বিষয় নং-১৫: রাসূল (ﷺ) এর ইলমে গায়ব সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস পর্যালোচনা :
‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩৭৩ পৃষ্ঠায় তাদের বানানো একটি জাল হাদিস উল্লেখ করে তাকে জাল বলে দাবী করেছেন যে, সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জ্ঞান রাসূল (ﷺ)-এর ছিল না। নাউযুবিল্লাহ
মাওলানা আব্দুল হাই লাখনৌভীর বরাত দিয়ে দাবী করেছেন যে, ‘‘যা কিছু অতীত হয়েছে এবং যা কিছু ভবিষ্যতে ঘটবে সবকিছুরই বিস্তারিত ও খুঁটিনাটি জ্ঞান তাঁকে দেয়া হয়েছিল।’’ এটিকে তিনি জাল ও মিথ্যা কথা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছেন। সহীহ হাদিস দ্বারা এই সমস্ত মানবরূপী দাজ্জালদের কথার জবাব দেয়ার চেষ্টা করবো। ইনশা আল্লাহ।
প্রথম হাদিস
❏ বুখারী শরীফের بدء الخلق ও মিশকাত শরীফের بدء الخلق وذكر الانبياء নামক অধ্যায়ে হযরত উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে-
وَعَن عمرؓ قَالَ: قَامَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ مَقَامًا فَأَخْبَرَنَا عَنْ بَدْءِ الْخَلْقِ حَتَّى دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ مَنَازِلَهُمْ وَأَهْلُ النَّارِ مَنَازِلَهُمْ حَفِظَ ذَلِكَ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نسيَه . رَوَاهُ البُخَارِيّ ـ
-‘‘হযরত উমর (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ) এক জায়গায় আমাদের সাথে অবস্থান করছিলেন। সেখানে তিনি আমাদেরকে সৃষ্টির সূচনা থেকে সংবাদ দিচ্ছিলেন। এমনকি বেহেস্তবাসী দোযখবাসীগণ নিজ নিজ ঠিকানায় পৌঁছে যাওয়া অবধি পরিব্যাপ্ত যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনাবলীর বর্ণনা প্রদান করেন। যিনি ওসব বিষয় স্মরণ রাখতে পেরেছেন তিনি তা স্মরণ রেখেছেন, আর যিনি স্মরণ রাখতে পারেননি তিনি ভুলে গেছেন।’’ ২২৯
২২৯.
ক. ইমাম বুখারী : আস্ সহীহ্ :৬/২৮৬পৃ.হাদিস, ৩১৯২
খ. খতিব তিবরীযি : মিশকাতুল মাসাবিহ্ :৪/৫০৬ পৃ. হাদিস, ৫৬৯৯
গ. ইমাম আবূ দাউদ, আস্-সুনান, ৪/৪৪১ পৃ. হাদিস, ৪২৪০
ঘ. ইমাম তিরমিযী, আস্-সুনান, ৪/৪১৯ পৃ. হাদিস, ২১৯১
ঙ. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৫/৩৮৫ পৃ.
চ. ইমাম বুখারী, আস্-সহীহ, ১১/৪৯৪ পৃ. হাদিস, ৬৬০৪
ছ. ইমাম মুসলিম, আস্-সহীহ, ৫/২২১৭ পৃ. হা/২৮৯১ এবং ২৩
জ. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস্-সুনান, ২/১৩৪৬পৃ. হাদিস, ৪০৫৩
ঝ. ইমাম খতিব তিবরিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ফিতান, ৪/২৭৮ পৃ. হাদিস, ৫৩৭৯
এখন. ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব কি বুখারী শরীফ পড়েননি, নাকি পড়েও সত্যকে ধামা চাপা দিয়েছেন।
❏ দেখুন রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন যে,
وَعَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ ؓ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُجَارِيَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ يصرف بِهِ وُجُوه النَّاس إِلَيْهِ أَدخل الله النَّار . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ ورواه ابن ماجه عن ابن عمر -
-‘‘হযরত কাব ইবনে মালিক (رحمة الله) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আলিমগণের সাথে বিতর্কে জয়লাভের জন্য অথবা মূর্খদের সাথে বাক-বিতন্ডা করার জন্য কিংবা সাধারণ মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য ইলম অন্বেষণ করবে, আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’’ ২৩০
২৩০.
ক. ইমাম খতিব তিবরিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, ১/৬৪ পৃ. হা/২২৫-২২৬
খ. ইমাম তিরমিযী, আস্-সুনান, ৫/৩২ পৃ. হাদিস, ২৬৫৪
গ. ইমাম ইবনে মাযাহ, ১/৯৩ পৃ. হা/২৫৩
তাই আমি বলতে চাই, এই সমস্ত আলেমরা সাধারণ মানুষদের বিপাকে ফেলার জন্য ঝগড়া সৃষ্টি করে ইসলামের মাঝে ফাটল ধরাতে চায়। তাই আল্লাহ্ তা‘য়ালার দরবারে এই সমস্ত নামধারী আলেমদের থেকে পানাহ চাই, যে ব্যক্তি জেনে শুনে রাসূল (ﷺ) এর সত্য হাদিসকে গোপন করে।
❏ এ প্রসঙ্গে রাসূল (ﷺ) বলেন-
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: من سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ عَلِمَهُ ثُمَّ كَتَمَهُ أُلْجِمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ ورواه ابن ماجه عن انس
-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তিকে এমন ইলমের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, যা সে জানে। অতঃপর সে তা গোপন করে রাখে। কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেয়া হবে।’’ ২৩১
২৩১.
ক. ইমাম খতিব তিবরিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ইলম, ১/৬৪ পৃ. হা/২২৩-২২৫
খ. ইমাম তিরমিযী, আস্-সুনান, ৫/৩২ পৃ. হা/২৬৪৯, তিনি বলেন সনদটি হাসান।
গ. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস্-সুনান, ১/৯৬ পৃ. হা/২৬১
ঘ. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২/২৬৩ পৃ.
ঙ. ইমাম আবূ দাউদ, আস্-সুনান, ৫/৬৭ পৃ. হা/৩৬৫৮
চ. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস্-সুনান, ১/৯৭ পৃ. হা/২৬৪, তিনি হযরত আনাস (رضي الله عنه)‘র সূত্রে।
তাই উক্ত গ্রন্থের লেখক ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরকে বলতে চাই যে আপনি রাসূল (ﷺ) এর ইলমে গায়বের সত্য হাদিসকে গোপন করেছেন, রাসূল (ﷺ)-এর এই শাস্তির ঘোষণা কী আপনার জানা নেই? জানা আছে, নাকি নজদীদের টাকায় সব ভুলে গেছেন ?
❏ বুখারী শরীফের উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) তদীয় উমদাদুল ক্বারী শরহে বুখারীর ১৫ খণ্ডের ১১০ নং পৃষ্ঠায় বলেন-
دلَالَة على أَنه أخبر فِي الْمجْلس الْوَاحِد بِجَمِيعِ أَحْوَال الْمَخْلُوقَات من ابتدائها إِلَى انتهائها
-‘‘এ হাদিস থেকে বুঝা গেল একই অবস্থানে হুযূর (ﷺ) সৃষ্টি কুলের আদ্যাপান্ত যাবতীয় অবস্থার খবর দিয়েছিলেন।’’
দ্বিতীয় হাদিস:
❏ মিশকাত শরীফের معجزة অধ্যায়ে মুসলিম শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে হযরত আমর ইবনে আখতাব আনসারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
فَأَخْبَرَنَا بِمَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَأَعْلَمُنَا أحفظنا. رَوَاهُ مُسلم ـ
-‘‘আমাদেরকে সেই সমস্ত ঘটনাবলীর খবর দিয়েছেন যেগুলো কিয়ামত পর্যন্ত ঘটতে থাকবে। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলেম হলেন তিনি যিনি এসব বিষয়াদী সর্বাধিক স্মরণ রাখতে পেরেছেন।’’ ২৩২
২৩২.
ক. ইমাম মুসলিম : আস্ সহীহ : ৪/২২১৭ পৃ. হাদিস নং : ২৮৯২ এবং ২৫
খ. ইমাম খতিব তিবরিযি : মিশকাতুল মাসাবীহ্ শরীফ, ৪/৩৯৭ পৃ. হা/৫৯৩৬
গ. ইমাম আহমদ : আল মুসনাদ : ৫/৩৪১ পৃ.
তৃতীয় হাদিস
❏ মিশকাত শরীফের الفتن অধ্যায়ে হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হয়েছে-
مَا تَرَكَ شَيْئًا يَكُونُ فِي مقَامه إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ إِلَّا حَدَّثَ بِهِ حَفِظَهُ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ ـ
-‘‘রাসূল (ﷺ) সে স্থানে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সব কিছুর খবর দিয়েছেন। কোন কিছুই বাদ দেননি। যারা মনে রাখার তারা মনে রেখেছেন, যারা ভুলে যাওয়ার ভুলে গেছেন।’’ ২৩৩
২৩৩.
ক. ইমাম মুসলিম : আস্ সহীহ্ : ২/৩৯০ পৃ. হাদিস নং : ২৮৯২ এবং ২৩
খ. খতিব তিবরিযি : মিশকাত শরীফ, পৃ-৪৬১, হাদিস নং : ৫৩৭৯
গ. বুখারী : আস সহীহ : ১১/৪৯৪ পৃ. হা/৬৬০৪
চতুর্থ হাদিস
❏ হযরত আবু যার গিফারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّؓ قَالَ: لَقَدْ تَرَكْنَا رَسُولَ اللَّهِ - ﷺ - وَمَا يُحَرِّكُ طَائِرٌ جَنَاحَيْهِ فِي السَّمَاءِ إِلَّا ذَكَّرَنَا مِنْهُ عِلْمًا، رَوَاهُ أَحْمَدُ، ـ
-‘‘হুযূর (ﷺ) আমাদের নিকট থেকে এ অবস্থায় বিদায় নিয়েছেন যে, কোন পাখি তার ডানা হেলানোর যার বর্ণনাও তিনি আমাদের কাছে বাদ দেননি।’’ ২৩৪
২৩৪.
ক. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ : ৫/১৫৩ পৃ. হা/২১৩৯৯
খ. ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল কাবীর : ২/১৫৩ পৃ. হা/১৬৪৭
গ. ইমাম হাজার হায়সামী: মাজমাউয যাওয়াইদ: ৮/২৬৩ পৃ. হা/১৩৯৭১
ঘ. আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন : ৩৩৬ পৃ.
ঙ.কাজী আযাজ, শিফা শরীফ, ১/২০৭ পৃ.
চ.জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব, ৭/২০৬ পৃ.
ছ.আহমদ, আল-মুসনাদ, ৫/৩৮৫ পৃ.
ঝ.আবূ ই‘য়ালা, আল-মুসনাদ, ৯/৪৬ পৃ. হাদিস, ৫১০৯
ঞ.বায্যার, আল-মুসনাদ, ৯/৩৪১ পৃ. হাদিস, ৩৮৯
ট.ইবনুল বার, আল-ইস্তিআ‘ব, ৪/১৬৫৫ পৃ.
ঠ.সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ২/১৮৪ পৃ.
ড.ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ৩/৯৫ পৃ.
৫ম হাদিস:
❏ এ বিষয়ে আরেকটি বর্ণনার হাদিস রয়েছে- হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ؓ قَالَ: قَامَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ خَطِيبًا بَعْدَ الْعَصْرِ فَلَمْ يَدَعْ شَيْئًا يَكُونُ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ إِلَّا ذَكَرَهُ حَفِظَهُ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ
-‘‘রাসূল আসরের নামাযের পর দাঁড়ালেন আর খুতবা দিতে গিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে তা তিনি বর্ণনা করেছেন যিনি এসব বিষয় স্মরণ রাখতে পেরেছেন তিনি তা স্মরণ রেখেছেন, আর যিনি স্মরণ রাখতে পারেননি তিনি ভুলে গেছেন।’’ ২৩৫
২৩৫.
(ক) তিরমিযী, আস্-সুনান, ৪/৫৩ পৃ. হা/২১৯১, তিরমিযী বলেন, সনদটি ‘হাসান’।
(খ). খতিব তিবরীযি, মিশকাতুল মাসাবিহ্ : ৩/১৪২৩ পৃ. হা/৫১৪৫
এ বিষয়ে আরও অনেক সাহাবীর হাদিস রয়েছে, যার দ্বারা হাদিসটি মুতাওয়াতিরের নিকটবর্তী বলে বুঝা যায়।