গায়াতুল মামুলের খণ্ডন


আমি বলছি, এ উক্তিসমূহ দ্বারা হযরত সৈয়দুনা ইবনে আব্বাস  (رضي الله عنه)-এর বাণীর হাকীকত সুস্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন- যদি আমার উটও হারিয়ে যায় তবে নিশ্চয়ই তা 'কিতাবুল্লাহ’ থেকেই পেয়ে যাবাে। এটা আবুল ফজল মুরসী তার থেকে বর্ণনা করেছেন। যেমন তাফসীরে ইতকানে রয়েছে নিঃসন্দেহে কুরআনে কারীমে তাই রয়েছে যে তা পাওয়ার পন্থা বলে দেয়। এটাই শীর্ষস্থানীয় ইমাম আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী (رحمة الله) তাফসীরে ইতকানে’ তেতাল্লিশতম অধায়ে বর্ণনা করছেন। ইমাম আবু মুহাম্মদ মুফাসসির জুয়াইনী (রাহঃ) বলেছেন, কতেক ইমাম আল্লাহ তায়ালার বাণী الٓـمّٓ. غُلِبَتِ  الرُّوۡمُ  ১৩ থেকে (মাসয়ালা) বের করেছেন যে,মুসলমানরা ৫৮৩ হিজরী সনে বায়তুল মােকাদ্দাস বিজয় করবেন। তারা যাই বলেছেন, তাই হয়েছে।

 আমি বলছি, ৫৮৩ হিজরী সনে বায়তুল মােকাদ্দাস বিজয় হওয়াই সুস্পষ্ট, ঐতিহাসিকগণ তাই বর্ণনা করেছেন। যেমন তারীখে কামিলে’ ইবনে আসীর (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু জুয়াইনীর মৃত্যু তা বিজয় হবার প্রায় দেড়’শ বছর পূর্বেই হয়েছে। তাহলে ঐ ইমাম যাঁর থেকে জুয়াইনী এ কাহিনী বর্ণনা করেছেন কিভাবে তিনি তা বর্ণনা করলেন? ইবনে খালকান বলেছেন, “আবু মােহাম্মদ জুয়াইনী ৩৮ হিজরী জিলহজ্জ মাসে ইন্তেকাল করেন। 

আল্লামা সামনী কিতাবুজ জাইলেও অনুরূপ মত ব্যক্ত করেন। আর ‘আনসাব' নামক কিতাবে তার নিবাস নিশাপুর' বলে উল্লেখ রয়েছে। 

মােট কথা, বক্তব্যের ঘটনাবলী ইমাম জুয়াইনীর বক্তব্যের ন্যায়। আল্লাহ তায়ালা উভয়কে দয়া করুক। সুতরাং পবিত্রতা ঐ ব্যক্তির জন্য যিনি তাঁর নবীর সদকায় এ মরহুম উম্মতকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছেন। তাঁর উপর আল্লাহর দরুদ ও সালাম এবং বরকত ও সালাম তাঁর সকল উম্মতের উপর। আর স্বীয় সত্তার শপথ! যদি ঐ সকল লােকদের বলা হয়, বলাে এরা الٓـمّٓ. غُلِبَتِ  الرُّوۡمُ আয়াত থেকে কিভাবে বের করেছে? তাহলে অবশ্যই। তারা হতবাক হয়ে যাবে এবং কোন জবাব দিতে পারবেনা। তাহলে আমরা কিভাবে অজ্ঞতার সাথে উম্মতের উস্তাদ, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رحمة الله)-এর উপর হুকুম প্রয়ােগ করবাে? যার জন্য রাসূলে করীম (ﷺ) আশীর্বাদ করেছেন- হে আল্লাহ তাঁকে কিতাবের জ্ঞান প্রদান করুন। ইবনে সুরাকাহ কিতাবুল এজাজে ইমাম আবু বকর ইবনে মুজাহিদের সূত্রে বর্ণনা করেন, সৃষ্টি জগতে এমন কোন জ্ঞান নেই যা আল্লাহর কিতাবে নেই।তাবাকৃাত’ গ্রন্থে সৈয়দ ইব্রাহীম দাসাওয়াতীর (رحمة الله) জীবন চরিত্রের বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বলতেন ' যদি আল্লাহ তায়ালা তােমাদের হৃদয়ের তালা উন্মুক্ত করে দেন, তাহলে তােমরা কুরআনের আশ্চর্যাবলী, হিকমত ও জ্ঞানসমূহ সম্পর্কে অবহিত হয়ে যাবে। আর ব্যতীত অন্য সব কিছুতে দৃষ্টি করা থেকে বেপরােয়া হয়ে যাও যে, অস্তিত্বময় পৃষ্ঠাসমূহে যা কিছু লিপিবদ্ধ হয়েছে তা সবই এতে বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন--“আমি কুরআনে করীম কোন কিছু উঠিয়ে রাখিনি। ইবনে জাবের ও ইবনে আবী হাতিম স্বীয় তাফসীরসমূহে’ হযরত আবদুর রহমান ইবনে জায়েদ ইবনে আসলাম (আমীরুল মুমেনীন হযরত ওমর ফারুক  (رضي الله عنه) এর আজাদ কৃত গােলাম) থেকে আল্লাহ তায়ালার আয়াত- “আমি কুরআনে কোন কিছু বাদ দিইনি’-এর তাফসীরে বলেছেন, আমরা কুরআন থেকে অন্যমনস্ক হবাে না, কোন বস্তু এমন নেই যা তাতে উল্লেখ নেই। দায়লমী মুসনাদুল ফেরদৌসে হযরত আনাস ইবনে মালিক  (رضي الله عنه)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলে পাক(ﷺ) ইরশাদ করেছেন-‘পূর্বাপর সকল বস্তুর জ্ঞান কুরআনে খোঁজ করলে পাওয়া যাবে। ইতিপূর্বে আমি এ হাদীস হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ-এর সূত্রে উল্লেখ করেছি। সুতরাং এ থেকে আমি আরম্ভ করেছি এবং এরই উপর সমাপ্ত করেছি। নিঃসন্দেহে আপনার নিকট তাখসিসের (খাস হওয়া) ঐকমত্যের দাবী বাতিল হওয়া প্রকাশিত হয়েছে।



সুতরাং আল্লাহ তায়ালা স্বীয় কিতাবে কোন বস্তু ত্যাগ করার ধারণা। গ্রহণযােগ্য হবেনা। শব্দততা নস (অকাট্য বক্তব্য) সমুহের অধিক নস"। (ব্যাপকতার) উপর। অতএব, স্পষ্ট ও বিস্তারিত বর্ণনা থেকে কোন বস্তু বাদ যাওয়া শুদ্ধ হতে পারে না। আর (ব্যাপক শব্দ) ১ (যে কোন একক-এর উপর প্রভাবের) ব্যাপারে নিশ্চিত ও অকাট্য। আর নসসমূহকে তার জাহির অর্থের উপর প্রতিপন্ন করা আবশ্যক যতক্ষণ এর উপর কোন বিশুদ্ধ দলীল তাকে (খাস ও বিশ্লেষণকরণ) ভিন্ন দিকে না নিয়ে যাবে এবং যতক্ষণ কোন দলীল বাধ্য না করবে। তাখসীস’ ও ‘তাভীল’ হচ্ছে বক্তব্যের পরিবর্তন করা। দলীল ছাড়া তা করা হলে শরীয়ত থেকে নিরাপত্তাই উঠে যাবে। আর হাদীসে আহাদ যত বিশুদ্ধই হােকনা কেন কুরআনের ব্যাপকতাকে নির্দিষ্ট করতে পারবে না। বরং এর সম্মুখে অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে। সুতরাং হাদীস ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ের আলাপ-আলােচনারতাে প্রশ্নই উঠেনা। আর যে তাখসীস আ’মকে তার অকাট্যতা থেকে পরিত্যাগ করেনা, আর যে বস্তু। তাখসীসে আকলীর কারণে আমের কায়দা থেকে বের হয়ে যায় তা সনদ বানিয়ে কোন সন্দেহজনক দলীল দ্বারা খাস করা যায় না। সুতরাং আল্লাহরই প্রশংসা যে, বিশ্লেষণ যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত হলাে। 

বাকী রইলাে, যদি তােমরা এর বিপরীত মত পােষণ করাে, আর যদি কোন উক্তি তােমাদের উপর পাঠ করা হয় এবং তা তােমাদের মনঃপুত না হয়, আর তা অন্যের উপর ঝুঁকে পড়তে দেখাে, তাহলে তা সর্বশেষ প্রচেষ্টায় প্রতিহত করতে চাও এবং প্রত্যেক ব্যাপকতাকে খাসের দিকে ফিরিয়ে দাও, আর ব্যাপকতা স্বীকার করে বলে দাও যে, তা খাস হওয়ার উপর ব্যবহার করা অপরিহার্য। সুতরাং নিজ কুপ্রবৃত্তির হুকুম এবং নসসমূহের সাথে স্বেচ্ছাচারিতা এবং যদি এটা বৈধ হয় তবে আম ও খাসসমূহের মধ্যে মূলত কোন বৈপরীত্য অবশিষ্ট থাকে না। যেমন তা কারাে নিকট গােপনীয় নয়। আর আল্লাহই পথ প্রদর্শনকারী। (দেখুন, তার পুস্তিকার ৭, ৮ ও ৩১ পৃষ্ঠা)


(1) বাক্যগত অকাট্যতা ও উসুলগত অকাট্যতা অর্থাৎ উসুলে ফিক্বাহ-এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তােমরা কি দেখছােনা যে, ব্যাপক অকাট্যতা হলাে গবেষণামূলক। সুতরাং বাক্যগত অকাট্যতার সম্মুখে তা কিছুই নয়। অতএব, কোন হানাফীর কুরআনের ব্যাপকতা দ্বারা প্রমাণ স্থির করা এবং তাঁর মাযহাবে এর হুকুম অকাট্য হওয়া, আল্লাহ তায়ালার মর্মার্থের উপর দৃঢ়ভাবে না কোন হুকুম প্রয়ােগ করে, আর না তাভীলের (বিশ্লেষণ) গন্ডি থেকে বহিভূত করে, যেমন বিবেকবান আলিমদের নিকট গােপনীয় নয়।


আমাদের নবী--(যা সংঘটিত হয়েছে আর যা ভবিষ্যতে হবে) সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন (১)। আপনাদের নিকট প্রতীয়মান হলাে যে, রাসুলে পাক(ﷺ)-এর জ্ঞান কুরআন করীম থেকেই অর্জিত। আর প্রত্যেক বস্তুর স্পষ্ট বর্ণনা এবং প্রত্যেক বস্তুর বিস্তারিত হওয়া এ পবিত্র কিতাবেরই গুণ ও বৈশিষ্ট্য। বরঞ্চ এর একেকটি আয়াত কিংবা একেকটি সুরারও এ বৈশিষ্ট্য। আর কুরআন করীম একবারে নাজিল হয়নি, বরং অল্প-অল্প (প্রয়ােজনানুসারে) আনুমানিক তেইশ বছরে নাজিল হয়েছে। সুতরাং যখন নবীর উপর কোন আয়াত কিংবা সুরা নাজিল হতাে, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞানের উপর জ্ঞান ততই বৃদ্ধি পেতে থাকতাে। শেষ পর্যন্ত যখন কুরআন অবতরণ পরিপূর্ণ হলাে, প্রত্যেক বস্তুর বিস্তারিত সুস্পষ্ট বর্ণনাও পূর্ণ হলাে। আল্লাহ তায়ালা আপন হাবীব (ﷺ))-এর উপর স্বীয় নিয়ামতের পূর্ণতা দান করলেন যা কুরআনে। করীমে তাঁর সাথে অঙ্গীকার করেছিলেন।

 (১) মদীনা শরীফের কতেক ওলামায়ে কিরাম প্রতিবাদ স্বরূপ তাওরীতে আল্লাহ্ তায়ালার আয়াত تفصيلا لكل شيء পেশ করলেন। আমি বললাম, তাওরীতে কোন দলীল খাস হওয়ার উপর রয়েছে কিনা? দ্বিতীয়টির ভিত্তিতে অস্বীকারের কারণ কি? আর প্রথমটির ভিত্তিতে স্থায়িত্বের দলীল হযরত কলিমুল্লাহ (عليه السلام) সম্পর্কে কিভাবে হবে? মাহবুবে খােদা(ﷺ) এর সম্পর্কে স্থায়ীত্বের দলীল এবং কোন শব্দ একস্থানে দলীলসহ খাস হওয়া ও অন্যস্থানে দলীলবিহীন খাসকে আবশ্যক করে না। তখন নিশ্ৰুপতা অবলম্বন করেন এবং কোন কথা বলেননি। আমি এখন বলছি, ইবনে আবী হাতিম মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যখন হযরত মুসা (عليه السلام) আলওয়াহ' নিক্ষেপ করেন তখন হেদায়েত ও রহমত ছাড়া অবশিষ্ট আর বিশ্লেষণ উঠে গেছে। তিনি আবু মা'বদ ও ইবনে মুনজির তাঁর থেকে রেওয়ায়েত করেন, সাঈদ ইবনে জুবায়র বলেন, তাওরীতের তখতীসমূহ যমরুদ (মূল্যবান পান্না):-এর ছিলাে। হযরত মুসা (عليه السلام) যখন তা নিক্ষেপ করেছিলেন, তখন বিশ্লেষণ উঠে গেছে আর হেদায়েত ও রহমত অবশিষ্ট রয়ে গেছে এবং তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করেন, (আর আমি তােমাকে পটে লিখে দিয়েছি সর্বপ্রকার উপদেশ ও বিস্তারিত সব বিষয়) আর এ আয়াত তেলাওয়াত করেন, (তারপর যখন মুসার (عليه السلام) রাগ পড়ে গেলাে, তখন তিনি তখতীগুলাে তুলে নিলেন আর যা কিছু তাতে লিখা ছিলাে, সেসমস্ত লােকের জন্য হেদায়েত ও রহমত যারা নিজেদের প্রতিপালককে ভয় করে এবং বলেন যে, এখানে বিস্তারিত বিষয়ের বর্ণনা করেন নি। অতএব, সন্দেহ দূরিভূত হয়ে গেলাে। এদিকে

এমতাবস্থায় কুরআন করীম নাজিল সমাপ্ত হওয়ার পূর্বে যদি রাসুলে পাক (ﷺ)কে লক্ষ্য করে কতেক নবীদের ব্যাপারে এ কথা হয় যে, আমি এর বর্ণনা | আপনার কাছে করিনি, অনুরূপ মুনাফিকদের ব্যাপারে যে, আপনি তাদের চিনতে 

পারেন নি অথবা রাসুলে পাক (ﷺ) কোন ঘটনা কিংবা কর্মে নিরবতা পালন করেছেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত ওহী নাজিল হয়েছে এবং জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাহলে এগুলাে না ঐসকল আয়াতের অস্বীকৃতি বাচক, না রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞানের পরিব্যাপ্তির অস্বীকার। যেমন সুবিবেচকদের নিকট গােপন নয়।

       অতএব, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান অস্বীকারের ব্যাপারে যত প্রকার কাহিনী ও বর্ণনাবলী দ্বারা ওহাবীরা সনদ গ্রহণ করে, যদি এসব কাহিনীর। ইতিহাস জানা না থাকে, তাহলে এর দ্বারা সনদ গ্রহণ বােকামি ও মুখতা বৈ কিছু নয়। এ কারণে যে, হতে পারে এ সকল কাহিনী ও ঘটনাবলী কুরআন করীম নাজিল সমাপ্তির পূর্বেকার সংঘটিত হয়েছে। যদি জানা যায় যে, এর ইতিহাস নাজিল সমাপ্তির পূর্বের, তাহলে এর দ্বারা সনদ গ্রহণ কাঁটাযুক্ত বৃক্ষকে হাত দ্বারা। কোষমুক্ত করার মত যা সম্পূর্ণ পাগলামী। আর পাগলও রং বেরঙের হয়। আর যদি ইতিহাস পরের হয় এবং দাবীদারদের দাবীর পক্ষে কোন প্রমাণ না থাকে, তাহলে প্রমাণকারী আহমক এবং এর দ্বারা প্রমাণ স্থির করা অসম্ভব। আমি স্বীয় প্রতিপালকের প্রশংসা করছি এবং সব প্রশংসা সেই মহান সত্ত্বারই প্রাপ্য। নবী করিম (ﷺ) এর জ্ঞান হ্রাস করার জন্য ওহাবীরা যেসব প্রমাণ দ্বারা সনদ গ্রহণ করে তা এঅবস্থাসমূহ থেকে বাইরে নয়। যদি ভুল বলে স্বীকার ১ করে নিই যে, 

এখানে এমন কোন রেওয়ায়েত পাওয়া গেলাে যার ইতিহাস জানা যায় যে, এটা। কুরআন নাজিল সমাপ্তির পরের, তাহলে তা নিশ্চিত বলে দেয় যে, সে সময় পর্যন্ত বস্তুতঃ কতেক বস্তুর কোন জ্ঞানই হাসিল হয়নি।

(১) ওহাবীদের মুখসমূহের একটি হলাে, তারা শাফায়াতের হাদীস “অতঃপর আমি স্বীয় শির উত্তোলন করবাে এবং স্বীয় প্রতিপালকের ঐ হামদ, গুণকীর্তন ও প্রশংসা করবাে, যা তিনি আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। এর দ্বারা প্রমাণ করতে চায় যে, রাসুলে পাক(ﷺ)-এর হামদ ও সানা (প্রশংসা ও স্তুতি বন্দনা) তাঁর সুন্দরতম প্রশংসাবলী থেকেই হবে। সুতরাং হাদীসই প্রকাশ করে দিলাে যে, হুজুর(ﷺ)-এর উপর ঐ সময়ই আল্লাহ তায়ালার ঐ গুণটি প্রকাশিত হবে, যা তিনি তখনাে পর্যন্ত জানতেন না। প্রকৃতপক্ষে তাদের এ বক্তব্যের দ্বারা। বিতর্কের কোন সুযােগ নেই। কেননা, আমরা জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, হুজুর (ﷺ)-এর জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাতকে পরিবেষ্টনকারী নয়, আর না মূলতঃ তাতে কোন 



অতএব, আমরা যথেষ্ট মনে করি একটি মাত্র সম্পূর্ণ, পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ উপকারী উত্তর যা সকল বাতুলতাকে দূরিভূত করে এবং এর মূলােৎপাটন করে বহুদূরে নিক্ষেপ করে যা সমস্ত ঘটনাবলীতে দীপ্ত ও প্রকাশমান, তা হলাে- খবরে আহাদ যখন কুরআনের আয়াতের বিপরীত হয় এবং বিশ্লেষণের কোন পন্থা অবশিষ্ট না থাকে, তখন তা কোন কাজে আসবে না, তা শ্রবণ করা যাবে না এবং তা কোন উপকারে আসবেনা। বরঞ্চ যদি এখানে উসুলের কিতাবাদি থেকে ইমামদের প্রমাণসমূহ উক্ত করি, তাহলে এর চেয়েও উত্তম ও অধিক মজবুত পছন্দের কথা এই যে, এরই সাক্ষ্য পেশ করা যা বর্তমানে হিন্দুস্থানে ওহাবীদের ইমাম রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী স্বীয় কিতাবে তার ছাত্র খলীল আহমদ আম্বেটবীর দিকে সম্পর্কিত করেছেন। স্বয়ং তিনি এ মাসয়ালায় আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক রাসুলে পাক (ﷺ) কে অদৃশ্য জ্ঞান প্রদান করা আকায়েদের মাসয়ালার অন্তর্ভুক্ত এবং ফজিলতের নয় বলে উল্লেখ করেছেন। যার বক্তব্য নিম্নরূপ-“আকৃায়েদের মাসয়ালা কিয়াস নয় যে, কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত হয়ে যাবে, বরং অকাট্য, অকাট্য বক্তব্যসমূহ ‘নস’ দ্বারা প্রমাণিত হয়। এখানে কোন নস্ (কোরআন-হাদীসের সুস্পষ্ট বক্তব্য) নেই। সুতরাং এর স্বীকৃতি ঐ সময়ই ভেবে দেখার যােগ্য যখন গ্রন্থকার তা অকাট্য বক্তব্য দ্বারা প্রমাণ করবে। 

বরাহীনে কাতেয়ার ৮১ পৃষ্টায় আরাে বলা হয়েছে-“আকীদার মাসআ’লাবলীতে অকাট্যতার দিকই বিবেচ্য, বিশুদ্ধ ধারণা নয়”। ৮৭ পৃষ্টায় বলা হয়েছে, “এক্ষেত্রে বিশুদ্ধ হাদীসে আহাদও গ্রহণযােগ্য নয়। উসুল শাস্ত্রে যার প্রমাণ বিদ্যমান। সুতরাং রহস্য জড় খুললাে, সত্য থেকে সন্দেহ দূরীভূত হয়ে গেলাে। গাঙ্গুহী, ওহাবী, দেওবন্দী, দেহলভী এবং প্রত্যেক বেয়াদব, অসভ্য গোঁয়ার, জঙ্গলী সব মিলে এমন একটি প্রমাণ উপস্থাপন করুক, যার দাবী অকাট্য এবং মর্মার্থ নিশ্চিত ও প্রমাণ মজবুত প্রমাণিত হয়। যেমন কুরআনের আয়াত ও মুতাওয়াতির। হাদীস, যা নিশ্চিত অকাট্য ও শক্তিশালী বর্ণনা দ্বারা প্রমাণ করবে যে, অবতরণ 

বস্তুর পরিবেষ্টন হতে পারে। কেননা, সসীম অসীমকে বেষ্টন করা অসম্ভব। সুতরাং আল্লাহর জাত ও সিফাত সম্পর্কে হুজুর (ﷺ)-এর নতুন জ্ঞানসমূহ সর্বদা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। কিন্তু তা কখনাে আল্লাহর সত্ত্বা পর্যন্ত পৌছতে পারবে না এবং কখনাে তাঁকে বেষ্টন করতে পারবেনা। বরং জ্ঞান অর্জন সব সময় সসীম এবং সব সময়ই অবশিষ্ট থেকে যাবে। 



সমাপ্তির পরে কোন ঘটনা রাসুলের নিকট গােপন থেকেছে, প্রকৃত পক্ষে তিনি যা জানেনও নি। এটা নয় যে, হুজুর(ﷺ) জ্ঞাত হয়েছেন কিন্তু বলেননি। কেননা, হুজুরের নিকট এমন জ্ঞানও রয়েছে, তাঁকে গােপন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলাে। অথবা জ্ঞান ছিলাে কোন সময় তাতে সাময়িক বিস্মৃতি এসেছে যে, তাঁর পবিত্র। হৃদয় কোন গুরুত্বপূর্ণ কর্মে মশগুল ছিলাে। স্মৃতিতে না আসা, জ্ঞান না থাকা নয়। বরং প্রথমে জ্ঞান থাকাই অপরিহার্য। যেমন বােধসম্পন্নদের নিকট একথা অজানা 

নয়। হাঁ! হাঁ, আপনারা এমন কিছু দলীল পেশ করুন যদি সত্যবাদী হন, যদি * পেশ করতে না পারেন, আমরা বলছি পারবেনইনা। তাহলে জেনে রাখুন, আল্লাহ। 

ধােকাবাজদের প্রতারণাকে সফল করেন না।



রাসুলেপাক(ﷺ)-এর মর্যাদায় গাঙ্গুহীর আক্রোশঃ



যুগের অদ্ভুত ব্যক্তি উল্লিখিত গাঙ্গুহী সাহেব রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞানের ফজিলত অর্জিত হওয়াকে আক্ৰায়েদের বিষয় বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন যেন বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীস সমূহ খন্ডন করতে পারেন। যেমন পূর্বে গত হয়েছে। আর যখন রাসুলে পাক (ﷺ) এর জ্ঞানের অস্বীকার এসেছে, তখন তা ফজিলতের - বিষয় আখ্যা দিয়েছেন যেখানে দুর্বল হাদীসও গ্রহণযোগ্য হয়ে যায়। এমন কি তাতে পরিত্যাক্ত রেওয়ায়েত থেকেও সনদ গ্রহণ করেছেন। যে সম্পর্কে ইমামগণ সুস্পষ্ট মতামত পেশ করেছেন যে, এগুলাে ভিত্তিহীন। যেমন এ রেওয়ায়েত-“এ দেওয়ালের পেছনের অবস্থাও আমার জানা নেই। সুতরাং প্রার্থনা, হে মুসলমানগণ! এদের উদ্দেশ্যে অন্যরূপ। তাদের অন্তর রাসুলে পাক (ﷺ)-এর ‘মর্যাদায় কঠোর ও ক্রোধান্বিত। সুতরাং তা প্রমাণের জন্য বুখারী-মুসলিমের . হাদীসও স্বীকার করেন। কিন্তু এর খন্ডনের জন্য ভিত্তিহীন, বানােয়াট, পরিত্যক্ত ও মিথ্যার আশ্রয় নিতে কসুর করেনা। ইসলাম কি এমন হতে পারে? কখনই 

শপথ! এ গৃহের (কাবা শরীফ) অধিপতির এবং এটা আপনাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, এ গ্রন্থ খলীল আহমদ আম্বেটবীর লিখিত, যিনি এ বছর হজ্জে এসেছেন। তার উস্তাদ রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী এর উপর অভিমত দিয়েছেন এবং এর প্রত্যেকটি অক্ষর বিশুদ্ধ বলে রায় প্রদান করেছেন।


রশীদ আহমদ ও খলীল আহমদ সম্পর্কে ওলামায়ে মক্কার কুফরী ফতােয়া প্রদানঃ 


আর আমাদের সরদার হারমাইন শরীফাইনের ওলামা কেরাম তা খন্ডন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁদের সম্মান বৃদ্ধি করুক, তাদের তাওফীক দান করুন, যেন দ্বীনের পরিব্যাপ্তিকে রক্ষা করেন, পথভ্রষ্টদের শাস্তি প্রদান করেন। 

হযরত মাওলানা মুহাম্মদ সালিহ ইবনে মরহুম ছিদ্দীক কামাল হানফী, 

সেসময়ে তিনি হানাফী মুফতীর দায়িত্বে ছিলেন, তাকদীসুল ওয়াকীল আন 

তাওহীনির রাশীদ ওয়াল খলিল’ গ্রন্থের অভিমতে যা তিনি এ দু’টির খন্ডন ও তাদের শাস্তি সম্পর্কে রচনা করেছেন তাতে বরাহীনে কাতেয়ার’ গ্রন্থকার, তার সহযােগী এবং অভিমত প্রদানকারী সবার ব্যাপারে সে হুকুম, যা জিন্দিকদের। (মুনাফিকদের) বলে মন্তব্য করেছেন। ' 

আমাদের সরদার শেখুল ওলামা মাওলানা মুহাম্মদ সাঈদ সাবলীল মুফতীয়ে। শাফেয়ী মক্কী বলেছেন-বরাহীনে কাতিয়ার গ্রন্থকার ও তার সহযােগীরা শয়তানের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ এবং পথভ্রষ্ট ও জিন্দিক; যদিও নিশ্চিত কাফির। 

তদানীন্তন মালেকী মাযহাবের মুফতী মাওলানা মুহাম্মদ আবিদ ইবনে মরহুম শেখ হােসাইনী ‘বরাহীনে কৃাতেয়ার’ খন্ডনকারীদের প্রশংসা করেছেন এবং তাকে ফিতনা সৃষ্টিকারী ও ভ্রান্ত বলেছেন। হাম্বলী মাযহাবের মুফতী মাওলানা খালফ ইবনে ইব্রাহীম বলেছেন, ‘বরাহীনে কৃাতেয়ার’ গ্রন্থকার ও তার সহযােগীদের খন্ডনকারীদের জবাব বিশুদ্ধ 

ও সত্য, যাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। আর মদীনা শরীফের হানাফী মাযহাবের মুফতী মাওলানা ওসমান ইবনে। আবদুস সালাম দাগিসতানী বলেন, বরাহীনে কৃাতিয়ার খন্ডনে লিখিত কিতাবটি আমি পাঠ করেছি। তারা জনশূন্য সন্দেহপূর্ণ ময়দানে পানির ধােকা দেখছে এবং স্বীয় কটুক্তিসমূহ আবিষ্কারকদের মুখতার উপর দলীল কায়েম করছে। আমার প্রাণের শপথ বারাহীনে কাতেয়ার’ গ্রন্থকার ভ্রষ্টতার কুন্ডে ঘুরাফেরা করছে। সেব্যক্তি আল্লাহ ও ফিরিস্তা আজরাইল-এর পক্ষ থেকে শাস্তির উপযােগী।  সৈয়দ জলীল মুহাম্মদ আলী ইবনে সৈয়দ জাহির বিতরী হানাফী মাদানী বলেছেন, ‘খন্ডনকারী ‘বারাহীনে কাতেয়া-র গ্রন্থকার ও তার ভ্রষ্ট সহযােগীদের থেকে যা বর্ণনা করেছেন তা সুস্পষ্ট কুফর ও বিধর্মীদের স্বভাব।



                 গাঙ্গুহীর কতেক ভ্রান্ত ধারনা


 কেনইবা হবেনা ! ঐ কিতাবকে খলীল আহমদের দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে এবং তা তিনি তার উস্তাদ রশিদ আহমদ গাঙ্গুহীর নির্দেশক্রমে লিপিবদ্ধ। করেছেন। তাতে আমাদের পবিত্রতম প্রতিপালক মিথ্যা বলতে পারেন বলে ফতােয়া দেয়া হয়েছে। (দেখুন তার কিতাবের ৩ পৃষ্ঠা) আর আমাদের প্রিয় নবী(ﷺ) সম্পর্কে বলেছেন-“তার জ্ঞান অভিশপ্ত শয়তান থেকে কম।(দেখুন ১৪৭ পৃঃ)

আর রাসুলে পাক (ﷺ)-এর মীলাদ ও বেলাদত শরীফের সময় কিয়াম করাকে এর ন্যায় বলে, যা হিন্দুস্থানের মুশরিকরা স্বীয় আবিষ্কৃত ভ্রান্ত ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্য করে থাকে যে, যখন তার জন্মাষ্টমীর দিন আসে তখন একজন মহিলাকে পূর্ণ গর্ভিতার ন্যায় সজ্জিত করে, অতঃপর জন্মের মুহুর্তের অবস্থাকে হুবহু বর্ণনা করে। তখন তারা খুব বিরক্তিবােধ ও মুহুর্তে মুহুর্তে করতালী, কাতচিত ও ছটফট করতে থাকে। অতঃপর এর নীচ থেকে একটি শিশুর প্রতিমা বের করে, নাচ-গান, আনন্দ-ফুর্তি, গান-বাজনা ও তালি বাজায়। তাছাড়া আরাে নিকৃষ্ট কৌতুক করে বেড়ায় অথচ (এ সাধু) মীলাদুন্নী (ﷺ) সম্মেলনকে এর সাথে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন- বরং এটা মুশরিকদের চেয়েও নিকৃষ্টতম কর্ম। কেননা, তারা এর জন্য একটি তারিখ নির্দিষ্ট করে। আর এরা তাও করেনা বরং যখন ইচ্ছে অশ্লীল কথন করে'।(দেখুন ১৪১ পৃঃ

আর আহলে সুন্নাত যখন তাদের সামনে ওলামায়ে হেরমাঈন শরীফাইনের উদ্ধৃতি দিলেন যে, তাঁরা নিজেরাই {মিলাদুন্নবী (ﷺ)-এর} মজলিশ করেন এবং এ মর্যাদাপূর্ণ কর্ম মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে বারংবার অগণিত ফতােয়া লিখে আসছেন, তখন ঐ গ্রন্থকার তাদের দুর্নাম ও ত্রুটি বের করতে তাদের ঈমান ও বিশ্বস্ততা সম্পর্কে সমালােচনা আরম্ভ করে এবং স্বীয় নগর দেওবন্দের ওহাবীদেরকে দ্বীন ও বিশ্বস্ততায় তাদের চাইতে শ্রেয়তর বলতে শুরু করে। যেমন ১৭-১৮ পৃষ্ঠায় বলেনঃ “ওলামায়ে দেওবন্দের যা অবস্থা সবই স্পষ্ট আর সামান্যও দুরে নয়। নামাজ জমাআত সহকারে আদায় করেন, অসৎ কর্মে বাধা প্রদান যতটুকু সম্ভব করে থাকেন, আর ফতােয়া লিখার সময় ধনী-দরিদ্রের সঠিক উত্তর প্রদান করেন। তাদের ত্রুটির উপর কেউ যদি সাবধান করে দেয় তা বিনাবাক্যে মেনে নেন। এটা আল্লাহর নিকট গ্রহণযােগ্যতার নিদর্শন, যেকোন বিবেকবান মুসলমানই তা স্বচক্ষে দেখতে পারেন। অন্যদিকে মক্কা শরীফের ওলামা কেরামদের যিনি আকল ও জ্ঞান দ্বারা প্রত্যক্ষ করেছেন, তিনি খুব ভাল করেই জানেন, আর যারা যানেননি, তারা নির্ভরযােগ্য বর্ণনা দ্বারা প্রত্যক্ষ করার ন্যায়ই জানেন যে, সেখানকার অধিকাংশ আলিম (অবশ্যই সবাই নন, বহু পরহেজগারও রয়েছেন। এ অবস্থায় যে, (১) তাদের পােষাক শরীয়ত সম্মত নয়। (২) দাঁড়ি অধিকাংশের একমুষ্টি থেকে কম (৩) নামাজের প্রতি উদাসীন (৪) শক্তি থাকা সত্ত্বেও সৎ কর্মের আদেশের তাগীদ শূন্য (৫) অধিকাংশ শরীয়ত পরিপন্থী আংটি - পরিহিত (৬) বিভিন্ন ধরণের ফ্যাশনের শােভা, আর (৭) ফতােয়া দানের ক্ষেত্রে নগদ দিয়ে যা ইচ্ছা লিখে নিতে পারবেন। যদি তাদের এ ত্রুটিগুলাে কেউ দেখিয়ে দেয়, তাহলে তাকে উত্তম মধ্যম দেয়ার জন্য ওরা তৈরী হয়ে যান। স্বয়ং শেখুল ওলামা (আল্লামা সৈয়দ আহমদ যিনী দাহলান (رحمة الله), শেখুল হিন্দ মাওলানা রাহমাতুল্লাহর সাথে যে কর্ম করেছেন তা কারাে নিকট গােপন নয়। বুগদাদী রাফেযী থেকে কিছু টাকা নিয়ে আবু তালিবকে মুমিন লিখে দিয়েছেন, যা বিশুদ্ধ হাদীসসমূহের বিপরীত। সুতরাং আর কতই লিখবাে, যা অনেক দীর্ঘ। ওলামায়ে হারামাঈনের দোষত্রুটিসমূহ লিখতে লজ্জাও লাগে। কিন্তু অক্ষম হয়ে লিখতে হচ্ছে। তাদের ওলামায়ে কিরামদের মধ্যে ফ্যাসাদ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর অবাধ্যতা চরম আকার ধারণ করছে। এমনকি তিনি ২০ পৃষ্ঠায় লিখেছেঃ “এ নগণ্য বান্দা মসজিদে মক্কায়। আসর নামাজের পর ওয়াজকারী এক অন্ধ আলেমের নিকট মীলাদ মাহফিলের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বললেন, বিদআত, হারাম। তখন অন্ধ বক্তাকে পছন্দ হলাে। কেননা, সে মীলাদ বর্ণনাকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছে।” অতএব, সে হিদায়তের পরিবর্তে অজ্ঞতা ও অন্ধতাকে পছন্দ করেছে। আমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি যেন তিনি আমাদের ধ্বংস থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের নবী মুহাম্মদ (ﷺ) তার বংশধর এবং সাহাবাদের উপর দরুদ প্রেরণ করুন। আমীন। 


ষষ্ঠ নজর


পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞান সম্পর্কিত বিশদ আলােচনাঃ


 আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, এমন কতেক লােক রয়েছে যারা নসের’ অর্থসমূহ এবং ব্যাপকতা ও নির্দিষ্টতার স্থানসমূহ জানে না, তারাও বলতে লাগলাে আপনি স্বীয় নবীয়ে করিম (ﷺ)-এর জন্য আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্তের সকল বর্তমান ও ভবিষ্যতের জ্ঞান স্থির করেছেন, যাতে এ পঞ্চবস্তুও অন্তর্ভূক্ত হলাে, যেগুলাের 



জ্ঞান আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কেউ জানেন না। অতঃপর তা আল্লাহর সাথে খাস হওয়া কোথায় গেলাে?' 

'এক না, আমি বলছি, হে লােক! তুমি কত শীঘ্রই ভুলে বসেছাে! আমি কি তােমার মনে মনে বলছি যে, এটি আল্লাহর জন্য (নির্ধারিত) স্বীয় সত্তাগত জ্ঞানের এবং তা আল্লাহর সকল জ্ঞানকে পরিবেষ্টন করে আছে? প্রদত্ত জ্ঞানতাে আল্লাহ। তায়ালার স্থির করা ও তাঁর ইরশাদ করার দ্বারা তাঁর বান্দার জন্য প্রমাণিত। তুমি কি জাননা যে, যা সংঘটিত হয়েছে আর যা সংঘটিত হবে-এ সবের জ্ঞান আমি রাসুলে পাক(ﷺ)-এর জন্য নিজ পক্ষ থেকে স্থির করিনি, বরং আল্লাহই তা। প্রমাণিত করেছেন এবং মুহাম্মদ (ﷺ) ও সাহাবায়ে কিরামই প্রমাণ করেছেন; এরপরের সকল ইমামই-এটা প্রমাণ করেছেন। যেমন কুরআনের অনেক আয়াত, হাদীস, সাহাবী ও ওলামায়ে কিরামের বক্তব্য আমি বর্ণনা করে এসেছি। সুতরাং ঘটনা কোন্ দিকে প্রবাহিত হচ্ছে (কোথায় ফিরে যাচ্ছে), কি হয়েছে তােমাদের! কি হুকুম প্রয়ােগ করছাে! তােমরা কি আল্লাহর আয়াতের মধ্যে কতেককে। কতেক দ্বারা খণ্ডন করছাে? অথচ তোমরা কুরআন পাঠ করাে। তােমাদের কি বােধশক্তি (আকল) নেই? তােমরা কি শুনােনি যা আমি তােমাদের শুনিয়েছি যে, আল্লাহ তায়ালা এমনভাবে নফী (অস্বীকার) করেছেন যা স্থানচ্যুত হবার নয়; আবার এমনভাবে প্রমাণ করেছেন যা অস্বীকার করা সম্ভব নয়; (বরং) উভয়ের মধ্যে সমতা বিধান অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। অথচ তােমরা সমতার নিয়মাবলী সম্পর্কে যেন কানে অলংকার ঠেসে রেখেছাে! যেন তােমরা কান লাগিয়ে রাখছে। কিন্তু শুনছাে না। দৃষ্টি নিক্ষেপ করছাে অথচ দেখছাে না। এমন যদি তােমরা বলাে যে, আল্লাহ পাঁচটি বস্তুকে গুণে নিয়েছেন এবং নির্দিষ্টভাবে এগুলােরই বর্ণনা করেছেন, তাহলে অবশ্যই এগুলাে ব্যতীত অন্যান্যগুলি আল্লাহর সাথে খাস হওয়ার মধ্যে অতিরিক্ত হবে। আর যদি আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান অন্যান্য অদৃশ্য জ্ঞানাবলীতেও জারী হয়, তাহলে তাতে এর খাস হওয়ার বিশেষত্ব বাতিল হয়ে। যায়। এখন এটাও অন্যান্য গায়েবের ন্যায় হয়ে গেলাে যে, বলার দ্বারা জানা হয়ে। যায়। এ আমি বলছি, প্রথমতঃ অবকাশ দাও এবং শীঘ্রই নিজকে রক্ষা করাে। কেননা, দ্রুততা অনিশ্চয়তা ও ত্রুটির দিকে টেনে নেয়। যদি মুনাজারার পদ্ধতিতে ১ আলােচনা করতে চাও, তাহলে এ দাবী তােমরা কোথায় থেকে আবিষ্কার করেছে যে, এ খাস হওয়াতে তাঁর কোন বিশেষত্ব রয়েছে।

 ২ আয়াতে তাে এভাবেই রয়েছে। “নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন, জানেন যা মাতৃগর্ভে রয়েছে এবং কেউ জানেনা সে আগামীকাল কি করবে, আর না কেউ জানে যে, সে কোথায় মৃত্যুবরণ করবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ জ্ঞানময় ও সংবাদদাতা। সুতরাং এ আয়াতে এর বর্ণনা কোথায় যে, এ পঞ্চজ্ঞানের সবই আল্লাহর সাথেই খাস? খাস হওয়াতে অধিকতর জোরও কোথায় রয়েছে? তুমি কি দেখছােনা যে এ পাঁচটির মধ্যে কোন বস্তু এমনও যাতে বিশিষ্টতার প্রমাণ করে। এমন কিছু নাই। যেমন আল্লাহ তায়ালার এ ইরশাদ-“তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন” এবং আল্লাহর বাণী-“গর্ভাশয়ে যা কিছু রয়েছে তিনি সবই জানেন।




প্রশংসার স্থলে শর্তহীনভাবে খাস করা অপরিহার্য নয়ঃ



আমরা স্বীকার করিনা যে, শুধুমাত্র প্রশংসামূলকভাবে উল্লেখ করার দ্বারা খাস করাকে শর্তহীনভাবে আবশ্যক করে দেয়। অথচ আল্লাহ তায়ালা দৃষ্টি, কর্ণ ও জ্ঞান দ্বারা স্বীয় সত্ত্বার প্রশংসা করেছেন। আবার এগুলাে দ্বারা স্বীয় বান্দাদেরও 


(১) যে ব্যক্তি আমার উক্তিকে মুনাজারার পদ্ধতিতে চিন্তা ভাবনা করেনি, সে যা ইচ্ছে চিৎকার করতে পারবে। কেননা, এটা তার বক্তব্য যা শেষ পর্যন্ত পৌঁছেনি। অতঃপর চরম দুঃসাহসিকতা তার এ মিথ্যা দাবী যে, নবী করীম (ﷺ) এ আয়াতে করীমা দ্বারা হাছর (বিশিষ্টতা) বুঝিয়েছেন কিন্তু রাসুলে পাক(ﷺ) এটা তােমাদের কবে সংবাদ দিয়েছেন এ হুকুম প্রয়ােগ করা হুজুর(ﷺ)-এর উপর বড় অত্যাচার এবং মহাভ্রান্তি। বরং হুজুরﷺ, (গায়বের চাবিকাঠি) কে এই পাঁচটি দ্বারা তাফসীর করেছেন এবং এ আয়াতে করীমা। দ্বারা এর ব্যাখ্যা করেছেন। সুতরাং এখান থেকেই হাসর (বিশিষ্টতা) এসেছে। অতঃপর বিস্ময়ের ব্যাপার হলাে, সে ধারণা করেছে যে, এ দ্বিতীয় আয়াতই لا يعلمها الا هو (তারা জানে না আল্লাহ ব্যতীত) হাদীস সম্পৃক্ত করার দ্বারা বিশিষ্টতার (হাসর) নির্দেশ করছে। সুতরাং, আল্লাহরই জন্য পবিত্রতা। ঐ (অদ্ভুত) ব্যক্তির কথাকে যথেষ্ট মনে করবেন না, যতক্ষণ না আল্লাহর বাণী لا يعلمها الا هو ‘তিনি ব্যতীত কেউ জানেন’ -এর সাথে রাসুলে পাকের হাদীস لا يعلمهن الا هو তিনি ব্যতীত তারা জানেন না। মিলিয়ে দেখেন। অতঃপর আমার উপর অপবাদ যে, আমি নাকি দাবী করেছি দ্বিতীয় আয়াতে করীমা বিশিষ্টতা নির্দেশক নয়। অথচ আমার পুস্তিকা আপনাদের চক্ষুর সম্মুখে, যাতে উল্লিখিত এ আয়াতে করীমা সম্পর্কে কোন বর্ণনা নেই। তাতে শুধুমাত্র প্রথম আয়াতের উপরই আলােচনা করেছি। আর তাও মুনাজিরার রূপে, যেমন আপনারা। দেখেছেন। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।' 





প্রশংসা করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-“তিনি তােমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন কান, চক্ষু ও অন্তরসমূহ। হযরত মুসা (عليه السلام) এর বাণীও এ পর্যায়ের-আমার প্রতিপালক প্রতারিত হন আর নবীগণও প্রতারণা থেকে মুক্ত! হে আমার সম্প্রদায় আমার মধ্যে কোন ভ্রষ্টতা নেই। | আর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-“নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অনুপরিমাণও যুলুম করেন না। আর আম্বিয়া (عليه السلام)ও যুলুম থেকে পবিত্র। আল্লাহ তায়ালা আরাে বলেন-“আমার অঙ্গীকার জালিমদের কাছে পৌছেনা”। 




সংখ্যা অতিরিক্তকে অস্বীকার করে নাঃ


দ্বিতীয়তঃ ধরুন, আমি স্বীকার করে নিলাম কিন্তু তাতে পাঁচের এমন বিশেষত্ব কোথায় যে, আল্লাহ তায়ালা অবগত করার পরেও এর দিকে কোন পন্থা অবশিষ্ট নেই? কেননা, যদি এমনটি হয়, তাহলে তা মাফহুমুল লক্ব বা শিরােনাম ভিত্তিতে দলীল গ্রহণের ন্যায় হবে, (অর্থাৎ কতেক বস্তুর নাম উল্লেখ করে যে হুকুম বর্ণনা করা হয়, তা এরই প্রমাণ করা যে, ঐ হুকুম অন্য কিছুতে প্রযােজ্য হবে না।) অথচ তা বাতিল। উসুল শাস্ত্রে তা বাতিল হওয়ার উপর প্রমাণ স্থির হয়েছে। কেননা, আয়াতে ‘পাচ’ শব্দের কোন উল্লেখও নেই যা। বােধগম্য সংখ্যা ও হাদীসের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। সুতরাং যে অবস্থায়ই হােক। না কেন ‘পাঁচ’ শব্দের ব্যবহার এসে থাকে। যদিও তাতে মর্মার্থ তাই যা আমি বর্ণনা করেছি যে, হাদীসে আহাদ’ আক্বীদার মাসআলায় বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে উপকারী ও বিশুদ্ধ। আমরা স্বীকার করি না ১ যে, এমন স্থানের উদাহরণসমূহে কোন সংখ্যার উল্লেখ অতিরিক্ততাকে অস্বীকার করে। 

(১) অতঃপর আমি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ইরশাদুসসারীর’ সুরা রা’দের তাফসীর। * দেখেছি। যার বক্তব্য হলাে- আয়াতে পচের কথাই বর্ণনা করেছেন, যদিও গায়ব অসীম। 

কেননা, সংখ্যা অতিরিক্ত হওয়াকে অস্বীকার করেনা অথবা এ জন্য যে, কাফেরেরা তা জানার দৃঢ় প্রত্যয় করছিলাে। আর এর শব্দাবলী সুরা আনআমে’ এভাবে যে, তারা তাঁর জ্ঞানের (মিথ্যা) দাবী করছিলাে। আর ‘উমদাতুল কারীর বাবুল ঈমানে রয়েছে- বলা হলাে এ পাঁচটিতে সীমাবদ্ধ তার কারণ কি? অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা, এমন বিষয় অনেক রয়েছে। জবাব দেয়া হলাে এ কারণে যে, কাফেররা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) থেকে এ পাঁচটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাে। তাই তাদের জবাবে এ আয়াত অবতীর্ণ হলাে অথবা

 তুমি কি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর ঐ ইরশাদ শুনােনি-“আমাকে পাঁচটি এমন বিষয়ের জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কাউকে প্রদান করা হয়নি।” 

অথচ, রাসুলে করীম(ﷺ)-এর এমন অনেক প্রদত্ত বিশেষত্ব রয়েছে যা গণনা। করা অসম্ভব। হাদীসের অন্য বর্ণনায় এভাবেই এসেছে-“আমাকে অন্যান্য নবীর উপর ছয়টি কারণে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা হয়েছে।” এমতাবস্থায় পাঁচ ছয়কে নিষেধ করবে, তখন উভয় হাদীসে দ্বন্দ্ব এসে যাবে। অতঃপর ঐ ফজিলতসমূহ গণনা। করার মধ্যে উক্ত হাদীসদ্বয় পরস্পর ভিন্ন। প্রতিটি হাদীসে ঐ উক্তিরই উল্লেখ আছে যা অন্যটির মধ্যে পাওয়া যায় না। সুতরাং যদি স্বীকার করা হয় যে, সংখ্যা দ্বারা হাছর বা বিশিষ্টতার উপর জোর বুঝানাে হয়, তাহলে বিশুদ্ধ হাদীসমূহ যা ইমামদের মতে গ্রহণযােগ্য ও সন্দেহমুক্ত সেগুলাের বিভিন্ন স্থানে একটি অপরটির বিপরীত ও পরস্পর পরস্পরকে অস্বীকার করবে। নগন্য বান্দা যে সকল হাদীস এ সম্পর্কে ব্যক্ত করেছি তা “আল-বাহসুল। ফাহিস আন তুরকে আহাদীসিল খাসায়েস” নামক পুস্তিকায় সন্নিবেশিত করেছি। ঐ হাদীসমূহে দু’থেকে দশ পর্যন্ত সংখ্যার উল্লেখ পেয়েছি, আর প্রত্যেকটিতে তাই রয়েছে যা অন্যটিতে নেই। আর বিশেষত্ব যা তাতে উল্লেখ আছে তা ত্রিশকেও অতিক্রম করেছে। সুতরাং কোথায় পাঁচ-ছয়! আর যে ‘জামে সগীর'-এর। পাদটীকা ও জামউল জাওয়ামি' গ্রন্থে তিন, চার ও পাঁচের পরিচ্ছেদ ও এর দৃষ্টান্ত সন্ধান করবে, সে নিশ্চিত হয়ে যাবে যে, এমন স্থানে (বিশেষত্বের ক্ষেত্রে) এ জন্য যে, অন্যান্য সব বিষয়সমূহ এ পাঁচটির দিকে প্রত্যাবর্ততি'। সুতরাং গবেষণা করাে। আমি বলছি, এ পাঁচটি ছাড়া অন্যান্য সব বিষয়কে এর দিকে ফিরানাের কোন অর্থ নেই। কেননা, আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাতের রহস্য তিনি ব্যতীত কেউ জানেন না। তিনি এ পাঁচটি থেকে কোনটির দিকে প্রত্যাবর্তন করেননি। যেমন তিনি এদিকেই স্বীয় উক্তি ফাইফহাম’ (অতএব চিন্তা করাে) দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন। আর এভাবে আল্লামা কুলানী (رحمة الله)-এর উক্তিতে রয়েছেঃ কাফেররা এ পাঁচটির পরিচয়ের ইতিকৃাদ রাখছিলাে এবং তারা এগুলাে জানার (মিথ্যা) দাবী করছিলাে। এতে কিয়ামত সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করার প্রতি সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে। কেননা, তারা এর প্রতি ঈমানই আনেনি। সুতরাং পরিচয় লাভের প্রশ্নই উঠেনা। এ সম্পর্কে উপকারী জবাব। হলাে তাই, যা আল্লাহ তায়ালা স্বীয় এ অধম বান্দার নিকট ইলকা (মনে মনে স্থিরকরণ)। করেছেন। যার বর্ণনা অতিসত্তর আসছে। 

এ পরি। 



সংখ্যা কোথাও প্রতিবন্ধকতার হুকুম করেনা। হয়তাে তােমরা একথা বলতে 

পারাে যে, এগুলাে স্পষ্ট কথা। কিন্তু এ পাঁচটিকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার * পেছনে কোন রহস্য থাকাই চাই। 



পাঁচকে নির্দিষ্ট করার রহস্যঃ


আমি আল্লাহর উপর নির্ভর করে বলছি, এতে চমত্যার রহস্য ও নিদর্শন রয়েছে, যা কতই না উন্নত, মহৎ ও সৌন্দর্যমণ্ডিত! 

তন্মধ্যে একটি সুক্ষ্ম বিষয় হলাে, ওহাবীরা স্বীয় হীন বুদ্ধিতে যা বুঝেছে, এটা তাদের উপর এর বিপরীত হুকুম প্রয়ােগ করে। আপনারা মনােযােগ সহকারে শ্রবণ করুন, যা আল্লাহ তায়ালা আমাকে ইলহাম করেছেন। জেনে নাও ১ যে, এ পাঁচটি ব্যতীত আরাে অনেক গায়ব রয়েছে। গত . এমনকি এ পাঁচের সব একক একত্রিত হয়েও অন্যান্য গায়বের এক সহস্রাংশেও পৌঁছতে পারবে না। আর আল্লাহ তায়ালা হলেন ‘গায়বেরও গায়ব’ তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁর প্রত্যেক গুণ অদৃশ্য। আখিরাত, বেহেস্ত-দোজখ,হিসাব-নিকাশ ও আমলনামা, হাশর-নশর ফেরেস্তাগণ এবং আমাদের প্রতিপালকের সৈনিক সবই গায়ব ও অদৃশ্য।

(১) এটা হলাে রব্বানী রহস্য, আল্লাহর হিকমত এবং দয়াময়ের ফুরুজ ও প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য যে, আল্লাহ তায়ালা এ বিখ্যাত কিতাবের গ্রন্থকারকে এ ‘পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানের হিকমত বর্ণনা ছাড়াও অনেক বেশী গায়ব এবং বিশেষ বিশেষ রহস্যাদি সম্পর্কে অবগত করেছেন। আল্লাহর জন্যই সৌন্দর্য। 

ইবনে মালেক স্বীয় গ্রন্থ ‘তালেয়া তাসহীলে’ বলেনঃ এবং আল্লাহর জ্ঞানসমূহ উপহার ও প্রদত্ত। এটা অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ তায়ালা পরবর্তীদের জন্য ঐ জ্ঞান উঠিয়ে রেখেছেন যা বুঝা অনেক পূর্ববর্তীদের জন্য কঠিন হয়েছে। আর ব্যাখ্যাসমূহের অভিজ্ঞদের জন্য এ আয়াত পাঠ করা কর্তব্য- 'যে রহমত আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে রেখেছেন এর প্রতিবন্ধক কেউ নেই। আর এ আয়াতও (এটা আল্লাহর অনুগ্রহ তিনি যাকে ইচ্ছে প্রদান করেন, আর আল্লাহ মহাঅনুগ্রহশীল। এটা লিখেছেন, ফকীর হামদান জুযায়েরী, মদীনা হামদানীয়া। এটা ঐ দ্বিতীয় টীকা যদ্বারা আমার কিতাবে অনুগ্রহ করেছেন পাশ্চাত্যের আল্লামা মাওলানা হামদান (رحمة الله)। আল্লাহ তায়ালা তাঁর কর্মসমূহ পূর্ণ করুন, আমীন। সকল প্রশংসা বিশ্ব নিয়ন্তার নিমিত্ত।



এ ছাড়া আরাে অনেক গায়ব (অদৃশ্য বস্তু) রয়েছে, যেগুলাের প্রকার কিংবা একক পর্যন্ত আমাদের জন্য গণনা করা অসম্ভব। বুঝা গেলাে, এসব কিছু কিংবা এর অধিকাংশ গায়ব হওয়া এ পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞান থেকেও অনেক বেশী (অদৃশ্য)। অথচ আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতে তা থেকে একটিরও বর্ণনা করেননি; শুধুমাত্র এ পাঁচটিই উল্লেখ করেছেন। এর সংখ্যা এ কারণে গণনা করেননি যে, এগুলাে অদৃশ্য ও গােপনীয়তার মধ্যে অধিকভাবে অন্তর্ভুক্ত। বরং ব্যাপার হলাে গণকদের সময় ছিলাে। আর কাফিরেরা তীর নিক্ষেপ, নক্ষত্র, কিয়াফাহ-আয়াফাহ, যজর। ইত্যাদি (ফাল) পাখী ও ফানুসসহ আরাে বহু ধরনের কুসংস্কারাচ্ছন্ন পাগলামী দ্বারা অদৃশ্য জ্ঞানের দাবীদার ছিলাে। আর তারা ঐ সব কারণে আমাদের উল্লিখিত তথা আল্লাহর জাত ও সিফাত (সত্ত্বা ও গুণাবলী) আখিরাত, ফেরেস্তা ইত্যাদির উপর যুক্তিসঙ্গত আলােচনারও ধার ধারতাে না। ধ্বংসের দিকে আহবানকারী সে সমস্ত বিষয়সমূহ দ্বারা সত্যিকার কোন কিছু বুঝার পন্থাও ছিলাে তারাতাে একথা বলছিলাে যে, বৃষ্টি কখন হবে, কোথায় হবে, গর্ভের বাচ্চা কন্যা না ছেলে এবং উপার্জন ও ব্যবসাসমূহের অবস্থা এবং তন্মধ্যে কার লাভ হবে আর কার লােকসান হবে; মুসাফির ঘরে ফিরে আসবে, না বিদেশে মৃত্যুবরণ করবে ইত্যাদি। সুতরাং এ চার বস্তুকে বিশেষভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এ অর্থের ভিত্তিতে যে, এ বস্তুসমূহের জ্ঞান যা তােমরা স্বীয় বাতিল বিষয় বা পন্থাসমূহ দ্বারা দাবী করাে, সেগুলাের জ্ঞানতাে সেই মহান বাদৃশাহর নিকটই। তাঁর প্রদত্ত জ্ঞান ছাড়া তা জানার কোন পথ নেই এবং তিনি এ চতুৰ্জ্জনের সাথে কিয়ামতের জ্ঞানকেও শামিল করে নিয়েছেন। কেননা, এটাও এ প্রকার জ্ঞানেরই অন্তর্ভূক্ত, যে সম্পর্কে তারা আলােচনা করতাে আর তা হলাে মৃত্যু। কেননা, তারা মানুষের মধ্য থেকে একজনের মৃত্যু সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করতাে আর কিয়ামত সকল পৃথিবীরবাসীরই মৃত্যু।

 

      নিঃসন্দেহে যারা জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী তারা জ্ঞাত আছেন যে, এ বিষয়ের ধারণায় নক্ষত্রসমূহের নির্দেশনা সুনির্দিষ্টতার চেয়ে সাধারণ ঘটনাবলীর ক্ষেত্রেই অধিক অনর্থক। কেননা, কোন একটি গৃহের ক্ষতি কিংবা এক ব্যক্তির মৃত্যু সম্পর্কে বলার জন্য তাদের কাছে এমন কোন পথ নেই, যাতে তারা স্বীয় ধারণায়ও দৃঢ় বিশ্বাস করতে পারে। এ কারণে যে, নক্ষত্রের দৃষ্টি ও সংযােগ, পরস্পর সম্পর্ক এবং প্রমাণসমূহ আলাদা আলাদা বিষয় বা ব্যাপারসমূহে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরস্পর বিপরীত হয়। বরং কারাে জন্ম কুষ্টি অথবা বয়সসূচীতে 





খুব কমই মতৈক্য হয় যে, যে নক্ষত্র কোন ঘরে বিদ্যমান হয় অথবা যা তার দিকে দেখছিলাে, তা শক্তি ও দুর্বলতার পরস্পর প্রতিবন্ধকতা থেকে শুন্য হয়।' সুতরাং যদি তা একদিক থেকে মন্দ আর অপরদিক থেকে ভালাে প্রমাণিত হয়। এবং তারা অনুমানের ঘােড়া দৌড়ায় এবং এক দিককে প্রধান্য দান করে, আর যে। দিকের দূরত্ব তাদের মতে ঝুকে পড়ে, তার উপর হুকুম প্রয়ােগ করে। কিন্তু পৃথিবীর সাধারণ পরিবর্তনের জন্য এখানে একটি স্থায়ী নিয়মই রয়েছে যা হচ্ছে কেরান আজম। অর্থাৎ উঁচু দু’টি নক্ষত্র যাহল ও মুশতারীর তিনটি অগ্নি বুরুজ হামল, আসদ ও কাউসের মধ্য থেকে কোন একটির প্রারম্ভে একত্রিত হওয়া যেমন হযরত নুহ (عليه السلام) এর মহাপ্লাবন সময় ছিলাে। বুঝা যায় যে, হিসাবের, ১ দ্বারা আসন্ন কেরান সম্পর্কে জানা যায় যে, তা কত বছর পর হবে, কি হবে এবং কক্ষের কোন্ স্থানে বরং কোন মুহুর্তে ১ হবে, কোন্ দিকে হবে এবং কতদিন থাকবে। আর এক নক্ষত্র অপরটি গােপন করে রাখবে নাকি উন্মুক্ত থাকবে ইত্যাদি। কেননা, নক্ষত্রতাে এক শক্ত হিসাবে বন্দী। এটা মহাপরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে।

(১) গণিত শাস্ত্রের হিসাব অনুযায়ী নিশ্চিত যে, যদি দুনিয়া বাকী থাকে তাহলে আসমানের নক্ষত্রের মহাসংযােগ (কেরানে আজম) ৫৮৪ হিজরীর পর আমাদের এ তারিখ থেকে ২৩ শে জিলক্বদ ১৮৭১ হিজরীর অর্ধরাত্রির সন্নিকটে হামলের (আসমানের প্রথম বুরুজের) তৃতীয় স্তরে সংঘটিত হবে। এ সব কিছু মধ্যবর্তী স্থানেই হবে। সুতরাং দুনিয়া যদি বাকী থাকে তবে ঐ জিলকূদের মহররম মাসের নিকটবর্তী অথবা ঐ সনের প্রথম দিকে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া অসম্ভব নয়। কেননা, নক্ষত্রের শুরু এ দু'য়ের মধ্যেই, যখন ঐ উভয়ের মধ্যকার হামলের দুরত্ব বাকী থাকে। আর নক্ষত্রের) শেষ এর পর যখন নক্ষত্রের মধ্যেকার দূরত্বপূর্ণ হয়ে যাবে। আল্লাহই অধিক জ্ঞানী। অতঃপর আমার ধারণা জন্মালাে যে, এ শতাব্দীর শেষভাগে সৈয়দুনা ইমাম মাহদী (عليه السلام) এর আবির্ভাবের কাল। আর এটাই আমার নিকট অগ্রগণ্য। আমি লিসানুল হাকায়েক সৈয়দুল মােকাশেফীন ইমাম শেখ আকবর (رحمة الله)-এর কিতাব ‘আদদোররুল মাকনুন ওয়াল জাওয়াহিরুল মাসউনে তাঁর বাণী দেখেছি, যখন কালের দুরত্ব বিছমিল্লাহর অক্ষরের উপর হবে, তখন ইমাম মাহদীর আবির্ভাব ঘটবে এবং রােজার পরে হাতীমে কাবায় বের হবেন, আমার পক্ষ থেকে তাঁকে সালাম জানাবেন।' কিন্তু যে হাদীসে রয়েছে- “দুনিয়ার বয়স সাত হাজার বছর, আমি এর পরবর্তী বছরে। ইমাম তারাবাণী এটা মু’জামে কাবীরে রেওয়ায়েত করেছেন। 




সুতরাং কিয়ামতের বর্ণনা দ্বারা সাবধান করা হয়েছে যে, যদি তাদের এ জ্ঞান সমূহের কোন হাকীকত থাকতাে যেমন তাদের ধারণা, তাহলে কোন এক ব্যক্তির মৃত্যু (সংবাদ) জানার দ্বারা তার কিয়ামতের জ্ঞান সহসা এসে যেতাে, কিন্তু তাদের সে জ্ঞান নেই। তারা কেবল অনুমানেই ঘােড়াই দৌড়ায়। অতঃপর এ পাঁচটিকে বিশেষভাবে বর্ণনা করার মধ্যে এ রহস্যই রয়েছে। আল্লাহ অধিক জ্ঞানময়, আর বিশুদ্ধ চিন্তা ভাবনায় আল্লাহরই জন্য প্রশংসা। এটা খুব দৃঢ়ভাবে। জেনে রেখাে যে, এটা ঐ সম্মানিত গৃহের (কাবাগৃহ) ফয়েজ ও দয়াল নবী (ﷺ) এর সাহায্যে এ সময় আনকোরা স্মৃতিতে ভেসে ওঠেছে।



আল্লাহর মধ্যে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বান্দার জ্ঞান অস্বীকারকে অপরিহার্য করে না; অনুরূপ ঐ জ্ঞান যা বান্দাকে প্রদান করা বিশুদ্ধঃ



আর ইমাম বায়হাকী দালায়েলুননবুয়তে দোহাক ইবনে জামাল যাহনী থেকে, তিনি রাসূলে পাক(ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন। রাসুলে পাক(ﷺ) ইরশাদ করেন- ‘আমি নিশ্চিত আশা রাখি যে, আমার উম্মত স্বীয় রবের পক্ষ থেকে বঞ্চিত হবেনা, এ থেকে যে, তাদের অর্ধ দিবসের দীর্ঘ সময় প্রদান করবেন। এ হাদিসটি ইমাম আহমদ, আবু দাউদ ও নঈম ইবনে হাম্মাদ, আবু হাতিম ও বায়হাকী বাস’গ্রন্থে, আর জিয়া জায়দ সনদ সহকারে সা'দ ইবনে আবী ওক্কাস  (رضي الله عنه) থেকে রেওয়াত বর্ণনা করেন। এ হাদীসেই রয়েছে, হযরত সাদ থেকে জিজ্ঞেস করা হলাে, অর্ধ দিবসের পরিমাণ কত? ইরশাদ করলেন, পাঁচশত বছর। বাস' গ্রন্থে ইমাম বায়হাকীর রেওয়ায়েত হযরত সালাবাহ  (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন- “আল্লাহ তায়ালা এ উম্মতের জন্য অর্ধ দিবস প্রদান ব্যতীত (কিয়ামত) সংঘটিত করবেন না। আমি বলবাে অসম্ভব নয় যে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) অর্ধ দিবসের অবকাশ চেয়েছেন, আর তাঁর প্রতিপালক তা পূর্ণ দিবস অথবা যা বৃদ্ধি করার ইচ্ছে প্রদান করেছেন। যেমন রাসুলে। খােদা (ﷺ) ইরশাদ করেন-“তােমাদের কখনাে যথেষ্ট করবেন না, যতক্ষণ না তােমাদের প্রতিপালক তিনহাজার অবতীর্ণ ফিরিস্তার মাধমে তােমাদের সাহায্য করবেন। আল্লাহ তায়ালা আরাে ইরশাদ করেছেন, যদি তােমরা সংযম প্রদর্শন করাে এবং মুত্তাকী হও তাহলে তােমাদের প্রতিপালক পাঁচ হাজার ফেরেস্তা দ্বারা তােমাদের সাহায্য করবেন।' সুতরাং নিশ্চয়ই হুজুর (ﷺ)-এর জন্য সময় বৃদ্ধি করেছেন। আল্লাহর জন্যই প্রশংসা। 

১। যখন বিশেষত্বের (স্থানে) এসেছে, তখন জমীর (এককের) দিকে প্রত্যাবর্তন 


তৃতীয়তঃ হাঁ! নবীয়ে করীম(ﷺ) ইরশাদ করেছেন-‘পাঁচটি বস্তু এমন। রয়েছে, যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেন না। আর আল্লাহ তায়ালা বলেন “আপনি বলুন, আসমান ও জমিনে কেউ অদৃশ্য জ্ঞান রাখেনা আল্লাহ ব্যতীত।” এখানে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বিশেষ পাঁচটি বস্তুর উল্লেখ করেছেন, আর আল্লাহ তায়ালা সাধারণভাবেই ঘােষনা দিয়েছেন। আর আমরা প্রত্যেক আয়াতেই বিশ্বাস করি। কেননা, খাস (নির্দিষ্ট) আম (ব্যাপক)কে অস্বীকার করে না। তাহলে ঐ পঞ্চন আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেনা।



আল্লাহ ছাড়া কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই।


আমি বলি, বরং আল্লাহ ছাড়া আর কেউ কিছুই জানেনা। হাকীকী অস্তিত্বও আল্লাহ ছাড়া আর কারাে নেই। আর নিশ্চয়ই নবীয়ে করীম (ﷺ) লবীদের এ প্রবাদকে আরবের সর্বাধিক সত্য প্রবাদ ঘােষণা করে বলেছেন-‘শুনে নাও! প্রত্যেক বস্তু আল্লাহ ব্যতীত হাকীকতহীন। আমাদের সাধারণ লােকের মধ্যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'-এর অর্থতাে এ যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। কিন্তু। বিশেষ লােকদের নিকট এর অর্থ-‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উদ্দেশ্য নেই। আর অতি বিশেষ লােকদের নিকট এর অর্থ হলাে-“আল্লাহ ছাড়া কিছুর অস্তিত্বই বিদ্যমান নেই। এ সবকটির মর্মার্থ বিশুদ্ধ। কিন্তু প্রথম অর্থেই ঈমানের নির্ভরতা, দ্বিতীয়টির উপর সংশােধনের নির্ভরতা এবং তৃতীয়টির উপর সুলুকের নির্ভরতা। আল্লাহর দিকে পৌছার নির্ভরতা হচ্ছে চতুর্থটির উপর। আল্লাহ তায়ালা 

আমাদের তাঁর ইহসান ও করুণা দ্বারা ঐ সব অর্থের পরিপূর্ণ স্বাদ প্রদান করুন। * আমীন! 



রাসুলের(ﷺ)শানে হযরত সাওয়াদ বিন কারিবের কবিতায় ওহাবীদের ভ্রান্ত ধারণা খন্ডনঃ


হযরত সাওয়াদ ইবনে কারিব  (رضي الله عنه) নবী করিম(ﷺ)-এর সম্মুখে এ পংক্তিগুলাে পাঠ করেছেন-“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আল্লাহ ব্যতীত কোন বস্তু নেই, আর নিঃসন্দেহে আপনি সকল অদৃশ্য জ্ঞানের রক্ষক। অবশ্যই আপনি পাক পবিত্র পিতা-মাতার সন্তান, শাফায়াতের ব্যাপারে সকল রাসুলদের থেকে নিকটতর। আপনি আমার জন্য সুপারিশকারী হয়ে যান, যেদিন আপনি ব্যতীত সওয়াদ ইবনে কারিবের জন্য কোন সুপারিশকারী উপকার করতে পারবে না”। 

মুসনাদে ইমাম আহমদে আমরা এ বর্ণনা পেয়েছি- “আল্লাহ ছাড়া আর কোন বস্তু নেই। যদিও অন্য বর্ণনায় এ কথা আছে যে-“তিনি ব্যতীত কোন রব নেই'। এটাই আমি বলছি, এখানেতাে হযরত সাওয়াদ  (رضي الله عنه) প্রথমতঃ আল্লাহ ছাড়া প্রত্যেক বস্তুর অস্তিত্বকেও অস্বীকার করেছেন। 

দ্বিতীয়তঃ আমাদের প্রিয় হাবীব (ﷺ)-এর জন্য সমস্ত গায়ব (অদৃশ্যজ্ঞান) প্রমাণিত করছেন। এমনকি হুজুর (ﷺ)কে সকল গায়বের ‘আমীন বা রক্ষক ভূষিত করেছেন। 

তৃতীয়তঃ এ কথায় বিশ্বাস করেছেন যে, আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) শাফায়াত প্রাপ্ত হয়েছেন। যেমন মুসলিম শরীফের হাদীস রাসুলে করীম(ﷺ) ইরশাদ। করেছেন-“আমাকে শাফায়াত প্রদান করা হয়েছে”। ওহাবীদের ন্যায় নয়, যারা - বলে, হুজুর (ﷺ)কে এখনাে শাফায়াত প্রদান করা হয়নি, কিয়ামত দিবসেই তার এটার (শাফায়াত) অনুমতি হাসিল হবে। এর দ্বারা তারা এটাই বলতে চায় যে, দুনিয়াতে রাসুল (ﷺ) থেকে ফরিয়াদ করা যাবেনা। কেননা, তিনি এখন শাফায়াতের শক্তি রাখেন না। আর আল্লাহ তায়ালার এ ইরশাদ, “আপনি আপনার নিকটাত্মীয় মুসলমান পুরুষ ও নারীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আর আল্লাহ তায়ালার এ বাণী-“যখন তারা স্বীয় আত্মার উপর যুলুম করবে, আর আপনার দরবারে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আর রাসুল যদি তাদের জন্য শাফায়াত করেন, তাহলে নিশ্চয়ই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও দয়াবানরূপে পাবেন। ওহাবীরা এ আয়াতসমূহ থেকে এমনভাবে পৃষ্ট প্রদর্শন করেছে যেন তারা কিছুই জানেনা। 

চতুর্থতঃ এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন যে, রাসুল সৈয়দে আলম(ﷺ)এর শাফায়াত সবচেয়ে নিকটবর্তী। এটা তারই বিপরীত যা তাদের পেশাওয়া ইসমাঈল দেহলভী ‘তাকৃবিয়াতুল ঈমানে’ বলেছে যে, আল্লাহ তায়ালা যখন কোন অনুতপ্ত ও তাওবাকারীর ক্ষমার জন্য ফন্দি করতে চাইবেন, তখন যাকে ইচ্ছে তাকে সুপারিশকারী নিয়ােগ করবেন। এতে কারাে বিশেষত্ব নেই। তিনি অনুতপ্ত তাওবাকারীর উল্লেখ এ জন্যই করেছেন যে, তার মতে শাফায়াত ঐ 


Top