মক্কা মুয়াজ্জমাও হুযুর (ﷺ) এর ওসীলায় অপবিত্র প্রতিমা সমূহ থেকে পুত পবিত্র স্থানে পরিণত হয়েছে, তাঁরই মাধ্যমে ‘কিবলা’ মনোনীত হয়েছে।
❏কুরআন ঘোষণা করছেঃ
فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا
-‘‘অচিরেই আপনাকে সেই কিবলার দিকে মুখ ফিরানোর ব্যবস্থা করছি, যা আপনি পছন্দ করেছেন।’’
{সূরাঃ বাক্বারা, আয়াতঃ ১৪৪, পারাঃ ২}
বরং হুজুর (ﷺ)-এর মাধ্যমেই কুরআনকে ‘কুরআন’ নামে অভিহিত হয়েছে।
শয়তান যখন নবীগণের মাধ্যম ব্যতিরেকে সরাসরি মহা প্রতিপালক পর্যন্ত পৌঁছতে চায়, তখনই তার দিকে উল্কাপিন্ড ছুঁড়ে মারা হয়। যদি মদীনার রাস্তা হয়ে যেত, কখনও তাকে মারা হত না। সে একই পরিণতি তাদেরও হবে, যারা বলেন, ‘খোদাকে মান, খোদা ছাড়া আর কাউকে মান না।’
আমার উপরোক্ত বক্তব্য থেকে এতটুকু বোঝা গেল যে, নবী ও ওলীগণের কাছ হতে সাহায্য প্রার্থনা করা ও তাঁদেরকে হাজত পূরণকারী জ্ঞান করা শিরকও নয়, খোদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহও নয়, বরং তা’ হবে যথার্থ ইসলামী কানুনের অনুসরণ ও খোদার অভিপ্রায় অনুযায়ী চলেন। জনাব, মেরাজে প্রথমতঃ পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছিল। পরে হযরত মুসা (আলাইহিস সালাম) এর বারংবার আরয করার ফলে কমাতে পাঁচ ওয়াক্তই নির্ধারিত হয়। স্বভাবতঃই মনে প্রশ্ন জাগে, শেষ পর্যন্ত এটি হল কেন? এটা এজন্য যে, মাখলুক যেন জানতে পারে যে, পঞ্চাশ ওয়াক্ত থেকে যে পাঁচ ওয়াক্তই নির্ধারিত হল, তা’তে হযরত মুসা (আলাইহিস সালাম) এর হাত ছিল। অর্থাৎ আল্লাহর মকবুল বান্দা ওফাতের পরেও সাহায্য করেন। মুশরিকদের প্রতিমা সমূহের কাছে থেকে সাহায্য প্রার্থনা পুরোপুরি ‘শিরক’। এর কারণ দু’টি-
প্রথমত তারা মূর্তিসমূহকে খোদায়ী প্রভাবের ধারক ও ঐগুলোকে ছোট খোদা জ্ঞান করেই ওদের কাছে থেকে সাহায্য চায়। এজন্যই তারা সেগুলোকে ‘উপাস্য’ বা ‘অংশীদার’ বলে অভিহিত করে। অর্থাৎ এসব মূর্তিকে আল্লাহর বান্দা ও একই সাথে তাঁর অংশীদার বলে বিশ্বাস করে। যেমন- ঈসায়ীগণ হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) কে ‘বান্দা’ বলে বিশ্বাস করে বটে, তবে একই সাথে তাঁকে আল্লাহর পুত্র তিন খোদার একজন বা খোদ আল্লাহ বলে মনে করে। মুমিনগণ ওলী ও নবীগণকে কেবল ‘বান্দা’ জ্ঞান করেন। তাঁদেরকে এরূপ হাজত পূরণকারী হিসাবে জ্ঞান করেন, যেরূপ দেওবন্দীগণ ধনীদেরকে মাদ্রাসার শুভাকাঙ্খী ও সাহায্যকারী এবং ডাক্তার কিংবা শাসককে সরকার থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতার অধিকারী করেন নি, তারা নিজেরাই ঐগুলোকে স্বাধিকার প্রাপ্ত মনে করেই সেগুলোর কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা প্রার্থনা করে। তাই তারা অপরাধী, বরং আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণাকারী বান্দা। এ সম্পর্কে সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত একটু আগেই পেশ করেছি। মুশরিকদের মূর্তির কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ার সাথে মুমিনদের ওলী/নবীর কাছ হতে সাহায্য প্রার্থনার সুস্পষ্ট পার্থক্যের প্রতি লক্ষ্য করেই শাহ আবদুল আযীয (رحمة الله) ফায়সালা করে দিয়েছেনঃ সাদৃশ্য প্রমাণ করা উদ্দেশ্য নয়, বরং অনুধাবন করার উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে, একজন মূর্তিপূজারী পাথরের দিকে সিজদা করে, সে মুশরিক; কারণ তার এ কাজটি হচ্ছে তার নিজস্ব উদ্ভাবন। পক্ষান্তরে, মুসলমান কা’বার দিকে সিজদা করে সেখানেও পাথর নির্মিত সৌধ রয়েছে। কিন্তু সে মুশরিক নয়, কারণ কা’বাকে সিজদা করা তার উদ্দেশ্য নয়। সে আসলে খোদাকেই সিজদা করছে, কাবাকে নয় বরং তাও খোদার আদেশনুযায়ী করা হচ্ছে। আর মুশরিক খোদার আদেশকে লঙ্ঘন করে পাথরকেই সিজদা করছে। এ পার্থক্যটুকু অনুধাবন করা প্রয়োজন। গঙ্গার জলের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন কুফর; কিন্তু যমযমের পানির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ঈমানের অন্তভুর্ক্ত। কারণ, গঙ্গাজরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন নিজস্ব উদ্ভাবন, আর যমযমের পানির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শরীয়তের নির্দেশ প্রসূত। এরূপ মন্দিরের পাথরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন শিরক। কিন্তু ‘মাক্বামে ইব্রাহীম’ নামক পাথরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ঈমানের অন্তভুর্ক্ত, অথচ সেটিও একটি পাথর।