২৯. আহকাম অধ্যায়, 


বাব নং ২২৮.১. 

২৯- كِتَابُ الْأَحْكَامِ

১- بَابٌ

٤٨٧- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـهَيْثَمِ، عَنِ الْـحَسَنِ، عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : يَا أَبَا ذَرٍّ! الْإِمْرَةُ أَمَانَةٌ، وَهِيَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خِزْيٌ وَنَدَامَةٌ، إِلَّا مَنْ أَخَذَهَا مِنْ حَقِّهَا، وَأَدَّى الَّذِيْ عَلَيْهِ، وَأَنَّىٰ ذَلِكَ.

وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنْ أَبِيْ غَسَّانَ، عَنِ الْـحَسَنِ، عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ ، عَنِ النَّبِيِّ ، قَالَ : الْإِمْرَةُ أَمَانَةٌ، وَهِيَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خِزْيٌ وَنَدَامَةٌ، إِلَّا مَنْ أَخَذَهَا مِنْ حَقِّهَا، وَأَدَّى الَّذِيْ عَلَيْهِ، وَأَنَّىٰ ذَلِكَ يَا أَبَا ذَرٍّ!.


৪৮৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হায়শাম থেকে, তিনি হাসান থেকে, তিনি আবু যর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, হে আবু যর! ইমারত তথা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হলো একটি আমানত এবং এটি কিয়ামত দিবসে হবে লাঞ্ছনা  ও অনুশোচনার কারণ। তবে (ঐ ব্যক্তির জন্য লাঞ্ছনা নয়) যে রাষ্ট্রের হক আদায় করে এবং তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে। এরূপ হয় কোথায়?


অন্য এক বর্ণনায় আবু গাসলান থেকে, তিনি হাসান থেকে, তিনি আবু যর (رضي الله عنه) থেকে, তিনি নবী করিম (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হুকুমত হলো আমানত। এটা কিয়ামতের দিন লাঞ্ছনা ও অনুশোচনার কারণ হবে। তবে যারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও হক আদায় করবে তারা ব্যতীত। হে আবু যর! এ দায়িত্ব সঠিকভাবে আদায় হয় কোথায়? 

(আল মুস্তাদরাক, ৪/১০৩/৭০২০)


ব্যাখ্যা: তাবরানী ও বাযযার বিশুদ্ধ সূত্রে আউফ ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন,

اولها ملامة وثانيها زرامة وثالثها عذاب يوم القيامة الا من عدل

“রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সূচনা হলো নিন্দা, দ্বিতীয় স্তরে হলো অপমান এবং তৃতীয় স্তরে হলো কিয়ামতের শাস্তি। তবে যে ন্যায়পরায়ণ হবে তিনি ব্যতীত।”  ২২৩

➥  তাবরানী (رحمة الله), আল মু’জামুল আওসাত, খন্ড ৭, পৃষ্ঠাঃ  ২৬, হাদীস নং ৬৭৪৭


মোটকথা রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে, অন্যায়,অত্যাচার করে এবং এর দ্বারা আনন্দ উল্লাস ও জৈবিক চাহিদা পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে তারা আমানতের খিয়ানত করে। কারণ এটিও একটি আমানত। এতে অসংখ্য লোকের অগণিত হক তাদের উপর থাকে। এগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করার সামর্থ খুবই কম রাষ্ট্র প্রধানের হয়ে থাকে। তাই নবী করিম (ﷺ)  বলেছেন, এরূপ পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পালন কোথায় হয়?


٤٨٨- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ، عَنِ النَّبِيِّ ، قَالَ : إِنَّ أَرْفَعَ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، إِمَامٌ عَادِلٌ.


৪৮৮. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আতিয়্যা থেকে, তিনি আবু সাঈদ (رضي الله عنه) থেকে, তিনি নবী করিম (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী হবে ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ। 

(মুসনাদে আবি ইয়ালা, ২/২৮৫/১০০৩)


ব্যাখ্যা: যালিম, অত্যাচারী ও নির্দয় বাদশাহর নিন্দা এবং ন্যায় বিচারক ও দয়ালু বাদশাহর প্রশংসায় অনেক বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এ সব হাদিসে ন্যায়পরায়ণ বাদশাহকে আল্লাহর ছায়া বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তার আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা প্রজাদের কর্তব্য।


٤٨٩- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـحَسَنِ بْنِ عُبَيْدِ اللهِ، عَنْ حَبِيْبِ بْنِ ثَابِتٍ، عَنْ أَبِيْهِ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : الْقُضَاةُ ثَلَاثَةٌ: قَاضِيَانِ فِي النَّارِ: قَاضٍ يَقْضِيْ فِي النَّاسِ بِغَيْرِ عِلْمٍ، وَيُوَكِّلُ بَعْضَهُمْ مَالَ بَعْضٍ، وَقَاضٍ يَتْرُكُ عَمَلَهُ وَيَقْضِيْ بِغَيْرِ الْـحَقِّ، فَهَذَانِ فِي النَّارِ، وَقَاضٍ يَقْضِيْ بِكِتَابِ اللهِ، فَهُوَ فِي الْـجَنَّةِ.


৪৮৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাসান ইবনে উবাইদুল্লাহ থেকে, তিনি হাবীব ইবনে আবু সাবিত থেকে, তিনি ইবনে বুরাইদা থেকে, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, বিচারকমন্ডলী তিন প্রকার। দু’প্রকারের বিচারক হবে জাহান্নামী। এক প্রকারের বিচারক হলেন যিনি ইলম ব্যতীত মানুষের মধ্যে ফায়সালা করবে এবং একজনের সম্পদ অন্যজনকে অন্যায়ভাবে ভোগের ব্যবস্থা করে দেবে। দ্বিতীয় প্রকারের বিচারক হলেন যিনি তার জ্ঞান ত্যাগ করে অন্যায় ভাবে বিচার করে। এ দু’প্রকার বিচারক জাহান্নামী হবে। আর একজন বিচারক যিনি আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী বিচার করবেন, তিনি হবেন জান্নাতী। 

(তিরমিযী, ৩/৬১২/১৩২২)


ব্যাখ্যা: আবু দাউদ, ইবনে মাজাহসহ অন্যান্য কিতাবেও এই হাদিস সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণিত হয়েছে। এসব হাদিসের সারমর্ম হলো, বিচারকের কুরআন-সুন্নাহর প্রচুর জ্ঞান থাকা দরকার। বিপুল জ্ঞানের মাধ্যমে অধিক সতর্কতার সহিত বিচারককে ফায়সালা করতে হবে। বিচার কার্য্যে ভুল হলে অনেকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। আর এটা বড় যুলুম ও অন্যায়। আর মূর্খ ব্যক্তি বিচারক হওয়া মারাত্মক অপরাধ। কারণ সে প্রতি মুহূর্তে ভুল ফায়সালা ও নির্বিঘ্নে অন্যায়,অত্যাচার করতে দ্বিধা-বোধ করবেনা। এদের জন্যই জাহান্নামের কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে। আর যারা ইলম অনুযায়ী কিতাবুল্লাহ ও সুন্নতে রাসূলের আলোকে ফায়সালা করে, তারা দুনিয়াতে সত্যিকারের খিলাফতের দায়িত্ব পালন করে থাকে। আর এরূপ বিচারক নিঃসন্দেহে জান্নাতী। 


٤٩٠- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَبْدِ الْـمَلِكِ، عَنْ أَبِيْ بَكْرَةٍ، أَنَّ أَبَاهُ كَتَبَ إِلَيْهِ، إِنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ  يَقُوْلُ : لَا يَقْضِيْ الْـحَاكِمُ وَهُوَ غَضْبَانِ.


৪৯০. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবদুল মালিক থেকে, তিনি আবু বাকরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা তার কাছে পত্র লিখেছেন যে, তিনি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছেন, কোন হাকিম যেন রাগান্বিত অবস্থায় ফায়সালা না দেয়। 

(মুসনাদে আহমদ, ৩৪/১৪/২০৩৭৯)


ব্যাখ্যা: বিচারকের জন্য অতীব প্রয়োজন যে, কোন বিষয়ে ফায়সালা দেয়ার সময় যেন তার মন-মেজাজ ও মানসিক ভারসাম্য সঠিক থাকে। কেননা ভারসাম্যহীন অবস্থায় ফায়সালা করলে অবশ্যই তার মতামত ও ফায়সালা ভুল হবে। ক্রোধের সময় মন মেজাজ থেকে ভারসাম্য বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাই এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত দেয়া নিষেধ। অনুরূপভাবে ফকীহগণও ফতোয়া দেওয়ার সময় তার মধ্যে এসব গুণাবলী থাকা প্রয়োজন। নতুবা ভুল ফতোয়া প্রদানের সম্ভাবনা থাকে বেশী। 


٤٩١- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ، قَالَ : رُفِعَ الْقَلَمُ، عَنْ ثَلَاثَةٍ: عَنِ الصَّبِيِّ حَتَّىٰ يَكْبُرَ، وَعَنِ الْـمَجْنُوْنِ حَتَّىٰ يُفِيْقَ، وعَنِ النَّائِمِ حَتَّىٰ يَسْتَيْقِظَ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : رُفِعَ الْقَلَمُ عَنِ الثَّلَاثَةِ: عَنِ النَّائِمِ حَتَّىٰ يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ الْـمَجْنُوْنِ حَتَّىٰ يُفِيْقَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّىٰ يَحْتَلِمَ.


৪৯১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে, তিনি আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে, তিনি নবী করিম (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তিন ব্যক্তি থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে (অর্থাৎ দ্বীনের দায়িত্ব থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছে)। 

এক. শিশু যতক্ষণ না সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়, 

দুই. পাগল যতক্ষণ না সে সুস্থ হয়, তিন. নিদ্রিত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়।


অন্য বর্ণনায় হাম্মাদ থেকে, তিনি সাঈদ ইবনে জুবাইর থেকে, তিনি হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন। তিন ব্যক্তি থেকে আমল লেখার কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। নিদ্রিত ব্যক্তি থেকে যতক্ষণ না জাগ্রত হবে, পাগল থেকে যতক্ষণ না সুস্থ হবে এবং শিশু থেকে যতক্ষণ না সে বালেগ হবে। 

(সুনানে নাসাঈ কুবরা, ৩/৩৬০/৫৬২৫)


ব্যাখ্যা: শরীয়তের বিধান পালন মূলত আকল বা জ্ঞান-বুদ্ধি ও বোধশক্তির উপর নির্ভর করে। উপরোলি­খিত তিন প্রকারের মানুষ এর থেকে বঞ্চিত। তাই এ অবস্থায় শরীয়তের বিধান পালন থেকে তারা মুক্ত। অন্যথায় সাধ্যের বাইরে কষ্ট দেওয়া আবশ্যক হবে যা আল্লাহ বান্দার উপর করেন না।


٤٩٢- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : الْـمُدَّعَىٰ عَلَيْهِ أَوْلَىٰ بِالْيَمِيْنِ إِذَا لَـمْ تَكُنْ بَيِّنَةٌ.


৪৯২. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা শা’বী থেকে, তিনি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, যখন বাদীর নিকট কোন দলীল প্রমাণ পাওয়া যাবে না, তখন বিবাদী থেকে শপথ গ্রহণ করা উত্তম। 

(মুসান্নিফে আব্দুর রাযযাক, ৮/২৭১/১৫১৮৪)


ব্যাখ্যা: ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) ওমর (رضي الله عنه) থেকে মারফু হাদিস বর্ণনা করেন,المدعى عليه اولى باليمين الا ان تقوم عليه البينة “বিবাদীর উপর শপথ উত্তম কিন্তু যখন বাদী সাক্ষী পেশ করবে তখন ব্যতিক্রম। অর্থাৎ তখন শপথ নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই।”  ২২৪

➥ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله), (৪৫৮ হি), সুনানে বায়হাকী, খন্ড ১০, পৃষ্ঠাঃ  ২৫৬, হাদীস নং ২১১০


❏ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে মারফু হাদিস বর্ণনা করেন,


ان رسول الله  قال لو يعطى الله بدعواهم لادعى رجال اموال قوم دمائهم ولكن البينة على المدعى واليمين على من انكر-


“রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা যদি কেবল মানুষের দাবীর উপর ফায়সালা দিতেন তাহলে মানুষ দাবী করে অন্য মানুষের ধন-দৌলত ছিনিয়ে নিত এবং তাদের রক্তমূল্য আদায় করতো। কিন্তু বাদীর উপর সাক্ষী আবশ্যক আর অস্বীকারকারীর উপর শপথ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।” 

(মুসলিম শরীফের ৪৩৫৬ নং হাদিসেও  অনুরূপ বর্ণিত আছে।)


বাদীর উপর সাক্ষী আবশ্যক হওয়ার কারণ হলো যদি কেবল দাবীদারের দাবীর ভিত্তিতে যদি সিদ্ধান্ত দেয়া হয় তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির জান মালের দাবী করে বসবে। তাই দাবীদারকে অবশ্যই তার দাবীর স্বপক্ষে সাক্ষী পেশ করতে হবে। আর বিবাদী যেহেতু অস্বীকারকারী তাই তাকে শপথ করতে হবে।


٤٩٣- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، أَنَّ رَجُلًا حَدَّثَهُ: أَنَّ الْأَشْعَثَ بْنَ قَيْسٍ اشْتَرَىٰ مِنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ  رَقِيْقًا، فَتَقَاضَاهُ عَبْدُ اللهِ، فَقَالَ الْأَشْعَثُ: ابْتَعْتُ بِعَشَرَةِ آلَافٍ، وَقَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْعُوْدٍ: بِعْتُ مِنْكَ بِعِشْرِيْنَ أَلْفًا، فَقَالَ: اجْعَلْ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ مَنْ شِئْتَ، فَقَالَ الْأَشْعَثُ: أَنْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ، فَقَالَ عَبْدُ اللهِ: أُخْبِرُكَ بِقَضَاءٍ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ، يَقُوْلُ : إِذَا اخْتَلَفَ الْبَيِّعَانِ فِي الثَّمَنِ وَلَـمْ يَكُنْ لَهُمَا بَيِّنَةٌ، وَالسِّلْعَةُ قَائِمَةٌ، فَالْقَوْلُ مَا قَالَ الْبَائِعُ أَوْ يَتَرَادَّانِ.


৪৯৩. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তাকে জনৈক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন যে, আশআস ইবনে কায়েস আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে একটি গোলাম ক্রয় করেন। ইবনে মাসউদ গোলামের মূল্য চাইলে আশআস বলেন, আমি আপনার থেকে দশ হাজার দিয়ে ক্রয় করেছি। ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, আমি বিশহাজার দিয়ে তোমার কাছে (গোলাম) বিক্রি করেছি। তুমি তোমার ইচ্ছেমত আমার আর তোমার মাঝে একজনকে বিচারক নির্ণয় কর। তখন আশআস বলেন, আপনিই আমাদের মধ্যে ফায়সালাকারী হোন। এতে ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, আমি তোমাকে এমন ফায়সালা সম্পর্কে সংবাদ দেবো, যা আমি রাসূল (ﷺ)  থেকে শুনেছি। তিনি বলেন, যদি ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে মূল্য নির্ধারণ নিয়ে ঝগড়া হয় এবং উভয়ের কাছে কোন সাক্ষী না থাকে কিন্তু বিক্রিত বস্তু বিদ্যমান থাকে, তাহলে বিক্রেতার কথাই গ্রহণযোগ্য হবে, অথবা সে ঐ বিক্রি ফিরিয়ে নেবে। 

(মুসনাদে আবি ইয়ালা, ৮/৩৯৯/৪৯৮৪)


٤٩٤- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْقَاسِمِ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ جَدِّهِ: أَنَّ الْأَشْعَثَ بْنَ قَيْسٍ اشْتَرَىٰ مِنَ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رَقِيْقًا مِنْ رَقِيْقِ الْإِمَارَةِ، فَتَقَاضَاهُ عَبْدُ اللهِ، فَاخْلَتَفَا فِيْهِ، فَقَالَ الْأَشْعَثُ: اشْتَرَيْتُ مِنْكَ بِعَشْرَةِ آلَافِ دِرْهَمٍ، وَقَالَ عَبْدُ اللهِ: بِعْتُكَ بِعِشْرِيْنَ أَلْفًا، فَقَالَ عَبْدُ اللهِ: اجْعَلْ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ رَجُلًا، فَقَالَ الْأَشْعَثُ: فَإِنِّيْ أَجْعَلُكَ بَيْنِيْ وَبَيْنَ نَفْسِكَ، قَالَ عَبْدُ اللهِ: فَإِنِّيْ سَأَقْضِيْ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ بِقَضَاءٍ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ، يَقُوْلُ : إِذَا اخْتَلَفَ الْبَائِعَانِ، فَالْقَوْلُ مَا قَالَ الْبَائِعُ، فَإِمَّا أَنْ يَرْضَى الْـمُشْتَرِيْ بِهِ، أَوْ يَتَرَادَّانِ الْبَيْعَ.

وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنِ الْقَاسِمِ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : إِذَا اخْتَلَفَ الْـمُتَبَايِعَانِ، وَالسِّلْعَةُ قَائِمَةٌ، فَالْقَوْلُ قَوْلُ الْبَائِعِ، أَوْ يَتَرَادَّانِ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنْ عَبْدِ اللهِ: أَنَّ الْأَشْعَثَ اشْتَرَىٰ مِنْهُ رَقِيْقًا، فَتَقَاضَاهُ وَاخْتَلَفَا، فَقَالَ عَبْدُ اللهِ: بِعِشْرِيْنَ أَلْفًا، وَقَالَ الْأَشْعَثُ: بِعَشْرَةِ آلَافٍ، فَقَالَ عَبْدُ اللهِ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ، يَقُوْلُ : إِذَا اخْتَلَفَا الْبَائِعَانِ، فَالْقَوْلُ قَوْلُ الْبَائِعِ أَوْ يَتَرَادَّانِ.


৪৯৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা কাসেম থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, আশআস ইবনে কায়েস (رضي الله عنه) ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে একটি গোলাম ক্রয় করেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) যখন মূল্য চাইলেন তখন উভয়ের মধ্যে (মূল্য নিয়ে) বিবাদ সৃষ্টি হলো। আশআস বলেন, আমি আপনার থেকে দশ হাজার দিরহাম দিয়ে ক্রয় করেছি। আর ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, বিশ হাজার দেরহামে তোমার নিকট বিক্রি করেছি। তখন আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন, তুমি তোমার ও আমার মধ্যে একজন ফায়সালাকারী নির্ধারণ কর। আশআস বলেন, আমি আমার ও আপনার মধ্যে আপনাকেই বিচারক নির্ধারণ করলাম। ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, তবে আমি আমার এবং তোমার মধ্যে এমন ফায়সালা করবো যা আমি রাসূল (ﷺ)  থেকে শুনেছি। তিনি বলেন, যখন ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে মতবিরোধ হয়, তখন বিক্রেতার কথাই গ্রহণযোগ্য। এরপর ক্রেতা বিক্রেতার কথায় সম্মত হতে পারে অথবা ক্রয় বাতিল করতে পারে।


অন্য বর্ণনায় কাসেম থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, যখন ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে মত বিরোধ হয় এবং বিক্রিত বস্তু উপস্থিত থাকে, তখন বিক্রেতার কথাই প্রাধান্য পাবে অথবা উভয়ে ক্রয় বিক্রয় ফিরিয়ে নেবে। 


আরেক রেওয়ায়েতে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, আশআস তার থেকে একটি গোলাম ক্রয় করেছে। তিনি মূল্য চাইলে উভয়ের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন, আমি বিশ হাজার দিয়ে তোমার নিকট বিক্রি করেছি আর আশআস বলে আমি দশহাজার দিয়ে ক্রয় করেছি। তখন ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, যখন ক্রেতা বিক্রেতার মাঝে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়, তখন বিক্রেতার কথাই গ্রহণযোগ্য হবে। অথবা উভয়ে তা বাতিল করবে। 

(প্রাগুক্ত)


٤٩٥- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، عَنِ النَّبِيِّ  أَنَّ رَجُلَيْنِ اخْتَصَمَا إِلَيْهِ فِيْ نَاقَةٍ، وَقَدْ أَقَامَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا بَيِّنَةً أَنَّهَا نُتِجَتْ عِنْدَهُ، فَقَضَىٰ بِهَا لِلَّذِيْ فِيْ يَدِهِ.


৪৯৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু যুবাইর থেকে, তিনি জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে, তিনি নবী করিম (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, দু’জন ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে একটি উট নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হলো। প্রত্যেকেই দাবী করতেছে যে, উটটি তার কাছেই জন্ম হয়েছে। উটটি যার অধিকারে ছিল তিনি তার পক্ষেই ফায়সালা করে দেন। 

(দারেকুতনী, ৪/২০৯/২১)


٤٩٦- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـهَيْثَمِ، عَنْ رَجُلٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ : اخْتَصَمَ رَجُلَانِ فِيْ نَاقَةٍ، كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا يُقِيْمُ الْبَيِّنَةَ أَنَّهَا نَاقَةٌ نَتَجَهَا، فَقَضَىٰ بِهَا النَّبِيُّ  لِلَّذِيْ فِيْ يَدِهِ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: أَنَّ رَجُلَيْنِ أَتَيَا رَسُوْلَ اللهِ  فِيْ نَاقَةٍ، فَأَقَامَ هَذَا الْبَيِّنَةَ أَنَّهُ نَتَجَهَا، وَأَقَامَ هَذَا الْبَيِّنَةَ أَنَّهُ نَتَجَهَا، فَجَعَلَهَا رَسُوْلُ اللهِ  لِلَّذِيْ فِيْ يَدِهِ.


৪৯৬. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হায়শাম থেকে, তিনি জনৈক ব্যক্তি থেকে, তিনি জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, দু’জন ব্যক্তি একটি উট নিয়ে মতবিরোধে লিপ্ত হলো। উভয়েই সাক্ষী প্রমাণ পেশ করল যে, উটটি তাদের কাছেই জন্ম হয়েছে। তখন উটটি যার কাছে ছিল রাসূল (ﷺ)  তার পক্ষেই ফায়সালা করে দেন।


অন্য এক বর্ণনায় আছে, দু’জন ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)  ’র কাছে এসে একটি উট নিয়ে বিবাদ করতে থাকে। একজন সাক্ষী পেশ করে যে, এ উট তার কাছেই জন্মেছে। অপরজনও সাক্ষী পেশ করে যে, এ উট তার কাছেই জন্মেছে। তখন রাসূল (ﷺ)  উটটি তাকেই প্রদান করেন, যার হাতে উটটি ছিল। 

(প্রাগুক্ত)



Top