আদদৌলাতুল মক্কীয়াহ বিল মাদ্দাতিল গায়বিয়াহ্।
(ইলমে গায়ব বিষয়ক অদ্বিতীয় গ্রন্থ)
মূলঃ ঈমামে আহলে সুন্নাত আ’লা হযরত ঈমাম আহমদ রেযা খান ফাযেলী বেরলভী (رحمة الله)
অনুবাদঃ আবু সাঈদ মুহাম্মদ ইউসুফ জিলানী।
টেক্সট রেডীঃ মাসুম বিল্লাহ সানি, সরকার জিলানী, সিরাজুম মুনির তানভীর, আব্দুল্লাহ আল কাফী, আব্দুল ওয়াহাব রিজভী
উৎসর্গ
শ্রদ্ধেয়,
আব্বা-আম্মা ও উস্তাদ মহোদয়গণকে যাদের দোয়া ও অনুপ্রেরণায় এ গ্রন্থখানা অনুদিত।
ইমামে আহলে সুন্নাত, পীরে তরীকত, শায়খুল হাদীস ওয়াত। তাফসীর ওয়াল ফিক্হ, উস্তাযুল আসাতিযাহ্ হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব কাজী মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম হাশেমী সাহেব মাদ্দাজিলুহুল আলী-এর।
অভিমত
শতাব্দীর মােজাদ্দেদ ইমামে আহলে সুন্নাত, আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভীর (رحمة الله) ক্ষুরধার লেখনী সঞ্জাত সহস্রাধিক অকাট্য কিতাব সুন্নী জাহান তথা সত্য সন্ধানী মুসলিম সমাজের জন্য অমূল্য সম্পদ ও নির্ভুল দিশারী। তারই লিখিত “আদ-দৌলাতুল মক্কীয়্যাহ্ বিল মাদ্দাতিল গায়বিয়্যাহ্’ হচ্ছে ঐসব কিতাবের মধ্যে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ও অতি উচ্চমানের।
কিতাবটার বঙ্গানুবাদ হওয়া দীর্ঘদিনের চাহিদাই ছিলাে। উদীয়মান সাহিত্যিক, আহলে সুন্নাতের নিষ্কলুষ আদর্শ প্রচারে একান্ত উৎসুক আমার স্নেহভাজন মুহাম্মদ ইউসুফ জিলানী এ কিতাবখানার বঙ্গানুবাদ করে যুগের চাহিদা পূরণে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছে।
আমি যতটুকু দেখেছি-কিতাবটার অনুবাদ সরল ও শুদ্ধ পেয়েছি। কিতাবখানা প্রকাশিত ও বহুলভাবে প্রচারিত হলে বাংলাভাষীগণ এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সঠিক দিশার সন্ধান পাবে।
আমি আ’লা হযরতের রফ’ই দরজাত এবং অমূল্য পুস্তিকার বঙ্গানুবাদক ও প্রকাশকদের সর্বাঙ্গীন উন্নতি আর বইটি বহুল প্রচার কামনা করছি।
আমীন।
(কাজী মােহাম্মদ নূরুল ইসলাম হাশেমী)
প্রতিষ্ঠাতা আঞ্জুমানে মুহিব্বানে রসুল গাউছিয়া জিলানী কমিটি।
_____________________________________
খতীবে আহলে সুন্নাত, শাইখুল হাদীস ওয়াত তাফসীর, উসতাযুল উলামা, - হযরতুল আল্লামা অধ্যক্ষ আলহাজ্ব জালালুদ্দীন আল-কাদেরী
মাদ্দাজিলুল আলী-এর
অভিমত
ইমামে আহলে সুন্নাত, মােজাদ্দেদে দ্বীন ও মিল্লাত, আ'লা হযরত, শাহ ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (رحمة الله)-এর বিশ্ব আলােড়ন সৃষ্টিকারী অমূল্য, অদ্বিতীয় ও তুলনাহীন গ্রন্থ ‘আদদৌলাতুল মক্কীয়াহ্ বিল মাদ্দাতিল গায়বিয়াহ বাংলায় প্রকাশিত হতে দেখে আমি খুবই আনন্দিত হয়েছি। মূল আরবী ইবারতের সাথে যথাযথ সামঞ্জস্য রেখে সরল ও প্রাঞ্জল ভাষার মাধ্যমে অনুবাদক লেখকের ভাব মূর্তিকে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। আমি যতটুকু দেখেছি অনুবাদ বিশুদ্ধ ও সুন্দর পেয়েছি।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাতের আকীদায় বিশ্বাসীদের জন্য এটা নিঃসন্দেহের সু-সংবাদ
বাংলা ভাষায় অনুদিত এ গ্রন্থটি সর্বসাধারণ মুসলিম ছাড়াও দেশের মাদ্রাসা ছাত্রদের অধ্যয়নের ব্যাপারে বিশেষভাবে উপকৃত করবে।
আমি গ্রন্থখানার বহুল প্রচার এবং অনুবাদকের দীর্ঘায়ু কামনা করি।
(মােহাম্মদ জালাল উদ্দীন আল-কাদেরী)
প্রকাশকের নিবেদন
আলহামদু লিল্লাহ ওয়াশুক্রু লিল্লাহ, আযকা সালাতী-সালামী লিরাসুল্লিাল্লাহ, আকা সালাতী- সালামী লিহাবীবিল্লাহ্। হাবিবুল্লাহ (ﷺ) কে নিজ জীবনের চেয়ে অধিক ভালবাসতে না পারলে জীবন অর্থহীন হয়ে যায়। যদি আকীদা ঠিক না থাকে তবে আমলতাে কোন কাজে আসবে না।
এ বই পড়ে হাবিবুল্লাহ (ﷺ) সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে কোন ভুল থাকলে তা সংশােধন হবে এবং তাঁর শান-মান সম্পর্কে উচ্চ ধারণা সৃষ্টি হবে এ আশায় এ পুস্তক প্রকাশনায় সাথে যুক্ত হয়েছি।
এর প্রকাশনায় যারা যেভাবে সাহায্য সহযােগিতা করেছেন তাদের সকলের প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বিশেষত ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক বিশিষ্ট্য ইসলামী চিন্তাবিদ গবেষক জনাব স,উ,ম আবদুস সামাদ ভাই যিনি আমার ও অনুবাদকের মাঝে সেতু হিসাবে কাজ করেছেন। এই বই বিক্রির সমুদয় অর্থ ইমামুত তরীকত মুহিউস সুন্নাহ হযরত শেখ মুহাম্মদ বােরহান উদ্দিন (رحمة الله) এর স্বপ্ন ও প্রস্তাবিত আল-ওয়াইসিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে উৎসর্গ করছি। কোন প্রকার ভূল ত্রুটি সম্পর্কে জানালে আনন্দিত হব।
সালামান্তে
মুহাম্মদ সরওয়ার হােসাইন
_____________________________________
সূচীপত্র
ভূমিকা
প্রথম ভাগ
প্রথম নজর
(ইলমে গায়ব) স্বীকার ও অস্বীকার জ্ঞাপক আয়াত ব্যবহারের বর্ণনা
ইলমের শ্রেনী বিভাগ
গায়তুল মামুলের খন্ডন
আল্লাহ পরিপূর্ণ পরিচয় লাভ কারাে পক্ষে সম্ভব নয়
রাসুল(ﷺ)কাছে ‘গায়বের কোন জ্ঞান নেই, তিনি শেষ পরিণতি সম্পর্কেও অজ্ঞ’ উক্তিকারী কাফির
দ্বিতীয় নজর
ওহাবীরা ঐ মুশরিক যারা পূর্বাপর সবকিছুর জ্ঞান আল্লাহ ব্যতিত অন্যের জন্য শিরক সাব্যস্ত করে।
গায়াতুল মামুলের কুটিলতাপূর্ণ বক্তব্যের খন্ডন
আরেকটি জঘন্য উক্তির খন্ডন
একটি কুটিলতা পূর্ণ বক্তব্যের খণ্ডন
তৃতীয় নজর
হিফজুল ঈমান গ্রন্থকার খানবীর উপর কিয়ামতে কুবরা কায়েম
বান্দার ক্ষমতা
চতুর্থ নজর
ওহাবীদের ধূমীর প্রতি কঠোর হুশিয়ারি, ইলমে গায়ব সম্পর্কে তাদের ও অামাদের পার্থক্য,
ওহাবীরা মুশরিকের চেয়েও বােকা
পূর্বাপর সকল বস্তুর জ্ঞান রসুলে পাক (ﷺ) এর জ্ঞানের কিয়দাংশ মাত্ৰ
পঞ্চম নজর
ইলমে গায়ব সম্পর্কে কুরআন, হাদীস ও ওলামা কেরামের বক্তব্য
গ্রন্থকারের কুরআন পাক থেকে অকাট্য প্রমান
গায়াতুল মামুলের খণ্ডন
রাসুলে পাক(ﷺ) এর মর্যাদায় গাঙ্গুহীর আক্রোশ
রশিদ আহমদ ও খলীল আহমদ সম্পর্কে : ওলামায়ে মককার কুফরী ফতােয়া প্রদান
গাঙ্গুহীর কতেক ভ্রান্ত ধারণা
ষষ্ঠ নজর
এখন প্রশংসার স্থলে শর্তহীনভাবে খাস করা অপরিহার্য নয়
সংখ্যা অতিরিক্তকে অস্বীকার করে না
পাঁচকে নির্দিষ্ট করার রহস্য
আল্লাহর মধ্যে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বান্দার জ্ঞান অস্বীকারকে অপরিহার্য করে অনুরূপ ঐ জ্ঞান বান্দাকে প্রদান করা বিশুদ্ধ
আল্লাহ ছাড়া কোন কিছুর অস্থিত্ব নেই
রাসুলের শানে হযরত সাওয়াদের কবিতায় ওহাবীদের ভ্রান্ত ধারণা খন্ডন
পঞ্চ দৃশ্য জ্ঞানের বিস্তারিত বিবরণ
গর্ভাশয়ের জ্ঞান
দ্বিতীয় ভাগ
____________________________________
সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতিঃ
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে হাতে গােনা যে কয়জন অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী, ক্ষনজন্মা কালজয়ী মহামনীষীর পদচারণা পরিলক্ষিত হয়, ত্রয়ােদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, ইমামে আহলে সুন্নাত, শাহ্ আহমদ মুহাম্মদ রেযা খান বেরলভী (رحمة الله) তন্মধ্যে অন্যতম। তদানিন্তনকালে ইসলাম বিদ্বেষী বাতিলরা যখন মুসলমানদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ঠিক সেই মুহুর্তে আল্লাহ তায়ালা সত্যের আলােকবর্তিকা রূপে তাকে প্রেরণ করলেন।
তিনি একাধারে আলিম, হাফিজ, ক্বারী, মুহাদ্দিস, মােফাসসির, মুফতি, পন্ডিত, দার্শনিক, ভাষাবিদ, সাহিত্যিক, চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, গবেষক, সংস্কারক, কবি, কলম সম্রাট, অপ্রতিদ্বন্দ্বী মুনাযির, শ্রেষ্ঠতম বক্তা, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, সর্বোপরি তিনি হলেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের “এনসাইক্লোপিডিয়া”। আলা হযরত ১০ই শাওয়াল ১২৭২ হিজরী, ১৪ই জুন মােতাবেক ১৮৫৬ ইংরেজী ভারতের (ইউপি) বেরলী শহরে শনিবার জোহরের সময় জন্ম গ্রহণকরেন। তিনি নিজেই আরবী সংখ্যাতাত্ত্বিক গাণিতিক সূত্রের (আবজাদ) মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার এ বাণী “তারা হচ্ছেন সেসব ব্যক্তি, যাদের হৃদয়ে আল্লাহ তায়ালা ঈমানের চিত্র অংকন করেছেন এবং নিজ পক্ষ থেকে রুহ' দ্বারা তাদেরকে সাহায্য করেছেন”। (সুরা মুজাদালাহ্) হতে স্বীয় জন্মসাল ১২৭২ হিজরী বের করেছেন। তাঁর পিতামহ মাওলানা রেযা আলী খান তাঁর নাম রাখেন মুহাম্মদ আহমদ রেযা খান। তার মহিয়সী মাতা পরম স্নেহের সাথে ডাকতেন “আমান মিয়া” পিতা ডাকতেন আহমদ মিঞা। রাসুল প্রেমের নিদর্শন স্বরূপ তিনি স্বীয় নামের পূর্বে আবদুল মােস্তফা সংযােজন করেছেন। তিনি ১২৭৬ হিজরী মােতাবেক ১৮৬০ সাল মাত্র ৪ বছর বয়সে পবিত্র কুরআন সমাপ্ত করেন। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তার সম্মানিত পিতার তত্ত্বাবধানেই। এ ছাড়া তিনি যে সকল ওস্তাদগণ থেকে শিক্ষার্জন করেছেন মাওলানা আবদুল আলীম রামপুরী, মাওলানা মির্জা গােলাম বেগ প্রমুখ অন্যতম। ১২ই রবিউল আওয়াল, ১২৭৮ হিঃ পবিত্র জশনে ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে আয়ােজিত মহাসমাবেশে এক হৃদয়গ্রাহী বক্তৃতা দিয়ে সকল আলােচক ও শ্রোতাকে হতবাক করে দেন। ৮ বছর বয়সেই আরবী ব্যাকরণের বিখ্যাত গ্রন্থ হেদায়তুন্নাহু” পাঠ সমাপ্ত করেন এবং আরবীতে আরেকটি শরাহ (ব্যাখ্যা) লিখেন। এ হিসেবে এটা তাঁর সর্বপ্রথম লিখিত পুস্তক। আরাে বিস্ময়ের ব্যাপার হলাে মাত্র ১৩ বছর ১০ মাস ৪ দিনে তিনি সর্ববিষয়ের জ্ঞান লাভ করে ১২৮৬ হিঃ ১৮৬৯ সালের ১৪ ই সাবান দস্তারে ফজিলত লাভ করেন। আরাে আশ্চার্যের বিষয় যে, যেদিন তিনি শেষ বর্ষ সনদ লাভ করেন সে দিনই বালক হন। (সুবহানাল্লাহ) সে দিনই তিনি স্তন্যদান সম্পর্কিত একটি জটিল বিষয়ে ফতােয়া প্রদান করেন। তাঁর দক্ষতার পরিচয় পেয়ে তার পিতা নক্বী আলী খান তার উপর ফতােয়া প্রদানের দায়িত্বভার প্রদান করেন।'
আ’লা হযরত (رحمة الله) লিখার জগতে একজন শ্রেষ্ঠতম ও সফলতম ব্যক্তিত্ব। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সব বিষয়ে তিনি কলম ধরেছেন। ৭২টিরও বেশী বিষয়ের উপর প্রায় ১৫০০-এর অধিক কিতাব তিনি প্রণয়ন করেছেন। শুধুমাত্র ওহাবীদের ভ্রান্ত ধারণা খন্ডনে তিনি ২০০-এর অধিক গ্রন্থ রচনা করেন। এ মহান কলম সম্রাট ও মহান ব্যক্তিত্ব ১৩৪ হিজরী সালে ২৫শে সফর ১৯২১ খৃষ্টাব্দে রােজ জুমাবার ২টা ৩৮ মিনিটে মাওলায়ে হাকিকীর সান্নিধ্যে চলে যান। আল্লাহ তায়ালা তার কবরকে নুরে রহমত দ্বারা পরিপূর্ণ করুন।