(৫) কয়েক জায়গায় দাঁড়ানো মাকরূহ।


প্রথমতঃ যমযম ও ওযুর পানি ব্যতীত অন্যান্য পানি পান করার সময় বিনা কারণে দাঁড়ানো মাকরূহ।


দ্বিতীয়তঃ পার্থিব লালসায় বিনা কারণে দুনিয়াবী লোকের সম্মানে দাঁড়ানো মাকরূহ।


তৃতীয়ত: ধনদৌলতের কারণে কাফিরের সম্মানার্থে দাঁড়ানো মাকরূহ।


❏ ফাতওয়ায়ে আলমগীরীর কিতাবুল কারাহিয়া শীর্ষক আহলে জিম্মাহ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-


وَإِنْ قَامَ تَعْظِيمًا لَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْوِيَ شَيْئًا مِمَّا ذَكَرْنَا أَوْ قَامَ طَمَعًا لِغِنَاهُ كُرِهَ لَهُ ذَلِكَ كَذَا فِي الذَّخِيرَةِ.


-‘‘যদি কারো জন্য উলে­খিত অবস্থাদি ব্যতীত দাঁড়ানো হয় বা সম্পদের লালসায় দাঁড়ানো হয়, তাহলে তা মাকরূহ হবে। এমনটি জাখিরাহ গ্রন্থে রয়েছে।’’  ৭৫

➥{নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, ৫/৩৪৮ পৃঃ }


চতুর্থত: যে ব্যক্তি নিজের তাযীমের জন্য লালায়ীত, তার সম্মানার্থে দাঁড়ানো নিষেধ।


পঞ্চমত: যদি কোন বড় লোক মাঝখানে বসা অবস্থায় আছে এবং তার চারদিকে বিনীতভাবে মানুষ দাঁড়িয়ে রইল। এ ধরনের দাঁড়ানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিজের জন্য কারো দাঁড়িয়ে থাকা পছন্দ করাটা নিষেধ। দ্বিতীয় অধ্যায়ে এর প্রমান দেয়া হবে ইনশা-আল্লাহ। এ প্রকারেেভদটা যেন স্বরণ থাকে।


উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে এটা নিঃসন্দেহে জানা গেল যে মীলাদ শরীপে পবিত্র বেলাদতের আলাচনা করার সময় কিয়াম করাটা সাহাবায়ে কিরাম ও পূর্ববর্তী নেককার বান্দাদের থেকে প্রমাণিত। আমি সুন্নাত কিয়ামের বর্ণনায় চতুর্থ পর্যায়ে সে ধরনের কিয়ামের কথা উলে­খ করেছি, যা কোন খুশির সংবাদ পেয়ে বা কোন প্রিয়জনের আলোচনার সময় করা হয় এবং প্রথম পর্যায়ে ওই ধরনের কিয়ামের কথা উলে­খ করেছি, যা ধর্মীয় মর্যাদাশীল কোন জিনিসের সম্মানে করা হয়। সুতরাং মীলাদ শরীফে কিয়াম কয়েক কারণে সুন্নাত।


প্রথমতঃ এটা পবিত্র বেলাদতের আলোচনার সম্মানে করা হয়।

দ্বিতীয়তঃ এ জন্য যে, মুসলমানের জন্য যিকরে বেলাদতের চেয়ে বড় খুশির বিষয় আর কি হতে পারে আর খুশির সংবাদে দাঁড়ানো সুন্নাত।

তৃতীয়তঃ মুসলমানের কাছে নবী করীম

(ﷺ) থেকে বেশী প্রিয় আর কে আছে? মা-বাপ, ধন-সম্পদ ইত্যাদি সব কিছু থেকে বেশি প্রিয়ভাজন হচ্ছেন হুযুর আলাইহিস সালাম। তাঁর যিকরের সময় দাঁড়ানো পূর্বসূরী নেকবান্দাদের সুন্নাত।

চতুর্থতঃ পবিত্র বেলাদতের সময় ফিরিশতাগণ দুয়ারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এজন্য পবিত্র বেলাদতের আলোচনার সময় দাঁড়ানো ফিরিশতাদের কাজের সাথে মিল রয়েছে।

পঞ্চমতঃ আমি মীলাদ শরীফের আলোচনায় হাদীছ দ্বারা প্রমাণ করেছি যে, হুযুর আলাইহিস সালাম স্বীয় গুণাবলী ও বংশ পরিচয় মিম্বরে দাঁড়িয়ে বর্ণনা করেছেন। এতে কিয়ামের মূল বৈশিষ্ট পাওয়া যায়।

ষষ্টতঃ শরীয়ত একে নিষেধ করেনি এবং প্রত্যেক দেশে সাধারণ মুসলমানগণ একে ছওয়াবের কাজ মনে করে পালন করে। যে কাজটা মুসলমানগণ ভাল কমনে করে, সে কাজ আল্লাহর কাছেও ভাল বলে গণ্য। আমি এর বিশ্লষণ মীলাদ ও বিদআতের আলোচনায় করেছি। অধিকন্তু প্রথমেই আরয করেছি যে. মুসলমান যে কাজটাকে মুস্তাহাব হিসেবে জানে, শরীয়তেও তা মুস্তাহাব হিসেবে গণ্য।


❏ ফত্ওয়ায়ে শামীর তৃতীয় খন্ড কিতাবুল ওয়াকফের وقف منقولات শীর্ষক আলোচনায় বর্ণিত আছে-


لِأَنَّ التَّعَامُلَ يُتْرَكُ بِهِ الْقِيَاسُ لِحَدِيثِ مَا رَآهُ الْمُسْلِمُونَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ حَسَنٌ


-‘‘ডেক্সি, জানাযার খাঁটিয়া ইত্যাদির ওয়াকফ ধারণামত নাজায়েয হওয়ার কথা। কিন্তু যেহেতু সাধারণ মুসলমানগণ এর অনুসারী, সেহেতু কিয়াসকে বাদ দেয়া হয়েছে এবং ওটাকে জায়েয বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।’’  ৭৬

➥{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ৪/৩৬৪ পৃঃ}


দেখুন, সাধারণ মুসলমানগণ যে কাজটাকে ভাল মনে করে এবং এর হারাম হওয়া সম্পর্কে সুষ্পষ্ট দলীল না থাকে, তখন কিয়াসকে বাদ দেয়া প্রয়োজন।


❏ দুররুল মুখতারের পঞ্চম খন্ড কিতাবুল ইাজারাতের اجارة الفاسده অধ্যায়ে উলে­খিত আছে-


(وَجَازَ إجَارَةُ الْحَمَّامِ) لِأَنَّهُ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ - دَخَلَ حَمَّامَ الْجُحْفَةِ وَلِلْعُرْفِ. وَقَالَ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ - مَا رَآهُ الْمُسْلِمُونَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ حَسَنٌ


- স্নানাগার ভাড়া দেয়া জায়েয, কেননা হুযুর আলাইহিস সালাম হাজফা শহরের স্নানাগার তশরীফ নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজন্য এটা প্রচলন হয়ে গেছে। হুযুর আলাইহিস সালাম ফরমা, যেটা মুসলমানগণ যে ভাল মনে করে, সেটা আল্লাহর কাছেও ভাল।  ৭৭

➥{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ৬/৫১-৫২ পৃঃ }


এর প্রেক্ষাপট ফত্ওয়ায়ে শামীতে উলে­খিত আছে যে, হুযুর আলাইহিস সালামের হাজফা শহরের স্নানাগারে প্রবেশ করার বর্ণনাটি খুবই দুর্বল। কেউ কেউ একে মওজু বা বানাওট হাদীছ বলেছেন। সুতরাং স্নানাগার জায়েয হওয়ার একটি মাত্র দলীল অবশিষ্ট রইল অর্থাৎ সাধারণভাবে প্রচলনটাতো প্রমাণিত হলো। মুসলমানগণ যে কাজটা সাধারণভাবে বৈধ মনে করে, তা জায়েয।


❏ একই জায়গায় শামীতে আরও উলে­খ আছে-


لِأَنَّ النَّاسَ فِي سَائِرِ الْأَمْصَارِ يَدْفَعُونَ أُجْرَةَ الْحَمَّامِ وَإِنْ لَمْ يُعْلَمْ مِقْدَارُ مَا يَسْتَعْمِلُ مِنْ الْمَاءِ وَلَا مِقْدَارُ الْقُعُودِ، فَدَلَّ إجْمَاعُهُمْ عَلَى جَوَازِ ذَلِكَ وَإِنْ كَانَ الْقِيَاسُ يَأْبَاهُ


-কেননা সব শহরগুলোতে মুসলমানগণ স্নানাগারের ফি দিয়ে থাকেন। সুতরাং তাদের ঐক্যমতের কারণে জায়েয হওয়াটা বোঝা গেল, যদিওবা এটা কিয়াসের বিপরীত। কিয়াস অনুসারে স্নানাগারের ফি নাজায়েয হওয়াটাই বাঞ্চনীয়। কেননা কতটুকু পানি ব্যবহার হবে তা জানা যায় না। অথচ ভাড়ার ব্যাপারে লাভ ক্ষতি সম্পর্কে জানাটা প্রয়োজন।  ৭৮

➥{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ৬/৫২ পৃঃ }


কিন্তু যেহেতু মুসলমানগণ সাধারণভাবে একে জায়েয মনে করে, সেহেতু এটা জায়েয। মীলাদ শরীফে কিয়াম করাটা সর্বসাধারণ মুসলমানগণ মুস্তাহাব মনে করে। সুতরাং, এটা মুস্তাহাব।


সপ্তমতঃ এ জন্য যে, আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান-


وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ


-‘‘হে মুসলমানগণ, আমার নবীকে সাহায্য কর ও তাঁকে সম্মান কর।’’  ৭৯

➥{ সূরা ফাতহ, আয়াত নং-৯}


তাযীমের বেলায় কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই, বরং যে যুগে বা যে জায়গায় তাযীমের যে রীতি প্রচলিত, সেভাবে তাযীম করুন, যদি শরীয়ত একে হারাম না করে থাকে। যেমন তাযীমী সিজ্দা ও রুকু করা হারাম। আমাদের যুগে রাজকীয় হুকুমাদিও দাঁড়িয়ে পাঠ করা হয়। সুতরাং হুযুর আলাইহিস সালামের যিকরও দাঁড়িয়ে করা চাই। দেখুন- كُلُوا وَاشْرَبُوا -‘‘খারা ও পান করুন।’’  ৮০

➥{সূূরা বাক্বারা, আয়াত নং-৬০}


বাখ্যে শর্তহীনভাবে খারা পিনার অনুমতি রয়েছে অর্থাৎ প্রত্যেক হালাল আহার্য গ্রহণ করুন। তাই বিরানী, জরদা কোরমা ইত্যাদি সবই কুরূনে ছালাছায় থাকুক বা না থাকুক হালাল। এ রকম  শব্দেও শর্তহীন নির্দেশ রয়েছে যে প্রত্যেক প্রকারের বৈধ তাযীম করুন কুরূনে ছালাছা থেকে এটা প্রমাণিত হোক বা না হোক।


অষ্টমতঃ আল্লাহ তা’আলা উরশাদ ফরমান-


وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ


অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর নিশানা সমূহের সম্মান করে, তা হবে আত্মার সংযমশীলতার বহিঃপ্রকাশ।  ৮১

➥{সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত নং-৩২}


❏ তাফসীরে রুহুল বয়ানে আয়াত ৮২


وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ


➥{সূরা মায়েদা, আয়াত নং-২}


এর ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে যে, যে জিনিসটা ধর্মীয় মর্যাদা লাভ করেছে, তা আল্লাহর নিশানা সমূহের অর্ন্তভুক্ত, সে সবের সম্মান করা প্রয়োজন। যেমন, কোন বিশেষ মাস, কোন বিশেষ দিন বা স্থান, কোন বিশেষ সময় ইত্যাদি। এ জন্যই সাফা-মারওয়া, কাবা মুয়াজ্জমা, মাহে রমযান, শবে কদরের তাযীম করা হয়। যিকরে বিলাদতও আল্লাহর নিশানাসমূহের অর্ন্তভুক্ত। অতএব এর তাযীমও করণীয়, যা কিয়অমের মাধ্যমে আদায় হয়।


আমি আটটি দলিলের সাহায্যে কিয়াম মুস্তাহাব হওয়াটা প্রমাণ করলাম। কিন্তু বিরোধিতাকারীদের কাছে খোদার রহমতে হারাম প্রমাণ করার একটি দলীলও নেই। কেবল স্বীয় মনগড়া অভিমত দ্বারাই হারাম বলেন।

━━
Top