দ্বিতীয় অধ্যায়: আল্লাহ সম্পর্কিত বর্ণনা


বিষয় নং ১: আমি ছিলাম গুপ্ত ভাণ্ডার


كُنْتُ كَنْزًا مَخْفِيًّا، فَأَحْبَبْتُ أَنْ أُعْرَفَ، فَخَلَقْتُ الْخَلْقَ لِأُعْرَفَ

আমি ছিলাম গুপ্ত ভাণ্ডার, ইচ্ছা হল পরিচিত হওয়ার,  অত:পর আমি সমগ্র জগত সৃষ্টি করলাম। ১

১. ক্বাজী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মোস্তফা হানাফী: তাফছিরে আবুস সাউদ, ২/২০৫ পৃ:; ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী: তাফছিরে কাবীর, ২৮/২১৫ পৃ:; তাফছিরে নিছাপুরী, ১/২৬৯ পৃ: ও ২/১৪৬ পৃ:; মাযহারী, তাফছিরে মাযহারী, ১০/৩০৩ পৃ:; তাফছিরে মারাগী, ২০/১৪৫ পৃ:; আল্লামা মাহমুদ আলূসী বাগদাদী আল হানাফী, তাফসিরে রুহুল মাআনী, ৭/৪৫৩ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেশকাত, ১/১৯৮ পৃ: এবং ৫৮৩৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; গাউছে পাক: সিররুল আসরার, ৫৪ পৃ:; আল্লামা ইমাম ইসমাঈল হাক্কী: তাফছিরে রুহুল বয়ান, ১/১২৯ পৃ:

 

‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ৭৩ পৃষ্ঠায় মাওলানা মুতীউর রহমান এবং ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ২৭৮ পৃষ্ঠায় তারা এ হাদিসকে জাল বা বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছেন। এ হাদিসটির বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে, আমি প্রত্যেকটি বর্ণনা এবং এ হাদিসের বিষয়ে মুহাদ্দিসদের সিদ্ধান্ত আপনাদের সামনে তুলে ধরবো ইনশা আল্লাহ। 


প্রথম বর্ণনা:


❏ আল্লামা আব্দুর রহমান শাফুরী শাফেয়ী (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত কিতাব নুযহাতুল মাযালিসের ১/৪২২ পৃষ্ঠায় হযরত কাবুল আহবার (رحمة الله) বর্ণনা করেন

لَمَّا اَرَادَ اللهُ تَعَالٰى اَنَّ يُخْلق المَخْلُوْقَاتْ بسط الارض و رفع السماء و قبض قبضة من نوره و قال لها كونى محمدا فصار عمودا من نوره فعلا حتى انتهى الى حجب العظمة فسجد و قال فى سجوده الحمد لله فقال الله سبحانه و تعالى لهذا خلقتك محمدا منك ابدأ الخلق وبك اختم الرسل  

-‘‘যখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা বিশ্ব জগতকে সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করলেন, তিনি যমীনকে স¤প্রসারিত করলেন ও আসমানকে বুলন্দ করলেন এবং তিনি গ্রহণ করলেন নিজ নূর হতে মুষ্টি নূর এবং এটাকে খেতাব করে বললেন, তুমি মুহাম্মদ (ﷺ) হয়ে যাও। তখন তাঁর নূরের একটি স্তম্ভ হয়ে গেল। অনন্তর তা উর্ধ্বদিকে চলল, তা আযমতের পর্দা সমূহে গিয়ে পৌঁছল। তারপর তা সিজদায় পতিত হল তা নিজ সিজদায় বললো, সমুদয় প্রশংসা আল্লাহর। তখন আল্লাহ্ সুবহানাহুও তা‘য়ালা বললেন, এজন্যই আমি তোমাকে সৃষ্টি করলাম এবং তোমার নাম রাখলাম মুহাম্মদ। তোমার হতেই আমি সৃষ্টির সূচনা করবো এবং তোমাকে দিয়ে রাসূলগণের বা রিসালাতের পরিসমাপ্তি ঘটাব।’’  ২

২. আল্লামা আব্দুর রহমান ছাফুরী শাফেয়ী : নুযহাতুল মাযালিস, ১/৪২২ পৃ. 


এটির কোন সনদ আমি খুঁজে পাইনি। এটির ন্যায় আরেকটি সূত্র রয়েছে। 


দ্বিতীয় বর্ণনা: 


❏ নুযহাতুল মাযালিস কিতাবে উপরে উল্লেখিত হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আরেকটি হাদিস উল্লেখ করেন এভাবে, 

وَقَالَ ابْنِ عَبَّاسْ رَضِي الله عَنْهُمَا لَمَّا أَرَادَ اللهُ تَعَالٰى خَلَق المَخْلُوْقَات وخفض الأرض ورفع السموات قبض قبضة من نوره ثم قال لها كُوْنِي حَبِيْبِي مُحَمَّدْ فطاف نور محمد ﷺ بالعرش قَبْلَ آدَمْ بخمسمائة عَامْ وهو يقول الحمد لله فقال الله تعالى من أجل ذلك سميتك محمدا (نزهة المجالس)

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেছেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা যখন মাখলুকাতের সৃজন করতে ইচ্ছা করলেন, তখন পৃথিবীকে নিম্নে স্থাপন ও আসমান সমূহের উচ্চে স্থাপন ইচ্ছা করলেন, তখন তিনি নিজ নূর হতে এক মুষ্ঠি নূর গ্রহণ করে ঐ মুষ্টিবদ্ধ নূরকে বললেন, তুমি আমার হাবীব মুহাম্মদ (ﷺ) হয়ে যাও। অত:পর সে নূর-ই-মুহাম্মদ (ﷺ) আদম সৃষ্টির পাঁচশ বছর পূর্বে আরশ তাওয়াফ করেছিল। তাওয়াফকালে তিনি বলেছিলন الحمد لله (সমুদয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য)। তখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা বললেন, এ হেতু আমি তোমার নামকরণ করলাম মুহাম্মদ (ﷺ)।’’  ৩

৩. আল্লামা আব্দুর রহমান ছাফুরী শাফেয়ী : নুযহাতুল মাযালিস ২/৭৪পৃ., মাকতাবাতুল আল-কাসতালিয়্যাহ, মিশর।


তবে এ হাদিসের কোন সনদ আমি খুঁজে পাইনি।


আলোচ্য হাদিসের বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের বক্তব্য:


❏ আল্লামা আলূসী বাগদাদী (رحمة الله) তাঁর তাফসীরে রুহুল মা‘য়ানীতে সূরা জারিয়াহ এর ৫৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন আল্লাহর বাণী তথা হাদিসে কুদসী হিসেবে এভাবে উল্লেখ করেছেন-

وقوله تعالى في الحديث القدسي المشهور على الألسنة المصحح من طريق الصوفية: كنت كنزا مخفيا فأحببت أن أعرف فخلقت الخلق لأعرف

-‘‘মহান রবের বাণী প্রসিদ্ধ হাদিসে কুদসী সূফীয়ানেকেরামের মাধ্যমে বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত আছে,  আমি অজ্ঞাত গুপ্তভাণ্ডার ছিলাম। আমি পরিচিত হতে পছন্দ করলাম। তখন আমি সৃষ্টি জগত সৃষ্টি করলাম যেন আমি পরিচিত হই।’’ ৪

৪. আল্লামা আলূসী : তাফসীরে রুহুল মায়ানী :৭/৪৫৩ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।


❏ আল্লামা আলূসী বাগদাদী (رحمة الله) উক্ত বর্ণনার পর বলেন -

إنه ثابت كشفا، وقد نص على ذلك الشيخ الأكبر قدس سره في الباب المذكور

-‘‘নিশ্চয় এই বক্তব্যটি কাশ্ফের দ্বারা দৃঢ় বা শক্তিশালীভাবে প্রমাণিত। তা স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন শায়খে আকবর মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (رحمة الله) তার ফতুহাতে মক্কীয়াহ গ্রন্থের এক অধ্যায়ে।’’ ৫

৫. আল্লামা আলূসী : তাফসীরে রুহুল মায়ানী :১৪/২২ পৃ.


সঠিক সিদ্ধান্ত: এ হাদিসের বিষয়ে সঠিক সমাধান হলো যে এটি শব্দগতভাবে প্রমাণিত না হলেও মা‘আনা তথা মমার্থ সঠিক। 


❏ আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) তাঁর ‘কাশফুল খাফা‘র মধ্যে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)‘র নিম্নোক্ত কথা উল্লেখ করেছেন-

قال القارى لكن معناه صحيح

-‘‘আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন এ হাদিসটির মমার্থ সহীহ।’’ ৬

৬. আল্লামা আলূসী বাগদাদী : তাফসীরে রুহুল মায়ানী : ১৫ পারা: ৫০ পৃষ্ঠা, আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/১২১ পৃ. হা/২০১৪


❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থে লিখেন-

وَهَذَا الْمَعْنَى يُصَحِّحُ مَعْنَى مَا يُنْقَلُ حَدِيثًا، وَلَمْ يَصِحَّ لَفْظًا (كُنْتُ كَنْزًا مَخْفِيًا فَأَحْبَبْتُ أَنْ أُعْرَفَ فَخَلَقْتُ الْخَلْقَ لِأَنْ أُعْرَفَ) ، وَلِذَا قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فِي قَوْلِهِ تَعَالَى {وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ} [الذاريات: ৫৬] أَيْ: لِيَعْرِفُوا

-‘‘এটির মমার্থ বিশুদ্ধ, কিন্তু শব্দগতভাবে এটি বিশুদ্ধ নয় যেমন বর্ণিত আছে: আমি ছিলাম গুপ্ত ভাণ্ডার, ইচ্ছা হল পরিচিত হওয়ার,  অত:পর আমি সমগ্র জগত সৃষ্টি করলাম। রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) আল্লাহ তা‘য়ালার বাণী, ‘আমি মানুষ এবং জীন এ দুজাতিকে আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি’ এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আমার পরিচয় লাভের জন্য সৃষ্টি করেছি’।” 

(ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেশকাত,  ১/১৯৯ পৃ. হা/১২২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী, আসরারুল মারফুআ, ৯৩ পৃ:; আল্লামা, আজলূনী: কাশফুল খাফা,  হাদিস নং ২০১৬; আল লু’উ লু’উ মারছু,  হাদিস নং ৪১৬)।’’ 


তাহলে কোরআনের আয়াত এবং সাহাবীদের তাফসির দ্বারা বুঝা যায় যে মহান প্রতিপালক এ সৃষ্টি জগতকে তাঁর পরিচয়ের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এ ব্যাপারে আরও কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। 


❏ আহলে হাদিসের অন্যতম আলেম ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব আল্লামা শাওকানী - সূরা যারিয়াত,  আয়াত নং-৫৬,  এর إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ব্যাখ্যায় লিখেন-

وَقَالَ مُجَاهِدٌ: إِنَّ الْمَعْنَى: إِلَّا لِيَعْرِفُونِي. قَالَ الثَّعْلَبِيُّ: وَهَذَا قَوْلٌ حَسَنٌ

-‘‘(আমি মানুষ এবং জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদতের জন্য) বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ (رحمة الله)

 إِلَّا لِيَعْبُدُونِ এর ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহর পরিচয়ের জন্য সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। বিখ্যাত মুফাস্সির ইমাম ছা’লাবী (رحمة الله) এমনটি হযরত হাসান বসরী (رحمة الله)‘র বক্তব্য আছে বলেও উল্লেখ করেছেন।’’ ৭

৭. শাওকানী : ফতহুল কাদীর : ৫/১১০ পৃ.


❏ আবার এক জামাত ইমামগণ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে এ আয়াতের ব্যাখ্যা সংকলন করেছেন যে إِلَّا لِيَعْرِفُونِي -‘আল্লাহর তার পরিচয়ের জন্য সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন।’’ ৮

৮. ইমাম আলূসী : তাফসীরে রুহুল মা’য়ানী : ১৫/৫০ পৃ., ইমাম বগভী : তাফসীরে মা’আলিমুত তানযীল : ৪/২৩৫ পৃ., ইমাম ছা’লাভী : তাফসীরে ছা’লাভী : ৪/২১২ পৃ., ইমাম কুরতুবী : তাফসীরে আহকামুল কোরআন : ১৭/৫৫ পৃ., আল্লামা শাওকানী : ফতহুল কাদীর : ৫/৯২ পৃ.

 

❏ ইমাম বাগভী (رحمة الله) এবং ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) তাদের তাফসির গ্রন্থে উল্লেখ করেন-

وَقَالَ مُجَاهِدٌ: إِلَّا لِيَعْرِفُونِي

-‘‘ইমাম মুজাহিদ বিন জাবর (رحمة الله) বলেন, মহান সৃষ্টিকর্তা সব কিছু তাঁর পরিচয় লাভের জন্য সৃষ্টি করেছেন।’’ (ইমাম বাগভী, তাফসিরে মা‘আলিমুত তানযিল,  ৪/২৮৮ পৃ.,  ইমাম কুরতুবী,  তাফসিরে কুরতুবী,  ১৭/৫৫ পৃ.,  ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলুসী,  তাফসিরে বাহরে মুহিত,  ৯/৫৬২পৃ.)


❏ ইমাম আবু মুহাম্মদ আন্দুলুসী কুরতুবী (ওফাত. ৪৩৭ হি.) তার তাফসির গ্রন্থে লিখেন-

وقيل معنى الآية: وما خلقت الجن والإنس إلا ليعرفوني

-‘‘কোন কোন মুফাসসির এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আমি মানব এবং জীনকে সৃষ্টি করেছি আমার পরিচয়ের জন্য।’’ (হিদায়া ইলা বুলুগুন নিহায়া,  ১১/৭১০৮ পৃ.) 


❏ ইমাম আলাউদ্দিন খাযেন (رحمة الله) তার তাফসির গ্রন্থে উল্লেখ করেন-

وقيل: معناه إلا ليعرفوني

-‘‘কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, মহান রব মানব ও জীনকে সৃষ্টি করেছেন তার পরিচয়ে জন্য।’’ (ইমাম খাযেন, তাফসিরে খাযেন,  ৪/১৯৭ পৃ.)


❏ ইমাম মাওয়ারিদী (رحمة الله) তার তাফসির গ্রন্থে লিখেন-

الرابع: إلا ليعرفوني , قاله الضحاك.

-‘‘এ আয়াতের চতুর্থতম ব্যাখ্যা হলো, মহান রব তার পরিচয়ের জন্য মানব এবং জীনকে সৃষ্টি করেছেন। এমনটি বিখ্যাত মুফাসসির ইমাম যাহ্হাক (رحمة الله) এর অভিমত।’’ (ইমাম মাওয়ারিদী, তাফসিরে মাওয়ারিদী,  ৫/৩৭৫ পৃ.)


❏ অপরদিকে আল্লামা আবু সাউদ উমাদি (رحمة الله) উক্ত ৩আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, 

{وَمَا خَلَقْتُ الجن والإنس إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ} أي ليعرفونِ كما أَعرَب عنه قولُه عليه الصَّلاة والسلام يقول الله تعالى كُنتُ كنزاً مخفياً فأحببتُ أنْ أُعْرَفَ فخلقتُ الخلقَ لأُعرف

-‘‘মহান রব ইরশাদ করেন,  আমি মানুষ এবং জীনকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদতের অর্থা ইবাদত দ্বারা উদ্দেশ্য পরিচিতির জন্য সৃষ্টি করেছেন। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেন,  মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, আমি ছিলাম গুপ্ত ভাণ্ডার,  ইচ্ছা হল পরিচিত হওয়ার,  অত:পর আমি সমগ্র জগত সৃষ্টি করলাম।’’ (তাফসিরে আবুস সাউদ,  ২/১৩০ পৃ.) 


❏ ইমাম আযমের সমসাময়িক ইমাম মুকাতিল ইবনে সুলাইমান (১৫০হি.) তার তাফসিরে লিখেন-

وقالوا: إلا ليعرفون

-‘‘মুফাসসিরানে কেরাম বলেছেন, পরিচয়ে জন্য সৃষ্টি করেছেন।’’ (তাফসিরে মুকাতিল ইবনে সুলাইমান,  ৪/১৩৩ পৃ.)


❏ ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলুসী (رحمة الله) তার তাফসিরে লিখেন-

قِيلَ: مَعْنَاهُ لِيَعْرِفُونِ

-‘‘কোন কোন তাফসিরকারক বলেন, এ আয়াতের ইবাদত শব্দের ব্যাখ্যায় বলেছেন পরিচয়ের জন্য।’’ (ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলুসী, তাফসিরে বাহরে মুহিত,  ২/১১০ পৃ.) 


❏ তিনি এ কিতাবের আরেক স্থানে লিখেন-

قَالَ الْمُفَسِّرُونَ: مَعْنَاهُ لِيَعْرِفُونِ.

-‘‘মুফাসসিরানে কেরাম এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন,  পরিচয়ের জন্য মহান প্রতিপালক মানব এবং জীনকে সৃষ্টি করেছেন।’’ (ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলুসী,  তাফসিরে বাহরে মুহিত,  ১০/৫৬০ পৃ.) 


❏ ইমাম কাযি সানাউল্লাহ পানিপনি (رحمة الله) সংকলন করেন-

قال الله تعالى وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون اى ليعرفون

-‘‘মহান রবের বাণী, ‘আমি মানুষ এবং জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদতের জন্য’ এর মমার্থ হলো, আমার পরিচয়ের জন্য সৃষ্টি করেছি।’’ (পানিপথি,  তাফসিরে মাযহারি,  ১০/৭০ পৃ.) 


❏ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন-

إِلَّا لِيَعْبُدُونِ اى ليعرفون

-‘‘আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি মানে আমার পরিচয়ের জন্য সৃষ্টি করেছি।’’ (ইসমাঈল হাক্কী,  রুহুল বায়ান,  ১/১১৩ পৃ. এবং ১/২৬৯ পৃ.)


তাই প্রমাণিত হয়ে গেল যে, মহান রব তা‘য়ালা তাঁর পরিচয় প্রকাশিত হওয়ার জন্যই সব কিছু সৃষ্টি করেছেন।

Top