইবন আতীক (رضي الله عنه) এর ভাঙ্গা পায়ে লাগলে ভাঙ্গা হাড়কে জোড়া লাগিয়ে দেয়; হযরত আলী (رضي الله عنه) এর বেদনা বিধুর চোখে লাগলে মূল্যবান পাথরসমূহ থেকে প্রস্তুত বেদনা নাশক সুরমার কাজ করে। বর্তমান যুগের হাজার টাকা মূল্যের ওষুধেও এতটুকু অপূর্ভ কার্যকারিতা নেই। হুজুর (ﷺ) এর আপাদমস্তক যাবতীয় মুবারক অঙ্গের বরকত মন্ডিত বৈশিষ্ট্য সমূহ সম্পর্কে জানতে ইচ্ছা থাকলে আমার রচিত ‘শানে হাবীবুর রহমান’ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করুন। আমাদের প্রত্যেক অঙ্গের ছায়া আছে; হুজুর (ﷺ) এর কোন ছায়া নেই। তাঁর পবিত্র ঘামের মধ্যে মেশক আম্বরের চেয়েও বেশী সুগন্ধি পাওয়া যায়।
ষষ্ঠতঃ
❏শাইখ আবদুল হক (رحمة الله) ‘মাদারেজুন নবুওয়াত’ গ্রন্থের (১ম খন্ড) তৃতীয় অধ্যায়ে وصل ازاله شبهات শীর্ষক পরিচ্ছেদে বলেছেনঃ
در حقيقت متشابهات اند علماء آں رامعانى لائقه تاويلات رائقه كرده راجح بحق ساخته اند
-‘‘আসলে এ ধরনের আয়াতসমূহ ‘মুতাশাবিহাত’ বা দুর্বোধ্য আয়াত সমূহের অন্তভুর্ক্ত। উলামায়ে কেরাম যথোপযুক্ত তাৎপর্য অনুধাবন ও গ্রহণযোগ্য প্রায়োগিক ব্যাখ্যা করে সত্যের দিকে মনোনিবেশ করেছেন।’’ এ ভাষ্য থেকে জানা যায় যে, যেরূপ يَدُ اللهِ فَوْقَ اَيْدِيْهِمْ (আল্লাহর হাত তাঁদের হাতের উপর বিরাজমান।)
{সূরাঃ ফাতাহ, আয়াতঃ ১০, পারাঃ ২৬}
مَثَلُ نُوْرِهِ كَمِشْكَوةٍ তাঁর নূরের দৃষ্টান্ত হল যেমন একটি ‘তাক’ ....)
{সূরাঃ নূর, আয়াতঃ ৩৫, পারাঃ ১৮}
ইত্যাদি আয়াত, যেগুলো বাহ্যিক দৃষ্টিতে খোদার শানমান এর সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হচ্ছে এবং ‘মুতাশাবিহাত আয়াত’ হিসেবে গণ্য, তদ্রূপ اِنَّمَا اَنَا بَشَرٌُ الخ- (আমি মানুষই .....)
{ক. সূরাঃ হামীম সেজদা, আয়াতঃ ৬, পারাঃ ২৪
খ. সূরাঃ কাহাফ, আয়াতঃ ১১০, পারাঃ ১৬}
ইত্যাদি আয়াতও যেগুলোর শাব্দিক অর্থ মুস্তাফা (ﷺ) এর শান-মানের সাথে বেখাপ্পা ঠেক্ছে, ‘মুতশাবিহাত আয়াত বা দুর্বোধ্য আয়াত হিসেবেই গণ্য। সুতরাং, এসব আয়াতের বাহ্যিক ভাবধারাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা ভুল।
সপ্তমতঃ হুজুর (ﷺ) তাঁর লাগাতার রোযা রাখা প্রসঙ্গে বলেছেন- اَيُّكُمْ مِثْلِىْ -‘‘তোমাদের মধ্যে আমার মত কে আছে?।’’
{বুখারী, আস্-সহিহ, ৮/১৭৪পৃ. হাদিসঃ ৬৮৫১, ও ৯/৮৫পৃ. হাদিসঃ ৭২৪২, হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) এর সুত্রে বর্ণিত।}
❏বসাবস্থায় নফল নামায পড়া প্রসঙ্গে বলেছেন
وَلَكِنِّي لَسْتُ كَأَحَدٍ مِنْكُمْ
‘‘-কিন্তু আমি তোমাদের কারো মত নই।’’
{বুখারী, আস্-সহিহ, ৩/৩৭পৃ. হাদিসঃ ১৯৬১, হযরত আনাস (رضي الله عنه) এর সুত্রে বর্ণিত মুসলিম, আস্-সহিহ, ১/৫০৭পৃ. হাদিসঃ৭৩৫, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه) এর সুত্রে বর্ণিত।}
সাহাবায়ে কেরামও অনেক ক্ষেত্রে বলেছেন- اَيُّنِا مِثْلُهُ-‘‘আমাদের মধ্যে হুজুর (ﷺ) এর মত কে আছে?।’’ এসব হাদীছতো পরিস্ফুট করছে যে, হুজুর (ﷺ) আমাদের মত নন, আর আলোচ্য আয়াত থেকে আপাতঃ দৃষ্টিতে বোঝা যাচ্ছে যে, তিনি আমাদের মত। তাই এসব পরস্পর বিপরীত কথাগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা দরকার। আর তা আয়াতের তাৎপর্য মন্ডিত ব্যাখ্যা করেই সম্ভপর হতে পারে।
অষ্টমতঃ তাফসীরে ‘রূহুল বয়ানে’ সূরা মারয়ামে’ كهيعص প্রসঙ্গে লিখা হয়েছে ,
{সূরাঃ মরিয়ম, আয়াতঃ ১}
হুজুর (ﷺ) এর তিন ধরনের আকৃতি প্রকৃতি আছে- সুরতে বশরী (মানবীয় প্রকৃতি), সূরতে হক্কী (আল্লাহ প্রকৃতি) ও সুরতে মলকী (ফিরিশতা প্রকৃতি)। আর اِنَّمَا اَنَا بَشَرٌُ الخ আয়াত এ তাঁর মানবীয় প্রকৃতির কথাই উলেখিত হয়েছে।
{সূরাঃ হা-মীম সেজদা, আয়াতঃ ৬, পারাঃ ২৪}
❏তাঁর সুরতে হক্কীর উলেখ আছে এ হাদীছটিতে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
مَنْ رَانِىْ فَقَدْ رَاءَ الْحَقَّ
-‘‘যে আমাকে দেখেছেন, সে যেন পরম সত্যকে দেখেছেন।’’
{ক. বুখারীঃ আস-সহীহঃ ১২/৩৮৩ পৃ. হাদিসঃ ৬৯৯৬
খ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ৪/১৭৭৬ হাদিসঃ ২৫৭ হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত
গ. দারেমীঃ আস-সুনানঃ ২/১৬৬ হাদিসঃ ২১৪০
ঘ. আহমদ ইবনে হাম্বলঃ আল-মুসনাদঃ ৫/৩০৬ পৃ.}
❏আর তাঁর সুরতে মলকী’র (ফিরিশতা প্রকৃতি) উলেখ আছে এ হাদীছটিতে-
لِيْ مَعَ اللهِ وَقْتٌُ لاَ يَسَعُنِيْ فِيْهِ مَلَكٌُ مُقَرَّبَّ وَّلاَنَبِيٌُّ مَرْسَلٌُ
-‘‘কোন কোন সময় আমি আল্লাহর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যের স্তরে উপনীত হই যে, সে স্তরে আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য কোন ফিরিশতার বা অন্য কোন ‘মুরসাল’ নবীরও পৌঁছার সাধ্য নেই।’’
মিরাজের রাতে ‘সিদরা’ পর্যন্ত পৌঁছলে হযরত জিব্রাইল (আলাইহিস সালাম) এর জিব্রাঈলী শক্তি নিঃশোষিত হয়ে যায়, অথচ সে সময়ে ছিল হুজুর (ﷺ) এর মানবীয় প্রকৃতির সবে মাত্র সূচনা। আলোচ্য আয়াতে তাঁর একটি মাত্র প্রকৃতির কথাই উলেখিত হয়েছে।
নবমতঃ আলোচ্য আয়াতে যেখানে তিনি ইরশাদ করেছেন بَشَرٌُ مِثْلُكُمْ ‘আমি তোমাদের মত মানুষ’ সেখানে একথা বলেন নি যে কোন দিক দিয়ে ‘তোমাদের মত’। অর্থাৎ আয়াতের মূল বক্তব্য হচ্ছে- তোমরা যেমন কেবল বান্দা, না খোদা, না খোদার পুত্র, না খোদার গুণে গুণান্বিত; আমিও তেমনি আল্লাহর বান্দা, আল্লাহও নই, আল্লাহর পুত্রও নই। ঈসায়ীগণ হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কয়েকটি অলৌকিক কান্ড (মুজিযাসমূহ) দেখে তাঁকে আল্লাহর পুত্র বলে আখ্যায়িত করেছিল। তোমরাও আমার শত শত অলৌকিক কর্মকান্ড দেখে সেরূপ কথা বলবে না বলবে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।’
❏‘তাফসীর কবীরে’ দ্বাদশ পারার শুরুতে আয়াত- فَقَالَ الْمَلاَءُ اٌُلذِيْنَ كَفَرُوْا এর তাফসীর প্রসঙ্গে বর্ণিত হযরত নূহে (আলাইহিস সালাম) এর কাহিনীতে আছে যে, নবী মানুষরূপে আবির্ভূত হন এজন্য যে, যদি ফিরিশতা হতেন, তাহলে জনগণ তাদের অলৌকিক কার্যাবলীকে ফিরিশতাদের স্বভাবজাত ক্ষমতা বলে ধরে নিতো।
{সূরাঃ হুদ, আয়াতঃ ২৭, পারাঃ ১২}
কিন্তু যখন মানুষ হয়ে ওসব মুজিযা দেখান, তখন তাঁদের পূর্ণতার পরিচয় পাওয়া যায়। মোট কথা, নবীদের মাননীয় আকৃতি-প্রকৃতি হচ্ছে তাঁদের পরিপূর্ণতা জ্ঞাপক বিশেষ গুণ। সুতরাং, আলোচ্য আয়াতের অন্তর্নিহিত মূল বক্তব্য হল আমি তোমাদের মত মানুষ হয়ে এরূপ পরিপূর্ণতা জ্ঞাপক বৈশিষ্ট্যসমূহ দেখাচ্ছি; তোমরা দেখাও দেখি।
দশমতঃ এমন অনেক শব্দ আছে, যা নবীগণ নিজেদের বেলায় ব্যবহার করতে পারেন এবং এতে তাঁদের পরিপূর্ণতার পরিচয় বিধৃত হয়। কিন্তু অন্য কেউ যদি তাঁদের শানে সে সব শব্দ ব্যবহার করে, তবে তা হবে চরম বে-আদবীর শামিল। দেখুন, হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) আরয করেছিলেন رَبَّنَ ظَلَمْنَا اَنْفُسَنَا [হে প্রভু! আমি নিজের প্রতি জুলুম করেছি।]
{সূরাঃ আ’রাফ, আয়াতঃ ২৩, পারাঃ ৮}
হযরত ইউনুস (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর কাছে আরয করেছিলেন
اِنِّىْ كُنْتُ مِنَ الظَّلِمِيْنَ
-‘‘‘নিশ্চয় আমি জালিমদের অন্তভুর্ক্ত হয়ে গেছি।’’
{সূরাঃ আম্বিয়া, আয়াতঃ ৮৭, পারাঃ ১৭}
❏হযরত মুসা (আলাইহিস সালাম) ফিরাউনকে বলেছিলেন-
فَعَلْتُهَا اِذًوَّ اَنَامِنَ الضَّالِّيْنَ
-‘‘আমি তা’ করা মাত্রই পথভ্রষ্টদের অন্তভুর্ক্ত হয়ে যাব।’’
{সূরাঃ শূ’রা, আয়াতঃ ২০, পারাঃ ১৯}
এখন অন্য কেউ যদি তাঁদেরকে জালিম বা পথভ্রষ্ট বলে তাহলে সে ঈমানহারা হয়ে যাবে। بشر ‘বশর’ শব্দটিও সেরূপ একটি শব্দ যা’ নবী নিজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন।
২নং আপত্তিঃ হুজুর (ﷺ) নিজের সম্পর্কে বলেছেন-
اَواَكْرِمُوْا اَخَاكُمْ
-‘‘তোমরা তোমাদের ভাইকে (আমাকে) শ্রদ্ধা কর।’’
উত্তরঃ একথা থেকে বোঝা যায় যে, তিনি আমাদের ভাই, তবে ছোট ভাই নন, বড় ভাই।
৩নং আপত্তিঃ মহান রব তা‘য়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করছেন-
وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا
-‘‘মদয়ানে মদয়ানবাসীদের ভাই হযরত শুআইব (আলাইহিস সালাম) কে পাঠিয়েছি।’’
{সূরাঃ আ’রাফ,আয়াতঃ ৮৫, পারাঃ ৮}
❏অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন-
وَإِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا
-‘‘ছামুদ নামক জাতির নিকট তাদের ভাই হযরত সালেহ (আলাইহিস সালাম) কে পাঠিয়েছি।’’
{সূরাঃ আ’রাফ,আয়াতঃ ৭৩, পারাঃ ৮}
❏অন্যত্র মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-
وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا
-‘‘এবং ‘আদ’ গোত্রের নিকট তাদের ভাই হুদ (আলাইহিস সালাম) কে পাঠিয়েছি।’’
{সূরাঃ আ’রাফ,আয়াতঃ ৬৫, পারাঃ ৮}
এসব আয়াতে মহাপ্রভু আল্লাহ তা’আলা আমিয়ায়ে কিরামকে মদয়ানবাসী, ছামুদ ও আদগোত্রের ভাই বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাই বোঝা যায় যে, নবীগণ উম্মতের ভাই হিসেবে গণ্য।
উত্তরঃ হুজুর (ﷺ) তাঁর সৌজন্যমূলক সম্ভাষণে দয়া পরবশ হয়ে নম্রতা ও বিনয় প্রকাশার্থে নিজেকে اَخَاكُمْ
অর্থাৎ তোমাদের ভাই বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর একথা থেকে আমরা তাঁকে ‘ভাই’ বলার অনুমতি পেলাম কিভাবে? রাজা বা বাদশাহ তাঁর প্রজাদেরকে বলেন- আমি আপনাদের একজন খাদেম। তাই বলে প্রজাদের অধিকার নেই তাঁকে খাদেম বলে সম্বোধন করার। তদ্রূপ, মহাপ্রতিপালক বলেছেন যে, হযরত শুআইব, সালেহ ও হুদ (আলাইহিস সালাম) যথাক্রমে মদয়ানবাসী, ছামুদ ও আদ জাতিভুক্ত ছিলেন অন্য কোন জাতির লোক ছিলেন না। একথাটুকু বোঝানোর জন্য اَخَاهُمْ অর্থাৎ ‘তাদের ভাই’ বলা হয়েছে। এ কথা কোথায় বলা হল যে, ওসব গোত্রের লোকদেরকে অনুমতি দেয়া হয়েছিল ‘ভাই’ বলার? বক্ষ্যমান আলোচনার প্রথম অধ্যায়ে ইতিপূর্বে প্রমাণ করেছি যে, আম্বিয়ায়ে কিরামকে অন্যান্যদের সাথে সমতা নির্দেশক উপাধি দ্বারা সম্বোধন করা ‘হারাম’। ‘ভাই’ কথাটি হচ্ছে সমতাসূচক একটি শব্দ। একথা কোন পিতাও বরদাশত করেন না যে, তার ছেলে তাঁকে ‘ভাই’ বলে অভিহিত করুক।
৪নং আপত্তিঃ কুরআন ইরশাদ করছেঃ
اِنَمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةً
-‘‘মুসলমান পরস্পর ভাই।’’
{সূরাঃ হুজরাত, আয়াতঃ ১০, পারাঃ ২৬}
হুজুর (ﷺ) যেহেতু মুমিন, সেহেতু তিনিও মুসলমানদের ভাইরূপে পরিগণিত হলেন। এমতাবস্থায় তাঁকে ‘ভাই’ কেন বলা যাবে না?
উত্তরঃ তা’হলে খোদাকেও নিজের ‘ভাই’ বলুন। কেননা তিনিও তো ‘মুমিন।
কুরআনে আছেঃ اَلْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلاَمَ الْمُؤْمِنُ
-‘‘তিনি বাদশাহ দোষ-ত্রুটিমুক্ত, শাস্তিদাতা ও মুমিন।’’
{সূরাঃ হাশর, আয়াতঃ ২৩, পারাঃ ২৮}
প্রত্যেক মুমিন যেহেতু পরস্পর ভাই ভাই, সেহেতু খোদাও মুসলমানদের ভাই (!) খোদা মাফ করুন! অধিকন্তু, ভাই এর স্ত্রীক বলা হয় ‘ভাবী’ এবং তার সাথে বিবাহ বৈধ। কিন্তু নবীর স্ত্রীগণ হচ্ছেন মুসলমানদের মা; তাঁদের সঙ্গে বিবাহ হারাম। (কুরআন করীম) এদিক দিয়ে নবী হচ্ছেন আমাদের জন্য পিতার মত। পিতার স্ত্রী হচ্ছেন মা, ভাইয়ের স্ত্রী মা নয়। তারপর, আমরা তো মুমিন, কিন্তু হুজুর (ﷺ) হচ্ছেন স্বয়ং ঈমান।
❏কাসিদায়ে বুর্দা শরীফে আছেঃ
فَا لصِّدْقُ فِى الْغَارِ وَالصِّدِّيْقُ لَمْ يُرَيَا
অর্থাৎ- ছউর নামক গুহায় সত্যতাও ছিল, সিদ্দীকও ছিলেন। ‘সত্য’ হচ্ছে নবী, যাঁকে বিশ্বাস করে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) “সিদ্দীকে” পরিণত হন।
‘মুমিন’ শব্দটি হুজুর (ﷺ) ও সাধারণ মুসলমান উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেমনি প্রযোজ্য হয় শব্দগত দিক থেকে প্রতিপালক সাধারণ মুসলমানদের ক্ষেত্রেও। কিন্তু মুমিনের স্বরূপ ও প্রকৃতিগত দিক থেকে হুজুর (ﷺ) এর সাথে সাধারণ মুসলমানদের কোনরূপ মিল নেই, আমরা এক প্রকৃতির রাসূল (ﷺ) ভিন্ন প্রকৃতির। এর বিস্তারিত বিবরণ ১নং প্রশ্নের উত্তরে ইতোপূর্বে প্রদান করেছি।
৫নং আপত্তিঃ হুজুর (ﷺ) হচ্ছেন আদম- সন্তান, আমাদেরই মত পানাহার করেন, নিদ্রা যান, ঘুম থেকে জেগে উঠেন, সংসার জীবনযাপন করেন, রোগে ভুগেন, মৃত্যুবরণ করেন। এত কিছুতে পূর্ণ মিল থাকা সত্ত্বেও তাঁকে ‘মানুষ’ বা ‘নিজের ভাই’ বলা যাবে না কেন?
উত্তরঃ
❏সুবিখ্যাত ‘মছনবী’ শরীফে এর কতই না চমৎকার মিমাংসা করা হয়েছে, লক্ষ্য করুনঃ
گفت اينك مابشرا يشاں بشر
ماو ايشاں بسته مس خوابيم وخور
ايں نه دانستندايشاں ازعمى
هست فرقے درميا ں بے انتها
هر دوايك گل فى خور د ز نبورنخل
زاں يكے شد نسش زان ديگر عسل
هر دو گون آهو كيا خور ديندوآب
زيں يكے سر گين شد وزان مشك ناب
ايں خور دگر دوپليد ى زين جدا
داں خورد گرددهمہ نور خدا
অর্থাৎ- কাফিরগণ বলেছিল, আমরা যেমন মানুষ, পয়গাম্বরও তেমনি মানুষ, আমরা যেমন খাওয়া-দাওয়া করি, তিনিও করেন, তিনিও আমাদের মত নিদ্রা যান। অন্ধগণ এ সত্য অনুধাবন করতে পারে নি যে, পরিণামের দিক থেকে পয়গাম্বরের সাথে আমাদের অভাবনীয় তফাৎ রয়েছে। ভ্রমর ও মৌমাছি একই ফুল থেকে রসাস্বাদন করে বটে, কিন্তু একটির মধ্যে বিষের ও অন্যটির মধ্যে মধুর সৃষ্টি হয়। দু’টি হরিণ একইদানা-পানি গ্রহণ করে জীবন ধারণ করে কিন্তু একটির পেট থেকে মলমূত্র নির্গত হয়, আর একটিতে মূল্যবান ‘মেশক’ সৃষ্টি হয়। এরা যা কিছু খায়, তা থেকে সৃষ্টি হয় মলমূত্র-ময়লা, আর নবীর খানা-পিনা থেকে সৃষ্টি হয় ঐশী নূর।
এ প্রশ্নটি ঠিক এ রকম যেমন কেউ বলল, আমার কিতাব ও কুরআন একই রকম। কেননা উভয়টি একই কালি দিয়ে একই কাগজে একই কলম দ্বারা লিখা হয়েছে। একই বর্ণমালা দিয়েই এ দু’টি লিখা হয়েছে। একই প্রেসে ছাপানো হয়েছে একই ব্যক্তি খন্ড খন্ড করে বাধাই করেছে এবং একই আলমিরায় রাখা হয়েছে। তাই, কি পার্থক্য আছে এ দু’টির মধ্যে? কিন্তু কোন নির্বোধও বলবে না যে, এত সব বাহ্যিক বিষয়ে মিল আছে বিধায় কিতাবটি কুরআনের সমতুল্য হয়ে গেছে। তা’ হলে কুরআনের ধারক যিনি, তাঁর মত আমরা হই কিরূপে? তারা দেখছে না, হুজুর (ﷺ) এর কলেমা পাঠ করা হচ্ছে, অপূর্ব মিরাজের গৌরব অর্জনে গৌরবান্বিত হয়েছেন তিনি। নামাযে তাঁরই উদ্দেশ্যে আমরা সালাম জানাচ্ছি। তাঁকেই কেন্দ্র করে দরূদ পাঠ করছি; সকল নবী ও ওলীগণ হচ্ছেন তাঁর মহা দরবারের কর্মচারী। আপনার আমরা কোন্ ছার, ফিরিশতারাও এসব বৈশিষ্ট্যে গৌরব মন্ডিত হননি।
❏জনৈক কবি কি সুন্দর কথাই না বলেছেন-
مُحَمَّدٌُ بَشَرٌُ لاَّكَا لْبَشَرُ – يَاقُوْتُ حَجَرٌُ لاَّ كَالْحَجْرُ
অর্থাৎ- মুহাম্মদ (ﷺ) মানব বটে, কিন্তু সাধারণ মানব নন; অতি মূল্যবান রত্ন ইয়াকুতও পাথর বটে, তবে সাধারণ পাথর নয়।
কোন কোন দেওবন্দী বলেন যে, যদি হুজুর (ﷺ) কে ‘বশর’ (মানব) বলে অভিহিত করা হারাম হয়ে থাকে, তাহলে তাঁকে ‘ইনসান’ বা ‘আবদ’ (বান্দা) বলাও হারাম হওয়া চাই, কেননা এ শব্দগুলোর অর্থ প্রায় কাছাকাছি। অথচ আপনারা কলেমা পাঠের সময় আবদুহু ওয়া রাসূলুহু’ (আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল) কথাটি বলে থাকেন।
উত্তরঃ ‘বশর’ বা ‘মানুষ’ শব্দটি কাফিরগণ তাঁর অবমাননার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করত; আর মহাপ্রতিপালক তাঁকে ইনসান’ বা ‘আবদ’ বলেছেন সম্মানার্থে। যেমন خَلَقَ الْاِنسَانَ عَلَّمَهُ الْبَيَانَ [আল্লাহ ইনসান (হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)) কে সৃষ্টি করেছেন; তাঁকে সব কিছু বর্ণনা করার কলা-কৌশল শিখিয়েছেন।] অন্যত্র বলেছেন : اَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً মহা প্রভু রাত্রে তাঁর বান্দাকে ভ্রমণ করিয়েছেন।] তাই এ শব্দগুলো সম্মানার্থে বলা বৈধ; তবে ‘বশর’ বা মানুষ বলা হারাম। رَاعِنَا যেমন (আমাদিকের প্রতি লক্ষ্য করুন) এবং اَنْظُرْنَا (আমাদের দিকে নজর দিন) দুইটি সমার্থক শব্দ, কিন্তু নবীর উদ্দেশ্যে رَاعِنَا ‘রায়েনা’ বলা হারাম, কারণ তা হচ্ছে কাফিরদের প্রচলিত রীতি; আর اُنْظُرْنَا ‘উনযুরনা’ বলা হারাম নয়।
❏নবীকে ‘আবদ’ বলা প্রসঙ্গে ডক্টর ইকবাল কি সুন্দর কথা বলেছেনঃ
عبد ديگر عبده چيرے ديگر
اوسر اپاانتظار ايں منتظر
অর্থাৎ ‘আবদ’ বলতে যা বুঝায় আবদুহু’ বলতে তা থেকে ভিন্ন কথাই বোঝানো হয়। ‘আবদ’ বলা হয় তাকে, যে মওলার প্রতীক্ষায় থাকে, আর ‘আবদুহু’ (তাঁর বান্দা) বলা হয় সেই প্রিয়জনকে, যার জন্য স্বয়ং মওলা প্রতীক্ষায় থাকেন।
হুজুর (ﷺ) এর ‘আবদিয়তের’ ফলশ্রুতিতে মহান আল্লাহর শান প্রকাশ পায় আর মহান প্রতিপালকের মহত্বের ফলে আমাদের ‘আবদিয়ত’ প্রতিভাত হয়েছে। উজীর ও সিপাহী-উভয়ই রাজ কর্মচারী বটে, কিন্তু উযীরের দ্বারা বাদশাহ এর শান প্রকাশ পায়, আর সিপাহীর মান-সম্মান হচ্ছে রাজকীয় চাকুরী লাভের ভিত্তিতে।
৬নং আপত্তিঃ ‘শামায়েলে তিরমীযীতে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) এর একটি রিওয়ায়েত আছে, যেখানে তিনি হুজুর (ﷺ) প্রসঙ্গে বলেছেনঃ كَانَ بَشَرٌُ مِّنَ الْبَشَرِ অর্থাৎ- তিনি ছিলেন মানুষদের মধ্যে একজন মানুষ (বশর)। এরূপ, হুজুর (ﷺ) যখন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) কে স্ত্রী হিসেবে বরণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, তখন সিদ্দীক আকবর (رضي الله عنه) বলেছিলেন- আমি আপনার ভাই, আমার মেয়ে কি আপনার জন্য হালাল হবে? দেখুন, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হুযুরকে ‘বশর’ বলেছেন, আর হযরত সিদ্দীক আকবর (رضي الله عنه) বলেছেন তাঁকে নিজের ভাই।
উত্তরঃ মানুষ বা ভাই বলে নবীকে আহবান করা বা প্রচলিত ব্যবহারিক রীতি অনুযায়ী মানুষ বা ভাই বলে অভিহিত করা হারাম; তবে আকীদা বর্ণনা ও মাসায়েল জিজ্ঞাসা করার হুকুম ভিন্ন। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) বা হযরত সিদ্দীক আকবর (رضي الله عنه) কথাবার্তা বলার সময় হুযুরকে (ﷺ) ভাই বা মানুষ বলে অভিহিত করতেন না। এখানে সে শব্দটি ব্যবহার করেছেন বিশেষ প্রয়োজনে। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) বলেছিলেন, হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র জীবন সাধারণ মুসলমানদের মত কৃত্রিমতা বিবর্জিত, সাদা-সিধে অতিবাহিত হয়েছে, প্রতিটি কাজ তিনি নিজ হাতে সম্পন্ন করতেন। অনুরূপ হযরত সিদ্দীক আকবর (رضي الله عنه) জানতে চেয়েছিলেন এ মাসআলাটি যে, হুযুর তো আমাকে ভাই বলে সম্বোধন করেছেন, এ সম্বোধনের ফলশ্রুতি স্বরূপ সহোদর ভাই এর হুকুম আমার উপর বর্তাবে কিনা? এবং আমার কন্যাগণ হুযুরের জন্য বৈধ হবে কিনা? আকীদাহ বর্ণনার সময় আমরাও বলি যে, নবী মানুষ। হযরত ইবরাহিমখলীল (আলাইহিস সালাম) বিশেষ এক প্রয়োজনে স্বীয় স্ত্রী হযরত সারাহ সম্পর্কে বরেছিলেন- ইনি আমার বোন; অথচ বিবি সারাহ ছিলেন তাঁর স্ত্রী। তাই এরূপ কথা থেকে অবশ্যম্ভাবীরূপে একথা বোঝা যায় না, হযরত সারাহ তাঁকে ভাই বলে ডাকতেন।
এবার উনাদের সাধারণ প্রচলিত ভাষার ব্যবহারিক দিক তুলে ধরছি। একথা সর্বজন বিদিত যে, আত্মীয়তার দিক থেকে হুজুর (ﷺ) হচ্ছেন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) এর স্বামী, সাইয়িদুনা হযরত আলী (رضي الله عنه) এর ভাই এবং হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) এর ভ্রাতুষ্পুত্র। কিন্তু যখনই তাঁরা হাদীছ রিওয়ায়াত করতেন, তখন হযরত সিদ্দীকা (رضي الله عنه) এরূপ বলতেন না, ‘আমার স্বামী বলেছেন’, হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) বা হযরত আলী (رضي الله عنه) বলতেন না- ‘আমার ভাইপো বা আমার ভাই ইরশাদ করেছেন।
❏সবাই বলতেন-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
[রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন।] সুতরাং, যাঁরা আত্মীয়তার দিক থেকে ভাই হয়েও তাঁকে ভাই বলতেন না, এমতাবস্থায়, আমাদের মত নগণ্য গোলামদের কি অধিকার আছে তাঁকে ভাই বলার?
❏কবির ভাষায়ঃ
نسبت خود بسگت كردم وبس منفعلم
زانكه نسبت بسگت كوئى تو شدبے ادبے است
هزار بار بشو يم دهن بمشك وگلاب
هنوزنام تو گفبن كمال بے ادبى است
অর্থাৎ- হে আল্লাহর রাসূল! আমি নিজেকে আপনার কুকুরের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছি। আপনার কৃপা লাভের জন্য এরূপ সম্পৃক্ততা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। নতুবা আপনার গলির কুকুরের সাথে আমার মত নগণ্য ব্যক্তিকে সম্পর্কযুক্ত করাও বে-আদবীর শামিল। আমার এ অপবিত্র মুখকে হাজার বার জল ও মেশক দ্বারা ধুয়েও আপনার মুবারক নাম উচ্চারণ করা পুরাপুরিই বে-আদবী।
জনাব, ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে এ বিধান ছিল যে, কেউ যদি কোন বিষয়ে হুজুর (ﷺ) এর সমীপে কিছু আরয করতে চাইতেন, তখন তাঁকে কিছু দান করেই আরয করতে হত।
❏এ প্রসঙ্গে কুরআন ইরশাদ করেছেঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نَاجَيْتُمُ الرَّسُولَ فَقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيْ نَجْوَاكُمْ صَدَقَةً
-‘‘ওহে মুমিনগণ, যখন তোমরা রাসূলের কাছে চুপে চুপে কোন কথা আরয করতে চাও, তখন আরয করার আগেই কিছু সদকা কর।’’
সাইয়িদুনা হযরত আলী (رضي الله عنه) এ নিয়ম পালন করেছিলেন।
(তাফসীরে খাযেনে’ সে একই আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)।
এ বিধান পরবর্তীতে রহিত হয়ে গেছে বটে, তবে, এতে হুজুর (ﷺ) এর মান-মর্যাদার মাহাত্ম্যই ফুটে উঠেছে। নামাযে মহা প্রতিপালকের সাথে কথা বলার জন্য কেবল ওযু করলেই হয়, আর হুযুর সমীপে কিছু আরয করতে চাইলে সদকা করতে হয়। এমতাবস্থায় তাঁকে ভাই বলার অবকাশ রইল কোথায়?
━━━━━━