১৩- بَابُ مَا جَاءَ فِي النَّهْيِ عَنِ الشُّرْبِ فِيْ آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ

٤١٦- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: نَهَانَا رَسُوْلُ اللهِ  أَنْ نَشْرَبَ فِيْ آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَأَنْ نَأْكُلَ فِيْهَا، وَأَنْ نَلْبَسَ الْـحَرِيْرَ وَالدِّيْبَاجَ، قَالَ: وَهِيَ لِلْمُشْرِكِيْنَ فِي الدُّنْيَا، وَلَكُمْ فِي الْأُخْرَىٰ .


বাব নং ২১০. ১৩. স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পান করা নিষেধ


৪১৬. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি হুযাইফা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  আমাদেরকে স্বর্ণ-রৌপ্যের পাত্রে পানাহার করতে নিষেধ করেছেন। দুনিয়াতে এ সব (চাকচিক্য) মুশরিকদের জন্য এবং তোমাদের জন্য  পরকালে। 

(বুখারী, ৫/২১৯৫/৫৪৯৯)


٤١٧- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ مُسْلِمٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ أَبِيْ لَيْلَىٰ، قَالَ: نَزَلْنَا مَعَ حُذَيْفَةَ عَلَىٰ دِهْقَانَ بِالْـمَدَائِنِ، فَأَتَىٰ بِطَعَامٍ فَطَعِمْنَا، ثُمَّ دَعَا حُذَيْفَةُ بِشَرَابٍ فَأَتَىٰ بِشَرَابٍ فِيْ إِنَاءٍ فِضَّةٍ، فَضَرَبَ بِهِ وَجْهَهُ، فَسَاءَنَا مَا صَنَعَ، فَقَالَ: أَتَدْرُوْنَ لِـمَ صَنَعْتُ بِهِ هَذَا؟ فَقُلْنَا: لَا، فَقَالَ: إِنِّيْ نَزَلَتُ عَلَيْهِ فِي الْعَامِ الْـمَاضِيْ، فَدَعَوْتُ بِشَرَابٍ، فَأَتَانِيْ بِشَرَابٍ فِيْهِ، فَأَخْبَرْتُهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  نَهَانَا أَنْ نَأْكُلَ فِيْ آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَأَنْ نَشْرَبَ فِيْهَا، وَأَنْ نَلْبَسَ الْـحَرِيْرَ وَالدِّيْبَاجَ، فَإِنَّهَا لِلْمُشْرِكِيْنَ فِي الدُّنْيَا، وَهِيَ لَنَا فِي الْآخِرَةِ.


৪১৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা মুসলিম থেকে, তিনি আব্দুর রহমান ইবনে আবি লায়লা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা হোযাইফা (رضي الله عنه)’র সাথে মাদায়েনে কোন এক গ্রামবাসীর কাছে অবতরণ করলাম। এরপর হোযাইফা (رضي الله عنه) পানি চাইলে তারা রৌপ্যের পাত্র করে পানি নিয়ে আসল। তিনি পানির পাত্র ঐ ব্যক্তির মুখে নিক্ষেপ করলেন। তাঁর এ কাজ আমাদের কাছে খুবই অপছন্দ হলো। তখন তিনি বললেন, তোমরা কি জান আমি এর সাথে কেন এরূপ ব্যবহার করেছি? আমরা বললাম না। তখন তিনি বললেন, আমি গত বছর তার এখানে এসেছিলাম। অতঃপর আমি পানি চাইলে সে আমাকে ঐ পাত্র করে পানি দিয়েছিল। আমি তখন তাদেরকে বলেছিলাম, রাসূল (ﷺ)  আমাদেরকে স্বর্র্ণ-রৌপ্যের পাত্রে পানাহার করতে এবং রেশমের বস্ত্র পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। কারণ এ সমস্ত বস্তু দুনিয়াতে মুশরিকদের জন্য আর আখিরাতে আমাদের জন্য। 

(মুসনাদে বাযযার, ৭/৪৩৯/২৫৬২)


ব্যাখ্যা: মেজবানের সাথে হযরত হোযাইফা (رضي الله عنه) এরূপ কঠোর আচরণ করার কারণ হলো বিগত বছর এ ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) ’র নিষেধাজ্ঞার হাদিস শুনিয়েছেন। কিন্তু সে আমল না করে পুনরায় একই অপরাধমূলক কাজ করার কারণে তিনি মেজবানের মুখে পানি নিক্ষেপ করে কঠোরতা প্রদর্শন করেন, যাতে এই ভুলের আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। 


٤١٨- حَمَّادٌ: عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ أَبِيْ فَرْوَةَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ أَبِيْ لَيْلَىٰ، قَالَ: اسْتَسْقَىٰ حُذَيْفَةُ بْنُ الْيَمَانِ مِنْ دِهْقَانَ، فَأَتَىٰ فِيْ إِنَاءٍ فِضَّةٍ، فَأَخَذَ الْإِنَاءَ، فَضَرَبَ بِهِ وَجْهَهُ، وَقَالَ: إِنَّ رَسَولَ اللهِ  نَهَىٰ أَنْ نَشْرَبَ فِيْ آنِيَةِ الْفِضَّةِ.


৪১৮. অনুবাদ: হাম্মাদ তার পিতা থেকে, তিনি আবু ফারওয়া থেকে, তিনি আব্দুর রহমান ইবনে আবি লায়লা (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) এক গ্রামবাসীর নিকট পানি চান। তখন সে রৌপ্যের পেয়ালায় করে পানি নিয়ে আসে। তিনি ঐ পেয়ালা তার মুখে নিক্ষেপ করেন আর বলেন, রাসূল (ﷺ)  আমাদেরকে রৌপ্যের পেয়ালায় পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। 

(সুনানে বায়হাকী কুবরা, ১/২৭/১০০)


٤١٩- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـحَكَمِ، عَنِ ابْنِ أَبِيْ لَيْلَىٰ، قَالَ: كُنَّا مَعَ حُذَيْفَةَ بِالْـمَدَائِنِ، فَاسْتَسْقَىٰ دِهْقَانًا، فَأَتَاهُ بِهِ فِيْ جَامٍ فِضَّةٍ، فَرَمَىٰ بِهِ، ثُمَّ قَالَ: إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَىٰ عَنْ آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَقَالَ: هِيَ لَـهُمْ فِي الدُّنْيَا وَلَكُمْ فِي الْآخِرَةِ .


৪১৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাকাম থেকে, তিনি ইবনে আবি লায়লা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা হোযাইফার সাথে মাদায়ানে অবস্থান করছিলাম। তিনি এক গ্রামবাসীর নিকট পানি চাইলে সে রৌপ্যের পাত্রে করে পানি দেয়। তিনি তা নিক্ষেপ করেন এবং বলেন, রাসূল (ﷺ)  স্বর্ণ-রৌপ্যের পাত্রে পানাহার করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন, এটা তাদের জন্য ইহকালে আর তোমাদের জন্য রয়েছে পরকালে। 

(মুসনাদে আহমদ, ৫/৩৯৮/২৩৪২২)


٤٢٠- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ النَّبِيَّ  نَهَىٰ عَنِ الدُّبَّاءِ وَالْـحَنْتَمِ.


৪২০. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা নাফে থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম   কদুর খোলস ও সবুজ রঙের কলস ব্যবহার করা থেকে নিষেধ করেছেন। 

(মুসলিম, ৬/৯৪/৫২৯৯)


ব্যাখ্যা: কদু বা লাউয়ের শুকনো খোলস দ্বারা তৈরী পাত্রকে دُبّاء বলা হয় আর সবুজ রঙের কলসকে خنتم বলা হয়। এ সমস্ত পাত্রে মদ তৈরী করা হতো। মদ হারাম হওয়ার সাথে সাথে রাসূল (ﷺ)  এ সমস্ত পাত্র ব্যবহার করতে নিষেধ করে দিয়েছেন, যাতে নিষিদ্ধ বস্তুর চিহ্নও না থাকে আর এর প্রতি আকর্ষণও দূরীভূত হয়ে যায়।


٤٢١- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنِ النَّبِيِّ ، قَالَ: نَهَيْنَاكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُوْرِ، فَقَدْ أُذِنَ لِـمُحَمَّدٍ  فِيْ زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّهِ، فَزُوْرُوْهَا، وَلَا تَقُوْلُوْا هُجْرًا، وَعَنْ لُـحُوْمِ الْأَضَاحِيْ، أَنْ تُمْسِكُوْهَا فَوْقَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، وَإِنَّا نَهَيْنَاكُمْ، لِيُوَسِّعَ مُوْسِرُكُمْ عَلَىٰ فَقِيْرِكُمْ، وَالْآنَ قَدْ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْكُمْ، فَكُلُوْا وَتَزَوَّدُوْا، وَعَنِ الشُّرْبِ فِي الْـحَنْتَمِ وَالْـمُزَفَّتِ .  وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَعَنِ النَّقِيْرِ، وَالدُّبَّاءِ، فَاشْرَبُوْا فِيْ كُلِّ ظَرْفٍ شِئْتُمْ، فَإِنَّ الظَّرْفَ لَا يُحِلُّ شَيْئًا، وَلَا يُحَرِّمُهُ، وَلَا تَشْرَبُوْا مُسْكِرًا .

وَفِيْ رِوَايَةٍ، قَالَ: إِنَّا نَهَيْنَاكُمْ عَنْ ثَلاثَةٍ: عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُوْرِ فَزُوْرُوْهَا، وَنَهَيْنَاكُمْ أَنْ تُمْسِكُوْا لُـحُوْمَ الْأَضَاحِيْ فَوْقَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، فَأَمْسِكُوْهَا وَتَزَوَّدُوْا، فَإِنَّمَا نَهَيْنَاكُمْ، لِيُوَسِّعَ غَنِيُّكُمْ عَلَىٰ فَقِيْرِكُمْ، وَنَهَيْنَاكُمْ أَنْ تَشْرَبُوْا فِي الدُّبَّاءِ، وَالْـمُزَفَّتِ، فَاشْرَبُوْا فِيْمَا بَدَا لَكُمْ، فَإِنَّ الظَّرْفَ لَا يُحِلُّ شَيْئًا، وَلَا يُحَرِّمُهُ، وَلَا تَشْرَبُوْا مُسْكِرًا .

وَفِيْ رِوَايَةٍ: نَحْوَهُ، وَفِيْهِ: وَعَنِ النَّبِيْذِ فِي الدُّبَّاءِ، وَالْـحَنْتَمِ، وَالْـمُزَفَّتِ، فَاشْرَبُوْا فِيْ كُلِّ ظَرْفٍ، وَلَا تَشْرَبُوْا مُسْكِرًا .


৪২১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আলকামা থেকে, তিনি সুলাইমান ইবনে বুরাইদা থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি নবী করমি (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমরা তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, অতঃপর মুহাম্মদ  ’র মাতার কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর যিয়ারত কর, তবে অনর্থক কথা বলবেনা। কুরবানীর গোশত তিন দিনের বেশী রাখতে নিষেধ করেছিলেন যাতে তোমাদের সম্পদশালী ব্যক্তিগণ তোমাদের দরিদ্রদেরকে গোশত দান করতে পারে। এখন যেহেতু আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে সচ্ছলতা দান করেছেন, সেহেতু তোমরা খাও আর  অতিরিক্তগুলো সংরক্ষণ করে রাখ।

আর তোমাদেরকে হানতাম ও মোজাফফাত দ্বারা পান করতে নিষেধ করেছিলাম। অন্য বর্ণনায় আছে, নাকির ও দুব্বায় পান করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে তোমরা যে পাত্রে ইচ্ছা, পান কর। কেননা কোন পাত্র বস্তুকে হালাল ও হারাম করেনা। তবে নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য পান করোনা।


অপর বর্ণনায় আছে, আমরা তোমাদেরকে তিনটি কাজ থেকে নিষেধ করেছিলাম, এক, কবর যিয়ারত থেকে, এখন থেকে কবর যিয়ারত কর। দুই, কুরবানীর গোশত তিনদিনের বেশী রাখতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে জমা এবং সংরক্ষণ রাখ। তোমাদেরকে দুব্বা ও মুযাফফাতে পান করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে যে পাত্রে ইচ্ছা পান কর। কেননা পাত্র বস্তুকে হালাল করতে পারেনা এবং হারামও করতে পারেনা। তবে নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য পান করোনা। 


অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, আমরা তোমাদের দুব্বা, হানতাম ও মুযাফফাতে নযীব তৈরী করা থেকে নিষেধ করেছিলাম। 

(জামেউল উসূল, ৩/৩৮০/৩৬৯২)


ব্যাখ্যা: মুযাফফাত বলা হয় রৌগন লাগানো পাত্রকে আর নাক্বীর বলা হয় কাঠের তৈরী পাত্রকে।


٤٢٢- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَلْقَمَةَ، وَحَمَّادٍ، أَنَّهُمَا حَدَّثَاهُ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنِ النَّبِيِّ ، أَنَّهُ قَالَ: اشْرَبُوْا فِيْ كُلِّ ظَرْفٍ، فَإِنَّ الظَّرْفَ لَا يُحِلُّ شَيْئًا، وَلَا يُحَرِّمُهُ .


৪২২. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আলকামা ও হাম্মাদ থেকে, তারা উভয় আব্দুল্লাহ ইবনে বুরাইদা থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি নবী করমি (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি এরশাদ করেন, তোমরা যে কোন পাত্রে পান কর, কেননা পাত্র কোন বস্তুকে হালাল ও হারাম করতে পারেনা। 

(সুনানে নাসাঈ কুবরা, ৩/২৩১/৫১৮৭)

Top