৪. স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখা ও আনন্দ দেওয়া


স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখা এবং মাঝে মধ্যে শরীয়ত সম্মত পন্থায় আনন্দ প্রকাশের সুযোগ দেওয়া স্বামীর উচিত। এতে মন প্রফুল্ল থাকে এবং ঘরের কাজে ও স্বামীর সেবায় স্ত্রী উৎসাহিত হয়। 


হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- كنت ألعب بالبنات عند النبي صلى الله عليه و سلم وكان لي صواحب يلعبن معي فكان رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا دخل يتقمعن منه فيسربهن إلي فيلعبن معي- 

আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ’র সামনে পুতুল খেলা খেলতাম। আমার কয়েকজন সাথী ছিল যারা আমার সাথে খেলা করত। যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রবেশ করতেন তখন তারা আত্মগোপন করতো। কিন্তু তিনি তাদেরকে আমার কাছে (খেলার জন্য) পাঠিয়ে দিতেন। তারপর তারা আমার সাথে খেলতো। ১৫৫

১৫৫.বুখারী ও মুসলিম, সূত্র. মিশকাত, পৃ. ২৮০


قَالَتْ عَائِشَةُ وَاللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُومُ عَلَى بَابِ حُجْرَتِى - وَالْحَبَشَةُ يَلْعَبُونَ بِحِرَابِهِمْ فِى مَسْجِدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَسْتُرُنِى بِرِدَائِهِ لِكَىْ أَنْظُرَ إِلَى لَعِبِهِمْ ثُمَّ يَقُومُ مِنْ أَجْلِى حَتَّى أَكُونَ أَنَا الَّتِى أَنْصَرِفُ. فَاقْدُرُوا قَدْرَ الْجَارِيَةِ الْحَدِيثَةِ السِّنِّ حَرِيصَةً عَلَى اللَّهْوِ.-

হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি নবী করিম কে আমার হুজরার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। এসময় হাবশীরা মসজিদের আঙ্গীনায় বর্শা নিয়ে খেলা করছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন তার চাদর দিয়ে আমাকে ঢেকে নিতেন, যাতে আমি তাঁর কান ও কাঁধের মধ্য দিয়ে তাদের খেলা দেখতে পারি। এসময় তিনি কেবল আমার কারণে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন যতক্ষণ না আমি তা হতে ফিরতাম। এখন অনুমান কর অল্প বয়স্ক খেলার প্রতি আকৃষ্ট বালিকার খেলা দেখার সময়ের পরিমাণ কতক্ষণ হতে পারে? ১৫৬

১৫৬.বুখারী ও মুসলিম, সূত্র. মিশকাত; পৃ. ২৮০

 

হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) ’র যেহেতু অল্প বয়সে বিবাহ হয়েছিলো তাই তার অন্তরে খেলাধুলার প্রবণতা ছিলো। তাছাড়া অল্প বয়স্ক একজন কোমলমতি নারী যখন পিতা-মাতা, ভাই-বোন নিজ পরিবারের সকলের মায়া-মমতা ত্যাগ করে অপরিচিত এক নতুন পরিবেশে স্বামীর ঘরে চলে যায়, তখন নারীর মনটা খুবই নাজুক এবং অসহায় অবস্থায় থাকে। এসময় সে নিজেকে অত্যন্ত নিঃসঙ্গ মনে করে। তখন স্বামী বা স্বামীপক্ষের কেউ তাকে একটু সঙ্গ দিলে কিংবা শরীয়তসম্মত কিছুটা আনন্দ দিলে নারী অনন্ত সাগরে কুল পাওয়ার ন্যায় স্বস্তি বোধ করে। একারণেই মানবতার উত্তম আদর্শ নবী মুহাম্মদ (ﷺ) তাঁর একমাত্র কুমারী স্ত্রী হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) কে তার খেলার সাথীদের ডেকে দিয়ে তার সাথে খেলার সুযোগ করে দিতেন। 


দ্বিতীয় হাদিসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) কে খেলা দেখানোর উদ্দেশ্যে দরজায় দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতেন। কারন তাঁর কাছে খেলা দেখার আগ্রহ বা শখ ছিল না। সাধারণতঃ অল্প বয়স্ক ছেলে-মেয়েদের মধ্যে খেলাধুলা করা ও দেখার শখ থাকে। দীর্ঘক্ষণ যাবত দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর কষ্ট হলেও কুমারী স্ত্রীর চাহিদা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তিনি নিজ থেকে স্ত্রীকে নিয়ে আসতেন না। এটাই স্বামী-স্ত্রীর প্রকৃত ভালোবাসার রূপ ও দৃষ্টান্ত। 


عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّهَا كَانَتْ مَعَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فِى سَفَرٍ قَالَتْ فَسَابَقْتُهُ فَسَبَقْتُهُ عَلَى رِجْلَىَّ فَلَمَّا حَمَلْتُ اللَّحْمَ سَابَقْتُهُ فَسَبَقَنِى فَقَالَ ্র هَذِهِ بِتِلْكَ السَّبْقَةِ -

হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, একবার তিনি রাসূলুল্লাহ ’র সাথে সফরে ছিলেন। তিনি বলেন আমি তাঁর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা দিলাম এবং আমি তাঁর উপর বিজয়ী হলাম। অতঃপর আমি যখন মোটা হয়ে গেলাম তখন একবার প্রতিযোগিতা করলাম। এবার তিনি আমার উপর জয়লাভ করলেন আর বললেন, এটা ঐ বিজয়ের বদলা। ১৫৭

১৫৭.ইমাম আবু দাউদ র. (২৭৫ হি.), আবু দাউদ, সূত্র. মিশকাত; পৃ. ২৮১


প্রিয় পাঠক! দেখুন আর চিন্তা করুন, উভয়ই জগতের সর্দার, সৃষ্টির সর্বোত্তম ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্ত্রীর মনে আনন্দ দেওয়ার উদ্দেশ্যেস্বেচ্ছায় পরাজয় বরণ করেছিলেন। কারণ অল্প বয়স্ক ছেলে-মেয়েরা প্রতিযোগিতায় কাউকে হারাতে পারলে খুবই খুশী ও আনন্দিত হয়। স্ত্রীর চেহারায় সেই অনাবিল আনন্দ ফুটে তোলার জন্য পৃথিবী বিজয়ী মানুষ নিজ স্ত্রীর কাছে হেরে গেলেন। কিয়ামত পর্যন্ত (ﷺ) উম্মতকে শিক্ষা দেওয়াও ছিল এর একটি উদ্দেশ্য।

Top