❏ প্রশ্ন-১৫৪: শাহাদাত কাকে বলে, এর সংজ্ঞা কী এবং শাহাদাতের সংখ্যা কত?


✍ উত্তর: هو المستعان واليه المأب والتكلان . শাহাদাত শব্দের অর্থ হচ্ছে সাক্ষ্য। কোরআন মজিদে হুকুম দেওয়া হয়েছে যে, দু’জন পুরুষের সাক্ষ্যগ্রহণ করো। যদি দু’জন পুরুষ পাওয়া না যায়, তাহলে একজন পুরুষ ও দু’জন নারী। 

কোরআন মজিদে সত্য সাক্ষ্য গোপন করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই হুকুম দেওয়া হয়েছে, 


وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ وَمَنْ يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آثِمٌ قَلْبُهُ 


সাক্ষ্য গোপন করোনা। আর যে ব্যক্তি সাক্ষ্য গোপন করবে, তা হচ্ছে অন্তরের পাপ ও অপবিত্রতা। 

213. সূরা বাকারা, আয়াত: ২৮৩।


সূরা নিসার ২০তম রুকুতে আদেশ দেওয়া হয়েছে, আল্লাহর ওয়াস্তে সাক্ষ্য দাও যদিও তা তোমার নিজের পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়ে থাকুক। সূরা ফুরকানে মিথ্যা সাক্ষ্যদান হতে নিষেধ করা হয়েছে।

হাদিস শরীফে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে সর্বোত্তম সাক্ষীর ব্যাপারে সংবাদ দেবোনা। সে হচ্ছে ওই ব্যক্তি যে সাক্ষ্যের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হওয়ার পূর্বে নিজের সাক্ষ্য প্রদান করে।

শাহাদাত ফরয। তা প্রদান করা সাক্ষীদের জন্য আবশ্যক। তবে কিসাস (মৃত্যুদন্ড) ও হুদুদ (কুরআনে বর্ণিত শাস্তি) এর সাক্ষ্যের ক্ষেত্রে তা প্রকাশ বা গোপন করার অধিকার সাক্ষীর নিকট রয়েছে। তবে চুরির ক্ষেত্রে সাক্ষ্য প্রদান করা ওয়াজিব। আর এতে একথা বলবে যে, সে মাল নিয়েছিল, একথা বলবেনা যে, সে মাল চুরি করেছিল। ব্যভিচারের ক্ষেত্রে চারজন সাক্ষী প্রয়োজন। ব্যভিচারের বেলায় নারীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যান্য হকের বেলায় দু’জন পুরুষ কিংবা একজন পুরুষ ও দু’জন নারীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য, হোক তা সম্পত্তির অধিকার কিংবা সম্পত্তি বর্হিভূত অন্যান্য অধিকার যেমন, বিয়ে, তালাক, ওসিয়ত, ওকালা (আমমোক্তার নামা), গোলাম আযাদ, সন্তান জন্মদান ও নারীর সতীত্ব। আর নারীদের যে সব দোষ-ত্রুটির ব্যাপারে পুরুষকে অবহিত করা যায়না, তাতে কেবল একজন নারীর সাক্ষ্যই যথেষ্ট।


নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়ঃ


(১) অন্ধ।

(২) অধীন দাস।

(৩) যে ব্যক্তি ইতিপূর্বে যিনার (ব্যভিচারের) মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছে, যদিও সে তাওবা করেছে।

(৪) পিতার সাক্ষ্য পুত্রের বেলায়। দাদা-নানার সাক্ষ্য নাতীর বেলায়। পুত্র ও নাতীর সাক্ষ্য পিতা-মাতা এবং দাদা-নানা প্রমূখের বেলায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একের সাক্ষ্য অপরের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। ভাইয়ের সাক্ষ্য ভাইয়ের বেলায় এবং ভাতিজার সাক্ষ্য চাচার বেলায় গ্রহণযোগ্য নয়।

(৫) এক অংশীদারের সাক্ষ্য অপর অংশীদারের বেলায় বৈধ নয়।

(৬) হিজড়া।

(৭) বিলাপকারী নারী।

(৮) গায়িকা নারী।

(৯) সর্বদা মদ্যপানকারী ব্যক্তি।

(১০) কবুতর, মোরগ ও ভেড়ার খেলবাজ।

(১১) এরূপ কবীরা গুণাহকারী ব্যক্তি যার ওপর হদ (শাস্তি) আবশ্যক। 

(১২) গোসলখানায় নগ্ন হয়ে গমনকারী ব্যক্তি।

(১৩) সুদখোর।

(১৪) যে ব্যক্তি পাশা, দাবা ইত্যাদি খেলে।

(১৫) যে ব্যক্তি কোন মাকরূহ ও অপছন্দনীয় কাজ করে যেমন, রাস্তায় হাঁটার সময় কোন কিছু খায় কিংবা জনসাধারণের চলাচলের পথে পেশাব করার জন্য বসে যায়।

(১৬) যে ব্যক্তি পূর্বসুরী বুযূর্গদের প্রকাশ্য গালমন্দ করে তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। 


খতনা বিহীন ব্যক্তি, নপুংসক, জ্বীন হাজিরকারী ব্যক্তি ও অবৈধ সন্তানের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য।

যদি বিচারকের রায় প্রদানের পূর্বে সাক্ষ্যদাতা নিজের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে তার সাক্ষ্য রহিত হয়ে যাবে। আর যদি বিচারকের রায় প্রদানের পর সাক্ষী নিজের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে রায় বা সিদ্ধান্ত বাতিল হবেনা। যদি কারো সম্পদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পর সাক্ষ্যদাতা নিজের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে সে যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিল ওই ব্যক্তির সম্পদের জন্য দায়ী হবে।

শাহাদাত শব্দটি শহীদ হয়ে যাবার অর্থেও ব্যবহৃত হয়।

هذا ما ظهرلى والعلم عند الله العليم .

Top