হাদিসের আলোকে দলীল (৪১-৫০)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━
হাদিস-৪১ঃ
━━━━━━
أخرج الخطيب في تاريخه عن علی رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ شفاعتي لأمتی، من أحب أهل بیتی؛
খতীব বাগদাদী তার ‘আত-তারীখ’-এ হযরত আলী (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “আমার উম্মতের ঐসব লােকের জন্য আমার শাফায়াত (সুপারিশ) থাকবে একমাত্র যারা আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) কে ভালবেসেছে।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
তারীখু বাগদাদ-২:১৪৬।
হাদিস-৪২ঃ
━━━━━━
أخرج الطبراني عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ أول من أشغع له من أمتي، أهل بیتی؛ .
ইমাম ত্বাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه)'র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, 'আমি আমার উম্মতের যাদের জন্য সর্বপ্রথম শাফায়াত (সুপারিশ) করব, তারা হলেন, আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১. আল মু'জামুল কাবীর, ১২:৩২১ (১৩৫৫০)।
২. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাইছামী, ১:৩৮০।
৩. আল মাওদাহ, খতীব বাগদাদী ২:৪৮।
৪. আল ফেরদৌস, দায়লামী, ১:২৩ (২৯)।
৫. আল কামেল, ইবনে আদী, ২:৭৯০।
হাদিস-৪৩ঃ
━━━━━━
أخرج الطبراني عن المطلب بن عبد الله بن حنطب، عن أبيه قال: خطبنا رسول اللهﷺ بالجحفة فقال: ألست أولى بكم من أنفسكم؟ قالوا: بلی یارسول الله، قال: فإني سائلكم عن اثنين، عن القرآن، وعترتی؛
ইমাম ত্বাবরানী হযরত মােত্তালিব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হানতাব (رضي الله عنه) থেকে তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে যুহফাতে ভাষণ দিলেন, অতঃপর বললেন, 'আমি কি তােমাদের জন্য তােমাদের প্রাণের চেয়েও নিকটে নই? সাহাবা সকলে বলল, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাহলে নিশ্চয় আমি তােমাদেরকে দুটি বিষয়ে দায়িত্ব দিচ্ছি, (তা হচ্ছে) কুরআনের ব্যাপারে এবং আমার পরিবারবর্গের (বংশধরদের) ব্যাপারে।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাইজামী ৫:১৯৫।
হাদিস-৪৪ঃ
━━━━━━
أخرج الطبراني عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ لا تزول قدما عبد حتى يسأل عن أربع: عن عمره فيما أفناه، وعن جسده فيما أبلاه، وعن ماله فيما أنفقه ومن أين اكتسبه وعن محبتنا أهل البيت؛
ইমাম ত্বাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, কোন বান্দাহ ততক্ষণ অগ্রসর হতে পারবেনা, যতক্ষণ না তাকে চারটি প্রশ্ন করা হবে। (তা হচ্ছে) ১. তার বয়সের ব্যাপারে যে, সে তা কীভাবে ব্যয় করেছে, ২. তার শরীরের ব্যাপারে যে, তা সে কীভাবে ক্ষয় করেছে। ৩, তার সম্পদের ব্যাপারে যে, সে তা কীভাবে খরচ করেছে এবং কোথায় হতে আয় করেছে। ৪. এবং আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) ভালবাসার ব্যাপারে।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১. আল মু'জামুল কাবীর, ১১:৮৩ (১১১৭৭)।
২. আল মু'জামুল আওসাত, ১০:১৮৫ (৯৪০২)।
৩. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাইছামী ১০:৩৪৬ হযরত আবু বরযা’র বর্ণনায় অনুরূপ রয়েছে। তবে সেখানে অতিরিক্ত বর্ণনায় আছে।
হাদিস-৪৫ঃ
━━━━━━
أخرج الديلمي عن علی رضی الله عنه سمعت رسول اللهﷺ يقول: أول من يرد على الحوض، أهل بیتی؟
ইমাম দায়লামী হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'কে বলতে শুনেছি, “সর্ব প্রথম যারা আমার কাছে হাউজে কাউছারে অবতরণ করবে, তারা হচ্ছেন আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)। অর্থাৎ, তাদেরকে সর্ব প্রথম পান করানাে হবে।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১.কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাকী আল হিন্দ, ১২:১০০ (৩৪১৭৮)।
২. ইমাম দায়লামী ও এটা সম্পৃক্ত করেছেন।
হাদিস-৪৬ঃ
━━━━━━
أخرج الديلمي عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ أدبوا أولادكم على ثلاث خصال: حب نبيكم، وحب أهل بيته، وعلى قرأة القرآن. فإن حملة القرآن في ظل الله يوم لا ظل إلا ظله، مع أنبيائه وأصفيائه؛
ইমাম দায়লামী হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, তোমার সন্তানদেরকে তিনটি বিষয়ে শিষ্টাচার শিক্ষা দাও। তা হচ্ছে, ১. তোমাদের নবীর (ﷺ) ভালবাসা, ২. তাঁর (ﷺ) পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) ভালবাসা ৩. এবং কুরআন পড়ার শিক্ষা, কেননা কুরআন বহনকারী সেদিন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর (আরশের) ছায়ার নিচে তার নবীগণ এবং তার পবিত্র বান্দাদের সাথে থাকবে, যেদিন তার ছায়া (আরশের) ব্যতিত আর কোন ছায়া থাকবেনা”।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১. কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাক্বী আল হিন্দ ১৬:৪৫৬ (৪৫৪০৯)।
২. কাশফুল খাফা, আল আজলূনী, ১:৭৪ (১৭৪)।
হাদিস-৪৭ঃ
━━━━━━
أخرج الديلمي عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ أثبتكم على الصراط، أشدكم حبا لأهل بیتی وأصحابی؛
ইমাম দায়লামী হযরত আলী (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “তােমাদের মধ্যে সিরাতের(টীকা-১০) ওপর ঐ ব্যক্তিই সবচেয়ে বেশি অটল থাকবে, যে আমার বংশধরগণ ও আমার সাহাবাগণকে বেশি বেশি ভালবাসবে”।
টীকা ১০:
━━━━━━
“সিরাত" সিরাত হচ্ছে জাহান্নামের ওপরে স্থাপিত একটি চুলের চেয়ে সুক্ষ্ম, তরবারীর চেয়ে ধারালাে, অসংখ্য কাটাযুক্ত, অন্ধকার ও বিকট শব্দপূর্ণ দীর্ঘ সেতু বা পুল।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১. আল কামেল, ইবনু আদী, ৬:২৩০৪।
২. কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাফিউল হিন্দ, ১২:৯৬ (৩৪১৫৭)।
হাদিস-৪৮ঃ
━━━━━━
أخرج الديلمي عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ أربعة أنالهم شفيع يوم القيامة: المکرم لذريتي، والقاضي لهم حوائجهم، والساعي لهم أمورهم عندما اضطروا، والمحب الهم بقلبه ولسانه ؛
ইমাম দায়লামী হযরত আলী (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন আমি চার ব্যক্তির জন্য সুপারিশকারী হব। (তারা হল) ১. আমার বংশধরদেরকে সম্মান কারী, ২. তাঁদের প্রয়ােজন পূরণকারী, ৩. তারা যখন কোন বিষয়ে সংকটে পড়বে তখন তাদেরকে সহযােগিতাকারী, এবং ৪. তাদেরকে অন্তর ও জবান (মুখ) দ্বারা (প্রকৃত) ভালবাসা পােষণকারী'।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১. যাখায়েরুল উক্বাবা, তাবরানী- পৃ. ৫০।
২. কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাকিউল হিন্দ -১২:১০০ (৩৪১৮০)।
৩. ইত্তিহাফু সা-দাতিল মুত্তাক্বীন, ৮:৭৩।
৪. জাওয়াহিরুল ইক্বদিয়্যীন, আস সামহুদী, ২:৩৮৩।
হাদিস-৪৯ঃ
━━━━━━
أخرج الديلمي عن أبی سعید رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ اشتد غضب الله على من آذانی فی عترتی۔
ইমাম দায়লামী হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)'র ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দেয় (যেহেতু আমার পরিবারবর্গকে কষ্ট দেয়া মানে আমাকে কষ্ট দেয়া তাই), আল্লাহ তা'আলা তার ওপরে ভীষণ রাগান্বিত হন।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১, কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাকীউল হিন্দ, ১২:৭১৩ (৩৪১৪৩)।
২. যাখাইরুল উক্ববা, তাবারী, পৃ. ৮৩ (হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু অানহু থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাঁর রাসূল (ﷺ) এবং তার ফেরেশতাগণ কঠোরভাবে রাগান্বিত হন সে ব্যক্তির ওপর যে নবী করীম (ﷺ) এর রক্ত প্রবাহিত করে, অথবা তার পরিবার বর্গের দিক দিয়ে তাকে কষ্ট দেয়।)
হাদিস-৫০ঃ
━━━━━━-
أخرج الديلمي عن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ إن الله يبغض الأكل فوق شبعه، والغافل عن طاعة ربه، والتارك لسنة نبيه، والمخفر ذمته، والمبغض عترة نبيه، والمؤذي جيرانه-
ইমাম দায়লামী হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه)'র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, 'আল্লাহ তা'আলা নিন্মােক্তদের ওপর রাগান্বিত হন,
১. তৃপ্ত হওয়ার পরও খাদ্য গ্রহণকারী,
২. আপন প্রতিপালকের অনুসরণ থেকে অমনােযােগী,
৩. তাঁর নবী (ﷺ)'র সুন্নাতকে পরিত্যাগকারী,
৪. নিজ দায়িত্বে অবহেলাকারী,
৫. নবী করীম (ﷺ)'র বংশধর (আহলে বাইত)'র প্রতি হিংসা পােষণকারী,
৬. নিজ প্রতিবেশীকে কষ্টদানকারী।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাকিউল হিন্দ, ১৬:৮৭ (৪৪০২৯)।