গর্ভাশয়ের জ্ঞানঃ 

খতীব এ বাগদাদ (টিকা ১) এবং আবু নাঈম ‘দালাইলুন্নবুয়তে” হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমাকে উম্মুল ফজল (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন-- ‘আমি হুজুর (ﷺ) এর সামনে দিয়ে অতিক্রম করেছিলাম। হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করলেন, তুমি সন্তান সম্ভবা, তােমার গর্ভে ছেলে রয়েছে। যখন তার জন্ম হবে। তখন আমার কাছে নিয়ে আসবে।' উম্মুল ফজল আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার গর্ভে সন্তান কোথা থেকে আসবে? অথচ কুরাইশরা কসম খেয়ে বলেছে যে, তারা স্ত্রীদের কাছেও যাবে না। ইরশাদ হলাে, আমি যা বলছি তাই হবে। উম্মুল ফজল বললেন, যখন ছেলে সন্তান প্রসব হলাে আমি হুজুরের পবিত্র খেদমতে উপস্থিত হলাম। হুজুর (ﷺ) ছেলের ডান কর্ণে আজান ও বাম কর্ণে ইকামত দিলেন এবং স্বীয় থুথু মােবারক তার মুখে দিলেন আর তার নাম রাখলেন আবদুল্লাহ। অতঃপর বললেন, নিয়ে যাও খলীফাদের পিতাকে। আমি হযরত আব্বাসের নিকট হুজুরের এ ইরশাদ বর্ণনা করলাম। তিনি হুজুরের পবিত্র খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, উম্মুল ফজল এমনি বলেছেন। ইরশাদ করলেন, কথা তাই যা আমি তাকে বলেছি। সেই খলিফাদের পিতা, এমনকি শেষ পর্যন্ত তার (বংশ) থেকে সিফাহ এবং মাহদীর আবির্ভাব হবে।

(টিকা ১) আমি বলছি, ইমাম তাবরানী মুজামে কবীর ও ইবনে আসীর সৈয়দুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে রেওয়াতের বর্ণনা করেন। রাসুলে পাক (ﷺ) ইব্রাহীমের মা হ্যরত মারিয়া কিবতিয়া (رحمة الله)-এর নিকট তাশরীফ নেন, যখন তিনি (হযরত ইব্রাহীম) তাঁর শেকম মােবারকে ছিলেন। আরও একটি হাদীস বর্ণনা করেন, (যাতে রয়েছে) হযরত জিব্রাইল আমার নিকট আসলেন এবং আমাকে সু-সংবাদ দিলেন যে, মারিয়ার গর্ভে আমার সন্তান রয়েছে। সে সকল মাখলুকের মধ্যে আমার সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ হবে। তিনি আমাকে বলেছেন-আমি যেন তাঁর নাম ইব্রাহীম’ রাখি। আর জিব্রাইল আমার কুনিয়াত (ডাক নাম) আবু ইব্রাহীম তথা ইব্রাহীমের পিতা রেখেছেন। ইমাম সুয়ুতী “জামে কবীর” গ্রন্থে বলেছেন যে, এর সনদ (বর্ণনা পরম্পরা) বিশুদ্ধ। 


আমি বলছি, হুজুর (ﷺ) তাই জ্ঞাত হয়েছেন, যা গর্ভাশয়ে ছিলাে। শুধু তাই নয় এর থেকে আরাে বেশী কিছু জেনেছেন। আর তাও জ্ঞাত হয়েছেন যা উদরের সন্তানের পিঠে ছিলাে। তাও জ্ঞাত হয়েছেন যা কয়েক গােত্রের পরের সন্তানের পেটের পেটে রয়েছে। এ কারণে হুজুর আকৃদাস (ﷺ) ইরশাদ করেছেন “খলীফাদের পিতাকে নিয়ে যাও” এবং ইরশাদ করেছেন-“তার থেকে এবং তার (বংশ) থেকেই সিফাহ এবং মাহদীর আবির্ভাব হবে।”  মদিনার আলিম ইমাম মালেক (رحمة الله) হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, ছিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) তাঁর বনজ সম্পদ থেকে বিশ উশক খেজুর। উম্মুল মুমিনীন (رحمة الله)কে দান করে গাছ থেকে পেড়ে নিতে বলেছিলেন। যখন তার ওফাতের সময় আসলাে তখন তিনি বললেন “হে আমার প্রিয় কন্যা, আল্লাহর শপথ! কোন ব্যক্তির ধন-সম্পদ আমার নিকট তােমাদের প্রিয় নয়। আমার পর তােমাকে কারাে মুখাপক্ষেী হওয়ার ব্যাপারে আমি চিন্তিত নই। আমি তােমাকে যে বিশ উশক খেজুর দান করেছি তা বৃক্ষ থেকে তুলে নিও। যদি তুমি তা কেটে নিজের হেফাজতে রাখতে তাহলে তা তােমারই হতাে কিন্তু আজকে তা তােমার। উত্তরাধিকারীদের সম্পদ। এর উত্তরাধিকারী তােমার দু’ভাই ও বােনেরা। সুতরাং তাদের মধ্যে তুমি তা আল্লাহর ফরায়েজ মত বন্টন করে দিবে। হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) আরজ করলেন-আব্বাজান,আল্লাহর শপথ! যদি এমন এমন অনেক সম্পদ। থাকতাে, তবুও আমি তা আমার বােন আসমাকে দিয়ে দিতাম, কিন্তু আমার। দ্বিতীয় বােন কে? ইরশাদ করলেন, যা বিনতে খারেজার (তোমার মা) গর্ভে . রয়েছে, আমি তা কন্যা সন্তানই দেখছি।' 


ইবনে সা'দ 'তাবাক্বাত' গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ছিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) বলেছেন-“তা বিনতে খারেজার গর্ভেই রয়েছে, আমার হৃদয়ে ইলহাম করা। হয়েছে যে, তা কন্যাই হবে। তুমি তার সম্পর্কে সদ্ব্যবহারে উসিয়ত কবুল করাে। তাঁর একথার ভিত্তিতে উম্মে কুলসুম জন্মগ্রহণ করেছেন।” আর নিশ্চয়ই অনেক বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, গর্ভাশয়ের জন্য একজন ফিরিস্তা নির্ধারিত রয়েছেন। তিনি শিশুদের আকৃতি তৈরী করেন-পুরুষ। ও মহিলা, সুন্দর ও কদাকার এবং তার বয়স ও রিজক লিখে থাকেন। আর তা ভাগ্যবান নাকি দুর্ভাগা হবে-তাও তিনি জানেন--যা কিছু উদরে রয়েছে; এবং এটাও জ্ঞাত হন যে, তার উপর কি অতিবাহিত হবে। 


বুখারী ও মুসলিম শরীফে সাহল ইবনে সা'দ (رحمة الله) থেকে বর্ণিত খায়বরের হাদীসে রয়েছে, নবীয়ে করীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-“আল্লাহর শপথ! কাল এ ঝান্ডা ঐ ব্যক্তিকে প্রদান করবাে, যার হাতে আল্লাহ বিজয় প্রদান করবেন। সে আল্লাহ ও রাসুলকে ভালবাসে, আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুলও তাকে ভালবাসে। অতঃপর তিনি ঐ ঝান্ডা হযরত আলীকে প্রদান করেন। হুজুর পাক (ﷺ) এ উক্তি শপথ এর স্থানে (লামে তাকীদ ও নুনে তাকীদ) দ্বারা তাকীদ ও নিশ্চয়তা সহকারে ইরশাদ করেছেন। বুঝা গেলাে, আগামীকাল কি করবেন তা নিশ্চয়ই হুজুরের জ্ঞানে ছিলাে। নিশ্চয়ই হুজুরে করীম (ﷺ) অবগত (টিকা ১) ছিলেন যে, তাঁর বেছাল শরীফ মদীনায়ে তায়্যেবায় হবে, এ কারণেই তিনি আনসারদের ইরশাদ করেছেন-“আমার জীবন সেখানেই, যেখানে তােমাদের জীবন, আর আমার ইনতেকাল তথায় যেখানে তােমাদের ইনতিকাল”। এ হাদীস ইমাম মুসলিম হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন। 


(টিকা ১) এ পরিচ্ছেদ সকল পরিচ্ছেদ থেকে অধিকতর প্রশস্ত। সুতরাং প্রত্যেক ঐ বস্তু নবীয়ে করীম (ﷺ) যে সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন—জিহাদ ও ফিতনাসমূহ, সৈয়দুনা হযরত মসীহ (আঃ)-এর অবতরণ, ইমাম মাহদীর আবির্ভাব, দাজ্জাল, ইয়াজুজ-মাজুজ এবং দাব্বাতুল আরদের আবির্ভাব ইত্যাদি। যা অনেক, অসীম ও অগণিত। এ সবগুলােই এ পরিচ্ছেদের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম আইনী (رحمة الله) ওমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীর ‘ঈমান অধ্যায়ে বর্ণনা করেন, 

ইমাম নসফী (رحمة الله) তাফসীরে 'মাদারেকে' উল্লেখ করেন-এর উদ্দেশ্য হলাে জানতে পারেনি (মারিয়া) ঐ বস্তু যা তাঁর সাথে খাস ছিলাে, যদিও তাঁর স্বীয় গর্ভের জ্ঞান হয়েছে। মানুষের কাছে কোন বস্তু তার অর্জন ও পরিমাণ থেকে অধিক বিশেষত্ব ও তাৎপর্যমন্ডিত নয়। সুতরাং যখন তার এতদুভয়ের কোন পন্থা নেই, তখন তা ব্যতীত অন্যান্য গুলির পরিচয় ও জ্ঞান লাভ অসম্ভব হবে। আমি বলছি আপনাদের জন্য যথেষ্ট যে, রাসুলে পাক (ﷺ) এ গায়বকে আল্লাহ তায়ালার এ বাণীর স্থানে তাবীর ব্যাখ্যা করেছেন, 

(কোন সত্তা কি জানে সে আগামীকাল কি উপর্জন করবে) স্বীয় বাণী --- কেউ কি জানে আগামীকাল কি হবে?) 

যেমন বুখারী শরীফের ইস্তিসকা’ অধায়ে বর্ণিত হয়েছে। অথবা তাঁর বাণী আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না আগামীকাল কি হবে যেমন তাফসীরে লুকমানে বর্ণিত হয়েছে।


মোল্লা আলী ক্বারী (رضي الله عنه) মিরকাতে বলেছেন-“সব সংঘটিত বস্তু যা লওহে মাহফুজে রক্ষিত আছে। এতে হিকমত এ যে, ফেরেস্তা আগামী বস্তুর সম্পর্কে অবগত হন। যখন ঐ কথাগুলাে লিখিত বস্তুর মােতাবেক সংঘটিত হয়, তখন তাদের ঈমান ও তাসদীক বৃদ্ধি পায় এবং (তাঁরা) ফেরেস্তারা জেনে নেন, কে প্রশংসার উপযােগী আর কে তিরস্কারের। সুতরাং তারা প্রত্যেকের পরিচয় জেনে নেন।” 


শাহ আবদুল আজীজ  (رحمة الله) তাফসীরে “ফতহুল আজীজে”বর্ণনা করেন-“লাওহে মাহফুজ সম্পর্কে অবগত হওয়ার উদ্দেশ্য হলাে, বস্তুতঃ যেসকল কর্মসমূহ সংঘটিত হওয়ার আছে তা বাইরে সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই এর জ্ঞান হয়ে যাওয়া, তা লওহ-এর লিখা দেখে হােক কিংবা তা ব্যতীত হােক। আর এটা আল্লাহর ওলীদেরও হাসিল হয়। এটাও বলা হয়েছে, লওহে মাহফুজ অবগত হওয়া হলাে এর নকসাসমূহ অবগত হওয়া। এটাও কতেক আউলিয়ায়ে কিরাম থেকে পরম্পরাগতভাবে বর্ণিত আছে।” 


ইমাম সাতনুফী  (رحمة الله)' ন্যায় ইমামগণ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর অধস্তন পুরুষ যিনি জ্বিন মানব উভয়ের সাহায্য প্রার্থনা শ্রবণকারী এবং উভয় জাহানের ফরিয়াদ প্রেরণকারী, আমাদের আকা গাউছে আজম আবু মুহাম্মদ আবদুল কাদের আল হাসানী ওয়াল-হােসাইনী জিলানী (رضي الله عنه) আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট এবং তাকেও আমাদের উপর সন্তুষ্ট রাখুন। উভয় জাহানে আমাদের উপর তার প্রতিপালকের নুরের ফয়েজ প্রদান করুন; তাঁর নিকট হতে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলে থাকতেন, ‘আমার চক্ষু লওহে মাহফুজে। 


"আমি বলছি, এটাই হলাে আমাদের প্রতিপালকের বাণী তিনি বরকতময় রাত শবে বরাত সম্পর্কে বলেছেন-


◾“ রাত্রে বন্টন করা হয় সব হিকমতময় কর্ম আমার নির্দেশে।” 


আল্লাহর সাক্ষ্য দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ঐ পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানসমূহ থেকে কিয়ামতের জ্ঞান ব্যতীত অপর চারটির সকল এককসমূহ তা' সংঘটিত হবার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা সে ফেরেস্তাদের অবগত করেন, যারা সে কর্মের কার্য নির্বাহক। 


 আমি বলছি, অনুরূপভাবে হযরত ইসরাফীল 

(عليه السلام) কিয়ামতের নির্দিষ্ট সময় নির্ণয় পূর্বক সংঘটিত হবার পূর্বেই তা অবগত হবেন, যদিও তা মুহূর্তের জন্য হয়! আর তা সে দিন যখন সিঙ্গা ফুঁক দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হবে এবং তিনি নিজের অপর পাখাও বিছিয়ে দেবেন। তাঁর একটি পাখা রাসুলে সৈয়দে আলম হুজুর পুরনূর (ﷺ)-এর শুভ পদার্পনের সময় বিছিয়ে দিয়েছিলেন। সুতরাং তিনি তা নিক্ষেপ করার সাথে সাথেই ফিরিস্তা তাঁর নীচ থেকে সিঙ্গা মুখে উঠিয়ে নেবেন। 


◾রাসুলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন- “আমি কিভাবে বিশ্রাম করবাে সিঙ্গা বাহকতাে সিঙ্গা মুখে নিয়ে নিয়েছেন এবং কান লাগিয়ে রয়েছেন, আর কপাল নুয়ে অপেক্ষা করছেন কখন ফুৎকারের  নির্দেশ দেয়া হবে।” 

হাদীস ইমাম তিরমিজী হযরত আবু সাঈদ খুদরী

(رضي الله عنه)থেকে বর্ণনা করেছেন। 


আর ফিরিস্তা স্বীয় দু’উরুর উপর দন্ডায়মান হয়েছে, ইসরাফীলের পাখার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রয়েছেন যা এখনও তিনি বিস্তৃত করে রেখেছেন। সুতরাং যখন তিনি তাঁর পাখা পতিত করবেন, তখন সিঙ্গায় ফুঁক দিবেন। সিঙ্গা ফুৎকারের অনুমতি এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার মধ্যে তাঁর পাখা নিক্ষেপই হলাে ফয়সালাআর এটা একটি নড়াচড়া। আর নড়াচড়া কালের মধ্যেই হয়, তাহলে অবশ্যই কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই তাঁর কাছে এর জ্ঞান হয়ে যাবে যদিও এক মুহূর্তের জন্য হয়সুতরাং এ জ্ঞান যখন একজন নৈকট্যবান ফিরিস্তার জন্য প্রতীয়মান হলো, তখন সকলের চেয়ে প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ (ﷺ)-এর জন্য অসম্ভব উক্তিকারী কে? যিনি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আনুমানিক দু'হাজার বছর পূর্বেই তিনি সে সম্পর্কে জেনেছেন এবং যদিও হুজুরের কাছে নির্দেশ এসেছে তা অপরকে অবহিত না করার জন্য।


মুতাজিলারা যখন কারামাতে আউলিয়ার অস্বীকৃতিতে এ আয়াত থেকে দলীল গ্রহণ করেছেনআল্লাহ গায়ব সম্পর্কে অবহিত, তিনি তাঁর পছন্দনীয় রাসুলদের ব্যতীত কাউকে এ সম্পর্কে অবহিত করেন না।” তখন জনৈক আল্লামা শরহুল মাকাসিদে তাদের উত্তরে বলেছেন “গায় এখানে ব্যাপক নয় বরং মুতলাক (শর্তহীন অথবা (معين) এক নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ কিয়ামতের সময় এবং এর জন্যই উপরােক্ত আয়াত :قرينة কারণ' (তাতে কিয়ামতের বর্ণনা রয়েছে)। আর ফিরিস্তা অথবা বশরের (মানুষের) কতেক রাসুল এ সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া অসম্ভব নয়।” অর্থাৎ এ প্রেক্ষিতে রাসুলগণের পৃথকীকরণ বিশুদ্ধ হয়েছে। এমতাবস্থায় আউলিয়ায়ে কিরামের জন্যই  শুধু ক্বিয়ামতের জ্ঞান অস্বীকৃতি হবে। আর আল্লাহর পছন্দনীয়, রাসুলগণের জন্য এটাও প্রমাণিত হবেপৃথকীকরণই এর পক্ষে দলীল।


বরং ইমাম কুস্তুলানী (رضي الله عنه) ইরশাদুস-সারী শরহে বুখারী’তে বলেছেন-

আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেন না, কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে কিন্তু তার পছন্দনীয় রাসুলগণ, তাঁদের মধ্যে আল্লাহ যাকে ইচ্ছে এ সম্পর্কে অবহিত করেন। আর আউলিয়া কিরাম হলেন, রাসুলের অনুসারী, তাঁরা তাঁর থেকেই জ্ঞান অর্জন করেন।” 


◾(১) বরং শাহ আবদুল আজীজের (رحمة الله) পিতা শাহ ওয়ালী উল্লাহ  (رحمة الله) “তাফহীমাতে ইলাহিয়্যায়” স্বয়ং নিজের অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন যে, তাঁকে বিশেষ অবস্থায় ঐ সময় বর্ণনা করা হয়েছে, যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে এবং আসমান বিদীর্ণ হবে এবং অতঃপর যখন সংজ্ঞা ফিরে পেলেন, তখন তা সম্পূর্ণরূপে রক্ষিত থাকেনিঝাপসা স্বপ্নের ন্যায় হয়ে গেলোএমন ওলীদের জন্য যখন এটা (কিয়ামতের জ্ঞান) প্রমাণিত হলাে তখন মুস্তফা (ﷺ)-এর প্রতিপালকের জন্য পবিত্রতাসৈয়দুল আম্বিয়া (ﷺ) এর জন্য কেন তা অসম্ভব হবে?  আরবাঈনে ইমাম নবীর ব্যাখ্যা গ্রন্থফতুহাতে ইলাহিয়্যায়” এরূপ তাঁর দ্বিতীয় ব্যাখ্যা গ্রন্থফতুহুল মুবীনের পাদটীকায় রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর জন্য কিয়ামতের জ্ঞান হাসিল হওয়া সম্পর্কে উল্লেখ আছেসত্যকথা হলাে, যেমন এক জমাত ওলামায়ে কিরাম বলেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের নবী (ﷺ)কে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিবেন না, যতক্ষণ না হুজুরের নিকট যা কিছু গুপ্ত, রয়ে গেছে তা তাঁকে অবহিত করা হবেহাঁ, কতেক বস্তু তাঁকে প্রকাশনা করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, আর কতেক প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরূপ উসমাবী আসসালাতুল আহমদীয়ার ব্যাখ্যায় এটাকে সঠিক বলে ব্যক্ত করেছেন আমি বলছি, এগুলাে সব আল্লাহ তায়ালার এ বাণীর নুরের এক ঝলক “আমি তােমাদের উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছি যা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বিবরণ সম্বলিত।” যেমন আল্লাহ তায়ালা তার এ তকরীর আমাকে ইলহাম করেছেন। সুতরাং হক ভেসে উঠেছে কুরআনের নুর দ্বারা, যেমন সূর্য থেকে মেঘ চলে যায়। 


টিকা——————————————

(১) আমি বড় আরিফ প্রসিদ্ধ ওলী আমার সরদার আবদুস সালাম আসমার (আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর তার ফয়েজ জারী রাখুন, আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হােন এবং তাঁর উসিলায় আমাদের এভাবে করুন) কালাম দেখেছিতার বিশ্লেষণ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা হুজুর (ﷺ)কে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় শতাব্দী,সাল এবং মাস সম্পর্কে জ্ঞাত করেছেন। আর তা ইহসান প্রকাশের স্থলে উল্লেখ করেন এটা আল্লাহর জন্য কঠিন কিছু নয়এটা লিখেছেন ফকীর হামদান জুয়েরী, মদীনায়ে হামদানিয়াএটা ঐ সর্বশেষ টীকা যদ্বারা কিতাবের প্রথমভাগকে আল্লামা হামদান সৌন্দর্যময় করেছেন। বরং আমার কিতাবের বৃহৎ ভাগের শুভ্রতাকে আরাে উজ্জ্বল করেছেন। মহান অনুগ্রহকারী আল্লাহ তাঁর প্রচেষ্টাকে প্রশংসিত করুন আমীন। আর সকল প্রশংসা মহান প্রতিপালকের জন্য।

——————————————


যদি বিশুদ্ধকারীরা নিজ শব্দাবলীতে দাবীকে প্রত্যাবর্তন করে এবং বলে যে, উত্তরদাতা তার দলীলসমূহের বিশ্লেষণ করেছেন, তাহলে তার বাক্য দ্বারা দলীলসমূহেরই স্বীকৃতি বুঝা যায়। আর সম্ভব হবে, তারা মৌলিক দাবীতে কোন শব্দ পরিবর্তন কিংবা বাক্য বৃদ্ধি করা অথবা কোন বর্ণ বিয়ােগ করা পছন্দ করেছেন, এ কারণে তা নিজেদের বক্তব্যে বর্ণনা করেছেন। এটাও সম্ভব যে, তারা দাবীর পুনরাবৃত্তি অধিক ব্যাখ্যা, তাকীদ ও বিশ্লেষণের জন্য করেছেন। সুতরাং বিশুদ্ধকারীদের উপর কোন হুকুম প্রয়ােগ করা যাবে না যে, তারা মৌলিক দাবী স্থায়ী করে রেখেছেন অথবা এর উপর কিছু আপত্তি করেছেন। আর যখন মৌলিক দাবীতে এ উক্তি রয়েছে তাহলে তােমার ঐ বহির্ভূত ও অতিরিক্ত শব্দাবলীর কি ধারণা? যেগুলাে না দলীলের সাথে সম্পর্কিত, না দাবীর সাথে। এটা তাই, যা বিজ্ঞজনিত পদ্ধতির চাহিদা। এ বক্তৃতা থেকে আপনাদের নিকট সুস্পষ্ট হয়েছে। যে, আমি অভিমত লিখার সময় অতিরিক্ত বিষয়ের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিই নি। আর এ মুহুর্তে আমার এটাও স্মরণে আসছে না যে, তার আসল পান্ডুলিপিতে কি শব্দ ছিলাে, কিন্তু এ পুস্তিকায় লেখক যে আরবী অনুবাদ করেছেন তাতে শব্দ এভাবে ছিলাে, দরুদ ও সালাম প্রেরণ করছি সে সত্ত্বার প্রতি, যিনি আদি-অন্ত, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য এবং প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত। যিনি এ আয়াতের প্রকাশস্থল-(তিন আদি, তিনি অন্ত, তিনি জাহির, তিনি বাতিন আর তিনিই সকল বিষয় সম্পর্কে অবহিত) এতে কোন সন্দেহকারীর সন্দেহের অবকাশ নেই এবং এটা কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, মুদ্রণ জনিত বিভ্রাট مظير (প্রকাশস্থল) শব্দটি من هو দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছেকেননা, ঐ কাতিবতাে আমার অভিমতে ‘মুহাম্মদ (ﷺ) এর স্থলে (মাজমাউন) পর্যন্ত লিখে দিয়েছিলোদেখুন, ২৯ পৃষ্ঠার শেষে ভুলে ২৬ পৃঃ দেখানাে হয়েছেকথা যদি এমন হয়, তাহলে তাতাে খুবই চমৎকার। যদি আমরা মেনেও নিই যে, মৌলিক বক্তব্য তাই ছিলাে যা মুদ্রিত হয়েছে, তাহলেও আমি উত্তরদাতাকে জানাচ্ছি যে, ঐ আলিম সুন্নী বিশুদ্ধ আক্বীদা সম্পন্ন এবং ভ্রান্ত মাযহাব কুচক্রীদের জন্য ক্ষতিকারক। আর প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরযে আইন যে, স্বীয় ভাইয়ের উক্তিকে যথাসম্ভব উত্তম অর্থ বিশ্লেষণের উপর প্রয়ােগ করা থেকে যেন বঞ্চিত না হন কিন্তু যারা হৃদয়ের নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত থেকেছেযেমন শ্রদ্ধেয় ইমামগণ এর উপর সুস্পষ্ট উক্তি ব্যক্ত করেছেন। 


অতঃপর দ্বিতীয় জবাব হলাে আপনাদের কি হয়েছে যে, ‘মানশব্দ সাকিন সহকারে ইসমে মাওসুল (সম্বন্ধবাচক সর্বনাম) বানিয়ে পড়ছেন? তা মানে নুনে তাশদীদযের' সহকারে আয়াতে করীমার দিকে সম্পর্ক করে কেন পড়ছেন না? অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তাঁর উপর দরুদ প্রেরণ করেন যিনি এ আয়াতের ভিত্তিতে (আমাদের জন্য) অনুগ্রহ, আর তিনি হলেন মুহাম্মদ (ﷺ) যেমন আল্লাহ তায়ালা কাফিরদের বলেন, “তারা পরিবর্তন করেছে আল্লাহর নি’মাত (অনুগ্রহ)কে"। রঈসুল মােফাসসেরীন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ( আয়াতের ব্যাখ্যায়) বলেন-‘আল্লাহর নিমাত দ্বারা উদ্দেশ্য মুহাম্মদ () তিনি আল্লাহর বিশেষ নি’মাত এবং কুরআনের মিন্নাত (ইহসান)। আর বিশেষ করে এ আয়াতের উল্লেখ মর্যাদার উপযুক্ততার জন্যই করা হয়েছেকেননা, রাসুল পাক (ﷺ) হলেন সমগ্র জাহানের প্রথম সৃষ্টিঅতএব, সকল  সৃষ্টিসমূহ তাঁর সৃষ্টির কারণেই সৃষ্ট।  তিনি (সৃষ্টির দিক দিয়ে) সকলের মধ্যে সর্ব প্রথম, আর প্রেরণের দিক দিয়ে সর্বশেষ রাসুল। অতএব, সকল নবীর প্রতি যত, প্রকার জ্ঞান অবতীর্ণ হয়েছে, তা সবই হুজুর (ﷺ)কে প্রদান করেছেন। আর তিনি স্বীয় মুজিজাবলী দ্বারা সমুজ্জল এবং তাতে তাঁর গায়বের সংবাদও দেয়া হয়েছেআর হুজুর (ﷺ) স্বীয় জাত সম্পর্কে অপ্রকাশ্য যে, তিনি আল্লাহ তায়ালার জাত তাঁর চিরস্থায়ী গুণাবলীর প্রকাশস্থল।

 সুতরাং হুজুর (ﷺ) আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতায়ালার অবগত করার মাধ্যমে প্রথম দিবস থেকে শুরু করে শেষ দিবস, পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে, আর যা কিছু হবে সব কিছু সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা এ উজ্জ্বল পাঁচটি নাম দ্বারা তাঁর উপর ইহসান করেছেন আর তাঁকে প্রেরণের মাধ্যমে আমাদের উপর মহা অনুগ্রহ করেছেন। কেননা, তিনি এ সম্মানিত আয়াতের ভিত্তিতে নি’মাত (অনুগ্রহ বিশেষ)।


তৃতীয় জবাবঃ এতে কোন সন্দেহ নেই যে, রাসুলে পাক (ﷺ) আল্লাহ তায়ালার অনেক সুন্দরতম গুণবাচক নাম দ্বারা মহিমান্বিত হয়েছেন। আমাদের সরদার (আমার) সম্মানিত পিতা নির্ভরযােগ্য গ্রন্থসুরুরুল কুলুবে ফি যিকরিল মাহবুব”- সাতষট্টিটি নাম গণনা করেছেন। অধমআল উরুসুল আসমাউল হুসনা ফিমা লিনাবিয়্যেনা মিনাল আসমায়িল হুসনা” নামক গ্রন্থে পছন্দনীয়সংখ্যক বৃদ্ধি করেছি এবং এর গুঢ়রহস্য, মূল উৎস মুলতত্ত্ব বর্ণনা করেছিপ্রকাশ থাকে যে,


اَوَّل(আদি) آخر(অন্ত) ظاهر (প্রকাশ্য) باطن(গুপ্ত)। পবিত্রতম নামগুলাে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় মাহবুব

(ﷺ)কে প্রদান করেছেন। এরপরও আমার জরুরী নয় এ পঞ্চ অদৃশ্যজ্ঞানের অংশসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা করি, যা আওলিয়ায়ে কিরামগণ বলে গিয়েছেন। তাঁদের সরদার এবং তাদের উপর দরুদ সালাম এটা ঐ সমুদ্র যার সীমা জানা নেই। গুলাের গভীরতা পরিমাপ করতে চাইলে বাক্য শৃঙখলা থেকে বের হয়ে যাবেআর যাকে কুরআন আরােগ্য দান করে নি, তার রােগ কোথায় গেলে আরােগ্য লাভ করবে? আমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছিপ্রিয় হাবীব (ﷺ)-এর উপর দরুদ , সালাম।

- প্রথম খণ্ড সমাপ্তঃ


দ্বিতীয় ভাগ


 আল্লাহর প্রশংসা! হক প্রকাশিত ও সত্য প্রতিভাত হয়েছে। হেদায়তের সূর্যের উপর কোন পর্দা অবশিষ্ট রইলােনা। এটা আমাদের ও মানুষের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ। কিন্তু অনেক লােক শােকরিয়া জ্ঞাপন করেনা। আর যে ব্যক্তি এ নগন্য বান্দার বক্তব্যে এমন ব্যক্তির ন্যায় দৃষ্টিপাত করে যে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা, উপকারিতা হাসিল করতে চায়, প্রত্যক্ষদর্শী ও উপস্থিত হৃদয়ের সাথে শ্রবণ করে। তার নিকট মারমুখী গোয়ারের প্রত্যেক প্রশ্নের বিশুদ্ধ জবাব সুস্পষ্ট হয়ে যাবে ! কিন্তু বিশ্লেষণ অধিক উপকারী এবং বর্ণনার উপযুক্ত। সুতরাং আমরা যেন প্রতিটি প্রশ্নের উপর পৃথক পৃথক আলােচনা করি। আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থী।

Top