বিষয় নং-৩: যে কাজ মুসলমানগণ ভাল মনে করে তা আল্লাহর নিকট ভাল:


ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন- 


عَنْ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ ؓ ، قَالَ: إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ نَظَرَ فِي قُلُوبِ الْعِبَادِ فَاخْتَارَ مُحَمَّدًا فَبَعَثَهُ بِرِسَالَاتِهِ وَانْتَخَبَهُ بِعِلْمِهِ ثُمَّ نَظَرَ فِي قُلُوبِ النَّاسِ بَعْدَهُ فَاخْتَارَ لَهُ أَصْحَابَهُ فَجَعَلَهُمْ أَنْصَارَ دِينِهِ وَوُزَرَاءَ نَبِيِّهِ ﷺ فَمَا رَآهُ الْمُؤْمِنُونَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ حَسَنٌ وَمَا رَآهُ الْمُؤْمِنُونَ قَبِيحًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ قَبِيحٌ


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা বান্দাদের কলবগুলো দেখলেন, এতে তিনি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর কলবকে বান্দাগণের কলবের মধ্যে উত্তম কলব হিসেবে পেলেন, অত:পর তাকে নিজের দ্বীন প্রচারের জন্য রিসালাত দিয়ে প্রেরণ করলেন অতঃপর বাকী বান্দার কলবগুলোর দিকে আবার তাকালেন, তখন আল্লাহ্ নবীর সাহাবীগণের কলবগুলোকে বান্দাদের কলবের মধ্যে উত্তম কলব হিসেবে পেলেন,  অতঃপর তাদেরকে নবীর সঙ্গী বানালেন। তারা আল্লাহর দ্বীনের উপর সাহায্যকারী হলেন। সুতরাং মুসলমানগণ যা ভাল মনে করেন তা আল্লাহর নিকটও ভাল, আর যা মন্দ মনে করেন তা আল্লাহর নিকটও মন্দ।’’ ১১

➥১১. ইমাম আবু দাউদ তায়লসী : আল-মুসনাদ : ১/১৩০ পৃঃ হা/২৪৬,  ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ : ১/৩৭৯ পৃঃ : হা/৩৬০০ এবং ১৭০২, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : হিলইয়াতুল আউলিয়া : ১/৩৭৫ পৃঃ, ইমাম তাবরানী, মুজামুল আওসাত, ৪/৫৮ পৃঃ হাদিস, ৩৬০২,  আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ১/১৭৭-১৭৮ পৃঃ, ইমাম বায্যার : আল মুসনাদ : ৫/২১২ পৃঃ : হা/১৮১৬, ইমাম বায়হাকী : আল-ই‘তিক্বাদ : ১/৩২২ পৃঃ, আল্লামা খতিব বাগদাদী : তারীখে বাগদাদ : /৪৪৬ পৃঃ,  ইমাম বাগভী : শরহে সুন্নাহ : ১/১০৫ পৃঃ, ইমাম আহমদ : মুসনাদ : ১/৩৬৭ পৃঃ : হা/৫৪১, হাকেম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক : ৩/৮৩ পৃঃ হাদিস: ৪৪৬৫, তিনি বলেন, হাদিসের সনদটি সহীহ, আর তাঁর সাথে যাহাবী একমত পোষণ করেছেন,  ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল কাবীর :৭/১১২-১১৫ হাদিস নং ৮৫৮২ ও ৮৫৯৩, ইমাম ইবনে রযব : জামিউল উলূম : ১/২৫৪পৃঃ ইমাম সাখাভী : আল মাকাসিদুল হাসানা : ৪২২ পৃঃ : হা/৯৫৭, ইমাম আহমদ, ফাদ্বায়েলুল সাহাবা, ১/৩৬৭ পৃঃ হা/৫৪১, ইবনে হাজার আসকালানী, ইত্তেহাফুল মুহরাত,  ১০/১৯৬ পৃঃ হা/১২৫৬৮, ইবনে হাজার, দিরায়া ফি তাখরীজে হেদায়া, অধ্যায়, কিতাবুল ইজারা, ২/১৮৭ পৃঃ হা/৮৬৩, তিনি বলেন সনদটি ‘হাসান’, সুয়ূতি, আদ্দরুল মুনতাসিরা ফি আহাদিসুল মুসতাহিরাহ, ১/১৮৮ পৃঃ হা/৪০১


সনদ পর্যালোচনা:


উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করে আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) বলেন :


رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالْبَزَّارُ وَالطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَرِجَالُهُ مُوثَقُونَ


-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম আহমদ তার ‘মুসনাদ’,  ইমাম তাবরানী তার ‘‘মু‘জামুল কবীর’’, ইমাম বায্যার তাঁর ‘‘মুসনাদ’’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন,  উক্ত হাদিসের সবগুলো রাবী বিশ্বস্ত।’’ ১২

➥১২. আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ১/১৭৭-১৭৮ পৃঃ


ইমাম সাখাভী (رحمة الله) ও আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) বলেন,  


هذا حديث هو موقوف حسن


-‘‘উক্ত হাদিসটি এই সনদে মওকুফ ও ‘হাসান’ হাদিস।’’ ১৩

➥১৩. ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৪২২ পৃঃ : হা/৯৫৭, আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/১৪৫ : হা/২২১৪


মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত “প্রচলিত জাল হাদীস” নামক গ্রন্থের ৮৯ পৃষ্ঠায় কোন দলীলবিহীনভাবে উক্ত সহীহ হাদিসকে জাল বানানোর অনেক অপচেষ্টা চালিয়েছে, তিনি লিখেছেন ‘এটি নবীজীর বর্ণিত হাদিস নয়’ কোন দলীল দিতে না পেরে আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানীর দলীল পেশ করেছে।


অপরদিকে পাকিস্তানের দেওবন্দী মাওলানা সরফরায খাঁন সফদর সাহেবের বই “রাহে সুন্নাত” (উর্দূ) এর ৭২ পৃষ্ঠায়ও উক্ত সহীহ হাদিসকে জাল প্রমাণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। “হাদীসের নামে জালিয়াতি” গ্রন্থের ১৭৮ পৃষ্ঠায় লেখক ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর প্রমাণহীন উক্ত বিষয় মারফু কোনো সূত্র নেই বলে জালিয়াতি করেছেন।


মারফু হাদিসের বর্ণনা:


ইমাম খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) সংকলন করেন-


أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ بْنِ عُمَرَ الْبَجَلِيُّ، أَخْبَرَنَا يُوسُفُ بْنُ عُمَرَ الْقَوَّاسُ، قَالَ: قُرِئَ عَلَى أَحْمَدَ بْنِ أَبِي زُهَيْرٍ الْبُخَارِيُّ وَأَنَا أَسْمَعُ وَأَصْلُهُ فِي كِتَابِي، قِيلَ لَهُ حَدَّثَكُمْ عَلِيُّ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاذٍ رَجَاءُ بْنُ مَعْبَدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ عَمْرٍو النَّخَعِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبَانُ بْنُ أَبِي عَيَّاشٍ وَحُمَيْدٌ الطَّوِيلُ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ:  إِنَّ اللَّهَ نَظَرَ فِي قُلُوبِ الْعِبَادِ فَلَمْ يَجِدْ قَلْبًا أَتْقَى مِنْ أَصْحَابِي، وَلِذَلِكَ اخْتَارَهُمْ فَجَعَلَهُمْ أَصْحَابًا، فَمَا اسْتَحْسَنُوا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ حَسَنٌ، وَمَا اسْتَقْبَحُوا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ قَبِيحٌ


-‘‘হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা সকল বান্দাদের কলবগুলো দেখলেন, এতে তিনি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর সাহাবীগণের কলবকে অধিক খোদাভীরু হিসেবে পেলেন, তাই তিনি তাদেরকে তাঁর সাথী হিসেবে বাছাই করলেন। তাই তারা যা ভাল মনে করবেন তা আল্লাহর নিকট ভাল, আর তাদের নিকট যা মন্দ তা আল্লাহর নিকট মন্দ।’’ (খতিবে বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, ৪/৩৮৭ পৃ. ক্রমিক.২১৫৯) 

এ হাদিসের সনদে ‘সুলাইমান ইবনে আমর নাখঈ’ দুর্বল। বুঝা যায় এ হাদিসটির শাওয়াহেদ হিসেবে দুর্বল সনদ রয়েছে।


বিভিন্ন মুহাদ্দিসদের মারফূ হিসেবে বর্ণনা করা:


উক্ত হাদিসটি সম্পর্কে মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন, 


صَحَّ عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ مَرْفُوعًا وَمَوْقُوفًا مَا رَآهُ الْمُسْلِمُونَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ حَسَنٌ-


-‘‘সহীহ সূত্রে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে (দুইভাবে) মারফ‚ এবং মওকুফ রেওয়ায়েত আছে, মুসলমানগণ যে কাজ ভাল মনে করেন এটা আল্লাহর নিকটও ভাল।” ১৪

➥১৪. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মওদ্বুআতুল কাবীর : পৃ-৩২


উক্ত হাদিসটি বিভিন্ন বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাবেও বর্ণিত হয়েছে মারফূ তথা রাসূল (ﷺ) এর হাদিস হিসেবে যেমন ফতোয়ায়ে শামীতে প্রথম খন্ডে ‘কিতাবুয জানায়েয’ অধ্যায়ে বাবুদ দাফনে আছে,  


وَقَالَ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - مَا رَآهُ الْمُسْلِمُونَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ حَسَنٌ


-‘‘রাসূল করীম (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, যে কাজকে মু’মিনগণ ভাল মনে করেন,  তা আল্লাহ্ তা‘য়ালার নিকট ভাল হিসেবে গণ্য।’’ ১৫

➥১৫. আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী : ২/২৩৭ পৃঃ কিতাবুয জানায়েয অধ্যায়

Top