বিষয় নং-৭: সনদে কোনো একজন বর্ণনাকারী মুনকার, অথবা মুদ্ত্বরাব অথবা মাতরুক থাকলে সে হাদিসকে জাল বলা হবে না:
বর্তমান আহলে হাদিসগণ খুবই ফিতনা ছড়াচ্ছে যে হাদিসের সনদে কোন রাবীর ব্যাপারে যদি মুনকার, মাতরুক ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয় তাহলে তা তাদের দৃষ্টিতে জাল হাদিস হিসেবে গণ্য। অথচ এটি হচ্ছে তাদের মনগড়া নীতিমালা। সকল মুহাদ্দিসগণই বলেছেন সনদের একজন রাবীর প্রতি উপরের বর্ণিত দুর্বলতার ইঙ্গিত দ্বারা সনদটি দ্বঈফ হবে কিন্তু জাল নয়।
ক. (সনদ মুনকার হওয়া): এ বিষয়ে ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন-
المنكر نوع اخر غير الموضوع وهو قسم الضعيف-التعقبات:৭৩-باب :الاطعمة
-‘‘সর্বসম্মত অভিমত হলো মুনকার সনদ জাল হাদিসের প্রকার নয়, বরং দ্বঈফ হাদিসের প্রকার।’’(সুয়ূতি, তা‘আকিবাত ‘আলাল মাওদ্বুআত, ৩৭ পৃ.)
❏ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) তার এ কিতাবের অন্যস্থানে বলেন
صرح ابن عدى بأن الحديث منكر فليس بموضوع-التعقبات:৬২
-‘‘এটা সুস্পষ্ট কথা ইমাম আদি (رحمة الله) বলেছেন মুনকার সনদের হাদিস জাল নয়।’’(সুয়ূতি, তা‘কিবাত, ৬২ পৃষ্ঠা)
❏ তিনি এ কিতাবের অন্যস্থানে বলেছেন যে
المُنْكَرْ مِنْ قِسْم الضَّعِيْف وَهُوَ محتمل فى الفضائل-التعقبات:باب المناقب
-‘‘হাদিসের সনদ মুনকার হওয়া যঈফ হওয়ার অর্ন্তভুক্ত, তবে ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে তা দলিল হওয়ার সম্ভবনা রাখে।’’ (ইমাম সুয়ূতি, তা‘কিবাত, কিতাবুল মানাকিব)
❏ আল্লামা ইবনুল আররাক কেনানী (৯৬৩ হি.) এ বিষয়ে লিখেন-
وَالْمُنكر من قسم الضَّعِيف وَهُوَ مُحْتَمل فِي الْفَضَائِل.
-‘‘হাদিসের সনদ মুনকার হওয়া যঈফ হওয়ার অর্ন্তভুক্ত, তবে ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে তা দলিল হওয়ার সম্ভবনা রাখে।’’ (তানযিহুশ শরিয়াহ, ২/৫০ পৃ.)
খ. (সনদ মুদত্বরিব হওয়া): অপরদিকে মুদত্বরাব সনদ সম্পর্কে ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন-
الُمضْطَرِبْ مِنْ قسم الضَعِيْف لَا المَوْضُوْع :২৭: باب الجنائز
-‘‘মুদত্বরাব দ্বঈফ সনদেরই প্রকার, এটি জাল নয়।’’ (ইমাম সুয়ূতি, তা‘কিবাত, ২৭ পৃষ্ঠা)
❏ আল্লামা তাহের পাটনী (رحمة الله) একটি হাদিস সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেন-
مُضْطَرب: قلت من قسم الضَّعِيف لَا الْمَوْضُوع
-‘‘এ সনদটি মুদত্বারিব, আমি (তাহের পাটনী) বলি, মুদত্বরাব হলো দ্বঈফ সনদের প্রকার, তাই বলে এটি জাল নয়।’’ (তাযকিরাতুল মাওদ্বুআত, ২১৯ পৃ.)
গ. (সনদ মু’দাল হওয়া): ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ বদরুদ্দীন হামাভী আশ-শাফেয়ী (ওফাত. ৭৩৩ হি.) -
والمعضل من قسم الضَّعِيف
-‘‘হাদিসের সনদ ‘মু’দাল’ হওয়া যঈফ সনদের অর্ন্তভুক্ত (জাল এর নয়)।’’ (المنهل الروي , ৪৭ পৃ.)
ঘ. (সনদ মুনকাতী‘ঈ হওয়া): আল্লামা জাযায়েরী দামেস্কী লিখেন-
والمنقطع من قسم الضَّعِيف
-‘‘সনদ মুনকাতী‘ঈ (সনদের মাঝে কোনো একজন বিচ্ছিন্ন) হওয়া যঈফ হাদিসের অর্ন্তভুক্ত (জাল নয়)।’’ (তাওজিহুন নযর ইলা উসূলিল আছার, ২/৭৩০ পৃ.)
❏ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله) লিখেন-
والْمُنْقَطِعَ مِنْ قِسْمِ الضَّعِيفِ
-‘‘সনদ মুনকাতী‘ঈ (সনদের মাঝে কোনো একজন বিচ্ছিন্ন) হওয়া যঈফ হাদিসের অর্ন্তভুক্ত (জাল নয়)।’’ (কাস্তাল্লানী, ইরশাদুস সারী, ১/২১ পৃ.)
❏ আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
والْمُنْقَطِعَ مِنْ قِسْمِ الضَّعِيفِ
-‘‘সনদ মুনকাতী‘ঈ (সনদের মাঝে কোনো একজন বিচ্ছিন্ন) হওয়া যঈফ হাদিসের অর্ন্তভুক্ত (জাল নয়)।’’ (ইবনে হাজার, ফতহুল বারী, ১/৩৪৭ পৃ.)
❏ আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানী লিখেন-
أَنَّ الْمُنْقَطِعَ مِنْ قِسْمِ الضَّعِيفِ
-‘‘নিশ্চয় সনদ মুনকাতী‘ঈ (সনদের মাঝে কোনো একজন বিচ্ছিন্ন) হওয়া যঈফ হাদিসের অর্ন্তভুক্ত (জাল নয়)।’’ (নায়লুল আউতার, ৬/৩৭৫ পৃ.)
ঙ. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন-
فقد صرح بأن رواية المجهول من قسم الضعيف
-‘‘এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে সনদ মাজহুল হওয়া যঈফ সনদের অর্ন্তভুক্ত (জালের নয়)।’’ (ইবনে হাজার, আন-নুক্কাত, ৩৮৭ পৃ.)
তাই কোনো মুহাদ্দিসের সনদ বিষয়ে কোনো দুর্বলতা বুঝায় এমন শব্দ দ্বারা কোনো হাদিসকে জাল বলা যাবে না।