হযরত ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস (رضي الله عنه) এর আক্বীদা
দান ও বদান্যতা-
হযরত ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- হুযূর আঁক্বা (ﷺ) কল্যাণের পথে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। তাঁর দানশীলতার দিকটি সর্বাধিক প্রকাশিত হতো রমযান মাসে। হযরত জিবরা‘ঈল (عليه السلام) প্রতি বছর মাহে রমযানের শেষ অবধি তাঁর সাথে সাক্ষাতে আসতেন। রাসূলে কারীম (ﷺ) তাঁকে [হযরত জিবরা‘ঈল আ. কে] পবিত্র কুরআন পাঠ করে শুনাতেন।
فَإِذَا لَقِيَهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، كَانَ أَجْوَدَ بِالخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ المُرْسَلَةِ
-“হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) যখন নবীজি (ﷺ) এর সাথে সাক্ষাতে মিলিত হতেন, তখন তিনি বৃষ্টি বর্ষণের ন্যায় কল্যাণমুখী বড় দানবীর হিসেবে থাকেন।” ৬২
{৬২. ইমাম মুসলিম, আস-সাহীহ, ৪/১৯৯৫ পৃ. হা/২৫০১, পরিচ্ছেদ: بَابُ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ الْمُرْسَلَةِ , ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, হা/১৯০২, সহীহ ইবনে খুজায়মা, হা/১৮৮৯, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ২/৬৭০ পৃ. হা/৪২২৩, মুসনাদে আহমদ, হা/২০৪২, ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৪/৫০৩ পৃ. হা/৮৫১৫, সুনানে নাসাঈ, ৪/১২৫ পৃ. হা/২০৯৫ এবং আস-সুনানুল কোবরা, হা/২৪১৬, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, হা/২৫৫২, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৫/৩৬২ পৃ. , ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, হা/২৯২}
‘আক্বীদা:
বাতাসের অবস্থান সমগ্র জায়গাজুড়ে। আর নবীয়ে কায়েনাতের (ﷺ) দানশীলতা বাতাস অপেক্ষা ঢের বেশিই তেজোদ্দীপ্ত। তাই তাঁর অনুদান-অনুগ্রহ সমগ্র সৃষ্টির প্রান্তে প্রান্তে বিদ্যমান। দানশীলতা একটি গুণ। যে স্বত্ত¡াধিকারির জন্য এটি একটি গুণের স্তর। আর যাঁর গুণের এই মর্যাদা তাহলে ঐ গুণসমৃদ্ধ সত্ত্বার প্রাচুর্যতার মর্যাদা কী পাবে!
جس طرف اٹہ گئ دم مي دم آگيا
اس نگاه عنايت پہ لاكهوں سلام
هاتہ جس سمت اٹها تو غنى كر ديا
موج بحر سماحت پہ لاكهوں سلام
উঠে যার তবে দয়া, হয় মুহুর্তে আগাম
আনুকূল্য চাহনীর ধারে ঐ, লাখো সালাম।
যেদিকে উঠে হাত করে ধনবান
সে সায়র ঢেউয়ে ঢেউয়ে লাখো সালাম।
দানশীলতা ও অনুদান-
❏ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবীজি (ﷺ) এর অতুলনীয় অভ্যাস ছিল-
لِأَنَّهُ لَمْ يَكُنْ يُسْأَلُ شَيْئًا إِلَّا قَالَ: نَعَمْ
-‘‘তিনি কোনো প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা (কিছু তালাশ) কে ফেরত দিতেন না।’’ ৬৩
{৬৩.ইমাম বুখারী, আস-সাহীহ, ৩/২৬ পৃ. হা/১৯০২, ইমাম মুসলিম, আস-সাহীহ, ৪/১৮০৩ পৃ. হা/২৩০৮, ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৭/২২৬ পৃ. হা/১৩৮০০, ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৯/১০৬ পৃ. হা/৬৬৫৫}
‘আক্বিদা
নবীয়েপাক সাহেবে লাওলা-ক (ﷺ) এর রাজ দরবার থেকে কেউ রিক্তহস্তে বিমুখ হয়নি। তাঁর বাদশাহী দ্বার সমগ্র বছরজুড়ে সবার জন্য উন্মুক্ত। বাস্তবিকপক্ষে তাঁর নিকট কোনো কিছুরই স্বল্পতা নেই।
زمانہ نے زمانہ ميں سخى ايسا كهيں ديكها
زباں جس كے سائل نےنهيں آ تے نهيں ديكها
কাল তার মহাকালে দেখেছে বদান্য এমনি কোথা
দেখেনি দানপ্রার্থী মুখবলিতে তাঁর ‘না’ যথার্থতা।
বিকৃত মস্তিস্ক শিশু-
হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক মহিলা তার এক বিকৃত মস্তিসস্ক শিশু সন্তানকে নিয়ে বারেগাহে রিসালাত-এ উপস্থিত হয়ে নিবেদন করল- হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ), আমার এই সন্তান জ্ঞানহারা। সকাল-গৌধুলি সে জ্ঞানলুপ্ত হয়ে পড়ে, অতিশয় উন্মাদনা করে।
فَمَسَحَ رَسُولُ اللَّهِ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَدْرَهُ وَدَعَا
-‘‘তখন নবীজি (ﷺ) ঐ সন্তানের বক্ষ মর্দন করলেন এবং তার জন্য দু‘আ করলেন।’’ এমন মুহুর্তে ঐ ছেলেটি বমি করে দিল এবং তার পিট থেকে কুকুর ছানা জাতীয় কিছু পেছনের দিকে বের হয়ে পালিয়ে গেল। সাথে সাথে সে সুস্থতা বোধ করল। ৬৪
{৬৪.খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ৩/১৬৬৫ পৃ. হা/৫৯২৩, ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ, ৪/৩৭ পৃ. হা/২১৩৩, ইমাম দারেমী, আস-সুনান, ১/১৭০ পৃ. হা/১৯, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১২/৫৭ পৃ. হা/১২৪৬০, ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৫/৪৭ পৃ. হা/২৩৫৮০}
আক্বিদা
সাহাবায়ে কিরাম আলাইহিমুর রিদ্বওয়ান দুঃখ ও হতাশার নিরসনে রাসূলে খোদা (ﷺ) এর দরবারে উপস্থিতি দিতেন। তিনি (ﷺ) তাদের পক্ষে দু‘আ করতেন। সমস্যা বিদূরিত হয়ে যেত। নবীজি (ﷺ) এর হাত মুবারক-এ আরোগ্যদান নিহিত। তাঁর দোয়ার বদৌলতেই সমূহ বালা মুসিবত দূরীভূত হয়।
বৃক্ষগুচ্ছ কর্তৃক নবীজির হুকুম মান্য করণ-
সাহাবিয়ে রাসূল (ﷺ) হযরত ইবনু ‘আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসূলে খোদা (ﷺ) এর রাজদরবারে এক গেঁয়োলোক এসে জিজ্ঞেস করল-
بِمَ أَعْرِفُ أَنَّكَ نَبِيٌّ؟
-‘‘আপনি যে আল্লাহর নাবী, তা তা আমি কীভাবে সত্যায়িত হব?’’ তদুত্তরে নবীজি (ﷺ) ইরশাদ করলেন- এই খেজুর বৃক্ষগুচ্ছকে আহ্বান কর, সেই সাক্ষ্য দেবে যে, আমি আল্লাহর প্রেরিত নাবী কিনা।
فَدَعَاهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَجَعَلَ يَنْزِلُ مِنَ النَّخْلَةِ حَتَّى سَقَطَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
-আল্লাহর প্রিয়নবী (ﷺ) পার্শ্বে থাকা খেজুর বৃক্ষগুচ্ছকে আহ্বান করলে ঐবৃক্ষ সমূলে দরবারে মোস্তফায় (ﷺ) হাজিরা দিতে সমূহ প্রস্তুতি গ্রহণ করল। নবীজি (ﷺ) বললেন-
قَالَ: ارْجِعْ فَعَادَ، فَأَسْلَمَ الأَعْرَابِيُّ
-“হে বৃক্ষগুচ্ছ, তুমি ফিরে যাও। তখন খেজুরের ঐ বৃক্ষগুচ্ছ আপন অবস্থায় ফিরে এল আর ঐ বেদুইন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ফেললেন।’’ ৬৫
{৬৫. ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৫৯৪ পৃ. হা/৩৬২৮, ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) এটিকে সংকলন করে বলেন- هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ صَحِيحٌ -‘‘এই হাদিসটি হাসান, গরীব, সহীহ।’’ ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৬৬৬ পৃ. হা/৫৯২৬}
‘আক্বিদা
রাসূলে আকরাম (ﷺ) সমগ্র জাহানের নবী। আর তাঁরই হুকুম সমগ্র পৃথিবীব্যাপী। গাছপালা এবং পাথরাদি তাঁকে চিনেন, জানেন এবং তাঁর নির্দেশনা মান্য করেন। আর যে হতভাগা নিজেকে মুসলিম দাবি করে সরওয়ারে কায়েনাত (ﷺ) কে আদেশ ও নির্দেশদাতা (حَاكِمْ) হিসেবে অমান্য করে তারা হলো বড়ই দুর্ভাগা।
❏ আ‘লা হযরত আযীমুল বরকাত শাহ ইমাম আহমাদ রেযা খাঁন ফাযেলে বেরলভী (رحمة الله) বলেন-
وصلى الله على نور كزوشد نور ہا پيدا
زمين از حب او ساكن فلك در عشق اوشيدا
তিনিই খোদার জ্যোতি, ছায়া কুদরতি
সে তো সবার তরে, তারই তো সবি।
তিনি অতুল অতি, নয় মত তার সৃজনরাজি
না আকাশ না ভুবনরাজি, না তো সময়াদি। ৬৬
{৬৬. হাদাইক্বে বখশিশ।}
দন্ত মোবারকে দীপ্তের হাতছানি-
❏ হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
إِذَا تَكَلَّمَ رُئِيَ كَالنُّورِ يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ ثَنَايَاهُ
-‘‘হুযুর আক্বা ‘আলাইহিমুস সালাম যখনই কথা বলতেন, তাঁর দাঁত মোবারাক হতে আলোকরশ্মি প্রকাশ পেত।’’ ৬৭
{ ৬৭. ইমাম দারিমী, আস-সুনান, ১/২০৩ পৃ. হা/৫৯, ইমাম তিরমিযি, শামায়েলে তিরমিযি, হা/১৪, খাতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবীহ্, ৩/১৬১৪ পৃ. হা/৫৭৯৭}
‘আক্বীদা
রাসূলে খোদা (ﷺ) এর আপাদমস্তক মুবারাক এমন মু‘জিযাসমৃদ্ধ ছিল যে, কথা বলার সময় তার দাঁত মোবারক হতে নুরের ঝলক দীপ্ত হত। অপরাপর বর্ণনামতে- হুযুর (ﷺ) এর মুচকি হাসিতে প্রাচীর বেষ্ঠিত বদ্ধ এলাকাও আলোকিত হয়ে উঠত। ৬৮
{৬৮. ইমাম কাযি আয়াজ, শিফা শরীফ, ১/৩৯ পৃ.}
আল্লামা আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) বলেন-
وصلى الله على نور كزوشد نور ہا پيدا
زمين از حب او ساكن فلك در عشق او شيدا
প্রীতি তাঁর নির্ঝর আলো উদগিরণ
ধরণি প্রেমাকুল আকাশ প্রবণ।
নামাযান্তে উঁচুস্বরে যিকির-
❏ হযরত ইবনু ‘আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন-
أَنَّ رَفْعَ الصَّوْتِ، بِالذِّكْرِ حِينَ يَنْصَرِفُ النَّاسُ مِنَ المَكْتُوبَةِ كَانَ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
-‘‘নবীযুগে ফরয নামাযান্তে উঁচু আওয়াজে যিকিরের প্রচলন ছিল।’’ ৬৯
{৬৯. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/১৬৮ পৃ. হা/৮৪১, পরিচ্ছেদ: بَابُ الذِّكْرِ بَعْدَ الصَّلاَةِ , ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/৪১০ পৃ. হা/৫৮৩, মুসনাদে আহমদ, ৫/৪৩৩ পৃ. হা/৩৪৭৮, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ১/২৬৩ পৃ. হা/১০০৩, ইবনে আছির, জামেউল উসূল, হা/৪৩৬৭, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৮/২২৮ পৃ. হা/২২৬৭৮}
আক্বিদা
ফরয নামাযের পর আওয়াজের উচ্চতায় যিকির করা বৈধ। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবন হাজার আসকালানি (رحمة الله) বলেন-
وَفِيهِ دَلِيلٌ عَلَى جَوَازِ الْجَهْرِ بِالذِّكْرِ عَقِبَ الصَّلَاةِ
-‘‘এ হাদিসে নামায শেষে যিকির করার বৈধতার বিষয়টি সমুজ্জল।’’ ৭০
{৭০. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, ফাতহুল বারী ফী শারহিল বুখারী, ২/৩২৫ পৃ.}
বেহেশতি রমণী-
হযরত ‘আত্বা ইবন আবু রিবাহ (রাদ্বি.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদা হযরত ইবনু ‘আব্বাস (رضي الله عنه) আমাকে প্রশ্ন করে বসলেন-
أَلَا أُرِيكَ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ؟
‘আমি কি তোমায় কোন এক জান্নাতি রমণীর দেখিয়ে দেব?’ আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন- ঐ কালো বর্ণের মহিলা সাহাবি, যিনি দরবারে মুস্তফায় এসে প্রার্থনা করেছেন-‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ), আমার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে আর আমার অন্তরাত্মা বিষাদগ্রস্থ।’
فَادْعُ اللهَ لِي
-‘আপনি বারেগাহে ইলাহিতে আমার পক্ষে দু‘আ করুন।’
প্রত্তুত্তরে নবীজি (ﷺ) ইরশাদ করলেন-
إِنْ شِئْتِ صَبَرْتِ وَلَكِ الْجَنَّةُ، وَإِنْ شِئْتِ دَعَوْتُ اللهَ أَنْ يُعَافِيَكِ
-‘যদি তুমি চাও ধৈর্য্যধারণ করে জান্নাতে গমন করতে পার নতুবা তোমার পক্ষে আল্লাহর দরবারে দু‘আ করছি, তোমাকে আরোগ্য দান করবেন।’ মহিলা সাহাবি বললেন- আমি ধৈর্য্যধারণ করব তবে আমার অন্তরাত্মা বিষাদগ্রস্থ। এতটুকু দু‘আ করুণ যেন বিষাদগ্রস্থ না হয়। রাসূলে মাকবুল (ﷺ) তার অন্তরাত্মার জন্য দু‘আ করলেন। ৭১
{৭১ .ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৪/১৯৯৪ পৃ. হা/২৫৭৬, ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৭/১১৬ পৃ. হা/৫৬৫২, খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবীহ, ১/৪৯৬ পৃ. হা/১৫৭৭}
‘আক্বিদা
সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) কে যখন কোনো দুঃখ-দুর্দশা পেয়ে বসত, তখন তাঁরা দরবার মুস্তফায় (ﷺ) এসে উত্তরণের জন্য প্রার্থনা করতেন। আর হুযুর (ﷺ) তাঁদের পক্ষে দু‘আ করলে তাঁদের সমূহ দুঃখ-দুর্দশা দূরীভূত হয়ে যেত। যেহেতু মহান আল্লাহ তাঁকে মুখ্তারে কুল (সমগ্র জাহানের অধিকারপ্রাপ্ত) হিসেবে নির্বাচন করেছেন। ফলে কখনো তিনি জান্নাতও দান করতেন।
كس چيز كى كمى ہے آقا تيرى گلى ميں
دنيا تيرى گلى ميں عقبى تيرى گلى ميں
কী আশীষ কমতি তব গলি ঘিরে
ইই-পর সবটুকু গলি ঘুরে ফিরে।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত এক মাত্র নাজাত প্রাপ্ত দল-
❏ আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কোরআনের সূরা আলে-ইমরানের ১০৬ নং আয়াতে বলেছেন-
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ
-‘‘সেদিন (কিয়ামতের দিন) কোন কোন মুখ উজ্জ্বল হবে, আর কোন কোন মুখ হবে কালো।’’
❏ সকল দেওবন্দী ও আহলে হাদিসদের মান্যবড় আল্লামা ইবনে কাসির (رحمة الله) পবিত্র কোরআনের এ আয়াতের ব্যাখ্যায় সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)‘র উক্তি বর্ণনা করেন-
وَتَبْيَضُّ وُجُوهُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ
-‘‘কিয়ামতের দিন যাদের মুখ উজ্জল হবে তারা হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারী।’’ ৭২
{ ৭২. ইবনে কাসির, তাফসীরে ইবনে কাসীর, ২/৭৯পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪১৯হি.}
❏ এছাড়া ইমাম ইবনে আবি হাতেম (رحمة الله) (ওফাত.৩২৭হি.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় সনদ সহ উল্লেখ করেন এভাবে-
عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ فِي قَوْلِهِ: يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ قَالَ: تَبْيَضُّ وُجُوهُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ.
-‘‘হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন...কিয়ামতের দিন যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে তারাই হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত।’’ ৭৩
{ ৭৩. ইমাম আবি হাতেম, আত্-তাফসীর, ৩/৭২৯পৃ. হাদিস, ৩৯৫০, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী, তাফসীরে আদ্-দুররুল মানসূর, ২/২৯১পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}
❏ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেযুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (ওফাত.৯১১হি.) বলেন-
وَأخرج ابْن أبي حَاتِم وَأَبُو نصر فِي الْإِبَانَة وَالْخَطِيْب فِي تَارِيْخه وَالْلَالْكَائِي فِي السُّنَّة عَنْ اِبْنِ عَبَّاسْ فِي هَذِه الْآيَة قَالَ {تبيض وُجُوه وَتسود وُجُوه} قَالَ تَبْيَضُّ وُجُوْه أَهْلِ السُّنَّة وَالْجَمَاعَة وَتَسُوَدُّ وُجُوْهٌ أَهْلِ الْبِدْعِ وَالْضَلَالَةِ
-‘‘ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) তার তাফসীরে, আবু নছর (رحمة الله) তার ইবানাত গ্রন্থে, খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) তাঁর তারিখে বাগদাদে, ইমাম লালকায়ী (رحمة الله) তাঁর সুন্নাহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, কিয়ামতের দিন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মুখ উজ্জ্বল হবে এবং আহলে বিদআতি বা দ্বীন থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মুখ কালো হবে।’’ ৭৪
{৭৪.ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী, তাফসীরে আদ্-দুররুল মানসূর, ২/২৯১পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}
আক্বিদা
বুঝা গেল সাহাবিদের যুগ থেকেই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আলোচনা ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে এবং যে দলের সফলতার ইঙ্গিত বহন করে মহান আল্লাহর বাণী পবিত্র কোরআন। বুঝা গেল রঈসুল মুফাসসিরীন, মুজতাহিদ ফকিহ হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) সহ সাহাবায়ে কিরামদের আক্বিদা ছিল হাশরের ময়দানে খারিজী, আহলে হাদিসসহ, ৭২ দলের কোন দলের লোকেরই চেহাড়া উজ্জল হবে না, উজ্জল হবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারীদের। মাযহাবকে অস্বীকারকারীরা আহলে সুন্নাহ থেকে খারিজ।
❏ হাফেযুল হাদিস আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) বলেন-
هُوَ مَذْهَب الْأَئِمَّة الْأَرْبَعَة وَغَيرهم من أهل السّنة وَالْجَمَاعَة
-‘‘চার মাযহাবের মুজতাহিদ ইমামগণ এবং অন্য মুজতাহিদ ফকিহ ইমামগণের মাযহাব হলো আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত।’’ ৭৫
{৭৫ .আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ২/২৩৮পৃ.}
তাই যারা মাযহাব মানেন না তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত থেকে বহু দূরে। ৭৬
{৭৬ . সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}
রাসূল (ﷺ)‘র আগমনের দিনকে কেন্দ্র করে ঈদ উদযাপন-
মহান আল্লাহ তা‘আলা নিয়ামত প্রাপ্তির পর তার শোকরিয়া আদায়ের জন্য মহান রব কুরআনে বহুবার তাগিদ দিয়েছেন। আর আল্লাহর বড় অনুগ্রহ বা নিয়ামত হলো রাসূল (ﷺ)। মহান আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেন-
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ
-‘‘হে হাবিব! আপনি বলে দিন আল্লাহর অনুগ্রহ (ইলম) ও তার রহমত (রহমাতাল্লিল আলামিন) প্রাপ্তিতে তাদের মু‘মিনদের খুশি উদ্যাপন করা উচিত এবং তা তাদের জমাকৃত ধন সম্পদ অপেক্ষা শ্রেয়।’’ ৭৭
{৭৭ .সুরা ইউনূছ, আয়াত, ৫৮}
❏ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) বলেন-
وَأخرج أَبُو الشَّيْخ عَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا فِي الْآيَة قَالَ: فضل الله الْعلم وَرَحمته مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ الله تَعَالَى- وَمَا أَرْسَلْنَاك إِلَّا رَحْمَة للْعَالمين
-‘‘সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে আল্লাহর (ফদ্বল) বা অনুগ্রহ দ্বারা ইলম তথা জ্ঞানকে এবং (রহমত) দ্বারা নাবি কারিম (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘হে হাবিব আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ব-জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া, ১০৭)।’’ ৭৮
{৭৮. সুয়ূতী, তাফসীরে দুররুল মানসূর, ৪/৩৬৭পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}
আক্বিদা
বুঝা গেল মুজতাহিদ ফকিহ সাহাবীদের আক্বিদা ছিল আল্লাহর নবীকে রহমত স্বরূপ পেয়ে আনন্দ উদ্যাপন করা মহান প্রতিপালকের আদেশ। নবীয়ে পাকের হাদিস মুতাবেক সাহাবীদের বিরোদ্ধে অবস্থানকারী ৭২ জাহান্নামী দলের নিশানা। ৭৯
{৭৯ . সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}
লক্ষণীয় একটি বিষয়
সাহাবীদের কুরআনের তাফসীর মারফূ হাদিসের ন্যায়। কেননা তারা নিজ থেকে কোরআনের কোন ব্যাখ্যা দেননা, তাদের কোরআনের সকল ব্যাখ্যাই রাসূল (ﷺ) থেকে শিখা।
❏ ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) (ওফাত. ৪০৫হি.) বলেন-
وَتَفْسِيرُ الصَّحَابِيِّ عِنْدَهُمَا مُسْنَدٌ
-‘‘ইমাম বুখারী মুসলিমের নিকট সাহাবীদের তাফসীর মারফূ হাদিসের ন্যায়।’’ ৮০
{৮০ . ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক : ১/২১১পৃ. কিতাবুল ইলম, হাদিস/৪২২, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ. ১৪১১হি.}
❏ ইমাম নববী আশ্-শাফেয়ী (رحمة الله) (ওফাত. ৬৭৬হি.) বলেন-
وَأَمَّا قَوْلُ مَنْ قَالَ: تَفْسِيرُ الصَّحَابِيِّ مَرْفُوعٌ
-‘‘সাহাবীদের কোরআনের কোন ব্যাখ্যা মারফূ হাদিসের ন্যায়।’’ ৮১
{৮১ .ইমাম নববী : আল-তাক্বরীব ওয়াল তাইসীর : ৩৪পৃ. দারুল কিতাব আরাবী, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ. ১৪০৫হি.}
কোরআন সুন্নাহের বাহিরেও মুজতাহিদদের মানা-
❏ ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) তার মুস্তাদরাকে ও ইমাম তবারী (رحمة الله) তার তাফসীরে সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় রঈসুল মুফাস্সির হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে একটি ব্যাখ্যা সংকলন করেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، فِي قَوْلِهِ تَعَالَى: {أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ} [النساء: ৫৯] يَعْنِي: أَهْلَ الْفِقْهِ وَالدَّيْنِ
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, (وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ) এ আয়াতের আদেশ দাতা হল দ্বীনের মুজতাহিদ ফকীহগণ।’’ ৮২
{৮২. ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ১/২১১ পৃ. হাদীসঃ ৪২৩, প্রাগুক্ত. ইমাম জারীর তবারী : তাফসীরে তবারী : ৪/১৫১পৃ., আল্ল¬ামা ইবনে কাসীর : তাফসীরে কুরআনুল আজীম : ২/২৪৫ পৃ. ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী : তাফসীরে কাবীর : ৪/১১৩ পৃ. শাওকানী : ফতহুল কাদীর : ১/৩৮০পৃ. }
❏ ইমাম বাগভী (رحمة الله) তার তাফসিরে লিখেন-
قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ وَجَابِرٌ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ: هُمُ الْفُقَهَاءُ وَالْعُلَمَاءُ الَّذِينَ يُعَلِّمُونَ النَّاسَ مَعَالِمَ دِينِهِمْ
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ও হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন, উক্ত আয়াতের (وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ) দ্বারা দ্বীনের ফকিহ এবং উলামাদের কথা বুঝিয়েছেন যারা মানুষকে দ্বীন শিক্ষা দিবেন।’’
(ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১/৬৫০ পৃ.)
আক্বিদা
উপরের আয়াত এবং সাহাবায়ে কেরামদের তাফসির দ্বারা প্রমাণিত হয়ে গেল যে কোরআন ও সুন্নাহের পড়েও দ্বীনের মুজতাহিদ ফকিহদেরকে অনুসরণ করতে হবে, এটাই মহান রব তা‘য়ালার নির্দেশ। ৮৩
{৮৩ . সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}
আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দা ওলীরা তাদের স্বীয় মাজারে জীবিত-
❏ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) সংকলন করেন-
عَنْ عِكْرِمَة قَالَ قَالَ إِبْنِ عَبَّاس الْمُؤْمِن يَعْطِى مُصحفًا فِي قَبْرِه يَقْرَأ فِيهِ
-‘‘বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত ইকরামা (رحمة الله) তিনি মুজতাহিদ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মু‘মিনকে (ওলীদেরকে) তাঁর কবরে কুরআন শরীফ দেয়া হয়। তথায় সে পাঠ করে।’’ ৮৪
{৮৪. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতিঃ শরহুস সুদুরঃ ২৪০পৃ, তিনি ইমাম খাল্লালের “কিতাবুস সুন্নাহ” এর সূত্রে বর্ণনা করেন। এ বিষয়ে তিনি আরও অনেক হাদিস এনেছেন।}
তাই বলতে চাই, একজন মু‘মিনের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে ওলীদের অবস্থা কিরূপ হবে?
❏ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) সংকলন করেন-
وَأخرج التِّرْمِذِيّ وَحسنه وَالْحَاكِم وَالْبَيْهَقِيّ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: ضَرَبَ بَعْضُ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خِبَاءَهُ عَلَى قَبْرٍ وَهُوَ لاَ يَحْسِبُ أَنَّهُ قَبْرٌ، فَإِذَا فِيهِ إِنْسَانٌ يَقْرَأُ سُورَةَ تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ حَتَّى خَتَمَهَا، فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّي ضَرَبْتُ خِبَائِي عَلَى قَبْرٍ وَأَنَا لاَ أَحْسِبُ أَنَّهُ قَبْرٌ، فَإِذَا فِيهِ إِنْسَانٌ يَقْرَأُ سُورَةَ تَبَارَكَ الْمُلْكِ حَتَّى خَتَمَهَا. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هِيَ الْمَانِعَةُ، هِيَ الْمُنْجِيَةُ، تُنْجِيهِ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ
-‘‘ইমাম তিরিমিযি (رحمة الله) ‘হাসান’ সনদে, ইমাম হাকেম (رحمة الله), ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) সংকলন করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, জনৈক সাহাবী এক কবরের উপর তাবু স্থাপন করেন। তিনি জানতেন না এখানে কবর রয়েছে। তিনি শুনতে পেলেন কবর থেকে কোন মানুষ সূরা মুলক তিলাওয়াত করছেন এবং তিনি পরিপূর্ণ সূরাই তিলাওয়াত করলেন। সাহাবী হুযুর (ﷺ) কে এ ঘটনা অবগত করলে তিনি ইরশাদ করেন, এ সূরাটি আযাব প্রতিরোধক ও মুক্তিদাতা।’’ ৮৫
{ ৮৫. ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ফাযায়েলে তিলাওয়াতে কুরআন, ৫/১৪পৃ, হা/২৮৯০, তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান, গরীব। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর সূত্রে হাদিস বর্ণিত হয়েছে (২). ইমাম হাকিম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ২/৪৯৮পৃ, (৩) ইমাম বায়হাকীঃ শুয়াবুল ঈমানঃ ৪/১২৫পৃ.হাদিস : ২২৮০, ইমাম সুয়ূতিঃ আল-খাসায়েসুল কোবরাঃ ১/৩৮৯ পৃ, হা/১২১৯, সুয়ূতি বলেন, ইমাম হাকেম সহীহ সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন (৫) ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতীঃ শরহে সুদুরঃ ২৩৯পৃঃ (৬) আলবানীঃ সিলসিলাতুল..সহীহাহঃ হা/১১৪০, তিনি বলেন, হাদিসটি সহীহ, ইমাম হায়সামীঃ মাযমাউয যাওয়াইদঃ ৩/৮৫পৃ. হা/৬৭৫৬, ইমাম বায়হাকী : এছবাতে আযাবিল কুবুর : ১/৯৯পৃ. হাদিস/১৫০, খতিব তিবরিযী : মিশকাত, ১/৬৬৩পৃ. হাদিস :২১৫৪}
আক্বিদা
হযরত ইবনে আব্বাস (ﷺ)‘র উপরের দুটি হাদিস থেকে প্রমাণিত যে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে এটি সুপ্রসিদ্ধ ছিল একমাত্র নবীরাই নয় বরং আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দারাও তাদের মাজারে জীবিত এবং সেখানে তারা ইবাদতে রত থাকেন, আর এটি তাঁরা রাসূল (ﷺ) থেকেই সত্যায়ন করলেন। ৮৬
{৮৬ . সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}
মি‘রাজে আল্লাহর দিদার-
❏ ইমাম আহমদ (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: رَأَيْتُ رَبِّي تَبَارَكَ وَتَعَالَى
-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমি আমার রব তা‘আলাকে (চর্ম চোখে) দেখেছি।’’ ৮৭
{৮৭ . ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৪/৩৫১ পৃ. হা/২৫৮০, ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর, হা/৫৭৭৯, তিনি বলেন, সনদটি সহীহ। মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১৪/৪৪৮ পৃ. হা/৩৯২০৯, আল্লামা মানাভী (رحمة الله) বলেন- بِإِسْنَاد صَحِيح -‘‘এ সনদটি ‘হাসান’ পর্যায়ের।’’ (মানাভী, তাইসির, ২/২৫ পৃ.) ইমাম হাইসামী (رحمة الله) বলেন- رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ. -‘‘এ হাদিসটির সনদের সমস্ত রাবী সহীহ বুখারীর ন্যায়।’’ (হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১/৭৮ পৃ. হা/২৪৭) ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) লিখেন-
وَأخرج احْمَد بِسَنَد صَحِيح عَن ابْن عَبَّاس
-‘‘ইমাম আহমদ (رحمة الله) এটি সহীহ সনদে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন।’’ (সুয়ূতি, আল-খাসায়েসুল কোবরা, ১/২৬৭ পৃ.)}
আক্বিদা
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বিদা হল যে রাসূল (ﷺ) মি‘রাজে চর্ম চোখ দ্বারা মহান প্রতিপালককে দেখেছেন। ৮৮
{ ৮৮. তবে এ বিষয়ে আরেকটি বর্ণনা রয়েছে যা ইমাম তাবরানী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেছেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ: إِنَّ مُحَمَّدًا - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - رَأَى رَبَّهُ مَرَّتَيْنِ: مَرَّةً بِبَصَرِهِ، وَمَرَّةً بِفُؤَادِهِ
-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) তাঁর রব তা‘আলাকে দুই বার দেখেছেন। একবার চর্ম চোখে, আরেকবার হৃদয় দ্বারা দেখেছেন।’’ (ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, হা/, হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১/৭৯ পৃ. হা/২৪৯) ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন-
وَأخرج الطَّبَرَانِيّ فِي الاوسط بِسَنَد صَحِيح
-‘‘ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তার মু‘জামুল আওসাত গ্রন্থে এটি সহীহ সনদে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন।’’ (ইমাম সুয়ূতি, আল-খাসায়েসুল কোবরা, ১/২৬৭ পৃ.) ইমাম হাইসামী (رحمة الله) বলেন-
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ، خَلَا جَهْوَرِ بْنِ مَنْصُورٍ الْكُوفِيِّ، وَجَهْوَرُ بْنُ مَنْصُورٍ ذَكَرَهُ ابْنُ حِبَّانَ فِي الثِّقَاتِ.
-‘‘ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তাঁর মু‘জামুল আওসাত গ্রন্থে এটি সংকলন করেছেন। এ হাদিসের সমস্ত রাবী সহীহ বুখারীর শুধু ‘জাহওয়ার ইবনে মানছুর’ ব্যতিত; তবে ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ (হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১/৭৯ পৃ. হা/২৪৯, ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস সিকাত, ৮/১৬৭ পৃ. ক্রমিক.১২৭৮৩) ইমাম হাইসামী (رحمة الله) আরেক স্থানে এ রাবী সম্পর্কে লিখেন-
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ، غَيْرَ جَهْوَرِ بْنِ مَنْصُورٍ وَهُوَ ثِقَةٌ.
-‘‘তাবরানী হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, এ হাদিসের সমস্ত রাবী সহীহ বুখারীর শুধু ‘জাহওয়ার ইবনে মানছুর’ ব্যতিত; তবে তিনিও সিকাহ।’’ (হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৮/৫ পৃ. হা/১২৫৬৭)}
❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) লিখেন-
وَقَالَ أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ إِسْمَاعِيل الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللَّه عَنْهُ وَجَمَاعَةٌ مِنْ أَصْحَابِهِ أنَّهُ رَأَى اللَّه تعالى ببصره وعيسى رَأسِهِ وَقَالَ كُلّ آيةٍ أُوتِيهَا نَبِيّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ فَقَدْ أُوتِي مِثْلَهَا نَبِيُّنا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخُصَّ مِنْ بَيْنِهِمْ بِتَفْضِيلِ الرُّؤْيَةِ-
-“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকায়েদের ইমাম আবুল হাসান আলী আশ‘আরী (رحمة الله) ও তাঁর এক জামাত সঙ্গী-সাথী বলেন হুযুর (ﷺ) আল্লাহ তা‘য়ালাকে কপালের চোখ দ্বারা অবলোকন করেছেন। তাঁরা আরও বলেন, অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামকে যত মু‘যিজা দেওয়া হয়েছে অনুরূপ মু‘যিজা হুযুর (ﷺ) কে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হুযুর (ﷺ) কে অগ্রবর্তী করে দিদারে এলাহী মু‘যিজা দেওয়া হয়েছে।’’ ৮৯
{ ৮৯ .কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৮ পৃ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৯ পৃ.}
বুঝা গেল, কেউ যদি রাসূল (ﷺ)‘র মি‘রাজে আল্লাহ দেখার বিষয়টি অস্বীকার করে তাহলে সে নিঃসন্দেহে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বহির্ভূত এবং পথভ্রষ্ট বাতিল ফিরকা হিসেবে গণ্য। এ বিষয়ে সমাধান তুলে ধরেন ইমাম নববী (رحمة الله) এভাবে-
فَالْحَاصِلُ أَنَّ الرَّاجِحَ عِنْدَ أَكْثَرِ الْعُلَمَاءِ إن رسول الله صلى الله عليه وسلم رَأَى رَبَّهُ بِعَيْنَيْ رَأْسِهِ لَيْلَةَ الْإِسْرَاءِ لِحَدِيثِ بن عَبَّاسٍ وَغَيْرِهِ مِمَّا تَقَدَّمَ وَإِثْبَاتُ هَذَا لَا يَأْخُذُونَهُ إِلَّا بِالسَّمَاعِ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
-‘‘পরিশেষে বলা যায়, অধিকাংশ উলামার নিকট এই মতই প্রাধান্য পেয়েছে যে, নাবী কারীম (ﷺ) মি‘রাজের রজনীতে স্বীয় প্রতিপালককে তাঁর কপালের চক্ষু দ্বারা দেখছেন। যেমনটি ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। এই বিষয়ে যারা (সাহাবীরা) রাসূল (ﷺ) হতে মি‘রাজের সময় (মি‘রাজের ঘটনা) শ্রবণ করেছেন কেবল তাদের অভিমত ছাড়া বাকি অভিমত (যেমন মা আয়েশার অভিমত; কেননা তিনি তখন খুব ছোট ছিলেন) গ্রহণ করা হবে না।’’ ৯০
{ ৯০ . ইমাম নববী : শরহে মুসলিম : ৩/৫পৃ. দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহেব : ৬/১১৬পৃ, মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৫ পৃ., শায়খ ইউসুফ নাবহানী, যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩২২ পৃ.}
তাই বুঝা গেল বিশুদ্ধ মত এটাই যে রাসূল (ﷺ) মি‘রাজে মহান রবকে স্বচক্ষে দেখেছেন। ৯১
{ ৯১. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}
১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ)-এর শুভাগমন-
❏ পৃথিবী বিখ্যাত ইতিহাসবিদ, হাফেযুল হাদিস, আল্লামা ইবনে কাসির (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
وَقَالَ أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ حَدَّثَنَا عُثْمَانُ عَنْ سَعِيدِ بْنِ مِينَا عَنْ جَابِرٍ وَابْنِ عَبَّاسٍ. قَالَا: وُلِدَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ الثَّانِيَ عَشَرَ مِنْ رَبِيعٍ الْأَوَّلِ
-‘‘ইমাম আবু বকর ইবনে আবি শায়বাহ (رحمة الله) তিনি বলেন, আমাকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, উসমান (رحمة الله) তিনি সাঈদ ইবনে মীনা (رحمة الله) হতে তিনি হযরত জাবের (رضي الله عنه) এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তাঁরা উভয়েই বলেন, রাসূল (ﷺ) ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার জন্মগ্রহণ (শুভাগমন) করেন।’’
(আল্লামা ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩/১৩৫ পৃ. দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন)
আক্বিদা:
এ হাদিসে পাক থেকে জানতে পারলাম যে রাসূল (ﷺ)-এর শুভাগমন সম্পর্কে সাহাবীদের আক্বিদা ছিল যে তিনি ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবারে পৃথিবীতে এসেছিলেন। আর এটি সকল মুসলমানেরই জানা যে সাহাবায়ে কিরামগণই রাসূল (ﷺ) সম্পর্কে সবচেয়ে ভালভাবে অবগত। ৯২
{৯২ . সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}