হযরত আব্দুল্লাহর (رضي الله عنه) বয়স যখন চব্বিশ বৎসর, তখন পিতা তাঁকে বিবাহ করানোর উদ্দেশ্যে পাত্রীর অনুসন্ধানে বের হন। পথিমধ্যে ওয়ারাকা ইবনে নওফেল- এর বোন ফাতেমা ওরফে উম্মে কিতাল হযরত আব্দুল্লাহর ললাটে নূর লক্ষ্য করে স্বেচ্ছায় বিবাহের প্রস্তাব দেন। কিন্তু হযরত আব্দুল্লাহ পিতার সম্মানে ঐ প্রস্তাব নাকচ করে দেন।
ঐ দিনই মদিনাবাসী এবং মক্কায় প্রবাসী ওহাব ইবনে আবদে মুনাফ-এঁর ভাগ্যবতী কন্যা বিবি আমেনার সাথে হযরত আব্দুল্লাহর বিবাহ সম্পন্ন হয়। উল্লেখ্য যে, মদিনার বনী আদি বংশের জাহরা গোত্রে আব্দুল মোত্তালেবও বিবাহ করেছিলেন এবং সেই ঘরে আবু তালেব, হযরত হামজা, হযরত আব্বাছ ও নবী করিম [ﷺ]-এঁর পিতা হযরত আব্দুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন। সেই গোত্রেরই কন্যা ছিলেন বিবি আমেনা (رضي الله عنه)। সুতরাং হযরত আব্দুল্লাহ ও নবী করিম [ﷺ] উভয়েরই মাতুলালয় ছিল মদিনা।
রজব মাসের প্রারম্ভে এই শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং ঐ দিনেই মিনার নিকটে শিয়াবে আবি তালেব নামক স্থানে স্বামী-স্ত্রীর সাক্ষাৎ হয়। ঐ দিনেই হযরত আব্দুল্লাহর (رضي الله عنه) ললাট হতে নবুয়তের পবিত্র নূর মা আমেনার (رضي الله عنه) গর্ভে সরাসরি স্থানান্তরিত হয়- (মাওয়াহেব ও বেদায়া নেহায়া)। পহেলা রজব শুক্রবার রাতে নবী করিম [ﷺ]-এঁর পবিত্র নূর (মাটি নয়) মায়ের রেহেমে স্থানলাভ করেন বলে মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া ও আনওয়ারে মোহাম্মদীয়া গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। ইবনে ইসহাক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে বিবি আমেনার (رضي الله عنه) সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঐ রাত্রেই বিবি আমেনাকে স্বপ্নযোগে জানিয়ে দেয়া হয় - ”তুমি এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ মানবকে ধারণ করেছো। সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তাঁর নাম রাখবে মোহাম্মদ [ﷺ] বা বারংবার প্রশংসিত।”
হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) রেওয়ায়াত করেন যে, ”ঐ রাত্রেই কোরেশদের গৃহপালিত পশুগুলো নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল যে, আজ সমগ্র পৃথিবীর চেরাগ, আল্লাহর প্রিয় রাসুল [ﷺ] মাতৃগর্ভে এসেছেন। আল্লাহর কুদরতে সমগ্র পৃথিবীর প্রাণীকুলের মধ্যে একটি নৈসর্গিক আনন্দের ঢেউ খেলে গিয়েছিল। কিন্তু খুশী হতে পারেনি সেদিন অভিশপ্ত শয়তান।” (আনওয়ারে মোহাম্মদীয়া)।
আজও মানবরূপী কিছু শয়তান মিলাদুন্নবীর শুভদিনে খুশী হতে পারেনা। তারা এই আনন্দময় দিবসে মিলাদুন্নবীর বিরুদ্ধে নব-আবিষ্কৃত সিরাতুন্নবী নামে লোক দেখানো পৃথক মাহফিল করে, মিলাদুন্নবীর তাৎপর্য্যপূর্ণ ঘটনাবলীর সমালোচনা করে এবং মিলাদুন্নবী [ﷺ] মাহফিল ও অনুষ্ঠানকে বেদাত বলে অপপ্রচার চালাতে থাকে। অথচ মিলাদুন্নবীর প্রথা সুন্নাতসম্মত একটি প্রথা। এই প্রথাকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে একটি ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ইসলামী ফাউন্ডেশনে পক্ষকালব্যাপী সিরাতুন্নবী নামে অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে। ইসলামী ফাউন্ডেশনের জেলা অফিসগুলোকে ও সরকারী মিলাদুন্নবীর পরিবর্তে সিরাতুন্নবী অনুষ্ঠান পালন করতে বাধ্য করা হয়। এভাবে তারা বাংলাদেশে একটি ওহাবী নেটওয়ার্কের অধীন কাজ করে যাচ্ছে। তাদের এই গভীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রত্যেক মু’মিন মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহর শোকর - আহলে সুন্নাত ও ইসলামী ফ্রন্টের আন্দোলনের ফলে ১৯৯৭ ইং হতে ঈদে মিলাদুন্নবী চালু হয়েছে – এবং এখনও (২০০৭ইং) চালু আছে।
একজন সাধারণ মহিলা হয়েও উম্মে কিতাল নবী করিম [ﷺ]-কে নূর হিসেবে প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হলো। কিন্তু হতভাগা ওহাবীরা তাঁকে প্রত্যক্ষ করল মাটির মানুষ হিসেবে। আব্দুল কাহ্হার সিদ্দিকী নামে আওর মোহাম্মদীয়া বাতিল তরিকার জনৈক পীর তার অসিয়ত ও নছিয়ত নামায় নবী করিম [ﷺ]-কে সাধারণ মানুষ প্রমাণ করার জন্য লিখেছে ”নবী পাক [ﷺ] পিতার নাপাকী থেকে মায়ের নাপাকীর সাথে মিশে আবার নাপাক জায়গার ভিতর দিয়েই পৃথিবীতে এসেছেন।” নাউযুবিল্লাহ!
এমন অশালীন ও অসভ্য উক্তি একজন অমুসলিমও কোনদিন করেনি। আল্লাহ এসব দুশমনে রাসুলের সংশ্রব থেকে মুসলমানদের রক্ষা করুন। উক্ত অর্বাচীন পীর নবী করিম [ﷺ]-কে মাটির মানুষ বলেও উল্লেখ করেছে। আমি ১৯৯৫ ইংরেজিতে ইনকিলাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, কিন্তু সে তাতে আসেনি।
এর জবাবে আমরা বলবো - যদি সহীহ বর্ণনায় এই তারিখটি সুপ্রমাণিত হয়, তাহলে কি তারা এই দিনটি মিলাদুন্নবী দিবস হিসেবে পালন করতে রাজী আছেন? না, তা কখনও আশা করা যায় না। আপনারা দিবস পালন করুন আর নাই করুন, নবী করিম [ﷺ] যে এই তারিখেই জন্ম গ্রহণ করেছেন - তার অকাট্য প্রমাণ নিন।
ইবনে কাছির বলেন - “এটাই প্রসিদ্ধ ও মশহুর মত”(বেদায়া ও নেহায়া ২য় খন্ড ২৬০ পৃষ্ঠা)। সুতরাং তাদের নেতার কথা মান্য করা তাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।