ইবনে তাইমিয়া হযরত আলী (رضي الله عنه)'র বিরুদ্ধাচরণ করেছিল
এসব বিষয়ে আলবানী ঠিক ইবনে তাইমিয়ার মতোই, যিনি সকল ধরনের মানুষের প্রকাশ্য নিন্দাবাদ করেছিলেন। (ইবনে তাইমিয়া) কাউকে ঘোষণা করেন কাফের (অবিশ্বাসী), আবার কাউকে বা গোমরাহ; অতঃপর তিনি নিজেই দুটি সর্বনিকৃষ্ট গোমরাহী সংঘটন করেন। প্রথমটিতে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন যে এই জগত চিরন্তন (মানে এর কোনো সূচনা নেই এবং সবসময়-ই আল্লাহর সাথে বিরাজমান ছিল)। এটাই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা যেটা স্পষ্ট কুফর/অবিশ্বাস সৃষ্টিকারক। আমরা এর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। দ্বিতীয় নজিরটিতে তিনি হযরত আলী (رضي الله عنه)র বিরুদ্ধে ছিলেন পক্ষপাতদুষ্ট, যার জন্যে তার সময়কার উলেমামণ্ডলী তার প্রতি মোনাফেক্বী তথা কপটতার অভিযোগ উত্থাপন করেন [৩৬]।
এটা এ কারণে যে, মহানবী (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)-কে বলেছিলেন,
إِنَّهُ لَا يُحِبُّكَ إِلَّا مُؤْمِنٌ، وَلَا يُبْغِضُكَ إِلَّا مُنَافِقٌ
“তোমাকে ঈমানদার ছাড়া কেউই ভালোবাসে না, আর মোনাফেক্ব/কপট ব্যক্তি ছাড়া কেউই ঘৃণা করে না।”[৩৭]
নিঃসন্দেহে হযরত আলী (رضي الله عنه)কে ইবনে তাইমিয়ার অপছন্দ করাটা আল্লাহর তরফ হতে তারই প্রতি শাস্তি ছাড়া কিছু নয়। এতদসত্ত্বেও আলবানী তাকে ‘শায়খুল ইসলাম’ উপাধিতে সম্বোধন করেছেন (এ খেতাবটি ঐতিহ্যগতভাবে যুগের সেরা আলেমের জন্যে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে)। ইবনে তাইমিয়া যেখানে অনৈসলামী আক্বীদা-বিশ্বাস ধারণ করেন, সেখানে আলবানী কর্তৃক তাকে এরকম খেতাব দেয়ার ব্যাপারটি আমাকে সত্যি বিস্মিত করেছে।
আমি ভাবি, না, বরঞ্চ নিশ্চিত জানি যে, হাফেয ইবনে নাসির (আল-দ্বীন আল-দিমাশক্বী) যদি ইবনে তাইমিয়ার এসব জঘন্য আক্বীদা-বিশ্বাস সম্পর্কে জানতেন, তাহলে তিনি কখনোই তাঁর ‘আল-রাদ্দু আল-ওয়াফির’ শীর্ষক পুস্তকে (আলাউদ্দীন বুখারী কৃত ‘আদ দ্বাওউল লামিউ: ২/২৯২’ শীর্ষক কিতাবে উদ্ধৃত অভিযোগগুলোর জবাবে বলেন,
مَنْ اطْلَقَ عَلِيْ اِبْنِ تَيْمِيَةِ لَقْبِ شَيْخِ الاِسْلاَمِ فَهُوَ بِهَذَا الاِطْلاَقِ كَافِرٌ’
অর্থাৎ, ‘ইবনে তাইমিয়াকে যে ব্যক্তি শায়খুল ইসলাম বলবে, সে কাফের’) ইবনে তাইমিয়ার পক্ষ সমর্থন করতেন না।
নিঃসন্দেহে ইবনে নাসির যখন তাঁর বইটি লেখেন, তখন তিনি ইবনে তাইমিয়ার প্রশংসাকারী লোকদের দ্বারা ধোকাপ্রাপ্ত হন। একইভাবে, বিখ্যাত তাফসীরকার মাহমূদ শুকরী আলূসীর পুত্র আল-আলূসী, যিনি বিশাল ‘রূহুল মা’আনী’ তাফসীরের কিতাবটি রচনা করেন, ইবনে তাইমিয়ার আসল চেহারা সম্পর্কে জানলে তিনিও তাঁর ‘জালাল আল-আয়নাঈন’ পুস্তকটি রচনা করতেন না।
আলবানীর অদ্ভূত ও বৈধর্মিক ধ্যান-ধারণা ও মতামত মুক্তচিন্তার প্রতি তার অপবিত্র ঝোঁকেরই ফসল; তারই ধোকাবাজি এবং সঠিক অর্থের পরিবর্তে নিজের খায়েশ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে হাদীসকে সহীহ বা যয়ীফ হিসেবে ঘোষণা করার ক্ষেত্রে তারই অসততা; উলেমা ও ইসলামী মহান ব্যক্তিত্বদের প্রতি তারই আঁচড়সমালোচনা। এসব আল্লাহতা’লার পক্ষ থেকে শাস্তি বটে, কিন্তু তবু তিনি তা বুঝতে অক্ষম।
নিশ্চয় আলবানী ওই সকল ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত যাদের সম্পর্কে আল-ক্বুরআনে এরশাদ হয়েছে, وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا “এরা মনে করে ভালো কাজ করছে; না, বরঞ্চ এই ভাবনায় এরা কতোই না ভ্রান্তিতে পতিত!” [৩৮]
আমরা আল্লাহতা’লার কাছে আরয করি যেন আলবানীর প্রতি তাঁর (বিধানকৃত) শাস্তি হতে আমাদের হেফাযত করেন। আমরা সকল ধরনের মন্দ হতে তাঁরই কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। বিশ্বজগতের অধিপতি আল্লাহতা’লারই জন্যে সকল প্রশংসা বিহিত। মহানবী (ﷺ) ও তাঁর উম্মতের প্রতি আল্লাহতা’লা আশীর্বাদ বর্ষণ করুন, আমীন।
তথ্যসূত্রঃ
[৩৬] নোট: দেখুন হাফেয ইবনে হাজর আসক্বালানী (رحمة الله)-এর প্রণীত ‘আল-দুরার আল-কামিনা’ গ্রন্থ, ১:১১৪।
[৩৭] আহমদ : আল মুসনাদ, মুসনাদু আলী ইবনে আবী তালিব, ১/৯৫ হাদীস নং ৭৩১।(ক) তিরমিযী : আস সুনান, ৬/৯৩ হাদীস নং ৩৭৩৬।
(খ) নাসায়ী : আস সুনান, আলামাতুল ইমান, ৮/১১৫ হাদীস নং ৫০১৮।
(গ) তবরানী : আল মু‘জামুল আওসাত, ২/৩৩৭ হাদীস নং ২১৫৬।]
[৩৮] আল কুরআন : আল কাহাফ, ১৮:১০৪।
উপসংহার
“আমাদের ধর্মীয় বিধানে শাফাআত অনুমতিপ্রাপ্ত,
মুসলিম বিশ্বে নেই এ বিষয়ে বিতর্ক- এ কথা সত্য,
ব্যতিক্রম শুধু যারা দেখিয়েছে ঔদ্ধত্য ,
পাষণ্ড তারা, মুসলমানদের ঘৃণিত ওহাবী দুর্বৃত্ত,
তারাই করেছে একে নিষিদ্ধ, নিন্দার তীরে কলুষিত,
কোনো কারণ দর্শানো ব্যতীত।
উসমান বিন হুনাইফের বৈধ দৃষ্টান্ত,
আমাদের জন্যে দলিল চূড়ান্ত, নয়কো তা বিতর্কিত,
আল্লাহ ওহাবীদের সুমতি দিন দলিলে হয়ে পরাস্ত।”
*সমাপ্ত*