ইসলামে নারীর মর্যাদা


এতক্ষণ আমরা ইসলামপূর্ব ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের দৃষ্টিকোণে নারীর অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এখন পবিত্র ইসলামের আলোকে নারীর মান-মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করবো।


আজ থেকে প্রায় দেড়হাজার বছর পূর্বে মানবতার অগ্রদূত, নারী জাতির মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)  সর্ব প্রথম নারীর যথাযোগ্য মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়ে নারীজাতির পূর্ণ মানবিক অধিকার, মান-মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন। আর সর্বাগ্রে ইসলামের আদর্শ গ্রহণ করে ইসলাম গ্রহণ করেন একজন মহিয়সী নারী হযরত খদীজাতুল কুবরা (رضي الله عنه)। ইসলামে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) । পবিত্র কুরআনে একটি বৃহৎ সূরার নাম সূরা ‘নিসা’ রাখা হয়েছে অথচ পুরুষের নামে কোন সূরা নেই। ইসলাম নারী জাতিকে মানবিক উন্নতি-প্রগতির আসল বুনিয়াদ বলে ঘোষণা করে। ইসলাম ঘোষণা করে যে, “নারী পুরুষের মতোই গুরুত্বপূর্ণ মানুষ”, বরং নারীকে তার নারীত্বের কারণে পুরুষের চেয়েও বেশী মর্যাদার অধিকারী করে ঘোষনা করেছে। ইসলাম নারীর স্বভাব প্রকৃতির আলোকে তার ন্যায্য মান, দায়িত্ব ও কর্মক্ষেত্রেও নির্ধারণ করে দেয়। ইসলাম নারীকে সব ধরণের অন্যায় বন্ধন থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাধীন, সক্ষম, বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। নারী-পুরুষ একে অপরের বন্ধু ও সহায়ক বলে ঘোষণা দেয়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-

  وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُ إِنَّ اللهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ 

আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের বন্ধু-সহায়ক। তারা ভালকাজের আদেশ দেয় আর মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য করে। এদের উপর আল্লাহ তা‘আলা রহমত নাযিল করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, সুকৌশলী। ১২

১২.সূরা তাওবাহ, আয়াত: ৭১


যেখানে পূর্ববর্তী যুগে বা ধর্মে নারীকে মানুষ বলে স্বীকৃতি দেয়নি সেখানে ইসলামে নারীকে পুরুষের বন্ধু ও সহায়ক বলে সমান সম্মানের অধিকারী করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-

 هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ 

নারীরা তোমাদের পুরুষদের পোশাক আর তোমরা নারীদের পোশাক। ১৩

১৩.সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭


এখানে নারী-পুরুষ পরস্পরের পরিচ্ছদ বলে উভয়কে সমান অধিকার ও সমমান দান করা হয়েছে। মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন- এখানে নারী-পুরুষ একজন অপরজনের লিবাস বলার কারণ হলো-


১.স্বামী-স্ত্রী মিলনের সময় পরস্পর পরস্পরের সহিত এভাবে মিলে যায় যেভাবে পোশাক শরীরের সাথে মিলে যায়।

২.স্বামী স্ত্রীর এবং স্ত্রী স্বামীর গোপনীয়তা এমনভাবে লুকায় যেমন পোশাক শরীরকে লুকায়।

৩.স্ত্রী স্বামীর জন্য এমনভাবে নির্দিষ্ট হয় যেমনিভাবে শরীরের জন্য তার পোশাক।

৪.স্বামী স্ত্রীর এবং স্ত্রী স্বামীর দোষ-ত্রুটি এমনভাবে গোপন করে যে, যেমনিভাবে পোশাক শরীরের দোষ-ত্রুটিকে গোপন করে।

৫.স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি এমন মুখাপেক্ষী যে, যেমন সব মৌসুমে পোশাকের মুখাপেক্ষী।

৬.স্ত্রীর কারণে স্বামী এবং স্বামীর কারণে স্ত্রী সর্বপ্রকার বদনামী ও অপবাদ থেকে রক্ষা পায়। অথবা পরস্পর পরস্পরের জন্য প্রশান্তি। ১৪

১৪.তাফসীরে নঈমী, খণ্ড.২, পৃ. ২৫২

 

অর্থাৎ উপরোক্ত বিষয়সমূহে নর-নারী উভয়কে সমান গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর নবুয়তের যবানে ঘোষণা করেছেন-

 حُبِّبَ إِلَيَّ مِنَ الدُّنْيَا النِّسَاءُ وَالطِّيبُ، وَجُعِلَ قُرَّةُ عَيْنِي فِي الصَّلَاةِ 

পৃথিবীর যাবতীয় সামগ্রী থেকে আমার নিকট প্রিয় বানানো হয়েছে নারী, সুগন্ধি এবং নামাযের মধ্যে আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে। ১৫

১৫.ইমাম নাসাঈ র. (৩০৩ হি.) নাসাঈ শরীফ, খণ্ড.২, পৃ.৯৩


হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দুনিয়ার মধ্যে তিনটি জিনিসকে ভালবাসতেন।

 الطَّعَامُ وَالنِّسَاءُ وَالطِّيبُ فَأَصَابَ اثْنَيْنِ وَلَمْ يُصِبْ وَاحِدًا أَصَابَ النِّسَاءَ وَالطِّيبَ وَلَمْ يُصِبِ الطَّعَامَ. 

খাদ্য, নারী ও সুগন্ধি। এর মধ্যে তিনি দু’টি লাভ করেছিলেন, আর একটি লাভ করেন নি। লাভ করেছিলেন নারী ও সুগন্ধি আর লাভ করেননি খাদ্য। ১৬

১৬.আহমদ, সূত্র. মিশকাত, পৃ. ৪৪৯


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন-

 الدُّنْيَا كُلُّهَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَة الصَّالِحَة 

বিশ্ব ভূমণ্ডল পুরোটাই হলো সম্পদ। আর দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো সতী-সাধ্বী নারী। ১৭

১৭.ইমাম মুসলিম ইবনে হুজ্জাজ কুশাইরী র.(২৬১হি.), সহীহ মুসলিম, সূত্র. মিশকাত; ২৬৭


আরো একধাপ এগিয়ে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন- وَلَيْسَ الذَّكَرُ كَالْأُنْثَى

(কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোন কোন) পুরুষ নারীর সমকক্ষ নয়।১৮

১৮.সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৬ 


অর্থাৎ অনেক ক্ষেত্রে যেমন- ইবাদত-বন্দেগী ও তাকওয়া-পরহেযগারীতে অনেক নারী পুরুষের অগ্রগামী।

Top