দ্বিতীয় নজর



 

ওহাবীরা ঐ মুশরিক যারা পূর্বাপর সবকিছুর জ্ঞান আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য শিরক সাব্যস্ত করেঃ 



‘ইতােপূর্বেকার আলােচনার মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, পূর্ণ-পরিপূর্ণ ও চরমােকর্ষিত সকল সৃষ্টিজগতের জ্ঞানের সমষ্টিকে আমাদের সমগ্র জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জ্ঞানের সমান হওয়ার সন্দেহ করা এতটুকুর জন্যও উপযুক্ত নয় যে, মুসলমানদের হৃদয়ে এর সামান্যতম সন্দেহও থাকতে পারে। অন্ধরা কি এটাও বুঝে না যে, আল্লাহর জ্ঞান সত্ত্বাগত আর সৃষ্টির জ্ঞান প্রদত্ত? আল্লাহর জ্ঞান তাঁর পবিত্র সত্তার জন্য ওয়াজিব আর সৃষ্টির জ্ঞান তার জন্য মুমকিন (সম্ভবপর)। আল্লাহর জ্ঞান স্থায়ী, অনন্তকালীন, কদীম ও মৌলিক। আর সৃষ্টির জ্ঞান অস্থায়ী ও ধ্বংসশীল। কেননা, সকল সৃষ্টিই ধ্বংসশীল। আর সিফত (গুণ) তার মাউসুফ (গুনান্বিত) হতে অগ্রণী হতে পারে না। আর আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান-


.

মাখলুক (সৃষ্টি) নয়, সৃষ্টির জ্ঞানই ‘সৃষ্টি’। আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান কারাে শক্তিবলে নয়, মাখলুকের জ্ঞান তার শক্তিতেই এবং তাঁর কুদরতী হস্তেই। আল্লাহর জ্ঞান। স্থায়ী হওয়া ওয়াজিব আর মাখলুকের জ্ঞানের ধ্বংসশীলতাই স্বাভাবিক। আল্লাহর জ্ঞানের কোনরূপ পরিবর্তন হতে পারে না, সৃষ্টির জ্ঞানে পরিবর্তন হতে পারে। আর ঐ পার্থক্যসমূহ বুঝার পর, কেউ (আল্লাহ ও মাখলুকের জ্ঞান) সমান হবার। অনুমান করবে না কিন্তু যার উপর আল্লাহ তায়ালা লা'নত (অভিসম্পাত) করেছেন এবং তাদের বধির ও অন্ধ করে দিয়েছেন। সুতরাং যদি আমরা ধরে নিই যে, কোন ধারণাকারী নবীর জ্ঞানকে আল্লাহর সকল জ্ঞানকে পরিবেষ্টনকারী জ্ঞান করে, তবে তার এ ধারণা অবশ্যই ভ্রান্ত ও তার অনুমান ভুল। আল্লাহর জ্ঞানের সাথে কোন সমতার তুলনা কিন্তু এখনও হয়নি। ঐ কঠিন পার্থক্যসমূহের কারণ যা আমি উপরে বর্ণনা করেছি যে, সৃষ্টিকর্তার জ্ঞান থেকে সৃষ্টির . জ্ঞানসমূহের জন্য আইন, লাম, মীম (১) অর্থাৎ শুধুমাত্র শরীক ব্যতীত কিছু অবশিষ্ট নেই। 




গায়াতুল মামুনের কুটিলতাপূর্ণ বক্তব্যের খণ্ডনঃ




টিকাঃ (১) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলাে(নামগত সাদৃশ্য)। আর তা হচ্ছে মূল ও সত্তাগত ভিন্নতার ভিত্তিতে গুনগত পার্থক্যের ক্ষেত্রে অগ্রগণ্যতা। আর আমি তােমাদের প্রতারণকারীদের কঠোর দুর্ভাগ্যজনক লিখা সম্পর্কে অবগত করছি। আমি বলছি, এ হলাে আমাদের ঈমান আমাদের প্রতিপালকের উপর যে, তাঁর সত্তায় কোন অংশীদার নেই। জেনে রাখুন, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। না তিনি কাউকে জন্ম দিয়েছেন,। আর না কেউ তাঁকে জন্ম দিয়েছেন, আর না কেউ তাঁর সমকক্ষ হতে পারে তাঁর গুণাবলীসমূহে। তাঁরই জন্য সকল প্রশংসা। তাঁর ন্যায় কোন বস্তু নেই, না তাঁর নামসমূহে (কেউ তাঁর ন্যায় হতে পারে)। কেউ তাঁর সমকক্ষ হতে পারে না তাঁর রাজ্যে। আল্লাহরই জন্য, যা কিছু আসমান ও জমীনে রয়েছে। আল্লাহ ব্যতীত তােমরা যাদের আহবান করাে, তারা কোন নগণ্য বস্তুরও মালিক নয়, আর না তাদের কোন মালিকানা রয়েছে তাঁর কর্মসমূহে। আল্লাহ ব্যতীত কি অন্য কোন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে? যে একটি নাম তাঁর জন্য ব্যবহৃত হয়, তা কি অন্য কোন সৃষ্টির মধ্যে দেখা যায়? যেমন – (সর্বজ্ঞ) (প্রজ্ঞাময়), (অত্যন্ত ধৈর্যশীল), (দয়ালু),(সর্বশ্রোতা) (সর্বষ্টা), এমনি আরাে অনেক নাম রয়েছে। যাতে শুধুমাত্র শাব্দিক সাদৃশ রয়েছে, অর্থগতভাবে অংশীদার নয়। সুতরাং * ফতােয়ায়ে সিরাজিয়া, তাতারখানীয়া, মানহুল গাফফার, দুররােল মােখতার ইত্যাদিতে রয়েছে- এমন নাম রাখা যা কুরআনে কারীমে আল্লাহর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন আলী, কবীর, রশীদ ও বদী’ ইত্যাদি জায়েজ। কেননা, এ (একান্নভুক্ত নামসমূহ) গুলাে আল্লাহর জন্য যে অর্থে প্রযােজ্য, সে... অর্থে বান্দার জন্য প্রযােজ্য নয়। গোপন সংখ্যা। 


ইমাম আবু ইউসুফ (رحمة الله) বলেন, আফআলুন ও ফয়ীলুম পদদ্বয় আল্লাহর গুণাবলীতে একই অর্থবােধক। যেমন হেদায়া গ্রন্থে রয়েছে। ইনায়ায়’ উল্লেখ আছে-‘আল্লাহর গুণাবলীতে কোন অতিরিক্ততা স্বীকার করা উদ্দেশ্য নয়। কেননা, মৌলিক মর্যাদা ও মহত্বের মধ্যে কেউ তাঁর বরাবর নয়, যদিও অতিরিক্ততার জন্য হয়। যেমন বান্দার গুণাবলীর মধ্যে হয়। সুতরাং উভয় সমান। বরং ওলামায়ে কিরাম অনেক স্থানে বলেছেন। যে, ২১ দ্বারা মূল ক্রিয়া শরীকবিহীন উদ্দেশ্য হয়, যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-“আজ জান্নাতবাসীরা উত্তম বাসস্থান এবং উত্তম দ্রিাস্থানে রয়েছে।” তিনি। আরাে বলেন-“শ্রেষ্ঠ কে! আল্লাহ, না ওরা- যাদেরকে তারা শরীক সাব্যস্ত করে। তাঁর বাণী-- “কোন সম্প্রদায় শান্তির হকদার যদি তােমাদের জ্ঞান থাকে।” অথচ এরপর ইরশাদ করেন- “যারা ঈমান এনেছে, তারা নিজেদের ঈমানকে জুলুমের সাথে সংমিশ্রন করেনি, তারাই শান্তিতে রয়েছে এবং তারাই হিদায়তপ্রাপ্ত।” কিন্তু আশ্চর্য তাদের জন্য, যারা আমাদের বিন্যাসকৃত ও(সত্তাগত জ্ঞান)(প্রদত্ত জ্ঞান), (পরিবেষ্টনকারী) ও (পরিবেষ্টনবিহীন) জ্ঞানকে দার্শনিক বক্তব্য এবং ওলামা কিরামের নিকট অগ্রহণযােগ্য বক্তব্য বলে আখ্যায়িত করে। অথচ অধিকাংশ ওলামা কিরাম এর বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের এ সকল বর্ণনা আমি স্বীয় পুস্তিকা “মালিউল হাবীব বেউলুমিল গায়বে” সন্নিবেশিত করেছি। আর যথেষ্ট সংখ্যক বর্ণনা “খালেসুল ইতেকাদ” নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যেমন উপরে বর্ণিত হয়েছে। ঐ। গ্রন্থে আল্লামা হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) থেকে পার্থক্য বর্ণনা করা হয়েছে। যে, আল্লাহর জ্ঞান পরিবেষ্টনকারী আর সৃষ্টির জ্ঞান পরিবেষ্টনকারী নয়। বরং তিনিই এর বিশ্লেষণ করে দিয়েছেন। যেমন সামনেই বর্ণিত হচ্ছে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যখন ঐ ব্যক্তি। স্বীয় প্রমাণ বাতিল হতে দেখেছে এবং স্বীয় দলীলের রাস্তা বন্ধ হতে দেখেছে, তখন অস্বীকার করে বসেছে এবং দাবী করছে যে, আল্লাহর জ্ঞান দ্বারা উদ্দেশ্য হলাে শরীয়তের আয়াতসমূহে মুতলাক ইরাক (শর্তহীন জ্ঞান) এবং শব্দের ব্যবহার আল্লাহ তায়ালার আয়াতসমূহ এবং এ বাণীতে “আল্লাহ ও রাসূল অধিক অভিজ্ঞ” দ্বারা সনদ গ্রহণ করেছেন এবং বলে দিয়েছেন যে, আরবী সাহিত্যে এর অর্থ হলাে ৯ (যাকে মর্যাদা দেয়া হয়েছে) এবং (যার উপর তাকে মর্যাদা দেয়া হয়েছে) অর্থগত দিক দিয়ে। উভয় শরীক রয়েছে। অর্থের অতিরিক্ততায় (মর্যাদা প্রাপ্তির) অংশ খাছ। এটা বলেছে কিন্তু এর পরিণাম কিছুই বুঝেনি। যদি এর শাস্তি সম্পর্কে জ্ঞাত হতাে, তাহলে অবশ্যই বলতাে আমার-তার, আর তার আমার মধ্যে দ্বন্দ্ব কিসের? কেননা, তাতে দু’টি বড় মুসিবত। পড়ে রয়েছে। প্রথম মুসিবত, তার থেকে জিজ্ঞেস করাে জ্ঞান ও এর অনুরূপ আল্লাহর প্রশংসায় যার বর্ণনা শরীয়তের প্রমাণ ও আয়াতসমূহে রয়েছে, তা আল্লাহ তায়ালার পরিপূর্ণ গুণাবলী কিনা? যদি বলে হাঁ, যা প্রত্যেক মুসলমান থেকেই আশা করা যায়। তাহলে প্রথমতঃ তাকে বলে দাও, (আল্লাহর পবিত্রতা) যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর আয়াতসমুহে ঈমান আনে, আর তাঁর সাথে তাঁর গুণাবলীতে সৃষ্টিকে অংশীদার করে এবং চিৎকার করে, বলে যে, তাঁর গুণাবলীতে সৃষ্টির সামঞ্জস্যতা রয়েছে। হাঁ, অতিরিক্ত আল্লাহরই জন্য খাস। এ ধরনের বক্তব্যসমূহের দ্বারা এ ধারণা প্রবল হয় যে, এ পুস্তিকার যদি কোন ভিত্তি। ছিলােই, তাহলে ওহাবীদের হাতই তা পরিবর্তন করে দিয়েছে। কেননা, তারা এমন, উক্তিসমূহ আবিস্কারে সাহসকারী। যেমন, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞানকে পাগল, অবুঝ, শিশু, চতুষ্পদ ও হিংস্ৰজন্তুর জ্ঞানের সাথে অংশীদার করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। আমি সন্দেহের ভিত্তি অর্থাৎ আল্লাহর গুণাবলীতে সৃষ্টিকে শরীক করা ওহাবীদের উধ্বর্তন। পেশাওয়াদের ব্যতীত কাউকে দেখছিনা। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) যখন নমরুদকে। বলেছিলেন “আমার প্রতিপালক হলেন তিনিই, যিনি জীবিত করেন ও মত প্রদান। করেন”। তখন নমরূদ বললাে-“আমিও মৃতকে জীবিত আর জীবিতকে মারতে পারি।”

দ্বিতীয়তঃ পুস্তিকায় যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন পদ্ধতি নয়। বরং অবশ্যই অনুসরণযােগ্য প্রমাণ যা তুলনা করার অবস্থায় পাথর ও নিশুপ হয়ে যাওয়ার নয়। না হয়। এটাই আল্লাহর সাথে মাখলুকের তাঁর মহানত্ব, সম্মান ও নির্দেশ ইত্যাদি শরীক স্থির করা বুঝাবে যাতে এর প্রয়ােগ আমাদের মহান প্রতিপালকের উপর করা হয়েছে। যেমন আমরা বলি- (আল্লাহ মহান) (সর্বশ্রেষ্ঠ) (তিনি শ্রেষ্ঠতম) (তিনি অতি মহান) ও (সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক)। এ ছাড়া আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন(তাঁর নির্দেশে কেউ শরীক নেই) হাদীসে কুদসীতে রয়েছে (“গর্ব আমার চাঁদর, মর্যাদা আমার ভূষণ। সুতরাং যে আমার সাথে জগড়া করবে এ দু’টোর কোন একটিতে, তাকে আমি আগুনে নিক্ষেপ করবাে





 আরেকটি জঘন্য উক্তির খন্ডনঃ




তৃতীয়তঃ এ পুস্তিকায় আল্লাহ তায়ালার গুণাবলীকে (মূল অর্থের) উপর প্রয়ােগ করা হয়েছে। আর মৌলিক অর্থ ধ্বংসাত্মক, অস্তিত্বহীন ও মরণশীল বিষয়ের সাথেই সম্পৃক্ত। অথচ, আল্লাহর গুণাবলী তা থেকে পবিত্র ও বহু উর্ধ্বে। 

যদি ‘না’ বলে, তাহলে নিশ্চয়ই সে স্থির করেছে যে, দ্বীনী নস’ ও কুরআনের আয়াতসমূহ যেখানে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ইত্যাদি দ্বারা করা হয়েছে সেগুলিতে সে, পরিপূর্ণ গুণাবলী দ্বারা তাঁর প্রশংসা করে না। বরং প্রশংসা করে ঐ সাধারণ বস্তু দ্বারা যা প্রত্যেক ভাল, মন্দ, ভদ্র, হীন, মুমিন ও কাফির নির্বিশেষে হাসিল হয়। কোন মুসলমান এ ধরনের দুঃসাহস দেখাতে পারে না। বরং তারা (মুসলমান) প্রশংসা করে মর্যাদাশীল, উচ্চ ও মহান গুণাবলী দ্বারা, যা তার পবিত্র সত্ত্বায় নব আবিষ্কৃত ত্রুটিসমূহ এবং তার নিদের্শর্নাবলী থেকে পবিত্র। 

দ্বিতীয় মুসিবত এই যে, যেখানে তিনি পরিবেষ্টনের ইচ্ছেয়ও রাজী হয়নি সেখানে সত্তাগত-এর প্রশ্নই উঠে না। কেননা, উভয়কে দর্শন বলে কুরআন ও সুন্নাহর অর্থকে অগ্রহণযােগ্য করে দিয়েছে। আর উভয়কে বাহ্যিক অর্থ থেকে বহির্ভূত নসসমূহ এবং অধিকাংশ নসকে একেবারে পরিত্যক্ত আখ্যায়িত করার দিকে পথ প্রদর্শনকারী, মুসলমানদের মহা ফিতনায় নিক্ষেপকারী, দ্বীনের সুদৃঢ় ও মজবুত রঞ্জুকে পরিত্যাগকারী বলেছে এবং স্বীকৃতি দিয়েছে যে, শর্তহীন জ্ঞানই আয়াতসমূহে উদ্দেশ্য, যাতে সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টি উভয় শামিল রয়েছে। সুতরাং সে আয়াতে করীমাকে পরস্পর বিরােধ ও বিপরীত (আখ্যায়িত করে ত্যাগ করেছে। আপনাদের নিকট প্রতীয়মান হলাে যে, কুরআন ও হাদীসে ইলমে গায়বের স্বীকৃতি-অস্বীকৃতি উভয় আয়াত বিদ্যমান। আর তার মতে এ গুলাের দ্বারা উদ্দেশ্য শর্তহীন জ্ঞান। অতএব, স্বীকৃতি-অস্বীকৃতি উভয় আয়াত একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর বৈপরিত্যের নিক্তির কাঁটায় পরিমাপকারীদের রক্ত পিপাসু থাবা আল্লাহ তায়ালার আয়াতের উপর খুব জমে গিয়েছে। আর প্রত্যেক হক পরিত্যাগকারী এমনই যেন বাতিল বাতিলকেই সাহায্য করে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হেফাজত





একটি কুটিলতাপূর্ণ বক্তব্যের খন্ডনঃ 



অপর একটি কঠিন মুসিবত হলাে, এ অপবাদদাতার পুস্তিকার ২৩ পৃঃ রয়েছে প্রত্যেক জ্ঞানসমূহ বলতে আল্লাহ তায়ালার আলমে শাহাদাতের জ্ঞানই (উদ্দেশ্য)} 

আমি বলছি, এটা কঠিন ভূল। সত্য এ ছিলাে যে, প্রত্যেক অস্তিত্বময় বস্তুসমূহ : বলা। কেননা, আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানসমূহ এ অস্তিত্বহীনদেরকে যারা অস্তিত্বের জামা পরিধান করেনি, আর না কিয়ামত পর্যন্ত কখনাে অস্তিত্বে পৌছতে পারবে বরং সকল প্রকার অসম্ভব বস্তুসমূহেও ব্যাপৃত রয়েছে। 

কোন " এর বিশ্লেষণ ‘আকৃায়েদের কিতাব সমূহে বিদ্যমান রয়েছে। আর আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে অসম্ভব যদি আলমে শাহাদাত থেকে হতাে, তাহলে অবশ্যই উপস্থিত, সাক্ষী, সৃষ্ট। ও বিদ্যমান হতাে। আর এ থেকে অধিক নিকৃষ্ট আর কি হতে পারে যে, আল্লাহ তায়ালা স্বীয় অংশীদার, মৃত্যু এবং দুর্বলতা ও মুখতা ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করেন? এ ছাড়া আরাে : অনেক মুসিবত রয়েছে যা থেকে আল্লাহ মহান ও বহু উর্ধ্বে " ওলামায়ে কিরাম বিশ্লেষণ করেছেন যে, দর্শন অস্তিত্বের উপর মওকুফ ও নির্ভরশীল। আর অস্তিত্বের বস্তু আল্লাহ তায়ালাকে প্রত্যক্ষ করতে পারেনা। মতবিরােধ শুধু এতেই। রয়েছে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অস্তিত্বময় বস্তু অস্তিত্বের সময় দেখেন অথবা আজলে প্রত্যেক ঐ বস্তুকে যা অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্বে আসবে (তা) দেখেন। সুতরাং এতে সকলেই একমত যে, আল্লাহকে প্রত্যক্ষ করা অসম্ভবের সাথে সম্পর্কিত নয়। এ সম্পর্কে আমি “সুবহানুস সুলুহ আন আয়বে কিযবে মাক্বুহ" গ্রন্থে সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছি। সাবধান! সম্ভবতঃ এ ত্রুটিসমূহ এমনিই যেমন তার পুস্তিকা কতেক ইমাম সম্পর্কে উক্ত করেছে (১২ পৃঃ) যে, নিশ্চয়ই তিনি মাযহাবগতভাবে সুন্নী ছিলেন। কিন্তু এ মাসয়ালায় তাঁর ত্রুটি হয়েছে। আল্লাহর কাছেই ক্ষমাপ্রার্থী। লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলীয়্যিল আজীম। 


✦ইমাম কাজী আয়াজ (رحمة الله) শিফা শরীফে উল্লেখ করেন-“বিশ্বাস রাখতে হবে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় সম্মান, মহান, সালতানাত ও স্বীয় পবিত্রতম নাম ও মহান গুণাবলীতে সৃষ্টিজগতের মধ্যে না কারাে অনুরূপ, আর না তার ন্যায় অন্য কেউ রয়েছে। আর যার ব্যবহার পবিত্র শরীয়ত সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টি উভয়ের উপর করেছে, এগুলােতে মৌলিক অর্থে কোন সাদৃশ্য নেই। অনুরূপ তাঁর গুণাবলীর সাথে মাখলুকের কোন তুলনাই হতে পারে না। 


✦অতঃপর ইমাম ওয়াসেতী (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন- তাঁর পবিত্রতম সত্তার ন্যায় কোন সত্তা নেই, না - তাঁর পবিত্রতম নামের ন্যায় কোন নাম। আর তাঁর কর্মের সাদৃশ্য কোন কর্ম এবং তাঁর গুণের নায় কোন গুণও হতে পারেনা। কিন্তু শাব্দিক সাদৃশ্য থাকতে পারে। 


✦আরাে উল্লেখ করেন-“এ হলাে আহলে হক ও আহলে সুন্নাত জামাতের অভিমত নিন , আমি বলছি, 

হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) কৃত ‘ইমলা আলাল আহইয়াহ’ গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত ‘পরকালে মানুষের নিকট নাম ব্যতীত কোন জ্ঞান নেই। সুতরাং আল্লাহ সম্পর্কে তােমাদের কি ধারণা? 


সুতরাং এ অবস্থায় সৃষ্টির পক্ষে স্রষ্টার জ্ঞান পরিবেষ্টন করা কিভাবে বিশুদ্ধ হতে পারে? অকাট্য দলীলাদি দ্বারা প্রমাণ করছি যে, সৃষ্টির পক্ষে আল্লাহ। তায়ালার জ্ঞানসমূহ বেষ্টনকারী হওয়া যুক্তিগত ও শরীয়ত উভয় দৃষ্টিতে নিশ্চিতরূপে ভ্রান্ত। ওহাবীরা যখন ইমামের অনুসারীদের কাছ থেকে শুনে যে, তারা ইমামদের অনুসরণ ও কুরআন হাদীসের অনুসরণের দ্বারা রাসুলে সৈয়দে। আলম(ﷺ)-এর জন্য প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত সকল অতীত ও বর্তমানের জ্ঞান প্রমাণ করে, তখন তারা তাদের উপর শিরক ও কুফরের হুকুম প্রয়ােগ করে এবং দাবী করে যে, এরা আল্লাহর জ্ঞান ও নবীর জ্ঞানকে সমান। করে ফেলেছে। এ হুকুম প্রয়ােগকারী মূলতঃ নিজেই ভুল ও ভ্রান্ত ধারণায় নিমজ্জিত এবং তারাই কুফর ও শিরকের গর্তে পতিত। এ কারণে যে, যখন তারা এ সীমাবদ্ধ, পরিবেষ্টিত ও অল্প সংখ্যক জ্ঞান প্রমাণ করতে আল্লাহর জ্ঞানের সাথে সাম্য স্থির করছে, তখন তারাই সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান খুবই নগণ্য, ক্ষুদ্র, ছােট, কম ও অল্প পরিমাণই। কেননা, তাদের মতে আল্লাহর জ্ঞান যদি এ পরিমাণ থেকে বেশী হতাে, তাহলে অধিক জ্ঞান অল্পের সমান কিভাবে হতে পারে? সুতরাং তারা সমতার হুকুম প্রয়ােগ করতাে না। 

কিন্তু তারা যখন এ হুকুম প্রয়ােগ করছে, তবে তারা আল্লাহর জ্ঞানের সাথে বিদ্রুপই করছে, গায়ের জোরে তাঁকে অসম্পূর্ণ বলছে। আল্লাহ তাদের মৃত্যু ঘটাক। কোথায় উপুড় হয়ে যাবে! আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তাদের। ফিতনা থেকে রক্ষার জন্য। 

Top