সুক্ষ্ম অথচ গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্নঃ


অভিযোগঃ

কেউ কেউ এও প্রশ্ন করে যে, আপনাদের কথা মতো চার মাযহাবই সঠিক, এটা কিরূপে হতে পারে? যে কোন একটিই হক বা সঠিক হবে। যেমন ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) বলেন, ‘ইমামের পেছনে নামায পড়ার সময় সূরা ফাতিহা পড়া মাকরূহ তাহরীমী; আর ইমাম শাফি’ঈ (رحمة الله) বলেন, ওটা ওয়াজিব। হয় ওয়াজিব হবে, না হয় মাকরূহ হবে, দুটোই কি করে সঠিক হতে পারে?


উত্তরঃ

এখানে ‘হক’ বা সঠিক বলতে যথার্থ বা প্রকৃত সত্য অর্থে বুঝানো হয়নি। ‘হক’ বলতে যা বুঝানো হয়েছে, তা হলো চার মাযহাবের যে কোন একটি অনুসরণ করলে খোদার কাছে জওয়াবদিহি করতে হবে না কেননা মুজতাহিদের ভুলত্রুটিও ক্ষমাযোগ্য। এক দিকে আমির মুআবিয়া (رضي الله عنه) ও মওলা ‘আলী (رضي الله عنه) এর মধ্যে, অপর দিকে হযরত ‘আয়েশা সিদ্দীকা (رحمة الله) ও হযরত আলী (رضي الله عنه) এর মধ্যে গৃহযুদ্ধও হয়েছে। ন্যায় ও প্রকৃত সত্যের উপর যে কোন একজনই প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। ‘কিন্তু উভয়কে ‘হকের’ উপর প্রতিষ্ঠিত বলা হয়- এ অর্থে যে আল্লাহর কাছে কাউকে তজ্জন্য জওয়াবদিহি করতে হবে না। গভীর জংগলের মধ্যে এক ব্যক্তি কিবলার দিক নির্ণয় করতে পারছে না। সে নিজের ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী চার রাকআত চার দিকে মুখ করে আদায় করেছে। কেননা যখনই তার ধারণা পাল্টে যায়, তখনই সে অন্য দিকে মুখ ফিরাতে থাকে। কিবলা নিশ্চয় এক দিকেই ছিল, চতুর্দিকে ছিল না। তথাপি তার নামায শুদ্ধ হয়েছে, চতুর্দিকেই তার কিবলা ঠিক হয়েছে। মুজতাহিদের ইজতিহাদ প্রয়োগের ক্ষেত্রে এতটুকু বলা হয়েছে যে, মুজতাহিদ ভুল করলেও একটি ছওয়াব পান। কুরআন করীম ইজতিহাদ প্রয়োগে হযরত দাউদ (عليه السلام) এর ভুল এবং হযরত সোলায়মান (عليه السلام) এর সঠিক রায়ের কথা বর্ণনা করেছে। কিন্তু কারো উপর যৎসামান্য দোষারোপও করা হয়নি।


❏ বরং ইরশাদ করা হয়েছে,


كُلاَّ اَتَيْنَا حُكْمًا وَّعِلْمًا


অর্থাৎ- তাঁদের প্রত্যেককে আমি বিচার বিশে­ষণের ক্ষমতা ও জ্ঞান দান করেছি।


❏ মিশকাত শরীফের ‘ইমারত’ শীর্ষক আলোচনায় ‘আল-আমিন ফিল কাযা’ অধ্যায়ে হযরত আবু হুরায়রা ও আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে,


إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ فَأَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ فَأَخْطَأَ فلهُ أجرٌ واحدٌ


-‘‘যখন বিচারক চিন্তাভাবনা করে রায় দেন, এবং রায়টা সঠিক হয়, তখন তিনি দু’টো ছওয়াব পাবেন! পক্ষান্তরে, বিচারক যখন সঠিক রায়ের জন্য চিন্তাভাবনা করেন কিন্তু সঠিক রায়টা অনুধাবন করতে ভুল করে ফেলেন, তখনও তিনি একটি ছওয়াবের ভাগীদার হবেন।"

{ক) বুখারীঃ আস-সহীহঃ ১০/৩১৮ হাদিসঃ ৭৩৫২

খ) মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ৩/১৩৪২

গ) খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ৩/পৃ. ৩২৪ হাদিসঃ ৩৭৩২

ঘ) তিরমিজীঃ আস-সুনানঃ ৩/৬১৬ পৃ. হাদিসঃ ১৩৩৬

ঙ) নাসাঈঃ সুনানে কোবরাঃ ৮/২২৩ পৃ. হাদিসঃ ৫৩৮১}


উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নোক্ত আপত্তিটা উত্থাপনের আর অবকাশ রইল না। আপত্তিটা হচ্ছে কোন শাফে’ঈ মতাবলম্বী কর্ণমূল পর্যন্ত দুহাত উঠালে (নামাযের সময়) সঠিক বিবেচিত হয় কিন্তু কোন লা-মাযহাবী হাত উঠালে দূষণীয় হয়। এর পেছনে কি যুক্তি থাকতে পারে? এর উত্তর হলো শাফে’ঈ মতাবলম্বী শরীয়তের হাকিম তথা মুজতাহিদ দ্বারা ফায়সালা করিয়ে হাত উঠায়। মুজতাহিদ ভুল করলেও তা ক্ষমাযোগ্য। অপরদিকে লা-মাযহাবী যেহেতু কোন মুজতাহিদের মতামত নেয়নি, সেহেতু সে সঠিক কাজ করলেও দোষী সাব্যস্ত হবে।

যেমন বিচারকের রায় ব্যতিরেকে নিজের হাতে আইনকে তুলে নিয়ে কোন কাজ করলে সেটা অপরাধ। কিন্তু কোর্ট থেকে বিচারকের রায় নিয়ে ঐ একই কাজ করলে কোন অপরাধ হয় না। বিচারকই এক্ষেত্রে দায়ী থাকেন, বিচারক ন্যায় বদরের যুদ্ধবন্দীদের নিকট থেকে কিয়াস বা যুক্তি ভিত্তিতে ফিদ্য়া (মুক্তিপণ) আদায় করেছিলেন, পরে এর বিপরীত কুরআনের আয়াত নাযিল হয়। এতে বোঝা গেল, হুজুর (ﷺ) এর স্বীয় যুক্তিগ্রাহ্য এ কাজে আল্লাহ তা’আলা সন্তুষ্ট ছিলেন না। কিন্তু তাঁ সত্ত্বেও মুক্তপণ ফেরৎ দেওয়ার কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি।


❏ বরং ইরশাদ করেন,


فَكُلُوْا مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلاَلاً طَيِّبًا.


-‘‘এ সব মালামাল তোমরা ভোগ কর। এগুলো হালাল ও পবিত্র।’’

{সূরাঃ আ’রাফ, আয়াতঃ ৬৯, পারাঃ ১০}


বোঝা গেল ইজতিহাদ প্রয়োগে ভুল হলে, সে ভুলের জন্য কোন কৈফিয়ত দিতে হয় না।




━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।
Top