❏ প্রশ্ন-১৪৮: হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضى الله عنها ) কর্তৃক তাঁকে রওজায়ে আকদাসে দাফন করার ব্যাপারে নিষেধ করার কারণ কী ছিল? বুখারী শরীফের ১ম খন্ডর কিতাবুল জানায়েয এর মধ্যে একটি হাদিস রয়েছে যার ওপর শিয়ারা এই মর্মে আপত্তি তোলে যে, হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضى الله تعالي عنها) বলেন, আমাকে হুযূর   এর সাথে দাফন করবে না। কারণ আমি তাঁকে পবিত্র মনে করিনা। শিয়াদের এই অপবাদের জবাব কি?


✍ উত্তর:  عليه التكلان وهو المستعان আল্লাহর ওপর নির্ভর করছি। তিনিই একমাত্র সাহায্যকারী। প্রশ্নে উল্লেখিত হাদিসটি সঠিকভাবে উদ্ধৃত করা হয়নি। হাদিসটির মূল ও প্রকৃত শব্দ হচ্ছে,


لا تدفنّى معهم وادفنى مع صواحبى بالبقيع لا ازكىٰ به ابدًا .


হাদিসটির অনুবাদও ভুল, বরং বিকৃত। হাদিসটিতে এরূপ কোন বাক্য নেই যার অনুবাদ, আমি তাকে পবিত্র মনে করিনা' আছে। সহীহ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ওমাদাতুল ক্বারী’ এর মধ্যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে,  لا ازكىٰ শব্দটি হচ্ছে, যার অর্থ হচ্ছে, لااثنٰى علّى بسببه ‘যাতে এর দ্বারা আমি প্রশংসিত না হই।’  

206. ওমদাতুল ক্বারী, খন্ড নং-৮, পৃষ্ঠা নং- ২৩৮।


যার মর্মার্থই উদ্দেশ্য। 

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضى الله تعالي عنها) বিনয় প্রকাশ করতে একথা বলেছেন। এধরনের শব্দ (صيغه مجهول বা কর্মবাচ্যের রূপ) বিনয় ও নম্রতা প্রকাশের জন্য ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, যদি আমাকে হুযূর   এর রাওজায়ে আকদাসে দাফন করা হয়, তাহলে এই দাফনের কারণে মানুষ এই মর্মে আমার প্রশংসা করবে যে, রাসূলুল্লাহ'র (ﷺ) অন্যান্য বিবিগণের এই মর্যাদা ছিলনা যা হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضى الله تعالي عنها) এর জন্য ছিল, তাই হযরত আয়েশাকে (رضى الله تعالي عنها) হুযূরের   রাওজায়ে আকদাসে দাফন করা হয় এবং অন্যান্য বিবিগণকে জান্নাতুল বাক্বী বা অন্যান্য জায়গায় দাফন করা হয়। আমি নিজের জন্য এই প্রশংসা চাইনা।

তাই রাওজা পাকে হুযূর (ﷺ), হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضى الله تعالي عنه) ও হযরত ওমর (رضى الله تعالي عنه) এর সাথে আমাকে যেন দাফন করা না হয় এবং জান্নাতুল বাক্বীতে হুযূরের (ﷺ) অন্যান্য বিবিগণের সাথে দাফন করা হয়।


قال ابن بطال فيه معنى التواضع كرهت عائشة ان يقال انها مدفونة مع النبى صلّى الله عليه وسلّم فيكون فى ذلك تعظيما لها .


ইবনে বাত্তাল বলেন, এর অর্থ হচ্ছে বিনয়। হযরত আয়েশা (رضى الله تعالي عنها) তাকে রাসূলুল্লাহ'র   সাথে দাফন করার কথা বলতে অপছন্দ করেছেন। এরূপ হলে তা তার জন্য সম্মানের কারণ হয়ে যেত।"

207. ওমদাতুল ক্বারী, খন্ড নং-৮, পৃষ্ঠা নং-২২৮।


তদুপরি আইনীতে ‘তাকমালা লি ইবনিল আবাদ’ এর সূত্রে হযরত আয়েশা (رضى الله تعالي عنها)-এর কথা- আমাকে হুযূর  , হযরত আবু বকর (رضى الله تعالي عنه) ও হযরত ওমর (رضى الله تعالي عنه) এর সাথে দাফন করবে না, এর কারণ হিসেবেও একটি হাদিস বর্ণিত রয়েছে। হুযূর   এর রাওজা পাকে যার যার দাফনের বিষয়টি পূর্ব নির্ধারিত ছিল হুযূর   স্বয়ং তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন।  


عن عائشة رضى الله عنها قالت قلتُ للنبى صلّى الله عليه وسلّم انى لا ارانى الا ساكون بعدك فتأذن لى ان ادفن الى جانبك . قال و انى لك ذلك الموضع ما فيه الا قبرى وقبر ابي بكر وعمر وفيه عيسىٰ بن مريم عليه السلام.


 হযরত আয়েশা (رضى الله تعالي عنها) হতে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেনঃ আমি হুযূরকে (ﷺ) বললাম, মনে হয় আমি আপনার পরে মৃত্যুবরণ করব। সুতরাং আপনার পাশে আমাকে দাফন করার জন্য আপনি অনুমতি দিন, আপনি অনুমতি দিন, তখন হুযূর (ﷺ) বললেন, ওই স্থানে আমার কবর, হযরত আবু বকর, হযরত ওমর ও হযরত ঈসা ইবনে মারইয়ামের কবরের জায়গা ছাড়া আর কোন জায়গা নেই।"

208. ‘আইনী শরহে বুখারী, খন্ড-৮, পৃষ্ঠা-২২৮।


এতে বুঝা গেলো যে, যদিও পূর্বে বা শুরুতে হযরত আয়েশার (رضى الله تعالي عنها) নিকট রাওজায়ে মুস্তাফা   এর মধ্যে দাফন হওয়ার আকাঙ্খা ছিল, কিন্তু রাসূলুল্লাহ'র   হাদিসের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে দাফন করতে নিষেধ করেন। মোদ্দাকথা তাকে আমি পবিত্র মনে করিনা, এটা হাদিসটির মর্মার্থ ও উদ্দেশ্য নয়। বরং তা হচ্ছে সাহাবা বিদ্বেষী ইসলামের কোন শত্রুর মস্তিষ্ক প্রসূত কথা।

Top