হাযির’ - ‘নাযির’ এর আলোচনা
এ আলোচনাকে একটি ভূমিকা ও দু’টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে
ভূমিকা
‘হাযির’ এর আভধানিক অর্থ হলো যা বর্তমান থাকে, অর্থাৎ যা অদৃশ্য বা অনুপস্থিত নয়।
❏ ‘আল-মিসবাহুল মুনীর’ নামক গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে উল্লেখিত আছেঃ
حَضِرَ الْمَجْلِسَ اَىْ شهده وَحَضَرَ الْغَائِبُ حُضُوْرًا قَدِمَ مِنْ غَيْبَتِهِ
-‘‘সে মজলিসে উপস্থিত হয়েছে; অনুপস্থিত ব্যক্তি উপস্থিত হয়েছে তথা সে অদৃশ্যাবস্থা থেকে দৃশ্যমান হয়েছে।
منهى الارب নামক গ্রন্থে আছেঃ
خاضر خاضر شونده
‘হাযির’ এর অর্থ হলো- সে উপস্থিত হয়েছে।
‘নাযির’ শব্দটি কয়েকটি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে; যেমন দর্শক, চোখের মনি, দৃষ্টি, নাকের শিরা ও অশ্রু।
❏ ‘আল-মিসবাহুল মুনীরে’ আছেঃ
وَالنَّظِرُ السَّوَادُ الْاَصْغَرُ مِنَ الْعَيْنِ الَّذِىْ يُبْصِرُ بِهِ الْاِنْسَانُ شَخْصَهُ
অর্থাৎ-‘নাযির’ শব্দের অর্থ হলো চোখের কালবর্ণ বিশিষ্ট ক্ষুদ্রতম অংশ, যদ্বারা মানুষ ব্যক্তি বা বস্তুকে দেখতে পায়।
❏ ‘কামুসুল লুগাত’ নামক অভিধানে আছে-
وَالنَّاظِرُ السَّوَادُ فِي الْعَيْنِ اَوِ الْبَصَرُ بِنَفْسِهِ وَعِرْقُ فِى الْانْفِ وَفِيْهِ مَاءُ الْبَصَرِ
অর্থাৎ- ‘নাযির’ শব্দের অর্থ হলো- চোখের কালো বর্ণের অংশ বা সম্পূর্ণ চোখ বা নাকের শিরা-যার মধ্যে অশ্রু থাকে।
❏ ‘মুখতারুসসিহাহ’ নামক গ্রন্থে ইবন আবু বকর রাযী বলেন-
النَّاظِرُ فِى الْمُقْلَةِ السَّوَادُ آلاَصْغَرُ الَّذِىْ فِيْهِ اَنْسَانُ الْعَيْنِ
অর্থাৎ নাযির শব্দের অর্থ হচ্ছে চোখের ক্ষুদ্রতম কালো অংশ, যেখানে চোখের পুতরী রয়েছে। যতদূর আমাদের সৃষ্টি কার্যকরী হয়, ততদূর পর্যন্ত আমরা হলাম ‘নাযির’।
{ইবনু আবু বকর রাযীঃ মুখ্তারুস্-সিহাহঃ ৪৯১ পৃ.}
আর যে স্থান পর্যন্ত আমরা সক্রিয়রূপে তৎপর হতে পারি সে পর্যন্ত আমরা হাযির’। আসমান পর্যন্ত আমাদের দৃষ্টি কার্যকরী হয়ে থাকে, তাই সে পর্যন্ত আমরা ‘নাযির’ অর্থাৎ দর্শনকারী; কিন্তু সে স্থান পর্যন্ত আমরা ‘হাযির’ নই, কেননা ততদূর আমরা কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারি না। যে কক্ষে বা ঘরের মধ্যে আমরা বিদ্যমান আছি, সেখানে আমরা ‘হাযির’। কেননা সে স্থানে সক্রিয় হতে পারি। যদি কারো সম্বন্ধে বলা হয় যে, তিনি ‘হাযির-নাযির’ এ কথাটির শরয়ী পারিভাষিক অর্থ হলো- তিনি পুত পবিত্র আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পন্ন পুণ্যাত্মা, যিনি এক জায়গায় অবস্থান করে সমগ্র পৃথিবীকে স্বীয় হাতের তালু দেখার মত স্পষ্টই দেখতে পান, নিকট ও দূরের আওয়াজ শুনতে পান; কিংবা এক মুহুর্তে সারা পৃথিবী পরিভ্রমণ করেন, এবং হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থানকারী সাহায্য প্রার্থীদের সাহায্য করন। এ পরিভ্রমণ কেবল রূহানীও হতে পারে, বা ‘জিসমে-মিছালী’ সহকারেও হতে পারে; অথবা কবরস্থ বা অন্য কোন জায়গায় বিদ্যমান শরীরের সাহায্যেও সংঘটিত হতে পারে। বুযুর্গানে দ্বীনের উপরোক্ত অলৌকিক কার্যাবলী সম্পাদনের প্রমাণ পাওয়া যায় কুরআনে, হাদীছসমূহে ও উলামায়ে কেরামের ভক্তিসমূহে।
━━━━━━━━━━━━━━━━