❏ প্রশ্ন : নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবারের মতো নারায়ে রেসালাত ইয়া রাসূলাল্লাহ বলা কেমন? অনেকে এটাকে বিদআত ও শিরক বলে। এটার বৈধতার উপর কোনো প্রমাণ আছে কি?


✍ জবাব : حامدا ومصليا ومسلما প্রচলিত নারায়ে তাকবীর যেভাবে সুন্নাত, নারায়ে রেসালাতও সুন্নাত। যেমন ফুহুহুশ শাম কিতাবে আছে, হযরত কা‘আব বিন হামযা রাযি. যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যুদ্ধের ময়দানে ডাকছিলো, ইয়া মুহাম্মাদ, ইয়া রাসূলাল্লাহ বলে।


ফুহুহুশ শাম কিতাবে একথাও উল্লেখ আছে, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত আছে। ফারুকে আযমের যুগে সাহাবায়ে কেরাম যুদ্ধের ময়দানে ইয়া রাসূলাল্লাহ বলে না‘রা দিতো। সহীহ মুসলিম দ্বিতীয় খন্ড হিজরত অধ্যায়ে হযরত বারা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে। হযরত রাসূল (ﷺ) যখন হিজরত করে মদীনায় প্রবেশ করলেন, فصعد الرجال والنساء فوق البيوت وتفرق الغلمان والخدام في الطرق ينادون يا محمد يا رسول الله ‘পুরুষ মহিলারা ঘরের উপর উঠলো। বাচ্চা ও খাদেমরা রাস্তার মধ্যে ছড়িয়ে ডাকছে, ইয়া মুহাম্মাদ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তাদের এই ডাক খুশির কারণে ছিলো।


এই হাদীস হাদীস থেকে স্পষ্ট না‘রায়ে রেসালাত প্রমাণ হলো। সকল সাহাবায়ে কেরাম না‘রায়ে রেসালাত লাগাতো। কোনো জিনিস প্রমাণিত হলে তার প্রাসঙ্গিক বিষয়সহ প্রমাণিত হয়। إذا ثبت الشئ ثبت بلوازمه


শরয়ী মূলনীতি : কোনো হুকুম ইল্লাত ছাড়া হয় না। উসূলে ফেকাহতে এটাও আছে যে, একটি হুকুমের অনেকগুলি কারণ থাকে।


কোরআন হাদীসের স্পষ্ট বিবরণ দ্বারা প্রমাণিত নয় এমন বিধানের মধ্যে যদি কোনো ইল্লত পাওয়া যায়, তাহলে এই হুকুম জারি হবে। كما صرح به الأصوليون ‘যেমন উসূলবিদরা স্পষ্ট বলেছেন।’ এর দ্বারা জানা গেলো, আমাদের আহলে সুন্নাত আলেমদের আলোচনার ফাকে যখন শানে রেসালত, শানে গওসিয়াত ও শানে বেলায়াতের ক্ষেত্রে সুন্দর আলোচনা করে তখন শ্রতারা উচ্চ আওয়াজে না‘রায়ে তাকবীর, না‘রায়ে রেসালাত, না‘রায়ে গওসিয়া, না‘রায়ে হায়দারী বলে। খুশি প্রকাশ করার জন্য নিজ মুরশিদ হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) এর না‘রা লাগায়। খারেজীদের মুখ বন্ধ করার জন্য হায়দারী না‘রা লাগায়। (অর্থাৎ হযরত আলী রাযি.র না‘রা লাগায়।) অহ্হাবী নজদীদেরকে কষ্ট দেওয়ার জন্য না‘রায়ে গওসিয়া বলে। হযরত গওসে আযম প্রতি ভালোবাসা ও আস্থা প্রকাশ করে। আল্লামা শামী (رحمة الله) হাউজে উযু করা মোস্তাহাব বলেছেন। শিআদেরকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। এই কারণ হিজরতের হাদীসে ব্যাখ্যাকারগণ বর্ণনা করেছেন। যেখানে ডাকা নিষেধ এসেছে, সেখানে ব্যাপকভাবে নিষেধ না। বরং সেটা নিষেধ যে, কাউকে মা‘বুদ ও খোদা মনে ডাকে। আর যদি ব্যাপকভাবে ডাকা নিষেধ হয়, তাহলে হযরত ইবরাহীম আ. মৃত পাখিকে ডেকেছেন। নাউযুুবিল্লাহ তিনি কি শিরক করেছেন? যদি দূর থেকে ডাকা উদ্দেশ্য হয় তাহলে হযরত ফারুকে আযম রাযি. দূর থেকে ইয়া সারিয়াল জাবাল বলেছেন। এই ডাককে সাহায্য চাওয়ার ডাক বলা হয়, তাহলে হাদীসের মধ্যে يا عباد الله أعينوني এই হাদীস শিরকের শিক্ষা দিচ্ছে বলতে হবে। আর যদি হাজের নাজির জেনে ডাকা নিষেধ উদ্দেশ্য নেওয়া হয়, তাহলেالنبي اولى بالمؤمنين من أنفسهم এর বিপরীত আবশ্যক হবে। যার অর্থ হলো, নবী মুমিনদের জানের চেয়েও নিকটতম। আর যেখানে تدع من دون اللهএবং تدع مع الله আছে সেখানে দোআ অর্থ ইবাদাত।


জালালাঈন শরীফ, বায়যাবী শরীফ, রূহুল বয়ান, রূহুল মা‘আনী ইত্যাদি মুফাসসিরগণ এই অর্থ উদ্দেশ্য নিয়েছে।  যেমন আমার উস্তাদ আল্লামা ফয়েয আহমদ আওসী রেযবী (رحمة الله) বলেছেন)


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কি মানুষের ইয়া রাসূলাল্লাহর না‘রার আওয়াজ শুনতে পান? হাঁ, শুনেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উম্মাতের ডাক দূর থেকে শুনেন। হযরত মাওলানা আব্দুল হাই লাখনৌভী (رحمة الله) তার ফাতাওয়ায় (১/৪৩) একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। লাউহে মাহফূহে কলম চলছিলো। অথচ আমি মাতৃ উদরে ছিলাম। যখন মাতৃ উদরে ফেরেশতাদের তাসবীহের আওয়াজ শুনছিলেন, তাহলে আমাদের ডাকও শোনেন। এভাবে তার উম্মাতের অনেক অলি তার গোলামের গোলাম আল্লাহর মাখলুকের আওয়াজ দূর থেকে শুনতে পায়। হযরত সোলায়মান আ. যখন দূর থেকে পিপড়ার আওয়াজ শুনতে পারতেন, প্রিয় নবী (ﷺ) দূর থেকে উম্মতের ডাকও শুনেন।


নববী যুগ থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত কালের পরিবর্তনের সাথে প্রচলিত নিয়মে না‘রায়ে রেসালাত ইয়া রাসূলাল্লাহ পবিত্র বাক্য চালু আছে। যখন নববী যুগে মদীনা বাসী খুশিতে ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া মুহাম্মাদ ডাকছিলো, তাহলে জানা গেলো ইয়া রাসূলাল্লাহ ডাক নববী যুগেও চালু ছিলো। لا ترفع أصواتكم فوق صوت النبي এই আয়াত থেকে কেউ এটা যেন মনে না করে যে, না‘রা উচু আওয়াজে হয়। গলা ফাটিয়ে আওয়াজ করে। এতে আমল নষ্ট হয় এবং বেআদবী হয়।


হাঁ, আয়াতের মধ্যে নিষেধ শারিরিক নিকটবর্তীর জন্য। আত্মিক নিকটবর্তীর জন্য নয়। আয়াতের মধ্যে নবীর আওয়াজের উপর বলা হয়েছে। যার অর্থ হলো, যখন রাসূল (ﷺ) কথা বলে তখন তোমরা নিজেদের আওয়াজকে তাদের আওয়াজ থেকে উচু করো না। নতুবা সাহাবায়ে কেরাম রাসূলের উপস্থিতিতে উচু আওয়াজে না‘রা দিতেন না। মিম্বরের উপর দাড়িয়ে হযরত বেলাল আযান দিতেন না। হযরত হাস্সান রাযি. মেম্বরের উপর দাড়িয়ে না‘ত পড়তেন না। এই সকল ক্ষেত্রে আওয়াজ বড় করা নিষেধ নয়। মদীনাবাসী হিজরতের সময় রাসূল (ﷺ) এর আগমণের উপর না‘রা ধ্বনি লাগিয়েছিলেন।


অমুক মৌলবী, অমুক নেতা, অমুক মাদরাসা, অমুক মন্ত্রি জিন্দাবাদ, চিৎকার দিয়ে না‘রায়ে তাকবীল বলা বিদআত নয়?

Top