চতুর্থ নজর
ওহাবীদের ধুর্তামীর প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারী, ইলমে গায়ব সম্পর্কে তাদের ও আমাদের পার্থক্যঃ
কি আল্লাহ তায়ালার লাঞ্ছিত ওহাবীরা যখন সহায়হীন ও নিরাশ হয়, তখন নিজেদের মুক্তির জন্য পথ খুঁজে; কিন্তু পলায়নের স্থান কোথায়? তখন তারা বলে, হাঁ, আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (ﷺ) কে কোন কোন সময় আংশিক গায়বের জ্ঞান মুজিজাস্বরূপ প্রদান করেছেন কিন্তু তিনি ততটুকু জানেন, যতটুকু তাঁকে
শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এটা তােমরাওতাে স্বীকার করাে। অতএব, মতবিরােধ উঠে গেছে এবং ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা নিজেদের কথার মাধ্যমে মুখদের - ধােকা দিতে চায় এবং অলসদের শিকারে ফেলতে চায়। কিন্তু যারা তাদের।
প্রত্যক্ষ করেছে, তাদের গালী শ্রবণ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট যে, “সকল বৌয়ের মধ্যে সব চেয়ে নিকৃষ্ট বৌ হলাে, সেই যে উঁকি মেরে দেখে এবং লুকিয়ে পড়ে”। দিল্লীর ওহাবীরা কি বলেনি, মুহাম্মদ (ﷺ) কিছু জানেন না, এমন কি নিজের শেষ পরিণতির অবস্থাও? অতএব, এ হীন ও লাঞ্ছিতদের ত্যাগ করুন, তাদের ন্যায় তুচ্ছ লােকদের ধােকায় পড়বেন না।
তাদের দিল্লীর পেশাওয়া “তাকবিয়াতুল ঈমানে’ কি বলেনি যে, “যে কেউ কোন নবীর জন্য গায়েবের জ্ঞান রাখেন বলে দাবী করেন, যদিও এক বৃক্ষের পাতার সংখ্যা বরাবরও হােক তাহলে নিঃসন্দেহে, তারা আল্লাহর সাথে শিরক করেছে; চাই এটা স্বীকার করুক যে, তিনি সত্ত্বাগতভাবে জানেন কিংবা আল্লাহর জানানাের দ্বারা, উভয় দিক দিয়ে, শিরক প্রমাণিত হয়”?
তাদের বড় গাঙ্গুহী কি ‘বরাহীনে কাতেয়াতে বলেনি যে, নবী করীম (ﷺ) -এর তার দেওয়ালের পেছনের অবস্থাও জানেন না”?
আর রাসুলে করীম (ﷺ) উপর অপবাদ দিয়ে তা খােদ তারই বাণী বলেছে এবং পূর্ণ নির্লজ্জতার সাথে এ হাদীসের রেওয়ায়েত আবদুল হক্ মােহাদ্দেছ দেহলভীর (رحمه الله تعالي) দিকে সম্পর্কিত করেছে। অথচ শেখ (رحمه الله تعالي) তা সন্দেহপূর্ণভাবেই উল্লেখ করেছেন এবং এর উত্তর দিয়েছেন যে, এ হাদীস প্রমাণিত (১) নয় এবং এর রেওয়ায়েত (বর্ণনা পরম্পরা) বিশুদ্ধ নয়।
(১) এভাবে ইমাম ইবনে হাজর আসক্বালানী (رضى الله تعالي عنه) বলেছেন যে, এর কোন ভিত্তি নেই। আর ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رحمه الله تعالي) আফালুল কুরাতে উল্লেখ করেছেন, এর কোন সনদ জানা নেই। গ্রন্থকার রচিত 'হুসসামুল হারামাঈন’ থেকে সংকলিত ।
যেমন তিনি মাদারেজুন্নবুয়তে' বিশ্লেষণ করেছেন। সুতরাং কোথায় এ উক্তি আর কোথায় সে বাণী, যে সম্পর্কে কুরআন করীম সাক্ষী এবং যাতে নবীয়ে করীমের (ﷺ) বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ প্রমাণ স্থির করছে? বরং পূর্ববর্তী সকল গ্রন্থাবলী এ বর্ণনা দ্বারা পরিপূর্ণ যে, রাসুলে করীম (ﷺ) সম্মুখ ও পিছনের জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত এবং অতীত ও ভবিষ্যতের সকল জ্ঞান সম্পর্কে পূর্ণভাবে জ্ঞাত এবং প্রত্যেক কিছুর জ্ঞান তাঁর জন্য স্পষ্ট ও প্রকাশিত হয়ে গেছে; এবং তিনি সব কিছুর জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন।
ওহাবীরা মুশরিকদের চেয়েও বােকাঃ
বাকী রইলাে, তাদের কথা-‘তিনি জাননে না, কিন্তু যা আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন’ এটা হলাে সত্যকথা কিন্তু তা দ্বারা তারা বাতিল ইচ্ছা করেছে। অনুরূপ, তাদের বক্তব্য-- কতেক গায়ব ও কোন কোন সময় সম্পর্কে। এটা আমাদের দাবী নয় যে, নবীয়ে করীম (ﷺ) আল্লাহ তায়ালার সকল জ্ঞানকে পরিবেষ্টন করে নিয়েছেন।
না এটা মাখলুকের (সৃষ্টির) জন্য অসম্ভব যেমন আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি। অতিসত্তর আমি আপনাদের নিকট বর্ণনা করবাে যে, আল্লাহ তায়ালা নবীয়ে করীম (ﷺ) কে শিক্ষা দেন পবিত্র কুরআনে করীমের মাধ্যমেই, আর কুরআন |
ক্রমান্বয়ে কম কম অবতীর্ণ করেছেন,প্রত্যেক সময় অবতীর্ণ করেননি। তাহলে সময় ও জ্ঞানসমূহ উভয়েই আংশিক হওয়াই প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু ওহাবীরা এ (আংশিক) দ্বারা ক্ষুদ্র, নগণ্য ও অবজ্ঞাই বুঝেছে যে, রাসুলে পাক (ﷺ) কে তাদের ন্যায় অসভ্য, পাপীদের সাথে কিয়াস করে বসেছে। যেমন তা মুশরিকদের প্রাচীন অভ্যাস যে, যখন তাদের নিকট রাসুলগণ আগমন করতাে তখন তারা। বলতাে, “এরাতাে আমাদের মত মানুষই”।
বরং ওহাবীরা ঐ মুশরিকদের থেকেও অতিরিক্ত বােকা ও পথভ্রষ্ট। একারণে যে, মুশরিক, যারা রাসুলদেরকে নিজেদের মত বলতাে, তা এ বক্তব্যের ভিত্তিতে যে, রহমান (দয়াময়) আল্লাহ্ । কোন কিছু অবতরণ করেননি। সুতরাং যখন তারা কিতাব অবতরণ ও রিসালত পাওয়াকে অস্বীকার করছে, তখন বশরিয়ত ব্যতীত কিছুই রইলােনা যা তাদের ধারণায় নগণ্য ছিলাে। কিন্তু এরাতাে রিসালতের দাবীদার, তবুও রাসুলদের। তাদের মর্যাদায় নিয়ে আসছে। আল্লাহর পবিত্রতা, যিনি অন্তর ও চক্ষুসমূহ পরিবর্তন করে দেন। আসলে তাদের এ রােগ এ কারণে সৃষ্টি হয়েছে যে, যা । অতিবাহিত হয়েছে আর যা সংঘটিত হবে সব কিছুর জ্ঞান হুজুর সৈয়দে আলম (ﷺ) জানেন। -এর অর্থ আমরা যা বর্ণনা করে এসেছি, তা তাদের কাছে অনেকই মনে হয়। তাদের ভ্রষ্ট আকলের অনুমানে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) -এর জন্য তা বিশুদ্ধ হওয়া বুঝে আসে না। যেমনিভাবে অন্যান্য আম্বিয়া ও আওলিয়ায়ে কিরাম সম্পর্কে। আর এটা তাদের জন্য অনেক বড় ও কঠিন কর্ম ।
তারা আল্লাহর মর্যাদা ও পরিচয় যথাযথভাবে লাভ করেনি, তাঁর হুকুম ও শক্তির প্রশস্ততা জানেনি এবং রাসুলদের তাদের উর্বর মস্তিষ্ক দ্বারাই পরিমাপ করেছে। সুতরাং যে কথার জ্ঞান। তাদের ধারণায় আসেনি, তা অস্বীকার করে বসেছে।
পূর্বাপর সব বস্তুর জ্ঞান রাসূলে পাক (ﷺ) -এর জ্ঞানের কিয়দাংশ মাত্رحمه الله تعالي
আর আমরা সত্যপন্থী (আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা) জানি, আদিকাল থেকে যা সংঘটিত হয়েছে এবং অনন্তকাল পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে এর বিস্তারিত বর্ণনা
যা আমি উল্লেখ করেছি, তা আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) -এর জ্ঞানের সম্মুখে নিতান্ত নগণ্যই। আল্লাহ তায়ালার এ আয়াতই এর পক্ষে দলীল।
তিনি ইরশাদ করেন,
علمك ما لكن تعلم-وكان فضل الله.
“তিনি আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা কিছু আপনি জানতেন না, আপনার উপর আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে।”
আমি বলবাে-এ আয়াতে কারীমার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় হাবীব (ﷺ) -এর উপর ইহসান করেছেন যে, যা কিছু তিনি জানতেন না, আল্লাহ তা তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন। আর এ ইহসান প্রদর্শনকে (১) এমন কথা দ্বারা সমাপ্তি . করেছেন যা এ মহা অনুগ্রহের মর্যাদা এবং মহান নি’মাতের মহত্বের প্রমাণ বহন করে।
টিকাঃ (১) মুহাম্মদ (ﷺ) -এর উপর আল্লাহর এ অনুগ্রহ, এ মহান নিমাতের মর্যাদার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ যে, প্রকৃতপক্ষে কোন বাদশাহ স্বীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মর্যাদাময় বস্তু দ্বারা ব্যতীত অনুগ্রহ করে না। তাহলে শাহেনশাহে কায়েনাত (রাব্বল আলামীন) কিভাবে তাঁর মহান, সম্মানিত, মর্যাদাময় ও স্বীয় প্রধান খলিফা (মুহাম্মদ (ﷺ) )-এর প্রতি কি ধরনের অনুগ্রহ করবেন? অতঃপর তা কেমন হবে যখন স্বীয় ইহসান ও অনুগ্রহরাজি এমন ব্যক্তির দ্বারা সমাপ্ত করবেন যা তাঁর মহানত্ব প্রকাশের সুস্পষ্ট প্রমাণ হয়?
ইরশাদ করেছেন,
وكان الله عليك عظيما.
“তােমাদের উপর আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে”।
জেনে রাখুন যে, (পূর্বাপর প্রত্যেক কিছুর জ্ঞান) উল্লেখিত মর্মার্থ সহকারে যার প্রতিটি একক পরিপূর্ণ ও বিস্তারিতভাবে ‘লাওহ-ই মাহফুজে বর্তমান রয়েছে। কেননা, আখিরাততাে কিয়ামতের পরেই সংঘটিত হবে। আর দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের বহির্ভূত হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার পবিত্র জাত ও গুণাবলীসমূহ, যা না ‘লাওহ-ই মাহফুজে রক্ষিত, না কলমে। আর আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, “আপনি বলুন, দুনিয়ার পুঁজি নিতান্তই নগণ্য।”
সুতরাং যা আল্লাহ তায়ালা অতি নগণ্য বলেছেন, তা সে মহান সত্ত্বার সাথে কিভাবে সম্পর্ক রাখবে? যাকে আল্লাহ মহান বলেছেন এবং যার শান ও মাহাত্ম্য বৃদ্ধি করেছেন, সাথে সাথে তাঁর (হুজুর সৈয়দ আলম (ﷺ) ) জ্ঞানকে অনন্তকালের পরের বস্তুসমূহ পর্যন্তও বৃদ্ধি করেছেন। যেমন-হাশর, নশর, হিসাব নিকাশ এবং তথায় যে পূণ্য ও শাস্তি রয়েছে। এর বিস্তারিত এতটুকু পর্যন্ত যে, লােকেরা জান্নাত ও জাহান্নামে নিজ নিজ ঠিকানায় পৌছা এবং এর পরের অনেক | কথা যতটুকু আল্লাহ তায়ালা বলতে ইচ্ছে (সব বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ্ তায়ালা হুজুর (ﷺ) কে অবগত করেছেন) আর হুজুর সৈয়দে আলম (ﷺ) নিশ্চয়ই জাত ও গুণাবলী সম্পর্কে ততটুকু জেনে নিয়েছেন। যার পরিমাণ সে মহান আল্লাহই অবগত আছেন যিনি তাঁর এ পুরস্কার স্বীয় মুস্তফা (ﷺ) (নির্বাচিত রাসুল)কে দান করেছেন। সুতরাং প্রমাণিত হলাে যে, সকল ভবিষ্যত ও অতীতের জ্ঞান যা ‘লওহ-ই মাহফুজে লিপিবদ্ধ রয়েছে তা হুজুর (ﷺ) -এর জ্ঞানের একটি ছােট অংশমাত্র। তাঁর জন্য তা অনেক বেশী নয় যে, তা হাসিল হওয়া অসম্ভব হবে।
এ কারণে (১) যমানার ইমাম আল্লামা বুসীরী (رحمه الله تعالي) (আল্লাহ তায়ালা তাঁর বরকতের দ্বারা আমাদের উপকারিতা দান করুন) হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ) এর কাছে আরজ করেছেন, “আপনার বদান্যতার সম্মুখে দুনিয়া ও এর বস্তুসমূহ। একাংশ, আপনার জ্ঞানের সম্মুখে লওহ ও কলমের জ্ঞান এক টুকরা।”
টিকা (১) :
এবং শীর্ষ স্থানীয় আলিম, বাহরুল উলুম, আবুল আয়াশ আবদুল আলী মুহাম্মদ লকনবী (رضى الله تعالي عنه) হাশিয়া শরহে মীর জাহিদ লিরিসালাতিল কুতুবিয়াহ’ গ্রন্থের খােতবায় ‘তাসার ও তাসদীক-এর বর্ণনায় রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) -এর প্রশংসা এভাবেই করেছেন-যার বক্তব্য-“তাঁকে কতেক এমন জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হয়েছে যা শ্রেষ্ঠতম কলম পরিবেষ্টন করতে পারে নি। আর লওহে আওফিও তা পরিবেষ্টন করতে সক্ষম নয়, আর কাল প্রথম দিবস থেকে এমনি না সৃষ্টি করতে পেরেছে, না শেষ দিবস পর্যন্ত এমনি সৃষ্টি হবে। সুতরাং আসমান ও জমীনে এর কোন জোড়া নেই।
-------------------------------
এখানে ইমাম (رضى الله تعالي عنه) (মিন) উল্লেখ করেছেন, যদ্বারা আংশিকই বুঝায় এবং প্রত্যেক রােগা অন্তরে ক্লেশ ও ক্রোদের পাহাড় নিক্ষেপ করে। তাদের বলুন যে, তােমরা স্বীয় ক্রোধে মৃত্যু বরণ করাে! আল্লাহ্ তায়ালা হৃদয়ের কথা ভাল করেই জানেন ।
আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী (رحمه الله تعالي) “জুবদাহ শরহে বুরদাহ' গ্রন্থে উক্ত পংক্তির ব্যাখ্যায় বলেন, এর মর্মার্থ হলাে ‘লাওহের জ্ঞান দ্বারা উদ্দেশ্য সে পবিত্র নকশা ও অদৃশ্য আকৃতিসমূহ যা তাতে প্রমাণ করা হয়েছে। আর কলমের জ্ঞান দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ জ্ঞান যা আল্লাহ তায়ালা যেভাবে ইচ্ছে তাতে গচ্ছিত রেখেছেন। আর এ সংযােগ নগণ্য সম্বন্ধের কারণেই। আর লওহ ও কলমের জ্ঞান হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ) -এর জ্ঞানের একাংশ হওয়ার কারণ এ যে, তার জ্ঞানের অনেক শ্রেণী বিভাগ রয়েছে। (সম্পূর্ণ-পরিপূর্ণ) (খন্ডিত) (মূলতাত্বিক) (সূক্ষ্ম ও রহস্যাবৃত) (জ্ঞান-বিজ্ঞান) যা আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাতের সাথে সম্পর্কিত। লওহ ও কলমের জ্ঞান রাসুলে পাক (ﷺ) -এর লিপিবদ্ধ জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এক পংক্তি এবং হুজুরের জ্ঞানের সমুদ্রসমূহ থেকে একটি নহর (স্রোতধারা)। এতদসঙ্গে এর জ্ঞানতাে হুজুর (ﷺ) এর বরকতময় অস্তিত্বের মাধ্যমেই।
সুতরাং এখন সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে, আর মিথ্যা দূরিভূত হয়েছে। এখানে বাতিলেরা ক্ষতিতেই রয়েছে। (সকল প্রশংসা সমগ্র জাহানের প্রতিপালকের নিমিত্তে)।
পঞ্চম নজর
ইলমে গায়ব সম্পর্কে কুরআন, হাদীস ও ওলামা কিরামের বক্তব্যঃ
যদি আপনি বলেন, আল্লাহ আপনার উপর দয়া করুক, যা আপনি বর্ণনা ও ইঙ্গিত করেছেন এ দ্বারা আমি প্রকৃত ব্যাপার বুঝে নিয়েছি। আমি জ্ঞাত হয়েছি যে, এখানে না কোন শিরক এর অবকাশ রয়েছে, না পথভ্রষ্টতার স্থান। এ কারণে যে, আমরা না আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানের সাথে সমান স্থির করি, না আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারাে জন্য স্বেচ্ছায় তা হাসিল করা জ্ঞান করি। বরং প্রদত্ত জ্ঞানের আংশিকই আমরা প্রমাণ করি। কিন্তু এ কতেক আংশিকের মধ্যেও উজ্জল পার্থক্য রয়েছে, যেমন আসমান ও জমিনের পার্থক্য। বরং তা থেকেও মহান ও অধিক। আর আল্লাহর স্থান বহু উর্ধ্বে । ওহাবীদের কতেক (১) ও আংশিকতাে বিদ্বেষ ও অবজ্ঞারই আংশিক। আর আমাদের আংশিক ইজ্জত, সম্মান ও মহিমার আংশিক। এ আংশিক জ্ঞানের পরিমাণ কতটুকু তা কেউ জানেন না; আল্লাহ ও তিনি ব্যতীত যাকে তিনি দান করেছেন। এখন আমি কুরআন, হাদীস এবং পূর্ব ও পরবর্তী ইমামদের অভিমত থেকে কয়েকটি দলীল শুনাতে চাই। যেমন উপরােল্লিখিত বর্ণনাবলীতে আপনারা আমাকে এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন।
টিকা (১) (অতএব, কতেক ওহাবী) অর্থাৎ ওহাবীদের কতেক (আল্লাহ তায়ালা তাদের অপমান করুন) যা তারা বলে থাকে, ঐ কতেক হলাে হীন ও অপমানকর। যা তাদের নিকট থেকে রাসুলে পাক (ﷺ) ফজিলত সমূহের শত্রুতা রাখার কারণে এবং রাসুলে পাক (ﷺ) এর শানের (কুৎসা রটনার কারণে প্রকাশ পেয়েছে। আর আমাদের কতেক। শ্ৰেষ্ঠতার, যা শ্রেষ্ঠতম, মর্যাদাময় ও মাহাত্ম্যপূর্ণ। ঐ কতেক যার পরিমাণ অনুমান করা যায়না আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত। অতঃপর তিনিই যাকে তিনি প্রদান করেছেন তিনি ব্যতীত। কেননা, পূর্বাপর সকল কিছুর জ্ঞান এক বিন্দু মাত্র ঐ মহান শ্রেষ্ঠতম ও মর্যাদাময় কতেকের যা আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) থেকে প্রকাশ পেয়েছে। আল্লাহ। তায়ালার দরবারে তাঁর উঁচু মকাম প্রদানের কারণে। 'তিনি (ﷺ) উচ্চ মর্যাদায় আসীন হয়েছেন। "
আমি বলবাে, হে আমার ভাইয়েরা! আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের প্রতি রহম করুন! আমিতাে আপনাদের ঐ বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করেছি, যা জ্ঞানবানদের জন্য যথেষ্ট। যদি আপনারা প্লাবিত সমুদ্র ও উজ্জল চাদ দেখতে চান।
তাহলে আমার গ্রন্থ “মালিউল হাবীব বেউলুমিল গায়ব” ও “আল লুলুউল মাকনুন ফি ইলমিল বশীরে মা কানা ওয়ামা ইয়াকুন” দেখুন! আর আপনাদের চোখের সম্মুখে আমার রিসালাহ “ইন্বাউল মুস্তফা বিহালে সিররি ওয়া আখফা”তাে রয়েছেই। যদি আপনাদের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হওয়ার পরও অস্বীকার করেন তাহলে আমাদের জন্য বুখারী শরীফের হযরত ওমর ফারুক (رضى الله تعالي عنه) কর্তৃক বর্ণিত এ হাদীসই যথেষ্ট। তিনি বলেন-“একদা রাসুলে করীম (ﷺ) আমাদের মধ্যে খুতবা পড়ার জন্য দন্ডায়মান হলেন। তিনি আমাদের সৃষ্টির শুরু থেকে বর্ণনা করে জান্নাতী ও জাহান্নামী জাহান্নামে যাওয়া পর্যন্ত সকল বস্তুর সংবাদ প্রদান করেছেন।”
মুসলিম শরীফে হযরত ইবনে আখতাবের বর্ণিত হাদিসে রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খােবা প্রদানের কথা উল্লেখ রয়েছে। তাতে এ বাক্যটিও রয়েছে “যা কিছু দুনিয়াতে সংঘটিত হয়েছে, আর যা কিছু কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিত হবে, সব কিছুর সংবাদ আমাদের রাসুলে পাক (ﷺ) প্রদান করেছেন।”
বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত হুজাইফা (رحمه الله تعالي) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন-“একদা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের নিকট খােতবা প্রদানের জন্য দন্ডায়মান হলেন। তিনি (ﷺ) দন্ডায়মানের প্রারম্ভে কিয়ামত পর্যন্ত যা হওয়ার ছিলাে কোন কিছুই ত্যাগ করেন নি, সবই বর্ণনা করেছেন।”
তিরমিজী শরীফে হযরত মুয়াজ বিন জাবাল থেকে বর্ণিত হয়েছে-“আমি আল্লাহ তায়ালাকে প্রত্যক্ষ করেছি। তিনি স্বীয় কুদরতী হস্ত আমার উভয় কাঁধের মধ্যখানে রাখলেন, যার শীতলতা আমি হৃদয়ে অনুভব করেছি। অতঃপর আমার নিকট সকল বস্তু আলােকিত হয়ে গেলে এবং প্রত্যেক কিছু আমি চিনতে পেরেছি।
ইমাম বুখারী, তিরমিযী,ইবনে খােজায়মা ও তাদের পরবর্তী ইমামগণ রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) -এর এ হাদীস বিশুদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন। তিরমিজী শরীফে হযরত ইবনে আব্বাসের সূত্রে বর্ণিত হাদীসে রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) এর এ ইরশাদ বর্ণিত হয়েছে-“আমি আসমান জমীনের সবকিছু অবগত হয়েছি।”
অন্য বর্ণনায় রয়েছে-“পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত যা কিছু রয়েছে, সবই অবগত হয়েছি।”
এক হাদীস মুসনাদে ইমাম আহমদ, তাবাকাতে ইবনে সা’দ ও তাবরানীর কবীরে বিশুদ্ধ সনদে হযরত আবু যব গিফারী (رحمه الله تعالي) থেকে, অপর একটি হাদীস আবু ইয়ালা, ইবনে মুনী’ ও তাবরানীর সংকলিত হযরত আবু দারদার (رحمه الله تعالي) সূত্রে বর্ণিত। এ উভয় সাহাবী উল্লেখ করেছেন-“রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের এমন ভাবে অবহিত করেছেন যে, কোন পাখীর পাখা নাড়ার বর্ণনা পর্যন্ত তাঁর জ্ঞান থেকে বাদ পড়েনি।”
বুখারী ও মুসলিম শরীফে সূর্য গ্রহণের হাদীসে রয়েছে-‘যে সকল বস্তু (পূর্বে) আমাদের দৃষ্টি (১) গােচর হয়নি, তা আমি স্বীয় এ স্থানেই প্রত্যক্ষ করে নিয়েছি।
যেভাবে রাসুল পাক (ﷺ) ইরশাদ করেছেন অথবা হাদীসের শব্দ যেভাবেই (১) রয়েছে।
একটি হাদীস আমি আপনাদের সম্মুখে বর্ণনা করছি, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য দুনিয়া উত্তোলন করেছেন, আমি তা এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু তাতে সংঘটিত হবে, সব কিছু এমন ভাবে অবলােকন করেছি, যেভাবে এ হাতের তালুকে।
টিকা (১) ইমাম কুস্তুলানী ইরশাদুসসারী শরহে বুখারীর কিতাবুল ইলমে উল্লেখ করেছেন অর্থাৎ ঐ বস্তু থেকে যা দেখা যুক্তিগত ভাবেও বিশুদ্ধ; যেমন আল্লাহ তায়ালার দর্শন। আর পরিচয়গত ভাবেও উপযােগী অর্থাৎ তাই যার সম্পর্ক দ্বীনের কর্ম ইত্যাদির সাথে হবে। যেমন তিনি (জটিল ও বিশৃঙ্খল প্রভেদসমূহের) দিকে ইঙ্গিত করেছেন। আমি বলছি, কিন্তু (পরিচয়গত বিশেষত্ব) অনুপযুক্তের সাথেই উপযােগী পরিচয়গত দর্শন। আর পরিচয়তাে প্রসিদ্ধতার মধ্যেই বিদ্যমান। বাকী রইলাে কাশাফিয়া’ এটা ইব্রাহিম খলীল (عليه السلام) এর মধ্যে পাওয়া যায়, যখন তাঁর প্রতিপালক, তাঁকে আসমান ও জমীনের সম্রাজ্য দেখিয়েছেন, তখন তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সেজেনা করছে। অতঃপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যক্তিকে এমতাবস্থায় দেখতে পেলেন। এ হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনে হামীদ, আবু শেখ ও ইমাম বায়হাকী ‘শুয়াবুল ঈমানে হযরত আতা থেকে আর সাঈদ ইবনে মানসুর’ ইবনে আবী শােভা, ইবনুল মুনযির ও আবু শেখ হযরত সৈয়দুনা সালমান ফারসী (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণনা করেন। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে। “তিনি সাত ব্যক্তিকে একের পর এক ব্যভীচারীনির দিকে মুখ কাল করে) থাকতে দেখেছেন। এটা আবৃদ ইবনে হুমাইদ ও ইবনে আবী হাতিম শাহর ইবনে হুশাব থেকে বর্ণনা করেন। আল্লামা কুস্তুলানী কুসুফ সম্পর্কে ‘বাবু সালাতুন নিসা মায়ার রিজালে বর্ণনা করেন যে (তিনি (ﷺ) বলেন, বস্তু সমূহের মধ্যে কোন বস্তু) এমন নেই যা; দেখিনি, বরং এসব আমি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছি)। সুতরাং এ শব্দকে এর ব্যাপকতার উপর ব্যবহার করা চাই-আর এটাই বিশুদ্ধ ও পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র।
টিকা শেষ---------------------
এছাড়া আরাে অনেক হাদীস রয়েছে। এগুলাের সংখ্যা ও বিবরণী অনেক দীর্ঘ। ইমাম ও পূর্ববর্তী আলিমগণের বাণীসমূহই আপনাদের জন্য যথেষ্ট।
কাসিদায়ে বুরদার এ ছন্দ-“লওহ ও কলমের জ্ঞান আপনার জ্ঞানের এক টুকরা।” এর ব্যাখ্যাসহ আল্লামা আলী কারীর বর্ণনা (رحمه الله تعالي) গত হয়েছে।
শেখ আবদুল হক মােহাদ্দেছ দেহলভী (رضى الله تعالي عنه) মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে নবীয়ে করীম (ﷺ) এর এ ইরশাদ “আসমান ও জমীনে যা কিছু রয়েছে সব কিছু আমি জ্ঞাত হয়েছি”-এর ব্যাখ্যায় বলেন, “এ ইরশাদ দ্বারা পূর্ণ আংশিক সকল জ্ঞান হাসিল হওয়ার এবং তা পরিবেষ্টন করা বুঝায়।”
আল্লামা খাফাযী নসীমুর রিয়াদ শরহে শিফা আল-ইমাম কাজী আয়াজে, আল্লামা যুরক্বানী শরহে মাওয়াহেবে লুদুনিয়া ও মানহুল মুহাম্মদীয়ায় হযরত আবু যর ও আবু দারদার (رضى الله تعالي عنه) হাদীসের ব্যাখ্যায় “আসমান ও জমীনের মধ্যকার যে পাখী পাখা নাড়াচড়া করছে; রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এ সম্পর্কেও আমাদের অবহিত করেছেন” - বলেন, এটা এ কথারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ যে, রাসুলে পাক (ﷺ) প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন--কখনাে বিস্তারিত, আবার কখনাে সংক্ষিপ্তাকারে।
ইমাম আহমদ কাস্তুলানী (رحمه الله تعالي) মাওয়াহেবে’ বলেন-“এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে, আল্লাহ তায়ালা হুজুর (ﷺ) কে এর চেয়েও অধিক জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত করেছেন এবং পূর্বাপর সকল বস্তুর জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত করেছেন।”
টিকাঃ (১) এটা আমি বৃদ্ধি করেছি। কেননা, অধম এ কিতাব মক্কা মােকাররমায় আট ঘণ্টায় ষষ্ঠ নজর ব্যতীত রচনা করেছি যা পরেই বৃদ্ধি করা হয়েছে। সে সময় আমার নিকট কোন কিতাব ছিলােনা যা আমি খােতবায় উল্লেখ করেছি। আমার এ শব্দে যা ইল্লা’ এর পূর্বে রয়েছে তা কি রায়াইতুহু', না ‘আরাইতুহু’ তাতে আমার সন্দেহ হয়েছে। এ কারণে আমি তা থেকে একটি উল্লেখ করেছি এবং বলে দিয়েছি, যেমন তিনি (ﷺ) ইরশাদ করেছেন। অতঃপর যখন আমি স্বীয় মাতৃভূমিতে ফিরে আসলাম এবং কিতাবাদী পাঠে মনােনিবেশ করলাম, তখন উভয় শব্দে নিশ্চিত হলাম। মুসলিম শরীফের দুস্থানে প্রথম শব্দ কদ’ বৃদ্ধি সহকারে অর্থাৎ এ আর বুখারী শরীফে ভিন্ন শব্দে পেয়েছি, তন্মধ্যে থেকেই কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে।'
___________________
ইমাম বুসীরী (رضى الله تعالي عنه) বলেন “সৃষ্টির সকল জ্ঞান ও ধৈৰ্য্য রাসুলের থেকেই।”
ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رحمه الله تعالي)-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ “আফযালুল কুরা লিকুরায়ে উম্মুল কুরায়” বর্ণনা করেন-“এটা এ কারণে যে, আল্লাহ তায়ালা হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ) কে সমগ্র জাহানের জ্ঞান প্রদান করেছেন। সুতরাং তিনি পূর্বাপর সকল বস্তুর জ্ঞান যা কিছু সংঘটিত হয়েছে আর যা সংঘটিত হবে, সবই জেনে নিয়েছেন। ‘নসীমুর রিয়াদে উল্লেখ আছে-“হযরত আদম(عليه السلام)-এর জন্ম থেকে আরম্ভ করে। কিয়ামত পর্যন্ত সব সৃষ্টিকেই রাসুলে পাক (ﷺ) -এর ১ সম্মুখে পেশ করা হয়েছে। আর রাসুলে পাক (ﷺ) সে সবের জ্ঞান লাভ করেছেন। যেমন হযরত আদম (عليه السلام)কে সকল বস্তুর নাম শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
ইমাম কাজী আয়াজ, আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী অতঃপর আল্লামা মানাভী (رضى الله تعالي عنه) আল্লামা সুয়ুতীর (رحمه الله تعالي) জামে সগীরের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘তায়সীরে’ বলেন- ‘পবিত্র আত্মাসমূহ যখন শরীরের সম্পর্ক থেকে ছিন্ন হয়ে আলমে আ’লা তথা সর্বোচ্চ জগতের সাথে মিলে যায় এবং তার মধ্যখানে কোন পর্দা না থাকে, তখন সব কিছু এমনিভাবে প্রত্যক্ষ করেন ও শ্রবণ করেন যেমন সামনের বস্তু প্রত্যক্ষ করেন।'
ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رضى الله تعالي عنه) মাদখালে’ ও ইমাম কাস্তুলানী (رحمه الله تعالي) মাওয়াহেবে’ বলেছেন-“নিঃসন্দেহে আমাদের সম্মানিত ওলামায়ে কিরাম বলেন, রাসুলে পাক (ﷺ) -এর পবিত্র হায়াত ও ওফাতের কারণে এ বক্তব্যে কোন পার্থক্য নেই যে, হুজুর (ﷺ) স্বীয় উম্মতদের প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তাদের। অবস্থাদি, নিয়ত, ইচ্ছা ও অন্তরের ত্রুটিসমূহ চিনেন। আর এগুলাে তাঁর জন্য। এমন সুস্পষ্ট, যাতে কোন গােপনীয়তা নেই।
আল্লাহ পাক রাব্দুল আলামীন ইরশাদ করেন-“হে নবী! আমি আপনাকে হাজির-নাজির করে প্রেরণ করেছি।”
‘শিফা শরীফে এ মাসয়ালা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যে, যখন শুন্য গৃহে প্রবেশ করাে যাতে কেউ নেই, তখন রাসুলে পাক (ﷺ) -এর উপর সালাম আরজ করাে।
টিকাঃ (১) এর প্রারম্ভ হলাে এটাই যে, আল্লামা ইরাকী শরহে মুহাজ্জবে’ উল্লেখ করেছেন যে, এর উপর সাল্লাল্লাহু আলইহে ওয়াসাল্লাম পেশ করা হয়েছে।
______________
- আল্লামা আলী কুারী এর ব্যাখ্যায় এ মাসআলার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেন, “রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) -এর রুহ মােবারক সকল মুসলমানদের গৃহে তাশরীফ নেন।"
শেখ আবদুল হক্ব মােহাদ্দেছ দেহলভী (رضى الله تعالي عنه) ‘মাদারেজুন্নবুয়তে’ বলেন যে, 'দুনিয়ায় হযরত আদম (عليه السلام) থেকে আরম্ভ করে। সিঙ্গা ফুক দেয়া পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে, আল্লাহ তায়ালা সব তাঁর প্রিয় মাহবুবকে অবগত করিয়েছেন। এমনকি আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সকল অবস্থাদি নবীয়ে করীম (ﷺ) জ্ঞাত হয়েছেন। তিনি সকল বস্তু সম্পর্কে জানেন; আল্লাহ তায়ালার কর্ম, আহকাম, গুণাবলী, নাম ও নির্দেশসমূহ এবং সকল জাহির বাতিন, আদি-অন্তের জ্ঞান পরিবেষ্টন করেছেন। এ আয়াতের ভিত্তিতে যে, প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর জ্ঞানী রয়েছেন।' তাঁর উপর সবচেয়ে উত্তম দরুদ ও পরিপূর্ণ সালাম।
আমি বলছি, এ আয়াত عام (ব্যাপক) যাতে কোন বস্তুকে নির্দিষ্ট করা। হয়নি। আপনারা রাসুলে পাক (ﷺ) ব্যতীত পৃথিবীর যারই দিকে দৃষ্টিপাত করেন।
কেন, আমাদের নবী প্রত্যেক জ্ঞানী থেকে সর্বোত্তম ও মহাজ্ঞানী। যদি আপনারা হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ) -এর বরকতময় সত্তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ। করেন তাহলে দেখবেন, আল্লাহই মহাজ্ঞানী-তার চেয়ে (জ্ঞানের অধিকারী) কেউ নেই। আর ذي علم(যে কোন একজন অনির্দিষ্ট জ্ঞানী) শব্দের ব্যবহার।
আল্লাহর শানে বৈধ (১) নয়। কেননা, (তানকীর) অনির্দিষ্ট বাচক শব্দ ব্যবহার . আংশিকেরই প্রমাণ বহন করে, সুতরাং নির্দিষ্ট করার কোন প্রয়ােজন নেই। শাহ ওয়ালী উল্লাহ মােহাদ্দিস দেহলভী (رحمه الله تعالي) “ফুয়জুল হারামাইন” গ্রন্থে লিখেছেন, 'প্রিয়নবীর পবিত্রতম দরবারে অবস্থানকালে আমাকে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, কোন বান্দা কিভাবে ক্রমাগতভাবে উন্নত স্থানের উপনীত হয় । যেস্থানে তার কাছে সব বস্তু পরিষ্কার হয়ে যায়। স্বপ্নে সংঘটিত মেরাজের বিকৃত ঘটনাবলী এ উচ্চতর অবস্থান হতেই প্রদত্ত। এ সম্পর্কিত বহু আয়াত রয়েছে, আর তা থেকে,কিছু প্রমাণস্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে।
টিকা (১) এটা আমি তাঁকে বলেছিলাম, যা আমার বিশ্বাস আমার প্রতিপালক এটা আমাকে শিখেয়েছেন। অতঃপর আমি আল্লামা বায়হাক্বীর কিতাব আল আসমা ওয়াসসিফাতে’ দেখেছি। তিনি উল্লেখ করেছেন, উসতাদ আবু নসর আল বাগদাদী বর্ণনা করেন-নিশ্চয় আমরা আল্লাহ তায়ালাকে تنكير (অনির্দিষ্টতার) সাথে ذو علم (জ্ঞানের অধিকারী) বলবাে না, বরং ذو علم (আলিম লাম) تعريف (নির্দিষ্টতা) সহকারে ذوعلم (জ্ঞানময়)ই বলবাে। যেমন ذو جلالও (অনির্দিষ্টতার) সাথে বলবাে না। এ বিষয়ে আমি মধ্যমভাবে আলােচনা করেছি। শুধু এটিই বলেছি যে, কোথায় (تنكير)তানকীর (অনির্দিষ্ট) নিষেধ আর কোথায় নিষেধ নয়। যেমন ذو مغفرة এবং তা ব্যতীত ذو فضل على الناس বলা যাবে। কিন্তু ذو فضل বলা যাবে না। এর বর্ণনা ও কারণ আমার পুস্তিকা ‘আসমাউল্লাহুল হুসনায় উল্লেখ করেছি।
___________________
গ্রন্থকারের কুরআন পাক থেকে অকাট্য প্রমাণঃ
আমি বলছি, আল্লাহর পক্ষ থেকেই তাওফীক। আমাদের প্রতিপালকের কথা হলাে মিমাংসাকারী, ন্যায় ভিত্তিক হুকুম প্রদানকারী এবং তার বাণী সত্য।
ইরশাদ হয়েছে-“আমি আপনার উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যা প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ সম্বলিত।”
আরও ইরশাদ করেছেন-“কুরআন মিথ্যা বাণী নয়, বরং তা পূর্ববর্তী কিতাবসমুহের সত্যায়নকারী এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ' সম্বলিত।”
আরাে ইরশাদ হয়েছে-“আমি এ কিতাবে কোন বস্তু অবশিষ্ট রাখিনি।”
সুতরাং কুরআন হচ্ছে সাক্ষী, আর এ সাক্ষী কতই মহান যে, তা প্রত্যেক বস্তুর ‘তিবিয়ান’ বা বিবরণ সম্বলিত। আর ‘তিবিয়ান’ সে প্রকাশিত ও সুস্পষ্ট বক্তব্যকে (১) বলা হয়, যা মূলতঃ কোন অস্পষ্টতা অবশিষ্ট রাখে না যে, অধিক শব্দ অধিক অর্থের উপর প্রযােজ্য হয়। আর বর্ণনার জন্যতাে একজন। বর্ণনাকারী প্রয়ােজন; আর তিনি হলেন মহান আল্লাহ তায়ালা। "
টিকা (১) সমসাময়িক কেউ কেউ বর্ণনা করেন যে, সুস্পষ্ট দ্বারা উদ্দেশ্য হলাে, বর্ণিত নির্দেশসমূহের আধিক্য। অতএব – (অতিয়ােক্তি) পরিমাণের ভিত্তিতে, অবস্থার ভিত্তিতে নয়। এর উদাহরণ তাদের বক্তব্য ‘অমুক স্বীয় গোলামের জন্য জালিম (অত্যাচারী)' এবং 'অমুক স্বীয় গােলামদের জন্য জুল্লাম (অতিশয় অত্যাচারী)। আর এর উপরই কতেক মুফাসসির আল্লাহ তায়ালার এ আয়াতকে-“আপনার প্রতিপালক স্বীয় বান্দাদের উপর বেশী অত্যাচারী নন” বুঝিয়েছেন।
আরেকটি বক্তব্যের খন্ডনঃ
আমি বলছি, তােমার প্রাণের শপথ! এটা বিশ্লেষণ নয়, বরং কঠোর পরিবর্তন। যা। কুরআনের অর্থকে পরিবর্তন করে দেয় এবং ظلام للعبيد(বান্দাদের জন্য অতিশয় জুলুমকারী) এর উপর কিয়াস পরিত্যক্ত ও অচিন্তনীয়। কেননা, ‘তিবয়ান’ এর সম্পর্ক। প্রতিটি এককের দিকে রয়েছে। যদিও খাস হওয়ার ধারণায় তা দ্বীনী আহকামের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং সে অধিক সম্পর্কের কারণে অধিক হাসিল করবে না। যেমন 'জুলুম' জুল্লামুন লিল আবীদ-এর মধ্যে অধিকাংশের সম্পর্কের ভিত্তিতে হাসিল করে নিয়েছে। সুতরাং ন্যায় নয়, বরং এমন বলার উদাহরণ যে, এবং এতে ঐ ধারণার অবকাশ নেই। যেমন গুপ্ত নয়। অতঃপর বর্ণনায় যখন অতিশয়ােক্তির সম্পর্ক প্রত্যেকের সাথে পৃথক পৃথকভাবে হয়েছে, তখন পরিমাণ ও অবস্থার পার্থক্যের উপকার হয়নি,কিভাবেই হবে? অথচ প্রত্যেক বস্তু অথবা প্রত্যেক হুকুম দ্বীনী যখন এর সাথে অনেক বর্ণনার সম্পর্ক হয়, তখন তার জন্য সুস্পষ্ট বক্তব্যকে আবশ্যকীয় করে দিবে এবং এটাই হলাে উদ্দেশ্য। অতঃপর এগুলাে ছাড়াও আরেকটি বিষয় ছিলাে যা তার বােধগম্য হয়নি, আর না সে তা কখনাে পছন্দ করতাে। তা এ যে, এ অবস্থায় (আল্লাহর আশ্রয়) নিঃসন্দেহে সে আল্লাহ তায়ালার উপর মিথ্যা অপবাদের দিকে ফিরে যাবে যে, তিনি। কুরআনে করীমে প্রত্যেক হুকুম বারংবার এ জন্য বর্ণনা করেছেন যেন প্রত্যেক হুকুমের বর্ণনার আধিক্যের পরিমাণ বন্ধ হয়ে যায়। আর এটা হলাে স্বচক্ষে দেখা সুস্পষ্ট ভান্তি। অতঃপর এ (মর্মার্থ) ভ্রান্তি হওয়া ছাড়াও মূলত কোন বর্ণনাই নেই। আর এ অপমানেরও। নিশ্চয়তা নেই যা নিকটবর্তীতে সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং আল্লাহর উদ্দেশ্য এটাই বলে হুকুম প্রয়ােগ করা হলাে তাফসীরে ‘বির রায়’ তথা মনগড়া তাফসীর, যা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহর উপর তার সাক্ষী যে, তিনি এ শব্দ দ্বারা এ অর্থই নিয়েছেন, অথচ এর ভ্রান্তির উপর দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অকাট্য দলীল ছাড়াও ধারণামূলক ভ্রান্ত দলীলের। উপর এর কোন দলীল না থাকা তাই প্রমাণ করে। সুতরাং তার উচিত যে, এর সত্যতার সাক্ষী ইমাম মাতুরীদির বাণী থেকে কঠিন ও কঠিনতর করা। কিন্তু আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট সকলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (দেখুন তার পুস্তিকার ৫ পৃঃ)
- -- -- --- ---- -- --
আর অপরজন তিনি, যার জন্য বর্ণনা করা হয়। তিনি হলেন, যার উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে-আমাদের নবী রাসুলুলুল্লাহ (ﷺ) । আর আহলে সুন্নাতের মতে-‘শাই প্রত্যেক অস্তিত্বমান (বস্তু) কে বলা হয়। সুতরাং এ বাক্যে সকল (অস্তিত্বমান) বস্তুসমূহ অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলাে। ফরশ’ (জমীন) থেকে আরশ পর্যন্ত এবং প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য পর্যন্ত সকল প্রকার অবস্থাদি ও সকল অঙ্গ-ভঙ্গি, নড়াচড়া, শ্বাস-প্রশ্বাস, মুহূর্ত এবং পলকের উঠানামা ও দৃষ্টি; অন্তরের ভয় ও ইচ্ছেসমূহ সহ যা কিছু রয়েছে সবগুলাে লওহ-ই মাহফুজে’ লিখিত রয়েছে। অতএব নিশ্চয়ই কুরআনুল করীমে এ সকল বস্তুসমূহের বর্ণনা সুস্পষ্ট পরিপূর্ণ বিস্তারিতরূপে বিধৃত হয়েছে। আর তাও আমরা হিকমতময় কুরআনে জিজ্ঞেস করাে যে, লওহ-এ কি কি লিপিবদ্ধ রয়েছে? আল্লাহ তায়ালা
ইরশাদ করেন “প্রত্যেক ছােট বড় বস্তু লিপিবদ্ধ রয়েছে।
আরাে ইরশাদ হয়েছে-“প্রত্যেক বস্তু আমি সুস্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি।” আরাে ইরশাদ হয়েছে-“জমীনের অন্ধকারসমূহে কোন দানা নেই, আর শুষ্ক ও আদ্র এমন কোন বস্তু নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে (কুরআনে করীমে) বিদ্যমান নেই।”
আর বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ বর্ণনা করছে “প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে, আর যা কিছু হতে থাকবে, সব কিছু লাওহ-ই মাহফুজে লিখিত রয়েছে। বরং জান্নাত ও জাহান্নামীরাও স্বীয় ঠিকানায় পৌছে যাবে”।
যেমন একটি হাদীসে এসেছে, “আবদের (অনন্তকাল) সব অবস্থা তাতে লিখিত আছে”।
এর দ্বারাও তাই উদ্দেশ্য। এজন্য কখনও ‘আবদ' (অনন্তকাল) ব্যবহার করে এর দ্বারা ভবিষ্যতের দীর্ঘ সময় বুঝানাে হয়। যেমন বয়যাবীতে রয়েছে। না হয় অসীম বস্তুর বিস্তারিত (১) বর্ণনা সসীম বস্তুর পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়, যেমন তা গােপন নয়।
গায়াতুল মামুলের খন্ডন
টিকাঃ (১) দেখুন! এটা সুস্পষ্ট বিশ্লেষণ। এ থেকেও বিশুদ্ধ যা প্রথম নজরে গত হয়েছে। আসমান ও জমীন দু’পরিবেষ্টিত সীমা, আর প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত অপর দু'টি সীমা। আর দু’পরিবেষ্টনকারী সীমায় যা পরিবেষ্টিত হবে তা সীমাবদ্ধ হবে। যদি তােমাদের আশ্চর্য হতে হয়, তাহলে তাদের উপর হােন যারা এর উপর দু’কারণে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করেছে।
(তন্মধ্যে) প্রথমটি ১০-১১ পৃষ্ঠায়- কুরআন করীম শব্দগতভাবে সীমাবদ্ধ তা অসীমকে পরিবেষ্টনকারী হতে পারে না।
অন্য একটি উক্তির খন্ডন
আর তােমরা দেখছাে এটা একটি সন্দেহের অপনােদন, যা তারা অনুমান করেছে। বরং তা তাদের মনগড়া কল্পনা প্রসূত ধারণা। দ্বিতীয়টি হলাে, সে ধারণা করেছে যে, “যদি কুরআন করীম অসীম সক্রিয়তার উপর বিস্তারিতভাবে সুস্পষ্ট বর্ণনা উক্ত না করতাে, তাহলে তাতে ‘পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানসমূহ নিশ্চিতরূপে অন্তর্ভুক্ত হতাে না।
তুমি জানাে যে, আমাদের উদ্দেশ্য পূর্ব ও পরবর্তীতে যা কিছু সংঘটিত হয়েছে আর যা। সংঘটিত হবে এর পরিবেষ্টন, যা 'লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আর তা হলাে সসীম বস্তু। এটা সসীম ও পরিবেষ্টিত হওয়ার বর্ণনা ও বিস্তারিত বিশ্লেষণ কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। প্রত্যেকের জন্য তা অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট নিশ্চিতভাবে এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কি জন্য এর অন্তর্ভুক্তি অসীম সক্রিয়তার (জ্ঞানের) অন্তর্ভুক্তির উপর নির্ভরশীল হবে? তা তাে স্বয়ং অসীম, অথবা আয়াতের দ্বারা অস্পষ্ট অনির্দিষ্ট বস্তুসমূহই উদ্দেশ্য, যা অসীমের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং জ্ঞান ততক্ষণ এর অন্তর্ভুক্ত হবে না, যতক্ষণ না
অসীমের বিস্তারিত বিবরণ ব্যক্ত হবে। আপনার সত্তার শপথ! এটা বর্ণনার প্রয়ােজন ছিলােনা। কিন্তু স্বল্পজ্ঞানীদের থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয়।
___________
একে (অতীত ও ভবিষ্যতের জ্ঞান) বলা হয়। নিশ্চয়ই ইলমে উসুলে বর্ণনা হয়েছে, অনির্দিষ্ট বস্তু নফীর (অস্বীকার জ্ঞাপক শব্দ) স্থলে ব্যাপক ১ হয়।
গায়াতুল মামুনের খন্ডন
টিকা(১) আমি বলছি, বিরােধ আমাদের নিকট গােপনীয় নয়, কিন্তু যখন আল্লাহ তায়ালার নহর | (সােতস্বীনি) এসেছে, তখন আকলের নহর বাতিল হয়ে গেছে। কঠিন ত্রুটি হলাে, খাস হওয়ার উপর ঐকমত্য দাবীর উল্লেখ করা। সুতরাং এটা তারই উক্তি যে একটি বিষয় স্মরণ রেখেছে আর অনেক বিষয় তার স্মৃতি ভ্রষ্ট হয়েছে। আর শীর্ষস্থানীয় ইমাম শুমীন স্বীয় তাফসীরে, অতঃপর আল্লামা জুমাল ফতুহাতে ইলাহিয়ায়’ এ আয়াতে করীমা ।
এর ব্যখ্যায় বলেছেন, “কিতাবের মর্মার্থ নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কতেক, ‘ওই-ই-মাহফুজ’ বলেছেন। তাঁর এ উক্তিতে সুস্পষ্ট ব্যাপকতা রয়েছে। কেননা, আল্লাহ তায়ালা এতে (অতীত ও ভবিষ্যতের) সবকিছুই লিপিবদ্ধ করেছেন। আবার কোন কোন মুফাসসির এর মর্মার্থ 'কুরআন' বলেছেন। সুতরাং এ উক্তিতে কি ব্যাপকতা বাকী রয়েছে? কতেক তাফসীরকারক বলেছেন- হাঁ, নিশ্চয়ই সকল বস্তু কুরআনে করীমে লিপিবদ্ধ রয়েছে তা হয়ত সুস্পষ্ট অথবা ইঙ্গিতে। কতেক ভাষ্যকারের উক্তি হলাে-এর মর্মার্থ নির্দিষ্ট ও খাস'। আর ‘শাই' দ্বারা উদ্দেশ্য সন্ধানকারীর যাই প্রয়ােজন (তা সবই কুরআনে করীমে রয়েছে।)
তাফসীরে খাজেনের বক্তব্য হলাে ‘এ কিতাব দ্বারা কুরআন করীম বুঝানাে হয়েছে অর্থাৎ এ মহান কুরআন সকল অবস্থাদির বিবরণ সম্বলিত ।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ সম্বলিত কিতাবে কোন প্রকার সন্দেহ নেই।
তাফসীরে জালালাইনে বলা হয়েছে-‘কিতাবের বিস্তারিত বর্ণনা অত্যন্ত সুস্পষ্ট, যা আল্লাহ তায়ালা আহকাম ও আহকামবিহীন ইত্যাদি সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করেছেন।
জুমালে বলা হয়েছে- আল্লাহ তায়ালার বাণী অর্থাৎ লাওহ-ই-মাহফুজে।
ইবনে জরীর ও ইবনে আবী হাতিম স্বীয় তাফসীরসমূহে সৈয়দুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বিষয়ের সুস্পষ্ট বিবরণ সম্বলিত এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। আর আমরা অবশ্যই জেনে নিয়েছি তা থেকে কতেক যা আমাদের জন্য কুরআনে ব্যক্ত করা হয়েছে।
অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন-“আমি আপনার উপর প্রত্যেক বস্তুর বর্ণনা সম্বলিত কিতাব অবতীর্ণ করেছি।” সাঈদ ইবনে মানসুর স্বীয় সুনানে ইবনে শায়বাহ স্বীয় মুসনাফে আবদুল্লাহ ইবনে ইমাম আহমদ তাঁর পিতার কিতাবুযজুহুদের পাদটীকায়, ইবনে দারলীস ‘ফজায়েলে কুরআনে,
ইবনে নাছর মারুজী তাঁর কিতাব ‘ফি কিতাবিল্লায়’ তাবরাণী মুজামে কবীর’ এবং ইমাম বায়হাক্বী ‘শুয়াবুল ঈমানে হযরত ইবনে মাসউদ (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, যে কেউ কুরআনে করীমে জ্ঞান অনুসন্ধান করবে সে তাতে অগ্র ও পশ্চাতের সব জ্ঞান পাবে। আর তাঁর ইরশাদে সে অন্ধদের জন্য খন্ডন রয়েছে যারা বলে আমরা কুরআনে করীমে কাগজে লিপিবদ্ধ পরিবেষ্টিত কিছু আয়াত ব্যতীত অন্য কিছু দেখিনি। তারা এর ما كان وما يكون বহনকারী হওয়ার উপযুক্ত কিভাবে? স্বীয় সত্তার শপথ! সে সীমাতিক্রমকারী আপত্তিকারীদের উক্তি--তেমনই যেমন তাদের পূর্ববর্তী মুশরিকদের উক্তি একজন খােদা কিভাবে সমগ্র জাহানে বিদ্যমান থাকবে? আল্লাহর প্রশংসায় আমি সন্দেহ দুরিভূত করতে ও সত্ত্বর বুঝে আসার জন্য এসব বর্ণনা “আম্বাউল হাই আন্না কালামান বিয়ানান লিকুল্লি শাই” (১৩২৬ হিঃ) পুস্তিকায় উল্লেখ করেছি । যা আপনাদের জন্য যথেষ্ট। আর ঐ উক্তি যা ইমাম মােল্লা আলী ক্বারী (رحمه الله تعالي) মিরক্কাতে বর্ণনা করেছেন, বলেছেন যে, কতেক ওলামা কিরাম উল্লেখ করেছেন। প্রত্যেক আয়াতের জন্য ষাট হাজার মর্মার্থ রয়েছে। হযরত মাওলা আলী (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণিত- 'যদি আমি ইচ্ছে করি, সত্তর উটের বােঝা কুরআনের তাফসীর দ্বারা ভর্তি করে দিই, তাহলে এমন করেই দিতে পারবাে।'
আল্লামা ইবরাহিম বাইজুরীর শরহে বুরদার’ প্রারম্ভের বক্তব্যে এই যে- প্রত্যেক আয়াতের ষাট হাজার মর্মার্থ রয়েছে। আর যে মর্মার্থগুলাে অবশিষ্ট রয়েছে তা অসীম। আর এর শব্দাবলী হযরত আমীরুল মুমেনীনের হাদীসে এভাবে রয়েছে-“যদি আমি ইচ্ছে করি তাহলে সুরা ফাতিহার তাফসীর দ্বারা সত্তর উট ভর্তি করে দিবাে।
সৈয়দুনা ইমাম আবদুল ওয়াহাব শেরানী (رحمه الله تعالي) কৃতঃ আল ইওয়াকৃীত ওয়াল জাওয়াহিরে ইমাম আজল, - আবু তুরাব নখশী (رحمه الله تعالي) থেকে বর্নিত-“কোথায় হযরত আলীর উক্তির অস্বীকারকারীরা? যদি আমি তােমাদের নিকট সুরা ফাতিহার তাফসীর বর্ণনা করি, তাহলে তােমাদের জন্য সওর উট পরিপূর্ণ করে দিবাে।”
আল্লামা উসমাবীর শরাহ সালাতু সৈয়দী আহমদ কবীর’ (رضى الله تعالي عنه)-এ রয়েছে, আমাদের সরদার আমর মিহদার থেকে বর্ণিত- 'যদি আমি ইচ্ছে করি তাহলে এর কতেক তাফসীর দ্বারা এক লক্ষ উট পরিপূর্ণ করে দিবাে, তাহলে তবুও এর তাফসীর শেষ হবেনা। তাহলে নিশ্চয়ই আমি এমন করবাে।'
খলীফা আবুল ফজলের দরবারের কতেক আওলিয়া থেকে বর্ণিত যে, “আমরা কুরআনে করীমের প্রত্যেক অক্ষরের তাফসীরে চল্লিশ হাজার অর্থ পেয়েছি এবং এর প্রত্যেক অক্ষরে এক স্থানে যে মর্মার্থসমূহ রয়েছে তা ঐ অর্থসমূহ ব্যতীত, যা অন্য স্থানে রয়েছে। আরাে বলেছেন, আমাদের সরদার আলী খাওয়াস বর্ণনা করেন, আল্লাহ তায়ালা আমাকে সুরা ফাতিহার আয়াতের অর্থ অবগত করেছেন।
অতএব, আমার জন্য তা থেকে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার নয়শত নিরানব্বই জ্ঞান প্রকাশিত হয়েছে।
আর জুরকানীতে মাওয়াহেবে লাদুনীয়া’ থেকে, আল্লামা ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) স্বীয় কিতাবে’ ইলমে লাদুনী সম্পর্কে হযরত আলীর উক্তি বর্ণনা করেন- যদি আমার জন্য বিছানা করে দেয়া হয় তাহলে আমি বিছমিল্লাহর বা এর ব্যাখ্যায় সত্তর উট ভর্তি করে দেবাে। ইমাম শা'রানীর মীজানু শরীয়াতিল কুবরায়’ রয়েছে- “আমার ভাই আফযালুদ্দীন সুরা ফাতেহা থেকে দু'লাখ তেতাল্লিশ হাজার নয়শত নিরানব্বইটি জ্ঞান বের করেছেন, অতঃপর এসবগুলাে বিছমিল্লাহির দিকে প্রত্যাবর্তন করে দিয়েছেন, তৎপর বিছমিল্লাহির বা এর দিকে, অতঃপর বা এর নিচের মুকুতার দিকে। আর তিনি বলতেন-“আমাদের মতে মারিফাতের স্থান কুরআনে করীমে। পরিপূর্ণ মানুষ ততক্ষণ হওয়া যায়না, যতক্ষণ না সকল আহকাম ও সব মাযহাবের মােজতাহিদদের আরবী বর্ণমালা এর যে অক্ষরের প্রতি ইচ্ছে করবে তা থেকে মসয়ালা বের করতে পারবে। তিনি বলেছেন, এতে সৈয়দুনা হযরত আলীর ঐ বাণীর তায়ীদ রয়েছে যে, যদি আমি চাই তাহলে এ নুকৃতার জ্ঞান দ্বারা যা বিছমিল্লাহর বা এর নীচে রয়েছে এ উট পরিপূর্ণ করে দেবাে।