বিষয় নং- ০৫: যে ব্যক্তি রমাদ্বানের শেষ দশদিন ই‘তিকাফ করবে, সে দুটি হজ্জ ও উমরার সাওয়াব লাভ করবে।
প্রচলিত কিছু ইসলামী পত্রিকায় উক্ত হাদিসটি কোন কিতাবে পাওয়া যায় না বলে জাল বলে উলেখ করেছেন। অপরদিকে আহলে হাদিসের ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী তার “সিলসিলাতুল আহাদিসুদ দ্বঈফাহ” গ্রন্থের ২/১২ পৃষ্ঠায় হাদিস নং ৫১৮ এ উক্ত হাদিসকে মওদ্বু বা জাল বলে উলেখ করেছেন।
অথচ উক্ত হাদিসের সনদে কোন মিথ্যাবাদী রাবী নেই তবে প্রত্যেক সনদে দুর্র্বল রাবী রয়েছেন। তাছাড়া হাদিসটির একাধিক সনদ রয়েছে।
❏ হাদিসটি হলো-
أَخْبَرَنَا أَبُو طَاهِرٍ الْفَقِيهُ، أَخْبَرَنَا أَبُو طَاهِرٍ الْمُحَمَّدُآَبَاذِيُّ، حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُوسُفَ السُّلَمِيُّ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ سُلَيْمَانَ، حَدَّثَنَا هَيَّاجٌ، حَدَّثَنَا عَنْبَسَةُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَعِيدِ بْنِ الْعَاصِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زَاذَانَ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ حُسَيْنٍ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : مَنِ اعْتَكَفَ عَشْرًا فِي رَمَضَانَ كَانَ كَحَجَّتَيْنِ وَعُمْرَتَيْنِ
-’’হযরত আলী ইবনে হুসাইন (মানে ইমাম জয়নুল আবেদীন) হতে বর্ণিত। তিনি তার সম্মানিত পিতা হযরত ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমযান মাসে দশদিন ই’তিকাফ করবে তার জন্য রয়েছে দুটি হজ্জ এবং দুটি উমরার সাওয়াব।’’ ৮৯
➥{ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৫/৪৩৬ পৃ., হা/৩৬৮০, ইমাম সূয়তী : জামেউস সগীর : ২/৫৭৫ : হা/৮৪৭৯, ইমাম মুনযিরী : তারগীব ওয়াত তারহীব : ২/৯৬ : হা/১৬৪৯, আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৩/১৭৩ পৃ., বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৫/৪৩৬ পৃ. হা/৩৬৮১, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ৩/১৫৬পৃ. হা/১১৪৫, মুত্তাকি হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৮/৫৩০ পৃ. হা/২৪০০৬, ও ৮/৫৩০ পৃ. হা/২৪০০৮, শায়খ আলবানী, দ্বঈফু জামে, হা/৫৪৫১, ও দ্বঈফাহ, ২/১০পৃ. হা/৫১৮, তিনি বলেন, হাদিসটি জাল, কিন্তু আমি বলবো, তার জাল বলাটা এক পয়সার মূল্য নেই, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস, ২০/৯ পৃ. হাদিস, ২১৩৫৭।}
সনদ পর্যালোচনা:
❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হাদিসটি সংকলন করেই বলেছেন- إِسْنَادُهُ ضَعِيفٌ -‘‘সনদটি যঈফ।’’
(ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৫/৪৩৬ : হা/৩৬৮০)
❏ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله)ও এটিকে শুধু যঈফ বলেছেন, জাল নয়। আল্লামা মানাভী (رحمة الله) এ হাদিসের চূড়ান্ত সমাধান কল্পে লিখেন- وَضَعفه الهيتمي وَغَيره -‘‘ইমাম হাইসামী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে এটিকে যঈফ বলেছেন।’’
(মানাভী, তাইসীর বিশারহে জামেউস সগীর, ১/১৬৮ পৃ.)
হাদিসটির সনদটি যদিও দ্বঈফ তবে তা ফাযায়েলে আমলের জন্য এ ধরনের হাদিস গ্রহণযোগ্য। যা আমি ইতোপূর্বে কিতাবের শুরুতে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, পাঠকবৃন্দের সেখানে দেখে নেয়ার অনুরোধ রইলো।
❏ ইমাম তাবরানী (رحمة الله) এ শব্দে আরেকটি সূত্র সংকলন করেছেন। তবে সে সনদ সম্পর্কে ইমাম হাইসামী (رحمة الله) লিখেন-
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَفِيهِ عُيَيْنَةُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْقُرَشِيُّ، وَهُوَ مَتْرُوكٌ.
-‘‘হাদিসটি ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তার মু‘জামুল কাবীরে বর্ণনা করেছেন, সনদে ‘উয়াইনা ইবনে আব্দুর রহমান কুরশী’ নামক একজন রাবী রয়েছেন, সে মাতরুক বা পরিত্যক্ত রাবী।’’
(আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৩/১৭৩ পৃ., হা/৫০২৫)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইমাম হাইসামী (رحمة الله) একক ইমাম আবু হাতেমের রায়ের উপর ভিত্তি করে তাকে যঈফ বলেছেন, অথচ ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) বলেন-
وكان ثقة إن شاء الله.
-‘‘আল্লাহ চাহে তো তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী।’’
(ইবনে সা‘দ, আত-তবকাতুল কোবরা, ৭/২০১ পৃ. ক্রমিক. ৩২৫০)
❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) লিখেছেন-
وقال ابْن معين، والنسائي: ثقة. وقال أحمد: لا بأس به.
-‘‘ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله) এবং ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) বলেন, তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত, ইমাম আহমদ (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই।’’
(ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/১৮১ পৃ. ক্রমিক.২৮৯)
বুঝা গেল এ সনদটি গ্রহণযোগ্য, ইমাম হাইসামী (رحمة الله) একজনের অভিমত গ্রহণ করে ভুল মতামত প্রকাশ করেছেন। সব মিলিয়ে হাদিসটির মান কমপক্ষে ‘হাসান’।