গ্রন্থকারের কুরআন পাক থেকে অকাট্য প্রমাণঃ
আমি বলছি, আল্লাহর পক্ষ থেকেই তাওফীক। আমাদের প্রতিপালকের কথা হলাে মিমাংসাকারী, ন্যায় ভিত্তিক হুকুম প্রদানকারী এবং তার বাণী সত্য।
ইরশাদ হয়েছে-“আমি আপনার উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যা প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ সম্বলিত।”
আরও ইরশাদ করেছেন-“কুরআন মিথ্যা বাণী নয়, বরং তা পূর্ববর্তী কিতাবসমুহের সত্যায়নকারী এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ' সম্বলিত।”
আরাে ইরশাদ হয়েছে-“আমি এ কিতাবে কোন বস্তু অবশিষ্ট রাখিনি।”
সুতরাং কুরআন হচ্ছে সাক্ষী, আর এ সাক্ষী কতই মহান যে, তা প্রত্যেক বস্তুর ‘তিবিয়ান’ বা বিবরণ সম্বলিত। আর ‘তিবিয়ান’ সে প্রকাশিত ও সুস্পষ্ট বক্তব্যকে (১) বলা হয়, যা মূলতঃ কোন অস্পষ্টতা অবশিষ্ট রাখে না যে, অধিক শব্দ অধিক অর্থের উপর প্রযােজ্য হয়। আর বর্ণনার জন্যতাে একজন। বর্ণনাকারী প্রয়ােজন; আর তিনি হলেন মহান আল্লাহ তায়ালা। "
টিকা (১) সমসাময়িক কেউ কেউ বর্ণনা করেন যে, সুস্পষ্ট দ্বারা উদ্দেশ্য হলাে, বর্ণিত নির্দেশসমূহের আধিক্য। অতএব – (অতিয়ােক্তি) পরিমাণের ভিত্তিতে, অবস্থার ভিত্তিতে নয়। এর উদাহরণ তাদের বক্তব্য ‘অমুক স্বীয় গোলামের জন্য জালিম (অত্যাচারী)' এবং 'অমুক স্বীয় গােলামদের জন্য জুল্লাম (অতিশয় অত্যাচারী)। আর এর উপরই কতেক মুফাসসির আল্লাহ তায়ালার এ আয়াতকে-“আপনার প্রতিপালক স্বীয় বান্দাদের উপর বেশী অত্যাচারী নন” বুঝিয়েছেন।
আরেকটি বক্তব্যের খন্ডনঃ
আমি বলছি, তােমার প্রাণের শপথ! এটা বিশ্লেষণ নয়, বরং কঠোর পরিবর্তন। যা। কুরআনের অর্থকে পরিবর্তন করে দেয় এবং ظلام للعبيد(বান্দাদের জন্য অতিশয় জুলুমকারী) এর উপর কিয়াস পরিত্যক্ত ও অচিন্তনীয়। কেননা, ‘তিবয়ান’ এর সম্পর্ক। প্রতিটি এককের দিকে রয়েছে। যদিও খাস হওয়ার ধারণায় তা দ্বীনী আহকামের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং সে অধিক সম্পর্কের কারণে অধিক হাসিল করবে না। যেমন 'জুলুম' জুল্লামুন লিল আবীদ-এর মধ্যে অধিকাংশের সম্পর্কের ভিত্তিতে হাসিল করে নিয়েছে। সুতরাং ন্যায় নয়, বরং এমন বলার উদাহরণ যে, এবং এতে ঐ ধারণার অবকাশ নেই। যেমন গুপ্ত নয়। অতঃপর বর্ণনায় যখন অতিশয়ােক্তির সম্পর্ক প্রত্যেকের সাথে পৃথক পৃথকভাবে হয়েছে, তখন পরিমাণ ও অবস্থার পার্থক্যের উপকার হয়নি,কিভাবেই হবে? অথচ প্রত্যেক বস্তু অথবা প্রত্যেক হুকুম দ্বীনী যখন এর সাথে অনেক বর্ণনার সম্পর্ক হয়, তখন তার জন্য সুস্পষ্ট বক্তব্যকে আবশ্যকীয় করে দিবে এবং এটাই হলাে উদ্দেশ্য। অতঃপর এগুলাে ছাড়াও আরেকটি বিষয় ছিলাে যা তার বােধগম্য হয়নি, আর না সে তা কখনাে পছন্দ করতাে। তা এ যে, এ অবস্থায় (আল্লাহর আশ্রয়) নিঃসন্দেহে সে আল্লাহ তায়ালার উপর মিথ্যা অপবাদের দিকে ফিরে যাবে যে, তিনি। কুরআনে করীমে প্রত্যেক হুকুম বারংবার এ জন্য বর্ণনা করেছেন যেন প্রত্যেক হুকুমের বর্ণনার আধিক্যের পরিমাণ বন্ধ হয়ে যায়। আর এটা হলাে স্বচক্ষে দেখা সুস্পষ্ট ভান্তি। অতঃপর এ (মর্মার্থ) ভ্রান্তি হওয়া ছাড়াও মূলত কোন বর্ণনাই নেই। আর এ অপমানেরও। নিশ্চয়তা নেই যা নিকটবর্তীতে সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং আল্লাহর উদ্দেশ্য এটাই বলে হুকুম প্রয়ােগ করা হলাে তাফসীরে ‘বির রায়’ তথা মনগড়া তাফসীর, যা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহর উপর তার সাক্ষী যে, তিনি এ শব্দ দ্বারা এ অর্থই নিয়েছেন, অথচ এর ভ্রান্তির উপর দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অকাট্য দলীল ছাড়াও ধারণামূলক ভ্রান্ত দলীলের। উপর এর কোন দলীল না থাকা তাই প্রমাণ করে। সুতরাং তার উচিত যে, এর সত্যতার সাক্ষী ইমাম মাতুরীদির বাণী থেকে কঠিন ও কঠিনতর করা। কিন্তু আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট সকলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (দেখুন তার পুস্তিকার ৫ পৃঃ)
- -- -- --- ---- -- --
আর অপরজন তিনি, যার জন্য বর্ণনা করা হয়। তিনি হলেন, যার উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে-আমাদের নবী রাসুলুলুল্লাহ (ﷺ) । আর আহলে সুন্নাতের মতে-‘শাই প্রত্যেক অস্তিত্বমান (বস্তু) কে বলা হয়। সুতরাং এ বাক্যে সকল (অস্তিত্বমান) বস্তুসমূহ অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলাে। ফরশ’ (জমীন) থেকে আরশ পর্যন্ত এবং প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য পর্যন্ত সকল প্রকার অবস্থাদি ও সকল অঙ্গ-ভঙ্গি, নড়াচড়া, শ্বাস-প্রশ্বাস, মুহূর্ত এবং পলকের উঠানামা ও দৃষ্টি; অন্তরের ভয় ও ইচ্ছেসমূহ সহ যা কিছু রয়েছে সবগুলাে লওহ-ই মাহফুজে’ লিখিত রয়েছে। অতএব নিশ্চয়ই কুরআনুল করীমে এ সকল বস্তুসমূহের বর্ণনা সুস্পষ্ট পরিপূর্ণ বিস্তারিতরূপে বিধৃত হয়েছে। আর তাও আমরা হিকমতময় কুরআনে জিজ্ঞেস করাে যে, লওহ-এ কি কি লিপিবদ্ধ রয়েছে? আল্লাহ তায়ালা
ইরশাদ করেন “প্রত্যেক ছােট বড় বস্তু লিপিবদ্ধ রয়েছে।
আরাে ইরশাদ হয়েছে-“প্রত্যেক বস্তু আমি সুস্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি।” আরাে ইরশাদ হয়েছে-“জমীনের অন্ধকারসমূহে কোন দানা নেই, আর শুষ্ক ও আদ্র এমন কোন বস্তু নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে (কুরআনে করীমে) বিদ্যমান নেই।”
আর বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ বর্ণনা করছে “প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে, আর যা কিছু হতে থাকবে, সব কিছু লাওহ-ই মাহফুজে লিখিত রয়েছে। বরং জান্নাত ও জাহান্নামীরাও স্বীয় ঠিকানায় পৌছে যাবে”।
যেমন একটি হাদীসে এসেছে, “আবদের (অনন্তকাল) সব অবস্থা তাতে লিখিত আছে”।
এর দ্বারাও তাই উদ্দেশ্য। এজন্য কখনও ‘আবদ' (অনন্তকাল) ব্যবহার করে এর দ্বারা ভবিষ্যতের দীর্ঘ সময় বুঝানাে হয়। যেমন বয়যাবীতে রয়েছে। না হয় অসীম বস্তুর বিস্তারিত (১) বর্ণনা সসীম বস্তুর পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়, যেমন তা গােপন নয়।
গায়াতুল মামুলের খন্ডন
টিকাঃ (১) দেখুন! এটা সুস্পষ্ট বিশ্লেষণ। এ থেকেও বিশুদ্ধ যা প্রথম নজরে গত হয়েছে। আসমান ও জমীন দু’পরিবেষ্টিত সীমা, আর প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত অপর দু'টি সীমা। আর দু’পরিবেষ্টনকারী সীমায় যা পরিবেষ্টিত হবে তা সীমাবদ্ধ হবে। যদি তােমাদের আশ্চর্য হতে হয়, তাহলে তাদের উপর হােন যারা এর উপর দু’কারণে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করেছে।
(তন্মধ্যে) প্রথমটি ১০-১১ পৃষ্ঠায়- কুরআন করীম শব্দগতভাবে সীমাবদ্ধ তা অসীমকে পরিবেষ্টনকারী হতে পারে না।
অন্য একটি উক্তির খন্ডন
আর তােমরা দেখছাে এটা একটি সন্দেহের অপনােদন, যা তারা অনুমান করেছে। বরং তা তাদের মনগড়া কল্পনা প্রসূত ধারণা। দ্বিতীয়টি হলাে, সে ধারণা করেছে যে, “যদি কুরআন করীম অসীম সক্রিয়তার উপর বিস্তারিতভাবে সুস্পষ্ট বর্ণনা উক্ত না করতাে, তাহলে তাতে ‘পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানসমূহ নিশ্চিতরূপে অন্তর্ভুক্ত হতাে না।
তুমি জানাে যে, আমাদের উদ্দেশ্য পূর্ব ও পরবর্তীতে যা কিছু সংঘটিত হয়েছে আর যা। সংঘটিত হবে এর পরিবেষ্টন, যা 'লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আর তা হলাে সসীম বস্তু। এটা সসীম ও পরিবেষ্টিত হওয়ার বর্ণনা ও বিস্তারিত বিশ্লেষণ কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। প্রত্যেকের জন্য তা অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট নিশ্চিতভাবে এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কি জন্য এর অন্তর্ভুক্তি অসীম সক্রিয়তার (জ্ঞানের) অন্তর্ভুক্তির উপর নির্ভরশীল হবে? তা তাে স্বয়ং অসীম, অথবা আয়াতের দ্বারা অস্পষ্ট অনির্দিষ্ট বস্তুসমূহই উদ্দেশ্য, যা অসীমের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং জ্ঞান ততক্ষণ এর অন্তর্ভুক্ত হবে না, যতক্ষণ না
অসীমের বিস্তারিত বিবরণ ব্যক্ত হবে। আপনার সত্তার শপথ! এটা বর্ণনার প্রয়ােজন ছিলােনা। কিন্তু স্বল্পজ্ঞানীদের থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয়।
___________
একে (অতীত ও ভবিষ্যতের জ্ঞান) বলা হয়। নিশ্চয়ই ইলমে উসুলে বর্ণনা হয়েছে, অনির্দিষ্ট বস্তু নফীর (অস্বীকার জ্ঞাপক শব্দ) স্থলে ব্যাপক ১ হয়।
গায়াতুল মামুনের খন্ডন
টিকা(১) আমি বলছি, বিরােধ আমাদের নিকট গােপনীয় নয়, কিন্তু যখন আল্লাহ তায়ালার নহর | (সােতস্বীনি) এসেছে, তখন আকলের নহর বাতিল হয়ে গেছে। কঠিন ত্রুটি হলাে, খাস হওয়ার উপর ঐকমত্য দাবীর উল্লেখ করা। সুতরাং এটা তারই উক্তি যে একটি বিষয় স্মরণ রেখেছে আর অনেক বিষয় তার স্মৃতি ভ্রষ্ট হয়েছে। আর শীর্ষস্থানীয় ইমাম শুমীন স্বীয় তাফসীরে, অতঃপর আল্লামা জুমাল ফতুহাতে ইলাহিয়ায়’ এ আয়াতে করীমা ।
এর ব্যখ্যায় বলেছেন, “কিতাবের মর্মার্থ নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কতেক, ‘ওই-ই-মাহফুজ’ বলেছেন। তাঁর এ উক্তিতে সুস্পষ্ট ব্যাপকতা রয়েছে। কেননা, আল্লাহ তায়ালা এতে (অতীত ও ভবিষ্যতের) সবকিছুই লিপিবদ্ধ করেছেন। আবার কোন কোন মুফাসসির এর মর্মার্থ 'কুরআন' বলেছেন। সুতরাং এ উক্তিতে কি ব্যাপকতা বাকী রয়েছে? কতেক তাফসীরকারক বলেছেন- হাঁ, নিশ্চয়ই সকল বস্তু কুরআনে করীমে লিপিবদ্ধ রয়েছে তা হয়ত সুস্পষ্ট অথবা ইঙ্গিতে। কতেক ভাষ্যকারের উক্তি হলাে-এর মর্মার্থ নির্দিষ্ট ও খাস'। আর ‘শাই' দ্বারা উদ্দেশ্য সন্ধানকারীর যাই প্রয়ােজন (তা সবই কুরআনে করীমে রয়েছে।)
তাফসীরে খাজেনের বক্তব্য হলাে ‘এ কিতাব দ্বারা কুরআন করীম বুঝানাে হয়েছে অর্থাৎ এ মহান কুরআন সকল অবস্থাদির বিবরণ সম্বলিত ।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ সম্বলিত কিতাবে কোন প্রকার সন্দেহ নেই।
তাফসীরে জালালাইনে বলা হয়েছে-‘কিতাবের বিস্তারিত বর্ণনা অত্যন্ত সুস্পষ্ট, যা আল্লাহ তায়ালা আহকাম ও আহকামবিহীন ইত্যাদি সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করেছেন।
জুমালে বলা হয়েছে- আল্লাহ তায়ালার বাণী অর্থাৎ লাওহ-ই-মাহফুজে।
ইবনে জরীর ও ইবনে আবী হাতিম স্বীয় তাফসীরসমূহে সৈয়দুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বিষয়ের সুস্পষ্ট বিবরণ সম্বলিত এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। আর আমরা অবশ্যই জেনে নিয়েছি তা থেকে কতেক যা আমাদের জন্য কুরআনে ব্যক্ত করা হয়েছে।
অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন-“আমি আপনার উপর প্রত্যেক বস্তুর বর্ণনা সম্বলিত কিতাব অবতীর্ণ করেছি।” সাঈদ ইবনে মানসুর স্বীয় সুনানে ইবনে শায়বাহ স্বীয় মুসনাফে আবদুল্লাহ ইবনে ইমাম আহমদ তাঁর পিতার কিতাবুযজুহুদের পাদটীকায়, ইবনে দারলীস ‘ফজায়েলে কুরআনে,
ইবনে নাছর মারুজী তাঁর কিতাব ‘ফি কিতাবিল্লায়’ তাবরাণী মুজামে কবীর’ এবং ইমাম বায়হাক্বী ‘শুয়াবুল ঈমানে হযরত ইবনে মাসউদ (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, যে কেউ কুরআনে করীমে জ্ঞান অনুসন্ধান করবে সে তাতে অগ্র ও পশ্চাতের সব জ্ঞান পাবে। আর তাঁর ইরশাদে সে অন্ধদের জন্য খন্ডন রয়েছে যারা বলে আমরা কুরআনে করীমে কাগজে লিপিবদ্ধ পরিবেষ্টিত কিছু আয়াত ব্যতীত অন্য কিছু দেখিনি। তারা এর ما كان وما يكون বহনকারী হওয়ার উপযুক্ত কিভাবে? স্বীয় সত্তার শপথ! সে সীমাতিক্রমকারী আপত্তিকারীদের উক্তি--তেমনই যেমন তাদের পূর্ববর্তী মুশরিকদের উক্তি একজন খােদা কিভাবে সমগ্র জাহানে বিদ্যমান থাকবে? আল্লাহর প্রশংসায় আমি সন্দেহ দুরিভূত করতে ও সত্ত্বর বুঝে আসার জন্য এসব বর্ণনা “আম্বাউল হাই আন্না কালামান বিয়ানান লিকুল্লি শাই” (১৩২৬ হিঃ) পুস্তিকায় উল্লেখ করেছি । যা আপনাদের জন্য যথেষ্ট। আর ঐ উক্তি যা ইমাম মােল্লা আলী ক্বারী (رحمه الله تعالي) মিরক্কাতে বর্ণনা করেছেন, বলেছেন যে, কতেক ওলামা কিরাম উল্লেখ করেছেন। প্রত্যেক আয়াতের জন্য ষাট হাজার মর্মার্থ রয়েছে। হযরত মাওলা আলী (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণিত- 'যদি আমি ইচ্ছে করি, সত্তর উটের বােঝা কুরআনের তাফসীর দ্বারা ভর্তি করে দিই, তাহলে এমন করেই দিতে পারবাে।'
আল্লামা ইবরাহিম বাইজুরীর শরহে বুরদার’ প্রারম্ভের বক্তব্যে এই যে- প্রত্যেক আয়াতের ষাট হাজার মর্মার্থ রয়েছে। আর যে মর্মার্থগুলাে অবশিষ্ট রয়েছে তা অসীম। আর এর শব্দাবলী হযরত আমীরুল মুমেনীনের হাদীসে এভাবে রয়েছে-“যদি আমি ইচ্ছে করি তাহলে সুরা ফাতিহার তাফসীর দ্বারা সত্তর উট ভর্তি করে দিবাে।
সৈয়দুনা ইমাম আবদুল ওয়াহাব শেরানী (رحمه الله تعالي) কৃতঃ আল ইওয়াকৃীত ওয়াল জাওয়াহিরে ইমাম আজল, - আবু তুরাব নখশী (رحمه الله تعالي) থেকে বর্নিত-“কোথায় হযরত আলীর উক্তির অস্বীকারকারীরা? যদি আমি তােমাদের নিকট সুরা ফাতিহার তাফসীর বর্ণনা করি, তাহলে তােমাদের জন্য সওর উট পরিপূর্ণ করে দিবাে।”
আল্লামা উসমাবীর শরাহ সালাতু সৈয়দী আহমদ কবীর’ (رضى الله تعالي عنه)-এ রয়েছে, আমাদের সরদার আমর মিহদার থেকে বর্ণিত- 'যদি আমি ইচ্ছে করি তাহলে এর কতেক তাফসীর দ্বারা এক লক্ষ উট পরিপূর্ণ করে দিবাে, তাহলে তবুও এর তাফসীর শেষ হবেনা। তাহলে নিশ্চয়ই আমি এমন করবাে।'
খলীফা আবুল ফজলের দরবারের কতেক আওলিয়া থেকে বর্ণিত যে, “আমরা কুরআনে করীমের প্রত্যেক অক্ষরের তাফসীরে চল্লিশ হাজার অর্থ পেয়েছি এবং এর প্রত্যেক অক্ষরে এক স্থানে যে মর্মার্থসমূহ রয়েছে তা ঐ অর্থসমূহ ব্যতীত, যা অন্য স্থানে রয়েছে। আরাে বলেছেন, আমাদের সরদার আলী খাওয়াস বর্ণনা করেন, আল্লাহ তায়ালা আমাকে সুরা ফাতিহার আয়াতের অর্থ অবগত করেছেন।
অতএব, আমার জন্য তা থেকে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার নয়শত নিরানব্বই জ্ঞান প্রকাশিত হয়েছে।
আর জুরকানীতে মাওয়াহেবে লাদুনীয়া’ থেকে, আল্লামা ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) স্বীয় কিতাবে’ ইলমে লাদুনী সম্পর্কে হযরত আলীর উক্তি বর্ণনা করেন- যদি আমার জন্য বিছানা করে দেয়া হয় তাহলে আমি বিছমিল্লাহর বা এর ব্যাখ্যায় সত্তর উট ভর্তি করে দেবাে। ইমাম শা'রানীর মীজানু শরীয়াতিল কুবরায়’ রয়েছে- “আমার ভাই আফযালুদ্দীন সুরা ফাতেহা থেকে দু'লাখ তেতাল্লিশ হাজার নয়শত নিরানব্বইটি জ্ঞান বের করেছেন, অতঃপর এসবগুলাে বিছমিল্লাহির দিকে প্রত্যাবর্তন করে দিয়েছেন, তৎপর বিছমিল্লাহির বা এর দিকে, অতঃপর বা এর নিচের মুকুতার দিকে। আর তিনি বলতেন-“আমাদের মতে মারিফাতের স্থান কুরআনে করীমে। পরিপূর্ণ মানুষ ততক্ষণ হওয়া যায়না, যতক্ষণ না সকল আহকাম ও সব মাযহাবের মােজতাহিদদের আরবী বর্ণমালা এর যে অক্ষরের প্রতি ইচ্ছে করবে তা থেকে মসয়ালা বের করতে পারবে। তিনি বলেছেন, এতে সৈয়দুনা হযরত আলীর ঐ বাণীর তায়ীদ রয়েছে যে, যদি আমি চাই তাহলে এ নুকৃতার জ্ঞান দ্বারা যা বিছমিল্লাহর বা এর নীচে রয়েছে এ উট পরিপূর্ণ করে দেবাে।