তৃতীয় অধ্যায়
খাতিমুল আম্বিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নুবুওতের প্রমাণ
তুমি জেনে রাখ যে, এমন কিছু বিশেষ ব্যাপার আছে, যেখানে ‘আকল' বা জ্ঞানের দৃষ্টি আদৌ পৌছাতে সক্ষম নয়। বরং এরই সম্ভাবনা অধিক যে, হয়তাে জ্ঞান তা অস্বীকার করবে এবং তা অসম্ভব বলে ফায়সালা দেবে। কাজেই আমাদের উচিত হবে তার সম্ভাবনা বরং তার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য দলীল পেশ করা।
উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি এভাবে পরিষ্কার করা যেতে পারে যে, এক তােলা আফিম কোন মানুষের জীবননাশের জন্য যথেষ্ট। কারণ, আফিম খুবই শীতল। তাই, এর সেবনে শরীরে রক্ত জমে গিয়ে-তা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে, লােকটি মারা যায়। পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র মাত্রই জানে যে, মাটি ও পানি, এ দু'টি পদার্থই শীতলতা সৃষ্টিকারী। এও সর্বজনবিদিত যে, কয়েক সের পানি ও মাটি একত্রিত করলেও তা দিয়ে এক তােলা আফিমের সমান শীতলতা সৃষ্টি হবে না। এখন ধরুন, কোন পদার্থ বিজ্ঞানী যিনি আফিমের উক্ত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নন, তাকে যদি আফিমের বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়, তখন তিনি অবশ্যই বলবেন-এটা সত্য কথা নয়। কারণ, এতে অগ্নি ও বায়ুর ন্যায় গরম পদার্থও রয়েছে। সুতরাং এ এত শীতল নয়।
উক্ত উদাহরণের পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করুন, দর্শন ও বিজ্ঞান দ্বারা বিভ্রান্ত ব্যক্তিদের যুক্তি-প্রমাণ অনুরূপ নয় কি? যে কোন বস্তু বা বিষয়কে তারা বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয়ের সীমাবদ্ধ অনুভূতি দিয়ে বিচার করতে চায় এবং যা কিছু এর আওতায় আসে না, তা তারা অসম্ভব মনে করে অস্বীকার করে।
স্বপ্ন সম্পর্কেও ঠিক একই কথা প্রযােজ্য। সত্য বা খাঁটি স্বপ্ন দেখার অভিজ্ঞতা যদি মানুষের না থাকতাে, এমতাবস্থায় কেউ যদি দাবী করতাে যে, কোন বিশেষ অবস্থায় ইন্দ্রিয়গুলাে যখন নিষ্ক্রিয় থাকে এবং চিন্তা ও উপলব্ধি বাহ্যতঃ অকেজো হয়ে পড়ে; তখন তার অন্তদৃষ্টিতে ভবিষ্যত উদ্ভাসিত হয় এবং সে অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে অবহিত হতে পারে। এতদশ্রবণে উক্ত অপক্কজ্ঞান দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিকরা অবশ্যই ঠাট্টা-বিদ্রুপ করবে। কারণ, ইন্দ্রিয়ের অতীত কোন জ্ঞানের উৎস আছে বলে তারা স্বীকার করে না। অনুরূপভাবে, অগ্নিক্রিয়ার সাথে যদি মানুষের পূর্ব পরিচয় না থাকতাে এবং কোন বিজ্ঞ ব্যক্তি যদি তাদের বলতাে যে, পৃথিবীতে এমন একটি অদ্ভুত পদার্থ আছে, যার বিন্দুমাত্র কণা বা ফুলিঙ্গ একটি গােটা শহর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাই করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট; তাহলে লােকে তাকে বিশ্বাস করতাে না।
এখানে অপর পক্ষের পণ্ডিতদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা হলাে : বিশ্লেষণযােগ্য না হওয়া সত্ত্বেও তােমরা আফিমের অসাধারণ শীতলতার কথা স্বীকার করেছো; তাহলে শরীয়ত ও ধর্মীয় বিষয়াদির তাৎপর্য ও গুরুত্ব অস্বীকার করার যুক্তি কি? অথচ এগুলাের বিশেষ ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য রয়েছে। কারণ, মানসিক প্রতিকার ও আত্মিক সংস্কারের সাথে এগুলাের সম্পর্ক এবং নুবুওতের দৃষ্টি ছাড়া এগুলাে অবলােকন করা যায় না।
আরাে মজার ব্যাপার এই যে, তাদেরই জনৈক পণ্ডিতের রচনা “আজায়েবুল খাওয়াস” গ্রন্থে কতিপয় নকশা (নকশাগুলি এরূপ : উপরােক্ত নকশাগুলি আগের খন্ডে উল্লেখ ছিল না। এগুলি কুন্দিয়া-ওয়ালা খন্ড থেকে বর্ণনা করা হলাে। এ নশাগুলি ইমাম গাযযালী (রহঃ) কর্তৃক রচিত গ্রন্থ “আল-মুনকেযু মিনাদ্দলাল” গ্রন্থেও কিছু পার্থক্যসহ বর্ণিত আছে। এর বৈশিষ্ট হলােঃ এ নকশায় নয়টি ঘর আছে এবং সেখানে বিশেষ-বিশেষ সংখ্যা লিখিত আছে, যার যােগফল দৈর্ঘ্য ও কোনাকুনিভাবে ১৫ (পনের)। )অংকিত আছে। সেখানে লেখা আছে যে, প্রসব বেদনায় আক্রান্ত কোন মহিলা এদের প্রতি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকবে, পরে নকশাগুলি পদদলিত করবে; তাহলে অবিলম্বে বিনা কষ্টে সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে। এসব স্থবির বুদ্ধির লােকেরা এর সম্ভাব্যতাকেও বিশ্বাস করে, তাদের মস্তিস্কে একথা কেন ঢােকে না যে, ইবাদতের কল্যাণও অনুরূপভাবে স্বীকার করা উচিত। তাদের বিশ্বাস করা উচিত যে, ফজরের দুই রাকা'আত, যােহরের চার রাকা'আত এবং মাগরিবের তিন রাকা'আত, প্রভৃতি নামাযে গাণিতিক বিভিন্নতার মাঝে মঙ্গল নিহিত রয়েছে। আর এ কল্যাণের খবর কেবল নুবুওতের সাহায্যেই অবগত হওয়া যেতে পারে। অন্য কোনভাবে জানা সম্ভব নয়। ব্যাপারটি বুঝাবার যত চেষ্টাই আমরা করি যে, নামাযের সংখ্যায় গাণিতিক পার্থক্য সম্পর্কিত উপকারিতা-এর সময়ের বিভিন্নতার সাথে সম্পৃক্ত; কিন্তু এ তাদের উপলব্ধিতে আসবে না এবং তারা একে অবৈজ্ঞানিক বলে আখ্যায়িত করবে।
পক্ষান্তরে,আমরা যদি বলি, মধ্যাহ্ন-সূর্য, অস্তাচলগামী
-সূর্য এবং অস্তগামী সূর্য প্রভৃতির ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া আছে, তবে তারা তা স্বীকার করবে। শুধু তাই নয়, তারা এর ভিত্তিতে তাদের জীবনপঞ্জি রচনা করে এবং জীবন-মরণের ভবিষ্যদ্বাণীও করে। কিন্তু এই একই কথা নামাযের ব্যাপারে বললে, তারা তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য পাগল হয়ে ওঠে। কিন্তু এর যৌক্তিকতা কি? তারা পরীক্ষিত মিথ্যাবাদী জ্যোতিষীদের কথা বিশ্বাস করে, অথচ মিথ্যার অপবাদ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র নবীগণের কথা তারা বিশ্বাস করতে চায় না।
তারা মিথ্যাবাদী জ্যোতিষীদের প্রতি গভীর আস্থাশীল। তারা যদি বলে যে, সূর্য যখন মধ্যাহ্ন আকাশে আসে এবং অমুক তারকা এর সামনা-সামনি হয়, তখন তােমরা নতুন কাপড় পরিধান করবে না কেননা, এরূপ করলে তুমি মারা যাবে। একথা তৎক্ষণাৎ লােকেরা বিশ্বাস করবে এবং প্রচণ্ড শীতে জর্জরিত হলেও তারা তখন নতুন কাপড় পরতে রাজী হবে না। কারণ, তারা বিশ্বাস করে যে, এতে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া নিহিত আছে। কিন্তু নবীগণের মু'জিযা বা অলৌকিক কর্মকাণ্ডের কথা বললেই তারা বিগড়ে যায় এবং তাদের মস্তিস্কে এ প্রবিষ্ট হয় না যে, যে কোন অজ্ঞাত কারণে এসব অলৌকিক ঘটনা ঘটতে পারে।
একইভাবে দর্শন শাস্ত্রের ভক্তরা মানতে রাযী যে, ঔষধের ক্রিয়া হয় এবং নক্ষত্রের গতিবিধি মানুষের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। কিন্তু নামাযের রাকা'আতের সংখ্যাগত পার্থক্য, হাজীদের প্রস্তর নিক্ষেপ এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিও যে অর্থহীন নয়, একথা মানতে তারা আদৌ রাযী নয়।
বস্তুত, এ দুয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই; বরং উভয়ের মাঝে অনেক কল্যাণ নিহিত আছে। তবে কেউ এরূপ প্রশ্ন তুলতে পারে যে, ঔষধ ও নক্ষত্র সংক্রান্ত ব্যাপারে আমরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি এবং তাদের প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে, তাই আমরা এদের প্রভাবকে সত্য বলে মেনে নিচ্ছি। কিন্তু নুবুওত সংক্রান্ত ব্যাপারে আমাদের কোন অভিজ্ঞতা নেই। তাই, বিনা প্রমাণে কি করে আমরা এগুলাে স্বীকার করবাে? এর জবাবে আমার বক্তব্য হলাে : তােমাদের এ দাবী সত্য নয়। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তােমরা ডাক্তার ও জ্যোতিষীর কথায় বিনা প্রমাণে ও পরীক্ষায় আস্থা স্থাপন কর এবং অনুরূপভাবে তাদের কথা বিশ্বাস কর । এমতাবস্থায় নুবুওত সংক্রান্ত ব্যাপারে নবীদের কথায় আস্থা স্থাপন করা অযৌক্তিক হবে কেন? নবীগণ তাে নিজেদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে এগুলাের বাস্তবতা ও যথার্থতা উপলব্ধি করেছেন। তাই, তাদের অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে এদের অন্তর্নিহিত কল্যাণের সন্ধান নিঃসন্দেহে পাওয়া যেতে পারে।
এখন আল্লাহর ওলীদের কথা শ্রবণ করাে, যারা শরীয়তের সমস্ত হুকুম আহকাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন এবং হক বা বাস্তব সত্যকে অন্তর-চক্ষু দিয়ে অবলােকন করেছেন। তােমরা এদের রাস্তা অনুসরণ কর, তাহলে কিছু কিছু ব্যাপার অনুধাবন করতে পারবে। এছাড়া আমি আরাে বলবাে : যদিও তােমরা এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করােনি, কিন্তু তােমাদের সত্য ও বাস্তব জ্ঞান তােমাদেরকে এসব স্বীকার করতে এবং অনুসরণ করতে দাবী করে। যেমন ধরে নেওয়া যাক, এক ব্যক্তি জ্ঞানী, বালেগ এবং বুদ্ধিমান; কিন্তু সে তার জীবনে কোন দিন অসুখে ভুগেনি, এখন সে অসুস্থ হয়ে পড়লাে। আর তার পিতা আছে, যে তার প্রতি খুবই স্নেহ পরায়ণ এবং বিশিষ্ট চিকিৎসক। এখন যদি তার পিতা তার রােগের জন্য কোন ঔষধ নির্ধারণ করে বলে : বাবা, এ ঔষধ তােমার রােগের জন্য উপকারী এবং এ তােমার রােগকে সারাতে সাহায্য করবে। এ সময় তার জ্ঞান তাকে ঐ ঔষধ পান করতে উদ্বুদ্ধ করবে, যদিও সে ঔষধ হয় তিক্ত এবং অরুচিকর। কিন্তু এ সময় যদি সে পিতার কথাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে বলে : এ ঔষধে যে আমার রােগ ভাল হবে, আমার ‘আকল’ বা ‘জ্ঞান’ সেরূপ সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না; আর আমি তাে ইতিপূর্বে এ ঔষধের গুণাগুণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিনি, তাই আমি এ ঔষধ সেবন করবাে না। এমতাবস্থায়, তুমিও অবশ্য তাকে ‘আহমক' বা বােকা বলে ঠাওরাবে।
বস্তুতঃ এখন যদি তুমি এরূপ প্রশ্ন কর যে, আমি হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর স্নেহ এবং তিনি যে বিজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন, তা কিরূপে জানবাে? এর জবাবে আমার বক্তব্য হলাে : তুমি তােমার পিতার স্নেহ কিভাবে বুঝলে? পিতার অপত্য স্নেহ তাে কোন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ব্যাপার নয়। বরং তুমি তােমার পিতার অপত্য স্নেহ, তোমার জীবনের প্রতি পদে পদে যে পেয়েছ, তা তার প্রতিটি কাজে-কর্মে, আচার-আচরণে অবশ্যই তােমার কাছে স্পষ্ট, যার মধ্যে তােমার সামান্য পরিমাণ কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
এক্ষণে, যে ব্যক্তি হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কথাবার্তা এবং তাঁর আচার আচরণের প্রতি অনুধাবন করবে, যা তাঁর তরফ থেকে বর্ণিত আছে; সে অবশ্যই দেখতে পাবে যে, তিনি পথভােলা, গােমরাহ মানুষদেরকে হিদায়াত ও কল্যাণের দিকে আহবান করার জন্য কত স্নেহ-পরায়ণ হয়ে, শত কষ্ট ও যুলম বরদাশত করে, কিরূপে তাদেরকে দ্বীনের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন। তাঁর এ আচরণের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, পুত্রের প্রতি পিতার যে অপত্য স্নেহ, তার চাইতে অনেক বেশী স্নেহ হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর তাঁর উম্মতের প্রতি। এতদ্ব্যতীত, তার জীবনের আশ্চর্যজনক ও অলৌকিক বিষয়ের প্রতি যদি দৃষ্টিপাত করা যায়, যা তার দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে। তবে তাে বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়। এ সমস্ত ব্যাপার বা ঘটনা তঁর জবানে কোরআন মজীদে প্রকাশ পেয়েছে। তাছাড়া ঐসব ঘটনার প্রতি দৃকপাত করলেও বিস্ময়ে বিমুঢ় হতে হয়, যা তার তরফ থেকে 'আখেরী-যামানা' বা শেষ-যুগ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী রূপে প্রকাশিত হয়েছে। সেসব ভবিষ্যদ্বাণী পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, তিনি যা ইরশাদ করে গেছেন, বাস্তবে তা-ই সংঘটিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। এ সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবতা এবং তার প্রকাশ-কোন ব্যক্তির পক্ষে তার জ্ঞানের
দ্বারা জানা বা বুঝা আদৌ সম্ভবপর নয়।
কাজেই, জানা গেল যে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তাঁর সম্মানিত সাহাবীদের সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভের একমাত্র উপায় হলাে এটি কেবল মানবিক জ্ঞানের দ্বারা এসব হাসিল করা সম্ভব নয়। এখন যদি তুমি কোরআন মজীদ গভীরভাবে অধ্যয়ন কর এবং এসব ঘটনাকে পর্যালােচনা কর, তাহলে দেখতে পাবে যে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নুবুওতের দাবী কত সত্য এবং বাস্তবতার উপর প্রতিষ্ঠিত। যেখানে কোনরূপ সন্দেহের কোন অবকাশ নেই; বরং দিবালােকের মত চির উজ্জল ও ভাস্বর।
ইমাম গাযযালী (রহ.) ব্যাপারটি এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, যদি কোন ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি সন্দিহান হও যে, সে নবী কি-না? এমতাবস্থায় তুমি সে সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান কেবল এভাবে লাভ করতে সক্ষম হবে যে, সে ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবন পদ্ধতির জ্ঞান চাই তা মুশাহিদার দ্বারা জ্ঞাত হউক বা সঠিক বর্ণনা পরস্পরার দ্বারা। কেননা, যখন তুমি চিকিৎসা ও ফিকাহ শাস্ত্রের জ্ঞান আয়ত্বে আনতে সক্ষম হয়েছ, তখন তুমি এ জ্ঞানের দ্বারা চিকিৎসক ও ফকীহদের ব্যাপারে সম্যক অবহিত হতে পারবে। যদিও তাদেরকে স্বচক্ষে দেখা তােমার পক্ষে সম্ভব না হয়। আর এভাবে বলা যায় যে, ইমাম শাফী (রহ.) যে ফকীহ্ ছিলেন এবং জালিয়ানুস যে হাকীম বা চিকিৎসক ছিলেন-তা জানা তােমার জন্য আদৌ মুশকিলের ব্যাপার নয়। এরূপ জ্ঞানকে-বাস্তব জ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়, এ জ্ঞান অন্ধ অনুকরণ সজ্ঞাত-জ্ঞান নয়। বরং যদি তুমি ফিকাহ শাস্ত্রের বা চিকিৎসা বিদ্যার কিছু জ্ঞান সঞ্চয় কর এবং তাদের বই পুস্তক অধ্যয়ন কর, তবে অবশ্যই তাদের অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবহিত হতে পারবে।
আর এভাবে, যখন তুমি নুবুওতের তাৎপর্য অনুধাবন করতে চাইবে, তখন তােমাকে কোরআন ও হাদীস গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে হবে। তাহলে তুমি অবশ্যই জানতে পারবে যে, মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নুবুওতের সর্বোত্তম মর্যাদায় বিভূষিত ছিলেন। তাছাড়া তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের আমল, অজীফা, ইবাদাত ও আত্মশুদ্ধির তা'লীম ও তারবিয়াতের পদ্ধতির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, তাঁর নুবুওতের দাবী বাস্তবতার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।
উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে যে, তিনি তাঁর কথায় কত সত্যবাদী ছিলেন। যেমন-তিনি ইরশাদ করেছেন : যারা তার উপর আমল করে, যা তারা জানে, এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সে জিনিসের জ্ঞানের উত্তরাধিকারী করে দেন, যা তারা জানে না।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এ বাণীও কত সত্য : যে ব্যক্তি কোন যালিমকে সাহায্য করবে, আল্লাহ তাআলা সে যালিমকে তার উপর আধিপত্য দান করবেন। তাছাড়া হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর একথাও কত বাস্তবঃ যে ব্যক্তি এভাবে প্রাতঃকালে উপনীত হলাে যে, তার মনে কেবল একই চিন্তা,(অর্থাৎ আল্লাহর চিন্তা) আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতের চিন্তা সমূহের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। | এভাবে যখন তুমি এসব উক্তিগুলির বাস্তবতাকে হাজার-হাজার বার পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে তখন তুমি নিশ্চিত হবে যে, এতে কোনরূপ সন্দেহের অবকাশ নেই। কাজেই, নুবুওতের বাস্তবতাকে এভাবেই অন্বেষণ কর। এর দ্বারা তােমার ঈমান মজবুত হবে। এখন অবশিষ্ট থাকলাে অনুভূতি দিয়ে নুবুওতের বাস্তবতাকে উপলব্ধি করার ব্যাপারটি, যাকে মুশাহাদা বলা হয় তা পাওয়া যাবে সুফীদের তরীকা গ্রহণের মাধ্যমে।