পাগড়ির বর্ণনা-



❏ প্রশ্ন-১১৩: শরীয়তে পাগড়ির হুকুম কি? অর্থাৎ হুযূর রহমতে ‘আলম মুহাম্মদ মোস্তফা(ﷺ)   নামাযের জন্য কী আলাদা পাগড়ি রাখতেন। কারো মতে, হুযূর (ﷺ) মাত্র দু’টি কাপড় পরে নামায আদায় করতেন। টুপি ছাড়া খালি মাথায় নামায পড়লেও নামায পরিপূর্ণ হবে, দলিল হিসেবে তারা হযরত জাবের (رضى الله تعالي عنه)-এর কর্মকে পেশ করে থাকেন। হুযূর রহমতে ‘আলম   খুৎবা দানকালে পাগড়ি পরিধানের প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু নামায পড়তেন শুধু দুটি কাপড় পরে, এটা কিভাবে হতে পারে?


✍ উত্তর: আল্লাহর প্রিয় হাবীব (ﷺ) সর্বদা দু’টি কাপড় পরিধান করে নামায পড়তেন এবং মাথায় পাগড়ি মুবারক থাকত না, এটা সম্পূর্ণ ভুল। বরং হুযূর (ﷺ) নামাযের জন্য একটি আলাদা পাগড়ি ব্যবহার করতেন। মুহাদ্দিসীনগণ এ ব্যাপারে বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন। আরো  বিস্তারিত জানার জন্য জামে‘ তিরমিযীর শরাহ ‘আরফুশ সজি’ দেখুন। 

155. আরফুশ সজি, পৃষ্ঠা-৪৪২।


প্রশ্নকারী লিখেছেন যে, খুৎবা প্রদানকালে হুযূর (ﷺ) পাগড়ি মুবারক পড়তেন। তবে কী নামাযের সময় খুলে ফেলতেন? এটা একটি হাস্যকর ও উপহাসমূলক কথা। মূলতঃ নামাযের সময় পাগড়ি পরিধান করা রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত এবং হযরাত সাহাবা-ই কিরামের সুন্নাত। সকল সাহাবা-ই কিরাম এর ওপর আমল করতেন। দুই কাপড় দ্বারা নামায আদায় করা তা পরিপূর্ণ হওয়ার কথা, এটা কোন দালিলিক কথা নয়। বরং এটা নিজের পক্ষ হতে মনগড়া কথা। আল্লাহ্ তা‘আলা হিদায়ত নসীব করুন।


❏ প্রশ্ন-১১৪: শুধু পাগড়ির ওপর মাসেহ করা জায়েয কি না? কতিপয় ওলামায়ে কিরাম ‘বুলুগুল মুরাম’ গ্রন্থের নিম্নোক্ত উদ্ধৃতি 


مسح بناصية وعلى العمامة وعلى الخفين . 


দ্বারা পাগড়ির ওপর মাসেহ জায়েয হওয়ার পক্ষে দলিল পেশ করে থাকেন। অতএব পাগড়ির ওপর মাসেহ জায়েয বুঝা যায়?


✍ উত্তর: পাগড়ির ওপর মাসেহ জায়েয না হওয়ার দলিল কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। মহান আল্লাহ বলেন, وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, পাগড়ির ওপর মাসেহ করা মানে মাথার ওপর মাসেহ করা নয়। অতএব কুরআনের দলিল দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পাগড়ির ওপর মাসেহ করা জায়েয নেই। হ্যাঁ! অবশ্য হাদীস শরীফে পাগড়ীর ওপর মাসেহ করার ব্যাপারে বিভিন্ন রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে। সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত মুগীরা (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত আছে, 


ومسح بناصية وعلى العمامة 


আর কোন বর্ণনায় শুধু পাগড়ির কথা উল্লেখ আছে। 


সুতরাং পবিত্র কুরআনের আয়াত এবং বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা মাথা মাসেহ করা ওয়াজিব প্রমাণিত। একথা সামনে রেখে যে সকল হাদীস দ্বারা পাগড়ির ওপর মাসেহ জায়েয সেগুলোর বিশুদ্ধ আমল নির্দিষ্ট করা হবে। আর তা হলো এই যে, হুযূর (ﷺ) মাথা মুবারকের এক চতুর্থাংশ মাসেহ করেছেন। যা কপালের প্রায় সমপরিমাণ। কিন্তু সে সময় পাগড়ি মাথা থেকে একেবারে খুলে ফেলেননি বা নামিয়ে রাখেননি। বাকী মাথার ওপর পাগড়ির ওপর দিয়ে হাত বুলিয়ে মাসেহ করেছেন। যা রাবী কখনো পরিপূর্ণ বর্ণনা দিতে গিয়ে কপালের পরিমাণ মাসেহ এবং পাগড়ির ওপর উল্লেখ করেছেন। আবার কখনো শুধু পাগড়ির কথা উল্লেখ করেছেন।

সারকথা হচ্ছে এই যে, মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেহ করা হয়েছিল, যা ফরয। পাগড়ির ওপর মাসেহ করা ফরযের কারণে ছিল না। হযরত মুহাক্কিক আল্লামা আবদুল বার (رحمه الله تعالي ) পাগড়ির ওপর মাসেহ সম্পর্কীয় বর্ণিত সকল রেওয়ায়েতগুলোকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন। 

156. খায়রুল ফতওয়া, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২১।

Top