ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ নিয়ে কোরআন ও হাদিসে কী আছে?

অসংখ্য নবী-রাসুলের পূণ্যভূমি ফিলিস্তিন। কোরআনের ভাষায় এ অঞ্চলের নাম বিলাদ আশ-শাম। বর্তমানের সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান ও পূর্ণ ফিলিস্তিন ভূখণ্ড প্রাচীন মুলকে শামের অন্তর্ভুক্ত।

ফিলিস্তিন মুসলমানদের কাছে সবসময়ই মর্যাদার, ‍গুরুত্বের ও ভালোবাসার। 


'পরম পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি নিজ বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সুরা: বনি ইসরাঈল, আয়াত: ১)

 

ইসলামের নবী হযরত ইব্রাহিম (আ.) জেরুসালেমে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করছিলেন। কাবা নির্মাণের চল্লিশ বছর পর (খ্রিষ্টপূর্ব ২১৭০) তিনি এটিকে আরও সম্প্রসারণ করেন। যা পরবর্তীকালে ‘বাইতুল মুকাদ্দাস’ নামে পরিচিত হয়। এরপর (খ্রিষ্টপূর্ব ১০০৪) আল্লাহর নবী হযরত সুলাইমান (আ.) জিনদের মাধ্যমে এটিকে আরো সম্প্রসারণ করেন। ঐতিহাসিকদের মতে, ফিলিস্তিন এলাকার শাসক ছিলেন তিনি। 

 

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, 

"আর আমি সুলাইমানের অধীন করেছিলাম বায়ুকে, যা সকালে এক মাসের পথ এবং বিকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করত। আমি তার জন্যে গলিত তামার এক ঝরণা প্রবাহিত করেছিলাম। কতক জিন তার সামনে কাজ করত তার পালনকর্তার আদেশে। তাদের যে কেউ আমার আদেশ অমান্য করবে, আমি জ্বলন্ত অগ্নির-শাস্তি আস্বাদন করাব।"

(সুরা: সাবা, আয়াত: ১২)

 

আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন,

সুলাইমানের বশীভূত করে দিয়েছিলাম উদ্দাম বায়ুকে; তা তার আদেশক্রমে প্রবাহিত হতো সে দেশের দিকে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি। আর প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে আমিই সম্যক অবগত।

(সুরা: আম্বিয়াহ, আয়াত : ৮১)


অন্য আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়, আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করেছেন তাতে তোমরা প্রবেশ করো এবং পিছপা হয়ো না। হলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সুরা মায়িদাহ, আয়াত : ২১)


আল্লাহ ফিলিস্তিন ও তার কাছাকাছি অঞ্চলে অসংখ্য নবী ও রাসুল পাঠিয়েছেন। একাধিক নবী এই পবিত্র ভূমিতে আশ্রয় লাভ করেছিলেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন,

আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সে দেশে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্য। (সুরা: আম্বিয়া, আয়াত: ৭১)

 

বেশির ভাগ মুফাসসিরের মতে, আয়াতে ফিলিস্তিন ভূমির কথা বলা হয়েছে। অন্যদের মতে, শাম বা সিরিয়ার কথা বলা হয়েছে।

 

যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিন অসহায় ও নিরাশ্রয় মানুষের আশ্রয় ভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে ইউরোপ আমেরিকা থেকে বিতাড়িত অনেক মানুষের আশ্রয়স্থল ফিলিস্তিন। ইসরাইলের যেসব অধিবাসী আদি ফিলিস্তিনিদের অবৈধভাবে উচ্ছেদ করছে তারাও বিভিন্ন দেশ থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছিল ফিলিস্তিনের পূণ্যভূমিতে। 


পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন,

যে সম্প্রদায়কে দুর্বল গণ্য করা হতো তাদের আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি। (সুরা: আরাফ, আয়াত: ১৩৭)

 

মুফাসসিররা বলেন, এ আয়াতে ফিলিস্তিন ও প্রাচীন শামের কথা বলা হয়েছে।


ফিলিস্তিনের মসজিদুল আকসা হলো মুসলিমদের প্রথম কিবলা। যার দিকে মুখ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবিরা ১০ বছর নামাজ আদায় করেছেন। 


মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি যেখান থেকে বাহির হওনা কেন মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাকো না কেন ওর দিকে মুখ ফিরাবে।’( সূরা বাকারা,  ১৫০)

 

হাদিসে ফিলিস্তিন ভূমির কথা


ইতিহাসে প্রথম নির্মিত মসজিদ মজসিদুল হারাম। তারপরে মসজিদে নববী। এরপরের স্থানে আছে সুশোভিত প্রাচীনতম জেরুসালেম শহরে অবস্থিত মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ মসজিদুল আকসা।

 

হযরত আবু জর গিফারি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 

‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! দুনিয়াতে  প্রথম কোন মসজিদটি নির্মিত হয়েছে? তিনি বলেন, মসজিদুল হারাম। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? প্রতিউত্তরে তিনি বললেন, তারপর হলো মসজিদুল আকসা। এরপর আমি জানতে চাইলাম যে, উভয়ের মধ্যে ব্যবধান কত বছরের? তিনি বললেন চল্লিশ বছরের ব্যবধান। (সহিহ বুখারি: ৩১১৫)

 

বিশুদ্ধ হাদিসের গ্রন্থ বোখারি ও মুসলিমে হযরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 

‘(ইবাদতের উদ্দেশ্যে) তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও ভ্রমণ করা যাবে না। মসজিদুল হারাম, আমার এই মসজিদ (মসজিদে নববী) ও মসজিদুল আকসা।’ (মুসলিম: হাদিস ৮২৭)

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 

যখন সুলাইমান ইবনু দাউদ বায়তুল মাকদিসের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করলেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে তিনটি বিষয়ের প্রার্থনা করলেন। তার মতো শাসনক্ষমতা এবং এমন রাজত্ব, যা তারপরে কাউকে প্রদান করা হবে না ও সালাত আদায়ের একনিষ্ঠ মনে উক্ত মসজিদে আগমনকারীর পাপ মোচন করে তার জন্মের দিনের মতো নিষ্পাপ করার প্রার্থনা করেছেন।

 

হযরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 

‘আমার উম্মতের একটি দল সত্যের ওপর বিজয়ী থাকবে। শত্রুর মনে পরাক্রমশালী থাকবে। দুর্ভিক্ষ ছাড়া কোনো বিরোধী পক্ষ তাদের কিছুই করতে পারবে না। আল্লাহর আদেশ তথা কেয়ামত পর্যন্ত তারা এমনই থাকবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, তারা কোথায় থাকবেন? রাসুল (সা.) বললেন, ‘তারা বায়তুল মাকদিস এবং তার আশপাশে থাকবেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ২১২৮৬)

 

ফিলিস্তিনে হাশরের ময়দান হবে। হযরত মায়মুনা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 

‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে কিছু বলুন! রাসুল (সা.) বললেন, ‘বায়তুল মাকদিস হলো হাশরের ময়দান। পুনরুত্থানের জায়গা। তোমরা তাতে গিয়ে সালাত আদায় করো। কেননা, তাতে এক ওয়াক্ত সালাত আদায় করা অন্যান্য মসজিদে এক হাজার সালাত আদায়ের সওয়াব পাওয়া যায়। হজরত মায়মুনা (রা.) বললেন, যে ব্যক্তি মসজিদুল আকসাতে গমনের শক্তি-সামর্থ্য রাখেন না তার ব্যাপারে আপনার কী অভিমত?’ তিনি বললেন, ‘সে যেন তার জন্য জ্বালানি তেল হাদিয়া হিসেবে প্রেরণ করে। কেননা যে বায়তুল মাকদিসের জন্য হাদিয়া প্রেরণ করে, সে তাতে নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির মতো সওয়াব লাভ করবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২৬৩৪৩)


হাদিসে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের কথা


হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 

‘কিয়ামত সংগঠিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলমানরা ইয়াহুদি সম্প্রদায়ের সাথে লড়াই না করবে। মুসলমানরা তাদেরকে হত্যা করবে। ফলে তারা পাথর বা বৃক্ষের আড়ালে আত্মগোপন করবে। তখন পাথর বা গাছ বলবে, হে মুসলিম, হে আল্লাহর বান্দা! এই তো ইয়াহুদি আমার পশ্চাতে। এসো, তাকে হত্যা কর। কিন্তু ’গারকাদ’ গাছ এ কথা বলবে না। কারণ এ হচ্ছে ইয়াহুদিদের গাছ। (মুসলিম, হাদিস ৭০৭৫)


রাসুল (সা.) এর ভবিষ্যদ্বাণী হচ্ছে, 

"কিয়ামতের আগে অবশ্যই এই ইহুদি জাতি মুসলিমদের হাতে পরাজিত হবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২৬৩৪৩)


Top