❏ প্রশ্ন-১৪২: কে শাসন ক্ষমতার জন্য অধিক যোগ্য  হবেন? অনভিজ্ঞ মুত্তাকী ও আলেমে দ্বীন নাকি অভিজ্ঞতা আলেম নন এমন মানুষ?

---

কোন দেশে যদি এমন একজন ব্যক্তি থাকেন যিনি মুত্তাকী, পরহেযগার ও আলেমে দ্বীন, তবে অনভিজ্ঞ। আবার যদি এমন একজন ব্যক্তি থাকেন যিনি মুত্তাকী ও আলেমে দ্বীন নন, তবে শাসনকার্য ও ব্যবস্থাপনা কার্যে ব্যাপক অভিজ্ঞতার অধিকারী- এখন প্রশ্ন হচ্ছে এতদুভয়ের মধ্যে কে শাসন ক্ষমতার জন্য অধিক যোগ্য ও অধিকারী হবেন?


✍ উত্তর: কালাম শাস্ত্রের কিতাবাদিতে রয়েছে যে, খিলাফত ও শাসন ক্ষমতার প্রধান হওয়ার জন্য নিষ্পাপ হওয়া শর্ত নয়, অনুরূপ এটাও শর্ত নয় যে, তাকে সমকালীনদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ হতে হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি দক্ষ ও রাষ্ট্রের শাসন কার্যের ব্যাপারে অভিজ্ঞ, সে আলেম ও মুত্তাকী না হলেও তাকে শাসন ক্ষমতার প্রধান বা আমির বানানো জায়েয। তবে যে ব্যক্তি শরীয়তের সীমা লঙ্ঘন করে, তাকে আমির বানানো জায়েয নয়। 

186. শরহুল আক্বায়েদ, পৃষ্ঠা নং-১৫৬


‘আল-খিলাফাহ ওয়াল ইমারাহ’ গ্রন্থে রয়েছে যে, 


ولا يشترط فى الامام ان يكون افضل من اهل زمانه لان المساوى فى الفضيلة بل المفضول الاقل علما وعملا اى كان اعرف بمصالح الامامة ومفاسدها واقدر على القيام بمواجبها خصوصًا اذا كان المفضول ادفع للشر وابعد عن اثارة الفتنة . 


‘নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার জন্য এটা শর্ত নয় যে, তাকে সমকালীনদের মধ্যে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ হতে হবে। কেননা মর্যাদায় সমকক্ষ ব্যক্তি, বরং ইলম ও আমলে কম মর্যাদাবান ব্যক্তিও যিনি রাষ্ট্রের স্বার্থ ও সমৃদ্ধির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন বিশেষতঃ যিনি রাষ্ট্রের স্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ড প্রতিরোধ করতে পারেন এবং ফিতনার আলামত দূর করতে পারেন- এমন ব্যক্তি স্বল্প জ্ঞানী হলেও তাঁকে রাষ্ট্র প্রধান করা জায়েয।’


‘শরহুল মুজাল্লাহ্’ গ্রন্থে রয়েছে যে, 


يجوز تقليد الفاسق وتنفذ قضاياه اذالم يجاوز فيها حدالشرع .


‘ফাসিক ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত শরীয়তের সীমালঙ্ঘন করবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে মেনে চলা এবং তার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন করা জায়েয।’ 

187. শরহুল আক্বায়েদ, পৃষ্ঠা নং-১৬৪


আমাদের আবেদন! যারা  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)   ’র মান-মর্যাদায় বেয়াদবী করে এবং অশালীন ও অশ্রাব্য কথাবার্তা বলে, বাংলাদেশের আইনে তাদের মৃত্যুদন্ডের শাস্তি সংসদে পাশ করার জন্য সুপারিশ করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। তাই ক্ষমতাসীনদের নিকট আমাদের জোর আবেদন হচ্ছে, এই আইনটি সংশোধন করতঃ  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)   ’র মান-মর্যাদায় যারা বেয়াদবী করে তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের শাস্তির বিধান করা হোক। কারণ  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)   ’র পবিত্র মান-মর্যাদার ব্যাপারে অনুচিত শব্দ ব্যবহার করা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। তাই মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হচ্ছে যারা রাসূলুল্লাহ'র শানে বেয়াদবী করে তারা মুরতাদ এবং তাদেরকে হত্যা করা ওয়াজিব।


ফতোয়ায়ে শামীতে রয়েছে,


 اجمع المسلمون ان شاتمه كافر


‘রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কে গালমন্দকারী মুসলমানদের সর্বসম্মত মতে কাফির।’ তার বিধান হচ্ছে মুরতাদের বিধানের অনুরূপ ان حكمه كالمرتد এবং তার ওপর মুরতাদের বিধান প্রয়োগ করা হবে। 

188. দুররুল মুখতার, মুরতাদ অধ্যায়, পৃষ্ঠা নং-৩১৮


ফতোয়ায়ে শামীতে একথাও রয়েছে যে,


 اجمع المسلمون ان شاتمه كافر وحكمه القتل ومن شك فى عذابه كافر. 


‘এটা মুসলমানদের সর্বসম্মত মত যে, যে ব্যক্তি  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)   কে গালমন্দ করে সে কাফির এবং যে ব্যক্তি তার (গালমন্দকারী) কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে সেও কাফির।’


ফতোয়ায়ে আলমগিরীতে রয়েছে যে,


 اهانة النبى صلّى الله عليه وسلّم بالاجماع كفر .


 ‘ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)   কে অসম্মান করা সর্বসম্মত মতে কুফরী।’ 

189.দুররুল মুখতার, মুরতাদ অধ্যায়, খন্ড নং-২, পৃষ্ঠা নং-২৬৩


উপরোক্ত উদ্ধৃতিসমূহ হতে প্রতীয়মান হয় যে, যে ব্যক্তি  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)   ’র শানে (মান-মর্যাদা) বেয়াদবী করে, সে সর্বসম্মতভাবে কাফির ও মুরতাদ এবং যে ব্যক্তি তার কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে সেও কাফির এবং ইসলাম হতে বহিষ্কৃত। আর মুরতাদের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড। সুতরাং  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)   ’র প্রতি বেয়াদবী প্রদর্শনকারীদের শাস্তি মৃত্যুদন্ডই। 


হাদিস শরীফে বর্ণিত রয়েছে যে, 


من بدّل دينه فاقتلوهُ 


‘যে ব্যক্তি স্বীয় দ্বীন (ধর্ম) পরিবর্তন করলো, তাকে হত্যা করো।’রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)’র ওফাতের পর সাহাবায়ে কেরাম এ বিষয়ের ওপর সর্বসম্মতভাবে ঐকমত্য পোষণ করলেন যে, মুরতাদের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড।"

190. বাদায়েয়ুস সানায়ে, মুরতাদ অধ্যায়।


‘রাসায়েলে ইবনে আবেদীন’ এর মধ্যে রয়েছে যে, মুসলিম উম্মাহ একথার ওপর ঐকমত্য পোষণ করে যে, মুরতাদের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ডই। ‘বাহরুর রায়েক্ব’ গ্রন্থের মুরতাদ অধ্যায়ে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি মুহাম্মদ   এর সাথে বিদ্বেষ পোষণ করবে কিংবা তাঁকে   গালমন্দ করবে, সে কাফির ও মুরতাদ এবং তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। 

191. বাদায়েয়ুস সানায়ে, মুরতাদ অধ্যায়।


অনুরূপ নবীগণের মধ্যে কোন নবীকে গালমন্দকারী কাফির। ‘উকূদুদ দুররিয়াহ ফি তানকিহিল হামিদ’ গ্রন্থে রয়েছে যে, 


سب النبى صلّى الله عليه وسلّم او احد من الانبياء عليهم السلام كفر

 

‘ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)    কিংবা নবীগণের (عليهم السلام) কোন একজন নবীকে (عليه السلام) গালমন্দ করা কুফরী।’


ওলামায়ে দেওবন্দের অভিমত: এখন ওলামায়ে দেওবন্দ এর মতামত ও ফতোয়া পেশ করছি। তারাও এ বিষয়ে একমত। মুফতী কেফায়াতুল্লাহ সাহেবও ‘কেফায়তুল মুফতী’ নামক গ্রন্থে এই মাসআলাটির ব্যাখ্যা-বিশে­ষণ দিয়েছেন। তিনি বলেন,  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)    কিংবা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضى الله تعالي عنه) এর মহান মর্যাদায় শিষ্টাচার বিবর্জিত আচরণকারী ব্যক্তি কিংবা এরূপ শিষ্টাচার বিবর্জিত আচরণকারী ব্যক্তির প্রতি যে ব্যক্তি অসন্তোষ প্রকাশ করবেনা, সেও কাফির। ফোকাহায়ে কেরাম (رحمه الله تعالي ) এ বিষয়ে একমত যে,  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)   ’র পবিত্র মান-মর্যাদার প্রতি শিষ্টাচার বিবর্জিত আচরণকারী ব্যক্তি কাফির। 

192. কেফায়াতুল মুফতি, মুরতাদ অধ্যায়, পৃষ্ঠা নং-৭১, খন্ড নং-১।


মুফতী মাহমুদ দেওবন্দী গাঙ্গুহী সংকলিত ‘ফতোয়া মাহমুদিয়া ’ এর মধ্যে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি হুযূর (ﷺ) এর পবিত্র মান-মর্যাদায় গালমন্দ করবে এবং অশালীন কথাবার্তা বলবে, সে মুরতাদ এবং ইসলামের পরিসীমা হতে বহিষ্কৃত। তাওবা করা তার জন্য আবশ্যক। আর যদি সে তাওবা না করে, তাহলে তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। 

193. ফতওয়া মাহমুদিয়া, পৃষ্ঠা নং-১৬২, খন্ড নং-১২


থানভী দেওবন্দী কর্তৃক সংকলিত ‘এমদাদুল ফাতাওয়া’ এর মধ্যে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শানের প্রতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা ও বেয়াদবী করা কুফরী। 

194. এমদাদুল ফতওয়া, আকায়েদ অধ্যায়, পৃষ্ঠা নং-৩৯১, খন্ড নং-৫।


‘ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ’ কিতাবের মুরতাদ অধ্যায়ে রয়েছে যে, নবী করিমকে (ﷺ) গালমন্দ করা কুফরী। 

195. এমদাদুল ফতওয়া, পৃষ্ঠা নং-৩৫৯


রাসূলুল্লাহ(ﷺ)’র শানে শিষ্টাচার বিবর্জিত আচরণকারী ব্যক্তি সর্বসম্মত মতে কাফির ও মুরতাদ এবং তাকে হত্যা করা ওয়াজিব।

তবে মতানৈক্য কেবল এ বিষয়ে যে,  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)’র শানে শিষ্টাচার বিবর্জিত আচরণকারী ব্যক্তি কি তাওবার কারণে মৃত্যুদন্ড হতে রেহাই পাবে নাকি পাবেনা। ‘ফতোয়ায়ে শামী’ এর মধ্যে রয়েছে যে,  


اجمع المسلمون ان شاتمه كافر وحكمه القتل 


"রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)   ’র শানে বিয়াদবী প্রদর্শনকারী ব্যক্তি কাফির এবং তার বিধান হচ্ছে হত্যা বা মৃত্যুদন্ড।’


‘আল আশবাহ ওয়ান নাযায়ের’ গ্রন্থে রয়েছে যে,


 لا تصح ردة السكران الاالردة بسب النبى صلّى الله عليه وسلّم فانه يقتل ولايعفى عنه . كذا فى البزازية كل كافر تاب فتوبته مقبولة فى الدنيا والاخرة الاجماعة الكافر يسب النبى صلّى الله عليه وسلّم وسائر الانبياء يعقب .


‘নবী করিম (ﷺ) কে গালমন্দ করা কুফরী যদিও কেউ মাতাল অবস্থায় গালমন্দ করে থাকুক। আর নবী করিম (ﷺ) কে গালমন্দকারী ব্যক্তির তাওবা কবুল হবে না।’ 

196. এমদাদুল ফতওয়া, খন্ড-১, পৃষ্ঠা নং-২৮৬।


‘ফতোয়া হিন্দিয়া’ এর মধ্যে রয়েছে যে,  


استخفاف النبى صلّى اللهُ عليه وسلّم كفر. 


নবী করিম  কে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা কুফরী।’


 ‘ফতোয়ায়ে কাযীখান’ এর মধ্যে রয়েছে যে,


اذا عاب الرجل النبى صلّى الله عليه وسلّم فى شئى كان كافرا وتكر فى الاصل ان شتم النبى صلّى الله عليه وسلّم كفر . 


রাসূলুল্লাহ  কে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও গালমন্দ করা কুফরী ও ইরতিদাদ (মুরতাদ হওয়ার কাজ)। কোন ব্যক্তি কোন বিষয়ে হুযূর (ﷺ) এর দোষ-ত্রুটি রটালে কিংবা মর্যাদাহানিকর কোন কথাবার্তা বললে সে কাফির।

সাবধান! মুখ হিফাজত করা ফরয। এই মাসআলাটি ঈমানের মাপকঠি। যেমন তেমন কথা বলা যাবেনা। মুফতী আব্দুল হক দেওবন্দীও যথেষ্ট ব্যাখ্যা,বিশে­ষণ করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  ’র শানে শিষ্টাচার বিবর্জিত আচরণকারী ব্যক্তি সর্বসম্মত মতে কাফির ও মুরতাদ এবং তার কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণকারী ব্যক্তিও কাফির এবং ইসলামের পরিসীমা হতে বহিষ্কৃত। মুরতাদের শাস্তি হচ্ছে হত্যা বা মৃত্যুদন্ড। সুতরাং  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)   ’র প্রতি বেয়াদবী প্রদর্শনকারী ব্যক্তির শাস্তি মৃত্যুদন্ডই। 

197. ফাতওয়া হক্কানীয়া, খন্ড নং-২, পৃষ্ঠা নং-৩৭৫, মুফতী আব্দুল হক সাহেব, প্রতিষ্ঠাতা: জামে দারুল উলুম হক্কানীয়া, আকোড়া খটক, নও শাহরা জেলা, পাকিস্তান।


Top