আল-কোরআনের ই’জাযের (অলৌকিকত্ব, বিস্ময়) প্রমাণ 


স্মর্তব্য যে, মুতাকাল্লিমীনরা (যারা কালাম বা যুক্তি বিদ্যায় অভিজ্ঞ; দার্শনিকগণ) ই’জাযে-কোরআনের ব্যাপারে মতানৈক্য পােষণ করেন। তাদের কারাে কারাে অভিমত যে, আল-কোরআনের বাগধারা ও বাক্য বিন্যাস পদ্ধতি অত্যন্ত মনােরম ও চমৎকার, যা আরবী ভাষা ও সাহিত্যের গদ্য ও পদ্য পদ্ধতির বিপরীত। সাধারণতঃ এ অভিনব পদ্ধতি কিসসা ও সূরাগুলির প্রথমে এবং শেষে দেখা যায়; তাছাড়া আরবী ভাষার মধ্যে যে ছন্দের মিল পরিলক্ষিত হয়, আল্-কোরআনে তা এমন ভাবে বিধৃত হয়েছে যে, যার সাথে আরবী সাহিত্যের কোন নযীর খুজে পাওয়া যায়না, বরং তারা এর মুকাবিলা করতে অক্ষম। কোন কোন মু'তাযিলার অভিমতও এরূপ। 

 

জাহেয মুতাযেলী এবং আহলে আরবদের অভিমত হলাে : আল কোরআনের বালাগাত বা ভাষার অলঙ্কার এত উঁচু স্তরের ও উন্নতমানের যে, যার নযির আরবী-ভাষা সাহিত্যের বাক্য বিন্যাসে খুঁজে পাওয়া যায়না। আরবী ভাষার বালাগাত, আল-কোরআনের বালাগাতের সমকক্ষ নয়। বস্তুত যে ব্যক্তি  আরবী ভাষা ও তার অলঙ্কার শাস্ত্রে অভিজ্ঞ হবে, সে আল

-কোরআনের ই’জায সম্পর্কে অবহিত হতে পারবে। কাযী বাকেলানী বলেন : আল-কোরআনের ইজায দুটি বিষয়েই পরিলক্ষিত হয়; যথা :-১. বর্ণনা ভঙ্গীর অপূর্বতায় এবং ২. উঁচু স্তরের অলঙ্কারময় শব্দ বিন্যাসে; যা আরবী সাহিত্যে সাধারণতঃ দেখা যায় না। আবার কেউ কেউ বলেন আল-কোরআনের ই’যাজ এজন্য যে, তাতে গায়েব বা অদৃশ্য জগতের খবর সন্নিবেশিত আছে। যেমন : 

وَهُمۡ مِّنۡ بَعۡدِ غَلَبِهِمۡ سَيَغۡلِبُوۡنَ. فِيۡ بِضۡعِ سِنِينَ

অর্থাৎ “তারা এদের বিজয়ের পর কয়েক বছরের মধ্যে তাদের উপর বিজয়ী হবে । (আল-কোরআন, ৩০: ৩-৪ আয়াত )।


উপরোক্ত আয়াতে এ খবর দেওয়া হয়েছে যে, রােমকগণ-ইরানীদের উপর তিন থেকে নয় বছরের মধ্যে বিজয়ী হবে। আর ব্যাপারটি সেরূপই হয়েছিল, যেমন আল-কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। | কিছু কিছু জ্ঞানীর নিকট আল-কোরআন এজন্য ই’জায যে, তার মধ্যে যা কিছু বিধৃত হয়েছে, এর মাঝে কোন মতানৈক্য ও বৈপরীত্য নেই; যদিও তার বর্ণনাধারা অনেক দীর্ঘ ও লম্বা। যেমন আল-কোরআনের দলীল :... 

.وَلَوۡ كَانَ مِنۡ عِنۡدِ غَيۡرِ اللّٰهِ لَوَجَدُوۡا فِيۡهِ اخۡتَلَافًا كَثِيۡرًا 

অর্থাৎ “যদি এই কোরআন আল্লাহ ছাড়া আর কারাে তরফ থেকে হতাে, তবে এর মধ্যে অসংখ্য মতানৈক্য, মতভেদ দেখতে পেতাে"।(আল-কোরআন; সূরা নিসা, আয়াত : ৮২) কারাে কারাে মতে আল-কোরআন এ কারণে ই’জায় যে, তা সারাফার উপর প্রতিষ্ঠত; আর সারাফা' বলা হয় : হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বি'ছাতের আগে আরবেরা কোরআনের অনুরূপ বাক্য বিন্যাসে সমর্থ ছিল; কিন্তু আল-কোরআন নাযিল হওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা তাদের থেকে এ সামর্থ ছিনিয়ে নেন; ফলে তারা তার মুকাবিলা করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। তাদের এ সামর্থ্য ছিনিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটি কিরূপ ছিল, তন্মধ্যে মতানৈক্য দেখা যায়। উস্তাদ আবু ইসহাক (যিনি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত) ও নিযাম মুতাযেলীর অভিমত হলাে : আল্লাহ তায়ালা তাদের মধ্যে আল্-কোরআনের অনুরূপ আয়াত তৈরীর শক্তি থাকা সত্ত্বেও, তাদেরকে এ থেকে বিরত রাখেন। আর তা এভাবে সম্পন্ন হয়েছিল যে, আল্লাহ তা'আলা তাদের মধ্যে নীচতা ও হীনমন্যতার ভাব সৃষ্টি করে দেন; ফলে, তাদের মাঝে যােগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা মনে করতাে যে, আমরা আল্ -কোরআনের মুকাবিলা ও বিরােধিতা করতে অক্ষম। 


মুরতাযা নামী একজন শিয়া আলেমের অভিমত হলাে : বরং আল্লাহ তায়ালা তাদের থেকে ঐসব ইলম ‘সলব’ করেন বা কেড়ে নেন, যে জ্ঞান মুকাবিলা করার জন্য বা বিরােধিতার জন্য প্রয়ােজন হয়।

Top