বিষয় নং-২৮: হাযির-নাযির


দেওবন্দী এবং আহলে হাদীস পন্থিরা প্রিয় নবী (ﷺ) হারির-নাযির হওয়াকে শিরক মনে করে। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীগণের ঈমানের দাবী হল রাসূলে আকরাম (ﷺ) হাজের-নাযের।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا (৪৫) وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا

হে অদৃশ্যের সংবাদদাতা (নবী)! নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রেরণ করেছিউপস্থিতপর্যবেক্ষণকারী’ (হাজির-নাযির) করে সুসংবাদদাতা এবং সর্তককারীরূপে এবং আল্লাহর প্রতি তাঁর নির্দেশে আহবানকারী আর আলোকোজ্জ্বলকারী সূর্যরূপে।”  ৩৩৫

  • ৩৩৫. সূরা আহযাব, আয়াত নং-৪৫-৪৬


শাহেদ অর্থ হাজের-নাযের কেননা شَاهِدْ শব্দটি شُهُوْدُ এবং شَهَادَتْ শব্দ হতে নির্গত। ইমাম রাগেব (رحمة الله)  তাঁরমুফরাদাতেলিখেন

الشُّهُودُ والشَّهَادَةُ: الحضور مع المشاهدة، إمّا بالبصر، أو بالبصيرة،

-‘‘ الشُّهُودُ এবং الشَّهَادَةُ এর অর্থ চোখে দেখার সাথে উপস্থিত হওয়া।’’ ৩৩৬

  • ৩৩৬. ইমাম রাগেব ইস্পাহানী, আল-মুফরাদাত, ৪৬৫ পৃ.


তাফসীরে কাবীর, রহুল মাআনী, মাদারেক, আবুস সাউদ, বায়জাবী, জুমাল এবং জালালাইন শরীফে আছে তাদের জন্যই নবী পাক (ﷺ) শাহেদ, যাদের কাছে তিনি প্রেরিত হয়েছেন।

নিন্মে তাফসীরে জালালাইন শরীফের মূল ইবারত দেয়া হল-

{يأيها النَّبِيّ إنَّا أَرْسَلْنَاك شَاهِدًا} عَلَى مَنْ أَرْسَلْت إلَيْهِمْ

-‘‘আমি আপনাকে তাদের জন্যই হাজের-নাযের করেছি, যাদের কাছে আপনাকে প্রেরণ করেছি।’’  ৩৩৭

  • ৩৩৭. ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে জালালাইন শরীফ, ৩৫৫ পৃ.


সহীহ মুসলিম শরীফে রয়েছে রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন

وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً

-‘‘আমি সমস্ত সৃষ্টির নিকট প্রেরিত হয়েছি।’’ ৩৩৮ 

  • ৩৩৮. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/৩৭১ পৃ. হা/৫২৩, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, (ভারতীয় ৫১২ পৃ.) ৩/১৬০১ পৃ. হা/৫৭৪৮, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৫/১৯৫ পৃ. হা/৯৩৩৭, বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ২/৬০৭ পৃ. হা/৪২৬২, সুনানে তিরমিযি, ৩/১৭৫ পৃ. হা/১৫৫৩, সহীহ ইবনে হিব্বান, ৬/৮৭ পৃ. হা/২৩১৩, বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৩/১৯৮ পৃ. হা/৩৬১৭


আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا

-“আর রাসূল তোমাদের রক্ষক সাক্ষী।”(সূরা বাকারা, আয়াত নং-১৪৩)

আল্লামা তাদের পাটনী (رحمة الله)’ আকিদা

আল্লামা তাহের পাটনী (رحمة الله) হাদিস গ্রন্থ মাজমাউল বিহারুল আনওয়ারে বলেন

انا شهيد اى اشهد عليكم باعمالكم فكاتئ باق معكم انا شهيد على هؤلاء اى اشفع واشهد بانهم بذلوا ارواحهم لية

-‘‘আমি তোমাদের প্রত্যেক কর্মের সাক্ষ্য দেব। সুতরাং আমি তোমাদের সাথেই আছি। তাবরানী শরীফে আছে-আমি তাদের জন্য শাফায়াত করবো এবং মর্মে সাক্ষ্য দেব যে, তারা তাদের আত্মা আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করেছে।’’ ৩৩৯

  • ৩৩৯. তাহের পাটনী, মাজমাউল বিহারুল আনওয়ার, ২য় খণ্ড, ২২০ পৃ.


ইমাম খাযেন (رحمة الله) এর আকিদা

তাফসীরে খাজনে তিনি বলেন

شُهُودٌ أي حضور

-‘‘শুহুদ অর্থ উপস্থিত হওয়া।’’ (তাফসিরে খাযেন, /৪১৩ পৃ.)

রাসূলে পাক (ﷺ)’ আকিদা

রাসুলে পাক ছাহেবে লাওলাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-

أَنَا أَوْلَى بِكُلِّ مُؤْمِنٍ مِنْ نَفْسِهِ، مَنْ تَرَكَ دَيْنًا فَعَلَيَّ

-‘‘আমি প্রত্যেক মুমিনে প্রাণের চেয়েও এত কাছে যে, সে কোন কর্জ করলে তাও আমার জিম্মায় থাকে।’’ ৩৪০

  • ৩৪০. ইমাম নাসাঈ, আস-সুনান, ৪র্থ খণ্ড ৬৫ পৃ., হা/১৯৬২ এবং আস-সুনানুল কোবরা, ২/৪৩৭ পৃ. হা/২১০০ এবং ৭/৪৩৮ পৃ. হা/৮৪১৫, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২২/৬৫ পৃ. হা/১৪১৫৯, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৩/২৪৭ পৃ. হা/৩৩৪৩


আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

وَما أَرْسَلْناكَ إِلاَّ رَحْمَةً لِلْعالَمِينَ

-“এবং আমি আপনাকে প্রেরণ করেনি কিন্তু রহমত করে সমগ্র বিশ্ব জগতের জন্য।৩৪১

  • ৩৪১. সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং-১০৭


আল্লামা আলূসী (رحمة الله)’ আকিদা

আল্লামা আলূসী (رحمة الله) উপরুক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন

وكونه صلّى الله عليه وسلّم رحمة للجميع باعتبار أنه عليه الصلاة والسلام واسطة الفيض الإلهي على الممكنات على حسب القوابل، ولذا كان نوره صلّى الله عليه وسلّم أول المخلوقات، ففي الخبر أول ما خلق الله تعالى نور نبيك يا جابر وجاء الله تعالى المعطي وأنا القاسم وللصوفية قدست أسرارهم في هذا الفصل كلام فوق ذلك

-‘‘রাসূলে পাক (ﷺ) দৃষ্টিকোণে সমস্ত সৃষ্টির জন্য রহমত যে, মহান আল্লাহর অনুগ্রহ পাবার মূখ্য মাধ্যম হলেন হুযূরে পাক (ﷺ) এজন্য যে, হুযুর পুর নুর (ﷺ)’ নূর মুবারক সর্বপ্রথম সৃষ্টি। হাদিসে পাকে এসেছে রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, হে জাবের! আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম তোমার নবীর নূর মুবারক কে সৃষ্টি করেছেন। হাদিসে পাকে আরো এসেছে, আল্লাহ আমাকে দান করেন আমি বন্টন করি। ব্যাপারে সুফিয়ানে কেরাম আরো বিস্তারিত বলেছেন।’’ ৩৪২

  • ৩৪২. আল্লামা আলূসী, রুহুল মা‘আনী, ৯/১০০ পৃ., সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং-১০৭-এর আলোচনা।


আল্লামা ইসমাঈল (رحمة الله) এর আকিদা

তাফসীরে রুহুল বয়ানে আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) এই আয়াতে তাফসীরে বলেন-

قال فى عرائس البقلى ايها الفهيم ان الله أخبرنا ان نور محمد عليه السلام أول ما خلقه ثم خلق جميع الخلائق من العرش الى الثرى من بعض نوره فارساله الى الوجود والشهود رحمة لكل موجود إذا لجميع صدر منه فكونه كون الخلق وكونه سبب وجود الخلق وسبب رحمة الله على جميع الخلائق فهو رحمة كافية وافهم ان جميع الخلائق صورة مخلوقة مطروحة فى فضاء القدرة بلا روح حقيقة منتظرة لقدوم محمد عليه السلام فاذا قدم الى العالم صار العالم حيا بوجوده لانه روح جميع الخلائق.

-‘‘(আরাইস গ্রন্থে এসেছে) হে ফাহীম (অনুধাবনকারী)! আল্লাহ তায়ালা তোমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, সমস্ত সৃষ্টির পূর্বেই নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ) সৃষ্টি হয়েছে। এরপর আরশ থেকে তাহতুছ ছারা পর্যন্ত প্রত্যেক সৃষ্টি তাঁর নূর মোবারক থেকে সৃষ্টি হয়েছে।

সুতরাং অর্থে তিনি আলমে ওয়াজুদ, শুহুদ (অস্তিত্ব এবং দৃশ্যমান জগত) এর রাসূল এবং সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত। সমস্ত মাখলুক তাঁর থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি জগতের অনু-পরমানুর জন্য তিনি রহমত। বুঝা গেল কুদরতের রাজ্যে সমস্ত মাখলুক প্রাণহীন ছিল এবং হুযূর (ﷺ)-এর আগমনের অপেক্ষায় ছিল। সুতরাং তাঁর আবির্ভাবের সাথে সৃষ্টি জগত জীবন লাভে ধন্য হয়। কেননা তিনি সমস্ত জগতের প্রাণ।’’ (আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, /৫২৮ পৃ.)

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন

النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ

-“ নবী মুসলমানদের তাদের প্রাণের চেয়েও অধিক নিকটে এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতা।৩৪৩

  • ৩৪৩. সুরা আহযাব, আয়াত নং-৬


لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ

-“নিশ্চয় তোমাদের নিকট তাশরীফ আনয়ন করেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে রাসূল, যাঁর নিকট তোমাদের কষ্টে পড়া কষ্টদায়ক, তোমাদের কল্যাণ অতিমাত্রায় কামনাকারী, মুসলমানদের উপর পুর্ণ দয়াদ্র, দয়ালু।’’৩৪৪

  • ৩৪৪. সুরা তাওবা, আয়াত নং-১২৮


وَقُلِ اعْمَلُوا فَسَيَرَى اللَّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ وَالْمُؤْمِنُونَ

-“এবং আপনি বলুন, জেনে রেখো, এখন তোমাদের কাজ দেখবেন আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং মুমিনগণ।’’ ৩৪৫

  • ৩৪৫. সুরা তাওবা, আয়াত নং-১০৫


সায়্যিদুনা হযরত আবু হোরাইরা (رضي الله عنه) এর আকিদা

হযরত আবু হোরাইরা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন

مَنْ رَآنِي فِي المَنَامِ فَسَيَرَانِي فِي اليَقَظَةِ، وَلاَ يَتَمَثَّلُ الشَّيْطَانُ بِي

-‘‘স্বপ্নে যে আমাকে দেখেছে আচিরেই জাগ্রত অবস্থান সে আমার সাক্ষাৎ পাবে।’’  ৩৪৬

  • ৩৪৬. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, নবম খণ্ড ৯৯ পৃ. হা/৬৯৯৩, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৩৯৪ পৃ.) ২/১২৯৭ পৃ. হা/৪৬১১, দাউদ ৪র্থ খণ্ড ৩০৫ পৃ. হা/৫০২৩, সহীহ মুসলিম শরীফ ৪র্থ খণ্ড ১৭৭৫ পৃ., হা/২২৬৬ ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, ৫/৬০ পৃ. হা/৩৯০০


শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দীস দেহলভী (رحمة الله)’ আকিদা

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন-

ايں بشارت است براياں جمال اورا در خواب كہ اسفر بعد ازار تفاع كہ ورات نضانيہ وقطع علأئق جسمانيہ بمرتبہ بر سندكہ كہ بہ حجاب كشفا دعيانا در بيدارى بايں سعادت فائز باشتدچناپنہ اہل خصوص از اولياء رامييا شد وبرايں معنى اس حديث دليل ميشود ير صحت رؤيت آں حضرت ﷺ در يقظہ

-‘‘ শুভ সংবাদ তাদের জন্য যারা স্বপ্নে হুযূর (ﷺ) এর দীদার লাভ করে। অবশেষে সে অন্ধকার নিঃশ্বাসের পর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা শেষ হওয়ার পর এই স্তরে পৌঁছবে যে, পর্দাবিহীন জাগ্রত অবস্থায় পরিষ্কারভাবে দেখতে পাবে।’’ (আল্লামা শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী, আশিয়াতুল লুমআত (ফার্সী), /৬৪০ পৃ.) তিনি তার আরেক প্রসিদ্ধ গ্রন্থে লিখেন-

وہاچنديں اختلافات وكثرت مذاہب كہ درعلماء امت است كہ يك كس راد ريں مسئلہ خلافے نيست كہ آنحضرت ﷺ بحقيت حيات بے شائيہ مجاز وترہم وتاويل دائم وباقى است وبر اعمال امت حاضر وناضر ومر غالباں حقيقة راو متوبہان آں حضرت را مفيض ومربى است

-‘‘যদিওবা আলেম সমাজের মধ্যে শরয়ী বিধানের ক্ষেত্রে বহুধা মত পরিলক্ষিত হয়; কিন্তু একটি বিষয়ে সন্দেহাতীতভাবে চিন্তা গবেষণা ব্যতিত একমত যে, সরকারে দোআলম আঁ হযরত (ﷺ) প্রকৃত জীবনসমৃন্ধ এবং আপন জীবনে এখনো বিদ্যমান। উম্মতের কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষবান। তাঁর (ﷺ) প্রতি মুখাপেক্ষিদেরকে স্বয়ং নিজেই উপকৃত অনুগ্রহ করেন।’’ (আখবারুল আখিয়ার, ১৬১ পৃ.)

হযরত আবু হুমাইদ সাঈদী (رضي الله عنه)’ আকিদা:

হযরত আবু হুমাইদ সাঈদী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-

إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ، فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ لِيَقُلْ: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

-“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তার পূর্বে রাসূলে পাক (ﷺ)’ উপর দরুদ পাঠ করবে এরপর নিম্মোক্ত 

اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

দোয়া পড়বে।’’ ৩৪৭

  • ৩৪৭. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, ১/২৫৪ পৃ. হা/৭৭২, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ১/১২৬ পৃ. হা/৪৬৫, খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবীহ, ১/২২১ পৃ. হা/৭০৩


হযরত আলক্বামা (رضي الله عنه)’ আকিদা

ইমামুল মুহাদ্দিস কাজী আয়্যায মালেকী (رحمة الله) বলেন

وَعَنْ عَلْقَمَةَ : إِذَا دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ أَقُولُ: السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ

-‘‘হযরত আলকামা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মসজিদে প্রবেশ কালে বলে থাকি -

السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ

হে নবী! আপনাকে সালাম এবং আপনার উপর মহান রবের অগনিত করুনা এবং বরকত বর্ষিত হোক’’ ৩৪৮

  • ৩৪৮. ইমাম কাযি আয়্যায, আশ-শিফা, ২য় খণ্ড, ১৫৬ পৃ.


হযরত আলকামাহ (رضي الله عنه)’ এই বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়। তিনি মসজিদে প্রবেশের পূর্বে রাসূলে পাক (ﷺ) কে খেতাব করেই নেদা করতেন।

সায়্যিদুনা আমর বিন দিনার (رحمة الله)’ আকিদা

আল্লামা কাজী আয়্যায মালেকী (رحمة الله) বলেন-

إِنْ لَمْ يَكُنْ فِي الْبَيْتِ أَحَدٌ فَقُلْ السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ

তাবেয়ী হযরত আমর বিন দিনার (رحمة الله) বলেন, তোমরা ঘরে প্রবেশ কালে তাতে কেউ না থাকলে বলবেহে নবী! আপনাকে সালাম এবং আপনার উপর মহান রবের অগনিত করুনা এবং বরকত বর্ষিত হোক’’৩৪৯ 

  • ৩৪৯. ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ২য় খণ্ড, ১৫৫ পৃ.


মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله)’ আকিদা

হযরত আমর বিন দিনার (رحمة الله) এর উপরোক্ত উক্তির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল্লামা মোল্লা আল ক্বারী হানাফী (رحمة الله) বলেন,

أي لأن روحه عليه السلام حاضر في بيوت أهل الإسلام

-‘‘এটা এজন্য যে প্রত্যেক মুসলমানের ঘরে রাসূলে পাক (ﷺ) এর রূহ মুবারক উপস্থিত থাকেন।’’ ৩৫০

  • ৩৫০. আল্লামা মোল্লা আল ক্বারী হানাফী, শরহে শিফা শরীফ, ২য় খণ্ড , ১১৮ পৃ.


আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله), আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি (رحمة الله), আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله) এবং আল্লামা আবদুল বাকী জুরকানী (رحمة الله) এর আকিদা:

وَيُحْتَمَلُ أَنْ يُقَالَ عَلَى طَرِيقَةِ أَهْلِ الْعِرْفَانِ إِنَّ الْمُصَلِّينَ لَمَّا اسْتَفْتَحُوا بَابَ الْمَلَكُوتِ بِالتَّحِيَّاتِ أَذِنَ لَهُمْ بِالدُّخُولِ فِي حَرَمِ الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ، فَقَرَّتْ أَعْيُنُهُمْ بِالْمُنَاجَاةِ فَنُبِّهُوا عَلَى أَنَّ ذَلِكَ بِوَاسِطَةِ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ وَبِرْكَةِ مُتَابَعَتِهِ فَالْتَفَتُوا، فَإِذَا الْحَبِيبُ فِي حَرَمِ الْحَبِيبِ حَاضِرٌ فَأَقْبَلُوا عَلَيْهِ: قَائِلِينَ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ.

-‘‘আহলে ইরফান (মারিফাত পন্থী) দের তরীকা এটাও হতে পারে যে, মুসল্লীরা যখন আত্তাহিয়্যাতুর মাধ্যমে মালাকুতের দরজা উন্মুক্ত করা হয়, তখন তাদেরকে চিরজীবের স্তরে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়। তখন একাকীত্বের আনন্দে তাঁদের চক্ষু যুগল শীতল হয়। তখন তাদের বিষয়ে সতর্ক করা হয় যে, মহান আল্লাহর দরবারে যে মর্যাদা তারা লাভ করেছেন তা রাসূলে পাক (ﷺ) এর উসিলায়। নামাযীরা হাকিকত (রহস্য) দ্বারা অবগত হয়ে যখন দৃষ্টিপাত করে তখন তারা অলোকন করে যে, হাবীবের হেরমে হাবীব (ﷺ) উপস্থিত (আল্লাহর দরবারে রাসূলে পাক (ﷺ) হাযির) হুযূর (ﷺ) কে দেখেই তারা

السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ

বলে রাসূলে পাক (ﷺ) এর দিকে তারা মনোনিবেশ করে। ’’ ৩৫১

  • ৩৫১. আল্লামা জুরকানী, শরহে মুয়াত্তায়ে মালেক, ১/৩৪৩ পৃ. হা/২০৭, আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ৬/১১১ পৃ., কাস্তাল্লানী, ইরশাদুস সারী, ২/১৩২ পৃ., ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ২/৩১৪ পৃ. হা/৮৩১-এর আলোচনা।

Top