বিষয় নং-২২: অস্তমিত সূর্য রাসূল (ﷺ)-এর উসিলায় পুনরায় উদিত হওয়া:
কতিপয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং কিছু নামধারী ইসলামী পত্রিকায় রাসূল (ﷺ) এর উক্ত মু‘জিযাকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিতে চায়। আমাদের সমাজে কতিপয় নামধারী বক্তা রয়েছেন যারা ওয়াযে বলে বেড়ান উক্ত মু‘জিযা নাকি কোন হাদিসের কিতাবে নেই, অপরদিকে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ১৯৫ পৃষ্ঠায় এ বিষয়ক হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-‘‘কিন্তু একমাত্র আসমা বিনতু উমাইস (رضي الله عنه) ছাড়া অন্য কোনো সাহাবী থেকে তা বর্ণিত হয় নি।......অথচ এ ঘটনাটি এ একটি মাত্র সূত্রে বর্ণিত।’’
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উক্ত হাদিসের চারটিরও বেশী সনদে বর্ণিত হয়েছে, অথচ এ ধোঁকাবাজ হাদিসের খাদেম দাবী করে মানুষদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে। মহান রব যেন এ ধোঁকাবাজদের থেকে আমাদের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করুন, আমিন। তিনি এ ঘটনাটিকে মিথ্যা প্রমাণের অনেক অপচেষ্টা চালিয়েছিলেন, কিন্তু প্রমাণ করতে সক্ষম হননি।
প্রথম সূত্র:
ইমাম তাবরানী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ عُمَيْسٍ، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يُوحَى إِلَيْهِ وَرَأْسُهُ فِي حِجْرِ عَلِيٍّ، فَلَمْ يُصَلِّ الْعَصْرَ حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : اللهُمَّ إِنَّ عَلِيًّا كَانَ فِي طَاعَتِكَ وَطَاعَةِ رَسُولِكَ فَارْدُدْ عَلَيْهِ الشَّمْسَ قَالَتْ أَسْمَاءُ: فَرَأَيْتُهَا غَرَبَتْ وَرَأَيْتُهَا طَلَعَتْ بَعْدَمَا غَرَبَتْ-
-‘‘হযরত আসমা বিনতে উমায়েস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর উপর ওহী নাযিল হচ্ছিল। এসময়ে তাঁর মস্তক ছিল হযরত আলী (رضي الله عنه) এর কোলে। এজন্য মাওলা আলী (رضي الله عنه) আসরের সালাত আদায় করতে পারেন নি। এমতাবস্থায় সূর্য ডুবে যায়। অতঃপর রাসূল (ﷺ) বললেন, হে আল্লাহ! আলী যদি আপনার এবং আপনার রাসূলের আনুগত্যে থেকে থাকেন তবে তাঁর জন্য সূর্য ফিরিয়ে দিন। বর্ণনাকারী আসমা (رضي الله عنه) বলেন, আমি দেখলাম, সূর্য ডুবে গেল। এরপর ডুবে যাওয়ার পরে আবার তা উদিত হলো।’’৩০২
৩০২. ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল কাবীর : ২৪/১৪৪পৃ. হাদিস:৩৮২, ইমাম তাবরানী, মু’জামুল আওসাত, ইবনে কাসীর : আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ৬/৮৩ পৃ., হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২৯৭ পৃ., ইমাম তাহাভী, মুশকিলুল আসার : ২/৮-৯ পৃ. হা/১২০৭, তিনি সহীহ সনদে। তাহাভীর মুশকিলুল আসার, ৮/৩৮৮ পৃ., উকাইলী : আদ্ব-দ্বঈফাউল কাবীর : ১/৪২২ পৃ., ইবনে কাছির, আস-শামায়েল : ১৪৪ পৃ., ইমাম ইবনে আবি আছিম, আস-সুনান, হাদিস নং, ১৩২৩, সুয়ূতি : মুখতাসারুল মিনহাজুল আস-সুন্নাহ : ৫২৪-৫২৮পৃ. শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাযী : নাসিমুর রিয়াদ্ব : ৩/১০-১৪পৃ., ইবনে হাজার আসকালানী : ফাতহুল বারী : ৬/২২১-২২২পৃ. ইবনে কাইয়্যুম : মানারুল মুনীফ : ৫৭-৫৮ পৃ., আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী : উমদাদুল কারী : ১৫/৪৩ পৃ. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা : ২/৩২৪ পৃ.
পর্যালোচনা:
✧ ইমাম হাইসামী উক্ত সনদ সম্পর্কে বলেন-
رَوَاهُ كُلَّهُ الطَّبَرَانِيُّ بِأَسَانِيدَ، وَرِجَالُ أَحَدِهَا رِجَالُ الصَّحِيحِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ حَسَنٍ وَهُوَ ثِقَةٌ وَثَّقَهُ ابْنُ حِبَّانَ، وَفَاطِمَةُ بِنْتُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ لَمْ أَعْرِفْهَا.
-‘‘হাদিসটি ইমাম তাবরানী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন, উক্ত হাদিসের সমস্ত রাবী সহীহ বুখারীর ন্যায়, তবে সনদে ‘ইব্রাহীম ইবনে হাসান’ রয়েছেন তিনিও সিকাহ, ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন, তবে সনদে ‘ফাতেমা বিনতে আলী বিন আবি তালিব’ কে আমি চিনি না।’’ ৩০৩
৩০৩. ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২৯৭ পৃ. হা/১৪০৯৭
বুঝা গেল এ সনদে কোনো দুর্বল রাবী নেই, তবে মুহাদ্দিস হাইসামী (رحمة الله) একজন রাবীকে তিনি চেনেন না বলেছেন, আসলে তিনি অপরিচিত কোনো বর্ণনাকারী নন, বরং তিনিও সিকাহ, যা সামনে আলোকপাত করা হবে। এ সনদের আপত্তিকর দিক হিসেবে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ১৯৫ পৃষ্ঠায় এ সনদ প্রসঙ্গে লিখেছেন-‘‘উল্লেখিত ‘ইবরাহীম ইবনু হাসান’ অনেকটা অজ্ঞাত পরিচয়।’’ একজন হাদিস গবেষক হয়ে একজন সিকাহ রাবীর নামে তিনি কিভাবে এ মিথ্যাচার করতে পারেন আমি তা দেখে হতবাক!
✧ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন-
وذَكَره ابن حِبَّان في الثقات
-‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ ৩০৪
৩০৪. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, লিসানুল মিযান, ১/২৬৪ পৃ. ক্রমিক. ১০০
এ ধোঁকাবাজ সর্বশেষ এ হাদিসের সনদের বিষয়ে যঈফ প্রমাণ করতে না পেরে লিখেন-‘‘এভাবে আমরা দেখছি যে, সনদ বিচারে হাদীসটি ‘হাসান’ বলে গণ্য হতে পারে।’’
দ্বিতীয় সূত্র:
অপরদিকে উক্ত হাদিসটির অন্য আরেকটি বর্ণনা সূত্র কিছুটা শব্দ পরিবর্তন হয়ে এভাবে বর্ণিত হয়েছে -
وَعَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ عَمِيسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - ﷺ - صَلَّى الظُّهْرَ بِالصَّهْبَاءِ ثُمَّ أَرْسَلَ عَلِيًّا فِي حَاجَةٍ، فَرَجَعَ وَقَدْ صَلَّى النَّبِيُّ - ﷺ- الْعَصْرَ، فَوَضَعَ النَّبِيُّ - ﷺ- رَأْسَهُ فِي حِجْرِ عَلِيٍّ فَنَامَ، فَلَمْ يُحَرِّكْهُ حَتَّى غَابَتِ الشَّمْسُ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ : اللَّهُمَّ إِنَّ عَبْدَكَ عَلِيًّا احْتَبَسَ بِنَفْسِهِ عَلَى نَبِيِّهِ فَرُدَّ عَلَيْهِ الشَّمْسَ. قَالَتْ أَسْمَاءُ: فَطَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ حَتَّى وَقَفَتْ عَلَى الْجِبَالِ وَعَلَى الْأَرْضِ، وَقَامَ عَلِيٌّ فَتَوَضَّأَ وَصَلَّى الْعَصْرَ، ثُمَّ غَابَتْ فِي ذَلِكَ بِالصَّهْبَاءِ.-
-‘‘হযরত আসমা বিনতে উমায়েস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) ‘ছাহবা’ নামকস্থানে যোহরের নামায পড়লেন। অতঃপর হযরত আলী (رضي الله عنه) কে কোন এক ওজরে প্রেরণ করলেন, অতঃপর তিনি ফিরে আসলেন। রাসূল (ﷺ) আসরের নামাজ পড়লেন, তারপর হযরত আলী (رضي الله عنه) এর কোলে মাথা মোবারক রেখে ঘুমালেন। হযরত আলী (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) কে জাগাননি এমতাবস্থায় সূর্য ডুবে গেল। অতঃপর রাসূল (ﷺ) বললেন, হে আল্লাহ! নিশ্চয় তোমার পেয়ারা গোলাম আলী যদি নবীর গোলামীতে নিজেকে আবদ্ধ/মগ্ন রেখে থাকেন তবে তাঁর জন্য সূর্য ফিরিয়ে দিন। বর্ণনাকারী হযরত আসমা বিনতে উমায়েস (رضي الله عنه) বলেন, সূর্য পুনরায় উদিত হয়ে যমীন ও পাহাড়ের উপর এসে গেল। অতঃপর হযরত আলী (رضي الله عنه) ওযু করে আসরের সালাত আদায় করলেন। তারপর ছাহ্বা নামক স্থানে সূর্য পুনরায় ডুবে গেল।’’ ৩০৫
৩০৫.
ক. আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ : ৮/২৯৭ পৃ:
খ. আল্লামা তাবরানী : মু’জামুল কাবীর : ২৪/১৫১-১৫২ পৃ: হা/৩৯১
গ. আল্লামা ইবনে কাসীর : বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ৬/৮৪ পৃ:
ঘ. আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী : ফাতহুল বারী শরহে বুখারী : ৬/২২১-২২২ পৃ. হা/৩১২৪
ঙ. আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ : ৮/২৯৮ পৃ.
চ. ইমাম তাহাভী : মাশকালুল আছার : ৪/৭ পৃ. হা/১২০৮
ছ. আল্লামা ওকাইলী : আদ্ব-দ্বঈফাউল কাবীর : ১/৪২২ পৃ.
জ. আল্লামা ইবনে কাছির : বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ৬/৮৪ পৃ.
ঝ. আল্লামা ইবনে কাছির : আস-শামায়েল : ১৪৫ পৃ.
ঞ. আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা : ২/৩২৪ পৃ.
✧ এ হাদিসের সনদের হুকুমও প্রসঙ্গে পূর্বের ন্যায় ইমাম ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) বলেছেন। ৩০৬
৩০৬. ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২৯৭ পৃ. হা/১৪০৯৬
রাবী ফাতেমার কি অজ্ঞাত ব্যক্তি?
অনেকে ইমাম হাইসামী (رحمة الله) রাবী ফাতেমা (রহ.)-এর জীবনী পাননি বলে তাকে মাজহুল বলে চালিয়ে দিতে চান, এর মধ্যে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরও অন্যতম। সকলের মনে রাখা উচিত যে, কোন মুহাদ্দিসের পক্ষেই পৃথিবীর সমস্ত রাবীর জীবনী জানা সম্ভব নয়, তেমনটি ইমাম হাইসামীর বেলায়ও ভিন্ন কিছু নয়।
❏ ইমাম হাফেয ইবনে কাসির (رحمة الله) উক্ত ফাতেমার জীবনী লিখেন-
فاطمة بنت علي بن أبي طالب، وهي فاطمة الصُّغْرى: أُمُّها أُمُّ ولد.
روت عن: أبيها، وقيل: لم تسمع منه، وعن أخيها محمد بن الحنفية، وأسماء بنت عُمَيْس.
-‘‘ফাতেমা বিনতে আলী বিন আবি তালেব (رضي الله عنه), তিনি ছোট ফাতেমা, ...তিনি তাঁর পিতা হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন, কেউ বলেন সে তাঁর পিতা থেকে কিছুই শুনেননি, তিনি তাঁর ভাই মুহাম্মদ বিন হানাফিয়্যাহ এবং আসমা বিন উমাইস (رضي الله عنه) হতে হাদিস বর্ণনা করতেন।’’ (ইবনে কাসির, তাকমীল ফি জারহু ওয়া তা‘দীল, ৪/২৯২ পৃ. ক্রমিক. ২৭৬৩)
উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেল এ ফাতেমা হলেন আমিরুল মু‘মিনীন হযরত আলী (رضي الله عنه)-এর কন্যা, তিনি কখনই অপরিচিত ব্যক্তি হতে পারেন না।
✧ তিনি আরও লিখেন-
وذكرها ابن حبان في الثقات.
-‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’(ইবনে কাসির, তাকমীল ফি জারহু ওয়া তা‘দীল, ৪/২৯২ পৃ. ক্রমিক. ২৭৬৩)
✧ ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তার কিতাবুস সিকাত গ্রন্থে তাঁর জীবনীতে লিখেন-
فَاطِمَة بنت عَليّ بن أَبِي طَالب تروى عَن أَبِيهَا مَا روى عَنهُ أهل الْمَدِينَة وَأهل الْكُوفَة
-‘‘ফাতেমা বিনতে আলী বিন আবি তালেব, তিনি তাঁর পিতা মাওলা আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করতেন, তাঁর থেকে মদিনাবাসী ও কুফাবাসীগণ হাদিস বর্ণনা করতেন।’’ ৩০৭
৩০৭. ইবনে হিব্বান, কিতাবুস সিকাত, ৫/৩০১ পৃ. ক্রমিক. ৪৯৪৯
✧ বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও আসমাউর রিজালবিদ ইমাম ইজলী (ওফাত. ২৬১ হি.) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।
(ইমাম ইজলী, তারিখুস সিকাত, ২/৪৫৭ পৃ. ক্রমিক. ২৩৪৬)
✧ ইমাম ইবনে সা‘দ (ওফাত. ২৩০ হি.) তাঁর বিস্তারিত জীবনী তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন-
فَاطِمَةُ بِنْت عَلِيِّ بْن أبي طَالِب
بْن عَبْد المطلب بن هاشم بن عبد مناف.
وأمها أم ولد. تزوجها محمد بن أبي سعيد بن عقيل بن أبي طالب
-‘‘ফাতেমা বিনতে আলী বিন আবি তালেব বিন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশেম বিন আব্দুল মানাফ। ......তিনি মুহাম্মদ বিন আবি সাঈদ বিন আকীল বিন আবি তালিবের স্ত্রী ছিলেন।’’ (ইমাম ইবনে সা‘দ, আত-তবকাতুল কোবরা, ৮/৩৪০ পৃ. ক্রমিক. ৪৬৩৬, দারুল কুতুব ইলমিয্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)
✧ পৃথিবী বিখ্যাত আসমাউর রিজালবিদদের অন্যতম ইমাম মিয্যী (رحمة الله) তাঁর জীবনীতে লিখেন-
روت عن: أبيها علي بن أَبي طالب (س فق) وقيل: لم تسمع منه، وعن أخيها محمد بن علي ابن الحنفية، وأسماء بنت عميس
-‘‘তিনি তাঁর পিতা হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন, কেউ বলেন সে তাঁর পিতা থেকে কিছুই শুনেননি, তিনি তাঁর ভাই মুহাম্মদ বিন হানাফিয়্যাহ এবং আসমা বিন উমাইস (رضي الله عنه) হতে হাদিস বর্ণনা করতেন।’’ (ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ৩৫/২৬১ পৃ. ক্রমিক. ৭৯০৩)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! বুঝা গেল এ হাদিসের সনদের অন্যতম রাবী ‘ফাতেমা’ মাওলা আলী (رضي الله عنه)-এর কন্যা ছিলেন, জানি না কেন ইমাম হাইসামী (رحمة الله) এ কথা লিখলেন!
তৃতীয় সূত্র:
এবার দেখবো এই ফাতেমা ছাড়াও আর কেহ এ হাদিস বর্ণনা করেছেন কিনা। ইমাম উকাইলী (رحمة الله) এটি এভাবে সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ دَاوُدَ قَالَ: حَدَّثَنَا عَمَّارُ بْنُ مَطَرٍ قَالَ: حَدَّثَنَا فُضَيْلُ بْنُ مَرْزُوقٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ الْحَسَنِ، عَنْ فَاطِمَةَ بِنْتِ الْحُسَيْنِ، عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ عُمَيْسٍ، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوحَى إِلَيْهِ وَرَأْسُهُ فِي حِجْرِ عَلِيٍّ، وَلَمْ يَكُنْ عَلِيٌّ صَلَّى الْعَصْرَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ عَلِيًّا كَانَ فِي طَاعَتِكَ فَارْدُدْ عَلَيْهِ الشَّمْسَ . قَالَتْ أَسْمَاءُ: فَوَاللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُهَا غَابَتْ ثُمَّ طَلَعَتْ بَعْدَ مَا غَابَتْ
-‘‘হাদিসটি ইবরাহিম বিন হাসান থেকে তিনি ফাতেমা বিনতে হুসাইন (رضي الله عنه) হতে তিনি হযরত আসমা বিনতে উমায়েস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর উপর ওহী নাযিল হচ্ছিল। এসময়ে তাঁর মস্তক ছিল হযরত আলী (رضي الله عنه) এর কোলে। এজন্য মাওলা আলী (رضي الله عنه) আসরের সালাত আদায় করতে পারেন নি। এমতাবস্থায় সূর্য ডুবে যায়। অতঃপর রাসূল (ﷺ) বললেন, হে আল্লাহ! আলী যদি আপনার এবং আপনার রাসূলের আনুগত্যে থেকে থাকেন তবে তাঁর জন্য সূর্য ফিরিয়ে দিন। বর্ণনাকারী আসমা (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি দেখলাম, সূর্য ডুবে গেল। এরপর ডুবে যাওয়ার পরে আবার তা উদিত হলো।’’
(ইমাম তাহাভী, শরহে মাশকালুল আছার, ৩/৯২ পৃ. হা/১০৬৭, ইমাম ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ৪২/৩১৪ পৃ., ইমাম উকাইলী, দ্বুআফাউল কাবীর, ৩/৩২৭ পৃ. ক্রমিক.১৩৪৭, ইমাম যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ৩/১৭০ পৃ. ক্রমিক. ৬০০৪, ইমাম আসেম, আস-সুন্নাহ, ২/৫৯৮ পৃ. হা/১৩২৩)
আপত্তি ও নিষ্পত্তি:
১. আমাদের অনেক আহলে হাদিস হযরতগণ বলে থাকেন যে এ সনদের ‘আম্মার বিন মাতার’ রয়েছেন তার সম্পর্কে ইমাম উকাইলী (رحمة الله) বলেছেন-
عَمَّارُ بْنُ مَطَرٍ الرَّهَاوِيُّ يُحَدِّثُ عَنِ الثِّقَاتِ، بِمَنَاكِيرَ
-‘‘রাবী ‘আম্মার বিন মাতার রাহাবী’ নিকাহ রাবীর নামে আপত্তিকর হাদিস বর্ণনা করতেন।’’ (ইমাম উকাইলী, দ্বুআফাউল কাবীর, ৩/৩২৭ পৃ. ক্রমিক.১৩৪৭)
নিষ্পত্তি: এ অভিযোগ উক্ত রাবীর নামে অগ্রহণযোগ্য, যারা আসমাউর রিজাল নিয়ে গবেষণা করেন তারা জানেন ইমাম উকাইলী (رحمة الله) অনেক সিকাহ রাবীকেও যঈফ বলে থাকেন, এজন্য অনেক বিজ্ঞ হাদিস গবেষকগণ এ বিষয়ে তার সমালোচনা করেছেন। মুহাদ্দিস মুহাম্মদ বিন খিযির (رحمة الله) বলেন- ثقة. -‘‘তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’ ৩০৮
৩০৮. ইবনে আদী, আল-কামিল, ৬/১৩৮ পৃ. ক্রমিক.১২৫১, ইমাম যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ৩/১৬৯ পৃ. ক্রমিক. ৬০০৪, ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ৬/৫২ পৃ. ক্রমিক.৫৫৫০
✧ মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ বিন সালেম (رحمة الله) বলেন- وَكَانَ حافظا للحديث -‘‘তিনি হাদিসের হাফেয ছিলেন।’’
(ইবনে আদী, আল-কামিল, ৬/১৩৮ পৃ. ক্রমিক.১২৫১, ইমাম যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ৩/১৬৯ পৃ. ক্রমিক. ৬০০৪, ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ৬/৫২ পৃ. ক্রমিক.৫৫৫০)
✧ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) এবং ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-
وثقة بعضهم. ومنهم من وصفه بالحفظ.
-‘‘অনেকে তাকে সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন। কোনো কোনো মুহাদ্দিস তাকে হাফেযুল হাদিসদ স্তরের রাবী বলেছেন।’’ (ইমাম যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ৩/১৬৯ পৃ. ক্রমিক. ৬০০৪, ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ৬/৫২ পৃ. ক্রমিক.৫৫৫০)
বুঝা গলে তিনি অনেক বড় তবকার মুহাদ্দিস ছিলেন।
২. দ্বিতীয়ত অনেকে এ সনদের বিষয়ে আপত্তি তুলতে পারেন যে, ‘ফাতেমা বিনতে হুসাইন’ হযরত আসমা বিনতে উমাইস (رضي الله عنه) হতে শুনেছেন কিনা। আমি বলবো, অবশ্যই, ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তাঁর জীবনীতে লিখেন-
روت عَنْ أبيها، وعَنْ عَائِشَةَ، وابن عَبَّاس، وعَنْ جدّتها فاطمة الزَّهراء مُرسِلا.
-‘‘তিনি তাঁর পিতা ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) হতে, মা আয়েশা (رضي الله عنه) হতে, ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে এবং তাঁর দাদী মা ফাতেমা (رضي الله عنه) হতে মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করতেন।’’ (যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৩/২৯৫ পৃ. ক্রমিক. ২১৯)
❏ ইমাম মিয্যী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
روت عَن: بلال المؤذن مُرْسلاً، وأبيها الحسين بن علي بْن أَبِي طالب (د عس ق) ، وعبد اللَّه بْن عباس (ق) ، وأخيها زين العابدين علي بن الحسين بْن علي بْن أَبي طالب، وأسماء بنت عميس
-‘‘তিনি মুরসাল হিসেবে ইসলামের প্রথম মুয়ায্যিন হযরত বেলাল (رضي الله عنه) হতে, এছাড়া তাঁর পিতা ইমাম হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালেব (رضي الله عنه), হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه), তাঁর ভাই হযরত জয়নুল আবেদীন (رضي الله عنه) এবং হযরত আসমা বিনতে উমাইস (رضي الله عنه) হতে হাদিস বর্ণনা করেছেন।’’ (ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ৩৫/২৫৫ পৃ. ক্রমিক. ৭৯০১)
তাই প্রমাণিত হয়ে গেলো এ সনদটির মান কমপক্ষে ‘সহীহ’ হওয়ার মর্যাদা রাখে।
চতুর্থ সূত্র:
এবার আমরা সমালোচিত রাবী ‘আম্মার ইবনে মাতার’ ছাড়াও হাদিসটির কোনো সূত্র আছে কিনা তা দেখবো।
❏ ইমাম তাহাভী (رحمة الله) সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا أَبُو أُمَيَّةَ، قَالَ: حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ مُوسَى الْعَبْسِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا الْفُضَيْلُ بْنُ مَرْزُوقٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ الْحَسَنِ، عَنْ فَاطِمَةَ بِنْتِ الْحُسَيْنِ، عَنْ أَسْمَاءَ ابْنَةِ عُمَيْسٍ، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوحَى إِلَيْهِ وَرَأْسُهُ فِي حِجْرِ عَلِيٍّ فَلَمْ يُصَلِّ الْعَصْرَ حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ , فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صَلَّيْتَ يَا عَلِيُّ؟ قَالَ: لَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اللهُمَّ إِنَّهُ كَانَ فِي طَاعَتِكَ وَطَاعَةِ رَسُولِكَ فَارْدُدْ عَلَيْهِ الشَّمْسَ ، قَالَتْ أَسْمَاءُ: فَرَأَيْتُهَا غَرَبَتْ , ثُمَّ رَأَيْتُهَا طَلَعَتْ بَعْدَمَا غَرَبَتْ
-‘‘হযরত আসমা বিনতে উমায়েস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর উপর ওহী নাযিল হচ্ছিল। এসময়ে তাঁর মস্তক ছিল হযরত আলী (رضي الله عنه) এর কোলে। এজন্য মাওলা আলী (رضي الله عنه) আসরের সালাত আদায় করতে পারেন নি। এমতাবস্থায় সূর্য ডুবে যায়। অতঃপর রাসূল (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه) কে বললেন, হে আলী! তুমি কি আসরের সালাত আদায় করনি? তিনি বললেন, না। অতঃপর রাসূল (ﷺ) বললেন, হে আল্লাহ! আলী যদি আপনার এবং আপনার রাসূলের আনুগত্যে থেকে থাকেন তবে তাঁর জন্য সূর্য ফিরিয়ে দিন। বর্ণনাকারী আসমা (رضي الله عنه) বলেন, আমি দেখলাম, সূর্য ডুবে গেল। এরপর ডুবে যাওয়ার পরে আবার তা উদিত হলো।’’ (ইমাম তাহাভী, শরহে মাশকালুল আছার, ৩/৯২ পৃ. হা/১০৬৭)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ সনদে ফুযায়েলের ছাত্র ‘আম্মার বিন মাতার রাহাবী’ নেই, এ সনদের ফুযায়েলের ছাত্র উবাইদুল্লাহ রয়েছেন,
✧ তার বিষয়ে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) লিখেন- ثقة -‘‘তিনি একজন বিশ্বস্ত রাবী।’’
(যাহাবী, দিওয়ানুল দ্বুআফা, ১/২৭৫ পৃ. ক্রমিক. ২৭১১)
✧ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার আরেক গ্রন্থে লিখেন-
الإِمَامُ، الحَافِظُ، العَابِدُ -
‘‘তিনি ছিলেন ইমাম, হাফেযুল হাদিস, আবেদ।’’
(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৯/৫৫৩ পৃ. ক্রমিক. ২১৫)
✧ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার বিষয়ে চূড়ান্ত রায় উল্লেখ করেন-
وَثَّقَهُ: ابْنُ مَعِيْنٍ، وَجَمَاعَةٌ.
وَحَدِيْثُهُ فِي الكُتُبِ السِّتَّةِ.
قَالَ أَبُو حَاتِمٍ: ثِقَةٌ، صَدُوْقٌ، حَسَنُ الحَدِيْثِ.
-‘‘ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله)সহ এক জামাত ইমামগণ তাকে সিকাহ বলেছেন, (মূল কথা হল) তার হাদিস কুতবে (সিহাহ) সিত্তায় বর্ণিত হয়েছে, ইমাম আবুু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তিনি সিকাহ, সত্যবাদী, তাঁর হাদিস সুন্দর।’’(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৯/৫৫৩ পৃ. ক্রমিক. ২১৫)
✧ এ সনদে ‘ফুযায়েল ইবনে মারযুক’ নামে একজন রাবী রয়েছেন, ইমাম ইবনে জাওযীসহ আরও অনেকে তাকে দুর্বল বুঝাতে চেয়েছেন, আমি বলবো তিনিও সিকাহ। ইমাম হাইসামী (رحمة الله)সহ কেউই তাকে দুর্বল বলে সনাক্ত করেননি।
✧ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেছেন-
وَثَّقَهُ: سُفْيَانُ بنُ عُيَيْنَةَ، وَيَحْيَى بنُ مَعِيْنٍ.
وَقَالَ ابْنُ عَدِيٍّ: أَرْجُو أَنَّهُ لاَ بَأْسَ بِهِ.
-‘‘সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ এবং ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله) তাকে সিকাহ বলেছেন। ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) বলেন, আমি আশাবাদী তার হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই।’’ (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৪২ পৃ. ক্রমিক. ১২৪)
✧ তিনি আরও লিখেন-
وَقَالَ الحَاكِمُ: عِيْبَ عَلَى مُسْلِمٍ إِخرَاجُهُ فِي (صَحِيْحِهِ) . قُلْتُ: مَا ذَكرَهُ فِي الضُّعَفَاءِ البُخَارِيُّ، وَلاَ العُقَيْلِيُّ، وَلاَ الدُّوْلاَبِيُّ، وَحَدِيْثُه فِي عِدَادِ الحَسَنِ - إِنْ شَاءَ اللهُ قُلْتُ: إِنَّمَا يَرْوِي لَهُ مُسْلِمٌ فِي المُتَابعَاتِ.
-‘‘ইমাম হাকেম (رحمة الله) বলেন, ................আমি বলি, ইমাম বুখারী (رحمة الله), উকাইলী (رحمة الله), ইমাম দাওলাভী (رحمة الله) কেহই তাকে যঈফের অর্ন্তভুক্ত করেননি। ইনশা-আল্লাহ তার হাদিসকে ‘হাসান’ পরিগণিত করা যায়।....আমি বলি, ইমাম মুসলিম (رحمة الله) তার ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে তার হাদিস কেবল ‘মুতাবাআত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।’’ (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৪২ পৃ. ক্রমিক. ১২৪)
✧ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ হাদিস সংকলন করে ইমাম তাহাভী (رحمة الله)-এর অভিমত উল্লেখ করেন যে- وَقَالَ: رُوَاتُهُ ثِقَاتٌ -
‘‘ইমাম তাহাভী (رحمة الله) বলেন, এ হাদিসের সমস্ত রাবী সিকাহ।’’ (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৬/২৬০২ পৃ. হা/৪০৩৩)
এ সনদ যে সহীহ তাতে আর কোনো সন্দেহ রইল না।
পঞ্চম সূত্র:
✧ উক্ত হাদিসের সমর্থনে আরও হাদিস পাওয়া যায়। যেমন-
عَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -ﷺ- أَمَرَ الشَّمْسَ فَتَأَخَّرَتْ سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ
-‘‘হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) এর আদেশে সূর্য অস্তমিত হতে কিছুটা বিলম্ব করেছিল।’’৩০৯
৩০৯.
ক. ইমাম তাবরানী, মুজামুল আওসাত, ৪/২২৪ পৃ. হা/৪০৩৯
খ. আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ, ৮/২৯৭ পৃ.
গ. ইবনে হাজার আসকালানী, ফাতহুল বারী, ৬/২২২ পৃ. হা/৩১২৪-এর আলোচনা।
ঘ. আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফফাজী : নাসিমুর রিয়াদ্ব : ৩/১০-১৪৫ পৃ.
✧ এ হাদিস উল্লেখ করে আলবানী লিখেছেন-
قلت: ويأتي حديث أسماء قريبا إن شاء الله تعالى.
-‘‘আমি (আলবানী) বলি, আল্লাহ চাহে তো এ হাদিসটি হযরত আসমা বিনতু উমাইস (رضي الله عنه)-এর মমার্থের নিকটবর্তী।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ১/৪০০ পৃ. হা/২০২)
পর্যালোাচনা:
✧ এ হাদিসটি প্রসঙ্গে ইমাম নুরুদ্দীন ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) বলেন-
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ وَإِسْنَادُهُ حَسَنٌ-
-‘‘হাদিসটি ইমাম তাবরানী তার মু’জামুল আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন আর হাদিসটি সনদের দিক দিয়ে ‘হাসান’ বা গ্রহণযোগ্য।’’ ৩১০
৩১০. আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২৯৭ পৃ.
✧ অপরদিকে ইমাম সাখাভী ও আল্লামা আজলূনী, হযরত জাবের (رضي الله عنه)-এর বর্ণিত হাদিস প্রসঙ্গে বলেন-
روى الطبرانى فى الكبير و الاوسط بسند حسن
-‘‘হাদিসটি ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তাঁর ‘মু’জামুল কাবীর’ এবং ‘মু’জামুল আওসাত’ গ্রন্থে ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা করেছেন।’’ ৩১১
৩১১. ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৬৫ পৃ. হা/৫১৯, আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ১/৩৭৮ পৃ. হা/১৩৭৭
✧ আহলে হাদিস আলবানী এ হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-
وإسناده حسن -‘‘এ হাদিসটির সনদ হাসান।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ১/৪০১ পৃ. হা/২০২)
৬ষ্ঠ সূত্র:
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এ হাদিসটির মতন এভাবে বর্ণনা করেন-
وَأخرج ابْن مرْدَوَيْه عَن أبي هُرَيْرَة قَالَ نَام رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَرَأسه فِي حجر عَليّ وَلم يكن صلى الْعَصْر حَتَّى غربت الشَّمْس فَلَمَّا قَامَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم دَعَا لَهُ فَردَّتْ عَلَيْهِ الشَّمْس حَتَّى صلى ثمَّ غَابَتْ ثَانِيَة
-‘‘ইমাম ইবনে মারদুআই (رحمة الله) হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) মাওলা আলী (আ.)-এর কোলে ঘুমাচ্ছিলেন, কিন্তু তিনি (আলী) আসরের নামায পড়তে পারেন নি, ততক্ষণে সূর্য ডুবে গেলো, অতঃপর এ অবস্থা দেখে রাসূল (ﷺ) দণ্ডামান হলেন এবং দুহাত তুলে দু‘আ করলেন, তারপর হযরত আলী (আ.)-এর সালাত আদায় করার জন্য পুনরায় সূর্য ফিরিয়ে দেয়া হল, তারপর সূর্য দ্বিতীয়বারের মত ডুবে গেল।’’ (ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ২/১৩৭ পৃ.)
সনদ পর্যালোচনা:
ইমাম উকাইলী (رحمة الله) এ সনদ প্রসঙ্গে লিখেন-
فَأَمَّا الْحَدِيثُ الْأَوَّلُ فَيُرْوَى عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ بِإِسْنَادٍ صَالِحٍ
-‘‘হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه)-এর সূত্রটি গ্রহণযোগ্য।’’ (ইমাম উকাইলী, দ্বুআফাউল কাবীর, ৩/৩২৭ পৃ. ক্রমিক.১৩৪৭)
অতএব, উক্ত হাদিসটির ৬টিরও বেশি সনদ পাওয়া গেল। এ বিষয়ে আরো বর্ণনা পাওয়া যায় যেমন-
সপ্তম সূত্র:
ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এ হাদিসটি তাবেয়ী (إِسْمَاعِيلَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْقُرَشِيِّ) ইসমাঈল বিন আব্দুর রহমান কুরশী (رحمة الله) হতে মুরসাল সহীহ সূত্রে সংকলন করেন।
(ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, ২/৪০৪ পৃ., ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ১/৫৪৯ পৃ., ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৯/৪৩৪ পৃ., আল্লামা জুরকানী, শারহুল মুয়াত্তা, ৬/৪৯১ পৃ., ইমাম মুকরীযি, ইমতাউল আসমা, ৫/৩১ পৃ., ইমাম কাস্তালানী, মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ২/২৬০ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, আল-খাসায়েসুল কোবরা, ১/২৯৬ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, পৃ. ৩৬৬, হা/৫১৯)
সর্বশেষ এ হাদিসের বিষয়ে আমার কথা হলো, এ হাদিসটি অনেক সনদে বর্ণিত হয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন সনদের হুকুমও ভিন্ন, তাই এ হাদিসের বিরোদ্ধে কারো বক্তব্য থাকলে কোন সনদের বিরোদ্ধে তার অভিযোগ এবং কি কারণে অভিযোগ তা পেশ করতে হবে, তারপর বুঝা যাবে তার অভিযোগ কতটুকু গ্রহণযোগ্য।